যে খাদ্য বরকতপূর্ণ

মদীনার খাজরাজ গোত্রের পল্লী।
বনু নাজ্জারদের একটি বাড়ী।
আনাস (রা) ইবনে মালিকের সৎ-পিতা আবু তালহা আনাসের মাকে এসে বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল (সা) আজ অভুক্ত আছেন। কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা কর। সঙ্গে সঙ্গেই উম্মে সুলাইম আনাসকে পাঠালেন।
আনাস পৌঁছলেন।
মহানবী (সা) তখন মসজিদে নব্বীতে বসেছিলেন। আনাসকে দেখেই আল্লাহর রাসূল (রা) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আবু তালহা তোমাকে পাঠিয়েছেন?’
‘জি আল্লাহর রাসূল!’ বলল আনাস। ‘খাওয়ার জন্যে?’ আবার জিজ্ঞাসা করলেন মহানবী (সা)।
‘জি, হ্যাঁ’, উত্তর দিল আনাস।
মহানবী (সা) উপস্থিত সাহাবীদের নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং সকলকে নিয়ে এলেন খুশী হলেন আবু তালহা। কিন্তু ভীষণ চিন্তায় পড়লেন তিনি। যেটুকু খাবারর আছে, এত মানুষেরে কুলোবে না। উম্মে সুলাইমের (রা) মধ্যে কিন্তু চিন্তার লেশমাত্র নেই। তিনি স্বামীকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, ‘এটুকু খাদ্য এত লোকের কিভাবে হবে, সেটা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল ভালো বুঝেন।’
যতটুকু খাবার ছিল তা মহানবী (সা)-এর কাছে পেশ করা হলো। সেটুকু খাদ্য এতটাই বরকত পূর্ণ হলো যে, মহানবী এবং উপস্থিত সাহাবীর সবাই পেট পুরে খেলেন।

বারা ইবনে মালিক কথা রাখলেন

অগিনপূজক ইরানীদের সাথে যুদ্ধ।
যুদ্ধ চলছে সুস্তার রণাঙ্গনে।
আনাস ইবনে মালিক এবং তার ভাই বারা ইবনে মালিক পদাতিক বাহিনীর অফিসার।
বারা ইবনে মালিক ছিালেন দক্ষিণ বাহুর একজন অফিসার।
অনেক দিন ধরে চলছে সুস্তার দুর্গের অবরোধ। যুদ্ধের এক ফাঁকে আনাস ইবনে মালিক তার ভাই বারা ইবনে মালিকের তাঁবুতে প্রবেশ করলেন। দেখলেন, বারা সুর করে কবিতা আবৃত্তি করছেন।
আনাস ইবনে মালিক বললেন, ‘ভাই আমার, আল্লাহ আমাদের কুরআন শরীফ দান করেছেন। কুরআন কবিতা থেকে উত্তম। সুললিত কণ্ঠে তা তেলাওয়াত করুন।’
বারা ইবনে মালিক হাসলেন। বললেন, “আনাস, সম্ভবত তুমি ভয় পাচ্ছ যে, আমি বিছানাতেই মারা যাব। কিন্তু আল্লাহর কসম, এমন তরো হবে না। আমি মরলে ময়দানেই মরবো।”
সে দিনই বাধল ইরানীদের সাথে এক ঘোরতর যুদ্ধ।
মরণপথ এ লড়াইয়ে মুসলিম বাহিনী চূড়ান্ত আঘাত হানতে চাইলে ইরানীদের উপর।
ইরানীদের দুর্ধর্ষ সেনাপতি হুরমুযানকে লক্ষ্য করে অগ্রসর হলো বারা ইবনে মালিক। ইরান সেনাপতির অবস্থানে বিপর্যয় ঘটাতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত হবে।
ইরান সেনাপতির দুর্ভেদ্য দ্যুহ ঝাঁপিয়ে পড়ল বারা ইবনে মালিক। ব্যুহটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে বারা আক্রমণ করে বসলেন সেনাপতি হুরামুযানকে। আহত, ক্লান্ত বারা শহীদ হলেন, কিন্তু হুরমুযান শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও বন্দী হলেন।
বারা তাঁর ভাই আনাসকে দেয়া কথা রাখলেন শাহাদাতের অমৃত পেয়ালা পান করে।

ফিরিশতার সাহায্য

উহুদ যুদ্ধে যারা প্রাণান্ত লড়াই করেছেন, হারিস (রা) বিন সিমমা, তাদের একজন।
যুদ্ধের চরম বিপর্যয় মুহূর্ত। হযরত হারিস (রা) যুদ্ধের এক পর্যায়ে মহানবী (সা)-কে অরক্ষিত অবস্থায় দেখতে পেলেন।
ছুটলেন তাঁর কাছে।
যুদ্ধের তীব্রটা একটু কমলে মহানবী (সা) হযরত হারিস (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি আবদুর রহমান বিন আওফকে দেখেছ?
হারিস (রা)-কে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, “আবদুর রহমানকে ফেরেশতারা রক্ষা করছেন।”
কিছুক্ষণ পর হারিস (রা) ছুটলেন আবদুর রহমান (রা) বিন আওফের দিকে। তাঁর কাছে পৌঁছে দেখলেন, মুশারিকদের ৭টি লাশ তাঁর চারদিকে পড়ে আছে। তিনি আবদুর রহমান (রা) বিন আওফকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এদের সকলকেই কি আপনি হত্যা করেছেন?”
আবদুর রহমান (রা) জবাব দিলেন, “আমি আরতাত এবং অমুককে খতম করেছি। অবশিষ্ট ৫ জন মুশরিকের হত্যাকারী আমার নজরে পড়েনি।”
শুনে হারিস (রা) স্বাগত কণ্ঠে বললেন, “আল্লাহর রাসূল (সা) এ কথাই বলেছিলেন।”

আল্লাহর রাহে খরচের আকাংখ্যা

অষ্টম হিজরী সাল।
সাইফুল বাহার যুদ্ধে যোগদান করেছে মুসলিমানদের একটি ছোট্ট বাহিনী।
এই তিনশ, সদস্যের বাহিনীর মধ্যে আবু বকর (রা) ও উমর (রা) ছিলেন। আর ছিলেন মদীনার খাজরাজ সর্দার সা‘আদ বিন উবাদাহর ছেলে কায়েস (রা)। এই মুসলিম বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন আবু উবায়দাহ ইবনুল যাররাহ (রা)। অভিযানকালে মুসলিম বাহিনীর রসদ ফুরিয়ে গেলে ভয়ানক সংকটে পড়ল তারা। এই অবস্থা দেখে কায়েস উট ধার করে এনে সবার জন্যে জবাই করতেন। এভাবে তিনি তিন দিনে ৯টি উট ধার করে জবাই করার পর আবু বকর ও উমর চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং অধিনায়ক আবু উবায়াদাহ ইবনুল যাররাহকে গিয়ে বললেন, ‘কায়েস এভাবে যদি প্রতিদিনউট ধার করে এন জবাই করতে থাকে, তাহলে তার পিতার সব সম্পদ সে এখানেই শেষ করে দেবে। আপনি তাকে উট জবাই থেকে বারণ করুন।’
আবু উবায়দা (রা) কায়েসকে সে মুতাবিক নির্দেশ দিলেন।
যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফেরার পর কায়েস (রা) পিতার কাছে মুসলিম বাহিনীর রসদ সংকট ও দুঃখ-দুর্দশার কথা জানালেন।
পিতা তাকে বলল, তুমি উট যোগাড় করে সকলের জন্যে জবাই করতে পারতে। কায়েস (রা) বললেন, পর পর তিন দিন আমি তাই করেছি। কিন্তু আবু বকর (রা) ও উমর (রা) এই কথা বলায় অধিনায়ক আবু উবায়দা (রা) আমাকে উট জবাই করতে বারণ করেন।
ক্ষোভ ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন সা‘আদ (রা) ইবনে উবাদাহ। তিনি ছুটলেন মহানবীর কাছে। মহানবী (সা) তখন বসেছিলেন। সা‘আদ (রা) তাঁর পেছনে এসে দাঁড়ালেন এবং অভিমান-ক্ষুব্ধ ও আবেগ-জড়িত কণ্ঠে মহানবী (সা)-কে বললেন, “ইবনে আবু কুহাফাহ এবং ইবনে খাত্তাব-এর পক্ষ থেকে কেউ জবাব দিক যে, তারা আমার পুত্রকে কেন বখিল বানাতে চনয়?”

মাগের ইবনে মালিকের তাওবা

মাগের ইবনে মালিক (রা) মহানবী (সা)-এর একজন সাহাবী। সতর্কতা সত্ত্বেও কখনও কারো পা পিছলাতে পারে। মাগের ইবনে মালিকও (রা) গুরুতর অপরাধ করে বসলেন।
অপরাধ করার পরই আল্লাহর ভয় তার মধ্যে এক মহাযন্ত্রণার সৃষ্টি করল। তার মনে হলো, এ অপরাধের জন্য আল্লাহ-নির্ধারিত শাস্তি গ্রহণের মাধ্যমেই তার যন্ত্রণার অবসান হতে পারে।
মাগের ইবনে মালিক (রা) মহানবী (সা)-এর কাছে হাজির হলেন। বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ আমাকে পবিত্র করুন।’
আল্লাহর রাসূল (সা) তাকে বললেন, “তোমার সুমতি হোক। যাও, গিয়ে আল্লাহর কাছে তওবা কর।”
মাগের ইবনে মালিক আল্লাহর রাসূলের এ আদেশ নিয়ে ফিরে চললেন। কিন্তু হৃদয়ের সে যন্ত্রণা তাঁর দূর হলো না। আল্লাহর-নির্ধারিত শাস্তি গ্রহণ করার মাধ্যমে তওবা না করলে কিভাবে তিনি পবিত্র হবেন? মনের তাড়নায় আবার তিনি ফিরে গেলেন মহানবীর কাছে। আগের সতই তিনি মহানবীর কাছে আরজ পেশ করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে পবিত্র করুন।”
মহানবী (সা) আগের মতই তাঁকে নির্দেশ দিলেন।
মাগের ইবনে মালিক (রা) মহানবীর নির্দেশ নিয়ে আবার ফিরে গেলেন। কিন্তু মনের তাড়নায় আবার ফিরে এলেন। এভাবে তিনবার এই ঘটনা ঘটল।
চতুর্থবার মাগের ইবনে মালিক (রা) ফিরে এলে মহানবী (সা) মাগের ইবনে মালিক (রা)-কে বললেন, ‘ব্যভিচার থেকে।’ মহানবী (সা) আশেপাশের লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এ মাতাল নাতো?” সকলে বলল, ‘সে মাতাল নয় ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ আল্লাহর রাসূল আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ও কি মদ খেয়েছে?’লোকজন মাগের ইবনে মালিকের কাছে গিয়ে তার মুখ শুঁয়ে বলল, “না সে মদ খায়নি।”
এবার মহানবী (সা) মাগের ইবনে মালিককে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি সত্যই ব্যভিচার করেছ?’
মাগের আরজ করল, ‘হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ?’
মাগেরের সুস্পষ্ট স্বীকৃতি পুনরায় লাভ করার পর মহানবী (সা) আল্লাহর বিধান আনূযায়ী তাঁর শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। প্রস্তরাঘাত তাঁকে হত্যা করার শাস্তি কার্যকর করা হলো। ব্যভিচারের অরাধ থেকে পবিত্র হবার জন্যে মাগের ইবনে মালেক পরম সন্তুষ্টচিত্তে প্রস্তরাঘাতে তাঁর জীবন বিসর্জন দিলেন। দু’তিন দিন পর মহানবী (সা) সাহাবীদের ডেকে বললেন, “তোমরা মাগের ইবনে মালিকের জন্যে মাগফিরাতের দোয়া কর। সে যে তাওবা করেছে, তা গোটা একটা জাতির মধ্যে বণ্টন করে দিলেও তাদের সকলের জন্যে তা যথেষ্ট হবে।”

উমর (রা) নিজের অহংকারকে শাস্তি দিলেন

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তখন আমীরুল মুমিনীন, অর্ধ পৃথিবীর শাসক।
ইনসাফের ব্যাপারে আপোষহীন উমারের (রা) শাসনদণ্ডকে ভয় না করেন এমন মানুষ নেই।
একদিন দেখা গেল সেই উমর ইবনুল খাত্তাব ভারি একটি পানির মশক ঘাড়ে নিয়ে হাঁটছেন।
বিস্মিত, বিক্ষুদ্ধ তাঁর পুত্র তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন আপনি এরূপ করছেণ?”
উমর (রা) বললেন, “আমার মন অহংকার ও আত্মগরিমায় লিপ্ত হয়েছিল, তাই ওকে আমি শাষেস্তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
উমর (রা) ন্যায়দণ্ডের রক্ষায় মানুষের ব্যাপারে যেমন কঠোর ছিলেন, তেমনি কঠোর ছিলেন নিজের ব্যাপারেও।

‘আপনি আচরি ধর্ম’

আলী (রা) তখন বিশাল সাম্রাজ্যের শাসক।
আলী (রা) জ্ঞানের দরজা।
ন্যায়দণ্ডের এক আপোষহীন রক্ষক তিনি।
মদীনার এক শীতের রাত।
শীতে ঠক্ ঠক্ করে কাঁপছেন আমীরুল মুমিনীন, বিশাল এক সাম্রাজ্যের শাসক আলী (রা)। শীত নিবারনের উপযুক্ত কাপড় তাঁর নেই।
অথচ তাঁর রাষ্ট্রীয় খাজাঞ্চীখানায় প্রচুর শীতবস্ত্র। বরং সে খাজাঞ্চীখানা তাঁরই হাতের মুঠোয়।
কিন্তু তা থেকে একটি কম্বল নেবার জন্যে তাঁর হাত সেদিকে প্রসরিত হতে পারছে না। কারণ খাজাঞ্চীখানা জনগণের। তিনি তো রক্ষক মাত্র। সবার সাথে তাঁর নামে যেটুকু বরাদ্দ হবে, তাই শুধু তাঁর। অপেক্ষা করতে হবে তাকে সেই বরাদ্দের।
তাঁর আপোষহীন ন্যায়দণ্ড সদা উত্থিত ছিল। মানুষের জন্যে শুধু নয়, তাঁর নিজের জন্যও। আপনি আচরি ধর্ম তিনি অপরে শিখিয়েছেন।

ইমাম ইউনুসের ব্যবসায়

ইমাম ইউনুস বিন ওবায়েদের কথা। তিনি ইসলামে একজন বড় খাদেম। এই সাথে সাথে বড় ব্যবসায়ীও। বিরাট তাঁর কাপড়ের ব্যবসা। বিভিন্ন দামের কাপড় থরে থরে সজ্জিত তাঁর দোকানে।
তাঁর দোকানে এক ধরনের প্রতি জোড়া কাপড়ের দাম ফিল ৪০০ দিরহাম। অন্য আর এক ধরনের কাপড়ের প্রতি জোড়ার দাম ছিল ২০০ দিরহাম। একদিন তিনি ভাতিজাকে দোকানে রেখে আসরের নামায পড়তে গেলেন। এ সময় একজন খদ্দের তাঁর দোকানে গেল এবং ৪০০ দিরহাম দামের একজোড়া কাপড় চাইল।
ইমাম ইউনুসের ভাতিজা তাকে ২শ’ দিরহাম দামের এক জোড়া দিল।
খদ্দের কাপড় জোড়া দেখে পছন্দ করল এবং ৪০০ দিরহাম দিয়ে কাপড়টি নিয়ে নিল।
যখন খদ্দেরটি কাপড় নিয়ে চলে যাচ্ছিল, তখন ইমাম ইউনুস নামায পড়ে ফিরছিলেন। লোকটির হাতে কাপড় জোড়া দেখে চিনতে পারলেন যে, তাঁর দোকানের কাপড়। তিনি খদ্দেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কাপড়টি কত টাকা দিয়ে কিনেছে?
লোকটি বলল, ৪০০ দিরহাম। ইমাম বললেন, ‘এটা তো দু’শ‘ দিরহামের কাপড়। যান কাপড় ফেরত দিয়ে আসুন।’
লোকটি বলল, আমি কাপড় পছন্দ করেই ঐ দাম দিয়ে কিনেছি। আমার এলাকায় এ কাপড়ের দাম ৫০০ দিরহাম। সুতরাং আমি ঠকিনি।
ইমাম বললেন, ‘না কাপড় আপনাকে ফেরত দিতেই হবে। কারণ, ইসলামে মানুষের ব্যাপারে হিত কামনার চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।’
ইমাম তাঁর ভাতিজাকে দারুণ ভর্ৎসনা করলেন, বললেন, ‘তোমার মনে আল্লাহর ভয় হলো না?’ ভাতিজা দুঃখ প্রকাশ করে বলল, ‘খদ্দের মহোদয় কাপড় দেখে শুনে পছন্দ করে ঐ দামে কিনেছিলেন।’
ইমাম ইউনুস বললেন, নিজের জন্য যা পছন্দ কর, তা অপরের জন্যও পছন্দ করতে হয়, এ কথা ভুললে কেন?

বিলাল (রা)-এর ঘটকালি

বিলার (রা)-এর ভাই আবু রুয়াইহা আশিয়ানী।
ইয়ামেনি এক পরিবারে তিনি বিয়ে করার ইচ্ছা করলেন।
তিনি ধরলেন তাঁর ভাই বিলালকে (রা) তাঁর বিয়ের পয়গাম পৌঁছাবার জন্যে।
ভাইয়ের অনুরোধে রাজী হলেন বিলাল (রা)।
তিনি ভাইয়ের বিয়ের পয়গাম নিয়ে গেলেন সেই ইয়ামেনি পরিবারে। তিনি গিয়ে বরলেন, আমি বিলাল বিন রাবাহ, আবু রুয়াইয়া আমার ভাই। তাঁর ধর্ম ও চরিত্র দুইই খারাপ। আপনাদের ইচ্ছা হয় তাঁর সাথে আত্মীয়তা করুন, না হয় করবেন না।
বিলাল (রা) ভাইয়ের পয়গাম নিয়ে গিয়েও ভাইয়ের দোষ গোপন করলেন না। অথচ কথাবার্তার মাধ্যম বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এই দোষগুলো প্রকাশ করা তাঁর জন্যে স্বাভাবিক ছিল না।
বিলাল (রা)-এর এই স্পষ্টবাদী ও সততায় মুগ্ধ হলো কনে পক্ষ। তারা বলল, এ রকম একজন সত্যবদী লোক তাদের মেয়ের বিয়ের পয়গাম এনেছে, এটা তাদের সৌভাগ্য, গৌরবের বিষয়। তারা বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গেল।

আবু বকর উমরকে চাইলেন উসামার কাছে

মুসলিম বাহিনী যাত্রা করেছে মু’তা অভিযানে।
বাহিনীর সেনাপতি উসামা বিন যায়েদ।
উসামা ঘোড়ায় সওয়ার।
বাহিনীকে বিদায় দেয়ার জন্য খলিফা আবু বকর উসামার ঘোড়ার পাশাপাশি হেঁটে চলেচেন।
অস্বস্তিবোধ করছেন উসামা। মহামান্য খলিফাতুল রাসূল (রা) হাঁটবেন আর উসামা তাঁরই সামনে ঘোড়ায় বসে থাকবে।
উসামা খলিফা আবু বকর (রা)-কে বললেন, হে খলিফাতুর রাসূল, আপনি সাওয়ারিতে উঠুন, নয়তো আমি ঘোড়া থেকে নেমে পড়ব।
সংগে সংগে আবু বকর (রা) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তুমি নিচে নেমনা।’ এই কথা আবু বকর (রা) তিন বার উচ্চারণ করলেন।
অথচ এই উসামা আযাদ করা দাস যায়েদের সন্তান।
উসামার এই বাহিনীতে উমর ছিলেন এক সাধারণ সৈনিক।
উসামার বাহিনীর সাথে উমারও যাচ্ছেন মু’তা অভিযনে।
শেষ মুহূর্তে খলিফা আবু বকরের মনে পড়ল, উমরের মদীনা থেকে অনুপস্থিত থাকা উচিত নয়। তাঁকে খলিফার দরকার হবে। কিন্তু তিনি তো উমর (রা)-কে মদনিায় থাকার নির্দেশ দিতে পারেন না। সেনাপতি উসামা তাঁর একজন সৈনিকিকে নিয়ে যাবেন না রেখে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উসামার।
খলিফা আবু বকর উসামাকে নির্দেশ নয় অনুরোধ করলেন, ‘যদি আপনি ভাল মনে করেন, তবে অনুগ্রহপূর্বক উমরকে আমার সাহায্যের জন্যে রেখে যান।’
ইসলামের এই সাম্য ও গণতন্ত্রের কোন তুলনা নেই পৃথিবীতে।

উমর (রা) মনিব ও চাকরকে একসাথে খাওয়ালেন

মক্কা শরীফের একটি ঘটনা।
উমর (রা) তখন মক্কায়।
তিনি পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গেল পাশেরই এক বাড়ীতে। বাড়ীর মালিকরা বসে খাচ্ছে আর চাকর-বাকররা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রুদ্ধ হলেন উমর (রা)। তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং গিয়ে উঠলেন সেই বাড়ীতে। বললেন, “ব্যাপার কি! নিজেদের চাকর-বাকরদের সাথে এই বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছ কেন?” বাড়ীর মালিকরা লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
চাকর-বাকরদের সাথে এই ব্যবহার জাহেলিয়াতের যুগে চলে আসা বহু বছরের অভ্যাস। এই অভ্যেস এখনও নির্মূল হয়নি!
উমর (রা) চাকর-বাকরদেরকে ডেকে মনিবদের সাথে খানয় বসিয়ে দিলেন। তারপর আবার ফিরে চললেন আপন গন্তব্য।

উমর (রা) লোকদের সামনে সা’দকে দোররা কষলেন

মদীনা শরীফ।
ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজধানী। খলিফা উমর (রা) লোকদের মধ্যে বায়তুল মালের কিছু অর্থ বণ্টন করছেন।
স্বাভাবিকভাবেই বিরাট ভিড় জমে গেছে।
এ সময় সেখানে এলেন সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস। তিনি প্রভাবশালী ও অভিজাত মায়ের সন্তান।
ভিড় দেখার পর অন্যান্যদের মত তাঁর ধৈর্য ধরার দরকার ছিল, কিন্তু তা তিনি করলেন না।
তিনি ভিড় ঠেলে, দু’হাত দিয়ে লোকদের সামনে থেকে সরিয়ে উমরের কাছে গিয়ে হাজির হলেন।
উমর (রা) ব্যাপারটা আগেই লক্ষ্য করেছিলেন।
সুতরাং সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস তাঁর সামনে হাজির হতেই উমর (রা) তাঁর হাতের দোররা কষলেন তাঁর পিঠে। উপস্থিত সবাই দেখল খলিফা একটা দোররা মেরেছেন সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসকে।
দোররা মারার পর হযরত উমর (রা) সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসকে লক্ষ্য করে বললেন, “সবার এবং সবকিছুর উপরে যে আল্লাহর আইন, তা তোমার মনে নেই। আল্লাহর আইনের মুকাবিলায় তোমার কানাকড়িও যে মূল্য নেই, এটা তোমাকে বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।”

ইবনে আবজা যে কারণে গভর্নর হলেন

উমর (রা)-এর ফিলাফত-কাল। মক্কায় গভর্নর নিযুক্ত করেছেন তিনি নাফে ইবনুল হারিসকে।
কোন এক প্রয়োজনে খলিফা উমর (রা) এসেছিলেন আরবেরই ‘উসফান’ নামক স্থানে। খলিফা সেখানে মক্কার গভর্নর নাফেকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
নাফের সাথে যখন উসফানে উমর (রা)-এর সাক্ষাৎ হলো, তখন তিনি নাফেকে (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মক্কায় তুমি কাকে তোমার স্থলাভিষিক্ত করে এসেছ?’ নাফে বললেন, ‘আজাদকৃত গোলাম ইবনে আবজাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করে এসেছি।’
উমর (রা) ইবনে আবজাকে পুরোপুরি জানতেন না। বললেন, “সেকি! একজন আজাদকৃত গোলামকে মক্কাবাসীদের উপর নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিয়ে এলে”?
নাফে বলল, “তিনি কুরআনে অভিজ্ঞ, শরীয়তে সুপণ্ডিত এবং সুবিচারক।”
উমর (রা) স্বগতোক্তির মত বললেন, “হবেই তো! রাসূল (সা) বলে গেছেন, আল্লাহ তায়ালা এই কিতাব দ্বারা অনেককে ওপরে তুলবেন, অনেককে নীচে নামাবেন।”

খলিফা আল-মানসুর যখন লা-জবাব

মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজাধানী তখন বাগদাদে।
খলিফা আল-মানসুরের শাসনকাল। খলিফার পরিচিতি নিয়ে চললেও এই শাসন তখন বহু ক্ষেত্রেই খেয়াল খুশীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেল। যেমন জনগণের বাইতুল মাল তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত ব্যবহার করতেন।
কিন্তু অবিরাম প্রতিবাদ হয়েছে এই স্বেচ্ছাচারিতার।
এক দিনের একটি ঘটনা।
সুফিয়ান সওরী গেলেন খলিফা আল-মানসুরের দরবারে। তিনি বললেন তাঁকে, “আমীরুল মুমিনীন, আপনি আল্লাহ ও মুসলমানদের ধন-সম্পদ তাদের ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়াই ব্যয় করছেন। বলুন এর কি জবাব আছে আপনার কাছে?” বলে একটু থেমেই খলিফার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবার বলতে শুরু করলেন, “উমর (রা) একবার সরকারী খরচে হজ্ব করেছিলেন। তাতে তাঁর ও তাঁর সংগী-সাথীদের উপর সর্বমোট ১৬ দিনার ব্যয়িত হয়েছিল। তথাপি হযরত উমর (রা) বলেছিলেন, ‘আমরা বাইতুল মালের উপর বিরাট বোঝা চাপিয়েছি।’ আপনি নিশ্চয় জানেন, মসসুর ইবনে আম্মার আমাদেরকে কি হাদীস শুনিয়েছিলেন। কারণ সেই মজলিসে আপনিও হাজির ছিলেন এবং সর্বপ্রথম হাদীসটা আপনিই লিপিব্ধ করেছিলেন। সে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্পদে নিজের খেয়াল-খুশীমত হস্তক্ষেপ করবে তার জন্যে দোজখের আগুন অবধারিত।”
সুফিয়ান সওরীর এ স্পষ্ট বক্তব্যে খলিফার চাটুকাররা ক্ষেপে গেল। কয়েকজন ঝুনা চাটুকার বলে উঠলেন, ‘কি, আমীরুল মুমিনীনের সাথে এ ধরনের আলাপ?’ সুফিয়ান সওরী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ হতভাগা, হামান ও ফেরউন এভাবেই চাটুকারিতা করে পরস্পরকে ধ্বংস করেছিল’- বলে যে উন্নত শির নিয়ে সুফিয়ান সওরী আল-মনসুরের দরবরে ঢুকেছিলেন, সেভাবে শির উন্নত রেখেই তিনি দরবার থেকে বেরিয়ে এলেন।
প্রবল প্রতাপশালী খলিফ আল-মানসুর সুফিয়ান সওরীর কথার জবাবে একটি কথাও বলতে পারেননি।

আবু ইউসুফের বিচার

আব্বাসীয় খলিফা হাদী’র শাসনকাল।
বাগদাদে প্রধান বিচারপতি আবু ইউসুফের আদালত।
এক ব্যক্তি একটি মামলা নিয়ে এলেন আদালতে। মামলা স্বয়ং খলিফা হাদী’র বিরুদ্ধে।
একটা বাগান নিয়ে খলিফার সাথে তাঁর ঝগড়া। লোকটির দাবী বাগানটি খলিফা হাদীর নয়, তাঁর।
সব শুনে বিচারপতি আবু ইউসুফ নিশ্চিত হলেন বাগানটি লোকটিরই প্রাপ্য। কিন্তু সমস্যা হলো খলিফার পক্ষে দু’জন সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই অবস্থায় বিচারপতি আবু ইউসুফ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য খলিফাকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিলেন।
খলিফা আদালতে হাজির হলে বিচারপতি আবু ইউসুফ তাঁকে বললেন, ‘খলিফার সাক্ষীরা যে সত্যবাদী এ ব্যাপারে খলিফাকে শপথ করতে হবে।’
খলিফা এই শপথ করার চাইতে বাগানটি বাদীকে ছেড়ে দেয়াকেই সহজ মনে করলেন এবং বাগানটি বাদীকে ছেড়ে দেয়াকেই সহজ মনে করলেন এবং বাগানটি বাদীকে দিয়ে দিলেন।
আবু ইউসুফের আরেকটি বিচারের ঘটনা।
আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ তখন ক্ষমতায়। একটি মামলায় খলিফা আবু ইউসুফের আদালতে হাজির হলেন। খলিফার দাবীর পক্ষে সাক্ষী ছিল ফজল ইবনুল রাবী।
বিচারপতি আবু ইউসুফ ফজহল ইবনুর রবীর সাক্ষ্য বাতিল করে দিলেন।
খলিফা হারুনুর রশীদ ক্ষুব্দ হয়ে বললেন, “ফজলের সাক্ষ্য নাকচ করে দেবার কারণ কি?”
বিচারপতি আবু ইউসুফ বললেন, “আমি ফঝলকে বলতে শুনেছি যে, সে আপনার গোলাম।” যদি তার কথা সত্য হয়, তাহলে আপনার গোলামের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়, আর যদি সে আপনার গোলাম না হয় তাহলে সে মিথ্যুক।
মিথ্যুকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে না।”

জালেম শাসকের সামনে নির্ভীক আলেম

জাহির নামের এক সুলতান তখন দামেশ্কের সিংহাসনে।
বৃষ্টি না হওয়ায় পশুর মড়ক ইত্যাদি কারণে সিরিয়ায় তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা। মানুষের দুর্গতির সীমা নেই।
এই সময় যুদ্ধ-প্রস্তুতির কথ বলে শাসক জাহির জনগণের উপর ট্যাক্স বসালেন। দামেশকেই বাস করতেন শেখ মহিউদ্দিন নববী নামের এক বিখ্যাত আলেম। তিনি সুলতান জাহিরের কাছে এক চিঠি দুর্গত জনগণের উপর ট্যাক্স না বসাবার জন্যে অনুরোধ কররেন।
শেখ মহিউদ্দিনের এই চিঠি পেয়ে সুলতান ক্ষুব্ধ হলেন এবং তার ট্যাক্স বসাবার পক্ষে আলেমদের ফতোয়া জোগাড় করতে লাগলেন।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মাধ্যমে এ ধরনের বহসংখ্যক ফতোয়া জোগাড় হবার পর জাহির ডাকলেন শেখ মহিউদ্দিনকে তাঁকে ফতোয়ায় অন্য আলেমদের দস্তখত দেখিয়ে ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে তাঁকেও দন্তখত দিতে বললেন।
সুলতান জাহির-এর এই কৌশল ও তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ দেখে শেখ মহিউদ্দিন নববী খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি সুলতানকে বরলেন, ‘আমি জানি, আপনি একজন কয়েদী ক্রীতদাস ছিলেন। ছিলেন একজন দেউলিয়া। আল্লাহ আপনার উপর অনুগ্রহ করেন এবং আপনাকে বাদশাহর মর্যাদায় উন্নীত করেন। আমি জানি, আপনার কাছে জরিদার কাপড় পরিহিত এক হাজার ক্রীতদাস এবং আপাদম্স্তক স্বর্ণালংকারে মণ্ডিত একশো ক্রীতদাসী রয়েছে। এখন আপনি যদি ক্রীতদাসদের এই জরিদার কাপড়গুলো এবং দাসীদের অলংকারসমূহ বিক্রি করে দেন, তাহলে আমি ফতোয়া দেব যে, প্রজাদের নিকট থেকে আপনার ট্যাক্স আদায় বৈধ।”
সুলতান জাহির ক্রোধে ফেটে পড়লেন শেখ মহিউদ্দিনের এই কথায়। তৎক্ষণাত তাঁকে বতিষ্কার করলেন দামেশ্ক থেকে।
দেশের সমস্ত আলেম ও ফকিহগণ আহত হলেন এই ঘটনায়। তাঁরা সকলে সুলতান জাহিরকে বললেন, “ইনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় ও সবার সেরা আলেম। তাঁকে দামেশ্ক ফিরিয়ে আনুন।”
বাদশাহ জাহির অনুমতি দিলেন শেখ মহিউদ্দিনকে দামেশ্কে আসার জন্যে। কিন্তু শেখ মহিউদ্দিন সুলতানের এই অনুগ্রহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বললেন, ‘যতদিন জাহির সেখানে থাকবেন, আমি যাব না।’ এই ঘটনার এক মাসের মধ্যে জাহির ইন্তিকাল করলেন।

‘এ দরবারে শুধু একজন আলেমই আছেন’

সুলতান আবদুল আজিজ মিসর সফরে আসছেন। সাড়া পড়ে গেছে গোটা মিসরে। মিসরের শাসক ইসমাঈল সম্বর্ধনার আয়োজনে মহাব্যস্ত। সুলতান খুশী হলে শুধু তার আসন পাকাপোক্ত হওয়াই নয়, বহু আকাক্সিক্ষত খেতাবও এবার মিলে যেতে পারে।
সুলতানের জন্যে আড়ম্বরপূর্ণ সম্বর্ধনার ব্যবস্থা বরলেন।
নির্দিষ্ট দিনে সুলতান আবদুল আজিজ মিসরে আসলেন। তাঁর সম্মানে বিশেষ দরবার বসানো হলো।
সুলতানকে সম্মান প্রদর্শনের জন্যে আলেমদেরও একত্রিত করা হয়েছে।
আলেমদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁরা অবনত মস্তকে দরবারে সুলতানের সামনে হাজির হবেন এবং মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করার পর পিছু হটে দরবার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সুলতানকে পেছনে দেখিয়ে অসম্মান করা যাবে না কিচুতেই। সুলতান খুশী হে আলেমরা প্রচুর ইনাম পাবেন।
একে একে আলেমরা দরবারে প্রবেশ করতে লাগলেন অবনত মস্তকে এবং কুর্নিশ করে পিছু হটে বেরিয়ে এলেন।
আলেমদের মধ্যে ছিলেন শেখ হাসানুল আদাদী।
সর্বশেষে এল তাঁর দরবারে প্রবেশের পালা।
তিনি উন্নত শিরে দরবারে প্রবেশ করলেন। সুলতানকে কুর্নিশ না করে তিনি সালাম দিলেন। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যেভাবে দরবারে প্রবেশ করেছিলেন, সেইভাবে উন্নত শিরে দরবার থেকে বেরিয়ে এলেন।
সুলতানের কাছে বসা ইসমাঈলের মন হায় হায় করে উঠল। সুলতান নিশ্চয় অপমানিত বোধ করেচেন এবং ভীষণ ক্ষুব্ধ হবেন নিশ্চয়।
দরবার শুব্ধ সকলের মুখ শুকিয়ে গেল। মহামান্য সুলতান কি করেন সেই শংকা দেখা দিল সকলের মনে।
দরবার থেকে বের হলে সকলেই শেখ হাসানুলকে ছেঁকে ধরলো।
বলর তাঁকে, আপনি একি করলেন সবকিছু জানার পরেও।
শেখ বললেন, একজন সুলতান হিসেবে যে সম্মান পাওয়া উচিত তাঁকে তা দিয়েছি।
দরবার শেষ করার আগে সুলতান আবদুল আজিজ আলেমদের মধ্যে শুধু শেখ হাসানুল আদাদীকেই পুরস্কৃত করলেন এবং বললেন, ‘এই দরবারে শুধু এই একজন আলেমই রয়েছেন।’

উমর (রা) জমির মালিক হওয়ার পর

মদীনায় হিজরতের পর উমর (রা) দরিদ্রের জীবন যাপন করতেন।
খাইবার যুদ্ধের পর তাঁর ভাগে পড়লো উৎকৃষ্ট এক খণ্ড জমি, যা উমরের জন্যে নিয়ে এলো সচ্ছল জীবনের এক সম্ভাবনা।
জমির মালিকানা পাওয়ার পর উমর (রা) মহানবী (সা)-এর কাছে হাজির হলেন। বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, খাইবারে আমি খানিকটা জমি পেয়েছি। এত মূল্যবান সম্পত্তি আমি কোনদিন পাইনি। এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি?’
আল্লাহর রাসূল (সা) উমরের মনোভব বুঝলেন। তঁকে বললেন, “যদি তোমার মন চায়, তাহলে আসল জমি নিজের অধিকারে রেখে জমির ফসল দান করে দাও।”
তাই করলেন উমর (রা)। গরীর-দুঃখী ও অভাবী আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য, গোলামদের আজাদ কর ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যে তিনি তার প্রাপ্ত গোটা সম্পত্তি ওয়াকফ করে দিলেন।
দারিদ্র স্ছলতার প্রতি কোনো লোভ উমরের (রা) মধ্যে সৃষ্টিপ করতে পারেনি।

হুসাইন ঝর্ণা বিক্রি করলেন

মহানবীর (সা) প্রিয় নাতি হুসাইন (রা)।
তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা)-এর পুত্র।
দরিদ্রের জীবন তাঁর।
বিরাট ঋণের বোঝা তাঁর মাথায়।
কিন্তু ‘আবী নাইজার’ নামক অতি মূল্যবান ঝর্ণার মালিক তিনি।
অনেকেই হুসাইনকে (রা) পরামর্শ দেন যে, ‘আবী নাইজার‘ ঝর্ণ বিক্রি করে ঋণ শেষার্ধ করেও বেশ অর্থের মালিক হতে পারেন তিনি।
কিন্তু আবী নাইজার ঝর্ণার পানি গরীর মুসলমানরা ব্যবহার করে। এ ঋর্ণার পানি থেকে সেচ করে তারা ফসল ফলায়। হুসাইন (রা) এ ঋর্ণা বিক্রি করলে গরীব মুসলমানরা এ ঋর্ণার পানি থেকে বঞ্চিত হবে। হুসাইন লাভবান হলেও মহাক্ষতিগ্রস্ত হবে বিরাট সংখ্যক গরীর মুসলমান।
এই চিন্তা করে হযরত হুসাইন (রা) আবী নাইজার ঋর্ণা বিক্রি করতে রাজী হননি। গরীর মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিবর্তে নিজের দারিদ্র ও ঋণের বোঝা বহনকেই বেহ্তর মনে করেন তিনি।

------ সমাপ্ত -----


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি