লেখকঃ এ.কে.এম. মাঈদুল ইসলাম মুকুল এম.পি

লেখক পরিচিতি

এ.কে.এম. মাঈদুল ইসলাম মুকুল এম.পি

এ.কে.এম. মাঈদুল ইসলাম (জন্মঃ মে ২৯, ১৯৪০) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাঁর পিতা মরহুম আবুল কাসেম পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নির্দেশে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে কেল্লা তৈরী করেন। তৎকালীন ভারতবর্ষে মুসলমানদের এটিই একমাত্র ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের কেল্লা ছিল। মরহুম আবুল কাসেম পরবর্তীকালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরে ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। মাঈদুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন নির্বাচিত সদস‌্য।

জন্ম ও শৈশব
মাঈদুল ইসলাম ১৯৪০ সালের ২৯শে মে তৎকালীন রেওয়াজ অনুযায়ী আসামের কোকড়াডাঙ্গায় তার নানাবাড়ী সুখের চরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তার ডাকনাম ছিল শ্রী বাবু মিঞা পরে এই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় মুকুল। তাঁর পিতা মরহুম আবুল কাসেম ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় নেতা, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পীকার।

ছাত্রজীবন
মাঈদুল ইসলাম উলিপুর প্রাইমারী স্কুলে লেখাপড়া করেন। তিনি উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন। তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সারগোদা পাবলিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশুনা করেন। পরে তিনি সেখান থেকে এসে কুমিল্লা জেলার মতলব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। জনাব মাঈদুল ইসলাম রাজশাহী সরকারী কলেজে অধ্যয়ন করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র থাকাকালীন সক্রিয় রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হন। রাজশাহী সরকারী কলেজে ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬২ সালে আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন এবং কারাভোগ করেন। ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান রাজশাহীতে আসেন। ছাত্ররা তার গাড়ি আক্রমণ করে। সরকার আইয়ুব হত্যা মামলা রজু করা হয়। এর মধ্যে মাঈদুল ইসলামকেও আসামী করা হয়। পরে তিনি উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পান। সরকার তাদের আটকাতে না পেরে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা হিসেবে জনাব ইসলামের পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। এমতবস্তাই জনাব ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন এবং মামলায় জয়ী হয়ে সুনাম অর্জন করেন। করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাসে অনার্স করেন এবং ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন।

কর্ম জীবন
শিক্ষা জীবন শেষে মাঈদুল ইসলাম তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কাসেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ যোগদান করেন। তিনি ঢাকায় পর্যায়ক্রমে শিল্প প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা গড়ে তুলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রাজনৈতিক জীবন
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর আহ্বানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে এসে জাগো দলে যোগ দেন। তিনি রংপুর জেলার জাগো দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি বস্তুত শহীদ জিয়ার উন্নয়নমুখী রাজনীতির এক সুযোগ্য উত্তরসূরী। স্বচ্ছ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির দৃঢ় প্রবক্তা।

জনাব মাঈদুল ইসলাম সকল উন্নয়নে জনগণের অংশীদারে বিশ্বাসী । মাঈদুল ইসলাম ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খুব আস্থাভাজন ছিলেন। তাই জিয়াউর রহমান তাঁকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করতেন। যদিও জনাব ইসলাম ছিলেন মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য সদস্যগণের সবার চেয়ে বয়সে ছোট। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার এর মন্ত্রীসভায়ও মন্ত্রী হিসেবে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়। এ মন্ত্রীসভায় ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ছাড়াও নব-গঠিত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও তাঁর উপর অর্পিত হয়। জনাব ইসলাম অত্যন্ত দক্ষতা, সততা ও সুনামের সাথে এসব মন্ত্রণালয়ের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর মাঈদুল ইসলাম উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে বিএনপিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ ই মে জনাব ইসলামের বাসায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর কাউন্সিল মিটিং বসে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে ঐ সভায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত করা হয়। ৭ ই নভেম্বর সামরিক আইন ভঙ্গ করে বেগম জিয়ার সাথে বাইতুল মোকাররম যাওয়ার অপরাধে ৯ ই নভেম্বর তাকে ডিএফআই সেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তিনি বিশেষ কারণে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ এর মন্ত্রীসভায় যোগদান করেন এবং ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে মন্ত্রী হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পাট মন্ত্রণালয়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। পরে সময়মত তিনি আবার নিজের গড়া দল বিএনপিতে চলে আসেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত একমাত্র পত্রিকা দৈনিক দেশ বিশেষ করে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিল। এজন্য তাকে সরকারের রোষানলে পরতে হয়েছিল । জাতীয় দূর্যোগে সবসময় জনগনের পাশে রয়েছেন জনাব মাঈদুল ইসলাম । তিনি ক্ষমতায় থেকে এবং ক্ষমতার বাইরে থেকেও এলাকার উন্নয়নের জন্য অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। খরা, বন্যা, মহামারী প্রভৃতি জাতীয় দুর্যোগের দিনগুলোতে মাঈদুল ইসলাম অসহায় মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছেন, সম্ভাব্য সাহায্য ও সহযোগীতা প্রদান করেছেন, সাহস জুগিয়েছেন।

ঠিকানা