মনের উপর লাগাম লাগাবার উপায় কী?
এ বিষয়ে ইতিপূর্বেই মন্তব্য করেছি যে, বহু বছর চিন্তা করেও কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না। কেমন করে কুল কিনারা পাব? এ সমস্যার সমাধান দেবার জন্য যে আল্লাহর রাসূল প্রয়োজন। যে সমস্যার সমাধানের জন্য আল্লাহতাআলা রাসূল পাঠাবার প্রয়োজন মনে করেছেন, সে সমস্যা আর কে সমাধান করতে পারে? দেহযন্ত্র যে আল্লাহ তৈরী করেছেন, তিনিই এর ব্যবহার পদ্ধতি রাসূলের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। মনের উপর লাগাম লাগাবার ইচ্ছা কারো থাকলে রাসূল (সা) এর কাছ থেকেই শিখতে হবে। এর আর কোন বিকল্প নেই।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু মনীষী তাদের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিন্তাবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্প সংগঠক, সমাজ সেবক ইত্যাদি ক্ষেত্রে যারা বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন, তারাও মনকে নিয়ন্ত্রণ করার বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব কোন উপায় আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। কারণ এ কাজটির জন্য গবেষণা ও সাধনা যথেষ্ট নয়। এর জন্য রিসালাত ও নবুওয়াত প্রয়োজন। নবী ও রাসূলগণ যে জ্ঞান লাভ করেন তা তাদের সাধনা ও গবেষণার ফসল নয়। তা আল্লাহর দান যা তিনি নবী-রাসূলগণকেই দিয়ে থাকেন।

নবী-রাসূলগণের বাস্তব শিক্ষার নাগাল না পেয়ে যারা এ সমস্যার সমাধানে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তারা বৈরাগ্যের মাঝেই এর একমাত্র সমাধান তালাশ করেছেন। কিন্তু এটাতো আসলে কোন সমাধানই নয়। তারা দেহের দাবিকে অস্বীকার করে মনকে মেরেই ফেলেন। মরা ঘোড়া কী কাজে আসবে?

নবী-রাসূলগণ মানুষকে বৈরাগী বানাতে আসেননি। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন যে 'গোটা বস্তুজগতকে তিনি মানুষের প্রয়োজনেই সৃষ্টি করেছেন' (সূরা আল বাকারাহ ২৯ আয়াত)। আর এ জগতকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই মানুষকে দেহযন্ত্রটি দেয়া হয়েছে। বৈরাগ্য আল্লাহর উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিরোধী। রাসূলগণ মানুষকে এ বস্তুজগত ও দেহযন্ত্রকে আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থায় ব্যবহার করার পদ্ধতিই শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষা সকল মানুষের পক্ষেই গ্রহণ করা সম্ভব। তাঁরা কোন অবাস্তব শিক্ষা দেননি।

বিভিন্ন ধর্মের একনিষ্ঠ সাধকগণ বৈরাগ্য সাধনের মাধ্যমে এ কথাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, দেহকে বস্তুজগতের সকল প্রকার ভোগ থেকে বঞ্চিত করা ছাড়া আত্মার বা নৈতিকতার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তারা কেবল দুনিয়ার সকল আকর্ষণ পরিত্যাগ করার মাধ্যমেই মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব মনে করেন। এ অবাস্তব পদ্ধতি গুটিকয়েক লোক গ্রহণ করতে পারে। এটা মানুষের প্রকৃতির বিরুদ্ধে অবাস্তব বিদ্রোহ মাত্র।

তারা ধরেই নিয়েছেন যে, বিবাহিত জীবনের স্বাদ ভোগ করে মনকে পরনারীর লোভ থেকে রক্ষা করা অসম্ভব। সুস্বাদু খাদ্য খেয়ে হারাম কামাই থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাদের এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা অস্বীকার করার মতো নয়। রাসূলের শিক্ষা গ্রহণ করার সৌভাগ্য যাদের হয়নি তাদের পক্ষে পবিত্র জীবন লাভের উদ্দেশ্যে বৈরাগ্য সাধনের পথ বেছে নেয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই বৈরাগ্য সাধকদের প্রতি আমি অশ্রদ্ধা পোষণ করি না। রূপ, রস, গন্ধে ভরা দুনিয়ার আকর্ষণ ত্যাগ করা কোন খেলা নয়। অন্য একটি প্রবল আকর্ষণ না থাকলে এটা করা সম্ভব হতো না। অবশ্য এ পথ মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।

মুসলিম ধর্ম সাধকদের মধ্যেও এ প্রবণতা বিভিন্নরূপে লক্ষ্য করা যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ায় আল্লাহর খেলাফত কায়েমের যে আদর্শ রেখে গেছেন সে কঠিন পথ ত্যাগ করে এবং বাতিল শক্তির সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে আল্লাহর অলী হবার সাধনা যারা করেন, তাদের পথ আর যাই হোক রাসূলের সত্যিকার অনুসরণ নয়।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি