আনাস ইবন নাদার (রা)

নাম ‘আনাস’ পিতা ‘নাদর ইবন দাম দাম’ রাসূলল্লাহ (সা) খাদেম প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবন মালিকের সম্মানিত চাচা।১ হযরত আনাস ইবনে মালিক বলতেনঃ‘ আমার চাচা আনাসের নামে আমার নাম রাখা হয়েছে।২ রাসূলুল্লাাহর (সা) সম্মানিত দাদা হযরত আবদুল মুত্তলিবের মা সালমা বিনতু ‘আমর ছিলেন এই আনাসের খান্দান বনু নাজ্জারের মেয়ে। সম্পর্কে তিনি আনাস ইবন নাদরের ফুফু। আনাস ইবন নাদর ছিলেন তাঁর খান্দানের রায়িস বা নেতা। মহিলা সাহাবী হযরত রুবাইয়্যা’ বিনতু নাদর ছিলেন তাঁর বোন। তাঁর মাও ছিলেন একজন সাহাবিয়্যা।৩ তাঁর জন্মসন সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
হযরত আনাম ইবন নাদর (রা) শেষ ‘আকাবায় ইসলাম গ্রহণ করেন। আনাস ইবন মালিক (রা) বলেনঃ কোন অজ্ঞাত কারণে আমার চাচা আনাস ইবন নাদর বদর যুদ্ধে যোগদান করতে পারেননি। যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ (সা) সদীনায় ফিরে এলে তিনি তাঁর সামনে হাজির হয়ে অনুতাপের সুরে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! প্যেত্তলিক শক্তির বিরুদ্ধে পরিচালিত আপনার প্রথম অভিযানে আমি অনুপস্থিত থেকে গেছি। আল্লাহর কসম, আগামীতে আল্লাহ যদি আমাকে তাদরে সাথে যুদ্ধ করার কোন সুযোগ দান করেন তাহলে আমি কি করি তা অবশ্যই আল্লাহ দেখবেন।
উহুদত যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরী তৃতীয় সনে। এ যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে ময়দান ত্যাগ করেছিল তখন তিনি আপন মনে বলে উঠলেনঃ ‘ হে আল্লাহ! এই মুসলসানরা যা করছে তার জন্য আমি আপনা র নিকট মাগফিরাত কামনা করছি।আর এই পৌত্তলিকরা যা করেছে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এই বলে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। পথে সা’দ জান্নাত তো ঐখানে উহুদে। আল্লাহর কসম!আমি উহুদের দিকে থেকে জান্নাতের খোশবু পাচ্ছি। একথা বলতে বলতে বলেতে আনাস (রা) উহুদের ময়দানের দিকে ছুটে যান এবং অসীম সহসিকতার সথে যুদ্ধ করে শহাদাত বরণ করেন। সা’দ বলেনঃ সেদিন তিনি যা করলেন, আমি তা করতে পারিনি। বালাজুরী বলেনঃ সুফাইয়ান ইবন উয়াইফ তাঁকে হত্যা করেন।৪
উহুদ যুদ্ধে হযরত আনাসের (রা) ভূমিকা বর্ণনা প্রসঙ্গে ইবন ইসাহক বলেনঃ উমার ইবনুল খাত্তাব ও তালহা ইবন ‘উবাউদুল্লাহ মুহাজির আনসারদের সাথে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আনাস সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন: আপনারা এভাবে বসে কেন? তারা বললেন: রাসূলুল্লাহ (সা) নিহত হয়েছেন।
আনাস বললেন: তিনি যদি মারাই গিয়ে থাকেন, আপনারা বেঁচে থেকে কী করবেন? উঠুন, রাসূলুল্লাহ (সা ) যে পথে জীবন ুিদয়েছেন আপনারাও সে পথে জীবন দিন। একথা বলে তিনি শত্রু বাহিনীর ওপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং শাহদাত বরণ করেন।৫
হযরত আনাস ইবন মলিক বলেছেন: তীর, বর্শা ও তরবারির আঘাতে আনাস ইবন নাদরের সারা দেহ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। গুণে দেখা যায় তাঁর দেহে সত্তর মতান্তরে আশিটির অধিক আঘাত করা হয়েছে। কাফিরেরা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে তাঁর লাশ বিকৃত করে ফেলেছিল। তাঁর বোন রুবইয়্যা বিনতু নাদর ছাড়া আর কেউ লাশ সনান্ত করতে পারেনি। তিনিও তা করতে সক্ষম হন তাঁর হাতের আঙ্গুল দেখে।৬ ইযরত আনাস ইবন নাদরের (রা) ঈমান যে কত মজবুত ছিল তা তাঁর শাহাদাতের ঘটনা থেকে বুঝা যায়। উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআনের যে সকল আয়াত নাযিল হযেছে তাতে তাঁর মহান ব্যক্তিবর্গের প্রশংশা করা হয়েছে। আনাস ইবন মলিক (রা) বলেনঃ সূরা আল আহযাবের ২৩ নম্বর আয়াতে’ মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদ পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে’ আমার চাচা আনাস উবন নাদরের শানে নাযিল হয়েছে।৭
সহীহ বুখারীতে আনাস ইবন মলিক থেকে বর্ণিত হয়েছে। রুবাইয়্যা বিনতু নাদর একবার এক আনসারী মহিলার মুখে চপেটাঘাত করে বসেন। তাতে তার একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। রুবাইয়্যার পক্ষে থেকে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয় হয়; কিন্তু তারা ক্ষমা করতে অস্বীকার করে। তাদেরকে ুিদয়াত বা ক্ষতিপূরুন দানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা তাও প্রত্যাখ্যান করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন: আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এখন কিসাস বা বদলা অপরিহর্য। একথা শুনে আনাস ইবন নাদর বলে উঠলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! রুবাইয়্যার দাঁত ভাঙ্গা হবে? যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার নামে শপথ! না না কক্ষণো দাঁত ভাঙ্গা হবে না।
এরপর ;আকাম্মিকভাবে বাদী পক্ষ দিয়াত গ্রহণে সম্মত হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) মন্তব্য করেনঃ আল্লাহর এমন অনেক বান্দা আছে যারা তাঁর নামে কসম খেলেতিনি নিজেই তাদের কসম পূরণ করে দেন। তাদেরই একজন আনাস ইবন নাদর। সহীহ মুসলিমেও ঘটনাটি ভিন্ন সনদে ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।৮
তথ্যসূত্র:

আল-বারা’ ইবন মালিক (রা)
আল-বারা’ইবন মলিক ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবী ও রাসূলুল্লাহার (সা) স্নেহের খাদেম হযরত আনাস ইবন মালিকের (রা) বৈমাত্রের ভাই। একথা বলেছেন আবু হতেম। সা’দের মতে তিনি আনাসের সহোদর।তাঁদের উভায়ের মা প্রখ্যাত সাহাবিয়্যা হযরত উম্মু সুলাইম।১ ইবনুল আছীরের মতও তাই।২ তবে ইবন হাজার এমত সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, শুরাইক ইবন সামহার জীবনীতে দেখা যায়, তিনি আল-বারা ইবন মালিকের বৈমাত্রেয় ভাই। তাঁদের উভয়ের মা সামহা। পক্ষান্তরে আনাস ইবন মালিকের মা যে উম্মু সুলাইম. এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।৩ এছাড়া উম্মু সুলাইমের সন্তানদের যে পরিচয় বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায় তার মোধ্য আল-বারা’র নামটি কোথাও নেই।
হযরত রাসূলে কারীমের (সা) মদীনায় হিজরাতের পূর্বেই মদীনাবসীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের হিড়িক পড়ে যায়। দলে দলে লোক মাক্কায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবার অনেক মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সা) বিশেষ দূত হযরত মুস;য়াব ইবন উমাইরের (রা) দা’ওয়াতে মুসলামান হন। মদীনাবাসীদের ইসলাম গ্রহণের এধারা রাসূলুল্লাহার (সা) মদীনাায় আসার পরও অব্যাহত থাকে। হযরত বারা’ এর কোন এক সময়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
একমাত্র বদর যুদ্ধ ছাড়া উহুদ, খন্দকসহ বাকী সকল অভিযানে তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে অংশগ্রহণ করেন।৪ হুদায়বিয়ার ‘বায়’য়াতে রিদওয়ানে ও তিনি শরীক ছিলেন।৫ প্রথম খলীফা হযরত আবু বকরের (রা) খিলাফতকালে গোটা আরবে ভন্ড নবীদের উৎপাত শুরু হয়। এসময় ভন্ডনবী মুসায়ালাম আল কাজ্জাবের সাথে ইয়ামাামর প্রান্তরে মুসলিম বাহিনির যে ভয়াবাহ যুদ্দ হয় তাতে আল বারা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ যুদ্ধে হযরত খালিদ ইবন ওয়ালিদ ছিলেন সেনাপতি। এক পর্যায়ে তিনি সেনাপতিকে লক্ষ করে বলেনঃ আপনি উঠে আদেশ করুন।’ তারপর নিজে ঘোড়ার ওপর সাওয়ার হয়ে আল্লাহর কিছু গুণগান পাঠ করে মুসুিলম বহিনিকে সম্বোধন করে বলেনঃ ওহে মদীনার অধিবাসীগণ! আজ তোমরা অন্তর থেকে মদীনার চিন্তা মুছে ফেলো। আজ তোমাদের অন্তরে শুধু আল্লাহ ও জ্ন্নাাতের স্মরণ বিদ্যমান থাকাই বাঞ্জণীয়।৬ তাঁর এমন হৃদয়গ্রাহী ভাষণের পর গোটা বাহিনীর মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার জোয়ার আসে। সৈন্যরা নিজ নিজ অশ্বে আরোহণ করে তাঁর সাথে সাথে এসে যোগ দেয়।
এ যুদ্ধে শত্র“পক্ষের এক নেতার সাথে হযরত বারা’র হাতাহতি যুদ্ধ হয়। লোকটি ছিল তাগড়া জোয়ান। বারা প্রথমে তার পা লক্ষ্য করে তরবারির এক আঘাত হনেন। আঘাতটি লক্ষ্যভেদী ছিলেন না। তবুও লোকটি ভয়ে গড়াগড়ি যেতে থাকে।এই সুযোগ হযরত বারা মুুর্হূত্যের মধ্যে নিজের তরবারি কোষবদ্ধ করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তার তরবারিটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে এমন একটি ঘা বসিয়ে দেন যে তার দেহটি দ্বিখন্ড হয়ে যায়।৭ তারপর বিদ্যুৎ গতিতে ধর্মত্যাগীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের বাগানের প্রাচীর পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যায়। বাগানের মধ্যে মুসায়লামা অবস্থান করছিল। মুসায়লামার অনুসারী সৈন্যর উদ্যান ঢুকে পড়ে এবং তার পাশে সমবেত হয়ে উদ্যানের ফটক বন্ধ করে দেয়। বারা ইবন মালিক তাদের পিছু ধাওয়া করে প্রাচীরের নিকট পৌঁছে রুদ্ধ ফটকের সামনে থমকে দাঁড়ান। মুহুর্তের মধ্যে তিনি সিংহের মত গর্জে উঠেন এবং হুংকার ছেড়ে বলেনঃ ওহে জনমগুলী! আমি বারা ইবন মালিক। তোমারা আমার দিকে এসো, তোমরা আমার দিকে এসো মহযোদ্ধারা এগিয়ে এলে তিনি তাদের আরো বলেনঃ ওহে জনমগুলী! তোমারা আমাকে উদ্যানের অভ্যন্তারে তাদের মাঝে ছুড়ে মার। লোকেরা বললো: না, তা কেমন করে হয়। তিনি বললেন: আল্লাহর কসম! তোমরপা অবশ্যই আমাকে তাদের নিকট ছুড়ে মারবে। অতঃপর তাঁকে উচুঁ করে তুলে ধরা হয়। তিনি প্রাচীরের উপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখেন এবং মুহুর্তের মধ্যে অপেক্ষমান মুসলিম সৈন্যদের জন্য দরজা খুলে দেন। বিদ্যুৎবেেেগ মুসলিম সৈন্যরা একযোগে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং প্রচন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। উভয় পক্ষে প্রচুর হতাহত হয়।অভিশপ্ত মুসায়ালামা এখানে নিহত হয় এবং তার বাহিনী পরাজয়বরণ করে।৮ এই ইয়ামামার উদ্যান-ফাটকে বারা উবন মালিকের সাথে যাঁর যাঁর কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে যুদ্ধ করেন তাঁদের মধ্যে হযরত আব্বাদ ইবন বিশ্র শাহাদাহ বরণ করে।৯ আর এভানেই হযরত বারা একাই দশজন প্রতিপক্ষ সৈনিককে হত্যা করেন।১০ এই দুঃসহাসিক অভিযানে তাঁর সারা দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তীর, বর্শা ও বল্লমের আশিটিরও বেশি আঘাত লাগে। বাহনের পিঠে উঠিয়ে তাঁকে শিবিরে আনা হয় এবং মাসাধিককাল চিকিৎসার পর আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। হযরত খালিদ ইবন ওয়ালীদ নিজ হাতে তাঁর ক্ষতে ব্যাঞ্জেজ লাগান এবং সম্পূর্ণ নিজের তত্ববাধানে তাঁর চিকিৎসা করেন।১১ হিজরী ১৭ সনে খলীফা হযরত উমার (রা) বসারত ওয়ালী হযরত মুগীরা ইবন শুবাকে (রা) অপসারণ করে সেখানে হযরত মূসা আল আশয়ারীকে (রা) নিয়োগ করেন। মদীনা থেকে যাত্রাকালে আবু মূসা যে ২৯ ব্যাক্তি কে সংগে করে নিরয়ে যান তাদের মধ্যে আল-বারা ইবন মালিক একজন।১২ হযরত আল-বারা ইবন মালিক ইরাকের হীরক যুদ্ধেও দারুণ সাহস ও রণকৌশলের পরিচয় দেন। নগরের একটি দুর্গ মুলিম বাহিনী আবরোধ করে রেখেছে। শুত্র“ বাহিনী ভিতর থেকে আগুনে পোড়ানোর প্রচন্ড গরম কাঁচাওয়ালা শিকল দুর্গ প্রাচীরের ওপর বিছিয়ে রেখেছে যাতে কোন মুসলিম সৈনিক প্রাচীরের কাছেই ঘেঁষতে সাহস না পায়। হযরত আনাস (রা) প্রাচীর টপকানোর জন্য সাহস করে অগ্রসর হলেন। দুর্গবাসীরা কৌশলে তাঁকে শিকলে জড়িযে ওপরের দিকে টেনে তুলতে থাকে। শিকল উপরে উঠছে, এমন সময় হযরত আল-বারা তা দেখে ফেলেন। ত্বরিৎ গতিতে তিনি ছুটে গিয়ে শিকল ধরে এমন হ্যাচকা টাান মারে যে তা ছিড়ে আনাস পড়ে যায় শিকল ধরে টানার কারণে তাঁর হাতের মাংষ উঠে গিয়ে হাঁড় বেরিয়ে যায়। তবে হযরত আনাস (রা) বেঁচে যান।১৩ হিজরী ১৭ থেকে ২০ সনে পারস্যের রামহুরমুয, তুসতার ও সোসা বিজিত হয়। পারস্য বাহিনী যখন রামহুরমুযে প্রতিরোধের উদ্দেশ্য আবার সম্মিলিত হয় তখন রণক্ষেত্র থেকে মুলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি সা’দ ইবন উবাদাকে লেখা হলো প্রচুর সৈন্য পাঠান এবং তাদের মধ্যে যেন সাহল ইবন আদী, আল-বারা’ ইবন মলিক, মাজা’যা ইবন সাওর প্রমুখ বাক্তিবর্গ থাকেন।১৪ পারস্যের তুসতার অভিযাসে তিনি হযরত আবু মূসা আল-আশয়ারীর (রা) বাহিনীর দক্ষিণভাগে অধিনায়ক ছিলেন।১৫ এই যুদ্ধে তিনি একাই একশো সৈন্য নিধন করেন।১৬ ‘তুসতারে’ যুদ্ধ চলছে। শত্র“ বাহিনী সুরক্ষিত দুর্গের অভ্যান্তরে অবস্থান নিয়েছে। এলোপাথাড়ি হামলা চালিয়ে তারা মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টা করছে। ইবনুল আচীর বলেন, এ সময় তারা মুসলিম বাহিনীর ওপর ৮০টি হামলা চালায়।১৭ এমন অস্থায় একদিন হযরত আনাস (রা) তাঁর কাছে যেয়ে শোনেন,তিনি সুর করে একটি কবিতা অবৃত্তি করছেন আনাস (রা) বললেন:আল্লাহ আপনাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিস আল কোরআন দান করেছেন। তাই সুর করে পাঠ করুন। আল-বারা বললেন সম্ভবতঃ আপনার আশঙ্কা হচ্ছে, না আমি কখন মারা যাই। আল্লাহর কাছে আমার কামনা,তিনি যেন এমনটি না করেন। মরলে আমি ময়দানেয় মরবো।১৮ হযারত রাসূলে কারীম (সা) একবার তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেনঃ বিক্ষিপ্ত ও ধুলিমলিন কেশ বিশিষ্ট এমন অনেক ব্যক্তি, মানুষ হিসেবে যাদের কোন গুরুত্ব নেই; কিন্তু তাঁরা আল্লাহর নামে কসম খায়, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। আল-বারা ইবন মালিক তাদের অন্যতম। ‘তুসতারে যখন মুসলিম বাহিনী শত্র“ বাহিনী দুর্গের পতন ঘটতে অক্ষম হয়ে পড়ে তখন তাঁদের হযরত রাসূলে কারীমের (সা) উপরোক্ত বাণী স্মরণ হয়। তাঁরা হযরত আল-বারা’র (রা) নিকট এসে আবদার করেন, আপনি আল্লাহর নামে একটু কসম খান। তিনি বললেন,‘হে আল্লাহ,আপনার নামে কসম খায়ে বলছি, আজ আপনি মুসলমানদের একটু বিজয় দান করুন এবং আমকে রাসূলুল্লাহর (সা) দর্শন দান করে সম্মানিত করুন।১৯ এ সময় মুসলিম সৈন্যর দুর্গ অভ্যান্তরে প্রবেশের একটি সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পায়। হযরত আল-বারা হযরত মাজায’ কে (রা) সংগে নিয়ে সুড়ঙ্গ পথ দিয়ে দুর্গ অভ্যন্তরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। সুড়ঙ্গ থেকে বের হতে ইযরত মাজায শত্র“দের নিক্ষিপ্ত একটি বড় পাথরের শাহাদাত বরণ করেন।২০ হযরত আল-বারা ও মুরযাবান আয’রা মুরযাবান আযার নামক এক পারসিক সৈনিকের সামনাসমনি পড়ে যান। সে হযরত আল-বারার (রা) পথ রোধ করে দাঁড়ায়। কিন্তু তিনি মুরযাবানকে হত্যা করে বীর বিক্রমে শত্রু বাহিনীর সকল প্রতিরোধ তছনছ করে দুর্গের দ্বার পর্যন্ত পৌছে যান। সেখানে খোদ হরমুযানের মুখোমুখি হন। দুই জনের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়। অবশেষে হরমুযানের হাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেণ।হরমুযান তাকে হত্যা করে তাঁর অস্ত্র-শস্ত্র ও পোষাক-পরিচ্ছেদ হাতিয়ে নেয় এবং তা ্িত্রশ হাজারেরও বেশি মুদ্রায় বিক্র করে। তবে তাঁর এ সহসিকতায় রণক্ষেত্রে মুসরমানদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্টিত হয়।।ঐতিহাসিক ওয়াকিদীর মতে এটা হিজরী ২০ সনের ঘটনা। মতান্তারে হিজরী ১৯ অথবা ২৩ সনের ঘটনা।২১ আল্লামা যিরিক্লী বলেনঃ তিনি তুসতারে পূর্বে ফাটকে শাহাদাত বরণ করেন এবং সেখানেই তাঁরা কবর।২২ হযরত আল-বারা ইবন মালিক ছিলেন হযরত রাসূলে করীমের (সা) বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্তর্গত। আনেক বছর যাবত তিনি রাসূলে পাকের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন। রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ নিঃসৃত অসংখ্য হাদীস নিশ্চয় তিনি শুনে থাকবেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তাঁর বর্ণিত হাদীস তেমন দেখা যায় না সম্ভবতঃ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে এদিকে মনোযোগ দিতে পারেননি। আল-ইসতঅ’য়াব গ্রন্থকার লিখেছেনঃ আল-বারা ছিলেন মর্যাদাবার সাহাবীদের অন্তুর্গত।২৩ আল্লামা জাহাবী বলেছেন: তিনি ছিলেন মহান নেতাদের একজন। চরম সাহসী বীর, অশ্বরোহণ ও কঠিন বিপদের মুকাবিলায় ছিলেন একজন প্রবাদপুরুষ।২৪ এ কারণে হযরত উমার (রা) তাঁকে কখনো কোন বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেননি। অন্য সামরিক অফিসারদের একবার তিনি লেখেন: ‘বারা’ কে তোমরা কোন মুলিম বাহিনীর আমীর নিয়োগ করবে না। সে একজন মানুষ, সে একটি বারা বা বিপদ। সামনেই যাবে, পিছনে ফিরতে জানে না।অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে: ‘ সে একটি ধ্বংস। তবে বাহ্যত: তিনি দেখতে দুর্বল ছিলেন।২৫ ‘রিজালুন হাওলার রাসূল’ গ্রন্থকার খালিদ মুহাস্মদ বলেন: তাঁর ঐকান্তিক বাসানা ছিল শহীদ হয়ে মরার।আল্লাহ পাক তাঁর সে বাসনা পূরণ করেন। আল-মুসতাদরিক ইবন ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন, আনাস ইবন মালিক বলতেন আল-বারা ইবন মালিক সুমধুর কন্ঠের অধিকারী ছিলেন। গান গাওয়ার সখও তাঁর ছিল হযরত আনাস বলতেন: বারা পুরুষদেরকে উট চরানোর গান গেয়ে শোনাতেন।২৬ একবার রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে এক সফরে তিনি একটি গান গচ্ছেন। রাসূল (সা) তা শুনে আল-বারা কে বলেন: মাহিলাদের কথা একটু মনে রেখ্ একথা শনে তিনি চুপ হয়ে যান।২৭
তথ্যসূত্র:

আল-বারা’ ইবনে মারুর (রাঃ)

নাম আল-বারা’ এবং ডাক নাম আবু বিশ্র। মদীনাদর বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু সালমা শাখার সন্তান। পিতা মা’রুর ইবন সাখার এবং মাতা আর রুবাব বিনতুন নু’মান। মা আউস গোত্রের নেতা হযরত সা’দ ইবন মুযাজের ফুফু।১ হযরত আল-বারা ইবন মারুর ছিলেন স্বীয় গোত্রের রয়িস বা নেতা। মদীনার বেশ কয়েকটি দুর্গ ও উদ্যান ছিল তাঁর মালিকানাধীন। তাঁর জন্ম সন সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না।২
হযরত আল-বারা ইবন মারুর যে আকার সর্বশেষ বইয়াতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। অনেকের মতে তিনি আকাবার প্রথম বাই‘য়াতে উপস্থিত ছিলেন এবং রাসূলূল্লাহর (সা) হাতে বাই‘য়াতে অংশ নিয়েছিলেন।৩ ইবনুল আসীরও বর্ণনাটি নকল করেছেন।৪ অনেকের মতে এই বর্ণনাটির কোন ভিত্তি নেই। একমত্র মুহাম্মদ ইবন ইসহাক ব্যতিত আর কোন সীরাত বিশেষজ্ঞ এটি নকল করেননী।৫ হযরত আল-বরা’ ইবন মারুর যে সময় ইসলাম গ্রহণ করেন তখন বাইতুল মাকদাস মুসলমাসদের কিবলা। মুসলমারা সে দিকে মুখ করে নামায আদায় করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। একারণে তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কা’বার দিকে মুখ করে নামায আদায় শুরু করলেন। ইমাম যুহুরী বলেছেন: আল-বারা ইবন মারুর প্রথম ব্যক্তি যিনি জীবিত ও মৃত উভয় আবস্থায় কা’বার দিকে মুখ করেছেন।৬ হযরত রাসূলে কারীম (সা) যখন বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন, সে সমযও তিনি কা’বামুখী হয়ে নামায আদায় করেছেন। রাসূল (সা) একথা জানতে পেরে তাঁকে বাইতুল মাকদাসের দিকে মুখ করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাকে তোমার কা’বামুখী করে দাও।৭ হযরত আল বারা ইবন মারুর আকাবার শেষ বাইয়াতের একজন সদস্য। এ বাইয়াতের অন্যততম সদস্য হযরত কা’ব ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন: হজ্বের মওসুমে, যে বার আমরা রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াত করেছিলাম আমাদের কাওমের পৌত্তলিকদের সাথে আমারও মদীনসা থেকে বের হলাম। আমাদের সথে ছিলেন আমাদের বয়োঃজ্যেষ্ঠ নেতা আলÑবারা ইবন মারুর।যখন আমরা আল-বায়দা’র উপকণ্ঠে,তিনি আমাদের বললেন: এই তোমরা শোন! আমি একটি শিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। জানিনে তোমরা বামার সাথে একমত হবে কিনা। আমনা বললামঃ আবু বিশ্র! বলুন তে আপনার সিদ্ধান্ত কি? বললেনঃ আমি এই গৃহের (কা’বা) দিকে মুখ করে নামায আদায় করবো এবং তা কক্ষনো আমার টিছনে রাখবো না। আমরা বললামঃ আল্লাহর কসম! আপনি এমনটি করবেন না। করণ, আমরা জানি, রাসূল (সা) কেবল শামের দিকেই মুখ করে নামায আদায় করেন। আমাদের এ অনুরোধের পরও তিনি বললেন: কসম আল্লাহর! আমি ঐদিকেই মুখ করে নামায আদার করবো! যখন নামাযের সময় হলো, তিনি কা’বা মুখী হয়ে দাঁড়ালাম শামের দিক মুখ করে! এভাবে আমরা মাক্কায় পৌচ্ছালাম।
মক্কায় পৌঁছে তিনি আমাকে বললেন: ভাতিজা! আমাকে একটু রাসূলল্লাহর (সা) কাছে নিয়ে চলো। আমি যা করেছি, সে বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাই। কারণ, তোমাদের বিরোধিতা করে আমি অন্তরে একটু অস্বস্তি বোধ করছি। কা’ব বলেন: আমরা রাসূলের (সা) খোঁজ বেরিয়ে পড়লাম। আবতাহ উপত্যাকায় এক ব্যক্তির দেখা পেলাম। তাকে বললাম: আমাদেরকে একটু মুহাম্মদের সন্ধান দিতে পরেন? আল্লাহর কসম! মোটেয় না। সে প্রশ্ন করলোঃ তোমরা কি আব্বাসকে চেন? বললাম: হাঁ, তা চিনি। তিনি মাঝে মাঝে তিজারাতের উদ্দেশ্যে আমাদের ওখানে যান তো। সে বললো : মসজিদে ঢুকতেই তোমরা আব্বাসকে দেখতে পাবে। তাঁর সাথে যে লোকটি বসা,তিনিই মুহাম্মদ।
কা’ব বলেন: আমরা মসজিদে ঢুকে দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ (সা) ও আব্বাস এক কোণে বসে আছেন। আমরা কাছে গিয়ে সালাম দিয়ে বসে পড়লাম। রাসূল (সা) ‘আব্বসকে লক্ষ্য করে বললেন: আবুল ফাদল! এ দুজনকে আপনি চেনেন। আব্বাস বললেন: হাঁ চিনি।ইনি আল-বারা ইবন মারুর তার গোত্রের নেতা।। আর ইনি কা’ব ইবন মালিক। রাসূল (সা) জিঞ্জেসা কররেন: সেই কবি কা’ব? আব্বাম বললেন হাঁ এবার আল-বারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি মদীনা থেকে আসার পথে একটি সিদ্ধান্তে পৌছেচ্ছি। আমার ইচ্ছা, সে বিষয়ে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করি। তিনি বললেন: তা বিষয়টি একটু পরিস্কার করে বল। আল-বারা বললেন: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই গৃহকে (কাবা) আর কক্ষনো পেছনে রাখবো না। এ দিকে মুখ করেই নামায আদায় করবো। রাসূল (সা) তাঁকে বললেন: তুমি ে য কিবরার ওপর ছিলে তার ওপর যদি একটিু ধৈর্য ধরে থাকতে। এরপর আল-বারা রাসূলের (সা) কিবলার দিকে ফিরে যান এবং আমাদের সাথে শামের দিকে মুখ করে নাময আদায় করের। তাঁর পরিবারের লোকেরা বলতো তিনি তাঁর কিবলার ওপরই মৃত্যুবরন করেছেন।
কা’ব বলেন: আমরা জানি তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) কিবলার দিকে প্রত্যার্তবন করেছিলেন এবং আমাদের সাথে শামের ুদিকে মুখ করে নামাযও পড়েছিলেন। তারপর আমরা আইয়্যামে তাশরীকের মাঝামাঝি সমায়ে আকাবায় রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে মিলিত হওয়ার জন্য কথা দিলাম। আমাদের সাথে যে সকল মুষরিক (পৌত্তলিক) ছিল তাদের কাছে বিষয়টি গোপন রাখলাম। আমাদের সাথে জাবিরের বয়োবৃদ্ধ পিতা আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম ছিলেন। তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। তবে তাঁর অল্পবয়স্ক ছেলে জাবির ইসলাম গ্রহন করেছিলেন এবং এই কাফিলায় ছিলেন।
কা’ব বলেনঃ আমরা সবাই মিলে আবদুল্লাহকে ঘিরে ধরে বললাম: জাবিরের আব্বা, আপনার জন্য আমদের দুঃখ হয়। আপনি যে বিশ্বাসের ওপর আছেন,তার ওপর যদি মারা যান তাহলে কালই এই আগুনের ইন্ধনে পরিনত হবেন। অথচ আল্লাহ একজন রাসূল পাঠিয়েছেন। তিনি আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাত ও ইবাদতের দিকে মানষকে আহবান জানাচ্ছেন। আপনার সম্পদ্রায়ের আনেক তাঁর প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হয়েছে। আমরা রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাই’য়াতের জন্য আঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। আমাদের একথার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং বাই’য়াতে শরীক হন। অবশেষ মিনার সেই প্রতিশ্র“তি রাতটি এসে গেলে। মানুষ যখন গভীর ঘুমে অচেতেন, আমরা মরুভূমির কাতা পাখির ন্যায় শয্যা ছেড়ে উঠে পড়লাম এবং এক সময় আকাবায়ে সমবেত হলা। রাসূল (সা) চাচা আব্বাসকে সংগে নিয়ে আসলেন। মুহাম্মাদ ্পামাদের মধ্যে কেমন আছেন, তা তোমরা জান। তিনি স^ীয় সম্পদায়ের মধ্যে সম্মান ও নিরাপত্তার মধ্যে আছেন। আমরা তাঁকে রক্ষা করেছি। কিন্তু তিনি তোমাদের আহবানে সাড়া দিয়ে তোমাদের কাছেই যেতে চান। যদি তোমরা প্রতিশ্রুতি অঙ্গীকার পালন করতে পারবে বলে মনে কর তাহলে তাঁকে নিয়ে যাও। আর যদি অপমান ও লাঞ্জনার ভয় কর তাহলে তাকে নিজ কাওমে থাকতে দাও। তিনি তার নিজ সম্প্রদায়ের কাছে সম¥ান ও নিরাপত্তার মেধ্য আছেন।
আমরা বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! এবার আপনি কিছু বলুন। রাসূল (সা)বক্তব্য রাখলেন, আল্লাহর কাছে দুআ কররেন এবং কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করলেন। তারপর আমরা রাসুলুল্লাহকে (সা) বললাম: আপনার নিজের ও আপনার রবের জন্য আমাদের নিকট থেকে বা’য়াত গ্রহণ করুন। রাসূল (সা) বললেন: আমি আপনাদের নিকট থেকে এই কথার ওপর বাই’য়াতে গ্রহণ করছি যে,যা থেকে আপনারা আপনাদের সন্তানের ও নরীরে রক্ষা করে থাকেন তাথেকে আমাকেও রক্ষা করবেন।
জবাবে আল-বারা ইবন মারুর বললেন: হাঁ যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, সেই সত্তার নামে শপথ, যা থেকে আমরা আমাদের জীবন ও নারীদের রক্ষা করি তা থেকে আপনাকেও রক্ষা করবো। অতপর আমরা রাসূলুল্লাাহর (সা) হাতে বাই’য়াত করলাম। আল-বারা ইবন মা’রুর আবেদন জানালেন: ইয়া রাসূলুল্লাহর (সা) হতে বাই’য়্যত করলাম। আল-বারা ইবন মারুর আবেদন জানালেন: ইয়া রাসূলুল্লাহর! আপনার হাতটি একটু বাড়িয়ে ুদিন আমরা বাইয়াত করি। রাসূল (সা) হতে বাড়িয়ে দিলে তিনি হাতে হাত রাখেন এবং আমদের মধ্যে সর্বপ্রথম বাই’য়াতকারী তিনি। তারপর অন্যরা একের পর এক বাই’য়াত করতে থকে।৮ ‘আকাবার শেষ বাই’য়াতে কে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে হাত রেখে বাই’য়াত করেন সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। বনু নাজ্জারের লোকেরা দাবী করেছেন, এ গৌরবের অধিকারী আস’য়াত ইবন যুরারা আর বনু আবদিল আশহালের লোকেরা দাবী করেছেন, আবুল হায়সাম ইবন আত-তায়্যিহান। তবে কা’ব ইবন মালিকের সূত্রে ইমাম যুহরী বলেছেন, এ অনন্য গৌরবের অধিকারী আল-বারা ইবন মারুর। এটি ছিল বনু সালামার লোকদের বিশ্বাস।৯ ইবন ইসহাকও একতাও বলেছেন।১০ আল্লামা যিরক্লী বলেন: যে বার আনসাদের সত্তর জন ‘ আকাবায় রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর হতে বাইয়াত করেন। সেই বার সর্বপ্রথম আল-বারা ইবস মারুর আনসারদের পক্ষে থেকে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে কথা বলেন।১১ বাইয়াতের পর রাসূল (সা) তাঁকে ও জাবিরের পিতা আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবস হারামকে বনু সালামার নাকঅব ঘোষনণা করেন।১২ পূব্র্ইে উল্লেখ করা হয়েছে, এই শেষ আকাবায় প্রখ্যাত সাহাবী জাবির ইবন আবদিল্লাহর পিতা আবদুল্লাহ ইবন আমর ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম সময় হযরত আল-বারা তাঁকে দুই প্রস্থ পরিচ্ছন কাপড় দেন এবং তিনি তাই পরে কালেমা পাঠ করেন।১৩ শেষ আকাবাব বাইয়াতে যে সকল নেতার সাথে তাঁদের ছেলেও অংশগ্রহণ করেছিল, আল-বারা তাদের একজন। তার ছেলে বিশর ইবন আল-বারাও সেদিব বাই‘য়াত করেছিলেন।১৪
নবুয়াতের দ্বাদশ বছরের জ্বিলহাজ্জ মাসে আকাবায়ে তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাই‘য়াত করেন। এর মাত্র দুই মাস পরে সফর মাসে তিনি মদীনায় ইনতিকাল করেন। মৃত্যুর সময় আসীয়াত করে যান, আমাকে কাবার দিকে মুখ করে কবরে রাখবে, আর আমার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য থাকবে। তিনি যেখানে ভালো মনে করেন সেখানে খরচ করবেন। ইবন ইসহাকের মতে এটা রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় আগমনের পূর্বের ঘটনা।১৫ ইবনুল আসীরের এই মত সঠিক বলে মনে হয় না। কারণ তাঁর পূর্বে আরও দুই একজন মুসলানের মদীনায় মৃত্যুর কথা জানা যায়। তবে নকঅবদের মধ্যে সর্ব প্রথম তিনি ইনতিকাল করেন বলে আল্লামা যিরিকলী যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক।১৬
হযরত রাসূলে কারীম (সা) হিজরাত করে মদীনায় আসলেন। সাহাবীদের সংগে নিয়ে তিনি আল-বারা কবরে যান এবং চার তাকবীরে সাথে তাঁর জনাযার নামায আদায় করেন। আর যে সম্পদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর অনুকূলে অসীয়াত করে গিয়েছিলেন, তা তিনি গ্রহন করে পুনরায় আল-বারা ছেলেকে দান করেন।১৭
আবদুল্লাহ ইবনে আবী কাতাদাহ্ বলেছেনঃ মদীনায় আসার পার রাসূল (সা) সর্বপ্রথম আল-বারা ইবস মারুরের জানাযার নামায পড়ে। সংগীদের নিয়ে তিনি তাঁর কবরের কছে যান এবং কাতার বন্দী হযে তাঁর জন্য দু‘আ করেন:
(হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন, তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি সন্তুষ্ট হউন।)
অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা) তার জন্য এই বলে দু‘আ করেনঃ১৮ হে আল্লাহ আপনি আল-বারা ইবন মা’রুরের প্রতি রহমত বর্ষন করুন। কিয়ামতের দিন আপনার ও তার মাঝে আড়াল না রাখুন এবং তাকে জান্নাতবসী করুন।)
হযরত আল-বারা মা-রুর (রা) সন্তানাদির তথ্য পাওয়া যায় না। সীরাতের গ্রন্থসমূহে শুধু এতটুকু পাওযা যায় যে বিশ্র নামে তার এক ছেলে ছিল এবং তিনি আকাবার শেষ বাইয়াতের শরীক হয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াত করেছিলেন।১৯ হযরত আল-বারার মৃত্যার পর হযরত রাসূলে করীম (সা) তাকে বনু সালামর নেতা মনোনীত করেন। খাইবার যুদ্ধের সময় যয়নাব বিনতুল হারিস নাম্নী এক ইয়াহুদ মাহিলা ছাগলের গোশতের সাথে বিষ মিশিয়ে রাসূলুল্লাহকে (সা) খাওয়ায়। হযরত বিশরও সেই বিষ মিশ্রিত গোশত খেয়েছিলেন এবং তারই ক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।২০
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে হযরত আল-বারা ইবন মারুর (রা) ইসলাম গ্রহণের পরই মক্কার কা‘বাকে কিবলা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং মরণকালেও সেই দিকে মুখ করে কবর দেওয়ার জন্য অসীয়াত করে যান। তখনও কিন্তু ইসলাম কা’বকে কিবলা বলে ঘোষনা দেয়নি। কেন তিনি এননটি করেন? তিনি কি বুঝেছিলেন ভবিষ্যতে কা’বাই হবে ইসলামের কিবলা? তাঁর কী সৌভাগ্য যে পরবর্তীকালে তাঁর মৃত্যুর পর অনেক পরে তাঁরই গৃহে রাসূলুল্লাহর (সা) অবস্থানের সময় আল্লাহ পাক ওহীর মাধ্যমে কা’বাকে কিবলা হিসেবে ঘোষনা করেন এবং রাসূল (সা) তারই গৃহে সর্বপ্রথম মক্কার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন।ঘটনাটি এই রকম: আল-বারা ইবন মারুরের স্ত্রী হযরত উম্মু বিশ্র (রা) আল-বারার বাড়ীতে হযরত রাসূলে করীমের (সা) জন্য একবার খাবার তৈরী করলেন। তিনি সেই খাবার খেয়ে সাহাবীদের নিয়ে জুহরের নামাযে দাঁড়িয়েছেন। দুই রাকায়াতে শেষ হতেই কা’বার দুকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ আসে। বাকী নামায তিনি কা’বার দিকে ফিরে আদায় করেন। এটা দ্বিতীয় হিজরীর শা’বান মতান্তারে রজব মাসের মাঝামাঝি মঙ্গলবারের ঘটনা।২১
আনসারী কবি আওন ইবন আইউব তাঁর একটি কাসীদায় আনাসরদের গৌরবসযয় কীর্তি কান্ড তুলে ধরেছেন। তারই একটি পংক্তিতে তিনি আল-বারা ইবন মারুর সর্বপ্রথম হিশাস পংক্তিটি তাঁর সীরাত গ্রন্থে সংকলন করেছেন।২২ সীরাত বিশেষজ্ঞগণ আল-বারা ইবন মারুর (রা) নিন্মের পাঁচটি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন।২৩
সীরাত বিশেষজ্ঞগণ আল-বারা’ ইবন মা’রূরের (রা) নিুের পাঁচটি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন:২৪
তথ্যসূত্র:

আল বারা ইবন ‘আযিব ’(রা)

মদীনার বিখ্যাত আউস গোত্রের বনু হারেসা শাখার সন্তান আল-বারা’। আনসারী সাহাবী। কুনিয়াত বা ডাকনাম আবু ‘উমার,মতাস্তারে আবু আমর বা আবুত তুফাইল।১ উবনুল আসীরের মতে আবু আমর সর্বধিক সঠিক।২ পিতা আযিব ইবনুল হারেস সাহাবী ছিলেন।৩ মাতা হাবীবা বিনতু আবী হাবীবা ইবনুল হুবাব, মতান্তাতরে উম্মুল খালিদ বিনতু সাবিত। মায়ের নাম যাই হোক না কেন তিনি বদরী সাহাবী আবু বুরদ্হা নিয়ার এর আপন বোন এবং প্রখ্যাত সাহাবী আবু সা’ঈদ আল খুদরঅর (রা) চাচতো বোন।৪ সাহীহাইন ও বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থে আল-বারা’র সম্মনিত পিতা আসির সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। আল-বারা বলেন: একবার আবু বকর (রা) আযিবের নিকট থেকে দশ দিরহাম দিয়ে একটি জিন কেনেন। তারপর তিনি আযিবকে বলেন আপনি আল-বারা কে একটু বলুন সে যেন জিনটি আমার বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসে। আযিব বললেন: না তা আমি বলছিনা যতক্ষণ না আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে আপনার হিজরাতের সফরকাহিনী শুনাচ্ছেন। অগত্যা আবু বকর (রা) বলতে শুরু করলেন।৫ হযরত রাসূলে করীম (সা) যখন মদীনা হিজরাত করেন তখন আল-বারা নয় দশ বছরের কিশোর। মদীনায় তখন ইসলামের দা’ওয়াত জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁর মামা আকাবায় বাই’য়াত করেছেন এবং পিতাও তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি দিয়েছেন। এমনই দুইটি পরিবারে আল-বারা বেড়ে ওঠেন। তাই যিরক্ল বলেছেন: তিনি ছোট্ট বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন।৬ সেই কৈশোরে তিনি ইসলামের হুকুম –আহকাম ও মাসালা-মাসায়িল শেখার জন্য আতœনিয়োগ করেন। মদীনায় তখন হযরত মুস’য়াব ইবন উমাইর ও ইবন উম্মে মাকতুমের (রা) মজলিস কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মূলত: তিনি শৈশবের শিক্ষা সেকানেই লাভ করেন। প্রথামে পবিত্র কুরআন পড়তে শুরু করেন। পরবর্তীকালে আল-বারা রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম মদীনায় আসেন মুস’য়াব ইবন উমাইর ও ইবন উম্মে মাকুতম। তাঁর দু’জন আমাদের কুরআন শেখাতেন। উমার ইবনুল খাত্তাব। তাদের পর আবু বকরকে সংগে নিয়ে আসেন রাসূলুল্লাহর (সা)। উৎফুল হতে আর কোন ব্যাপারে দেখিনি। তিনি যথন আসেন তখন আমি সাব্বিহ ইসমা বাব্বিকাল আ’লা’-এর মত মুফাসসাল সূরা মাত্র পড়েছি।৭ বদর যুদ্ধ যখন হয় তখন আল-বারা কৈশোর অতিক্রম করেননি। তাবে তাঁর ঈমানী আবেগ ছিল যেবৈনে ভরপুর। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহর (সা) সামনে হাজির হলেন; কিন্তু যুদ্ধের বয়স না হওয়ায় তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। বদর যুদ্ধ সম্পর্কে হযরত আল-বারা’র একটি বর্ণনা আছে। তিনি বলেন: আমরা বলাবলি করতাম, বদর যুদ্ধ ছিল তিন শো দশজনের কিছু বেশী- তালুতের সাথে নদী অতিক্রম করেছিল তাদের সমসংখ্যক। আর তলুতের সাথে নদী অতিক্রম করেছিল কেবল ঈমানদাররা ব্যক্তিরাই। তিনি আরও বলেন: বদরে আমি ও ইবন উমার যুদ্ধের উপযোগী বয়স থেকে ছোট হয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহর (সা) আামাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। বদরের দিন মুহাজিরদের সংখ্যা ছিল ষাটের কিছু বেশি, আর আনসারদের সংখ্যা ছিল দুই শো চল্লিাশের কিছু বেশী।৮
হযরত আল-বারা সর্বপ্রথম কোন যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে যোগ দেন এবং রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তার যুদ্ধের সংখ্যা মোট কত সে সম্পর্কে কিছুটা মতপার্থক্য আছে। ইবনুলন আসীর ইবন আবদিল বার ইবন হিশাম, ওয়াকিদী ইবন সাদ, আল-ওসকারীর ত সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি সর্ব প্রথম খন্দক যুদ্ধে যোগদান করেন। ইবন হিশাম বলেনঃ রাসূল (সা) তাকে বদরে ফিরিয়ে দেন এবং খন্দকে অনুমতি দান করেন। তখন তাঁর বয়স পনোরো বছর।৯ ওয়াকীদী বলেনঃ ইবন উামার আল-বারা ইবন আযিব আবু সাঈদ আল-খুদরি ও যয়িদ ইবন আরকাম-এ চার জন সাদ মুহাম্মদ ইবন আযিবকে যুদ্ধে যোগ দেন। নাফে’র বর্ণনামতে এটাই সর্বাধিক সঠিক।১০ ইবন সা’দ মুহাম্মদ ইবন আযিবকে যুদ্ধে যাওয়ার আনুমতি দান করেন। তখন তার বয়স পনেরো বছর। এর পূর্বে তিনি অনুমতি দেননি।১১ উপরোক্ত মতপার্থক্যের কারণে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তিনি মোট কতটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন সে সম্পর্কে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। যাঁরা তাঁর উহুদ শরীক হওয়ার কথা বলেছে, তাদের হিসাবে পনেরটি; আর যাঁরা উহুদ বাদ দিয়েছেন তাদের হিসেবে চৌদ্দটি।১২ আর এই যুদ্ধের সাথে যদি অন্য সফর যোগ করা হয় তাহলে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তাঁর মোট পনেরটি যুদ্দ করেছি। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহর (সা) আঠোরটি সফরের সঙ্গী হয়েছি।১৩ খন্দক থেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) জীবদ্দশায় সংঘটিত সকল যুদ্ধে তিনি যোগদান করেন। ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার বাই’য়াতে অংশ গ্রহন করেন। এ বছর রাসূল (সা) ১৪০০ সঙ্গী নিয়ে উমরার উদ্দেম্য মক্কায় যাচ্ছিলেন। এই কাফেলায় আল-বারা ও ছিলেন। পথিমধ্যে কুরাইশদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রাসূল (সা) হুদাইবিয়া উপত্যকায় শিবির স্থাপন করেন।সঙ্গীরা বরলেন, এখানে তো পানি নেই। তবে সেখানে একটি মরা কূপ ছিল। রাসূল (সা) নিজের বান্ডিল থেকে একটি তঅর বের করে একজনের হাত দিয়ে বললেন, যাও ঐ কূপের মদ্যে গেড়ে দিয়ে এসো। সে তীরটি হাতে নিয়ে কূপের মধ্যে নেমে গেঁড়ে দিয়ে আসতেই পানি উথলে উঠতে শুরু করলো।১৪ ইবন ইসহাক বলেছেন, আল-বারা দাবী করতেন তিনিই সেই ব্যক্তি যে হুদাইবিয়ার কূপে রাসূলের (সা) তীর গেড়ে ছিল।১৫ তবে ইবন হাজার আসকিলানী বলেন, প্রসিদ্ধ মাতে তীর গেড়ে ছিলেন নাজিয়াহ্ ইবন জুনদুব।১৬
এই হুদায়বিয়ার বাই’য়াত সম্পর্কে আযিবের একটি মন্তব্য বুখারী সহ সঅরাতের বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আল-বারা বলতেন, লোকেরা মক্কা বিজয়কে আল-ফাত্হ বা মহা বিজয় বলে মনে করে। হাঁ, মক্কাকে বিজয় ও একটি বিজয়। তবে হুদাইবিয়ার দিনের বাই’য়াতে রিদওয়ানকে আমরা প্রকৃত বিজয় বলে মনে করি। সেই দিন আমরা রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে ১৪০০ লোক ছিলাম।১৭ তিনি হুনাইন যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন এবং খুব সাহসের সাথে শত্র“র মুকাবিলা করেছিলেন। বুখারী আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বনু কায়েসের এক ব্যক্তিকে আল-বারা ইবন আযিবের নিকট প্রশ্ন করতে শুনেছেন। প্রশ্নটি এই রকম: আচ্ছা, হুনাইনের দিন আপনারা কি রাসূলুল্লাহর (সা) ছেড়ে পালাননি। হাওয়াযিন গোত্র তীর চালনায় পারদর্শী। আমরা হামলা চালালে তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তভন আমরা গনীমাত সংগ্রহের জন্য ঝাপিয়ে পড়ি। বনু হাওয়াযিন আবার তীর দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। আমি তখন রাসূলুল্লাহর (সা) তাঁর সাদা খচ্চরের ওপর বসে থাকতে এবং আবু সাফিয়াকে তার লাগাম ধরে রাখতে দেখেছি। খচ্চরের ওপর বনেস তিনি এই কথগুলি উচ্চারণ করছিলেন।
আমি নবী, একা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের বংশধর। হে আল্লাহ, আপনার সাহায্য পাঠান।’
আল-বারা বলেন, যখন ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হলো তখন আমরা রাসূলুল্লাহকে (সা) ঘির আড়াল করে দাঁড়ালাম।১৮
তায়িফ যুদ্ধের এবং বিদায় হজ্জের পূর্বে হযরত রাসূলে কারীম (সা) ইয়ামানবাসীদের নিকট ইসলামের দা’ওয়াত পৌছানোর উদ্দেশ্যে একদল লোক সেখানে পাঠান। হযরত আল-বারা’ ইবন ’আযিবও সেই দলে ছিলেন। বায়হাকী বর্ণনা করেন, আল-বাা’ ইবন ’আযিব বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা) ইয়ামনবাসীদের নিকট ইসলামের দা’ওয়াত পৌছানোর উদ্দেশ্যে খালিদ ইবন ওয়ালীদকে সেখানে পাঠালেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। ছয়মাস ধরে আমরা মানুষকে ইসলামের দা’ওয়াত দিলাম কিন্তু তেমন সাড়া পাওয়া গেল না। অত:পর রাসূল(সা) ইবন ’আলী ইবন আবী তালিবকে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন, খালিদের সাথে যারা আছে তাদের কেই ইচ্ছা করলে আলীর সাথে থেকে যেতে পারে। আল-বারা’ বলেন: আমি আলীর সাথে থেকে গেলাম। যখন আমরা হামাদান গোত্রে গেলাম, তারা আমাদের কাছে আসলো। যেয়ে আমাদের নিয়ে নামায আদায় করলেন। নামায শেষে আমরা কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। আলী আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ইয়ামনবাসীদের প্রতি লেখা রাসূলুল্লাহর (সা) পত্রখানি পঠ করে শোনালেন। হামাদান গোত্রের লোকেররা ইসলাম গ্রহণ করলো। আলী তাদের ইসলাম গ্রহণের খবর জানিয়ে রাসুলকে (সা) পত্র লিখলেন। পত্র পাঠ করে তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর মাথা উঠিয়ে দুইবার বললেন: ‘আস্সালামু’ আলা-হামাদান, ’আস্সালামু ’আলা-হামাদান।’১৯
খলীফা হযরত ’উমার ইবনুল খাত্তাবের খিলাফতকালে হিজরী ২০ সনে পারস্যের তুসতার বিজয়ে তিনি আবূ মুসা আল-আ’য়ারীর বাহিনীতে ছিলেন।২০ আবু আমর আশ-শায়বানী বলেন, আল-বারা’ ইবন ’আযিব হিজরী ২৪ সনে পারস্যের রায় জয় করেন।২১ ইমাম নাবাবী বলেন: আল-বারা’ ইবন আযিব ও তাঁর ভাই ’উবাইদ ইবন ’আযিব উট, সিফ্ফীন ও নাহ্রাওয়ানের-দ্ধগুলিতে আলীর পক্ষে যুদ্ধ করেন।২২
শেষ জীবনে তিনি কুফায় একটি বাড়ী তৈরী করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। এ সময় অন্ধ হযে যান।২৩
হিজরী ৭২ মতান্তরে ৭১ সনের হযরত মুসয়া’ব ইবন যুবাইর যখন কুফার আমীর তখন আল-বারা’ সেখানে ইনতিকাল করেন।২৪ ইতহাসে তাঁর এই সন্তানগুলির নাম পাওয়া যায়: আর-বারী’, ’উবাইদ, লুত, সুওয়াই ও ইযায়ীদ। তবে ইমাম নাবাবী বলেছেন: তিনি ইযায়ীদ ও সুওয়াইদ নামে দুই ছেলে রেখে যান।২৫ ইমাম নাবারীর এই মত সঠিকবলে মনে হয় না। কারণ ’তাহজীবুল কামাল ফী আসমায়র রিজাল’ গ্রন্থকার বলেছেন, তাঁর চার ছেলে- আল-রাবী, ’উবাইদ, লুত ও ইযায়ীদ তাঁদের পিতার নিকট থেকে হাদীস শুনেছে এবং বর্ণনাও করেছেন।২৬ ইযায়ী এক সময় আম্মানের আমীরও হয়েছিলেন।২৭ সুওয়াইদের জীবনীতে ইবন সা’দ লিখেছেন যে, সুওয়াইদ আম্মানের সর্বোত্তম আমীর হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিলেন।২৮ সম্ভবত” ইযায়ীদ ও সুওয়াইদ দুই জনই আম্মানের আমীর হয়েছিলেন।
হযরত আল-বারা’ ইবন ’আযিব সব সময় হাতে একটি সোনার আংটি পরতেন। লোকে বললো: সোনা তো পুরুষের জন্য হারাম। তিনি বললেন: শোন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা) গনীমাতের মাল বন্টন করলেন। শুধু একটি আংটি থেকে গেল। তিনি এদিক ওদিক তাকালেন। তারপর আমাকে ডেকে বললেন: ধর, এটা পরো। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাকে পরাচ্ছেন। একণ তোমরাই বল, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাকে পরিয়েছেন, আমি তা কেমন করে খুলি?২৯
হযরত আল-বারা’ ইবন ’আযিব ছিলেন একজন অতি মর্যাদাবান সাহাবী। রাসূলুল্লাহ সা) হাদীসের প্রচার ও প্রসারে ছিলেন বিশেষ মনোযোগী। ঁতার সূত্রে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা মোট ৩০৫ টি। তারমধ্যে ২২টি মুত্তাফাক আলাইহি। ১৫টি বুখারী এবং ৬টি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন।
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি বিশে সতর্কথা অবলম্বন করতেন। এ শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন। খোদ রাসূলে পাকের (সা) নিকট থেকে। এবার রাসূল (সা) তাঁকে একটি দু’আ শিখিয়ে দেন। তিনি আবার তা আল-বারা’র মুখ থেকে শুনতে চান। আল বারা’ ’বিাবিয়্যিকা’-এর স্থলে ‘বিরাসুলিকা’ পাঠ করেন। রাসূল (সা) শব্দটি তাঁকে শুধরে দেন।৩১ এর ফলাফল এই হয় যে, হাদীস বর্ণনার সময় তিনি যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতেন।
একবার তিনি স্বীয় বর্ণিত হাদীসের প্রকৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: যে সকল হাদীস আমি বর্ণনা করে থাকি তার সব আমি রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ থেকে শুনিনি। আমরা উটের রাখালি ও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতাম। এ কারণে এসব রাসূলুল্লাহর (সা) মজলিসে হাজির থাকতে পারতাম না। আমার বর্ণিত হাদীসের অনেকগুলি অন্য সাহাবীদের নিকট থেকে শোনা।৩২
আল-বারা’ ইবন ’আযিব সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যে সকল সাহাবীর নিকট থেকেি তনি হাদীস শুনে বর্ণনা করেছেন তাঁরা প্রত্যেকে আপন আপন স্তুরে নেতৃস্থানীয়। যেমন: বিলাল ইবন রাবাহ, সাবিত ইবন ওয়াদীয়া আল-আনসারী, হাস্সান সাবিত, আবু আইউব আল-আনসারী, আবু বকর ইবন আবী কুহাফা, ’আলী ইবন আবী তালিব ও ’উমার ইবনুল খাত্তাব।৩৩
যাঁরা তাঁর ছাত্র হওয়ার এবং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণণার গৌরব লাভ করেন তাঁরা সকলে শ্রেষ্ঠ তাবে’ঈ। ‘তাহজীবুল কামাল’ গ্রন্থকার তাঁর এমন ৫০ জন তাবে’ঈ ছাত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। তারমধ্যে বিশেষ কয়েকজনের নাম এখানে উল্লেখ করা গেল: ইয়াদ ইবন লাকীত, সাবিত ইবন ’উবাইদ, হারাম ইবন সা’দ, তাঁর ছেলে আর-রাবী’ ইবনুল বারা, ’উবাদ ইবনুল বারা’, লুত ইবনুল বারা’, ইয়াযীদ ইবনুল বারা’, ইবনুল আবদির রহমান, সা’ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব আবদুর রহমান ইবন আবী লায়লা, যায়িদ ইবন ওয়াহাব আল- জুহানী, সা’দ ইবন ’উবাইদা, আবু বুরদাহ্ ইবন আবী মুসা আল-আশ’য়ারী প্রমুখ।৩৪
তাঁর হাদীসের দারসে কো কোনসময় সাহাবীরাও হাজীর হয়েছেন। এমন কিছু সাহাবীর নাম সীরাতের গ্রন্থসমূহে পাওয়া যা। তাঁরা আল-বারা’ সূত্রে হাদীসও বর্ণণা করেছেন। যেমন: ’আবদুল্লাহ ইবন ইয়াযীদ আল-কথামী, আবু জুহাইফা ওয়াহাব ইবন ’আবদিল্লাহ প্রমুখ।৩৫ তাছাড়া অনেক সাহাবী হঠাৎ করে তাঁর দারসে হাজির হয়ে যেতেন। একদিন কা’ব ইবন হুজর (রা) আরো কয়েকজন সাহাবীর সাথেতার দারসে হাজির হয়েছেন।৩৬
তাঁর মজলিসে উপস্থিত ছাত্ররা নানা ধরনের প্রশ্ন কতো। কেউ প্রশ্ন করতো কুরআনের আয়াত সম্পর্কে, আবার কেই বা করতো ফিকাহর কোন মাসয়ালা বিষয়ে।
এক ব্যক্তি একবার সূরা আল-বাকারার ১৯৫নং আয়ত নিজের জীবনকে তোমরা ধ্বংসের সম্মুখীন করো না’- মস্পকের্ তাঁকে প্রশ্ন করলো। বললো: এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কি পৌত্তলিকদের ওপর আক্রমণ শামিল হবেনা? উত্তরে তিনি বললেন: তা কি করে হয়, কারণ, আল্লাহ তো রাসূলকে (সা) জিহাদের হুকুম দিয়ে বলেছেন” ‘আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করতে থাক, তুমি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে জিম্মাদার নও। তিুমি মুসলমানদেরকে উৎসাতি করতে থাক।’ (সূরা আন-নিসা: ৮৪) তিনি আরো বললেন: তুমি যে আয়াত পেশ করেছো তা হচ্ছে খরচের ব্যাপারে।’৩৬ অর্থাৎ এমন বিশ্বাস যেন না জন্মে যে, আল্লাহর পথে খরচ করলে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমন বিশ্বাস হলে ধ্বংস।
অপর একটি বর্ণণায় এসেছে, লোকটি জানতে চেয়েছিল: উপরোক্ত আয়াত দ্বারা কি এ ব্যাক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে শত্র“র সাক্ষাৎ পেয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং মুতুবরণ করে? তিনি বললেন: না। বরং আয়াতের উদ্দেশ্য ঐ ব্যক্তি যে কোন পাপ করে। অত:পর বলে, আল্লাহ এ পাপ ক্ষমা করবেন না।৩৭
একবার আবদুর রহমান ইবন মুত’য়িমের এক বুন্ধ কিছু দিরহাম একটি নির্দিষ্ট সমরে জন্য বিক্রি করলেন। আবদুর রহমান তাঁর বন্ধুকে প্রশ্ন করলেন: এমন বিক্রী কি জায়েয? তিনি বললেন: হাঁ, জায়েয। আমি এর আগেও এভাবে বিক্রি করেছি, কেউ মন্দ বলেনি। আবদুর রহমান আল-বারা’ ইবন ’আযিবের নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। শুনে তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মদীনীয় আসেন তখন আমরা এভাবে কেনা বেচা করতাম। তা দেখে তিনি বললেন: নগদা-নগদি হলে এমন বেচাকেনায় দোষ নেই। তবে বাকীহলে জায়েয হবে না। তারপর তিনি আবদুর রহমানাকে বললেন: তমি আরো নিশ্চিত হতে চাইলে যায়িদ ইবন আরকামের কাছে জিজ্ঞেস করতে পার। তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। আবদুর রহমান যায়িদ ইবন আরকামের কাছে যান। তিনি আল-বারা’র কথা সমর্থন করেন। ঘটনাটি বখারীতে বর্ণিত হয়েছে।
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে। আবুল মিনহাল বলেন: একবার আমি যাদি ইবন আকাম ও আল-বারা’ ইবন ইবন ’আযিবের কাছে ‘সারফ’ বা মুদ্রা বিনিমরে ব্যাপারে জিজ্ঞেস কলাম। আমি যখন তাঁদের একজনের কাছে জিজ্ঞেস করলাম তখণ তিনি অন্য জনের কথা বলে বললেন: তাঁর কাছে জিজ্ঞেস কর। কারণ, তিনি আমার চেয়ে ভালো এভং আমার চেয়ে বেশি জানেন।৩৮
হযরত রাসূলের কারীমের প্রতি সীমাহীন মুহাব্বত, সুন্নাতের হুবহু অনুসরণ এবং বিনয় ও ভীতি ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট। সুন্নাত অনুসরণেল ক্ষেত্রে অবস্থা এমন ছিল যে, তাঁর নামাযের প্রতিটি বিষয় রাসূলুল্লাহর (সা) অনুরূপ ছিল। একদিন তিনি পরিবারের লোকদের জড় করে বললেন: যেভাবে রাসূল (সা) ওজু করতেন এবং যেভাবেনামায পড়তেন, আজ আমি তোমাদের তা দেখাবো। কারণ, আল্লাহই জানেন, আমি আর কতদিন বাঁচবো। তিনি ওজু করে জুহর, ’আসন, মাগরিব ও ’ঈশার নামায সেইভাবে আদায় করেন। আর একদিন তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সিজদার অনুসরণ করে দেখান।৩৯ একবার আবু দাউদ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। আল-বারা’ প্রথমে সালাম করেন এবং তাঁর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে একচোট প্রাণখূলে হাসেন। পরে বলেন: জান, আমি এমনিট কেন করেছি? রাসূল (সা) একবার আমার সাথে এরূপ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন দুইজন মুসলমান পরস্পর মিলিত হয় এভং নিজেদের কোন স্বার্থ প্রতিবন্ধক না হয় তখন তাদের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।৪০
হাদীসে নামায্যের কাতারে ডান দিকে দাঁড়ানোর অনেক বেশি ফজীলাতের কথা এসেছে। এ কারণে তিনি ডান দিকে দাঁড়ানো পছন্দ করতেন।৪১
নিজের জান মাল থেকেও অনেক বেশী রাসূলকে (সা) ভালোবাসতেন। প্রতিটি কথা ও কাজে তার প্রমাণ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহর (সা) চেহারা সুরাতের বর্ণণা যখন দিতেন তখন তাঁর প্রতি শব্দহতো প্রেম রসে সিক্তা। বলতেন: রাসূল (সা) ছিলেন জগতের সকল মানুষ থেকে সুন্দর। আমি লাল চাদর গায়ে জড়িয়ে দেখেছি, তা যতখানি রাসূল্লাহর (সা) গায়ে সুন্দর দেখাতো অন্যের গায়ে ততখানি নয়।৪২
একবার একজন প্রশ্নকরলো, রাসূলুল্লাহর (সা) মুবারাক চেহারার দীপ্তি কি তরবারির ঔজ্জল্যের মত ছিল? বললেন: না। চাঁদের মত ছিল।৪৩
তিনি রাসূলকে (সা) মেন গভীরভাবে ভালোবাসতেন তেমনি ভয়ও করতেন। তিনি বলেন: একবার আমি রাসূলের (সা) নিকট একটি বিষয় জিজ্ঞেস করতে চাইলাম; কিন্তু তাঁর প্রতি অত্যধিক ভীতির কারণে দুই বছর দেরী করলাম।৪৪
বিনয় ও নম্রতার তিনি ছিলেণ বাস্তব প্রতিচ্ছবি। অতি উঁচু মর্যাদার সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও অতি নগন্য মনে করতেন। একবার একি ব্যক্তি তাঁকে বললো, আপনার কত বড় খোশ কিসমত যে, আপনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাহচর্য্য লাভ এবং বাইয়াতে রিদওয়ানে শরীফ নেই, রাসূরুল্লাহর (সা) পরে আমরা কি কি করেছি।৪৫
তথ্যসূত্র:

হুবাব ইবনুল মুনজির (রা)

নাম হুবাব, ডাকনাম আবু ’উমার বা আবু ’আমর। পিতা মুনজির এবং মাতা শামূস বিনতু হাক্ক। মদীনার খাযরাজ গোত্রের সন্তান।১ আকাবার অন্যতম নাকীব এবং বিরে মা’উনার অনতম শহীদ আল-মুনজির ইবন ’আমর আস-সা’য়িদীর (রা) মামা।২ হানবীর মদীনায় হিজরাতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে বদর থেকেি নয়ে সকল ুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধে খাযরাজ গোত্রর ঝান্ডা তাঁরই হাতে ছিল।৩ ইবন সা’দ বলেন: ‘তিনি যে বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, এ ব্যাপারে প্রায় ইজমা হয়ে গেছে। তবে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক তাঁকে বদরীদর মধ্যে গণ্য করেননি। আমাদের মতে এটা তাঁর ভুল। কারণ, বদরে হুবারের কর্মকান্ড অতি প্রসিদ্ধ।’৪
বদরের কাছাকাছি পৌঁছে রাসূল (সা) শিবির স্থাপনের জন্য অবতরণ করলেন। হুবাব আরজ করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! এখানে শিবির স্থাপনের সিদ্ধান্ত কি আল্লাহর পক্ষ থেকে, না আপনার নিজের? রাসূল(সা) বললেন: ্মার নিজের। হুবার বললেন: তাহলে এখানে নয়। আমাদেরকে শত্র“পক্ষের কাছাকাছি সর্বশেষ পানির কাছে নিয়ে চলুন। সেখানে আমরা একটি পারিন হাউজ তৈরী করবো, পাত্র দিয়ে উঠিয়ে সেই পানি পান করবো, আর শত্র“র সাথে যুদ্ধ করবো। এছাড়া অন্যসব ক’পের পানি আমরা ঘোলা করে ফেলবো। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, হুবাব বললেন: আমরা হচ্ছি যোদ্ধা সম্প্রদায়। আমার মত হচ্ছে, একটিাত্র কূয়ো ছাড়া বাকি সবগুলি কূয়োর পানি ঘোলা করে ফেলা। যাতে কোন অবস্থানে আমাদের পানি কষ্ট না হয়। পক্ষান্তরে শত্র“রা পানির জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে।
হুবারের পরামর্শ দানের পর জিবরীল (আ) এসে রাসূলকে (সা) জানান যে, হুবারের মতটিই সঠিক। অত:পর রাসূল (সা) হুবাবকে ডেকে বলেন, তোমার মতটিই সঠিক। একথা বলে তিনি গোটা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে বদরের কূয়োর ধারে অবতরণ করেন।৫
এই বদর যুদ্ধে রাসূল (সা) তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন, এ কারণে তিনি ‘জু’আর-রায়’ বা সিদ্ধান্ত দানকারী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। ইমাম সা’য়ালাবী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন:৬ ‘বদরে তিনি ছিলেন পরার্মদাতা। রাসূল (সা) পরামর্শ গ্রহণ করেন। জিবরীল (আ) এসে বলেন: ঞুবার যে মত পেশ করেছে তাই সঠিক। জাহিলী ’আমলেও তিনি অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত ও মতামত প্রদান করেছেন।’
মক্কায় যারা রাসূলুল্লাহকে (সা) সবচেয়ে বেশী উৎপীড়িত করেছিল নরাধম আবু কায়স ইবন আল-ফাকিহ তাদের অন্যতম। বদরে সে নিহত হয়। একটি বর্ণনা মতে হযরত হুবাবই তাকে হত্যা করেন।৭ এ যুদ্ধে তিনি হযরত বিলালের (রা) উৎপীড়ক উমাইয়্যা ইবন খালাফের একটি উরু তরবারির আঘাতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। তাছাড়া ’আম্মার ইবন ইযাসির ও তিনি একযোগে উমাইয়্যার ছেলে আলীকেও হত্যা করেন।৮ এ যুদ্ধে তিনি খালিদ ইবন আল-আ’লামকে বন্দী করেন।৯
উহুদ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনী এমন তোড়জোড় সহকারে মদীনার দিকি আসে যে, গোটা মদীনায় একটা শোরগোল পড়ে যায়। কুরাইশ বাহিনী মদীনার অনতিদূরে জুল হুলায়ফায় পৌঁছালে রাসূল (সা) দু’জন গুপ্তচর পাঠালেন এবং তাদের পিছনে হুবাবকেও পাঠালেন। তিনি শত্র“ বাহিনীর মধ্যে ঘুরে ঘুরে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন এবং শত্র“ বাহিনীর সংখ্যা সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা রাসূলুল্লাহকে (সা) দান করেন।১০ এ যুদ্ধেও খাযরাজ গোত্রের ঝান্ডা ছিল তাঁর হাতে। অনেকের ধারণা, ঝান্ডা বাহক তিনি নন, বরং সা’দ ইবন ’উবাদা।১১
এই উহুদ যুদ্ধে যখন মুসলমানদের বিপর্যয় দেখা দেয় এবং মুসলিম বাহিনী হযরত রাসূলে কারীম (সা) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন যে ১৫ জন মুজাহিদ জীবন বাজি রেখে রাসূলুল্লাহকে (সা) ঘিরে রাখেন তাঁদের একজন ছিলেন এই হুবাব। এ যুদ্ধে তিনি মৃত্যুর জন্য বাই’য়াত করেছিলেন।১২
হযরত রাসূলে কারীম (সা) মদীনার ইহুদী গোত্র বনু কুরায়জা ও বনু নাদীরের বিষয়ে সাহাবীদের নিকট পরামর্শ চাইলে হুবার বলেন: আমরা তাদের বাড়ী ঘর ঘেরাও করে তাদের যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলবো। রাসূল (সা) তাঁর মতই গ্রহণ করেন।১৩
খাইবার যুদ্ধে খাযরাজ বাহিনীর একাংশের এবং হুনাইন যুদ্ধে গোটা খাযরাজ বাহিনীর ঝান্ডা বাহক ছিলেন তিনি।১৪ একটি বর্ণনা মতে তাবুক যুদ্ধের সময়ও রাসূল (সা) খাযরাজ বাহিনীর ঝান্ডা তাঁর হাতে তুলে দেন।১৫
রাসূলুল্লাহর (সা) ইনতিকালের পর মদীনার আউস ও খাযরাজ সহ গোটা আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা মসজিদে নববীর অনতিদূরে সাকীফা বনী সা’য়িদা নামক স্থানে সমবেত হয়ে পরবর্তী খলীফঅ নির্বাচনের ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা শুরু করে। আনসার নেতা সা’দ ইবন ’উবাদার একটি ভাষণের পর তাঁরা প্রায় তাঁকেই খলীফা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল। এদেিক আনসারদের এ সমাবেশের খবর আবু বকরের (সা) কানে গেল। তিনি ’উমারকে (রা) সাথে নিয়ে সেখানে ছুটে গেলেন। সেখানে খলীফা মুহাজির না আনসারদের মধ্য থেকে হবে, এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল বাক-বিতন্ডা হয়। এই বিতর্কে হযরত হুবাব ছিলেন হযরত আবু বকরের (রা) সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন এবং দু’ পর্যায়ে দু’টি জ্বালামীয় ভাষণ দেন। হযরত আবু বকরের (রা) ভাষণ শেষ হলে হুবার উঠে দাঁড়ান এবং আনসারের সম্বোধন করে বলতে শুরু করেন:১৬
‘ওহে আনসার সম্প্রদায়! তোমাদের এ অধিকার তোমরা হাত ছাড়া করো না। জনগণ তোমাদেরই সাথে আছে। তোমাদের চরিত্রের ওপর আঘাত হানতে কেউ দু:সাহসী হবে না। তোমাদের মতামত ছাড়া কেউ কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সক্ষম হবে না। তোমরা হচ্ছো সম্মানী ধনবান, সংখ্যাগুরু, অভিজ্ঞ, সাহসী ও বুদ্ধিমান। তোমরা কি সিদ্ধান্ত নেবে তা দেখার জন্য মানুষ তাকিয়ে আছে। তোমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করোনা। বিভেদ সৃষ্টি করলে তোমাদের অধিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তোমাদের প্রতিপক্ষ মুহাজিররা তোমাদের দাবী যদি না-ই মানে তাহলে আমাদের মধ্যে থেকে একজন এবং তাদের মধ্য থেকে একজন মোট দু’জন আমীর হবেন।’
হযরত হুবারের (রা) এই দুই আমীরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হযরত ’উমার (রা) বলে ওঠেন: ‘দূর! এক শিং এর ওপর দু’জনের অবস্থান অসম্ভব।’ ’উমারের (রা) বক্তব্য শেষ হলে তিনি আবার বলতে শরু করেন: তোমরা নিজেদের আধিকার শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো। এ ব্যাক্তির কথায় কান দিওনা। তাঁর কথা শুনলে তোমাদের ্এ ক্ষমতার অধিকার হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমি আমার সম্প্রদায়ের আস্থাাভাজন ব্যক্তি এবং মানুষ আমার সিন্ধান্ত দ্বারা উপকৃত হয়। আল্লাহার কসম! তোমরা চাইলে এ খিলাফতকে আমরা পাঁচ বছরের একটি উটের বাচ্চায় রুপান্তরিত করে ছাড়বো। তারপর তিনি মুহাজিরদের লক্ষ্য করে বলেনঃ ব্যাপারটি আপসাদের হাতে ছেড়ে দিতে আমরা কার্পণ্য করতাম না। যদি না আমাদের আশস্কা হাতো,যে সম্প্রদায়ের লোকদের পিতা ও ভ্রাতাদের আমরা হত্যা করেছি তারাই এটা হস্তগত করে নেই। তখন তোমরা মরণই শ্রেয়ঃ অর্থ্যৎ ‘উমার (রা) আশ্বাস দিলেন এমনটি কক্ষনো হবেনা। আমাদের যাঁরা প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁদেরই একজনের হাত আমরা বাই‘য়াত করবো। যিনি তোমাদের ওপর কোনরকম অন্যায় অবিচার করবেন না’।
এত কিছু সত্ত্বেও তিনি উপস্থিত জনতাকে হযরত আবু বকরের (রা) হাতে বাই‘য়াত (আনুগত্যের শপথ) থেকে বিÍত রাখেতে পারলেন না। আনসারদের মধ্যে সর্ব প্রথম হযরত বাশীর ইবন সা‘দ (রা) আবু বকরের (রা) হাতে বাই‘য়াত করেন। তখন বাশীরকে লক্ষ্য করে হুবাব বলেন: তুমি নিজ সম্প্রদায়েরা বিরুদ্ধাচারণ করলে? তোমরা চাচাতো ভাইয়ের ইমারাত বা নেতৃত্বকে ঈর্ষা করলে? বাশীর জাবাব দিলেনঃ ‘তা নয়; বরং একটি সম্প্রদায়কে আল্লাহ যে অধিকার দিয়েছেন তা নিয়ে বিবাদ করা আমি পছন্দ করিনি’।
দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমারের (রা) খিলাফতকালে তিনি ইনতিকাল কনে।১৭ তখন তাঁর বয়স হয়েছিল পঞ্চাস বছরের মত। বদর যুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর।১৮ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে আবুত তুফাইল ‘আমের ইবন ওয়াসিল তাঁর ছাত্র। তিনি হুবাবের সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।১৯
কবিত্ব ছিল তৎকালীন আরবদের স্বাভাজাত গুণ। হযরত হুবাবের মদ্যেও এ গুণটি ছিল। তিনি কবিতা রচনা করেছেনর। ইতিহাসের কোন কোন গন্থে তাঁর নাম কিছু পংক্তি হয়েছে।২০ তাঁর কয়েকটি পংক্তির আনুবাদ নিম্নরুপ:
১.আল্লাহ তোমাদের দুজনের পিতামাতার ভলো করুন! তোমরা কি জাননা যে, মানুষ দু রকমের অন্ধ ও চক্ষুস্মান?
২.আমরা এবং মুহাম্মদের দুশমনরা –সকলেই সিংহ- পুরুষ। যাদের হুংকার সারা বিশ্বে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
৩.তাবে পার্থক্য এই যে, আমরা তাঁকে সাহায্য করেছি এবং আশ্রয় দিয়েছি। আমরা ছাড়া তাঁর আর কোন সাহায্যকারী নেই।
তিনি একজন তুখোড় বক্তা ছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল বিশুদ্ধ ও অলস্কারপূর্ণ। সাকীফা বনী সা‘য়িদায় তিনি যে দুটি ভাষণ দিয়েছিলেন তা পাঠ করলে তাঁর বাগ্নিতা ও আলস্কারিতা সস্পর্কে ধরনা ¯পষ্ট হয়ে ওঠে। আনসাররা যে ভিলাঠতের ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম, যে কথাটি তিনি একটি অলস্কার মন্ডিত বাক্যে ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! তোমর যদি চাও তাহলে অবশ্যাই আমরা এ খিলাফতকে উপের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থ্যৎ ইচ্ছা করলে আমরা যুদ্ধকে শক্তিশালী করতে পারি। তেমনিভাবে তিনি আনসারদের মধ্যে স্বীয় মর্যাদা ও স্থান বর্ণনা করেন এভাবে: আমি আনসারদের চর্মরোগ্রস্থ উটের শরীর চুলকাবার খুঁটি এবং তাদরে দীর্ঘ ও ফলবান বৃক্ষের ঠেস দাসেনর খুঁঠি বা প্রাচীর।
আরবে চর্মরোগগ্রস্ত উটের জন্য একটি খুটি বা কাঠ গেঁড়ে দেওয়া হতো যাতে সে গা চলকাতে পারে এবং এর মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। তেমনিভাবে যে খেজুর গাছটি লম্বা বা ফলবান হওয়ার কারণে উপড়ে পড়ার আশস্ককা হতো, ততে ঠেস দিয়ে একটি খুঁটি পুতে দেওয়া হতো অথবা একটি প্রচীর খাড়া করে দেওয়া হতো হযরত হুবার নিজেরকে সেই খুঁটি ও প্রাচীরের সাথে তুলনা করেছেন।২১
তথ্যসুত্র:

কাতাদা ইবন নু’মান (রা)

নাম কাতাদা। ডাকনাম অনেকগুলি। যেমন: আবু ’উমার, আবু ’উসমান, আবু ’আমর ও আবু ’আবদিল্লাহ।১ মদীনার বিখ্যাত আউ গোত্রের বনু জাফার শাখার সন্তান।২ মা উনাইসা বিনতু কায়স নাজ্জার গোত্রের কন্যা এবং প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী ও (রা) তাঁর সন্তান। কাতাদা ও আবু সাঈদ আল-খুদরী বৈপত্রীয় ভাই।৩
তিনি সর্বশেষ ’আকাবার শপথে শরীক হন এবং ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাই’য়াত করেন।৪ বদর সহ অন্য সকল যুদ্ধ ও অভিানে তিনি রাসুলুল্লাহর (সা) সাথে যোগ দেন।৫ উহুদ যুদ্ধে তিনি অকল্পনীয় ধৈর্য্য ও দৃঢ়তার পরিচয় দান করেন। এ যুদ্ধে তিনি ছিলেন মুসলিম তীরন্দায বাহিনীর অন্যতম সদস্য। এ সময় রাসূল (সা) তাঁকে স্বীয় ‘আল-কাতুম’ নামক একটি ভাঙ্গা ধনুক দান করেছিলেন।৬
উহুদ যুদ্ধের এক সঙ্কটজনক পর্যায়ে হযরত রাসূলেকারীমকে (সা) মুশরিক তীরন্দাযরা তাদের একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে নিল। তাঁকেই লক্ষ্য করে তারা তীর ছুড়ছিলো। রাসুলুল্লাহর (সা) আশে পাশে তখন মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুজাহিদ মাত্র। অন্যরা একদিক ওদিক বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো। এ মুষ্টিমেয় মুজাহিদরা একজনের পর একজন নিজের বুক পেতে দিয়ে প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত তীর থেকে রাসূলকে (সা) আড়াল করে রাখছিলেন। এভাবেদশজন শহীদ হওয়ার পর হযরত কাতাদার পালা আসলো। তিনি ছিলেন একাদশ ব্যক্তি। তিনি রাসূলকে (সা) পিছনে রেখে শত্র“বাহিনীর দিকে বুক পেতে দাঁড়িয়ে গেলেন। হঠাৎ শত্র“পক্ষের নিক্ষপ্তি একটি তীর ছুটে এসে তাঁর একটি চোখে আঘাত হানে। চোখটি কোটর থেকে ছিটকে গন্ডদেশে গড়িয়ে পড়ে। অন্য একটি বর্ণনা মতে চোখটি একবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তিনি তা হাতে ধরে রাখেন। লোকেরা ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিল। তিনি রাজী হলেন না। তিনি রাসুলুল্লহার (সা) নিকট আরজ করলেন: আমার এক স্ত্রী আছে। আমি তার প্রতি আসস্ত। তাকে আমি গভীরভাবে ভালোবাসী। আমার এ অবস্থায় সে আমাকে ঘৃণা করতে পারে। যুদ্ধের ময়দানে আমি যা করেছি তা শুধু শাহাদাত লাভের জন্যই করেছি। রাসূল (সা) নিজ হাতে চোখটি আবর যথাস্থানে বসিয়ে দিয়ে দু’আ করেন: ‘হে আল্লাহ! কাতাদা তার মুখমন্ডল দ্বারা তোমার নবীকে (সা) রক্ষা করেছে। সুতরাং তুমি এখণ তার এ চোখটিকে অন্যটি অপেক্ষা সন্দুর ও তীক্ষè দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন করে দাও।’ রাসূলুল্লাহর (সা) এ দুয়া কবুর হয়। এ চোখটি অন্যটি অপেক্ষা খবই সুন্দর হয় এবং দৃষ্টি শক্তিও তীক্ষè হয়।৭
পরবর্তীকালে তাঁর সন্তানদের কেউ একজন উমাইয়্যা খলীফঅ হযরত ’উমার ইবন ’আবদিল আযীযের দরবারে যান। তিনিতাঁর পরিচয় জানতে চাইলে একটি কবিতা নিজের পরিচয় দান করেন। এখঅনেতার কয়েকটি পংক্তির অনুবাদ দেয়া হলো:৮
‘আমি তো সেই ব্যক্তির সন্তান যার একটি চোখ তার গন্ডদেশে গড়িয়ে পড়েছিল। অত:পর নবী মু¯তফার হাত তাকে যথাস্থানে বসিয়ে দেয়।
তারপর তাপুর্বের মতহয়ে যায়। সেই চোখটির রূপ কী চমৎকার হয় এবং স্থাপনও হয় কত সুন্দর!
হযরত কাতাদার চোখটি কোন যুদ্ধ আহত হয় সে সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতভেদ আছে। বদর, ্হুদ ও খন্দক-এ তিনটি যুদ্ধের কথাই বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মালিক, দারু কুতনী, বায়হাকী ও হাফেজ ইবন ’আবদিল বার উহুদ যুদ্ধের বর্ণণা সর্বাধিক সঠিক বলে মনে করছেন।৯
মক্কা বিজয় অভিযানে বনু জাফারের ঝান্ডা হযরত কাতাদার হাতেই ছিল।১০ হুনাইন যুদ্ধের চরম বিপর্যয়ের মুহূর্তে যাঁরা দৃঢ়পদ ছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম।১১
হীজরী ১১ সনে হযরত রাসূলে কারীম (সা) উসামা ইবন যায়িদের নেতৃত্বে একটি বাহিনী সিরিয়া সীমান্তের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেন। মুহাজিরও আনসারদের প্রায় সকল উঁচু স্তরের সাহাবী এ বাহনীতে এ ছিলেন। হযরত কাতাদাও (রা)ছিলেণ এর একজন সদস্য।১২
তিনি হিজরী ২৩/খ্রীস্টাব্দ ৬৪৪, ৬৫ বছর বয়সে মদীনায় ইনতিকাল করেন। হযরত ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) তখন খিলাফতের মসনদে আসীন।১৩ খলীফা ’উমার (রা) জানাযার নামায পড়েন। ’উমার আবু সাঈদ আলী খুদরী ও মুহাম্মদ ইবন মাসলামা (রা)- এই তিনজন করবে নেমে তাঁকে সমাহিত করেন।১৪ ইমাম নাওয়াবী বলেন, মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা ও আল-হারেস ইবনু খুযায়মা এদুজন করবে নামেন।১৫
’উমার ও ’উবাইদ নামে তাঁর দুই ছেলের নাম জানা যায়। স্ত্রীর নাম জানা যায় না। তবে স্ত্রীর সাথে তাঁর গভীর প্রেম প্রীতির সম্পর্কের কথা জানা যায়।১৬ উহুদ যুদ্ধের পূর্বে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত তাবে’ঈ মুহাদ্দিস হযরত ’আসিম ইবন ’উমার ইবন কাতাদার দাদা। ুহাম্মাদ ইবন ইসহাক তাঁর সূত্রে প্রচুর বর্ণণা নকল করেছেন।১৭ এই ’আসিম হি” ১২০ অথবা ১২৯ সনে ইনতিকাল করেন।১৮
তিনি ছিলেণ মর্যাদাবান সাহাবীদের একজন। শরীয়াতের বিভিন্ন বিধান সম্পর্কে অনেক বড় বড় সাহাবী তাঁর নিকট জানতে চাইতেন। হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী ও আবু কাতাদার মত বিশিষ্ট সাহাবীরা যে তাঁর নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞেস করতে তা হাদীসের গ্রস্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে।১৯
হযরত কাতাদা ইবন নু’মানের (রা) বর্ণিত হাদীসের মোট সংখ্যা-৭ (সাত)্ তারমধ্যে ইমাম বুখারী এককভাবে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।২০
তাঁর থেকে যাঁরা হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে আবু সাঈদ আল খুদরী, জহুজাইফা, মাহমুদ ইবন লাবীদ, ’উবাইদ ইবন হুনাইন, ’আয়াদা ইবন’ আবদিল্লাহ ও তাঁর ছেলে ’উমার ইবন কাতাদার মত বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও আছেন।২১
তাঁর চরিত্রে যুহ্দ ও তাকওয়ার প্রাধান্য ছিল। একবার শুধু সূরা ইখলাস পাঠ করতে করতে রাত শেষ করে ফেলেন।২২
হযরত রাসূলে কারীমের (সা) জীবদ্দশায় হযরত কাতাদার বংশের মধ্যে চুরির একটি ঘটনা ঘটে। চোরটি ছিল একজন মুনাফিক। সে চুরির দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপানোর পয়াতারা করে। হযরত কাতাদা তাকেই সন্দেহ করেছিলেন। তিনি তাঁর সন্দেহের কথা রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট প্রকাশ করলে তিনি বেশ অনসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এদিকে যাকে সন্দেহ করা হয়েছিল সে রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট এসে নিতান্ত ভালো মানুষ সেজে কাতাদার এহেন সন্দেহের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি উত্থাপন করে। তখন আল্লাহ পাক সূরা আন-নিসার ১০৫ ১১৩ নং আয়াতগুলি নাযিল করে প্রকৃত ঘটনা রাসূলকে অবহিত করেন এবং একই সাথে কাতাদার সত্যবাদিতা ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।২৩
হযরত কাতাদার মধ্যে রাসূলুল্লাহর (সা) একটি মু’জিয়া প্রকাশের ঘটনা সীরাতের গ্রন্থসমূহে দেখা যায়। একদিন আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ঘন অন্ধকার রাত। রাসূল (সা) ঈশার নামাযের জন্য আসলেন। কাতাদাও হাজির হলেন। বিদ্যুৎ চমকালে রাসুল (সা) কাতাদাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন: কাতাদা? তিনি জবাব দিলেন: আজ লোকের উপস্থিতি কম হবে-্ কেথা ভেবে আমি ইচ্ছে করেই হাজির হয়েছি। তখন রাসূল (সা) তাঁকে বললেন: ঘরে ফেলার সময় আমাদের কাছে এসো। তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে দেকা করলেন। একটি খেজুরের শাখা তাঁর হাতে দিয়ে তিনি বললেন: ‘ধর। এটা হাতে থাকে তোমার সামনে দশজন এবং পিছনে দশজন আলোকিত করতে থাকেবে। আর বাড়ী পৌঁছে ঘরের আশেপাশে কোথাও অন্ধকার দেকলে কোন কথা না বলেই এটা দ্বারা সেখানে আঘাত করবে। কারণ, সে শয়তান।’ তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) নির্দেশমত খেজুর শাখাটি হাতের করে বাড়ী ফিরলেন। সত্যি সত্যিই বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি শক্ত লোম বিশিষ্ট গোলাকৃতির ক্ষুদ্র প্রাণী দেখতে পেলেন এবং সেই শাখাটি দিয়ে আঘাত করলে সেটা পালিয়ে যায়।২৪
তথ্যসূত্র:

খুযায়মা ইবন সাবিত (রা)

আবু ’আম্মারা খুযায়মা নাম এবং জু-আশ্ শাহাদাতাইন উপাধি। পিতা সাবিত ইবনুল ফাকিহ্ মদীনার আউস গোত্রের এবং মাতা কাবশা বিনতু আউস খাযরাজ গোত্রের সন্তান। আউস গোত্রের খাতম শাখার সন্তান হওয়ার কারণে তাঁকে খাতমী বলা হয়। তিনি একজন আনসারী সাহাবী।১ জাহিলী ও ইসলামী আমলে মদীনার আউস গোত্রের একজন সম্ভ্রান্ত নেতা এবং সাহসী বীর।২
রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় হিজরাতের পূর্বে কোন এক সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ’উমার ইবন ’আদী ইবন খারাশাকে সংগে নিয়ে নিজ গোত্রের মূর্তিগুলি ভেঙ্গে ফেলেন।৩ ইবন হিশাম বলেন: বনু খাতমার যাঁরা প্রথম পর্বে চুপে চুপে ইসলাম গ্রহণ করেন তাঁরা হলেন ’উমার ইবন ’আদী, ’আবদুল্লাহ ইবন আউস ও খুযায়া ইবন সাবিত’।৪
ইবন সা’ দের মতে তিনি বদর যুদ্ধে যোগদান করেন এবং সিফফীনে মারা যান।৫ তবে গ্রহণ যোগ্য মতে তিনি উহুদ ও তার পরবর্তী যুদ্ধ ও অভিযানগুলিতে অংশগ্রহণ করেন।৬ ইমাম জাহাবী সিফফীন যুদ্ধের আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে বলেন: যে সকল অবদরী সাহাবী সিফফীনে আলীর পক্ষে যোগ দেন তাঁদের মধ্যে খুযাইমা অন্যতম।৭ মক্কা বিজয় অভিযানে স্বীয় গোত্র বনু খাতমার ঝন্ডা ছি তাঁরই হাতে।৮ তিনি মূতা অভিযানেও অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন: আমি মূতা অভিযানে অংশগ্রহণ করি এবং একদিন এক ব্যক্তির একটি শ্বেত-শুভ্ররতœ ছিনিয়ে নিই। যুদ্ধের পর আমি সেটি নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) নকিট হাজির হই। তিনি সেটা আমাকে দান করেন এবং আমি তা খলিফা উমাারের (রা) সময়ে বিক্রী করে খাতামা গোত্রের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগান ক্রয় করি।৯ উটের যুদ্ধে তিনি আলীর (রা) পক্ষে যোগদান করলেও তরবারি কোষমুক্ত করেননি। সিফফিনে আলীর (রা) সাথে রণাঙ্গনে উপস্থিত হন এবং বলেনঃ আম্মার নিহত না হওয়া পর্যন্ত এবং কারা তাঁকে হত্যা করে তা না দেখা পর্যন্ত আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবো না। কারণ আমি আল্লাহর রাসূলুল্লাহর (সা) বলতে শুনেছি: আম্মারকে একটি বিদ্রোহ গোষ্টী হত্যা করবে। অতঃপর মুয়আবিযার (রা) বহিনীর হাতে আম্মার নিহত হলে তিনি মন্তব্য করেনঃ এখণ বিষয়টি ¯পষ্ট হয়েছে। এরপর সকল দ্বিধা-দ্ধন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তরবারি কোষমুক্ত করে একটি কবিতার দুটি চরন গুন গুন করে আবৃত্তি করতে করতে ময়াদনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।১০ চরণ দুটির অর্থ নিম্নরুপ:
১. আমরা আল্লার হাতে বাইয়াত করেছি এবং যে ফিতনার ভয় করছি তার জন্য আবুল হাসানই যথেষ্ট।
২. আলীর মধ্যে শামবাসীদের সকল কল্যান বিদ্যমান: কিন্তুতাদের মধ্যে আলীর গুণাবলার কিছুমাত্র নেই।
এভাবে তিনি আলীর (রা) পক্ষে য্দ্ধু করে সিফফীনের ময়দানে শহদি হন। এটা হিজরী৩৭/খ্রীঃ ৬৭৫ সনের ঘটনা।১১ মৃত্যুকালে তিনি ‘আম্মার,উমার ও উমারা নামে তিনটি ছেলে-মেয়ে রেখে যান।
তিনি রাসূলুল¬াহর (সা) হাতে বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা মোট ৩৮ (আচত্রিশ)১২ জাবির ইবন আবদিল্লাহ আম্মার উবন উসমান, ইবন হুনাইফ আমর ইবন মায়মূন আউদী, ইবরাহীম ইবন সাদ ইবন আবী ওয়াক্কাস, আবু আবদিল্লাহ জাদালী আবদুর রহমান ইবন আবী লায়লা, আতো ইবন ইয়াসার প্রমুখের ন্যায় বিশিষ্ট সাহাবী ও তাবেঈ তাঁর সুত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ঈমানের দৃঢ়তা এবং রাসূলুল¬াহর (সা) প্রতি গভীর প্রেম ও ভালোবাসা ছিল তাঁর চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট। ঈমানী মজবতীর পরিচয় পাওয়া যায় একটি ঘটনা দ্বারা। একবার রাসূলুল¬াহর (সা) এক আরব বেদুঈনের নিকট থেকে একটি ঘোড়া খরিদ করেন। লোকটির নাম সাওয়া ইবন কায়স আল-মুহাযিলী। এ ক্রয় বিক্রয়য়েরা সময় অন্য কেই উপস্থিত ছিল না। এ কারণে বিষয়টি কারো জানা ছিলনা। রাসূলুল¬াহর (সা) দর দাম ঠিক ও কথা পাকাপাকি করে লোজটিকে সংগে নিয়ে বাড়ীর দিকে চলতে থাকেন। পথিমধ্যে অন্য এক খরিদদার ঘোড়াটির মূল্য বেশি বলায় ঘোড়ার মালিক রাসূলুল¬াহর (সা) কে ডেকে বলে ঘোড়া যদি নিতে চান নিন, নইলে আমি এর কাছে বিক্রী করে দিই। কথাটি সে এমন ভাবে বলে যেন রাসূলুল¬াহর (সা) সাথে তার বেচা কেনা হয়নি। রাসূলুল¬াহর (সা) বললেন, ঘোড়াটি তো আগেই আমার কাছে বিক্রী করে ফেলেছো। লোকটি বললো না, আমি বিক্রী করিনি। যদি আপনার কথা সত্য হয় তাহলে কোন সাক্ষী হাজির করুন। দু’জনের কথার মাঝাখানে মুসলিম জনাতা জড় হয়ে গেল। তারা বললো, রাসূল (সা) সত্য বলছেন। লোকটি অস্বীকার করে সাক্ষী হাজির করার দাবী জানাতে লাগলো। ইত্যবসরে হযরত খুযায়মা সেখানে উপস্থিত হলেন। সবকিছু শুনে তিনি বললেন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমি রাসূলুল¬াহর (সা) এর নিকট ঘোড়টি বিক্রী করেছো। খুযায়মার এমন কথায় খোদ রাসূল (সা) বিস্মিত হলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন: কিসের ভিত্তিতে তুমি এমন সাক্ষ্য দিলে? তুমি তো উপস্থিত ছিলেনা? খুযায়মা উত্তর দিলেন: ইয়া রাসূলুল¬াহর! আপনি যা নিয়ে এসেছেন আমি তা সবই সত্য বলে জেনেছি। আর একথাও জেনেছি, আপনি সত্য ছাড়া কিচুই বলেন না। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, খুযায়মা বলেনঃ আপনি আসমানে যে সব খবর দেন তাআমি বিশ্বাস করি। আর আপনি নিজে যা বলছেন তা আমি বিশ্বাস করবো না। সে দিনই হযরত রাসূলে করীম (সা) হযরত খুযায়মার একার সাক্ষ্যকে দু’জনের সামনে বলে ঘোষনা দেন এবং সে দিন থেকেই তাঁর লকব বা উপাধি হয় জূ আশ্- শাহাদাতাইন বা দু সাক্ষের অধিকার ব্যক্তি।১৩ আবু দাউদ ইমাম যুহরীর সূত্রে বর্ণনা করেছে, রাসূল (সা) বলেছেন খুযায়মা একা কারো জন্য সাক্ষ্যই যত্থেষ্ট হবে।১৪
কোন কোন সীরাত গ্রন্থে দু’জন জূ আল্- শাহাদাতইন লকবধারী ব্যক্তিকে দেখা যায়। অন্য জন খুযায়মা ইবন সবিত ইবন শাম্মাস। দুজন কি একই ব্যক্তি না ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি তা বলা কঠিন। আল-ইসবা গ্রন্থের ২২৫১ ও ২২৫২ নং জীবনীতে দুটিতে তাঁদের বর্ণনা এসেছে।১৫ সহীহ বুখারীতে হযরত খুযায়ামর উপরোক্ত ঘটনাটি প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে। হযরত যায়িদ ইবন সাবিত বর্ণনা করেন। আমরনা যখন মাসহাফ সংকলন করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত যা আমরা রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ থেকে শুনতাম, পেলাম না। তবে আয়াতটিশুধু খুযায়মা আনসারীর নিকটই ছিল। আর তার সাক্ষ্যকে রাসূল (সা) দুজনের সাক্ষ্যের সমান বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন।১৬ তাঁর সম্মান ও মর্যাদার আনেক কথা সীরাতের গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হযেছে। একবার তিনি স্বপ্নে দেখেন যে রাসূলে পাকের পবিত্র কপালে চুমু দিচ্ছেন। স্বপ্নের কাথা রাসূলকে (সা) বলার পর তিনি বললেন: তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তাবে রুপ দিতে পার। অতঃপর খুযায়াম উঠে এগিয়ে রাসলের (সা) পবিত্র কপালে চুমু দেন।১৭
কোন কোন বর্ণনায় দেখা যায় তিনি স্বপ্ন দেখেন রাসূলক (সা) সিজাদ করছেন। একথা রাসূলের (সা) নিকট বরার পর রাসুর (সা) স্বীয় কপাল দ্বারা খুযায়মার কপাল স্পর্শ করেন।১৮ একবার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়েংর মধ্যে আভিজাত্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও কৌলিন্য নিওয় বাকয্দ্ধু হয়। তখন লোকেরা খুযামার নামটিও অতি গর্বের সাথে উল্লেখ করে বলে, আামাদের মধ্যে খুযায়ম আছেন যাঁর সাক্ষ্যকে রাসূল (সা) দুজনের সাক্ষ্যের সমান ঘোষণা দিয়েছেন।১৯
তথ্যসূত্র:

আবু দুজানা (রা)

আসল নাম সিমাক, ডাকনাম আবু দুজানা। মদীনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু সায়িদা শাখার সন্তান। খাযরাজ নেতা বিখ্যাত সাহাবী হযরত সা’দ ইবন ’উবাদার (রা) চাচাতো ভাই। পিতার নাম খারাশা ইবন লাওজান, মতান্তরে আউস ইবন খারাশা এবং মাতার নাম হাযমা বিনতু হারমালা।১ আবু দুজানা একজন খ্যাতিমমান আনসারী সাহাবী এবং একজন সাহসী বীর। ইসলামের প্রচার প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরাট আত্মত্যাগ স্বীকৃত।২
হিজরাতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত রাসূলে কারীম (সা) মদীনায় এসে ’উতবা ইবন গাযওয়ানের (রা) সাথে তাঁর দ্বীনি ভ্রাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন।৩ ’আল্লামা ইবন হাজার (রহ) তাঁর বদরে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের ঐক্যমতের কথা বর্ণণা করেছেন।৪ ইবন হিশামও তাঁর বদরে শরীক হওয়ার কথা বলেছেন।৫ বদরের যুদ্ধের দিন তাঁর মাথায় একটি লাল ফেটা বাঁধাা ছিল। মুসা ইবন মুহাম্মাদ বলেন: সেদিন জনতার মাঝে এ লাল ফেটার জন্যই তাঁকে স্পষ্টভাবে চেনা যাচ্ছিল।৬ মক্কায় যারা হযরত রাসূলে কারীমকে (সা) নির্মমভাবে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো, আবুল আসওয়াদ ইবনল মুত্তালিব ছিল তাদের অন্যতম। একটি বর্ণনামতে বদরে আবু দুজানা তার ছেলে আবু হাকীমা যাম’য়া ইবনুল আসওয়াদকে হত্যা করেন। তাছাড়া আবু মুসাফি’ আল-আশ’য়ারী ও মা’বাদ ইবন ওয়াহাবকেও হত্যা করেন।৭
আবু দুজানা উহুদ যুদ্ধেও রাসূলুল্লাহর (সা) সংগে ছিলেন। এবং চরম বিপর্যয়ের মুহূর্তেও তার সাথে অটল থাকেন। সেদিন তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে মৃতুর জন্য বাই’য়াত করেছিলেন। আনাস ইবন মালিক বলেন: যুদ্ধের পূর্বক্ষণে রাসূল (সা) একখানি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন: এটি কে নিবে? উপস্থিত সকলেই হাতবাড়িয়ে দিলে বলে তখন সবাই চুপ থাকলো; কিন্তু আবু দুজানা বললেন: আমি পারবো এক হক আদায় করতে। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, আবু দুজানা রাসূলকে (সা) জিজ্ঞেস করলেন: এর হক কি?তিনি জবাব দিলেন: এ নিয়ে কোন মুসলমানকে হত্যা না করা, এটি নিয়ে কাফিরদের ভয়ে পালিয়ে না যাওয়া।৮
যুদ্ধের সময় মাথায় একটি লাল ফেটা বাঁধা ছিল তাঁর অভ্যাস। সেটা বাঁধলে বুঝা যেত তিনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। রাসূলুল্লাহর (সা) হাত তেকে তরবারিখানি নিয়ে তিনি মাতায় ফেটা বাঁধলেন। তারপর একটা অভিজাত চলনে সৈনিকদের সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন।৯ কিছুক্ষন পর কবিতার কিছু পংক্তি গুন গুন করে গাইতে গাইতে শত্র“বাহিনীর দিকে ধাবিত হলেন। দু’টি পংক্তির অর্থ নিম্নরূপ:১০
১.আমি সেই ব্যক্তি, যাকে আমার বন্দু পাহাড়ের পাদদেশে খেজুর বাগানের সন্নিকটে প্রতিশ্র“তি নিয়েছিলেন।
২.আমি যেন সৈনিকদের সারির শেষ প্রান্তে অবস্থান না করি। আর তিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) তরবারি দ্বারা শত্র“ নিধনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
উহুদের রণক্ষেত্রের দিকে তিনি অভিজাত ভঙ্গিতে হেঁটে গিয়েছিলেন, তা দেখে রাসূল (সা) মন্তব্য করেছিলেন: যদিও এভাবে চলা আল্লাহর পসন্দ নয়, তবে এক্ষেত্রে কোন দোষ নেই।১১
হযরত যুবাইর ইবনুল ’আওয়াম বলেন, আবু দুজানার আগেই আমি তরবারিখানি চেয়েছিলাম। কিন্তু রাসূল (সা) আমাকে না দিয়ে দিলেন তাঁকে। অথচ আমি হলাম রাসূলুল্লাহর (সা) ফুফু সাফিয়্যা বিনতু আবদুল মুত্তালিবের ছেলে। তাই তরবারিখানি তাঁকে দেওয়ার রহস্য জানার জন্য আমি তাকে অনুসরণ করলাম। তিনি রাসূল (সা) প্রদত্ত তরবারি হাতে নিয়ে অগ্রসর হলেন। যে দিকে এগুতে লাগলেন শত্র“দের মাঝে ত্রাস ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। একসময় তিনি পাহাড়রে ঢালে নেমে গেলেন, যেখানে কুরাইশ রমনীরা হিন্দার নেতৃত্বে রণসঙ্গিত গেয়ে তাদের সৈনিকদের উৎসাহিত করছিলো। তারা আবু দুজানাকে দেখে ভীত হয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার শুরু করে দিল। কিন্তু কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে এলো না। কিন্তু না, আবু দুজানা তারে কাউকে স্পর্শ করলেন না। ফিরে এলেন। একটি বর্ণনায় এসেছে, হিন্দার মাথার ওপর তরবারি রেখে তিনি আবার তা উঠিয়ে নিলেমণ। যুবাইর তাঁর পিছনে ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি বিস্মিত হলেন। তিনি এর কারণ জানতে চাইলেন। আবু দাজানা জবাব দিলেন: রাসূলুল্লাহর (সা) তরবারি দিয়ে অসহায় কোন নারীকে হত্যা করতে আমার ইচ্ছা হয়নি।১২
উহুদের বিপর্যয়ের সম যে মুষ্টিমেয় সৈনিক রাসূলকে (া) ঘিরে নিজেরে দেহকে ঢাল বানিয়ে অটল হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের মধ্যে আবু দুজানা অন্যতম।১৩ এদিন তিনি নিজের পিঠ পেতে হযরত রাসূলে কারীমের (সা) পিঠ রক্ষা করেছিলেন। তাই শত্র“র নিক্ষিপ্ত তীর বর্শার আঘাতেই তাঁর পিঠ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো।১৪
এ যুদ্ধেল এক পর্যায় পৌত্তলিক আবদুল্লাহ ইবন হুমাইদ, রাসূলকে (সা) হত্যার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। আবু দুজানা তাকে তরবারি দ্বারা প্রচন্ড আঘাত হেনে বলে ওঠেন: নে, আমি ইবন খারাশা। সেই আঘাতে নরাধম আদুল্লাহ ধরাশায়ী হয়। তখন হযরত রাসূল কারীম (সা) তাঁর জন্য ি বলে দু’আ করেন: হে আল্লাহ! তমি ইবন খারাশার প্রতি সন্তুষ্ট হও, আমি তার প্রতি সন্তুষ্ট।১৫
রাসুল (সা) উহুদের যুদ্ধ শেষে রণক্ষেত্রে থেকে ফিরে এসে কন্যা ফাতিমাকে (রা) বললেন: লও, আমার তরবারিখানি ধুয়ে ফেল। আজ সে বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছে। হযরত আলীও (রা) ফাতিমার নিকট একই আবেদন করে বললেন: আজ আমি খুব লড়েছি। রাসূল (সা) তার জবাবে বললেন, হাঁ, তুমি যদি ভালো লড়ে থাক তাহলে সাহল ইবন হুনাইফ ও আবু দুজানা-দু’জনই ভালো লড়েছে।১৬
আল্লাহপাক বনু নাদীরের যাবতীয় গণীমতের মালিকানা দান করেন রাসূলকে (সা)। তিনি সেই সম্পদ শুধুমাত্র প্রথম পর্বের মুহাজিরদের মধ্যে বণ্টন করেন। তবে সাহল ইবন হুনাইফ ও আবু দুজানা এ দুজন আনসারীকেও তাঁদের দারিদ্র্যের কারণে কিছু কিছু দান করেন। এ সময় আবু দুজানা কিছু ভূমি লাভ করেন যা বহু দিন পর্যন্ত ইবন খারাশার ভুমি নামে পরিচিত ছিল।১৭
একটি বর্ণনা মতে তাবুক যুদ্ধের সময় হযরত রাসূলে কারীম (সা) খাযরাজ গোত্রের ঝান্ডাটি আবু দুজানার হাতে অর্পণ করেন।১৮
মোটকথা হযরত রাসুলেকারীমের (সা) জীবদদ্দশায় সংঘটিত সকল ুদধ ও অভিযানে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। আল-ইসতী’য়াব গ্রন্থকার লিখেছেন: রাসুলুল্লাহর (সা) সময়কালের সকল যুদ্ধে তার প্রশংসনীয় ভূমিকা ছিল।১৯
প্রথম খলীফঅ হযরত আবু বকরের (রা) খিলাফতকালে সংঘটিত ইয়ামামার ভয়াবহ যুদ্ধে তিনি চরম দু”সাহসের পরিচয় দেন। যুদ্ধটি ছিল ভন্ড নবী মুসায়লামা আল-কাজ্জাবের বিরুদ্ধে। সে তার একটি সুরক্ষিত উদ্যানের মধ্য থেকে মুসলিম বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করছিল। উদ্যানটি শক্তু প্রাচীর বেষ্টিত থাকার কারণে মুসলিম বাহিনী ভিতরে প্রবেশষের চেষ্ট করে ব্যর্থ হচ্ছিল। বিয়টি নিয়ে আবু দুজানা ভাবলেন। তারপর বললেন: ‘আমার মুসলমনা ভাইয়েরা! আমাকে ভিতরে ছুড়ে মার।’ এভঅবে তিনি প্রাচীর তো টপকালেন; কিন্তু পা ভেঙ্গে গেল। তা সত্ত্বেও প্রাচীরের ফটক থেকে শত্র“দের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেন এবং মুসলিম সৈন্যরা ভিতরে না ঢোকা পর্যন্ত নিজের স্থঅনে অটল থাকলেন। আবদুল্লাহ ইবন যায়িদ ও ওয়াহশীর সাথে তিনি ভন্ড মুসায়লামার হত্যায় অংশ গ্রহণ করেন। অবশেষে এ যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ইবন সা’দের মতে এটা হিজরী ১২ সনের, আর আল্লামা যিরিকলীর মতে হি: ১১/খ্রী:৬৩২ সনের ঘটনা।২০
আবু দুজানার সূত্রে কোন হাদীস বর্ণিত না থাকলেও ‘ইবনুল আসীরের’ ভাষা” তিনি ছিলেন সম্মানিত সাহাবীদের একজন এবং তাঁদের মধ্যে উঁচু মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি।’২১
প্রবল একটা ঈমানী আবেগ তাঁর মধ্যে ছিল। এর প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ইামামার যুদ্ধে। হযরত রাসূলে কারীমের (সা) প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রমানতিনি দিয়েছেন উহুদ যুদ্ধে। এ যুদ্ধের এক মারাত্মক পযায়ে যখন মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে রাসূল (সা) থেকে দূরে ছিটকে পড়ে তখন যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সৈনিক তাঁর ধারে কাছে ছিলেন তাঁদের মধ্যে মুস’য়ার ইবন ’উমাইর ও আবু দুজানা ঢাল হিসেবে নিজেদের বুক পেতে দেন। মুসয়াব তো জীবনই দান করেন। আর আবু দুজানা নিজের দেহ ঝাঝরা করে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন।
তাঁর চলার ভঙ্গিটা ছিল এক বিশেষ ধরনের যা তখন রীতিমত একটা দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছিল। ‘আল-মাশহারা’ নামে তাঁর একটি বর্ম ছিল। যদ্ধের সময় তিনি সেটা পরতেন। এ কারণে তাঁকে ‘জুল মাশহারা’ (আল মাশহারার অধিকারী) বলা হতো। তাঁকে ‘জু-আস্-সায়ফাইন’ও বলা হতো। কারণ উহুদে তিনি দু’টি তরবারি দিয়ে লড়েছিলেন। একটি নিজের এবং অপরটি রাসূলুল্লহার (সা) ‘জু-আস্-সায়ফাইন’ অর্থ দুই তরবারির অধিকারী।২২
আবু দুজানা একবার রোগশয্যায় শায়িত। এক ব্যক্তিতাঁকে দেখতে এলন। তিনি তাঁর চেহারায় নূরের ঝলক দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার চেহেরা এমন উজ্জ্বল হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেন: দু’টি অভ্যা ছাড়া আমার তেমন কোন ’আমল নেই। একটি হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় কোন কথা আম বলিনে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আমার অন্তরটি সব সময় মুসলমানদের কল্যাণকামী।২৩ উপরোক্ত আলোচনা থেকে তাঁর কর্মময় জীবন চরিত্র ও গুণাবলী সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
তথ্যসূত্র:

কুলসূম ইবনুল হিদ্ম (রা)

ইসলামের ইতিহাসে হিজরাত অধ্যায় আলোচনা করতে গেলেই হযরত কুলসুম ইবনুল হিদমের (রা) পবিত্র নামটি বারবার এসে যায়। ইসলামের প্রচার প্রসারে তাঁর অবদান তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও যাঁরা অবদান রেখেছেন তাঁদেরকে তিনি যে আশ্রয় দিয়েছেন তাতেই স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর বিস্তারিত জীবন ইতিহাস পাওয়া যায় না।
তাঁর ডাকনামা আবু কায়স এভং আসল নাম কুলসূম। পিতা আলহিদম ইবন ইমরাউল কায়স। আউস গোত্রের বণী ’আমর ইবন ’আওফেরসন্তান। মদীনার কুবা পল্লীর অধিবাসী এবং রাসূলুল্লাহর (সা) একজন আনসার সাহাবী। হিজারাতের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। তখন তাঁর জীবনে বার্দ্ধক্য এসে গেছে। তাঁর ইসলাম গ্রহণের অল্প কিছুদিন পরেই ঐতিহাসিক হিজরাত সংঘটিত হয়।১
হযরত রাসূলে কারীম (সা) মকআ থেকে হিজরাত করে সর্বপ্রথম মদীনার উপকন্ঠে কুবা পল্লীতে ’আমর ইবন আওফ গোত্রে চারদিন অবস্থান করেন।২ সর্বাধিক সঠিক বর্ণণা মতে এ চারদিন হযরত রাসূলে কারীম (সা) ও তাঁর সফল সঙ্গীকে আতিথেয়তার দুর্লভ সৌভাগ্য যিনি অর্জণকরেন, তিনি এই কুলসূম ইবনুল হিদম (রা)। রাসূল (সা) ও আবু বকর (রা) কুবায় এসে তাঁর গৃহেই ওঠেন। এ ব্যাপারে ইবন ইসহাক, মুসসা ইবন ’উকবা ও আল-ওয়াকিদী ঐকম্যমত পোষন করেছেন।৩ ইবন ইসহাক বলেন: রাসূল (সা) কুবায় কুলসূমের গৃহে অবতরণ করেন। তবে কেউ কেই যে বলেছেন, কুলসূমের নয় বরং সা’দ ইবন খায়সামার গৃহে অবস্থান করেন, সে সম্পর্কে তিনি বলেন: রাসূল (সা) কুলসূমের গৃহে অবস্থান করতেন এবং সা’দের গৃহে লোকদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেন। কারণ, সা’দ ছিলেন অবিবাহিত। তাঁর পরিবার পরিজন ছিলেন না। একারণে মক্কা থেকে আগত অবিবাহিত মুহাজিরগণ সা’দের গৃহেই আশ্রয় নিতেন। আর তাই ঐ গৃহটি অবিবাহিতদের আবাসস্থল বলে লোকেরা আখ্যায়িত করতো।৪ তাঁর গৃহে চারদিন অবস্থানের পর তিনি মদীনার মূল ভূখন্ডে আবু আইউব আল-আনসারীর (রা) গৃহে অবস্থান করেন।
হযরত রাসূলে কারীমের (সা) আগমনে তিনি এত খুশী হন যে বাড়ীর চাকর বাকরদেরকে চিৎকার করে হাঁক ডাক শুরু করেন। নাজীহ নামে তাঁর এক চারক ছিল। রাসূল (সা) তাঁর গৃহে উপস্থিত হলে তিনি নাজীহ, নাজীহ বলে ডাকাডাকি শুরু করেন। নাজীহ অর্থ সফলকাম। রাসূল (সা) এ নামকে শুভু লক্ষন বলে মনে করলেন। তিনি আবু বকরকে (রা) বললেন: ওহে আবু বকর। সফলকাম হয়েছ।৫
শুধুই কি হযরত রাসূলে াকরীম (সা) ও আবু বকর (রা) তাঁর গৃহে অতিথি হয়েছিলেন? না, তা নয়। আরো অনেকে মক্কা থেকে এসে প্রথমে তাঁর ওখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আল-ওয়াকিদী বর্ণণা করেছেন, রাসূল (সা) কুবায় তাঁর গৃহে অবস্থান কালেই আলী (রা) ও সুহাইব (রা) মক্কা থেকে এসে সেখানেই রাসূলের (সা) সাথে মিলিত হন। রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তাঁদের যখন দেখা হয় যখন তার সামনে ছিল কুলসূম ইবনুল হিদমের উপস্থাপিত উম্মু জারজান নামক এক প্রকার উৎকৃষ্ট জাতের খেজুর। সুহাইব তখন ভীষণ ক্ষুধার্ত। তাছাড়া তাঁর চিল চোকের পীড়া। এ অবস্থায় তিনি সেই খেজুর ভীষণ আগ্রহের সাথে খেতে থাকেন। তাঁকে এভাবে থেতে দেখে রাসূল (সা) এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন: কুরাইশরা বন্দী করে আমার ওপর অত্যাচার করেছিল। তারপর আমার সকল ধন-সম্পদের বিনিময়ে আমার নিজের ও পরিবার পরিজনের জীবন ক্রয় করে খুব দ্রুত চলে এসেছি। রাসূল (সা) মন্তব্য করেন: তুমি লাভবান হয়েছো।৬
বালাজুরী কুলসূম ইবনুল হিদমের গৃহে আলীর (সা) অবস্থানকালের একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি সেখানে থাকাকালে লক্ষ্য করেন যে, প্রতিদিনই গভীর রাতে পাশের একটি বাড়র দরজা খোলা হয় এবং লোকজনের আনাগোনার শব্দ হয়। এতে তাঁর মনে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। একদিন তিনি পাশের বাড়ীর মহিলাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। মহিলাটি বলেন: জনাব, আমি একজন অনাথ বিধবা। সাইল ইবন হুনাইফ প্রতিদিন রাতে গোপনে মদীনার কাঠের তৈরী বিগ্রহগুলি ভেঙ্গে তার কাঠগুলি জ্বালানীর জন্য আমাকে দিয়ে যায়।৭ এর দ্বারা বুঝা যায় কুলসূমের বাড়ীতে তাঁর অবস্থান বেশ দীর্ঘ হয়।
তাছড়া আবু মা’বাদ আল-মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা)৮ যায়িদ ইবন হারিসা (রা)৯ আবু াসদা কান্নায় ইবন হিসন (রা)১০ ও আবু কাবশা (রা)১১ মক্কা থেকে এসে সর্বপ্রথম তাঁরই আশ্রয়ে থাকেন। আল-হায়সাম ইবন ’আদীর মতে আবু ’উবাইদাহ ইবনুল জাররাহও (রা) প্রথমে তাঁর বাড়ীতে ওঠেন।১২ এভাবে ইতিহাসের পাতা উল্টালে আরো অনেক মুহাজিরের নাম পাওয়া যাবে যাঁদেরকে তিনি সেই চরম দু:সময়ে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
হযরত রাসূলে কারীম (সা)মদীনায় এসে হযরত হামযা ইবন ’আবদিল মুত্তালিবের (রা) সাথে কুলসূমের মুওয়াখাতা বা দ্বীনী ভ্রাতৃ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাকরে দেন।১৩
মদীনায় মসজিদে নাবাবী ও রাসূলুল্লাহর (সা) সহধর্মীনীরে আবাস্থলে নির্মানের কাজ যখন চললেচ তখনই তাঁর পরপারের ডাক এসে যায়। তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরেই হ বদর যুদ্ধ। রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে কোন যুদ্ধ বা অভিযানে অংশ গ্রহনের সুযোগ তিনি পাননি।১৪ রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় আসার পর এটাই ছিল কোন আনসারী সাহাবীর মৃত্যু। এর কিছুদনি পরেই ইসলামের একজন শ্রেষ্ঠ মুবাল্লিগ হযরত আবু উমামা (রা) ইনতিকাল করেন। তাছাড়া অন্য একজন আনসারী সাহাী হযরত আস’যাদ ইবন যুরারা তার কিছুদিন পর মারা যান।১৫ তাবারী ও ইবন কুতায়বা উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদেরমধ্যে মদীনায় সর্বপ্রথম কুলসূম ইবনুল হিদমই মারা যান। তারপর মারা যান আস’য়াদ ইবন যুরারা (রা)।১৬
তথ্যসূত্র:

শাদ্দাদ ইবন আউস (রা)

নাম শাদ্দাদ, কুণিয়াত বা ডাকনাম আবু ইয়া’লা আবু ’আবদির রহমান। মদীনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখার সন্তান। এ গোত্রের বিখ্যাত কবি ’শায়িরুর রাসূল’ ও ’শায়িরুল মানজিরা নামে খ্যাত হযরত হাসসান ইবন সাবিতের (রা) ভাতিজা। কবি হাসসান ছিলেন শাদ্দাদের পিতা আউস ইবন সাবিতের ভাই।১ মাতা সুরাইমা বনু নাজ্জারের আদী উপগোত্রের কন্যা।২
শাদ্দাদের সম্মিিনত পিতা হযরত আউস ইবন সবিত (রা) আকাবার শেষ বাইয়াত (শপথ) এবং বদর যুদ্ধে শরীক হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।৩
হযরত শাদ্দাদ ছিলেন একজন সাহাবী এবং একজন আমীর। খলীফা হযরত উমার (রা) তাকে হিমসের আমীর নিয়োগ করেন। তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান (রা) শাহাদাত বরণ করলে তিনি সকল দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ইবাদাতে আতœনিয়োগ করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশুদ্ধ ভাষী, ধৈর্যশীল ও বিজ্ঞ ব্যক্তি।৪ মদীনায় ইসলাম প্রচারের প্রথম পর্বেই তাঁর চাচা সহ গোত্রের প্রায়ং সকলেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনিও তাঁদের সাথে ঈমান আনেন।৫ যেহেতি যুদ্ধে যাওয়ার বয়স তভনও শাদ্দাদের হয়নি, একারলে হযরত রাসূলে কারীমের (সা) সাথে কোন যুদ্ধে যাননি বলে জানা যায়। ইমাম বুখারীর মতে তিনি বদরে শরীক ছিলেন। আর এটা সঠিক নয় বলে আল্লামা ইবন আসকির ও আরো অনেক মন্তব্য করেছেন।৬
হিজরী ৫৮,খ্রীঃ ৬৭৭ সনে ৭৫ বছর বয়সে তিরি ফিলিস্তীনে ইন্তিকাল করেন এবং তাকে বাইতুল মাকদাসের দাফন করা হয়।৭ তাবে হিজরী ৪১, ৫৪, ও ৬৪ সনে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলেও ভিন্ন ভিন্ন মত আছে।৮
হাফেজ ও হাকেম বর্ণনা করেছের, হযরত শাদ্দাদ চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান। ছেরেরা হলেন : ইয়া’লা, মুহাম্মদ, আবদুল ওয়াহ্হাব ও আল মুনজির। ইয়া’লা নিঃসন্ত—ান অবস্থায় মারা যান। অন্যদের বংশধারার সন্ধান পাওয়া যায়। মেয়েটি আয্দ গোত্রে বিয়ে করেন এবং হিজরী ১৩০পর্যন্ত তার বংশধারার সন্ধান পাওয়া যায়। এ বছর আবু মুসলিম খুরাসীনর উথ্ন ও উমাইয়্যা রাজবংশের পতন হয়। আর এ বছরেই শাস ও বাইতুল মাকদাসে দারূণ এক ভূমিকম্প হয়। এ ঘটনায় এখানে বসাবাসরত আনসারদের বহু বংশদর নিহত হয়। শাদ্দাদের সন্তানরা বড়ী ধসে মারা যান। তবে তার ছেলে মুহাম্মাদ কোন রকম বেচে যান।তিনি পঙ্গু অবস্থায় খলীফা আল-মাহদীর সময় পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
হযরত রাসূলে কারীমের (সা) এক জোড়া হযরত শাদ্দাদের হিফাজতে ছিল। তার একখানা তাঁর কন্যার মাদ্যমে তাঁর সন্তানদরে হাতে চলে যায়। খলীফা আল-মাহদী যখন বাইতুল মাকদাস সফর করেন তখন জুতোখানি তাদের নিকট থেকে এক হাজার দীনার ও বিপুল উপঢৌকনের বিনিময়ে হাতিয়া নেন। অবশিষ্ট জুতোখানি সম্পর্কে জানাতে পারেন যে, মুহাম্মাদ ইবন শাদ্দাদের হিফাজতে আছে। আল-মাহাদা তিনি উপস্থিত হলে তিনি জুতোখানি দাবী করেন। তিনি অনেক অনুনয় ও বিনয় সহকারে বলেন যে, রাসূল (সা) যে সাম্মান এ জুতোর মাধ্যমে তার সঙ্গীকে দান করে গেছেন, আপনি তার বংশধরদের নিজকট থেকে তা ছিনিয়ে নিবেন না। আল-মাহদী রাজঅ হন এবং জুতো খনি তাদের কাছেই রাখার অনুমতি দান করেন।৯
হযরত শাদ্দাদ ছিলেন বিজ্ঞ সাহাবীদের অন্যতম। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত (রা) ছিলেন উম্মাতের একজন স্তম্ভরুপ এবং সাহাবা সমাজে জ্ঞানের একটি কেন্দ্রবিন্দু। তিনি বলতেন, মানুষ হয় দুই ধরনের। কিছু হয় জ্ঞানী, তবে তারা খুব বদমেজাজী। আর কিছু হয় ধৈর্যশীল। কিন্তু তারা মূর্খ ও অজ্ঞ। শাদ্দাদের মদ্যে জ্ঞান ও ধৈর্যের সমন্বয় ঘটেছিল।১০ হযরত আবুদদারাত (রা) বলতেন: কিছু মানুষণকে তো ইলম (জ্ঞান) দেওয়া হয়েছে কিন্তু হিল্ম (ধৈর্য) দেওয়া হয়নি তবে আবু ইয়াল শাদ্দাদের মাধ্যে এ দুটি সমাবেশ ঘটেছিল।১১ তিনি আরো বলতেনঃ প্রত্যেক উম্মাতের থাকে একজন ফকীহ্ (ধর্ম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ)। আর এ উম্মাতের ফকীহ হচ্ছেন শাদ্দাদ তাকে ইলম ও হিকমাত দান করা হয়েছে।১২
একবার মসজিদে জাবিয়ায় বসে কথা বলছেন হযরত ইবন গানাম, আবুদদারদা ও উবাদা ইবন সামিত। এমন সময় হযরত শাদ্দাদ এসে বরলেন: লোকেরা! আপনাদের নিয়ে আমার ভয় হয়। আর সে ভয়টা হচ্ছে, রাসূল (সা) বলেছেন, আমার উম্মাত প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে পড়বে এবং শিরকে লিপ্ত হবে। কথাটির শেষাংশ ছিল বিস্মিত হওয়ার মত। তাই আবুদদারদা ও উবাদা প্রতবিাদ করলেন এবং নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে একটি হাদীস পেশ করলেন। হাদীসটি হলো, আরব উপদ্বীপে শয়তান তার উপাসন্যর ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়েছে। তাহলে আমাদের মুশরিক হওয়ার অর্থ কি? এ প্রশ্নটি তারা রাখলেন।
শাদ্দাদ বললেন, এক ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্য নামায পড়ে, যাকাত আদায় করে,ÑÑÑ তার সম্পর্কে আপনার কি ধারণা পোষণ করেন? তাঁরা জবাব দিলেন, সে মুশরিক (অংশীবাদী)। এর পর তিনি বলেন, আমি তার সম্পর্কে রাসূল (সা) নিকট থেকে শুনেছি, এ সকল কাজ যার লোক দেখেনোর উদ্দেশ্য করবে, সে হবে মুশরিক। হযরত আউফ হবন মালিকও ছিলেন তাদের সাথে। তিনি বললেন যতটুকু কর্ম রিয়া কর্ম যাতে শিরকের মিশ্রণ আছে তা কবুল হবে না। এ হিসেবে আমদের নিজেদের কর্মের উপর আস্থাবান হওয়া উচিত। হযরত শাদ্দাদ উত্তরে বলেন: হাদীসে কুদসীতে এসেছে মুশরিকদের যাবতীয় আমল তার উপাস্য বা মাবুদকে দেওয়া হবে। আল্লাহ তার মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন।১৩ হযরত শাদ্দাদের এ অভিমত হুবহু কুরআনের বাণীর অনুরুপ। কুরআনে বলছে আল্লাহ কোন অবস্থাতেই শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। হাদীস শাস্ত্রে তার গভীর জ্ঞান ও বিচক্ষণতা ছিল। এ ক্ষেত্রে তিনি দরিায়াত ও নাকদ এর মূলনীতি অনুসরণ করতেন হযরত আবুজার আল- গিফারী (রা) ছিলেন যুহ্দ কিনায়াত (বৈরাগ্য ও অল্পেতুষ্টি) এর জন্য প্রসিদ্ধ। ভোগবাদী জীবনের বিরুদ্ধে তিনি গোটা শামে এক প্রচন্ড আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার মত ও আন্দোলনের সপক্ষে তিনি বহু হাদীস বর্ণনা করেন। এতে হৈ চৈ পড়ে যায়। তার সম্পর্কে হযরত শাদ্দাদ (রা) বলেনঃ আবুজার রাসূলুল্লাহর (সা) মুখ থেকে কোন হাদীস যাতে কোন কঠোরাত থাকতো শুনতেন। তারপর নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে তা প্রচার করতেন। রাসূল (সা) আবার এই কঠোরতায় কিছুটা শিথিলতা প্রদান করতেন। কিন্তু আবুজার তা জানতেন না। তিনি সেই কঠোরতার ওপর অটল থকেন।১৪ হযরত শাদ্দাদের (রা) সুত্রে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫০(পঞ্চাস)। আল্লামা যিরকলী বলেছেন এর সবগুলিই সাহীহাইনে বর্ণিত হয়েছে।১৫ এ সকল হাদীস তিনি রাসূল (সা) থেকে এবং কিছু কা’ব আল আহবার (রা) থেকে শুনেছেন।১৬ তাঁর থেকে হাদিীস বর্ণনা কারীদের আনেকেই ছিলেন শামের আধিবাসী। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম নিম্নে দেওয়া হলোঃ মাহমুদ ইবন লাবীদ, তাঁর দুই পুত্র মুহাম্মদ ও ইয়ালা, আবু আশ’য়াস সাফীন, দামরা ইবন হাবীব আবু ইদরীস খাওলানী, মুহামুদ ইবন রাবী, আবদুর রহমান ইবন গানামা, বাশীর ইবন কা’ব জুবাইর ইবন নুফাইর, আবু আসমা রাহবী, হাস্সান ইবন আতিয়্যা, উবাদা ইবন বাসানী হানজলী প্রমুখ।১৭ তিনি ছিলেন একজন আতি খোদাভীরু ‘আবেদ ব্যক্তি। আল্লাহর ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকতেন। আধিকাংশ সময় রাতে আরাম করার জন্য শুয়ে যেতেন। কিছুক্ষন পর আবার উঠে বসতেন এবং সারা রাত নামাযে দাঁড়িযে কাটিয়ে দিতেন। কখনো কখনো শোনা যেত, তিনি উচ্চারণ করছেন: আল্লাহুম্মা আন্নান নারা কাদ হালত বায়নী ওয়া বায়নান নাওম. হে খোদা! জাহান্নামের আগুন আমার এবং ঘুমের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাহান্নাম আমার ঘুম দূর করে দিয়েছে। এখানে আসাদ ইবন বিদা‘য়ার একটি মন্তব্য উল্লেখযোগ্যঃ শাদ্দাদ যখন রাতে বিছানায় যেতেন তখন আল্লাহর বয়্যে অত্যন্ত অশান্ত ও ভীত থাকতেন।১৮ রাসূলুল্লাহর (সা) ও খিলাফাতে রাশেদার পর মুসলমানদের মধ্যে যে পরিবর্তন হচ্ছিল তিনি তীব্রভাবে অনুভব করতেন। উবাদা ইবন নাসী বলেনঃ একবার শাদ্দাদ ইবন আউস আমরা পাশ দিয়ে যাওয়া সময় আমার হাতটি ধরে তাঁর গৃহে নিয়ে গেলেন তারপর বসে কাদতে শুরু করলেন। তা দেখে আমরাও কাঁদা শুরু করলাম। তিনি জিজ্ঞেসা করলেন: কাঁদছেন কেন? বললাম: আপনার কান্না দেখে আমরা কান্না পেয়েছে। তিনি বললেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহর একটি হাদীস মনে পড়েছে। তিনি বলেনছিলেন আমরা সবচেয়ে বেশী ভয় হয় আমরা উম্মাতের প্রবৃত্তির গোটন কামনা বাসানার পূজারী ও শিরকে লিপ্ত হওয়ার। আম বললামঃ আপনার উম্ম্াত মুরিক হয়ে যাবেঃ বললেন হাঁ। তবে এমন নয় যে তারা চন্দ্র, সূর্য, মূর্র্তি, পাথরের পূজা করবে। তাদের মধ্যে রিয়া ও প্রবৃত্তির পূূজার প্রভাব দেখা দেবে। সকল মানুণ রোয়া রাখবে কিন্তু যখন তারা প্রবৃত্তি চাইবে সে নিঃসংকোচন তা ভেঙ্গে ফেলবে।১৯ বন্ধু বান্ধব, আন্তীয় ¯ব্জন রোগগ্রস্ত হলে তাদের দেখতে যাওয়া ও খোঁজ খবর নেওয়া তাঁর অভ্যাস ছিল। আবু আশ’য়াস সাগানী শামের নিকটবর্তী দিমাশক মসজিদে থাকতেন। একবার শাদ্দাদ (রা) সানাবাহিনী সাথে পথ তার দেখা হলে। তিনি জিজ্ঞেসা করলেন: কোন দেিক যাচ্ছেন? শাদ্দাদ জবাব দিলেন, আমাদের এক ভাই অসুস্থ তাকে দেখতে যাচ্ছি। তিনিও সংগী হলেন। ভিতরে ঢুকে তিনি রোগিকে জিজ্ঞাসা করলেন: কি আবস্থা? জরাব এলো: ভালো আছি। হযরত শাদ্দাদ বললেনঃ আমি তোমাকে রোগ-ব্যধি গুনাহর কাফফারা হওয়ার সুসংবাদ শুনচ্ছি। হদীসে এসেছেঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পরীক্ষায় তাঁর প্রশংসা করে এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্টি থাকে সে মায়ের পেটে থেকে ভুমিষ্ট হওয়া সদ্যাজাত শিশুর মত পাক পবিত্র হয়ে যায়।২০ মাক্কা বিজয়ের সময়কালে একদিন রাসূল (সা) মদীনার বাকী গোরস্তানে যান। হযরত শাদ্দাদ তখন সঙ্গে ছিলেন এবং রাসূল (সা) তার একটি হাত ধরেছিলেন।২১ এ ঘটনা দ্বারা রাসূলের (সা) সাথে তার সম্পর্ক অনুমান করা যায়।
কবার তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) খিদমতে হাজির হন। তাঁর চেহারায় বিমর্ষতার ছাপ দেখে রাসূল (সা) জিজ্ঞেসা করলেনঃ কি হয়েছে? বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তোমার জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ। রাসূল (সা) বললেনঃ পৃথিবী তোমার জন্য সংকীর্ণ হবে না। শাম ও বাইতুল মাকদাস বিজিত হবে। তুমি ও তোমর সন্তানরা তাথাকর ইমাম হবে।২২ অক্ষরে অক্ষরে ও ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিনত হয়। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর ছেলেমেয়েদের সহ বাইতুল মাকদাসে বসতি স্থাপন করেন এবং গোটা শামের জ্ঞানও আধ্যতিœকতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন।
একাবার শাদ্দাদ জিহাদে গমনকারী একদল মুজাহিদকে বিদায় জানাচ্ছিলেন। ারা তাকে তাদের সাথে আহার করার আমরন্ত্র জানালে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে বাইয়াতের পর থেকে খাবারটি কোথা থেকে এসেছে তা না জেনে যদি খাওয়ার অভ্যাস থাকতো তাহলে তোমাদের সাথে অবশ্যাই খেতাম।২৩ ইবন সা’দ খালিদ ইবন মা’দান থেকে বর্ণনা করেছেন, খালিদ বলেছেনঃ উবাদা ইবন সামিত ও শাদ্দাদ ইবন আউস অপেক্ষা অধিকতর বিশ্বস্ত, চিন্তাবিদ ও সন্তুষ্টচিত্ত ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সা) সাহাবীদের মধ্যে আর কেউ শামে জীবিত নেই।২৪
ল্ম উঠে যাওয়া ও ভুলে যাওয়া সম্পর্কে ও একটি হাদীস আওফ ইবন মালিক আল- আশাজাঈ (রা) রাসূল (সা) থেকে বর্ণনা করেন। এ সম্পর্কে এক ব্যক্তি শাদ্দাদকে (রা) প্রশ্ন করলে তিনি বলেনঃ আওফ সত্য বলেছে তারপর তিনি বলেনঃ সর্বপ্রথম কোন্ ‘ইলমটি উঠবে তাকি তোমাকে বলবো? সে বললো হাঁ। বলেনঃ আল্লাহভীতি। এমন কি একজন আল্লাহ ভীরু লোকও তুমি দেখবে না।২৫ শাদ্দাদ ইবন আওস বলতেনঃ তোমরা কল্যাস ও মঙ্গলের সাবব বা কারণ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাও না। তেমনিভাবে অকল্যান ও অমঙ্গল কারণ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাওনা। কল্যানের সবকিছু জান্নাতের এবং আকল্যাসের সবকিছু জাহান্নামের। আর এই দুনিয়া একটি উপস্থিত ভোগের বস্তু। সৎ ও অসৎ সকলেই তা ভোগ করে থাকে। আর আখিরাত হচ্ছে সত্য অঙ্গীকার যেখানে রাজত্ব করেন মহাপরপাক্রমশালী রাজা। প্রত্যেকেরই আছে সন্তাননাদি তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়োনা।২৬
তিনি ছিলেন খুবই ধৈর্যশীল ও স্বল্পভাষী। তাবে মানুষের সাথে যখন কথা বলতেন, তখন তা হতো খুবই মধুর ও চিত্তাকর্ষক। সাঈদ ইবন আবদিল আযীয বলেনঃ শাদ্দাদ দুইটি অভ্যাসে আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। বলার সময় বাগিন্তাতায় এবং ক্রোধের সময় ধৈর্য, সহনশীলাতা ও মহানুভাবতায়।২৭ তিনি যে কত স্বল্পভাষী ছিরেন তার প্রমাণ মেল তার একটি মন্তব্য দ্বারা। একবার তিনি তার এক সঙ্গীকে বললেন, পথেয়টুকু নিয়ে এসো একটু খেলি। সঙ্গীটি বললোঃ এমন কথা তো আপনার মুখে কখনো শুনিনি! তিনি বলেনঃ আমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই মুখে রাগাম পরে নিযেছি। আজ অকস্মাৎ মুখ থেকে একথাটি বেরিয়ে গেল, তোমরা এটা ভুলে যাও। আর কখনো এমনটি হবে না।২৮
একাবার হযরত মু’ য়াবিয়া (রা) হযরত শাদ্দাদকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ শাদ্দাদ বলুন তো আমি বলো না আলী ইবন আবী তালিব ভালো? আমাদের দুজনের মধ্যে কে আপনার নিকট সর্বধিক প্রিয়?শাদ্দাদ বললেনঃ আলী আগে হিজরাত করেছেন, রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে বেশি ভালো কাজ করেছেন, আপনার চেয়ে বেশি সাহসী, আর তিনি আপনার চেয়ে বেশি প্রশস্ত হূদয়ের মানুষভ আর ভোলোবাসার কথা বলেছেন? আলী চলে গেছেন। আজ মানুষ আপনার কাছেবেশি আশা করে।২৯
তথ্যসূত্র:

মু’য়াজ ইবন আফরা (রা)

হযরত মু’য়াজের পিতার নাম আল-হারিস ইবন রাফা’য়া আন- নাজ্জারী এবং তার মাতার নাম আফরা বিনতু উবাইদ। মদীনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখার সন্তান। পিতার নামে তিনি পরিচিত নন। ইবন সা’দ বলেন: তাকে মায়ের সাতেই সম্পৃক্ত করা হয়।১ তাঁর মা আফরার প্রথম বিয়ে হয় আলÑহারিস ইবন রাফা’য়া আল-খাযরাজী সাথে। সেখানে তার দুছেলে- মু’য়াজ ও মুয়াওবিজ এর জন্ম হয়। এরপর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আফরা হজ্জের উদ্দেশ্য মাক্কায় যান এবং সেখানে আল-বুকাইর ইবন আবদি ইয়ালীল আল-লাইসীকে বিয়ে করেন। সেখানে আকিল ইয়াস, ইমর ও খালিদ নামে চার ছেলের জন্মের পর আবার মদীনায় ফিরে আসেন। পূর্ব স^ামী আল-হারিস আবার তাকে ফিরিয়ে নেন। এবার ছেলে আওফ-এর জন্ম হয়।২ এ সবই ইসলাম পূর্বে জীবনের ঘটনা।
হযরত আফরা (রা) ছিলেন একজন ভাগ্যবতী মহিলা। ইসলাম গ্রহণ করে নিজে তোা সাহাবিয়্যা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাছাড়া মু’য়াজ, মু’য়াওবিজ ও আওফের মত তিনটি ছেলের মত মা হওয়ার দুর্লভ সম্মান ও অর্জন করেন। এ তিনটি ছেলেই ইতিহাস প্রসিদ্ধ বদরের যোদ্ধে।৩ শেষোক্ত দুজন বদরের শহীদ।৪ শুধু তাই নয় তারাই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ট দুশন আবু জাহরকে এ বদরেই এক যোগে হামলা করে হত্যা করেন।
‘আকাবা উপত্যকায়ং রাসূলুল্লাহর (সা) হাতে মদীসাবাসীদের বাইয়াত বা শপথ অনুষ্টিত হওয়ার আগেই তিনি মক্কায় গিয়ে মুসলামন হন। আরা পাঁচ ব্যক্তি ও সফরে তাঁর সঙ্গী ছিলেন। অবশ্য এ ছ’জনের নামের ব্যাপারে সীরাত বিশেজ্ঞদের যথেষ্ট মত পার্থক্য আছে। যুহরী ও উরওয়ার বর্ণনা মাতে মুয়াজ ইবন আফরাও তাদের একজন।৫
তাবারনী উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন্ হজ্জ মওসুমে আনসারদের কয়েক ব্যক্তি মক্কায় গিয়ে হজ্জ করলেন। তাঁরা হলেন মুয়াজইবন আফরা, আসয়াদ, ইবন যুরারা, রাফে ইবন মালিক, জাকওয়ান ইবন আবদিল কায়েস, আবুল হায়সাম ইবন আততায়্যিহান ও উওয়ায়িম ইবন সা’য়িদা (রা) খবর পেয়ে রাসূলু (সা) তাদের কাছে গেলেন এবং আল্লাহ যে তাকে নবী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন তা তাদেরকে জানালেন। তিনি কুরআন থেকে পাঠ করেও শোনালেন। তাঁর অত্যন্ত ধীর-স্থির ভাবে কান লাগিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনলেন। আহলি কিতাবদের নিকট থেকে শেষ নবীর যে সকল গুন বৈশিষ্ট্যের কথা এবং তার দা’ওয়াতের বিষয় তাদের জানা ছিল তাতে রাসূলুল্লাহর (সা) দাবীর প্রতি তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস জান্মালো। তাঁরা ঈমান আনলেন। আগামী হজ্জ মওসুমে তাঁর সাথে আবার মিলিত হবেন এ অঙ্গীকার করে তাঁরা মদীনায় ফিরে এলেন।মদীনায় এসে তাঁরা চুপে চুপে মানূষকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন এবং তাঁদেরকে রাসূলুল্লাহর (সা) আবির্ভাব ও তাঁর মিশন সম্পর্কে অবহিত করতে লাগলেন। মানুষকে কুরআন পড়ে পড়ে শোনাতে লাগলেন। তাঁর এমন ভাবে কাজ করলেন যে, আনসাদের এমন বাড়ি খুব কমই ছিল যেখানে একজন লোকও মুসলামন হলো না।৬ ইসলামের ইতিহাসে এ ঘটনাকে কেউ কেউ আকাবার প্রথম বাইয়াত বা শপথ বরে উল্লেখ করেছেন। এ হিসেবে আকাবার বা’য়াত হয় তিনটি।
মদীনায় যখন বেশি কিছু লোক ইসলাম কবুল করলো এবং ঘরে ঘরে ইসলামের পরিচিতি গড়ে উঠলো তখন মদীনাবাসীরা মক্কা থেকে একজন লোক পাঠানোর জন্য রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট অনুরধ জানালো যিনি রাসূল (সা) প্রতিনিধি হিসেবে তাগেদরকে কুরআন শিখাবেন এবং দ্বীনের সঠিক তালীম দেবেন। রাসূল (সা) তাঁদের মদীনায় পাঠান। আবু নুয়াইম আল-হুলায়িয়্যা গ্রন্থে (১/১০৭) যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেনঃ মদীনাবাসীরা রাসূলুল্লাহর নিকট তাদের পৌছানোর জন্য মুয়াজ ইবন আফরা ও রাফে ইবন মলিককে মক্কায় পাঠান।৭
তাঁর ইসলাম গ্রহণ ও মক্কায় গমস সম্পর্কে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মদ্যে নানা রকম ধারণা প্রচ।িলত আরেছ। যেমন ইবন সা’দ বলেন, বর্ণিত আছে মু’য়াজ ইবন আলÑহারিস ও রাফে ইবন মালিক আনসারদের প্রথম দু ব্যক্তি যাঁরা মক্কায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবার এ কথাও বর্ণিত আছে যে তাঁদের দুজনকে আনসাদের সেই আট ব্যক্তির মধ্যে গণ্য করা হয় যাঁরা প্রথম দু’ ব্যক্তি যাঁরা মক্কায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ। আবার তাঁদেরকে সেই ছয় ব্যক্তির মধ্যেও গণ্য করা হয় যাঁদের সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরাই আনসারদের মধ্যে সর্বপ্রথম মক্কায় রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে মিলিত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। যাঁদের আগে আর কেই এমন করেননি। ওয়াকিদী ও মুহাম্মদ ইবন উমার বলেনঃ ছয় জনের বর্ণনাটি আমাদের নিকট সর্বাধিক সঠিক ও শক্তিশালী বলে মানে হয়।৮ সীরাত বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে প্রয় একমত যে তিনি আকাবার পরবর্তী দুটি বাই’য়াতে উপস্থিত ছিলেন।৯
হিজরাতের পর হযরত রাসূলে কারীম (সা) মা’মার ইবনুল হারিসের সাথে তাঁর দ্বীনি ভ্রাতৃ সম্পর্কে প্রতিষ্টা করে দেন।১০ হযরত মু’য়াজ তাঁর অন্য দু’ ভাই মু’য়াওবিজ ও আওফের সাথে বদরে অংশ গ্রহণ করেন। ইবন হিশাম বলেনঃ বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।১১ হযতে ম’য়াজ ইবন আফরার বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। তবে এ যুদ্ধে ইসলামের চরম দুশমন আবু জাহলকে তাঁর হত্যা বা এ যুদ্ধে শাহাদাত বরণ সম্পর্কে সীরাত ও হাদীস বিশেষজ্ঞদের দারুন মততবিরোধ আছে। বিভিন্ন বর্ণনা পর্যালোচনা করলে এ কথা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় য়ে, তিনি আবু জাহলের হত্যায় অংশগ্রহণ করেন এবং বদর যুদ্ধে আহত হওয়ার পরও দীর্র্ঘদিন জীবিত ছিলেন। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি।বদর যুদ্ধের শুরুতে কুরাউশ পক্ষে তিন বীর, উতবা ও ওয়ালীধ ইবন উতবা হুস্কার ছেড়ে প্রতিপক্ষকে দ্বন্দ্বের আহবান জানায়। তখন মুসলিম বাহিনীর মধ্যে হতে সর্বপ্রথম হযরত আফরার তিন ছেলে মু’য়াজ, মুয়াওবিজও আওফ তরবারি হতে নিয়ে ময়দানের দিকে ধাবিত হন। কিন্তু হযরত রাসূলে কারীম (সা) তাদেরকে বরত রাখেন। তিনি হযরত হামযা অন্যদেরকে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু জিহাদের তীব্র আবেগে কি তাতে দমে থাকতে পারে? হযরত আবদুর রহমান ইবন আওফ একটি সারিতে দাড়িয়ে ছিলেন। তাঁর ডানেÑবামে দু পাশে তাঁর দু ভাই এম দাড়িয়ে গেলেন। আবুদর রহমান তাদেরকে চিনতেন না। এ কারণে নিজের দু’পাশে দু’ তরুণকে দেখে একচু হতাশা ও বীতি অনুভব করলেন। এর মধ্যে একজন ফিস ফিস করে জানতে চাইলেনঃ চাচ বলুন তো আবু জাহল কোন দিকে? তিনি পাল্টা প্রশ্ন করলেনঃ ভাতিজা তাকে দিয়ে কি করবে? তরুনটি বললেনঃ শনেছি সে রাসূলুল্লাহকে (সা) গালি দেয়, এজন্য আমরা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, তাকে অবশ্যই হত্যা করবো। আর এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে হরে জীবনও বিলিয়ে দেব। দ্বিতীয় তরুণও ঠিক একই কতা বললেন।
হযরত আবদুর রহমান দারুণ পুলকিত হলেন। তিনি চিছুটা গর্বও অনুভব করলেন এই ভেবে যে কত মাহান দু’ বক্তির মাঝখানেই না দাঁড়িয়ে! তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ দেখ ঐ যে ক্ষাু জাহল হাঁটছে। এতটুকু বলতেই তাঁরা দুজন বাজ পাখীর ন্যায় ত্বরীৎ গতিতে ঝাপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করেন। ফিরে এসে তাঁরা রাসূলকে (সা) এ হত্যার সুসংবাদ দান করেন। তখন তাদের দু’জনের তরবারিতে আবু জাহলের রক্ত বিদ্যমান।১২ সহীস মুসলিম গ্রন্থে এ দু’ তরুণের নাম মু’য়াজ ইবন আমর ইবনুল জামূঞ এবং মু’য়াজ ইবন আফরা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সহীহ বুখারীতে আফরা’র ছেলেদের কথা এসেছে। যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুয়াজ ইবন আফরা ও তাঁর ভায়ের নরাধম আবু জাহলকে হত্যা করেছিলেন।
আল হাকেম (৩/৪২৫) ও আলÑ বায়হাকীর (৬/৩০৫) বর্ণনায় জানা যায়, ঐ দু’তরুণেরে একজন মুয়াজ ইবন আফরা এবং অন্য জন মু’য়াজ ইবন আমর ইবনুল জামূহ। তাঁরা আবু জাহলকে হত্যার পর দৌড়ে রাসূলকে (সা) সুসংবাদ দিতে এলে তিনি প্রশ করলেনঃ তোমাদের দুজনরে কে তাঁকে হত্যা করেছে? তাঁরা দু’জনই বললেনঃ হ্যাঁ তোমরা দু’ জনেই তাঁকে হত্যা করেছো, এরপর তিনি তাঁদের দু’জনকেই রণক্ষেত্রে ক্ষু জাহলের নিকট থেকে প্রাপ্ত জিনিসগুলি দান করেন।১৩
ইবন আবী খায়সামা ইবন ইসহাকের সুত্রে বর্ণনা করেছেন। মু’য়াজ বিন আফরা বলেছেনঃ আমি সুযোগ পেয়ে আবু জাহলকে তরবারি দিয়ে এমন আঘাত হানলাম যে তার পায়ের নালার মাঝামাঝি থেকে কেটে পড়ে গেল। সাথে সাথে আকরামা ইবন আবী জাহল আমার এক কাঁধে আঢ়াত করে বসলো। আমার সেই ঝোলানো হাতটি পিছনের দিকে টেনে নিয়ে বেড়াতাম। তারপর সেটা যখন বেশি কষ্ট দিতে লাগলো তখন একদিন পা দিয়ে চেপে ধরে ছিড়ে ফেলে দেই। অবশ্য ইবন হিশাম ইবন ইসহাকের সুত্রে উপরোক্ত ঘটনা মু’য়াজ ইবন আমর ইবনুল জামূহ এর সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। আর তাঁর সহযোগী হিসেবে মু’য়াওবিজ ইবন আফরার কথা বলেছেন।১৪
আলÑইসতীয়াব গ্রন্থকার উল্লেখ করেছেন, বদর তিনি বনু যুরাই গোত্রের ইবন মায়িদ এর আঘাতে আহত হন।১৫ ইবন সা’দ এর মতে আফরার দুছেলে মু’য়াওবিজ ও আওফে এক কোপে আবু জাহলকে আক্রমন করেন। আবু জাহল পাল্টা আক্রমন করে তাদরে দুজনকেই হত্যা করে। এরপর আবু জাহল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আবদুল্লাহমাসউদ বাকী কাজটুকু শেষ করে তাকে জাহান্নামে পাঠান।১৬ একটি বর্ণনা মতে এ বদর যুদ্ধে তিনি ইসলামের অন্য এক চরম দুশমন উমাইয়্যা ইবন খালফকে হত্যায় অংশগ্রহণ করেন।১৭
আবু জাহলের হত্যার ঘটনার মত হযতে মু’য়াজ ইবন আফরার মৃত্যুর সময় সম্পর্কে বেশ মতভেদ আছে। যেমন, বালাজুরী বলেনঃ মু’য়াজ ও তাঁর ভাই মু’য়াওবিজ বদরে শহীদ হন। তাঁদের ভাই আওফ জীবিত থাকেন। ইবনুল কালবী বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট আসেন। তারপর ছেলে আওফের দিকে ইশঅরা করে বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই আমার সবচেয়ে খারাপ ছেলেটি রয়ে গেছে। রাসূল (সা) বললেনঃ না। তার মাদ্যমেই আফরা’র বংশধারা চলবে। কিন্তু ওয়কিদী বলেনঃবদরে আওফ ও মু’য়াজবিজ শহীদ হন এবং মু’য়াজ জীবিত থাকেন। তারপর ফিত্না অর্থ্যৎ আলীÑমুওবিয়ার (রা) দ্বন্দ্ব সংঘাতের সমং হিজরী ৩৭ নস ইনতিকাল করেন।১৮ আওফ ও মু;য়াওবিজ যে বদরে শহীদ হন, একথা ইবন হিশামও বলেছেন।১৯
আবার কেউ কেউ বলেছেন। মু‘য়াজ বদরে বনু যুরইক গোত্রের ইবন মা‘য়িদা এর হতে আহত হন এবং তাতেই পরে মদীনায় মারা যান। ইবন ইদরীস, ইবন ইসহাক থেকে বর্ণানা করেছেন যে মু‘য়াজ খলীফা উসমানের (রা) সময় পযর্ন্ত বেঁচে ছিলেন। খলীফা ইবন খাইয়্যাত বলেছেনঃ দিসি আলী ইবন আবীঅ তালিবের (রা) খিলাফতকালে ইনতিকাল করেন।২০ যাই হোক তিনি যে বদরে শাহাদাত বরণ বা রাসূলুল্লাহর (সা) জীবদ্দশায় ইনতিকাল করেননি তা প্রমাণিত হয় সীরাত গ্রন্থে সমূহে বর্ণিত তাঁর পরবর্তী জীবরে অনেক ঘটনাবালী দ্বারা। এখানে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হলোঃ
ওয়াদি উল কুরা মুসলামদের মধ্যে ভাগ করে দেন। তাঁর একটি অংশ মু‘য়াজ ইবন হযরত আবু আইউব আলÑআনসারীর (রা) আযাদকৃদ দাস আফলাহ বর্ণনা করেছেন। একাবর খলঅফা উামার (রা) প্রত্যেক বদরী সাহবীকে দেওয়ার জন্য খুব সুন্দর চাদর তৈরী করালেন। তার একটি মু‘য়াজ ইবন আফারকেও পাঠালেন। তারপর মু‘য়াজ আমাকে বললেনঃ চাদরিটি বিক্রী করে দাও। আমি পনেরো শো দিরহাম খরচ করে একটি মোটা ও পুরো চাদর তৈরীঅ করে আবার পাঠান। মুয়াজ চাদরটি হাতে নিয়ে সোচা উমারের (রা) নিকট চলে যান এবং জিজ্ঞাসা করেনঃ আপনি কি এটি পাঠিয়েছেন? উমার বললেনঃ হ্যাঁ। পূর্বে যেটি পাঠিয়েছিলাম, ঠিক সেরকম চাদর আপনার অন্যসব ভাইদের নিকটও পাঠিয়েছিলাম। শুনলাম আপনি সেটি পরেননি। মু‘য়াজ বললেনঃ আমিরুল মুমিনীন! এটা আমি পরবো না।২১ দুনিয়ার প্রতি তিনি যে কতখানি নিরাসক্ত ছিলেন তা উপরোক্ত ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়।
হযরত রাসূলে করীমকে (সা) তিনি প্রাণধিক ভালোবসতেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় নরাধম আবু জাহলের হত্যার ঘটনায়। এ ক্ষেত্রে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যে অপূর্ব দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন তা সত্যিই বিস্ময়কর।
মদীনায় মসজিদে নববী যে স্থানে প্রতিষ্টিত, সে ভূ-খন্ডটি ছিল সাহল ও সুহাইল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের। রাসূল (সা) কুবা থেকে যে দিন মদীনার মূল ভূÑখন্ডে প্রবেশ করেন সে দিন তাঁর বহস উটটির লাগাম ছেড়ে দেওয়া ছিল। সে আল্লাহর নির্দেশে চলছিল এবং আল্লাহরই নির্দেশে সাহল ও সুহাইলের উক্ত ভূমিতে এসে বসে পড়ে। ইবন হিশামের বর্ণনামতে উক্ত ইয়াতীমদ্বয় তখন এই মু’য়াজ ইবন আফরার তত্ত্বাধানে লালিত পালিত হচ্ছিল।২২ এতে বুভা যায়, তিনি ইয়াতীম ও অসহায়দের প্রতি খুবই সদয় ছিলেন।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি খুব সচেতন ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে একবার হজ্জ করেন। এছাড়া আরো হজ্জ করেন। যার একটি বর্ণনা সুনানে নাসাঈ গ্রন্থে এসেছে।২৩ ইবন সা’দ তাঁর একাধিক স্ত্রী ও অনেকগুলো ছেলে মেয় ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। এমন কি তাদের নামও বর্ণনা করেছেন।২৪
সানাসে নাসাঈ সহ বিভিন্ন গ্রন্থে তাঁর বর্ণিত দু একটি হাদীস পাওয়া যায়।২৫
তথ্যসূত্র:

আবু লুবাবা (রা)
হযরত আবু লুাবাবরা (রা) আসল নামের ব্যাপারে যথেষ্ট মতেভেদ আছে। মুসা ইবন উকবা ও ইবন হিশাম বলেন, তাঁর নাম বাশীর। আর ইবন ইসহাকের মতে রাফা’য়া। তাফসীরে তাঁর নাম সারওয়ান বলে উল্লেখ করেছেন।১ বালাজুরঅর মতে রাফা’য়া হচ্ছে আবু লুবাবার ভাই তিনি আকাবার শেষ বা’ইয়াতে অংশ গ্রহণ করেন। বদরেও অংশ গ্রহণ করেন এবং খাইবার যুদ্ধে শহীদ হন। আল আবু লুবাবার নাম বাশীর।২ তাঁর আসল নাম যাই হোক না কেন, ইতিহাসে তিনি আবু লুবাবা নামেই খ্যাত। তাঁর পিতার নাম ‘আবদুল মুনজির ইবন যুবাইর। মদীনার বিখ্যাত আউস গোত্রের বনু আমর ইবন আওফ শাখার সন্তান। তিনি আকাবার শেষ বাইয়াতে (শপথ) অংশ গ্রহণ করেন এবং নিজ গোত্রের ‘নাকীব’ (দায়িত্বশীল) মনোনীত হন।৩
তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে অধিকাংশ যুদেআধ অংশ গ্রহণ করেন। বদর যুদ্ধের সময় বিশেষ সম্মান ও লাভ করেন। এ সফরে প্রতিটি উটের ওপর তিনজন করে আরোহী ছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) উটের ওপর আবু লুবাবা ও আলী ইবন আবী তালিব (রা) ছিলেন। তার পালাক্রমে উটের পিঠেই ওফানাামা করছিলেনম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি উটের পিঠেই থাকুন আমরা হেঁটে চলছি। কিন্তু রসূল (সা) বলছিলেন, তোমরা আমরা চেয়ে বেশি শক্তিশালী নও। আর এমনও নয় যে তোমাদের চেয়ে বেশী সওয়াবের প্রয়োজন আমার নেই।৪
ইবন ইসহাক বলেনঃ অনেক বলেছেন, আবু লুবাব ও আল হারিস ইবন হাতিব, রাসুল্লাহর (সা) সাথে বদরে দিকে যাত্রা করেন। কিছু দূর যাওয়ার পর পর থেকে রাসূল (সা) তাঁদের দুজনকে আবার মদীনায় ফেরত পাঠান। রাসূল (সা) আবু লুবাবকে মদীনার ইমারাতের দায়িত্ব ও দান করেন। যুদ্ধ শেষে রাসুল (সা) তাঁদের দুজনকেই গনীমতের অংশ দেন এবং আসহবে বদরের মতোই তাঁদের সাথে আচারন করেন। মুসা উবন উকবা আবু লুবাবকে বদরীদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।৫ ইবন হিশাম বলেনঃ রাসূল (সা) আর রাওহা নামক স্থানে তাদের দজনকে ফেরত পাঠান।৬
হিজরী ২য় সনের শাওয়াল মসে মদীনার ইহুদী গোত্রের বনু কায়নুকার সাথে সংঘটিত যুদ্ধে এবং এই সনের জ্বিলহাজ্জ মাসে সংঘটিত সাবীক যুদ্ধে তিনি যোগদান করেননি। এ সময় রাসূল (সা) তাঁকে মদীসায় স্থালভিষিক্ত করে যান। রাসূল (সা) পনেরো দিন যাবত বনু কায়নুকা অবরোধ করে রাখেন্ এ সময় আবু লুবাবা মদীনায় ইমারাতের দায়িত্ব পালন করেন।৭
হিজরী ৫ম সনে খন্দক যুদ্বের সময় মুসলমানদের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে মদীনায় ইহুদী গোত্রে বনু কুরায়জা কুরাইশ বাহিনীকে সাহায্য ও সহযোগীতা করে। যুদ্ধ শেষে রাসূল (সা) মুসলিম বাহিনী নিজ নিজ ঘরে ফিরে আসার পরই জিবরীল (আ) রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট এসে বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি অস্ত্র রেখে দিয়েছেন? বললেনঃ হ্যাঁ জিবরল (আ) বললেনঃ কিন্তু ফেরেশতারা অস্ত্র রাখেনি। ইয়া মুহাম্মদ! আল্লাহ আপনাকে বনু কুরায়াজার দিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সে দিকেই যাচ্ছি এবং তাদেরকে নাড়া দিচ্ছি। রাসূলু (সা) তখন জুহরের নামায শেষ করে মাত্র ঘরে ফিরেছেন।
জিবরীলের (আ) এ কথার পর রাসূল (সা) সাথে সাথে ঘোষনা দিলেনঃ বনু কুরায়জা পৌছে ছাড়া কেউই আমার নামাজ পড়বে না। ঘোষনা অনুযায়ী সবাই বনু কুরায়জায় পৌঁছে। র্দীঘ ২৫ রাত তাদের দুর্গ অবরোধ করে রাখা হয় এবং তাদেরকে আতœসমর্পণের আহাবান জানানো হয়্ অবশেষে আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করে দেন। তারা তাদের পুরাতন বন্ধু হযরত সা’দ ইবন মু’য়াজের (রা) শালিশী মেনে নিতে রাজি হয়।
মাদীনার আউস গোত্রের বনু আমর ইবন আওফ শাকার সাথে বনু কুরায়াজার সেই জাহিলী যুগ থেকে মৈত্রী চুক্তি ছিল। আবু লুবাবা ছিলেন এ গোত্রেরই লোক। এ কারণে তারা অবরুদ্দ অবস্থায় রাসূলুল্লাহার (সা) নিকট আবেদন জানায়: আমাদের কাছে আবু লুবাবাকে পাঠান, আমরা তাঁর সাথে একটু পরমর্শ করতে চাই। রাসূল (সা) তাদের আবেদ মঞ্জুর করেন এবং আবু লুবাবকে তাদের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেন।
আবু লুবাব বনু কুরায়াজায় পৌঁছালে ইহুদীরা তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করে। তারা আবু লুবাবার নিকট তাদের সমস্যা তুলে ধরে। ইহুদী নারী ও শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারার মত তার সামনে এসে দাড়িয়ে। দৃশ্যটি ছিল সত্যিই হৃদয়বিদারক। আবু লুবাবর অন্তর কোমল হয়ে যায়। তারা আবু লুবাবাকে প্রশ্ন করেঃ আমরা কি মুহাম্মদের নির্দেশ মেনে নেব? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তাবে সাথে সাথে নিরে গলার দিকে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দেন যে তাদরেকে হত্যা করা হবে।
আবেগের বশে এ ইঙ্গিত তো করে ফেললেন। কিন্তু সাথে সাথে এ উপলদ্ধি জান্মালো যে এতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা) বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়েছে। তখন তাঁর পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল। তিনি সেখানে থেকে উঠে সোজা মসজিদে নববীতে চলে আসলেন এবং এটি মোটা ও ভারী বেড়ী দিয়ে নিজেকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে বললেনঃ যতক্ষন আল্লাহ আমার তাওবা কবুল না করেন, এভাবে বাঁধা অবস্থায় থাকবো।
এদিকে আবু লুবাবর ফিরতে দেরি দেখে একদিন রাসূল (সা) বললেনঃ আবু লুবাব কি তার মিশন শেষ করেছে? তখন লোকেরা রাসূলকে (সা) বিষয়টি অবগত করে। রাসূল (সা) যা হোক যা হয়েছে ভালোই হয়েছ্ েসে যদি সোজা আমার কাছে চলে আসতো আমি তার জন্য আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করতাম। মোটকথ, বিশ মাতন্তরে দশ রাত বেড়ী বাঁধা অবস্থায় আবু লুবাবার অতিক্রান্ত হয়। নামায ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজনের সময় তাঁর স্ত্রী বেড়ী খুলে দিতেন এবং প্রয়োজনে শেষ হলে আবার বেঁধে দিতেন্ পানাহার একেবারেই ছেড়ে দেন। শ্রবণ শক্তি কমে যায়, দৃষ্টি শক্তি ও ক্ষীণ হয়ে পড়ে। একদনি দুর্বলতার কারণে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আর তখনই আল্লাহর রহমত নাযিলের সময় হয়।
হযরত রাসূলে করীম (সা) সে দিন উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামার (রা) ঘরে ছিলেন। প্রভাতের পূর্বেই আয়াত নাযিজ হয়। রাসূল (সা) একটু হেসে ওঠেন। তা দেখে হযর উম্মু সালামা (রা) বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সব সময় খুশী রাখুন। বলুন তো কি ব্যাপার? বললেনঃ আবু লুবাবর তাওবা কুল হয়েছে। উম্মু সালামা (রা) জানতে চাইলেন, আমি কি এ সুসংবাদ মানুষকে জানিয়ে দিতে পারি? রাসূল (সা) বললেনঃ হাঁ তখনও হিজাবের আয়াতনাযিল হয়নি। উম্মম সালামা (রা) হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে লোকদদেরকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। লোকেরা আবু লুবাবাকে মুক্ত করার জন্য ছুটে যায়। কিন্তু তিনি বললেনঃ যখন ফজরের নামাযের জন্য মসজিদে আসেন তখননিজ হাতে তাঁকে বন্ধনমুক্ত করেন।
তাওবা কবুল লুবাবা (রা) দারুণ খুশী হন। তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট এসে বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ঐ বাড়ী ত্যাগ করতে চাই যেখনে আমি এ পাপে লিপ্ত হয়েছি। আমি আমার সকল সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য সাদাকা করে দিতে চাই। রাসূল (সা) বললেনঃ সব নয় বরং এক-তৃতীয়াংশই যথেষ্ট। তিনি এক-তৃতীয়াংশই দান করেন।
হযরত আবু লুবাবর (রা) এ তাওবার পশ্চতে কি কারণ ছিল সে সম্পর্কে অবশ্য সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতভেদ আছে। মা’মার ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন। অবু লুবাব তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার আপরাধে তাওবার এ পন্থা অবলম্বন করেন। হযরত ইবন আব্বাসও (রা) একথা বলেছেন, সূরা আতাওবার ১০২ নং আয়াতে আর কোন কোন লোক আছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়তো তাদরে ক্ষমা করে দিবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়, আবু লুবাবসহ আরও ৮/৯ জন সম্পর্কে নাযিজ হয। তারা তাবুব যুদ্ধে যোগদান না করে মদীনায় থেকে যায়। তারপর অনুতপ্ত হয়ে সকলে তওবা করে। তারা তাওবার পদ্ধতি হিসেবে নিজেদেরকে মসজিদের খুঁটিতে বেঁধে ফেলে। অতঃপর তাদের তাওবা কবুল হয়। তাদের সবচেয়ে ভলো কাজ এ তাওবা সবচেয়ে মন্দকাজ তাবুকে যোগদান না করা।
আবু আমারের মতে তাবুকের ঘটনায় নয়; বরং বনু কুরায়জার ঘটনায় আবু লুবাবা এ তাওবা করেন। আব তারই পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল আনাফালের ২৭ নং আয়াত ‘ হে ঈমানদারগণ! খিয়ানত করোনা আল্লাহর সাথে ও রাসূলের সাথে এবং খিয়ানত করোনা নিজেরদের পারস্পরিক ানানতে জেনে শুনে নাযিল হয়। আবু আমরাসহ অনেকের মতে আবু লুবাবা তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যে সকল মুসলমান বিনা কারণে তাবুকে যোগদান করেননি তাঁদের সংখ্যা মাত্র তিন। তাঁরা হলেন মুরারা ইবন রাবী; হিলাল ইবন উমাইয়্যা এবং কাব ইবন মালিক (রা)। তাঁদের সাথে আবু লুবাবকে যুক্ত করা ঠিক নয়। কারণ, সূরা আত্ তাওবার ১১৮ নং আয়াতে উপরোক্ত তিনজনের কথাই বলা হয়েছেঃ ্ এবং অপর তিনজনকে যাদের পিছনে রাখা হয়েছিল, যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সস্কুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলো আর তাা বুঝতে পারলো যে আল্লাহ ব্যাতিত আর কোন আশ্রয়স্থল নেই-অত:পর তিনি সদয় হলেন তাদের প্রতি যাতে তারা ফিরে আসে।৮
হিজরী ৮ম সনে মক্কা বিজয় অভিযানে বনু আমর ইবন আওফের ঝান্ডা ছিল হযরত আবু লুবাবর (রা) হতে। এছাড়া রাসূলুল্লাহর (সা) জীবদ্দশঅয় সংঘটিত সকল যুদ্ধ ও অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
তাঁর মৃত্যু সন নিয়ে দারুণ মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশের মতে তিনি হযরত আলীর (রা) খিলাফতকালে মারা যান। আবার একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত উসমানের (রা) শহাদাতের পর তিনি মারা যান। কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন যে, হিজরী ৫০ সন পর্যন্ত তিনি জীবিত ছিলেন।৯ মৃত্যু কালে সয়িব ও আবদুর রহমান নামে দুটি ছেলে রেখে যান।
হযরত আবু লুবাবা ছিলেন একজন অতি মর্যাদাবান সাহাবী। তিনি বহু বছর রাসূলুল্লাহর (সা০ সাহচর্যের সৌভাগ্য লাভ করেন। এ সময়ে রাসূলুল্লাহর (সা) বহু বানী শুনে থাকবেন। কিন্তু তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা অতি নগণ্য তাঁর থেকে যাঁরা হাদীস শুনেছেন এবং বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে অনেক বড় বড় সাহাবীও আছেন। যেমনঃ গযরদ আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা)। তাছাড়া তাবেঈনদের প্রথম তাবকার অনেকেই তাঁর ছাত্র ছিলেন এবং তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এখানে প্রসিদ্ধ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলোঃ
আবদুর রহমান ইবন ইয়াযীদ ইবন জাবির উব বরক ইবন আমর ইবন হাযমা সা’ঈদ ইবন মুসাইয়্যাব, আবদুর রহমান ইবনকাব ইবন মালিক,সালেম ইবন আবদিল্লাহ উবাইদুল্লাহ ইবন আবী ইয়াযিদ নাফে মাওলা ইবন উমার তাঁর দুছেলে সয়িব ও আবদুর রহমান।১০
হযরত আবু লুবাবা (রা) ইসলামের পূর্ণ অনুসারী ছিলেন। কুরআন ও নুন্নাহর আদেশ নিষেধ পূর্ণুেপে েেন চলতেন। মানবিক দুর্বলতার কারণে কক্ষনো কোন রকম ক্রটি বিচ্যুাতি হে য়গেলে তা বুঝতে পারার সাথে একনিষ্টভবে তাওবা করতেন। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, আবু লুবাবা (রা) বনু কুরায়জার ব্যাপারে যে ভুল করেছিলেন এবং তাতে তাঁর চেয়ে বেশি পরিচ্ছন্ন ও উজ্জল করেছিল তাঁর তাওবা। আল্লাহ পাক স্বয়ং তাঁর তাওবা কবুল হওয়ার ঘোষনা দিয়ে অহী নাডিল করেছেন, আর আল্লাহর রাসূল (সা) সন্তুষ্টি চিত্তে নিজ হাতে তাঁর বন্ধন খুলে দিয়েছেন।আবু লুবাবার (রা) এর চেযে বড় মর্যাদা এবং পাওয়া আর কি আছে? প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত তাওবাকারী অপরাধী আল্লাহর অতি প্রিয়। তিনি অতি খুটিনাটি বিষয়েও রাসূলুল্লাহর (সা) হাদীসের ওপর আমলের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) মুখ থেকে সাপ মারার হাদীস শুনেছিলেন। এ কারণে সাপ দেখরেই মেরে ফেলতেন। আবু লুবাবর (রা) বাড়ীটি ছিল তাঁরই বাড়ীর একেবারে লাগোয়। একদিন তিনি বিন উমারকে (রা) বললেনঃ আপনার বাড়ীর দরজাটি একটু খুলুন,আমি এ পথেই মসজিদে যাব। ইবন উমার (রা) উঠে যেইনা দরজা খুলেছেন, অমনি একটি সাপ দেখতে পেলেন। ইবন উমার (রা) মারার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আবু-লুবাবা (রা) তাঁকে বাধা দিয়ে বললেনঃ রাসূল (সা) ঘরের সাপ মারতে নিষেধ করেছে।১১
আবু নু’য়াইম তাঁর আদÑদালায়িল’ (১৬০) গ্রন্থে আবু লুবাবর একটি বর্ণনা এনেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাসূল (সা) এক জ্ম্মুার দিন মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি দাও। আবু লুবাবা বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! খেজুর তো শুকানো জন্য উঠোনে রয়েছে। রাসূল (সা) বললেনঃ হে আল্লাহ আমদেরকে পানি দাও যতক্ষনা আবু লুবাব ল্যাংটা হয়ে ওঠে এবং নিজের পাজামা দিয়ে তার উঠোনের পানির নালা বন্ধ করে। তারপর এত বৃষ্টি হতে থাকে যে লোকেরা আবু লুবাবকে বললোঃ রাসূল (সা) তোমার সম্পর্কে যা বলেছেন তানা করা পর্যন্ত বৃষ্টি থামবে না। আবু লুবাবকে তাই করলেন। বৃষ্টিও থেমে গেল।১২
এভাবে আবু লুবাবার (রা) জীবনের অনেক টুকরো টুকরো কথা সীরাতের গ্রন্থ সমুূহের পাতায় ছড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র:


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি