লেখকঃ কবি বে-নজীর আহমদ

লেখক পরিচিতি

কবি বে-নজীর আহমদ

কবি বে-নজীর আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালের ২৯ অক্টোবর বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ইলমদী গ্রামে। তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সাহস ও উদারতা। তিনি একাধারে ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। বে-নজীরের সাংবাদিক জীবন শুরু হয় মাসিক সাহিত্যপত্র নওরোজ (১৯২৭) সম্পাদনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে। পরে তিনি দৈনিক আজাদ ও দৈনিক নবযুগ (১৯৪১) পত্রিকায়ও সাংবাদিকতা করেন।

ছাত্রজীবনে (১৯২০-১৯২২) খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ১৯২১ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘদিন কারাদণ্ড ভোগ করেন। পরবর্তীকালে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের ২৮ এপ্রিল মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রথায় ঢাকা-৬ আসন থেকে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

সাহিত্য ও রাজনীতি -দুটোর প্রতি সমান অনুরাগ-আসক্তি ছিল কিশোর বে-নজীরের । ছাত্রাবস্থায় থাকতে তার কবিতা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। তবে যৌবনে তিনি কবিরূপে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৩২ সালে ‘বন্দীর বাশী’ দিয়ে। বাংলার কাব্যাকাশে নবীন কবিকে অভিনন্দন জানান কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। বে-নজীরের ‘বন্দীর বাশী’তে নজরুলের বিদ্রোহী ও বিপ্লবী চেতনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। স্বয়ং কবিও এটি স্বীকার করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্তে নজরুল অনুসারী কবিরূপে বে-নজীর আহমদকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বে-নজীর আহমদ ছিলেন জীবনের জন্য শিল্প নীতিতে বিশ্বাসী। তাই তার প্রায় সব কবিতার বিষয় সমাজ-সমাজের অন্যায় অত্যাচার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ডাক দিয়েছেন তিনি।
কবি বে-নজীর আহমদের বৈশাখী’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘মৃত্যু কোথা বল’ এর প্রকাশকাল আশ্বিন ১৩৪৩ দিয়ে তার কবি জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু। এই সময়ে বাংলাদেশের দুটি ঘটনা বিশ্বযুদ্ধ এবং মনন্তর তার কবিতায় প্রভাব বিস্তার করেছে। ধংসকারী বিশ্বযুদ্ধের চিত্র এসেছে আমার সাগরে জেগেছে উর্মি কিংবা মৃত্যুর নিশীথ শেষে কবিতায়। কবি দারুনভাবে আহত হয়েছেন মনন্তর, চল্লিশ দশকের দুর্ভিক্ষের আভিঘাতে। তার এই আহতচিত্তের প্রকাশ ‘কংকাল’ কবিতায়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার কাব্যধারার তৃতীয় পর্যায়ের শুরু। বে-নজীর আহমদ অনেক কবিতা লিখলেও তার প্রকাশিত গ্রন্থ মাত্র ২টি -বন্দীর বাশি আর বৈশাখী। উল্লেখ্যযোগ্য গদ্য ‘ইসলাম ও কমিউনিজম’। তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আশ্চর্য আর আশ্চযর্’, ‘কমলমণি’, ‘কোরানের গল্প’ ইত্যাদি। তিনি বেশ কিছু গান ও গজল রচনা করেছেন। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি লাভ করেন ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ আর ১৯৭৯ সালে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন।

রাজনীতি সচেতন ও মুসলিম সমাজের ঝড়োপাখি হিসেবে অভিহিত কবি বে-নজীর আহমদের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৯টায় তিনি ইন্তিকাল করেন। পরদিন তাকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ঠিকানা