হযরত আবু বকর ইবন কুহাফা (রা.)
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাতের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সমগ্র এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এলো। সাহাবা মণ্ডলী হতবাক হয়ে গেলেন, তাঁরা ধারণাই করতে পারছিলেন না যে, রাসুলুল্লাহ (সা) আর এ দুনিয়ায় নেই। এমনকি হযরত ওমর (রা.) পর্যন্ত তরবারি কোষমুক্ত করে ঘোষণা দিলেন, ‘যে বলবে রাসূলুল্লাহ (সা.) –এর ওফাত হয়েছে তাকে হত্যা করবো’। সবারই যখন অবস্থা এই তখন একজন মানুষই ছিলেন ধীর স্থির এবং অবিচল। তিনি হলেন রাসূল (সা)-এর প্রিয় বন্ধু, নিত্যদিনের সহচর হযরত আবূ বকর (রা)। হযরত ওমর (রা)-এর ঘোষণা শুনে আবু বকর (রা) এগিয়ে এলন এবং ঘোষণা দিলেন, ‘যারা মুহাম্মদের ইবাদত করতো তারা জেনে রাখো, মুহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহর ইবাদত করো তারা জেনে রাখো আল্লাহ চিরঞ্জীব –তাঁর মৃত্যু নেই’। এরপর তিনি পবিত্র কালামে পাকের এ আয়াত পাঠ করে শুনালেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তাহলে তোমরা কি পেছনে ফিরে যাবে? যারা পেছনে ফিরে যাবে তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, শিগগির আল্লাহ তাদের প্রতিদান দেবেন’ (আলে ইমরান-১৪৪ আ.)। হযরত আবু বকর (রা)-এর মুখ থেকে এ আয়াতে করিমা শুনার সাথে সাথে সবাই থমকে গেলেন। হযরত ওমর (রা) সহ সকল সাহাবা সম্বিত ফিরে পেলেন। বুঝতেই পারছো হযরত আবু বকর কোন প্রকৃতির ও কোন পর্যায়ের মানুষ ছিলেন। এখন আমরা তাঁর বিষয়ে জানার চেষ্টা্ করবো। যিনি আশারায়ে মোবাশশারার বা বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রধান।

তোমরা অনেকেই হয়ত হযরত আবু বকর (রা)-এর আসল নাম জানোনা। তাঁর আসল নাম ছিলো আবদুল্লাহ। আর আবূ বকর হলো ডাক নাম। পরবর্তীকালে তিনি দু’টি সম্মানজনক উপাধিতে ভূষিত হন –সিদ্দিক ও আতীক। তাঁর আব্বার নাম ছিল উসমান এবং ডাক নাম ছিল আবু কূহাফা। তাঁর মাতার নাম ছিলো সালমা এবং ডাক নাম ছিলো উম্মুল খায়ের। তোমরা শুনলে আশ্চর্য হবে যে, তাঁরা সবাই ডাক নামেই বহুল পরিচিত হয়ে আছেন। ধরো হযরত আবু বকরের কথা –তাঁর আসল নাম যে আবদুল্লাহ তা আমরা কয় জনই বা জানি? তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে দু’বছরের ছোট ছিলেন অর্থাৎ তাঁর জন্ম সাল ৫৭২ খৃষ্টাব্দ।

তোমরা সকলেই জানো যে হযরত আবু বকরই পুরুষদের মধ্যে প্রথম মুসলমান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনিই খোলাফায়ে রাশেদার প্রথম খলিফা। তিনিই সাহাবাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি। অর্থাৎ তিনিই সব ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান।

হযরত আবু বকরের ইসলাম গ্রহণের সাথে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে আছে। তিনি মুহাম্মদ (সা) আবাল্য সংগী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যতগুলো বাণিজ্য সফরে গেছেন তার বেশীর ভাগ সফরে আবু বকরও (রা) সাথী ছিলেন। রাসূল (সা)-এর বয়স যখন ২০ বচর আর আবু বকর (রা)-এর ১৮ বছর তখন তাঁরা সিরিয়ায় বাণিজ্য সফরে যান। এই সফরকালে সিরিয়া সীমান্তে উপনীত হলে রাসূল (সা) একটি গাছের নীচে বিশ্রামের জন্য বসেন। সে সময়ে আবু বকর (রা) এলাকাটা দেখার জন্য এদিক ওদিক হাটাহাটি করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে এক খৃষ্টান পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ হয় তাঁর এবং ধর্মীয় কিছু আলাপ আলোচনা হয়। আলোচনা কালে পাদ্রী জানতে চান তার সঙ্গী যুবকটি কে। আবু বকর (রা) যুবক মুহাম্মদের (সা) পরিচয় দিলে পাদ্রী স্বগত বলে ওঠেন, ‘এ ব্যক্তি আরবদের নবী হবেন’। সেই যে কথাটি আবু বকর তাঁর অন্তরে গেঁথে নিলেন আর ভুলেননি। ফলে রাসূল (সা)-এর নবুয়াত প্রাপ্তির সাথে সাথে বিনা বাক্য ব্যয়ে তিনি ইসলাম কবূল করলেন। অবশ্য হযরত আবু বকর (রা) রাসূল ৯সা)-এর সব কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করেছেন। এ জন্যই রাসূল (সা) তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, ‘আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া প্রত্যেকের মধ্যে কিছু না কিছু দ্বিধার ভাব লক্ষ্য করেছি’।

ধরা যাক মি’রাজের ঘটনা –সেখানেও তো আবূ বকর (রা) এক অবিশ্বাস্য নজীর স্থাপন করেছেন। যখন অবিশ্বাসীরা তো বটেই এমন কি সাহাবীরা পর্যন্ত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দোল খাচ্ছিলেন, পরবর্তীতে অনেক দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা ইসলাম ত্যাগ করেছিল –সেই অস্থায়ও আবু বকর দ্বিধাহীন চিত্তে রাসূল (সা)-এর মি’রাজ কে সত্য বলে বিশ্বাস করেন। তোমাদেরকে বলে এখন ঠিক বুঝানো যাবে না যে, তখন অবস্থাটা কেমন ছিলো। একটু খুলে বলি –মি’রাজের কথা যখন রাসূল (সা) সবাইকে বললেন তখন, একটা হৈ হৈ পড়ে গেলো। একদল লোক এসে আবু বকর (রা) কে বললেন, ‘আবু বকর তোমার বন্ধুকে তুমি বিশ্বাস করো? তিনি বলছেন, তিনি নাকি গত রাতে বাইতুল মাকদাসে গেছেন, সেখানে তিনি নামায পড়েছেন, অতঃপর মক্কায় ফিরে এসেছেন’। উত্তরে আবূ বকর বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তিনি যদি এ কথা বলে থাকেন তাহলে সত্য কথাই বলেছেন। এতে অবাক হওয়ার কি দেখলে? তিনি তো আমাকে বলে থাকেন, তাঁর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে ওহী আসে মাত্র এক মুহুর্তের মধ্যে। তাঁর সে কথাও আমি বিশ্বাস করি। তোমরা যে ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছো এটা তার চেয়েও বিস্ময়কর’। এরপর তিনি সবাইকে নিয়ে রাসূল (সা)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আপনি কি গতরাতে বাইতুল মাকদাসে ভ্রমণ করেছেন, এ কথা বলেছেন?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। একথা আমি বলছি’ সংগে সংগে আবূ বকর (রা) বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল’। নবী (সা) বললেন, ‘হে আবু বকর, তুমি সিদ্দীক’। সেই থেকেই তিনি আবূ বকর সিদ্দীক নামে পরিচিত হলেন।

সাহাবীদের মধ্যে দানশীলতার ক্ষেত্রে হযরত আবূ বকরই (রা) ছিলেন সবার আগে। তিনি যখন ইসলাম কবূল করেন তখণ তাঁর হাতে চল্লিশ হাজার দিরহাম মওজুদ ছিলো। একবার ভেবে দেখো আজ থেকৈ দেড় হাজার বছর আগে চল্লিশ হাজার দিরহাম মানে এখনকার কতো টাকা। হযরত আবূ বকর আরবের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন। তাঁর পিতা আবূ কুহাফাও ছিলেন প্রভূত সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি। এই ধনী পিতার ধনী সন্তান ইসলাম কবূলের পর তার সমস্ত অর্থ সম্পদ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। তিনি তাঁর গচ্ছিত নগদ অর্থ সম্পদ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। তিনি তাঁর গচ্ছিত নগদ অর্থ দিয়ে কুরায়শদের হাতে নির্যাতিত লাঞ্চিত দাস-দাসীদের মুক্ত করেন। তার অর্থেই বিলাল, আম্মার, খাব্বাব, সুহাইব প্রমুখ মুক্ত জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

তিনি দানশীলতার ক্ষেত্রে এতো অধিক অগ্রসর ছিলেন যে, তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূল (সা)-এর আহবানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধের খরচের জন্য তাঁর বাড়িতে যা কিছু ছিলো নিয়ে আসেন। রাসূল (সা) অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাড়িতে ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু রেখে এসেছো কি? জবাবে আবূ বকর (রা) বললেন, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই তাদের জন্য যথেষ্ঠ’। এ জন্যই পরবর্তীকালে রাসূল (সা) তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। কিন্তু আবূ বকরের ইহসান এমন যে, তা পরিশোধ করতে আমি অক্ষম। তার প্রতিদান আল্লাহর দেবেন। তার অর্থ আমার উপকারে যেমন এসেছে, অন্য কারো অর্থ তেমন আসেনি’।

অপরের কাজ নিজ হাতে করে দেবার ক্ষেত্রেও আবূ বকর (রা) ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। হযরত আবূ বকরের খেলাফতকালে হযরত ওমর (রা) এক বৃদ্ধার কাজ করে দিতেন। কিন্তু একদিন কাজ করতে গিয়ে শুনলেন এক নেক্কার ব্যক্তি আগেই কাজগুলো করে গেছেন। ওমর (রা) অনেক চিন্তা করেও বের করতে পারলেন না কে এই ব্যক্তি। এরপর কয়েকদিন তিনি অতি ভোরে এসে দেখলেন পূর্বেই কাজগুলো সেই ব্যক্তি করে গেছেন। পরে তিনি জানলেন সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, মুসলিম দুনিয়ার খলিফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কিশোর বয়স থেকে শুরু করে ওফাতের আগে পর্যন্ত যিনি সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিটির নামও আবূ বকর ইবনে কুহাফা (রা)। আমি আগেই তোমাদের বলেছি রাসূলের নবুয়াত প্রাপ্তির পরে তো কথায় নেই। তোমরা সকলেই হয়তো জানো যে হিযরতের সময় রাসূল (সা)-এর সংগী ছিলেন হযরত আবূ বকর (রা)। আর এ জন্য তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। ঘটনাটি এমন হযরত মুহাম্মদ (সা) আবূ বকর (রা)-এর বাড়িতে এসে বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে হিযরত করার অনুমতি দিয়েছেন’। আবূ বকর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি আপনার সংগী হতে পারবো’। রাসূল (সা) বললেন, ‘হ্যাঁ, পারবে’। রাসূল (সা)-এর হা বোধন জবাবে আবূ বকর (রা) আনন্দে কেঁদে ফেললেন। এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই দেখুন, আমি এই উট দুটো এই কাজের জন্যই প্রস্তুত রেখেছি’।

মক্কা বিজয়ের পর প্রথম যে হজ্জ উদযাপন করা হয় তাতে আবূ বকর (রা) কে রাসূল (সা) ‘আমীরুল হজজ্’ নিযুক্ত করেন। হিজরাতের পর তিনি সকল অভিযানেই অংশগ্রহণ করেন এবং তাবুক অভিযানে তিনি মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী ছিলেন।

রাসূল (সা)-এর ওফাতের পর সর্ব সম্মতিক্রমে আবূ বকর (রা) খলীফা নির্বাচিত হন। অবশ্য এর আগে, রাসূল (সা) যখন রোগ শয্যায় ছিলেন তখন রাসূলেরই নির্দেশে মসজিদে নব্বীর নামাযের ইমমতির দায়িত্ব পালন করেন। খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন তা চিরকাল শাসকদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাকে খলীফঅ নির্বাচিত করা হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমি চাচ্ছিলাম, আপনাদের মধ্য থেকে অন্য কেউ এ দায়িত্ব গ্রহণ করুক। আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি চান আমার আচরণ রাসূলুল্লাহর (সা) আচরণের মত হোক, তাহলে আমাকে সেই পর্যায়ে পৌঁছার ব্যাপারে অক্ষম মনে করবেন। তিনি ছিলেন নবী। ভুলত্রুটি থেকে তিনি পবিত্র। তাঁর মতো আমার কোন বিশেষ মর্যাদা নেই। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনাদের কোন একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকেও উত্তম হওয়ার দাবী আমি করতে পারিনে।……..

আপনারা যদি দেখেন আমি সঠিক কাজ করছি, আমার সহায়তা করবেন। যদি দেখেন আমি বিপদগামী হচ্ছি, আমাকে সতর্ক করে দেবেন’।

সত্যি তিনি ছিলেন এক মহান খলীফা ‘কথা ও কাজের মধ্যে তাঁর কোন পার্থক্য ছিল না। তিনি নিজেকে খলীফা না মনে করে মনে করতেন জনগণের সেবক। আবার তিনি ইসলামী হুকুম আহকাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। আব্বাস ও জুবইয়ান গোত্রদ্বয় যাকাত দিতে অস্বীকার করলে, তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আল্লাহর কসম, রাসূলের (সা) যুগে উটের যে বাচ্চাটি যাকাত পাঠানো হতো এখন যদি কেউ তা দিতে অস্বীকার করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো’। এই খলীফাতুল মুসলেমীদের খলীফা হিসাবে উপাধি ছিল –খলীফাতু রাসূলুল্লাহ। আর অন্য তিনজনের উপাধি ছিল আমিরুল মু’মেনীন।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, হযরত আবূ বকর (রা)-এর চরিত্র ছিলো কঠিন ও কোমলের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁর জীবনে এমন এমন ঘটনা আছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। তোমরা বড় হলে তাঁর সম্বন্ধে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে।

আবূ বকর (রা) ৭ই জমাদিউল আওয়াল, ১৩ হিজরীতের জ্বরে পড়েন এবং ১৫ দিন রোগ ভোগের পর ২১শে জমাদিউল আউয়াল, বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। তিন মাস দশ দিন খিলাফতের পদে আসীন ছিলেন। রাসূল (সা)-এর পূর্ব পাশের তাঁর আবাল্য সহচর প্রিয় বন্ধু আবূ বকর (রা) কে দাফন করা হয়।

হযরত আবু বকর ইবন কুহাফা (রা.)
রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাতের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সমগ্র এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এলো। সাহাবা মণ্ডলী হতবাক হয়ে গেলেন, তাঁরা ধারণাই করতে পারছিলেন না যে, রাসুলুল্লাহ (সা) আর এ দুনিয়ায় নেই। এমনকি হযরত ওমর (রা.) পর্যন্ত তরবারি কোষমুক্ত করে ঘোষণা দিলেন, ‘যে বলবে রাসূলুল্লাহ (সা.) –এর ওফাত হয়েছে তাকে হত্যা করবো’। সবারই যখন অবস্থা এই তখন একজন মানুষই ছিলেন ধীর স্থির এবং অবিচল। তিনি হলেন রাসূল (সা)-এর প্রিয় বন্ধু, নিত্যদিনের সহচর হযরত আবূ বকর (রা)। হযরত ওমর (রা)-এর ঘোষণা শুনে আবু বকর (রা) এগিয়ে এলন এবং ঘোষণা দিলেন, ‘যারা মুহাম্মদের ইবাদত করতো তারা জেনে রাখো, মুহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহর ইবাদত করো তারা জেনে রাখো আল্লাহ চিরঞ্জীব –তাঁর মৃত্যু নেই’। এরপর তিনি পবিত্র কালামে পাকের এ আয়াত পাঠ করে শুনালেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ছাড়া আর কিছু নন। তাঁর পূর্বে বহু রাসূল অতিবাহিত হয়েছেন। তিনি যদি মারা যান বা নিহত হন তাহলে তোমরা কি পেছনে ফিরে যাবে? যারা পেছনে ফিরে যাবে তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, শিগগির আল্লাহ তাদের প্রতিদান দেবেন’ (আলে ইমরান-১৪৪ আ.)। হযরত আবু বকর (রা)-এর মুখ থেকে এ আয়াতে করিমা শুনার সাথে সাথে সবাই থমকে গেলেন। হযরত ওমর (রা) সহ সকল সাহাবা সম্বিত ফিরে পেলেন। বুঝতেই পারছো হযরত আবু বকর কোন প্রকৃতির ও কোন পর্যায়ের মানুষ ছিলেন। এখন আমরা তাঁর বিষয়ে জানার চেষ্টা্ করবো। যিনি আশারায়ে মোবাশশারার বা বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রধান।

তোমরা অনেকেই হয়ত হযরত আবু বকর (রা)-এর আসল নাম জানোনা। তাঁর আসল নাম ছিলো আবদুল্লাহ। আর আবূ বকর হলো ডাক নাম। পরবর্তীকালে তিনি দু’টি সম্মানজনক উপাধিতে ভূষিত হন –সিদ্দিক ও আতীক। তাঁর আব্বার নাম ছিল উসমান এবং ডাক নাম ছিল আবু কূহাফা। তাঁর মাতার নাম ছিলো সালমা এবং ডাক নাম ছিলো উম্মুল খায়ের। তোমরা শুনলে আশ্চর্য হবে যে, তাঁরা সবাই ডাক নামেই বহুল পরিচিত হয়ে আছেন। ধরো হযরত আবু বকরের কথা –তাঁর আসল নাম যে আবদুল্লাহ তা আমরা কয় জনই বা জানি? তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে দু’বছরের ছোট ছিলেন অর্থাৎ তাঁর জন্ম সাল ৫৭২ খৃষ্টাব্দ।

তোমরা সকলেই জানো যে হযরত আবু বকরই পুরুষদের মধ্যে প্রথম মুসলমান হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনিই খোলাফায়ে রাশেদার প্রথম খলিফা। তিনিই সাহাবাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি। অর্থাৎ তিনিই সব ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান।

হযরত আবু বকরের ইসলাম গ্রহণের সাথে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে আছে। তিনি মুহাম্মদ (সা) আবাল্য সংগী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) যতগুলো বাণিজ্য সফরে গেছেন তার বেশীর ভাগ সফরে আবু বকরও (রা) সাথী ছিলেন। রাসূল (সা)-এর বয়স যখন ২০ বচর আর আবু বকর (রা)-এর ১৮ বছর তখন তাঁরা সিরিয়ায় বাণিজ্য সফরে যান। এই সফরকালে সিরিয়া সীমান্তে উপনীত হলে রাসূল (সা) একটি গাছের নীচে বিশ্রামের জন্য বসেন। সে সময়ে আবু বকর (রা) এলাকাটা দেখার জন্য এদিক ওদিক হাটাহাটি করতে থাকেন। এরই এক পর্যায়ে এক খৃষ্টান পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ হয় তাঁর এবং ধর্মীয় কিছু আলাপ আলোচনা হয়। আলোচনা কালে পাদ্রী জানতে চান তার সঙ্গী যুবকটি কে। আবু বকর (রা) যুবক মুহাম্মদের (সা) পরিচয় দিলে পাদ্রী স্বগত বলে ওঠেন, ‘এ ব্যক্তি আরবদের নবী হবেন’। সেই যে কথাটি আবু বকর তাঁর অন্তরে গেঁথে নিলেন আর ভুলেননি। ফলে রাসূল (সা)-এর নবুয়াত প্রাপ্তির সাথে সাথে বিনা বাক্য ব্যয়ে তিনি ইসলাম কবূল করলেন। অবশ্য হযরত আবু বকর (রা) রাসূল ৯সা)-এর সব কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করেছেন। এ জন্যই রাসূল (সা) তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, ‘আমি যাকেই ইসলামের দাওয়াত দিয়েছি, একমাত্র আবু বকর ছাড়া প্রত্যেকের মধ্যে কিছু না কিছু দ্বিধার ভাব লক্ষ্য করেছি’।

ধরা যাক মি’রাজের ঘটনা –সেখানেও তো আবূ বকর (রা) এক অবিশ্বাস্য নজীর স্থাপন করেছেন। যখন অবিশ্বাসীরা তো বটেই এমন কি সাহাবীরা পর্যন্ত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দোল খাচ্ছিলেন, পরবর্তীতে অনেক দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা ইসলাম ত্যাগ করেছিল –সেই অস্থায়ও আবু বকর দ্বিধাহীন চিত্তে রাসূল (সা)-এর মি’রাজ কে সত্য বলে বিশ্বাস করেন। তোমাদেরকে বলে এখন ঠিক বুঝানো যাবে না যে, তখন অবস্থাটা কেমন ছিলো। একটু খুলে বলি –মি’রাজের কথা যখন রাসূল (সা) সবাইকে বললেন তখন, একটা হৈ হৈ পড়ে গেলো। একদল লোক এসে আবু বকর (রা) কে বললেন, ‘আবু বকর তোমার বন্ধুকে তুমি বিশ্বাস করো? তিনি বলছেন, তিনি নাকি গত রাতে বাইতুল মাকদাসে গেছেন, সেখানে তিনি নামায পড়েছেন, অতঃপর মক্কায় ফিরে এসেছেন’। উত্তরে আবূ বকর বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তিনি যদি এ কথা বলে থাকেন তাহলে সত্য কথাই বলেছেন। এতে অবাক হওয়ার কি দেখলে? তিনি তো আমাকে বলে থাকেন, তাঁর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে ওহী আসে। আকাশ থেকে ওহী আসে মাত্র এক মুহুর্তের মধ্যে। তাঁর সে কথাও আমি বিশ্বাস করি। তোমরা যে ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করছো এটা তার চেয়েও বিস্ময়কর’। এরপর তিনি সবাইকে নিয়ে রাসূল (সা)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা) আপনি কি গতরাতে বাইতুল মাকদাসে ভ্রমণ করেছেন, এ কথা বলেছেন?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। একথা আমি বলছি’ সংগে সংগে আবূ বকর (রা) বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল’। নবী (সা) বললেন, ‘হে আবু বকর, তুমি সিদ্দীক’। সেই থেকেই তিনি আবূ বকর সিদ্দীক নামে পরিচিত হলেন।

সাহাবীদের মধ্যে দানশীলতার ক্ষেত্রে হযরত আবূ বকরই (রা) ছিলেন সবার আগে। তিনি যখন ইসলাম কবূল করেন তখণ তাঁর হাতে চল্লিশ হাজার দিরহাম মওজুদ ছিলো। একবার ভেবে দেখো আজ থেকৈ দেড় হাজার বছর আগে চল্লিশ হাজার দিরহাম মানে এখনকার কতো টাকা। হযরত আবূ বকর আরবের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন। তাঁর পিতা আবূ কুহাফাও ছিলেন প্রভূত সম্পদের অধিকারী ব্যক্তি। এই ধনী পিতার ধনী সন্তান ইসলাম কবূলের পর তার সমস্ত অর্থ সম্পদ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। তিনি তাঁর গচ্ছিত নগদ অর্থ সম্পদ, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেন। তিনি তাঁর গচ্ছিত নগদ অর্থ দিয়ে কুরায়শদের হাতে নির্যাতিত লাঞ্চিত দাস-দাসীদের মুক্ত করেন। তার অর্থেই বিলাল, আম্মার, খাব্বাব, সুহাইব প্রমুখ মুক্ত জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

তিনি দানশীলতার ক্ষেত্রে এতো অধিক অগ্রসর ছিলেন যে, তাবুক যুদ্ধের সময় রাসূল (সা)-এর আহবানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধের খরচের জন্য তাঁর বাড়িতে যা কিছু ছিলো নিয়ে আসেন। রাসূল (সা) অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করেন, ‘বাড়িতে ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু রেখে এসেছো কি? জবাবে আবূ বকর (রা) বললেন, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই তাদের জন্য যথেষ্ঠ’। এ জন্যই পরবর্তীকালে রাসূল (সা) তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। কিন্তু আবূ বকরের ইহসান এমন যে, তা পরিশোধ করতে আমি অক্ষম। তার প্রতিদান আল্লাহর দেবেন। তার অর্থ আমার উপকারে যেমন এসেছে, অন্য কারো অর্থ তেমন আসেনি’।

অপরের কাজ নিজ হাতে করে দেবার ক্ষেত্রেও আবূ বকর (রা) ইতিহাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। হযরত আবূ বকরের খেলাফতকালে হযরত ওমর (রা) এক বৃদ্ধার কাজ করে দিতেন। কিন্তু একদিন কাজ করতে গিয়ে শুনলেন এক নেক্কার ব্যক্তি আগেই কাজগুলো করে গেছেন। ওমর (রা) অনেক চিন্তা করেও বের করতে পারলেন না কে এই ব্যক্তি। এরপর কয়েকদিন তিনি অতি ভোরে এসে দেখলেন পূর্বেই কাজগুলো সেই ব্যক্তি করে গেছেন। পরে তিনি জানলেন সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, মুসলিম দুনিয়ার খলিফা হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রা)।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কিশোর বয়স থেকে শুরু করে ওফাতের আগে পর্যন্ত যিনি সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিটির নামও আবূ বকর ইবনে কুহাফা (রা)। আমি আগেই তোমাদের বলেছি রাসূলের নবুয়াত প্রাপ্তির পরে তো কথায় নেই। তোমরা সকলেই হয়তো জানো যে হিযরতের সময় রাসূল (সা)-এর সংগী ছিলেন হযরত আবূ বকর (রা)। আর এ জন্য তিনি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন। ঘটনাটি এমন হযরত মুহাম্মদ (সা) আবূ বকর (রা)-এর বাড়িতে এসে বললেন, ‘আল্লাহ আমাকে হিযরত করার অনুমতি দিয়েছেন’। আবূ বকর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি আপনার সংগী হতে পারবো’। রাসূল (সা) বললেন, ‘হ্যাঁ, পারবে’। রাসূল (সা)-এর হা বোধন জবাবে আবূ বকর (রা) আনন্দে কেঁদে ফেললেন। এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই দেখুন, আমি এই উট দুটো এই কাজের জন্যই প্রস্তুত রেখেছি’।

মক্কা বিজয়ের পর প্রথম যে হজ্জ উদযাপন করা হয় তাতে আবূ বকর (রা) কে রাসূল (সা) ‘আমীরুল হজজ্’ নিযুক্ত করেন। হিজরাতের পর তিনি সকল অভিযানেই অংশগ্রহণ করেন এবং তাবুক অভিযানে তিনি মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী ছিলেন।

রাসূল (সা)-এর ওফাতের পর সর্ব সম্মতিক্রমে আবূ বকর (রা) খলীফা নির্বাচিত হন। অবশ্য এর আগে, রাসূল (সা) যখন রোগ শয্যায় ছিলেন তখন রাসূলেরই নির্দেশে মসজিদে নব্বীর নামাযের ইমমতির দায়িত্ব পালন করেন। খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দেন তা চিরকাল শাসকদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাকে খলীফঅ নির্বাচিত করা হয়েছে। আল্লাহর কসম, আমি চাচ্ছিলাম, আপনাদের মধ্য থেকে অন্য কেউ এ দায়িত্ব গ্রহণ করুক। আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা যদি চান আমার আচরণ রাসূলুল্লাহর (সা) আচরণের মত হোক, তাহলে আমাকে সেই পর্যায়ে পৌঁছার ব্যাপারে অক্ষম মনে করবেন। তিনি ছিলেন নবী। ভুলত্রুটি থেকে তিনি পবিত্র। তাঁর মতো আমার কোন বিশেষ মর্যাদা নেই। আমি একজন সাধারণ মানুষ। আপনাদের কোন একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকেও উত্তম হওয়ার দাবী আমি করতে পারিনে।……..

আপনারা যদি দেখেন আমি সঠিক কাজ করছি, আমার সহায়তা করবেন। যদি দেখেন আমি বিপদগামী হচ্ছি, আমাকে সতর্ক করে দেবেন’।

সত্যি তিনি ছিলেন এক মহান খলীফা ‘কথা ও কাজের মধ্যে তাঁর কোন পার্থক্য ছিল না। তিনি নিজেকে খলীফা না মনে করে মনে করতেন জনগণের সেবক। আবার তিনি ইসলামী হুকুম আহকাম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। আব্বাস ও জুবইয়ান গোত্রদ্বয় যাকাত দিতে অস্বীকার করলে, তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘আল্লাহর কসম, রাসূলের (সা) যুগে উটের যে বাচ্চাটি যাকাত পাঠানো হতো এখন যদি কেউ তা দিতে অস্বীকার করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবো’। এই খলীফাতুল মুসলেমীদের খলীফা হিসাবে উপাধি ছিল –খলীফাতু রাসূলুল্লাহ। আর অন্য তিনজনের উপাধি ছিল আমিরুল মু’মেনীন।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, হযরত আবূ বকর (রা)-এর চরিত্র ছিলো কঠিন ও কোমলের সমন্বয়ে গঠিত। তাঁর জীবনে এমন এমন ঘটনা আছে যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। তোমরা বড় হলে তাঁর সম্বন্ধে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে।

আবূ বকর (রা) ৭ই জমাদিউল আওয়াল, ১৩ হিজরীতের জ্বরে পড়েন এবং ১৫ দিন রোগ ভোগের পর ২১শে জমাদিউল আউয়াল, বয়স হয়েছিলো ৬৩ বছর। তিন মাস দশ দিন খিলাফতের পদে আসীন ছিলেন। রাসূল (সা)-এর পূর্ব পাশের তাঁর আবাল্য সহচর প্রিয় বন্ধু আবূ বকর (রা) কে দাফন করা হয়।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি