ইসলামী সংগঠনে ইহতিসাব
এই যুগে কোন নবী নেই। নবীর গড়া কোন মানুষও নেই।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদেরকেই আজ ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাতে হচ্ছে ঈমানের দাবী পূরণের জন্য। কিন্তু আমাদের জীবনে আছে ভুলভ্রান্তি। কোন মুমিন সারা জীবন ভুল-ভ্রান্তি আবর্জনায় গড়াগড়ি দিতে থাকুক, এটা আল্লাহ চান না। তাই তিনি মুমিনদেরকে তাদের চিন্ত-ভাবনা, কথাবার্তা, লেন দেন ও যাবতীয় কাজ কর্মের তাযকিয়া কাজে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করেছেন।
মুমিনগণ যাতে একে অপরের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয় তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল্লাহর রাসূল(সা) বলেন,
“মুমিন মুমিনের আয়না।” -সুনানু আবী দাউদ
আয়না যেভাবে একজন ব্যক্তিকে তার সাজগোছে কোথায় কোন ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেয়, একজন মুমিনও সেভাবে আরেকজন মুমিনের জীবনে কোথায় কী ত্রুটি আছে তা দেখিয়ে দেবে।
সাধারণত: অবচেতনভাবেই মানুষ ভুল করে। কেউ যদি এই ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তবেই সে সচেতন হয়ে তার জীবন থেকে ভুল-ভ্রান্তি দূর করার পদক্ষেপ নিতে পারে। একে অপরের ভুল ভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়ার এই প্রক্রিয়ারই নাম ইহতিসাব।
ভুল দেখিয়ে দেয়ার একটা বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি আছে। সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই জরুরী। তা না হলে হিতে বিপরীত হবার সমূহ আশংকা। ইহতিসাব ব্যক্তিগতভাবে করাই বাঞ্ছনীয়। ব্যক্তিগতভাবে ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দেয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি নিজেকে শুধরাতে উদ্যোগী না হয় তাহলে সামষ্টিক ফোরামে আনা যাবে।
ইহতিসাবের আগে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা জেনে নেয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন সমস্যা-পীড়িত মানুষ কোন প্রকারের সমালোচনা বরদাশত করতে পারে না অথবা যথার্ত মিজাজে সমালোচনা গ্রহণ করতে পারে না। সেই জন্য ব্যক্তির মানসিক অবস্থা যাচাই করে নেয়া দরকার। ইহতিসাবের ভাষা হবে মোলায়েম। ভাষায় কোন তেজ থাকবে না। ক্ষোভের অভিব্যক্তি ঘটবে না।
ইহতিসাব যে করবে তার চেহারা ও ভাব-সাবে রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ পাবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন বুঝতে সক্ষম হয় যে তার ত্রুটি দেখিয়ে দেয়ার লক্ষ্য, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা নয় বরং তার জীবনকে সুন্দর করা।
ইহতিসাব মাথা পেতে নেয়া নিশ্চয়ই বাহাদুরি কাজ। কোন কাপুরুষের পক্ষে ইহতিসাবের মুকাবিলায় মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভবপর নয়। কিন্তু ইসলামী সংগঠনের কর্মীগণ এই ধরনের কাপুরুষতার শিকারে পরিণত হবেন, এটা কাম্য নয়। তাই ইসলামী সংগঠনের প্রতিটি কর্মীকে ইহতিসাবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইহতিসাবের কল্যাণকারিতা থেকে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে হবে এবং সত্যকে অকাতরে মেনে নেয়ার মনোবৃত্তি রাখতে হবে।
ইহাতিসাবের কল্যাণকারিতা সম্পর্কে যেই ব্যক্তি সচেতন সেই ব্যক্তিই ইহতিসাবকে খোশ আমদেদ জানাতে পারে। এমন ব্যক্তির কাছে থেকে ইহতিসাবের যে জবাব আসবে তা সংগঠনের সুস্থতা অক্ষুন্ন রাখবে এবং সংগঠনের কর্মীগণ আয়নার ভূমিকা পালন করার হিম্মত রাখতে পারবে।

 


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি