মুখ্য বিষয়সমূহ
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
সংশ্লিষ্ট বই
জামায়াত ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ( জালালাবাদে ইসলামী আন্দলন)
লেখকঃ অধ্যাপক ফজলুর রহমান
প্রকাশনীঃ দারুল হিকমাহ বাংলাদেশ
জালালাবাদ বলতে বর্তমান সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জকে এমনকি আসামের করিমগঞ্জকেও বুঝায়। কেননা উপরিউক্ত এলাকাগুলাে সাবেক সিলেট জেলার ৫টি মহকুমা ছিল। অতীতে এ এলাকাগুলােতে ৮টি স্বাধীন খণ্ডরাজ্য ও একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ছিল। ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালাল (র) এর অভিযানের মাধমে একটি খণ্ড রাজ্য অর্থাৎ গৌড়ে মুসলিম শাসনের গােড়াপত্তন হয়। সময়ের ব্যবধানে গােটা অঞ্চল মুসলিম শাসনের অধীনে চলে আসে। বইটিতে খুবই সংক্ষিপ্তাকারে এ ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। বৃহত্তর সিলেট তথা জালালাবাদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে ১৭৭০ সালে। তার পর ব্রিটিশের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে যে সব আন্দোলন সংগঠিত হয় তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এসেছে। হযরত শাহজালাল (র) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক প্রভাবে এ অঞ্চলে তাওহীদ রেসালাত ও আখেরাতের বিশ্বাসভিত্তিক একটি সমাজ গড়ে উঠে। গড়ে উঠে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা। যার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে সিলেট অঞ্চলের সুযােগ্য আলেম সমাজ। ইসলামী আন্দোলন ও সমাজ বিনির্মানে আলেম সমাজের অবদান অবিস্মরণীয়। বইয়ের কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৫০জনের জীবনের কয়েকটি দিক খুবই সংক্ষিপ্তকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হয়। স্বাধীনতা অর্জিত হয়। সিলেট আসাম প্রদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল। অথচ আসাম যায় ভারতে আর সিলেট আসে পাকিস্তানে, পরবর্তীতে বাংলাদেশে- এর প্রেক্ষাপট বইতে আলােচিত হয়েছে। ১৯৫৩ সালে সিলেট জামায়াতে ইসলামীর কাজের সূত্রপাত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন দায়িত্বশীলদের ইন্তেকালের পর এ অঞ্চলে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিভাবে আরম্ভ হয় তা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লােকের অভাব অনুভূত হয়। এ অনুভূতি থেকে জামায়াতের অতীত লেখার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এ ব্যাপারে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করে একটি সাংগঠনিক জেলা ‘সিলেট উত্তর'। এ উদ্যোগ বেশিদূর অগ্রসর না হওয়ায় গ্রন্থকারকে এগিয়ে আসতে হয়। বিষয়টি জামায়াতে ইসলামীর সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক বৈঠকে আলােচিত হয় এবং গ্রন্থকারকে সহযােগিতা করার জন্য আঞ্চলিক টীম সদস্য মৌলভী বাজারের সাবেক জেলা আমীর দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ও মহানগর শুরা সদস্য, দক্ষিণাংশের থানা আমীর জনাব জাহেদুর রহমান চৌধুরীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ তিনজনের যৌথ বৈঠকে পর্যালােচনার মাধ্যমে গ্রন্থ রচনার কাজ অগ্রসর হয়। সূচনালগ্নের ইতিহাস লেখার প্রয়ােজনে লন্ডনে বসবাসরত মাওলানা মুকাররম আলী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি, এর সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা সৈয়দ আবু নছর, অধ্যাপক মাওলানা সৈয়দ একরামুল হক, মাওলানা আব্দুন নূর মরহুম, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকেএর সাবেক আমীর জনাব আব্দুস সালাম, সুনামগঞ্জের ডা, করম আলী, মৌলভী বাজারের জনাব সৈয়দ মুদাব্বির হােসেন প্রমুখের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উনারা সবাই জামায়াতের এ অঞ্চলে সূচনালগ্নে জড়িত ছিলেন। উপরিউক্ত সাক্ষাৎকার ও সুতি থেকে তথ্য উপাত্ত জোগাড় করা হয়। অতীত আলােচনা। করতে গিয়ে কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার উপর আলােকপাত করতে হয়েছে। ফলে উপমহাদেশের কিছু রাজনৈতিক ঘটনাবলি স্বাভাবিকভাবে আলােচনায় চলে এসেছে। যেমন মাওলানা মওদুদী মরহুমের ফাঁসীর দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে সিলেটে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেরই জানা নেই মাওলানা মওদুদী মরহুমকে কেন ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রদান করা হয়? তৎকালীন সরকার তার সাথে কী আচরণ করেছিল? কেন জামায়াতে ইসলামীকে ১৯৯৪ সালে বেআইনী ঘােষণা করা হয়েছিল? উল্লেখিত প্রশ্নগুলাের জবাব খুঁজতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে এ সংক্রান্ত আলােচনা চলে এসেছে। পৃথক নির্বাচনের ব্যাপারে আজকাল কোন চর্চা নেই। অথচ এর একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। পৃথক নির্বাচন এ উপমহাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মাওলানা মওদুদী মরহুম পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য সারা দেশে আন্দোলন করেছিলেন। প্রাসঙ্গিকভাবে পৃথক নির্বাচনের ইতিহাস ও যৌক্তিকতা আলােচনা করা হয়েছে। ১৯৫৬ সালে মাওলানা মওদুদী মরহুম সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল সফর। করেন। তার সফরের পর থেকে এ ভূখন্ডে জামায়াতে ইসলামী বিকশিত হয় এবং প্রতিটি রাজনৈতিক ইস্যুতে ভূমিকা রাখে। দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের উপর আলােচনা। না করে শুধু জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিলে সামঞ্জস্যহীন ঘটনা মনে হতে পারে ভেবে খুবই সংক্ষিপ্তাকারে দেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিশ্লেষণ করা হয়েছে। অতীতের কথা লিখতে গিয়ে সিলেটের কথা ও দেশের কথা চক্রাকারে এসেছে। দেশের প্রেক্ষাপট বাদ দিয়ে সিলেটের কর্মকান্ড উল্লেখ করলে তা বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন মনে হত। আবার সিলেটের কথা বলার আগে দেশের ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিক বিবরণ দিলে তা দেশের ইতিহাসের আলােচনা হয়ে যেত। তাই ‘সাইক্লিক অর্ডারে সিলেটের কথা ও দেশের কথা এসেছে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের পতন এবং জিয়াউর রহমানের উত্থানের মাধ্যমে দেশের পট পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের এক বিরাট সুযােগ সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ- ১৯৭৯ সালে আত্মপ্রকাশ করে। জামায়াতের আত্মপ্রকাশের পটভূমি আলােচনা করা হয়েছে। সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত জালালাবাদে জামায়াতের অবস্থান ও ক্রমবিকাশের বর্ণনা দিয়ে বই সমাপ্ত করা হয়েছে। এ পর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের বিবরণ দিবার প্রয়ােজন অনুভূত হয় নি। কারণ ইতিহাসের এ অধ্যায় সবার সূতিতে আছে। বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি হবার পর আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পরামর্শে একটি কপি সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল জনাব কামারুজ্জামানের কাছে প্রেরণ করা হয়। পাণ্ডুলিপির অন্য একটি কপি সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গােলাম আযমের কাছে পাঠানাে হয়। জনাব কামারুজ্জামান পান্ডুলিপি পাঠ করে অত্যন্ত মূল্যবান কিছু পরামর্শ প্রদান করেন। এদেশের ইসলামী আন্দোলন ও রাজনীতির সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত বর্ষিয়ান জননেতা মুহতারাম অধ্যাপক গােলাম আযম পান্ডুলিপি পাঠ শেষে কিছু মন্তব্য লিখেন। তার নিজ হাতে লিখিত মন্তব্য বইয়ের প্রারম্ভে সংযােজিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে সিলেট মহানগর সিলেট উত্তর, সিলেট দক্ষিণ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ এ ছয়টি সাংগঠনিক জেলার উদ্ভব হয়। জেলাগুলাে এক জোনের অন্তর্ভুক্ত। এ সাল থেকে সংগঠনের সঠিক রেকর্ড লেখকের হস্তগত হয়। তাই এ সাল থেকে জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রদান করা হয়েছে। এ গ্রন্থ রচনাকালে যে সকল বই পুস্তকের সহযােগিতা নেওয়া হয়েছে তার একটি তালিকা পরিশিষ্টে প্রদান করা হয়েছে। যার অনুপ্রেরণা ও বারবার তাগাদার কারণে এ বই সমাপ্ত করা সম্ভব হল তিনি আমার জীবন সঙ্গিনী জামায়াতে ইসলামীর এক দায়িত্বশীলা খায়রুন্নেছা খাতুন। কম্পিউটার কম্পােজ করে আমাকে বারবার দেখিয়েছেন ভাই মাে.শহিদুল ইসলাম। প্রাথমিক প্রুফ দেখেছেন ভাগ্নে জুনেদ আহমদ। বই প্রকাশের যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন সিলেট দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সম্মানিত আমীর স্নেহাস্পদ মাওলানা হাবিবুর রহমান। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সবাইকে আল্লাহ তায়ালা জাযায়ে খায়ের দান করুন। বইটিতে তথ্যগত বা তত্ত্বগত ভুল থাকলে কিংবা কোন কিছু বাদ পড়লে পরবর্তী সংস্করণে সংশােধন করা হবে ইনশাআল্লাহ। জালালাবাদে ইসলামী আন্দোলন বেগবান হউক মহান মাবুদের কাছে এই মােনাজাত করছি।
তারিখ :১জুন ২০০৮
মােঃ ফজলুর রহমান দার আল খায়ের।
মানিকপীর রােড, নয়াসড়ক সিলেট।
ফোন : ০৮২১ ৭১৫৬৫৩
- প্রিয়তে যোগ করতে লগিন করুন
- লাইব্রারীতে যোগ করতে লগিন করুন
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি