একমাত্র ইসলামই আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান। তাই্ইসলামের প্রতিটি বিধানই নির্ভুল, কল্যাণকর ও সকল যুগের উপযোগী। ইসলামের বহুবিধ বিধানের মধ্যে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে পর্দার বিধান। পারিবারিক সংহতি ও সামাজিক পবিত্রতা সংরক্ষণে পর্দার বিধানের কোন বিকল্প নেই।

আলকুরআনের সূরাহ আলআহযাব ও সূরাহ আন্নূরের বিভিন্ন আয়াতে পর্দার বিধানগুলো ছড়িয়ে রয়েছে। এই পুস্তিকায় আমি সেই আয়াতগুলো সংকলিত করেছি। আর যাঁদেরকে উপলক্ষ করে এই বিধান নাযিল হয়েছে তাঁদের আমলের উদাহরণও পেশ করার চেষ্টা করেছি।
আরো উল্লেখ্য যে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ) ছিলেন একজন উঁচু মাপের মুজাদ্দিদ। তিনি না ছিলেন স্থূল দৃষ্টি সম্পন্ন, না ছিলেন আপোষকামী। একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ হাছিলকে সামনে রেখে কুণ্ঠাহীন চিত্তে তিনি ইসলামের বক্তব্যগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁকে ইসলামের সামগ্রিকতার নিরিখে বিভিন্ন বিষয়ের সূক্ষ্ম ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পেশ করার অসাধারণ যোগ্যতা দান করেছিলেন। তাই ‘পর্দার আসল রূপ’ পুস্তিকায় আমি প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছি তাঁরই অনবদ্য তাফসীর তাফহীমুল কুরআন থেকে।
- লেখক

 

সূচি

১। মহিলারা প্রয়োজনে ভিন্ পুরুষের সাথে কথা বলবেন, কিন্তু মিহি স্বরে বলবেন না।
২। মহিলাদের কর্তব্য হচ্ছে গৃহাংগনেই অবস্থান করা, সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো নয়।
৩। কোন মহিলার কাছে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে হবে।
৪। মহিলাদের ঘরে তাঁদের আববা, তাঁদের ছেলে, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, ঘনিষ্ঠ মহিলারা ও মালিকানাধীন ব্যক্তিরা প্রবেশ করতে পারবে।
৫। মহিলারা তাঁদের পরিহিত জিলবাবের (বড়ো চাদরের) একাংশ তাঁদের চেহারার দিকে ঝুলিয়ে দেবেন।
৬। কেউ গৃহবাসীদের সম্মতি না পেয়ে ও তাদেরকে সালাম না জানিয়ে কারো ঘরে প্রবেশ করবেন না।
৭। গৃহে কাউকে না পেলে বিনা অনুমতিতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করবেন না।
৮। গৃহবাসীদের পক্ষ থেকে যদি বলা হয় ‘এখন চলে যান’, চলে আসতে হবে।
৯। লোক বসবাস করে না এমন ঘরে কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলে তা আনার জন্য সেই ঘরে প্রবেশ করা যাবে।
১০। মুমিন পুরুষেরা তাঁদের দৃষ্টি সংযত রাখবেন।
১১। মুমিন মহিলারা তাঁদের দৃষ্টি সংযত রাখবেন।
১২। মহিলারা ভিন্ পুরুষের সামনে তাঁদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করবেন না। যা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা ক্ষমাযোগ্য।
১৩। মহিলারা তাঁদের উড়না দিয়ে তাঁদের বুক ঢেকে রাখবেন।
১৪। মহিলারা তাঁদের স্বামী, তাঁদের আববা, তাঁদের শ্বশুর, তাঁদের ছেলে, তাঁদের স্বামীর ছেলে, তাঁদের ভাই, তাঁদের ভাইয়ের ছেলে, তাঁদের বোনের ছেলে, তাঁদের ঘনিষ্ঠ স্ত্রীলোক, তাঁদের মালিকানাধীন ব্যক্তি, কামনাহীন অধীন পুরুষ ও নারীদের গোপন বিষয় বুঝে না এমন বালকের সম্মুখে ছাড়া তাঁদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করবেন না।
১৫। মহিলারা এমনভাবে পা মেরে চলবেন না যাতে তাঁদের লুকানো সাজ-সৌন্দর্যের কথা লোকেরা জেনে ফেলে।
১৬। মালিকানাধীন ব্যক্তি ও না-বালেগ সন্তানেরা তিনটি সময়ে অনুমতি না নিয়ে গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করবে না।
১৭। সন্তানেরা বালেগ হয়ে গেলে সকল সময় বড়োদের মতোই অনুমতি নিয়ে আববা-আম্মার কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
১৮। বৃদ্ধারা যদি সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছাড়া তাঁদের চাদর নামিয়ে রাখেন এতে কোন দোষ নেই। তবে বৃদ্ধারাও যদি লজ্জাশীলতা অবলম্বন করেন সেটাই তাঁদের জন্য উত্তম।
১৯। উপসংহার

 

পর্দার আসল রূপ
১। মহিলারা প্রয়োজনে ভিন্ পুরুষের সাথে কথা বলবেন, কিন্তু মিহি স্বরে বলবেন না।
আল্লাহ বলেন,
ينِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ اِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِىْ فِىْ قَلْبِه مَرَضٌ وَّقُلْنَ قَوْلاً مَّعْرُوْفًا-
(আলআহযাব \ ৩২)
‘‘ওহে নবীর স্ত্রীরা, তোমরা তো অন্য কোন মহিলার মতো নও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তাহলে মিহি স্বরে কথা বলো না যা অন্তরে ব্যাধি আছে এমন লোককে প্রলুব্ধ করবে, বরং সোজা-স্পষ্ট কথা বল।’’
ইসলাম মহিলাদেরকে প্রয়োজনে ভিন্ পুরুষের সাথে কথা বলার অনুমতি দিয়েছে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীরা বহু পুরুষের কাছে দীনী বিষয় বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু প্রয়োজন নেই এমন ক্ষেত্রে মহিলাদের কণ্ঠস্বর ভিন্ পুরুষকে শুনানো অপছন্দ করা হয়েছে। সেই জন্যই মহিলাদেরকে আযান দিতে দেয়া হয়নি। সালাতে ইমাম ভুল করলে পুরুষদেরকে ‘‘আল্লাহু আকবার’’ কিংবা ‘‘সুবহানাল্লাহ’’ উচ্চারণ করে লোকমা দিতে বলা হয়েছে। মহিলাদেরকে বলা হয়েছে হাতের ওপর হাত মেরে শব্দ সৃষ্টি করে লোকমা দিতে।
উপরোক্ত আয়াতটি পর্দার বিধান সংক্রান্ত অনেকগুলো আয়াতের মধ্যে প্রথম আয়াত। এই আয়াত ও পরবর্তী আরো কয়েকটি আয়াতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। ‘‘কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে সকল মুসলিম পরিবারের সংশোধন। নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করার উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর থেকে এই পবিত্র জীবন ধারার সূচনা হবে তখন অন্য সকল মুসলিম পরিবারের মহিলারা আপনা আপনি তা অনুসরণ করতে থাকবে। কারণ এই ঘরই তো ছিলো তাঁদের জন্য আদর্শ ঘর।’’ দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), (সূরাহ আলআহযাব, টীকা-৪৬)।
২। মহিলাদের কর্তব্য হচ্ছে গৃহাংগনেই অবস্থান করা, সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো নয়।
আল্লাহ বলেন,
وَقَرْنَ فِىْ بُيُوْتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْاُلى وَاَقِمْنَ الصَّلوةَ وَاَتِيْنَ الزَّكوةَ وَاَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَه ط اِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا-
(আলআহযাব \ ৩৩)
‘‘তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর, পূর্বতন জাহিলিয়াহর ধাঁচে সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়োনা। সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে চল। আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে- নবী পরিবার থেকে- ময়লা দূর করতে ও তোমাদেরকে পুরোপুরি পাক-পবিত্র করতে।’’
‘‘আল্লাহ মহিলাদেরকে যেই কার্যধারা থেকে বিরত রাখতে চান তা হচ্ছে, তাদের নিজেদের সাজ-সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে ঘর থেকে বের হওয়া। তিনি তাদেরকে আদেশ দেন, নিজেদের ঘরে অবস্থান কর। কারণ তোমাদের আসল কাজ রয়েছে ঘরে, বাইরে নয়। কিন্তু যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে এমনভাবে বের হয়োনা যেমন জাহিলী যুগে মহিলারা বের হতো। প্রসাধন ও সাজসজ্জা করে, সুশোভন অলংকার ও অাঁটসাট বা হালকা মিহিন পোষাকে সজ্জিত হয়ে, চেহারা ও দেহের সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে, গর্ব ও আড়ম্বরের সাথে চলা কোন মুসলিম সমাজের মহিলাদের কাজ নয়। এইগুলো জাহিলিয়াহর রীতিনীতি। ইসলামে এই সব চলতে পারে না।’’ দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), সূরাহ আলআহযাব, টীকা-৪৯।
৩। কোন মহিলার কাছে কিছু চাইতে হলে পর্দার আড়াল থেকে চাইতে হবে।
আল্লাহ বলেন,
০০০ وَاِذَا سَأَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَسْئَلُوْاهُنَّ مِنْ وَّرَاءِ حِجَابٍ ط ذلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّ ط
(আলআহযাব \ ৫৩)
‘‘এবং যখন তাদের কাছে (নবীর স্ত্রীদের কাছে) কিছু চাইতে হয় তা চাও পর্দার আড়াল থেকে। এটি তোমাদের ও তাদের মনের জন্য পবিত্রতম পদ্ধতি।’’
‘‘এই নির্দেশ আসার পর নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের ঘরের দরজায় পর্দা লটকিয়ে দেয়া হয়। আর যেহেতু নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর ছিলো সকল মুসলিমের জন্য আদর্শ ঘর তাই সেই ঘরের অনুকরণে তাঁরা নিজেদের ঘরের দরজায় পর্দা লটকিয়ে দেন।’’ দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), সূরাহ আলআহযাব, টীকা-৯৮।
৪। মহিলাদের ঘরে তাঁদের আববা, তাঁদের ছেলে, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, ঘনিষ্ঠ মহিলারা ও মালিকানাধীন ব্যক্তিরা (দাস-দাসী) প্রবেশ করতে পারবে।
আল্লাহ বলেন,
لاَجُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِىْ ابَائِهِنَّ وَلآَاَبْنَائِهِنَّ وَلآَ اِخْوَانِهِنَّ وَلآَاَبْنَاءِ اِخْوَانِهِنَّ وَلاَ اَبْناءِ اَخَوَتِهِنَّ وَلآَ نِسَائِهِنَّ وَلاَ مَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ ج وَاتَّقِيْنَ اللهَ ط اِنَّ اللهَ كَانَ عَلى كُلِّ شَىْءٍ شَهِيْدًا-
(আলআহযাব \ ৫৫)
‘‘তাদের আববা (চাচা, মামা, দাদা, দাদার আববা, নানা, নানার আববা শামিল), তাদের ছেলে (নাতি, নাতির ছেলে, দৌহিত্র ও দৌহিª্রত্রর ছেলে শামিল), তাদের ভাই (বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয় ও দুধ ভাই শামিল), তাদের ভাইয়ের ছেলে (তাদের নাতি ও নাতির ছেলে শামিল), তাদের বোনের ছেলে (তাদের দৌহিত্র ও দৌহিত্রের ছেলে শামিল), তাদের ঘনিষ্ঠ (মেলামেশার) মহিলারা ও তাদের মালাকানাধীন ব্যক্তিরা তাদের ঘরে প্রবেশ করলে কোন দোষ নেই।’’
৫। মহিলারা তাঁদের পরিহিত জিলবাবের (বড়ো চাদরের) একাংশ তাঁদের চেহারার দিকে ঝুলিয়ে দেবেন।
আল্লাহ বলেন
يَاَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَبَنتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلاَبيْبِهِنَّ ط ذلِكَ اَدْنى اَنْ يُّعْرَفْنَ فَلاَيُؤْذَيْنَ ط
(আলআহযাব \ ৫৯)
‘‘ওহে নবী, তোমার স্ত্রীদেরকে, মেয়েদেরকে ও মুমিনদের মহিলাদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ ওপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়। এটি অধিক উপযুক্ত পদ্ধতি যাতে তাদেরকে চেনা যায় ও কষ্ট দেয়া না হয়।’’
এই আয়াত জিলবাব পরিধানের নির্দেশ সম্বলিত আয়াত নয় বরং পরিহিত জিলবাবের একটি অংশ ওপর থেকে ঝুলিয়ে দেবার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই আয়াত নাযিলের পূর্বেই মুসলিম মহিলারা জিলবাব পরা শুরু করেছেন। আর যাঁরা জিলবাব পরতেন তাঁরা শুধু নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীরাই ছিলেন না, সকল মহিলাই এই কাজে শামিল ছিলেন। ‘‘নিসাইল মু’মিনীন’’ বলে তাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এই আয়াতে। এই আয়াত আরো প্রমাণ করে যে পূর্ববর্তী আয়াতগুলোতে নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে সম্বোধন করে পর্দা সংক্রান্ত যেইসব বিধান নাযিল করা হয়েছে সেইগুলোও মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত সকল মহিলার জন্যই প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য যে পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর মুসলিম মহিলারা জিলবাব পরিধান না করে ঘর থেকে বের হতেন না এবং জিলবাবের একাংশ দিয়ে তাঁরা তাঁদের চেহারা ঢেকে পর পুরুষের দৃষ্টি থেকে হিফাজাত করতেন। এই বিষয়ে নারীশ্রেষ্ঠা উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহর (রা) আমল উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিদ্যমান।
আয়িশাহ (রা) ছিলেন তাফসীরবিদ, হাদীসবিদ ও ফিকাহবিদ। আলকুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে তিনি অসাধারণ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন। ইসলামী জীবন বিধানের অনেক কিছু মুসলিম উম্মাহ তাঁর মাধ্যমেই জানতে পেরেছে। তাঁর সম্পর্কে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,
كَمُلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيْرٌ وَلَمْ يَكْمُلْ مِنَ النِّسَاءِ اِلاَّ مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ اسِيَةُ اِمْرَأَةُ فِرْعَوْنَ وَفَضْلُ عَائِشَةَ عَليَ النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثِّرِيْدِ عَلى سَائِرِ الطَّعَامِ-
আবু মূসা আলআশ্য়ারী (রা),
(সহীহ আলবুখারী)
‘‘পুরুষদের অনেকেই কামালিয়াত অর্জন করেছে। মহিলাদের মধ্যে তা অর্জন করেছেন মারইয়াম বিনতু ইমরান ও ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়াহ। আর যাবতীয় খাদ্যের ওপর যেমন সারীদের (এক প্রকার উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু খাদ্য) মর্যাদা, সকল নারীর ওপর তেমন মর্যাদা আয়িশাহর।’’
এই নারীশ্রেষ্ঠা আয়িশাহ (রা) তাঁর পরিহিত জিলবাবের একাংশকে নিকাব বা চেহারার আবরণ বানিয়ে নিতেন।
বানুল মুস্তালিক যুদ্ধ শেষে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় ফেরার পথে এক মানযিলে সৈন্যদেরকে নিয়ে বিশ্রাম করেন। সেই সফরে উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (রা) তাঁর সাথে ছিলেন। বেশ রাত থাকতেই কাফিলা সেখান থেকে রওয়ানা হওয়ার প্রস্ত্ততি নেয়। এই সময় আয়িশাহ (রা) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার জন্য একটু দূরে যান। প্রয়োজন সেরে হাওদাজে ফিরে এসে দেখেন তাঁর হার গলায় নেই। হার খুঁজতে তিনি হাওদাজ ছেড়ে চলে যান। এই দিকে কাফিলা রওয়ানা হয়ে যায়। লোকেরা তাঁর হাওদাজ উটের পিঠে বসিয়ে দেয়। কিন্তু তারা টেরই পায়নি যে তিনি হাওদাজে বসা নেই। কাফিলা চলে গেলে তিনি এ স্থানে ফিরে এসে বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সাহাবী সাফওয়ান ইবনু মুয়াত্তাল আস্সুলামী (রা) সৈন্য বাহিনীর পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন। তিনি রাত্রি শেষে রওয়ানা হয়ে সকাল বেলা ঐ স্থানে এসে পৌঁছেন যেখানে আয়িশাহ (রা) ঘুমিয়ে ছিলেন। পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আয়িশাহ (রা) বলেন,
فَعَرَفَنِيْ حِيْنَ رَأنِيْ وَكَانَ قَدْ رَأنِيْ قَبْلَ الْحِجَابِ فَاسْتَيْقَظْتُ بِاِسْتِرْجَاعِه حِيْنَ عَرَفَنِيْ فَخَمَرْتُ وَجْهِيْ بِجِلْبَابِيْ-
‘‘তিনি আমাকে দেখেই চিনে ফেলেন। কারণ পর্দার বিধান প্রবর্তনের পূর্বে তিনি আমাকে দেখেছিলেন। আমাকে চিনতে পেরেই তিনি বিস্মিত হয়ে উচ্চারণ করেন ‘‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’’ তাঁর কণ্ঠস্বর আমার কানে যেতেই আমি জেগে উঠি ও আমার চাদর দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।’’
(সহীহ মুসলিম, সহীহ আলবুখারী, মুসনাদে আহমাদ)
৬। কেউ গৃহবাসীদের সম্মতি না পেয়ে ও তাদেরকে সালাম না জানিয়ে কারো ঘরে প্রবেশ করবেন না।
আল্লাহ বলেন,
يَآَيُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا لاَ تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلى اَهْلِهَا ط ذلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ-
(আন্নূর \ ২৭)
‘‘ওহে যারা ঈমান এনেছো, নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে গৃহবাসীদের সম্মতি না পেয়ে ও তাদেরকে সালাম না জানিয়ে প্রবেশ করোনা। এটি তোমাদের জন্য উত্তম বিধান। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।’’
৭। গৃহে কাউকে না পেলে বিনা অনুমতিতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করবেন না।
আল্লাহ বলেন,
০০০ فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِيْهَآ اَحَدًا فَلاَ تَدْخُلُوْاهَا حَتّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ج০০০
(আন্নূর \ ২৮)
‘‘সেখানে কাউকে না পেলে বিনা অনুমতিতেই তাতে প্রবেশ করো না।’’
৮। গৃহবাসীদের পক্ষ থেকে যদি বলা হয়, ‘‘এখন চলে যান’’, চলে আসতে হবে।
আল্লাহ বলেন,
০০০ وَاِنْ قِيْلَ لَكُمْ ارْجِعُوْا فَاِرْجِعُوْا هُوَ اَزْكى لَكُمْ ط وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ-
(আন্নূর \ ২৮)
‘‘আর যদি তোমাদেরকে বলা হয় ‘‘এখন যান’’ তাহলে ফিরে যাবে। এটি তোমাদের জন্য বিশুদ্ধ নীতি। আর তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ্ তা ভালো করেই জানেন।’’
৯। লোক বসবাস করে না এমন ঘরে কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকলে তা আনার জন্য সেই ঘরে প্রবেশ করা যাবে।
আল্লাহ বলেন,
لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ اَنْ تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ فِيْهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ ط وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ-
(আন্নূর \ ২৯)
‘‘এমন ঘরে প্রবেশ করা তোমাদের জন্য দোষের নয় যেখানে কেউ বাস করে না অথচ সেখানে কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে। আর তোমরা যা কিছু প্রকাশ কর ও যা কিছু গোপন কর আল্লাহ সবই জানেন।’’
১০। মুমিন পুরুষেরা তাঁদের দৃষ্টি সংযত রাখবেন।
আল্লাহ বলেন,
قُلْ لِلْمُؤْمُنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ اَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ط ذلِكَ اَزْكى لَهُمْ ط اِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ م بِمَا يَصْنَعُوْنَ-
(আন্নূর \ ৩০)
‘‘মুমিন পুরুষদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজাত করে। এটি তাদের জন্য বিশুদ্ধ নীতি। তারা যা কিছু করে আল্লাহ্ তা জানেন।’’
আপন স্ত্রী কিংবা কোন মুহাররাম মহিলাকে ছাড়া অপর কোন মহিলাকে নজর ভরে দেখা কোন পুরুষের জন্য জায়েয নয়। একবার নজর পড়া ক্ষমাযোগ্য। আবার নজর দেয়া ক্ষমাযোগ্য নয়। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ধরনের দেখাকে চোখের যিনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলোর মাধ্যমে যিনা করে থাকে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা। ফুসলানো কণ্ঠের যিনা। তৃপ্তির সাথে পর নারীর কথা শুনা কানের যিনা। হাত দ্বারা স্পর্শ করা হাতের যিনা। অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের যিনা। যিনার এই সব অনুসঙ্গ পালিত হওয়ার পর লজ্জাস্থান তাকে পূর্ণতা দান করে কিংবা পূর্ণতা দান করা থেকে বিরত থাকে।’’
(সহীহ মুসলিম, সহীহ আলবুখারী, সুনানু আবী দাউদ)
উল্লেখ্য যে কোন কোন তাত্ত্বিক ব্যক্তি এই আয়াতটিকে সামনে রেখে বলতে চান যে মহিলাদের চেহারাই যদি খোলা না থাকে তাহলে তো এই আয়াতটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। মহিলাদের চেহারা খোলার রাখার অনুমতি আছে বলেই পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে। তাঁরা তাঁদের বক্তব্যকে শক্তিশালী করার জন্য বিদায় হাজের সময়ে সংঘটিত দুইটি ঘটনাকেও তাঁদের পক্ষে ব্যবহার করার প্রয়াস চালান। প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মহিলারা তাঁদের চেহারা ঢেকে রাখবেন বটে, কিন্তু তাঁদের চোখ তো আবরণমুক্ত থাকবে। ফলে চোখাচোখির ব্যাপার ঘটতে পারে। তদুপরি অমুসলিম মহিলারা তো তাদের চেহারা খোলাই রাখবে। অতএব দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ অবশ্যই অর্থহীন নয়। বিদায় হাজের সময় সংঘটিত ঘটনা দুইটি এই ভাইদের বক্তব্য শক্তিশালী করে না। বরং তাঁদের বিরুদ্ধে বুমেরাং হয়।
প্রথম ঘটনা
‘‘বিদায় হাজের সময় নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচাতো ভাই আলফাদল ইবনুল আববাস (তিনি তখন একজন উঠতি-তরুণ) মাশআরুল হারাম থেকে ফেরার পথে নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে উটের ওপর বসা ছিলেন। পথে মহিলারা যাচ্ছিলো। আলফাদল তাদেরকে দেখতে লাগলেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের ওপর হাত রেখে তাঁর মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন।’’
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা), (সুনানী আবী দাউদ)
দ্বিতীয় ঘটনা
‘‘আল খাসয়াম গোত্রের একজন মহিলা পথে রাসূলুল্লাহকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করেন। আলফাদল ইবনুল আববাস (রা) এক দৃষ্টিতে মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকেন। নবী (সা) তাঁর মুখ ধরে তাঁর মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন।’’
(সহীহ আলবুখারী, জামে আত্ তিরমিযী, সুনানু আবী দাউদ)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইবারই উঠতি-তরুণ আলফাদল ইবনুল আববাসের মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন, কিন্তু মহিলাদেরকে তাঁদের চেহারা ঢেকে নিতে বলেননি।
কারণ?
এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ রাববুল আলামীনের ইংগিতেই ইতিপূর্বে তিনি মহিলাদেরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ইহরাম পরিহিতা মহিলারা নিকাব পরবেন না। উপরোক্ত ঘটনা দুইটিতে মহিলারা ছিলেন হাজযাত্রী ও ইহরাম পরিহিতা। কাজেই আলফাদল ইবনুল আববাসের (রা) দৃষ্টির মুকাবিলায় তিনি তাঁদেরকে তাঁদের চেহারা ঢাকার নির্দেশ দেননি।
লক্ষ্য করুন। ইহরাম পরিহিতা মহিলাদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন,
০০০ وَلاَ تَنْتَقِبُ الْمَرْأـةُ الْمُحْرِمَةُ وَلاَ تَلْبِسُ الْقُفَّازِيْنَ-
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা), (সহীহ আলবুখারী)
‘‘ইহরাম পরিহিতা মহিলা নিকাব পরবে না ও হাত মোজা পরবে না।’’
আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন,
০০০ وَلاَ تَتَنَقَّبُ الْمَرْأـةُ الْمُحْرِمَةُ وَلاَ تَلْبَسِ الْقُفَّازَيْنِ-
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা), (জামে আত্ তিরমিযী)
‘‘ইহরাম পরিহিতা মহিলা নিকাব পরবে না ও হাত মোজা পরবে না।’’
اِنَّه سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَنْهَى النِّسَاءَ فِيْ اِحْرَامِهِنَّ عَنِ القُفَّازَيْنِ وَالنِّقَابِ وَمَا مَسَّ الْوَرَسُ وَالْزَاعَفْرَانِ مِنَ الثِّيَابِ-
আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা), (সুনানু আবী দাউদ)
‘‘তিনি রাসূলুল্লাহকে (সা) ইহরাম পরিহিতা মহিলাদের হাত মোজা, নিকাব, ওয়ারাস ও জা’ফরান রঞ্জিত পোষাক পরিধান নিষেধ করতে শুনেছেন।’’
১১। মুমিন মহিলারা তাঁদের দৃষ্টি সংযত রাখবেন।
আল্লাহ বলেন,
وَقُلْ لِّلْمُؤْمِنتِ يَغْضُضْنَ مِنْ اَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَجْنَ فُرُوْجَهُنَّ-
(আন্নূর \ ৩১)
‘‘মুমিন মহিলাদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজাত করে।’’
উল্লেখ্য যে ‘‘মহিলাদের জন্যও পুরুষদের মতো দৃষ্টি সংযত রাখার বিধান দেয়া হয়েছে। তবে পুরুষদেরকে দেখার ব্যাপারে তেমন কড়াকড়ি নেই যেমন কড়াকড়ি মহিলাদেরকে দেখার ব্যাপারে পুরুষদের ওপর আরোপিত হয়েছে। এক মাজলিসে মুখোমুখি বসে দেখা নিষিদ্ধ। পথ চলার সময় কিংবা দূর থেকে কোন জায়েয খেলা দেখতে গিয়ে পুরুষদের ওপর দৃষ্টি পড়া নিষিদ্ধ নয়। আর কোন যথার্থ প্রয়োজন দেখা দিলে একই বাড়িতে থাকা অবস্থায় দেখলে কোন ক্ষতি নেই। ....& তবুও মহিলারা নিশ্চিন্তে পুরুষদেরকে দেখতে থাকবে ও তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকবে, এটা কোনক্রমেই জায়েয নয়।’’
দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), সূরাহ আন্নূর, টীকা-৩১।
১২। মহিলারা ভিন্ পুরুষের সামনে তাদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করবেন না। যা আপনা আপনি প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা ক্ষমাযোগ্য।
আল্লাহ বলেন,
০০০ وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا-
(আন্নূর \ ৩১)
‘‘তারা (মুমিন মহিলারা) যেন তাদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তা ছাড়া যা আপনা আপনি প্রকাশ হয়।’’
اِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا (ইল্লা মা যাহারা মিন্হা)
আয়াতাংশের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে মত পার্থক্য রয়েছে ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে। কেউ কেউ এই আয়াতাংশে চেহারা খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে বলে মনে করেন। কিন্তু সূক্ষ্মদর্শী ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ) এই আয়াতাংশের যেই জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ পেশ করেছেন তা অসাধারণ। তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ হওয়া’’ ও ‘‘প্রকাশ করার’’ মধ্যে সু্স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা দেখি আলকুরআন ‘‘প্রকাশ করা’’ থেকে বিরত রেখে ‘‘প্রকাশ হওয়ার’’ ব্যাপারে অবকাশ দিচ্ছে। এই অবকাশকে ‘‘প্রকাশ করা’’ পর্যন্ত বিস্তৃত করা আলকুরআনের বিরোধী এবং এমন সব হাদীসেরও বিরোধী যেইগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে নবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে আলহিজাবের নির্দেশ আসার পর মহিলারা (চক্ষুদ্বয় ছাড়া) চেহারা খুলে চলতেন না, আলহিজাবের হুকুমের মধ্যে চেহারার পর্দাও শামিল ছিলো এবং ইহরাম ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় নিকাবকে মহিলাদের পোষাকের একটি অংশে পরিণত করা হয়েছিলো।’’
দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), আন্নূর, টীকা-৩৫।
১৩। মহিলারা তাঁদের উড়না দিয়ে তাঁদের বুক ঢেকে রাখবেন।
আল্লাহ বলেন,
০০০ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُوْرِهِنَّ عَلى جُيُوْبِهِنَّ-
(আন্নূর \ ৩১)
‘‘এবং তারা যেন তাদের উড়নার অাঁচল দিয়ে তাদের বুক ঢেকে রাখে।’’
১৪। মহিলারা তাঁদের স্বামী, তাঁদের আববা, তাঁদের শ্বশুর, তাঁদের ছেলে, তাঁদের স্বামীর ছেলে, তাঁদের ভাই, তাঁদের ভাইয়ের ছেলে, তাঁদের বোনের ছেলে, তাঁদের ঘনিষ্ঠ স্ত্রীলোক, তাঁদের মালিকানাধীন ব্যক্তি, কামনাহীন অধীন পুরুষ ও নারীদের গোপন বিষয় বুঝে না এমন বালকের সম্মুখে ছাড়া তাঁদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করবেন না।’’
আল্লাহ বলেন,
وَلاَ يُبْدِيْنَ زِيْنَتَهُنَّ اِلاَّ لِبُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ ابآَئِهِنَّ اَوْ اَبَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اَبْنَائِهِنَّ اَوْ اَبْنَآءِ بُعُوْلَتِهِنَّ اَوْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْبَنِىْ اِخْوَانِهِنَّ اَوْ بَنِىْ اَخَوتِهِنَّ اَوْنِسَائِهِنَّ اَوْمَامَلَكَتْ اَيْمَانُهُنَّ اَوِ التَّبِعِيْنَ غَيْرِ اُولِي الْاِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفْلِ الَّذِيْنَ لَمْ يَظْهَرُوْا عَلى عَوْرتِ النِّسَاءِ-
(আন্নূর \ ৩১)
‘‘তারা তাদের সাজ-সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী, তাদের আববা, তাদের শ্বশুর, তাদের ছেলে, তাদের স্বামীর ছেলে, তাদের ভাই, তাদের ভাইয়ের ছেলে, তাদের বোনের ছেলে, তাদের ঘনিষ্ঠ স্ত্রীলোক, তাদের মালিকাধীন ব্যক্তি, কামনাহীন অধীন পুরুষ ও নারীদের গোপন বিষয় বুঝে না এমন বালকের সম্মুখে ছাড়া।’’
‘‘এই সীমিত গন্ডির বাইরে যারাই আছে তাদের সামনে মহিলাদের সাজ-সৌন্দর্য ইচ্ছাকৃতভাবে বা বে-পরোয়াভাবে নিজেই প্রকাশ করা উচিত নয়, তবে তাঁদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিংবা তাঁদের ইচ্ছা ছাড়াই যা প্রকাশ হয়ে পড়ে কিংবা যা গোপন করা সম্ভব না হয় তা আল্লাহর কাছে ক্ষমাযোগ্য।’’ দ্রষ্টব্যঃ তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ), সূরাহ আন্নূর, টীকা-৩৭।
১৫। মহিলারা এমনভাবে পা মেরে চলবেন না যাতে তাঁদের লুকানো সাজ-সৌন্দর্যের কথা লোকেরা জেনে ফেলে।
আল্লাহ্ বলেন,
০০০ وَلاَ يَضْرِبْنَ بِاَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِيْنَ زِيْنَتِهِنَّ ط وَتُوْبُوْآ اِلىَ اللهِ جَمِيْعًا اَيُّهَ الْمُؤْمِنُوْنَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ-
(আন্নূর \ ৩১)
‘‘এবং তারা যেন তাদের পা এমনভাবে না মেরে চলে যাতে তাদের লুকানো সাজ-সৌন্দর্যের কথা লোকেরা জেনে ফেলে। আর মুমিনগণ, তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তাওবাহ কর। আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করবে।’’
১৬। মালিকানাধীন ব্যক্তি ও না-বালেগ সন্তানেরা তিনটি সময়ে অনুমতি না নিয়ে গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর কক্ষে প্রবেশ করবে না।
আল্লাহ বলেন,
يَايُّهَا الَّذِيْنَ امَنُوْا لِيَسْتَأْذِنْكُمُ الَّذِيْنَ مَلَكَتْ اَيْمَانُكُمْ وَالِّذِيْنَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنْكُمْ ثَلثَ مَرَّاتً ط مِنْ قَبْلِ صَلوةِ الْفَجْرِ وَحِيْنَ تَضَعُوْنَ ثِيَابَكُمْ مِّنَ الظَّهِيْرَةِ وَمِنْ م بَعْدِ صَلوةِ الْعِشَاءِ قف ثَلثُ عَوْرتٍ لِّكُمْ ط لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلاَ عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ م بَعْدَهُنَّ ط
(আন্নূর \ ৫৮)
‘‘ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের মালিকানাধীন ব্যক্তি ও না-বালেগ সন্তানেরা তিনটি সময়ে অনুমতি নিয়ে তোমাদের কাছে আসা উচিতঃ সালাতুল ফজরের আগে, দুপুরে যখন তোমরা পোষাক ছাড় ও সালাতুল ইশার পরে। এই তিনটি তোমাদের গোপনীয়তার সময়। অন্য সময় তারা তোমাদের কাছে এলে তোমাদের ও তাদের কোন দোষ নেই।’’
১৭। সন্তানেরা বালেগ হয়ে গেলে সকল সময় বড়োদের মতোই অনুমতি নিয়ে আববা-আম্মার কক্ষে প্রবেশ করতে হবে।
আল্লাহ বলেন,
وَاِذَا بَلَغَ الْاَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلَيَسْتَأْذِنُوْا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ ط
(আন্নূর \ ৫৯)
‘‘আর তোমাদের সন্তানেরা যখন বালেগ হয়ে যায় তখন তাদের তেমনি অনুমতি নিয়ে তোমাদের কাছে আসা উচিত, যেমন তাদের বড়োরা অনুমতি নিয়ে আসে।’’
প্রত্যক্ষভাবে অনুমতি না চেয়ে এমন কোন সম্বোধন বা শব্দও যদি উচ্চারণ করে যার দ্বারা বুঝা যায় যে সে নিকটে আসতে চায় সেটাও অনুমতি চাওয়া বলেই গণ্য হবে।
প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) বলেন, ‘‘তোমরা তোমাদের আম্মা ও বোনদের কাছে যাওয়ার সময়ও অনুমতি নিয়ে যাও।’’ (ইবনু কাসীর)।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের (রা) স্ত্রী যায়নাবের (রা) বর্ণনা থেকে জানা যায় যে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা) তাঁর ঘরে প্রবেশ করার সময়ও এমন কোন আওয়াজ করতেন যাতে বুঝা যেতো যে তিনি আসছেন। হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে যাওয়া তিনি পছন্দ করতেন না। (ইবনু জারীর)
১৮। বৃদ্ধারা যদি সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছাড়া তাঁদের চাদর নামিয়ে রাখেন এতে কোন দোষ নেই। তবে বৃদ্ধারাও যদি লজ্জাশীলতা অবলম্বন করেন সেটাই তাঁদের জন্য উত্তম।
আল্লাহ্ বলেন,
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ الَّتِىْ لاَ يَرْجُوْنَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ اَنْ يَّضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجتٍ م بِزِيْنَةٍ ط وَاَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ ط وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ-
(আন্নূর \ ৬০)
‘‘আর যেই সব বৃদ্ধা বিয়ের আশা রাখে না তারা যদি সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য ছাড়া নিজেদের চাদর নামিয়ে রাখে এতে কোন দোষ নেই। তবে তারা যদি লজ্জাশীলতা অবলম্বন করে সেটাই তাদের জন্য উত্তম।’’
‘‘আলকাওয়া’য়েদু মিনা ন্নিসায়ে’’ অর্থ হচ্ছে ‘‘বসেপড়া মহিলারা।’’ অর্থাৎ এমন বয়সে পৌঁছে যাওয়া মহিলাগণ যেই বয়সে তাঁদের সন্তান জন্ম দেবার যোগ্যতা থাকে না, তাঁদের নিজেদের যৌন কামনা অবশিষ্ট থাকে না এবং তাঁদেরকে দেখে পুরুষদের মধ্যেও যৌন বাসনা সৃষ্টি হয় না।
এমন বৃদ্ধাদেরও সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নিজেদের চাদর নামিয়ে রাখার অনুমতি নেই। তবে সাজ-সৌন্দর্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য না থাকলে তাঁদের চাদর নামিয়ে রাখার অনুমতি আছে।
১৯। উপসংহার
(ক) আল্লাহর খালীল ইবরাহীমের (আ) স্ত্রীর পর্দা
اِذْ دَخَلُوْا عَلَيْهِ فَقَالُوْا سَلمَا ط قَالَ سَلمٌ ج قَوْمٌ مُّنْكَرُوْنَ- فَرَاغَ اِلى اَهْلِه فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِيْنٍ- فَقَرَّبَه اِلَيْهِمْ قَالَ اَلاَتَأْكُلُوْنَ- فَاَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيْفَةً ط قَالُوْا لاَ تَخَفْ ط وَبَشَّرُوْـهُ بِغُلمٍ عَلِيْمٍ- فَاَقْبَلَتِ امْرَاَتُه فِيْ صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوْزٌ عَقِيْمٌ-
(আয্যারিয়াত \ ২৫-২৯)
তারা তার (ইবরাহীমের) নিকটে আসলো ও বললোঃ ‘‘আপনার প্রতি সালাম।’’ সে বললোঃ ‘‘আপনাদের প্রতিও সালাম।’’ অপরিচিত লোক। অতঃপর সে নীরবে পরিবারের লোকদের কাছে গেলো। পরে একটা মোটা তাজা (ভুনা) বাছুর এনে মেহমানদের সামনে রাখলো। সে বললোঃ ‘‘আপনারা খাচ্ছেন না যে।’’ সে মনে মনে ভয় পেয়ে গেলো। তারা বললোঃ ‘‘ভয় পাবেন না।’’ এবং তারা তাকে এক জ্ঞানবান পুত্র সন্তানের জন্ম সম্পর্কে সুসংবাদ দিলো। এই কথা শুনে তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে এগিয়ে এলো। সে গালে চপেটাঘাত করতে করতে বললো, ‘‘বুড়ীবন্ধ্যা।’’
একশ্রেণীর মানুষ এই ঘটনাকে ভিত্তি করে প্রমাণ করতে চান যে ইবরাহীমের (আলাইহিস্ সালাম) যামানায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ছিলো এবং ইবরাহীমের স্ত্রী পর্দা না করেই মেহমানদের সামনে এসেছিলেন।
কিন্তু ঘটনাটির দিকে একটু গভীর দৃষ্টি দিলে কয়েকটি বিষয় আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।
এক. ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম) একাই এগিয়ে গিয়ে সালাম জানিয়ে মেহমানদের রিসিভ করেন। তাঁর স্ত্রী সারাহ তাঁর সাথে এগিয়ে গিয়ে মেহমানদেরকে সালাম জানিয়ে অভ্যর্থনায় অংশ নেননি।
দুই. ইবরাহীম (আলাইহিস্ সালাম) বাড়ির ভেতরে গিয়ে একটি মোটা তাজা বাছুর ভুনা করার ব্যবস্থা করেন।
তিন. বাছুর ভুনা হয়ে গেলে তিনি তা এনে মেহমানদের সামনে পেশ করেন। এই কাজে তাঁর স্ত্রী সংগ দেননি।
চার. মেহমানরা যখন (ফিরিশতা বলে) নিজেদের পরিচয় দিলেন এবং ইবরাহীমের (আলাইহিস্ সালাম) স্ত্রী সারাহর গর্ভে ইসহাকের (আ) জন্মের আগাম সংবাদ দিলেন তখন সারাহ ভেতর থেকে ফিরিশতা মেহমানদের সামনে নিজের বন্ধ্যাত্বের জন্য আফসোস করতে করতে এগিয়ে এলেন।
অবশ্যই এই ঘটনা প্রমাণ করে না যে ইবরাহীমের (আলাইহিস্ সালাম) যামানায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ছিলো এবং সারাহ পর্দা না করেই ভিন্ পুরুষের সামনে আসতেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি পর্দা না করে এসেছিলেন ফিরিশতাদের সামনে, কোন মানুষ ভিন্ পুরুষের সামনে নয়। বরং মেহমানরা ফিরিশতা- এই পরিচয় না জানা পর্যন্ত তাঁর তাদের সামনে না আসা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তিনি ভিন্ পুরুষের সাথে পর্দা করতেন।


(খ) আন্নিকাব
যেই প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মাতের জন্য পর্দার বিধান নাযিল করেছেন, সেই প্রয়োজন তো সকল নবীর উম্মাতের মাঝেই বিদ্যমান ছিলো। এই নিরিখে বলা যায়, সকল নবীর উম্মাতের জন্য পর্দার বিধান নাযিল হয়েছিলো, যেমন নাযিল হয়েছিলো ছালাত, ছাওম ও যাকাতের বিধান। তবে এই কথাটি প্রমাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র কোথাও সংরক্ষিত নেই।
শুধু পর্দা নয়, পর্দার অন্যতম প্রধান বিষয় নিকাব সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য।
সুপ্রাচীনকালের কোন্ সময়ে নিকাব ব্যবহার শুরু হয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে বলার মতো তথ্য আমাদের হাতে নেই। তবে নিকাব যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবির্ভাবের আগেও আরব দেশগুলোতে প্রচলিত ছিলো সেই সম্পর্কে ইসলামী গবেষকদের সু্স্পষ্ট অভিমত রয়েছে।
আল্লামা শিবলী নু‘মানী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘‘মাকালাত-ই-শিবলী’’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে সম্ভবত ইয়ামানের বানু হিম্ইয়ার সর্ব প্রথম নিকাবের প্রচলন করে। বানু হিম্ইয়ার শাসক পরিবারের পুরুষ ও মহিলা সদস্যরা নিকাব পরিধান করতেন। পরে তা রাজপরিবারের বাইরের ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে চালু হয়। আরো পরে তা প্রচলিত হয় সর্ব সাধারণের মধ্যে। বানু হিম্ইয়ারের দেখা-দেখি অন্যান্য আরব গোত্রেও নিকাব পরিধানের নিয়ম চালু হয়।
উল্লেখ্য যে ঈসার (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জন্মেরও ১১৫ বছর আগে বানু হিম্ইয়ার ইয়ামানে নিজেদের কর্তৃক স্থাপন করে। তাদের রাজধানীর নাম ছিলো যাইদান।
আরো পরবর্তী সময়ে পুরুষরা নিকাব ছেড়ে দেয়। কিন্তু মহিলাদের মধ্যে তা চালু থাকে। জাহিলিয়াহর যুগে আরবে অবস্থিত উকাযের মেলায় যেই সব মহিলা যোগদান করতো তাদের চেহারায় নিকাব থাকতো বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলহিজাবের যেই সব বিধান চালু করেন তার মধ্যে মহিলাদের নিকাব পরার বিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিলো।