জীবন ও ধন সম্পদ আল্লাহর নিকট সমর্পণ ঈমানের পরিচয়
মানুষ দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালোবাসে তার জীবনকে এবং তার পর তার ধন-সম্পদকে। কিন্তু একজন মু’মিন তার জীবন ও ধন-সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অকাতরে উৎসর্গ করবে, এই হচ্ছে তার ঈমানের দাবী।

(আরবী পিডিএফ ২৬ পৃষ্ঠায়*****************************)
-প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদের কাছ থেকে বেহেশতের বিনিময়ে তাদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন। (সূরা আত-তাওবাঃ১১১)
যে ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ এবং বান্দাহর মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাকে এ আয়াতে প্রকৃতপক্ষে একটা ক্রয়-বিক্রয় বলা হয়েছে। অর্থাৎ ঈমান নিছক একটি বিশ্বাস মূলক মতবাদই নয়, বরঞ্চ একটি পবিত্র চুক্তি যার মাধ্যমে বান্দাহ তার জান ও মাল তার স্রষ্টা ও মালিক প্রভু আল্লাহর নিকটে বিক্রি করে দেয়। তার বিনিময়ে সে আল্লাহর কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি লাভ করে যে, মরণের পর দ্বিতীয় জীবনে তাকে বেহেশত দান করা হবে। এ কেনা-বেচার মর্ম বুঝতে হলে এর বিশদ বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
প্রকৃত ব্যাপার তো এছাড়া আর কিছু নয় যে, মানুষের জীবন ও ধন-সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। কারণ মানুষের জীবন ধন-সম্পদ ও জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু বস্তু সামগ্রীর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে বেচা-কেনার প্রশ্নই আসেনা। মানুষের তো এমন কিছু নেই যা সে অপরের কাছে বিক্রি করতে পারে এবং আল্লাহ তায়ালারও সৃষ্টি ও মালিকানা বহির্ভূত এমন কিছু নেই যা তিনি ক্রয় করতে পারেন। তাহলে এ বেচা কেনার অর্থ কী?
ব্যাপার হচ্ছে এই যে, মানুসের মধ্যে এক বস্তু আছে যা আল্লাহ মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়েছেন। আর সেটা হলো মানুষের স্বাধীন এখতিয়ার। অর্থাৎ তার স্বাধীন ইচ্ছা ও কোনকিছু গ্রহণ-বর্জন ও করা না করার স্বাধীনতা (Freedom of will & freedom of choice)।এতে করে অবশ্যি আসল সত্য পরিবর্তন হয়ে যায়না। অর্থাৎ জান ও মালের মালিকানা আল্লাহরই রয়ে যায়। কিন্তু মানুষকে এ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে যে, সে এ সত্যকে (সবকিছুর একচ্ছত্র মালিকানা আল্লাহর) স্বীকার করে নিতে পারে, অথবা অস্বীকারও করতে পারে। কিন্তু তার স্বাধীন এখতিয়ারের এ অর্থও হতে পারেনা যে, মানুষ প্রকৃতপক্ষে তার জীবনে, তার দেহ ও মনের এবং এসবের শক্তিসমূহেরও তার ধন-সম্পদের সে মালিক হয়ে পড়েছে। অতঃপর সে এগুলোকে যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবে। বরঞ্চ তার প্রকৃত অর্থ এই যে, তাকে শুধুমাত্র এ স্বাধীনতা টুকু দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বাধ্যবাধকতা ব্যতিরেকেই নিজের জীবন ও আল্লাহ প্রদত্ত যাবতীয় ধন-সম্পদের উপর খোদার মালিকানার অধিকার ইচ্ছা করলে সে স্বীকার করে নেবে, অথবা নিজেই নিজের মালিক হয়ে বসবে এবং খোদার মুখাপেক্ষী না হয়ে ইচ্ছেমতো এসবকিছু সে ব্যবহার করবে। এই হলো আসল কারণ যার জন্য কেনা-বেচার প্রশ্ন এসে যাচ্ছে। তাই বলে এই খরিদের অর্থ এই নয় যে, যে বস্তু মানুষের তা আল্লাহ খরিদ করেছেন। বরঞ্চ আসল ব্যাপার এই যে, মানুষের জান-মাল তার কাছে নিছক আমানত স্বরূপ রাখা হয়েছে। অতপর এ ব্যাপার সম্পূর্ণ আমানতদারীর ভূমিকা পালন করার স্বাধীনতা তাকে দেয়া হয়েছে। এখানে আল্লাহ তার কাছে এ দাবী করছেন যে, সে স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে বাধ্যবাধকতার চাপে নয়, আল্লাহর জিনিস আল্লাহর বলে স্বীকার করে নিক এবং জীবনভর তার মালিক মোখতার হিসেবে নয়, নিছক একজন আমানতদার হিসেবে তার ব্যবহার স্বীকার করে নিক। খেয়ানত করার যে স্বাধীনতা তাকে দেয়া হয়েছে তা সে পরিত্যাগ করুক। এভাবে দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে আল্লাহর দেয়া স্বাধীনতাকে যদি সে আল্লাহরই হাতে সমর্পণ করে, তাহলে প্রতিদান স্বরূপ আখিরাতে তাকে বেহেশতে স্থান দেয়া হবে। যে ব্যক্তি আল্লহর সাথে এ ধরনের কেনা-বেচা করবে সেই প্রকৃতপক্ষে মু’মিন। ঈমান এধ রনের কেনাবেচারই দ্বিতীয় নাম।
যে ব্যক্তি এ ধরনের কেনা-বেচাকে অস্বীকার করে অথবা নীতিগতভাবে এ কথা স্বীকার করার পর এমন আচরণ করে যা কেনা-বেচা না করার শামিল, তাহলে সে আলবৎ কাফির। কারণ ঈমান না থাকলে কাফির হওয়াটা অনিবার্য হয়ে পড়ে।
একে না বেচার ব্যাপারটি আরও একটু পরিস্কার করে বুঝে নেয়া দরকার।
এ কেনা-বেচার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে দুটি বিরাট পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন।
(১) প্রথম পরীক্ষা এই যে, ইচ্ছা ও কর্মস্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও সে এতটুকু শালীনতা ও ভদ্রতা প্রদর্শন করে কিনা যে, প্রকৃত মালিককে মালিক মনে করে নেবে এবং নিমকহারামী ও খোদাদ্রোহীতা থেকে বিরত থাকবে।
(২) দ্বিতীয় পরীক্ষা এই যে, তার জীবন ও ধন-সম্পদের বিনিময়ে সে নগদ কিছু পাচ্ছেনা। বরঞ্চ মৃত্যুর পরের জীবনে পাওয়ার একটা প্রতিশ্রুতি মাত্র। এমতাবস্থায় সে আল্লাহর উপর এতটুকু আস্থা স্থাপন করতে পারে কি না যে, সুদূর ভবিষ্যতের এক প্রতিশ্রুতি পাওনার বিনিময়ে সে তার স্বাধীন মর্জি ও সাধ উৎসর্গ করে দিতে স্বেচ্ছায় সন্তুষ্ট চিত্তে রাজী থাকে।
(৩) দুনিয়ার যে ফিকহ শাস্ত্র অনুযায়ী ইসলামী সমাজ গঠিত হয় তার দৃষ্টিতে ঈমান তো শুধু কিছু আকীদাহ বিশ্বাসের স্বীকৃতি ও ঘোষণার নাম। অতঃপর শরীয়তের কাজী তাকে গায়ের মু’মিন (অমুসলিম) অথবা ইসলামী মিল্লাত থেকে বহিস্কৃত বলে ঘোষণা করতে পারেনা, যতক্ষণ না এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় যে ঈমানের ঘোষণার ব্যাপারে সে মিথ্যাবাদী। কিন্তু আল্লাহর নিকটে প্রকৃত ঈমানদার ত সেই ব্যক্তি যে তার ধ্যান ধারণা ও কার্যকলাপের দ্বারা স্বাধীনতা ও এখতিয়ার মা’বুদের হাতে উৎসর্গ করে দেয় এবং তাঁরই পক্ষে নিজের মালিকানার দাবী থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এখন কোন ব্যক্তি যদি ইসলামী কালিমার স্বীকৃতি দান করে, নামায রোযা প্রভৃতি নিয়মিত পালন করতে থাকে। কিন্তু আপন দেহ-মনের, মস্তিষ্ক ও দৈহিক শক্তির, আপন ধন-সম্পদের ও উহার উপাদানের এবং আপন আয়ত্তাধীন সমুদয় বস্তু সমূহের মালিক নিজেকেই মনে করে, তাহলে দুনিয়াতে তাকে মু’মিন বলা হোক না কেন আল্লাহর নিকটে সে গায়ের মু’মিন বলেই অভিহিত হবে। কারণ আল্লাহর সাথে সে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি মোটেই করেনি যাকে কুরআনের দৃষ্টিতে ঈমানের প্রকৃত গুঢ়তত্ত্ব বলা হয়েছে। আল্লাহর বাঞ্ছিত স্থানে জান-মাল উৎসর্গ করতে কুণ্ঠিত হওয়া এবং আল্লাহর অবাঞ্ছিত স্থানে তা উৎসর্গ করা এ উভয়বিধ আচরণ এমন যা এ কথা প্রমাণ করে যে, ঈমানের দাবীদার ব্যক্তি তার জান মাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করেনি। অথবা বিক্রয় চুক্তির পর সে বিক্রীত বস্তুকে নিজের মনে করছে।
(৪)ঈমানের এ গুঢ়তত্ত্ব ইসলামী জীবন ও কুফরী জীবনকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়। একজন মুসলমান ত সেই যে সত্যিকার অর্থে আল্লাহর উপরে ঈমান এনেছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর মর্জির অধীন হয়ে কাজ করে এবং তার কাজ-কর্ম এবং আচার-আচরণে কোথাও কণামাত্র স্বেচ্ছাচারিতার ঝলক দেখতে পাওয়া যায়না। অনুরূপভাবে ঈমানদারদের নিয়ে যে দল গঠিত হয়, তারা সমষ্টিগতভাবে ও কোন পলিসি, কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তাহযিব-তামাদ্দুনের কোন রীতি-নীতি, কোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিয়ম-পদ্ধতি এবং কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও নীতিমালা আল্লাহর মর্জির বিপরীত অথবা শরীয়তী কানুনের বিপরীত গ্রহণ করতে পারেনা। আল্লাহ থেকে স্বাধীন হয়ে কাজ করা এবং কোন কিছু করা না করার সিদ্ধান্ত আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয়া অবশ্যই কুফুরী দৃষ্টিভঙ্গী। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যারা রাখে তারা ‘মুসলিম’ নামে অভিহিত হোক অথবা ‘অমুসলিম’ নামে উভয়ই সমান।
(৫) এ বেচা-কেনার দৃষ্টিতে আল্লাহর যে মর্জির আনুগত্য একজন মু’মিনের জন্য অপরিহার্য, সে মর্জি মানুষের উদ্ভাবিত বা কল্পিত মর্জি হলে চলবেনা। বরঞ্চ তা হতে হবে সেই মর্জি যা তিনি স্বয়ং ঘোষণা করেন। কোন কিছুকে নিজে নিজে মা’বুদের মর্জি বলে মনে করে তার আনুগত্য করা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর মর্জির আনুগত্য হয়না, হয় আপন মর্জি বা প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। আর এটা হবে বেচাকেনার চুক্তির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত বেচা-কেনার চুক্তিতে সেই ব্যক্তি ও দল অবিচল আছে বলে মনে করতে হবে যে বা যারা তাদের গোটা জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিকর্তার দেয়া কিতাব ও রসূলে খোদার সুন্নাহ অনুযায়ী গ্রহণ করে।
আশা করি বিষয়টি এবার পরিস্কার হয়েছে, তবুও কিন্তু মনের কোণে একটি প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে, তার সঠিক জবাবও আমাদের জেনে রাখা দরকার।
সে প্রশ্নটি হলো এই যে, মু’মিন তার জীবন ও ধন-সম্পদ যে আল্লাহর কাছে অকাতরে বিক্রি করে দিল, তার মূল্য এ দুনিয়াতে না দিয়ে আখিরাতে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো কেন?
এ প্রশ্নের জবাব এ ছাড়া আর অন্য কিছু হতে পারেনা যে, বেহেশত শুধুমাত্র এ চুক্তির বিনিময় নয় যার দ্বারা বিক্রেতা তার জানমাল আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দিল। বরঞ্চ বেহেশত হবে তার আচরণের বিনিময়, যে আচরণ হবে তার এমন যে বিক্রেতা তার পার্থিব জীবনে তার বিক্রিত বস্তুর প্রতি তার স্বেচ্ছাচারমূলক ব্যবহার পরিত্যাগ করবে এবং প্রকৃত আমানতদার হিসেবে খোদারই মর্জি অনুযায়ী তা ব্যবহার করবে। অতএব, এ বিক্রয় কার্য সত্যিকার অর্থে সম্পন্ন হবে যখন বিক্রেতার পার্থিব জীবন শেষ হয়ে যাবে এবং এ কথা প্রমাণিত হবে যে সে বিক্রয় চুক্তি করার পর তার জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত বিক্রির শর্তাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। তার পূর্বে ন্যায়-নীতির দিক দিয়ে মূল্য পাওয়ার সে যোগ্যই হতে পারেনা।

