লেখকঃ ওরহান পামুক

লেখক পরিচিতি

ওরহান পামুক

ফেরিত ওরহান পামুক (সাধারনত ওরহান পামুক নামে পরিচিত; জন্ম ৭ জুন ১৯৫২) একজন তুর্কি ঔপন্যাসিক, চিত্রণাট্য সম্পাদক, শিক্ষক এবং ২০০৬ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি তুরস্কের অন্যতম প্রধান লেখক,[১] বিশ্বের ৬০টিরও অধিক ভাষায় তাঁর ১১ মিলিয়নের (১কোটি ১০ লক্ষ) বেশি বই বিক্রি হয়েছে,[২] যার ফলশ্রুতিতে তিনি পরিণত হয়েছেন তুরস্কের সবচেয়ে প্রচারিত কথাসাহিত্যকে।[৩]

ইস্তাম্বুল এ জন্ম নেয়া পামুক দ্য হোয়াইট ক্যাসল, দ্য ব্ল্যাক বুক, দ্য নিউ লাইফ, মাই নেম ইজ রেড, স্নো ও দ্য মিউজিয়াম অফ ইনোসেন্স এর রচয়িতা।

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ছাড়াও (নোবেল প্রাপ্ত প্রথম তুর্কি) পামুক অজস্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। মাই নেম ইজ রেড ২০০২ সালে অর্জন করে Prix du Meilleur Livre Étranger, Premio Grinzane Cavour এবং ২০০৩ সালে International IMPAAC Dublin Literary Award.

ইউরোপীয়ান রাইটার্স পার্লামেন্ট (ইউরোপীয় লেখকদের সংসদ) পামুক এবং হোসে সারামাগো এর যৌথ প্রস্তাবনার ফসল।[৪] অটোমান সাম্রাজ্য-এ আর্মেনিয় গণহত্যা সম্পর্কে মন্তব্য করায় ২০০৫ সালে তুরস্কে তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। পামুকের নিজস্ব বক্তব্য, জন্মভূমিতে বাক-স্বাধীনতা এর অভাবের প্রতি আলোকপাত করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। এর ফলশ্রুতিতে মিছিলে তাঁর বই পোড়ানো হয়। তাঁকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়[৫]


প্রথম জীবন
পামুক ১৯৫২ সালে ইস্তাম্বুল-এ জন্ম নেন এবং একটি বিত্তবান কিন্তু পতনরত উচ্চশ্রেনীর পরিবারে বড় হন, যে অভিজ্ঞতা চিত্রিত হয়েছে তাঁর দ্য ব্ল্যাক বুক এবং ছেফদাত বে ও তাঁর ছেলেরা উপন্যাসে। এ অভিজ্ঞতা আরো পুংখানুপুংখ ভাবে উঠে আসে তাঁর আত্মজীবনী , ইস্তাম্বুল-এ। তিনি পড়াশোনা করেন রবার্ট কলেজ-এ এবং স্থাপত্য অধ্যায়নের জন্যে ভর্তি হন ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি-তে, কারণ তিনি ভেবে ছিলেন স্থাপত্য তার প্রকৃত স্বপ্ন চিত্রশিল্পী হওয়ার পথ সুগম করবে।[৬] কিন্তু ৩ বছর পর তিনি স্থাপত্য পড়া বাদ দিয়ে ১৯৭৬ সালে University of Istanbul এর সাংবাদিকতা ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক পাশ করেন। ২২ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত পামুক তাঁর মায়ের সাথে বসবাস করেন এবং তাঁর প্রথম উপন্যাস লেখার পাশাপাশি প্রকাশক খুঁজতে থাকেন। তিনি নিজেকে সাংস্কৃতিক মুসলিম সাংস্কৃতিক মুসলিম বলে পরিচয় দেন অর্থাৎ ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে তিনি একাত্ব অনুভব করলেও আল্লাহ-এর প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত আনুগত্য নেই। [৭]

সাহিত্য কর্ম
১৯৭৪ থেকে পামুক নিয়মিত লেখা শুরু করেন। তার প্রথম উপন্যাস আলো ও আঁধার(Karanlık ve Işık) ১৯৭৯ সালে যৌথ ভাবে মিলিয়েত প্রেস উপন্যাস প্রতিযোগিতায় জয়ী হয় যা ১৯৯৮২ সালে Cevdet Bey ve Oğulları(ছেফদাত বে ও তাঁর ছেলেরা) নামে প্রকাশিত হলে ১৯৮৩ সালের Orhan Kemal পুরস্কার লাভ করে। এ লেখায় উঠে আসে একই পরিবারের তিন প্রজন্মের উপাখ্যান।

তাঁর প্রথম দিকের লেখায় স্বতঃস্ফুর্তা দেখা গেলেও পরবর্তী লেখায় তিনি উত্তরাধুনিক রচনাশৈলী প্রয়োগ করতে থাকেন।

১৯৯০ সালে প্রকাশিত Kara Kitap (The Black Book)(কালো পুস্তক) উপন্যাস তাঁকে এনে দেয় জনপ্রিয়তা। বইটি আলোচিত হয়ে ওঠে এর জটিল রচনাশৈলী ও প্রাচুর্যতা জন্যে। এ উপন্যাস অবলম্বনে একটি ছায়াছবি চিত্রায়িত হয় যা পরিচালনা করেন বিখ্যাত তুর্কি পরিচালক Ömer Kavur(ওমর কাফুর)।

১৯৯৫ এ প্রকাশিত পামুকের ৫ম উপন্যাস Yeni Hayat(নতুন জীবন) তুরস্কে আলোড়োন সৃষ্টি করে এবং সবচেয়ে দ্রুত বিক্রি হওয়ার রেকর্ড করে।

ইতিমধ্যে তিনি আলোচিত সমালোচিত হতে থাকেন কুর্দি জনগণের পক্ষে কথা বলার জন্যে।

আমার নাম লাল
মূল নিবন্ধ: My Name Is Red
২০০০ সালে প্রকাশিত আমার নাম লাল পামুককে পৌঁছে দেয় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। উত্তরাধুনিক রচনাশৈলীতে এ উপন্যাসে বিধৃত হয় চিত্রকলা,রহস্য,দর্শন ও প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্ব এবং বর্ণিত হয় ১৬ শতকের অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান মুরাট তৃতীয়েরSultan Murat III রাজত্বের তুষারাচ্ছন্ন ৯টি দিন। পাশ্চাত্যের রেঁনেসার প্রভাবে প্রাচ্যের শিল্পের অস্তিত্ব সংকট পাঠককে চলমান প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের অস্থিরতার কথাই স্বরণ করিয়ে দেয়।

২৩টি ভাষায় অনূদিত বইটি ২০০৩ সালে জিতে নেয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অর্থমূল্যের সাহিত্য পুরস্কার International Dublin Literary Award।

"আপনার জীবনে IMPAAC পুরস্কার (বর্তমানে ১,২৭,০০০$ মূল্যমানের) কেমন প্রভাব ফেলেছে?",প্রশ্নের জবাবে পামুক বলেনঃ

আমার জীবনের কিছুই পালটে যায়নি,কারণ আমি সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকি। আমি আমার জীবনের ৩০ বছর সাহিত্য সাধনায় ব্যয় করেছি। এর প্রথম ১০ বছরে আমি টাকা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম এবং কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করতো না আমি কত উপার্যন করি। দ্বিতীয় দশকে আমি টাকা ব্যয় করেছি এবং কেউ এ সম্পর্কে জানতে চায়নি। শেষ দশকটাতে সকলে জানতে চাইছে আমি কীভাবে টাকা খরচ করি যা আমি কখনই বলব না।[৮]

তুষার
মূল নিবন্ধ: Snow (Pamuk novel)
পামুকের পরবর্তী উপন্যাস Kar,(তুষার)Snow বাজারে আসে ২০০২ সালে। এ উপন্যাসে সীমান্তবর্তী শহর কারসেরKars ইসলামিক ও পাশ্চাত্যের দ্বন্দের পরিবেশ চিত্রিত হয়েছে। প্রবাসি তুর্কি কবি কা এ শহরে হিযাব পরিহিত নারীদের ঘন ঘন আত্মহত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে এসে মুখোমুখি হয় পুরাতন প্রেমিকার,উগ্র আদর্শে বিশ্বাসী মাওলানা ও নেতার,দূর্নীতি-গ্রস্থ প্রশাসনের,নাস্তিকতার এবং মৌলবাদি ও উদারপন্থিদের সংঘর্সের মধ্যে পড়ে যায়।

নিস্পাপের জাদুঘর
মূল নিবন্ধ: The Museum of Innocence
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার পর ২০০৮ এর গ্রীষ্মে তিনি প্রকাশ করেন নিস্পাপের জাদুঘরMuseum of Innocence নামক উপন্যাস।

এ উপন্যাসের সাথে সম্পর্কিত দৈনন্দিন সামগ্রি নিয়ে পামুক ইস্তাম্বুলে একটি সত্যিকার জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন।[৯]

ইস্তাম্বুল-একটি শহরের স্মৃতি
২০০৩ সালে প্রকাশিত হয় İstanbul—Hatıralar ve Şehir (ইস্তাম্বুল-একটি শহরের স্মৃতি)

উল্লেখযোগ্য বই
শুভ্র দূর্গ (Beyaz Kale বেয়াজ় কালে)
কালো বই (Kara Kitap কারা কিতাপ)
আমার নাম লাল (Benim Adım Kırmızı বেনিম আদ্যিম ক্যির্ম্যিজ়্যি)

ঠিকানা