ঘুরে দাঁড়াতে হবে
লেখকঃ মইনুল হোসেন
প্রকাশনীঃ সিটি পাবলিশিং হাউজ
তৃতীয় বিশ্বে, যার অন্তর্গত আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ, মানুষের জন্মহার বেশি এবং তার সঙ্গে তাল রেখে কবিদের সংখ্যাবৃদ্ধিকে স্বভাব সুলভ ব্যঙ্গবানে বিদ্ধ করেছিলেন আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক আবু হেনা মােস্তফা। কামাল তার একটি কবিতায়। কারণ তিনি জানতেন, কবির জন্য কল্পনা শক্তি চাই, কিন্তু মননে দরকার চিন্তা ও যুক্তি। যার অভাবে বাঙালি শতাব্দীর পর শতাব্দী পার করেছে কাব্য চর্চা করে। যুক্তির ধার ধারেনি। আবেগের কারবারি থেকেছে। এ নিয়েই স্যারের আক্ষেপ। অবশ্য তিনি নিজেও ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি ও গীতিকার। তবে প্রবন্ধে ও বাগিতায় তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। তিনি অকপটে অনেক অপ্রিয় কথা বলতেন এবং কারও। কারও বিরাগভাজন হতেন। আগাছা, লতা ও গুলাকে বৃক্ষের মর্যাদা পেতে দেখে তার ভেতরে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। সংবাদপত্র ও সাহিত্যের ওপর সন্দর্ভ লিখে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার কথা তােলা পাঠক ভাববেন না ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি। আসলে আবু হেনা মােস্তফা কামালের মত সাহসী ও স্পষ্টভাষী বিদগ্ধ । ব্যক্তিদের প্রয়ােজন নিঃশেষ হবার নয়, কারণ তারা সুতীব্র ব্যঙ্গবানে সমাজ, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, বুদ্ধিবৃত্তির অসঙ্গতি ও দুর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার দুর্লভ ক্ষমতা রাখেন। আজকের তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের সুবাদে প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে প্রতিযােগিতায় নেমেছে ইলেকট্রনিক মিডিয়া। গণমাধ্যমের সংখ্যাবৃদ্ধির অর্থ মতামত দেয়ার লােকের সংখ্যাবৃদ্ধি। টেলিভিশনের টকশাে যারা শােনেন এবং সংবাদপত্রের পেশাদার কলাম লেখকদের কলাম যারা পড়েন তাদের চিন্তা-চেতনার মান আর যাই হােক ভোঁতা থাকার কোনাে সুযােগ নেই। সংবাদপত্রে এখন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্য বইয়ের অনুশীলনীর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যেমন পেয়ে যায় তেমনি দেশ জাতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতও ছবিসহ ছাপা হয়। আগের দিনে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি দেখে লেখকরা লিখতেন। এখন সম্মানী জোগাতে পারলে লেখা পাওয়া যায়। আমাদের। ভাবনা-চিন্তা, শিক্ষা, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এমন একটা যুগ চলছে যখন একজন ক্ষুদে শিক্ষার্থীকেও ভাল স্কুলের কেজি, নার্সারিতে ভর্তি পরীক্ষায় টিকাতে হলে কোচিং করানাে লাগে। এর সমালােচনা করা যাবে কিন্তু ঠেকানাে যাবে। । আমরা স্রোতে ভেসে চলেছি। পুরনাে পাতা ঝরে যাবে, নতুন কিশলয় গজাবে, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। প্রবীণদের দিন ফুরিয়ে যায়, নতুনদের আগমনী বার্তা শােনা যায়। পুরনাে নিয়মের জায়গা নেয় নতুন নিয়ম। এখন স্কুল-কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নও সৃজনশীল। সুতরাং ভাবনা-চিন্তায় বন্ধ্যাত্ব প্রাপ্তির সম্ভাবনায় শঙ্কিত হবার কারণ নেই...............