পশ্চিমা মিডিয়ার স্বরূপ
লেখকঃ নজরুল হাফীজ নদভী
প্রকাশনীঃ বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স
কমিউনিজমের পতনের পর বর্তমানে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ। পাশ্চাত্য ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে নির্মূল করার জন্য শুরু করেছে নতুন ক্রুসেড, যার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে কথিত সন্ত্রাসী হামলার নাটক মঞ্চস্থ করার মধ্য দিয়ে। এটিকে অজুহাত বানিয়ে তারা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে আফগানিস্তানকে। রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়েছে ইরাকে। না জানি কতদিন চলবে মুসলিম দেশ জবরদখলের এ ধারা। আর এ ক্রুসেড়ে তাদের অগ্রসেনানী হলাে বিশ্ববিস্তৃত ইহুদী নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মিডিয়া নেটওয়ার্ক। বর্তমান যুগ মিডিয়ার যুগ। এ মিডিয়া মানবতার কল্যাণে যেখানে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারতাে, সেক্ষেত্রে এটির ভূমিকা এখন ‘মিডিয়া সন্ত্রাস’ অভিধায় আখ্যায়িত। সমরাস্ত্র ও সেনাবাহিনীর দ্বারা মানুষ হত্যার যে কাজ হতাে না, মিডিয়া মানবতা হত্যায় এ যুগে তার চাইতে বেশি ভূমিকা পালন করছে। মিডিয়ার মাধ্যমে ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে অগণিত মানুষ হত্যার । এটাকে সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক লড়াই বা আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লড়াই যে নামেই আমরা আখ্যায়িত করি না কেন, মহান আল্লাহ কর্তৃক মাগদূব আলাইহিম’ খ্যাতদের কূটবুদ্ধি নিঃসৃত মিডিয়ার এই অপপ্রয়ােগ ও সন্ত্রাসী ভূমিকা গােটা মানব গােষ্ঠীর জন্যে এক মস্তবড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিরাট বাধার প্রাচীর হয়ে দণ্ডায়মান এখন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ মিডিয়ার এই মানবতাবিরােধী ভূমিকা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। অন্ততঃ এর প্রতিরােধে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে শান্তিকামী মানুষদের অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। মানবতার দুশমনরা এ যুগে মানুষকে শারীরিকভাবে গােলাম বানানাের পরিবর্তে মেধা-মনন ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে তাদের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ করতে অধিক তৎপর। আর মনস্তাত্ত্বিক দাসত্ব শারীরিক দাসত্বের চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ। মেধা-মনন ও চিন্তা-চেতনাকে বিষাক্ত করার সবচে’ শক্তিশালী কার্যকর অস্ত্র হলাে এই মিডিয়া। এক হিসাবে মিডিয়ার শক্তি আণবিক শক্তির চেয়েও অধিক ভয়াবহ। মিডিয়া কোটি কোটি মানুষের মেধা-মনন ও চিন্তাচেতনাকে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকেই ঘােরাতে পারে, যা মারণাস্ত্রও পারে না। পাশ্চাত্য ভালকরেই জানে, যদি বিশ্বব্যাপী তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক আধিপত্য ধরে রাখতে হয় এবং গােটা বিশ্বকে বস্তুবাদী ও ভােগবাদীকরণ করতে হয়, তাহলে তাদের জীবনদর্শন ও জীবনাদর্শকে তাদের অনুসরণীয় বানাতে হবে। এই ফাঁদ পেতে মানুষের বিবেক স্বীয় প্রভাববলয়ে নিয়ে আসতে হবে। মানুষের চিন্তাধারা ও ধ্যান-ধারণার ওপরই প্রথম হামলা চালাতে হবে। এ দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের সবচে’ মােক্ষম অস্ত্র হলাে মিডিয়াপ্রচার মাধ্যম। আর সে লক্ষ্যেই বিশ্বব্যাপী চলছে পশ্চিমা মিডিয়ার সন্ত্রাসী তাণ্ডব। বর্তমানে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যে ক্রুসেড যুদ্ধ চলছে এবং পাশ্চাত্য জগত মুসলমানদের পাইকারীভাবে খুন করার যেসব পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তার সর্বশেষ বিশ্লেষণ এ গ্রন্থে করা হয়েছে। একটি ভূমিকা ও দশটি অধ্যায়ের বিশাল পরিসরজুড়ে সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা মিডিয়ার ভয়াবহ ধ্বংসলীলা এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে চলমান ক্রুসেড সম্পর্কে অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ ও চুলচেরা বিশ্লেষণ এতে করা হয়েছে। ইসলাম, মুসলমান এমনকি গােটা মানবতাবিরােধী পশ্চিমা এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবগতি ও তার হাত থেকে মানবতাকে রক্ষায় আধুনিক তারুণ্যে নতুন চেতনা, নতুন জাগৃতির সৃষ্টি হােক, এটাই সময়ের একমাত্র দাবী।