ক্রীত বস্তুর মূল্য প্রদান আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ
এ কেনা-বেচা ও ক্রীত বস্তুর মূল্য প্রদানের ব্যাপারে বান্দাহর প্রতি আল্লাহ তায়ালার এক বিশিষ্ট অনুগ্রহ দেখা যায়। তা হলো এই যে, নিজেরই গচ্ছিত বস্তু যখন খুশি তখন তিনি বান্দার নিকট থেকে নিয়ে নিতে পারেন। তার মূল্য বা বিনিময় আবার কেন? কিন্তু মেহেরবান আল্লাহ আপন জিনিস বান্দাহর নিকট ফেরৎ নিচ্ছেন এবং তার জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বোৎকৃষ্ট মূল্য দিচ্ছেন। তা হলো বেহেশত। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর খাস মেহেরবানী ছাড়া আর কী হতে পারে?
এ কথাটিকে এক প্রেমিক কবির ভাষায় কত সুন্দর করে ব্যক্ত করা হয়েছে!
আল্লাহর পথে একজন শহীদের মনের কথা কবিতাঁর ভাষায় ব্যক্ত করে বলেছেন।
জান দিত দি হুই উসি কি থি
হক ত ইয়ে হ্যায় কে হক আদা না হুয়া।
-যে জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করলাম, সে তাঁরই দেয়া। সে জীবন তাকেই দেয়াতে আমার কোন বীরত্ব বাহাদুরী নেই। পক্ষান্তরে প্রকৃত ব্যাপার এই যে, জীবনভর তাঁর অগণিত নিয়ামত ভোগ করার পর তার হক আদায় করতে পারলাম না।
স্বতঃস্ফুর্তভাবে আল্লাহর জন্য জীবন উৎসর্গ করার পর আল্লাহ প্রেমিকের কী মহান পরিতৃপ্তি প্রকাশ! এই হলো প্রকৃত ঈমানের নিদর্শন।

বিক্রয় চুক্তিই চূড়ান্ত নয়
ঈমানের দাবী কি, তা উপরের আলোচনায় পরিস্কার বুঝতে পারা গেল। এখন এবিষয়েআরকোনআলোচনারপ্রয়োজননাথাকারইকথা।কারণঈমানেরসবচেয়েবড়োদাবীমু’মিনেরকাছেএইছিলযে, সে তার সবকিছু আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেবে। এখন বিক্রি করার পর ঈমানের দাবী আর কি-ই বা থাকে?
তার জবাব হচ্ছে এইযে, উপরের আলোচনায় এও জানতে পারা গেল যে, জান মাল বিক্রি করে দেয়াটাই ঈমানের দাবীর চূড়ান্ত মীমাংসা নয়। কারণ বিক্রেতার কাছে তার বিক্রিত বস্তু দুটি এখনো রয়ে গেছে এবং জীবন ভর তার কাছেই থাকবে। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই ঈমানের দাবী পূরণও বাকী রয়ে যাচ্ছে। এখন দেখতে হবে যে সে বিক্রীত বস্তুর যথাযথ ব্যবহার করে কিনা যার উপর নির্ভর করছে তার মূল্য পাওয়া না পাওয়া। এখন বিক্রয় চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য ঈমান বার বার তার কাছে যে দাবী করতেই থাকবে, তারই কিছু সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক।

(আরবী পিডিএফ ৩২ পৃষ্ঠায়*****************************)
তোমরা যারা ঈমান এনেছ, জেনে রেখে দাও। তোমাদেরকে আমি যা কিছু ধন-দৌলত দিয়েছি তার থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় কর ঐ দিন (কিয়ামত) আসার পূর্বে যেদিন না কোন বেচা-কেনা চলবে না দোস্তি মহব্বত আর না কোন সুপারিশ কোন কাজে আসবে। (বাকারাহঃ২৫৪)
এখন দেখা গেল, খোদার সাথে একজন মু’মিনের বিক্রয় চুক্তি হওয়ার পর তার বিক্রীত সম্পদ আল্লাহর পথেই ব্যয় করার তাকীদ করা হচ্ছে। কারণ যে ধন-সম্পদ সে আল্লাহর কাছে বিক্রি করেছে, তা আইনগতভাবে একমাত্র আল্লাহরই পথে ব্যয় করা ব্যতীত তার গত্যন্তর নেই। যদি সে বাঞ্ছিত পথে তা ব্যয় না করে সঞ্চিত করে রেখে দেয়, অথবা অন্য কোন পথে ব্যয় করে, তাহলে সে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এ ক্রেতা যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ এবং যিনি নেহায়েৎ মেহেরবানী করে তার গচ্ছিত সম্পদ খরিদ করে নিচ্ছেন। অতএব, এ বিশ্বাসঘাতকতার মারাত্মক শাস্তিও আইনগতঃ তিনি দিতে পারেন এবং দেবেন।
আল্লাহ বলেন-
(আরবী পিডিএফ ৩৩ পৃষ্ঠায়*****************************)
-যারা আল্লাহর সাথে চুক্তি সুদৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক স্থাপনের আদেশ তিনি দিয়েছেন, তা ছিন্ন করে এবং যমীনে বিপর্যয় ছড়ায়, তারা অভিসম্পাতের যোগ্য এবং আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাসস্থল।
(রা’দঃ২৫)
আল্লাহ আরও বলেন-

(আরবী পিডিএফ ৩৩ পৃষ্ঠায়*****************************)
-(ঈমানদারদের কাজ ত এই যে) তারা আল্লাহর সাথে সম্পাদিত চুক্তি পূরণ করে, তা সুদৃঢ় করার পর ভঙ্গ করেনা। আল্লাহ যে যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার আদেশ করেন তা অক্ষুণ্ণ রাখে নিজেদের প্রভূকে ভয় করে এবং এ ভয়ও তারা করে যে কি জানি হয়তো মন্দভাবে এবং কঠোরতার সাথে তাদের হিসেব নেয়া হবে। তাদের চরিত্রের আর একটি দিক এই যে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ধৈর্যশীল হয়ে পড়ে, নামায কায়েম করে, আমি আল্লাহ তাদেরকে যা দিয়েছি তার থেকে প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং ভালোর দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে। আখিরাতের সুখের আবাসস্থল তাদেরই জন্য। (রা’দঃ২০-২২)

উপরের আয়াত দুটিতে একত্রে দশটি ঈমানের দাবী পেশ করা হয়েছে
• আল্লাহর সাথে সম্পাদিত চুক্তি পূরণ করা।
• চুক্তি ভঙ্গ না করা।
• আল্লাহর আদিষ্ট ও বাঞ্ছিত সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা।
• আল্লাহকে ভয় করা।
• আখিরাতে হিসেবের কঠোরতার ভয়করা।
• আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের লক্ষ্য মনে করা।
• ধৈর্যশীল হওয়া।
• নামায কায়েম করা।
• প্রকাশ্যে এবং গোপনে আল্লাহর দেয়া সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করা।
• ভালোর দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করা।
প্রকৃত মু’মিনের জন্য আখিরাতের বাসস্থান কেমন হবে তাও এ প্রসঙ্গে বলে দেয়া হয়েছে।

(আরবী পিডিএফ ৩৪ পৃষ্ঠায়*****************************)
অর্থাৎ বাসস্থানটি হবে এমন বাগান (জান্নাত) যা হবে তাদের চিরন্তন বাসস্থান। তারা নিজেরা প্রবেশ করবে সে জান্নাতে এবং তাদের মা-বাপ, স্ত্রী-পুত্র পরিজনের মধ্যে যারা নেক হবে তারাও তাদের সঙ্গে প্রবেশ করবে সে জান্নাতে। ফেরেশতাগণ চারদিক থেকে ছুটে আসবেন তাদের খোশ আমদেদ জানাবার জন্য। তারা বলবেন, “আপনাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক। কারণ আপনারা দুনিয়াতে ধৈর্যের সাথে আল্লাহর পথে কাজ করেছেন। তার জন্য এ স্থানের প্রকৃত যোগ্যই আপনারা”। কত সুন্দর আখিরাতের এ আবাসস্থল! (রা’দঃ২৩-৩৪)

মানুষ তার ধন-সম্পদের প্রতিনিধি মাত্র
মানুষকে আল্লাহ যে ধন-সম্পদ দান করেছেন, তার মালিকানা মানুষকে দেয়া হয়নি। এসবের প্রতিনিধি করা হয়েছে মানুষকে। সম্পদের স্রষ্টা ও মালিক আল্লাহ তা মানুষের কাছে গচ্ছিত রেখে তার প্রতিনিধি বানিয়েছে মানুষকে এ শর্তে যে, মানুষ তা ব্যয় করবে আল্লাহরই মর্জি মুতাবেক।
আল্লাহ বলেন-

(আরবী পিডিএফ ৩৫ পৃষ্ঠায়*****************************)
-(হে মু’মিনগণ!) আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন এবং ব্যয় কর এসব সম্পদ থেকে যার খলিফা বা প্রতিনিধি আল্লাহ তোমাদেরকে বানিয়েছেন। অতএব, যারা ঈমান আনবে এবং সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করবে, তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান। (হাদীদঃ৭)
এ আয়াতে মুসলমানদেরকেই ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে। তার অর্থ ঈমান আনার পর ঈমানের দাবী পূরণ করে চলতে হবে। তারপর আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এ আদেশ অত্যন্ত ন্যায় সঙ্গত। কারণ ধন-সম্পদের মালিক সে নয়। মালিক আল্লাহ। সে তার প্রতিনিধি। প্রতিনিধির কাজ মালিকের মর্জি পূরণ করা। এ ধন যখন যেভাবে এবং যে পরিমাণে ব্যয় করলে আল্লাহর মর্জি পূরণ হবে ঠিক তেমনিভাবেই করতে হবে।
আল্লাহ মু’মিনের কাছ থেকে তার জান ও মাল উভয়ই খরিদ করে নিয়েছেন। উপরে এর বিশদ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু জানের চেয়ে মালের জন্য অধিকতর তাকীদ করা হয়েছে। তার অর্থ হলো, ঝোঁকের মাথায় হঠাৎ জানটা দিয়ে দেয়া তেমন কঠিন কাজ নয় এবং এটা মাত্র একবারই দেয়ার বস্তু। একবার দিলেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ধন-সম্পদ বার বার এবং জীবনভর আল্লাহর পথে ব্যয় করা বড়ো কঠিন কাজ। তাই এর দ্বারা ঈমানের কঠিন পরীক্ষা হয়।

আল্লাহর পথে ব্যয়ের তাৎপর্য
এখন প্রশ্ন হলো এই যে, আল্লাহর পথে ব্যয়ের অর্থ ও তাৎপর্য কি এবং তার প্রয়োজনীয়তা-ই কি? আল্লাহর ত ধন-সম্পদের কোনই প্রয়োজন নেই। কারণ তিনিই ত সারা জাহানের স্রষ্টা ও মালিক। কেনই বা তিনি কুরআনের পাতায় তাঁরই ধন ব্যয় করার তাকীদ দিয়েছেন?
শুধু তাই নয়, তিনি তাঁর বান্দাহর কাছে ধন-সম্পদ ঋনস্বরূপ চেয়েছেন। যেমন- কুরআনে বলা হয়েছে-

(আরবী পিডিএফ ৩৭ পৃষ্ঠায়****************************)
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে ঋণ দান করবে উত্তম ঋণ? অতঃপর তিনি তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে ফেরৎ দিবেন শুধু তাই নয়, বরঞ্চ ঋণদাতার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিদানও রয়েছে। (হাদীদ-১৯)
(আরবী পিডিএফ ৩৭ পৃষ্ঠায়****************************)
এবং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং আল্লাহকে ঋণ দান কর, উত্তম ঋণ। (মুযাম্মিলঃ ২০)
এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বিরাট মহানুভবতা যে মানুষ তাঁরই দেয়া সম্পদ তাঁরই পথে ব্যয় করে, তাহলে তিনি সেটাকে তাঁর জন্য ঋণ হিসেবে গণ্য করেন।ই বলে শর্ত এই যে তা হতে হবে উৎকৃষ্ট ঋণ (কর্জে হাসানা)। অর্থাৎ তা দিতে হবে খাঁটি নিয়তে এবং বিনা স্বার্থে।এ দেয়ার মধ্যে কোন প্রকার লোক দেখানোর মনোভাব, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভের কোন অভিলাষ যেন না থাকে। এ ঋণ দানে কারো প্রতি কৃপাপ্রদর্শন করা হয়েছে এমন মনে করাও চলবে না। নিছক আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য তা যেন দেয়া হয় এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো প্রতিদান ও সন্তুষ্টি লাভ যেন অভিপ্রেত না হয়। এ ঋণ সম্পর্কে আল্লাহর দুটি প্রতিশ্রুতি। এক. এ ঋণকে কয়েকগুণ বর্ধিত করে প্রত্যাবর্তন করা হবে। দুই. উপরন্তু তিনি তাঁর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম প্রতিদান দেবেন।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে। বলা হয়েছে যে, যখন এ আয়াত নাযিল হয় এবং সাহাবীগণ তাঁর পবিত্র মুখ থেথে তা শুনতে পান, তখন হযরত আবু দাহ দাহ আনসারী (রা) আরজ করেন, “হে আল্লাহর রসূল সত্যিই কি আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিকট থেকে ঋণ চাইছেন?”
নবী বললেন, “হ্যাঁ, আবুদ্দাহদাহ’ আবুদ্দাহদাহ বলেন, “আপনার হাত মুবারক আমাকে একটু দেখান”। নবী (স) তাঁর হাত তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
সাহাবী আবুদ্দাহদাহ নবীর হাত তাঁর হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন, “আমি আমার বাগান আমার প্রভুকে ঋণ দিলাম”।
হযরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেন যে, সেই বাগানে ছয়শত উৎকৃষ্ট খেজুর গাছ ছিল। সাহাবী আনসারীর বাড়ি ছিল সেই বাগানের ম্যেই এবং তিনি সেখানেই তাঁর পরিবারসহ বাস করতেন।
নবীকে উক্ত কথা বলার পর তিনি সোজা তাঁর বাড়ি গিয়ে পৌঁছলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে সম্বোধন করে বললেন, “দাহদাহর মা, বেরিয়ে এসো, বেরিয়ে এসো। এ বাগান আমি আমার প্রভুকে ঋণ দিয়েছি”।
তার স্ত্রী বললেন, “দাহদাহর বাবা, তুমি বেশ মোটা মুনাফার সওদা করেছো”।
এ কথা বলে তিনি তাঁর ছেলে এবং ঘরের আসবাবপত্রসহ বেরিয়ে পড়লেন। -(ইবনে আবি হাতেম)।
সত্যিকার মু’মিন সাহাবায়ে কিরামের (রা) চরিত্র, মন-মানসিকতা এবং আল্লাহর পথে ত্যাগ ও কুরবানী কতখানি ছিল তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট বুঝতে পারা যায়। এর তেকে এ কথাও বুঝতে পারা যায় সে ঋণ (কর্জে হাসানা) কি ছিল যা কয়েকগুণ বর্ধিত করে প্রত্যাবর্তন করার এবং অতিরিক্ত প্রতিদান দেয়ার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন।
এমনি ঋণ দানের জন্য কুরআনে আরও কয়েক স্থানে আহবান জানানো হয়েছে। ঋণ দান অর্থ আল্লাহর পথে অকাতরে এবং মুক্ত হস্তে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা। ‘উত্তম ঋণ’ অর্থ পার্থিব কোন স্বার্থের আশায় নয়।
নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টি অজনের নিয়তে। এখন ঋণ দানের প্রকৃত মর্মও আমাদের জানা দরকার।
এ বিষয়টি সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে নবীজীবনকে ভালো করে জানতে বুঝতে হবে। আমরা যদি নবী মুহাম্মদ (স)-এর তেইশ বছরের জীবনকে সামনে রাখি, তাহলে আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাব যে, তাঁর তেইশ বছরের জীবন বাতিলের বিরুদ্ধে একটা একটানা সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রাসে অবশ্যি সাহাবায়ে কিরামও শামিল ছিলেন।
এ সংগ্রাম ছিল কিসের জন্য? এ ছিল আল্লহার কালেমাকে বুলন্দ করার সংগ্রাম। তাঁর বাণীকে সমুন্নত করার সংগ্রাম।

রসূল আগমনের উদ্দেশ্য
আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার অর্থ হলো তাঁর দ্বীনে হককে মানুষের জন্য একমাত্র সত্য, সনাতন, সুন্দর ও মঙ্গলকর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম। বলা বাহুল্য নবী মুহাম্মদের (স) আগমন একমাত্র এই উদ্দেশ্যেই হয়েছিল।

(আরবী পিডিএফ ৪০ পৃষ্ঠায়****************************)
তিনি ত সেই সত্তা, যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়েত এবং ‘দ্বীনে হক’ সহ পাঠিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো এই যে, রসূল সে দ্বীনে হককে, অন্যান্য সমুদয় ‘দ্বীন’ বা জীবন বিধানের উপরে বিজয়ী করবেন মুশরিকগণের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও।
(সাফঃ ৯)
রসূল তাঁর জীবনের মিশনকে অর্থাৎ ‘দ্বীনে হক’ বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার কাজকে সাফল্যমণ্ডিত করতে গেলে, বাতিলের সঙ্গে সংগ্রাম-সংঘর্ষ যে অনিবার্য তার উপরের আয়াতে সুস্পষ্ট ইঙ্গি করা হয়েছে।
বাতিলপন্থী এটা কখনো মানতে রাজী হবে না যে, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লহার ‘দ্বীন’ বা বিধান কায়েম হোক। তারা বড়ো জোর এমন এক সমঝোতায় ত নেমে আসতে পারে যে, আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব আনুগত্যর সাথে অন্যান্যদের দাসত্ব ও আনুগত্য চলুক। তারা চাইবে যে কোন দর্শন, মতবাদ ও দৃষ্টিভঙ্গীর উপরে তাদের ধর্মবিশ্বাস, চরিত্র ও তাহযিব তামাদ্দুনের ভিত্তি গড়তে। কিন্তু রসূলের উপরে নির্দেশ হচ্ছে তাদের সাথে সাথে কোন প্রকার সমঝোতা না করেই, যে হেদায়েত ও ‘দ্বীনে হক’ আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছে, তা তিনি পরিপূর্ণ রূপে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করবেন। বাতিলপন্থী যতোই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক, রসূলকেএ কাজ করতেই হবে। এমনকি এর জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের সম্মুখীন হতে হলে তাও করতে হবে। এরশাদ হচ্ছেঃ

(আরবী পিডিএফ ৪১ পৃষ্ঠায়****************************)
-এবং তাদের বিরুদ্দে যুদ্ধ কর যতোক্ষণ না ফেৎনার উচ্ছেদ হয় এবং ‘দ্বীন’ (জীবন বিধান) পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর হয়ে না যায় (আনফালঃ ৩৯)।
এখন বুঝতে পারা গেল, নবীর প্রতি আরোপিত কর্তব্য হচ্ছে বাতিলের বিরুদ্ধে একটানা সংগ্রাম করে চলা। এ সংগ্রামকে কোন বিশিষ্ট যুগ বা কালের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা হয়নি। আল্লাহর এ নিগের্দশ মুসলামনদের জন্য এবং তা প্রযোজ্য কিয়ামত পর্যন্ত সকল কালের জন্য। যতোক্ষণ না আল্লাহর ‘দ্বীন’ পরিপূর্ণরূপে কায়েম হয়েছে, ততোদিন এ সংগ্রামের শেষ নেই, বিরতি নেই।
এ প্রসঙ্গে আরও বলে-

(আরবী পিডিএফ ৪১ পৃষ্ঠায়****************************)
তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। (আছ ছফঃ ১৪)
‘আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়ার অর্থ আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কল দিক দিয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোনকে সাহায্য করা। এখন বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার জন্য বাতিলের বিরু্ধে সংগ্রাম অনিবার্য, তার জন্য মুক্ত হস্তে অর্থ ও ধন-সম্পদ ব্যয় করা এবং দেহ ও মনের সকল শক্তি নিয়োজিত করাকেই আল্লাহর পথে ব্যয় ও আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য বলা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন অভিপ্রায়ে অর্থ ব্যয় করলে, তা যতো বেশী পরিমাণেই হোক না কেন এবং প্রকাশ্যত দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে দেয়া হোক না কেন, তাকে আল্লাহর পথে ব্যয় বলা যাবে না এবং সমুদয় অপচয়ের মধ্যেই শামিল হবে।

(আরবী পিডিএফ ৪২ পৃষ্ঠায়****************************)
-হে ঈমানদারগণ! লোকের কাছে প্রচার করে বেড়িয়ে অথবা গ্রহণকারীকে মনে পীড়া দিয়ে তোমাদের সদকা-খয়রাত বরবাদ করো না। ঠিক তারই মতন যে শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। (বাকারাহঃ ২৬৪)
‘সদকা’ শব্দটি সিদক থেকে উদ্ভুত। তার অর্থ ‘সত্যতা’ এবং ‘আন্তরিকতা’। সদকা এ জন্য বলা হয়েছে যে তার দাতার ঈমানের সত্যতা ও আন্তরিকতা প্রমাণ করে।
আল্লাহর পথে ব্যয় যদি লোক দেখানোর জন্য অথবা কোন ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য হয়, (যেমন- বাহাদুরি বা নাম কেনার জন্য, অথবা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিস্ঠার পর কোন ব্যক্তিগত পদমর্যাদা লাভ অথবা সুযোগ-সুবিধা হাসিলের জন্য) এবং তা যতো পরিমাণে হোক না কেন, তা সমুদয় অপচয় ব্যতীত আর কিছুই হবে না। তার কোন বিনিময় আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে না। বরঞ্চ অসৎ অভিপ্রায়ের জন্য শাস্তিই পেতে হবে। উপরের বিশদ আলোচনায় কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেলঃ
• এ দুনিয়ার নবী মুহাম্মদের (স) আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো দ্বীনে হকের প্রতিষ্ঠা। তার জন্য বিরোধী বাতিল শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম-সংঘর্ষ অনিবার্য।
• নবী মুহাম্মদ (স) এবং তাঁর পরে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সর্বোতভাবে সাহায্য করা অর্থাৎ এ সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করা ঈমানের দাবী ও শর্ত।
• এ কাজের জন্য জীভন ও ধন-সম্পদ উৎসর্গ করা ঈমানের দাবী।
• জীবন ও ধন-সম্পদ বিসর্জণ দেয়ার ব্যাপারে নিয়ত পরিস্কার রাখতে হবে। উদ্দেশ্য হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মানব জাতির সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বন্দেগী বা দাসত্ব-আনুগত্য করা। এ দাসত্ব-আনুগত্য পরিপূর্ণতা লাভ করে যদি তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে করা হয়। অন্য কথায় যাকে বলা হয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠা করা। এই হলো সৃষ্টির মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করেই আল্লহার অন্যান্য নির্দেশ এসেছে। কুরআনের প্রতিটি নির্দেশ ঐ একটি লক্ষ্য কেন্দ্রের দিকেই আবর্তিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য বান্দাহকে বহু কাজ অবশ্যই করতে হয়, যা না করলে কিছুতেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।

(আরবী পিডিএফ ৪৩ পৃষ্ঠায়****************************)
-যারা ঈমান এনেছ তারা জেনে রাখ যে যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তাহলে তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং বাতিলের মুকাবিলায় তোমাদের হকের উপর অটল রাখবেন। (মুহাম্মদঃ ৭)
এখানেও ‘আল্লাহর সাহায্য’ অর্থ আল্লাহর ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা। নিজের অর্থ, ধন-সম্পদ, শ্রম, মেহনত, প্রতিভা, চিন্তা-ভাবনা সব কিছুই এ কাজে পরিপূর্ণরূপে নিয়োজিত করা। একজন মু’মিনের কাছে এ দাবীই করা হচ্ছে।

বাতিলের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা ঈমানের দাবী
একজন মু’মিনের জন্য এটাও অপরিহার্য যে, সে যখন ‘দ্বীনে হক’ প্রতিষ্ঠার একজন সেনিক, তখন তাকে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য শত্রুকে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। তার শত্রু হলো বাতিলপন্থী। এ বাতিলপন্থীর সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাদের সাথে কোন প্রকারের বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখা চলবে না।

(আরবী পিডিএফ ৪৪ পৃষ্ঠায়****************************)
-(হে মুহাম্মদ!) তুমি এমনটি কখনো পাবে না যে, যারা আল্লহ এবং আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তারা বন্ধুত্ব রাখে এমন লোকের সাথে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের বিরোধিতা করে। এ বিরোধিতাকারী পিতা হোক, পুত্র হোক, ভাই হোক অথবা আপন স্বজন হোক না কেন। তারা (ঈমানদারগণ) এমন, যাদের অন্তরের মধ্যে আল্লাহ ঈমান দৃঢ়ভাবে অংকিত করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তাঁর পক্ষ থেকে একটি আত্মা বা প্রাণশক্তি দান কের তাদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার করেছেন। তারাই হলো আল্লাহর দল। জেনে রাখ আল্লাহর দল অবশ্যই জয়যুক্ত হবে। (মুজাদিলাঃ ২২)
এ আয়াতে দুটি বিষয় বলা হয়েছে। একটি নীতিগত কথা। অপরটি সত্য ঘটনার উল্লেখ।
নীতিগত কথাটি অতি সুস্পষ্ট। তা হচ্ছে এই যে, দ্বীনে হকের উপর ঈমান এবং দ্বীনে হকের বিরোধী বাতিলের প্রতি ভালোবাসা দুটি পরস্পর বিরোধী জিনিস। এ দুটির একত্রীকরণ কিছুতেই সম্ভব নয়। কোন ব্যক্তির পক্ষে যেমন এটা কিছুতেই সম্ভব নয় যে, সে আপন সত্তাকেও ভালোবাসবে এবং তার শত্রুকেও ভালোবাসবে, তেমনি এটাও সম্ভব নয় যে, ঈশান এবং ইসলামের দুশমনের প্রতি ভালোবাসা একই হৃদয়ে পোষণ করবে। যদি এমন দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি ঈমানের দাবী করার সাথে সাথে এমন সব লোকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখে যারা ইসলামের দুশমন, তাহলে বুঝতে হবে তার ঈমানের দাবী মিথ্যা।

দ্বিতীয়তঃ এ আয়াতে উপরোক্ত মূলনীতি সুস্পষ্ট করে দেয়ার পর ঈমানের দাবীদারদের জন্য দৃষ্টান্ত স্বরূপ কিছু সত্য ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ এমন সুস্পষ্ট ঘটনা যা বদর এবং উহুদ যুদ্ধেল সময় সমগ্র আরববাসী প্রত্যক্ষ করেছে।
সে সব সাহাবায়ে কিরাম মক্কা থেকে মদীনার শুধুমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনে হকের জন্য হিজরত করেছিলেন, তাঁরা আপন গোত্র ও পরিবারস্থ লোকদের বিরুদ্ধেই অস্ত্র ধারণ করেছিলেন। কারণ তারা ছিল ইসলামের দুশমন।
হযরত আবু উবইদাহ (রা) তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ বিন জাররাহকে নিজ হাতে কতল করেন। হযরত মুসয়াব বিন উমইর (রা) তাঁর আপন ভাই ওবায়েদ বিন উমাইরকে কতল করেন। যহরত ওমর (রা তাঁর আপন ভাই ওবায়েদ বিন উমাইরকে কতল করেন। যহরত ওমর (রা) তাঁর আপন মামা আস-বিন –হিশাম বিন মুগিরাকে, হযরত আলী (রা) তাঁর নিকট আত্মীয় ওতবাবে, হযরত হামযাহ (রা) তাঁর আত্মীয় শায়বাকে এবং হযরত ওবাইদা বিন-হারেস তাঁর আত্মীয় অলিদ-বিন ওতবাকে কতল করেন। হযরত আবু বকর (রা) তাঁর আপন পুত্র আবদুর রহমানকে কতল করতে উদ্যত হয়েছিলেন।
হযরত ওমর (রা) বদর যুদ্ধে বন্দীদের সম্পর্কে নবীর (স) কাছে আরজ পেশ করে বলেন, “এদেরকে কতল করা হোক এবং প্রত্যেকে তার আত্মীয়কে কতল করবে”।
বদর যুদ্ধের সময় হযরত সাময়াব বিন উমাইরের (রা) সহোদর ভাই আব্দুল আযীয বিন ওমাইরাকে জনৈক আনসার ধরে বেঁধে ফেলেছিলেন। হযরত মাসয়াব তা দেখে চিৎকার করে বললেন, “ওকে বেশ শক্ত করে বাঁধ। তার মা বড় মালদার। সে তোমাদের প্রচুর অর্থ দেবে ছেলের মুক্তির জন্য”।
আব্দুল আযীয বললো, “তুমি ভাই হয়ে অমন কথা বললে?”
হযরত মাসয়াব বললেন, “এখন আর তুমি আমার ভাই নও। সে আনসার তোমাকে বাঁধছে, সেই আমার ভাই।
এ যুদ্ধে নবী পাকের (স) জামাতা আবুল আস বন্দী অবস্থায় আনীত হলে, নবীর জামাতা বলে তার প্রতি কৃপা প্রদর্শন করা হয়নি। অন্যান্য বন্দীর মতোই তার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে সমগ্র বিশ্ব ভালোভাবে প্রত্যক্ষ করেছে সত্যিকার মু’মিন কেমন হয়ে থাকে এবং ‘দ্বীনে হকের’ সাথে তার সম্পর্ক কিরূপ।
কোন কোন দল বা জাতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিষিদ্ধ তা ভালো করে জেনে রাখা দরকার। নতুবা এ নিয়ে উভয় পক্ষে একটা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। এ সম্পর্কে কুরআন মজিদে সুস্পষ্টরূপে ঘোষণা করা হয়েছে তা হলোঃ

(আরবী পিডিএফ ৪৬ পৃষ্ঠায়****************************)
-যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং তোমাদেরকে তোমাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেয় অথবা বিতাড়নকারীকে সাহায্য করে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। এতসত্ত্বেও যারা তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে, তারা জালেম।
পক্ষান্তরে যাদের আচরণ উপরোক্ত আচরণের বিপরীত, তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন ও ইনসাফ করতে নিষেধ করা হয়নি।

(আরবী পিডিএফ ৪৭ পৃষ্ঠায়****************************)
-“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে না এবং যারা তোমাদেরকে তোমাদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত করে দেয় না, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই ইনসাফকারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন”। (মুমতাহিনাঃ ৮)

অর্থ-সম্পদের লিপ্সা না থাকাই ঈমানের দাবী
ঈমানের আর একটি দাবী হচ্ছে এই যে, ধন-সম্পদ অর্জনের মোহ অন্তরে পোষণ করা চলবে না। যাদের মধ্যে ধন-লিপ্সা থাকে, তারা দিনরাত এ চিন্তায় বিভোর থাকে। শেষ পর্যন্ত অবৈধ উপায়ে হলেও অর্থ-সম্পদ অর্জন করতে থাকে এবং লেনদেনে লিপ্ত হয়ে পড়ে। মানুষে মানুষে শত্রুতা দ্বন্দ্ব-কলহ, হত্যাকাণ্ড প্রভৃতি অর্থ লিপ্সারই বিষময় ফল। আল্লাহ বলেনঃ

(আরবী পিডিএফ ৪৮ পৃষ্ঠায়****************************)
-তোমরা যারা ঈমান এনেছো, চড়া সুদ ভক্ষণ করো না। (আলে ইমরানঃ ১৩০)
কথাটি সুদ প্রসঙ্গে একটি নীতিগত ফরমান হলেও তা বলা হয়েছিল ওহুদ যুদ্ধের দীর্ঘ সমালোচনামূলক ভাষণে। কতিপয় সাহাবায়ে কিরামের আচরণ আল্লাহর মনঃপুত ছিল না এবং দ্বীনে হক প্রতিষ্ঠার উপযোগী ছিল না বলে কুরআন পাকে এ সবের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। ওহুদ যুদ্ধের এক পর্যায়ে কতিপয় সাহাবী নবীর নির্দেশ অমান্য করে মালে গণিমত হস্তগত করতে লিপ্ত হয়েছিলেন। মানবীয় স্বাভাবিক দুর্বলতার কারণে কিছুক্ষণণের জন্য তাঁদের মধ্যে ধন-লিপ্সা জাগ্রত হয়েছিল, যে দুর্বলতার সুযোগে খালেধ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে কুরাইশ কাফিরগণ তাঁদের উপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। যার ফলে সত্তর জন সাহাবী শহীদ হন।
আল্লাহর পথে নিঃস্বার্থভাবে এবং একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের মনোভাব নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। ব্যক্তিগত ধন-লিপ্সা এ পথে বিরাট অন্তরায়।
ইসলামে ধন অর্জন নিষিদ্ধ নয় এবং দূষণীয়ও নয়। তা করতে হবে সদুপায়ে এবং ব্যয় করতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে। সাহাবায়ে কিরামও ধন-অর্জন করেছেন। কিন্তু দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তা সমুদয় দ্বিধাহীন চিত্তে ও সন্তুষ্টির সাথে আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিয়েছেন। এর নজির বিহীন দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া গেচে তাবুক অভিযানের প্রাক্কালে এবং যা ইসলামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে।

ধন-সম্পদ ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা
ধন-সম্পদ মূলত খারাপ বস্তু নয়। ধন-লিপ্সা এবং ধনকে আঁকড়ে ধরে থাকাটাই খারাপ। যেহেতু তা একটি পবিত্র আমানত, সে জন্য তার ব্যবহার হতে হবে আসল মালিক আল্লাহর মর্জি অনুযায়ী। তাই এ সম্পদ মানুসের বিরাট পরীক্ষা স্বরূপ।
আল্লাহ বলেন-

(আরবী পিডিএফ ৪৯ পৃষ্ঠায়****************************)
-হে ঈমানদারগণ! মনে রেখো তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে যেন আল্লাহ থেকে ভুলিয়ে না রাখে।
(মুনাফিকুনঃ৯)

(আরবী পিডিএফ ৪৯ পৃষ্ঠায়****************************)
-এবং জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তোমাদের জন্য পরীক্ষার জিনিস এবং আল্লাহর কাছে রয়েছে প্রতিদান দেবার বহু সামগ্রী।
(আনফালঃ ২৮)
মানুষের ঈমানের আন্তরিকতার মধ্যে যে জিনিস সাধারণত বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং যার কারণে তাদের মধ্যে মুনাফেকী, গাদ্দারী ও বিশ্বাসঘাতকতার রোগ প্রকাশ পায়, তা হলো ধন-সম্পদ এবং সন্তানাদির প্রতি ভালোবাসা যখন তা সকল সীমা অতিক্রম করে। সে জন্য বলা হচ্ছে যে এ ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি, যার প্রতি মোহবিষ্ট হয়ে মানুষ সাধারণত সত্য পথ-থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, প্রকৃত পক্ষে মানুষের জন্য বিরাট পরীক্ষা যাকে সে পুত্র অথবা কন্যা মনে করে সে হচ্ছে আসলে তার এক প্রকারের প্রশ্নপত্র।
অনুরূপভাবে ধন-দৌলত হলো দ্বিতীয় প্রশ্নপত্র। এ সব এ জন্য মানুষকে দেয়া হয় যে, এতসব লাভ করার পর সে সত্য পথে চলতে পারে কিনা এ সবের ভালোবাসা ও লোভলালসা থেকে তার মনকে পবিত্র ও অমলিন রাখতে পারে কিতা এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে তাদের প্রতি ব্যবহার করতে পারে কিনা তার প্রমাণ তাকে দিতে হবে।
এইটাই হলো ঈমানের দাবী।
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিকে মানুষের জন্য বিরাট পরীক্ষা এবং আল্লাহর মর্জি পূরণের জন্য এ সব বিসর্জন দেয়াকেই এ পরীক্ষার সাফল্য বলা হয়েছে।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি