হাদীস
হাদীস আরবী শব্দ। আরবী অভিধান ও কোরআনের ব্যবহার অনুযায়ী ‘হাদীস’ শব্দের অর্থ- কথা,বাণী,বার্তা,সংবাদ,বিষয়,খবর ও ব্যাপার ইত্যাদি।

‘হাদীস’ শুধুমাত্র একটি আভিধানিক শব্দ নয়। মূলতঃ ‘হাদীস’ শব্দটি ইসলামের এক বিশেষ পরিভাষা। সে অনুযায়ী রাসূল(সাঃ)-এর কথা,কাজের বিবরণ কিংবা কথা,কাজের সমর্থন এবং অনুমোদন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত,ইসলামী পরিভাষায় তাই-ই ‘হাদীস’ নামে অভিহিত।

ব্যাপক অর্থে সাহাবীদের কথা,কাজ ও সমর্থন এবং তাবেয়ীদের কথা কাজ ও সমর্থনকেও হাদীস বলে।

কিন্তু,সাহাবা,তাবেয়ীদের ন্যায় তাবে তাবেয়ীনের কথা,কাজ ও সমর্থনের বিবরণও যে কোরআন হাদীসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ,তাতে সন্দেহ নেই।

যেহেতু রাসূলে করীম (সাঃ),সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ী এবং তাবে তাবেয়ীগণের কথা কাজ ও সমর্থন একই মূল বিষয়কে কেন্দ্র করেই প্রচলিত, সেই জন্য মোটামুটিভাবে সবগুলিকেই ‘হাদীস’ নামে অভিহিত করা হয়।

কিন্তু তবুও শরীয়তী মর্যাদার দৃষ্টিতে এই সবের মধ্যে পার্থক্য থাকায় প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা পরিভাষা নির্ধারণ করা হয়েছে। যথা- নবী করীম(সাঃ)-এর কথা কাজ ও অনুমোদনকে বলা হয় ‘হাদীস’।

সাহাবাদের কথা কাজ ও অনুমোদনকে বলা হয় ‘আছার’। তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের কথা কাজ ও অনুমোদনকে বলা হয় ‘ফতোয়া’।

হাদীসের উৎসঃ হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) আল্লাহ মনোনীত সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল ছিলেন। সাথে সাথে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষও ছিলেন। এই জন্যে রাসূল(সাঃ)

এর জীবনের কার্যাবলীকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়-

ক. যা তিনি নবী ও রাসূল পদের দায়িত্ব পালন করার জন্য করেছেন।

খ. যা তিনি অন্য মানুষের মত মানুষ হিসেবে করেছেন। যেমন-খাওয়া-পরা,চলা-ফেরা- ইত্যাদি।প্রথম শ্রেণীর কাজ সমস্তই আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণাধীনে সম্পাদিত হয়েছে। অবশ্য দ্বিতীয় শ্রেণীর কাজ এ ধরনের নয়। হাদীস সম্মন্ধে বলতে গিয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী(র.) বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর হাদীস প্রদানত দুই প্রকারের-

প্রথম প্রকারঃ যাতে তার নবুওত ও রেসালাতের (নবী ও রাসূল পদের)দায়িত্ব সম্পর্কীয় বিষয়সমূহ রয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ এর অন্তর্গত-

১/ যাতে- পরকাল বা উর্ধ্ব জগতের কোন বিষয় রয়েছে। এর উৎস ওহী।

২/ যাতে- এবাদত ও বিভিন্ন স্তরের সমাজ ব্যবস্থার নিয়ম- শৃংখলাদি বিষয় রয়েছে। এর কোনটি উৎস ওহী আর কোনটির উৎস স্বয়ং রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-র ইজতেহাদ। কিন্তু রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-র ইজতেহাদও ওহীর সমপর্যায়ের।কেননা,আল্লাহ তা’আলা তাকে শরীয়ত সম্পর্কে কোন ভুল সিদ্ধান্তের ওপর অবস্থান করা হতে রক্ষা করেছেন।

৩/যাতে-এমন সকল জনকল্যাণকর ও নীতি কথাসমূহ রয়েছে,যে সকলের কোন সীমা বা সময় নির্ধারিত করা হয়নি। (অর্থাৎ,যা সার্বজনীন ও সার্বকালীন) যথা,আখলাক বা চরিত্র বিষয়ক কথা। এর উৎস সাধারণত তার ইজতেহাদ।

৪/যাতে- কোন আমল বা কার্য অথবা কার্যকারকের ফজীলত বা মহত্ত্বের কথা রয়েছে।এর কোনটির উৎস ওহী আর কোনটির উৎস তার ইজতেহাদ।

দ্বিতীয় প্রকারঃ –যাতে তার নবুওত ও রেসালাতের দায়িত্বের অন্তর্গত নয়,এরূপ বিষয়াবলী রয়েছে। নিম্নলিখিত বিষয়াবলী এর অন্তর্গত-

১/যাতে- চাষাবাদ জাতীয় কোন কথা রয়েছে।যথা-তাবীরে নখলের কথা।

২/যাতে- চিকিৎসা বিষয়ক কোন কথা রয়েছে।

৩/যাতে-কোন বস্তুর বা জন্তুর গূণাগুণের কথা রয়েছে।যথা, ‘ঘোড়া কিনতে গভীর কাল রং সাদা কপাল দেখে কিনবে।‘

৪/যাতে-সে সব কাজের কথা রয়েছে যে সব কাজ তিনি এবাদত রূপে নয় বরং অভ্যাস বশত অথবা সংকল্প ব্যতিরেকে ঘটনাক্রমে করেছেন।

৫/যাতে-আরবদের মধ্যে প্রচলিত কাহিনীসমূহের মধ্যে তার কোন কাহিণী বর্ণনার কথা রয়েছে।যথা,উম্মেজারা ও খোরাফার কাহিনী।

৬/যাতে-সার্বজনীন,সার্বকালীন নয় বরং সমকালীণ কোন বিশেষ মোসলেহাতের কথা রয়েছে।যথা,সৈন্য পরিচালনা কৌশল।

৭/যাতে-তার কোন বিশেষ ফয়সালা বা বিচার সিদ্ধান্তের কথা রয়েছে।

এসবের মধ্যে কোনটির উৎস তার অভিজ্ঞতা,কোনটির উৎস ধারণা,কোনটির উৎস আদত-অভ্যাস,কোনটির উৎস দেশ-প্রথা আর কোনটির উৎস সাক্ষ্যপ্রমাণ(যথা,বিচার সিদ্ধান্ত)।(হাদীসের তত্ত্ব ও ইতিহাস,পৃ-২)

প্রথম প্রকার হাদীসের অনুসরণ করতে আমরা বাধ্য এবং দ্বিতীয় প্রকার হাদীসও আমাদের অনুকরণীয়।

হাদীস শাস্ত্রের কতিপয় পরিভাষা
সাহাবীঃ যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় রাসূলে করীম(সাঃ) কে একটুক্ষণের জন্যে হলেও দেখেছেন,অন্তত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি সাহাবী। কথাগুলো মেশকাত শরীফের ভাষায় বলা যায়।

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে –

ক। রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন বা খ। তাকে দেখেছেন এবং তার একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন অথবা গ। তাকে একবার দেখেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তাকে ‘সাহাবী’ বলে।

তাবেয়ীঃ যিনি বা যারা ঈমানের সাথে কোন সাহাবীর সাহচর্য লাভ করেছেন,তার নিকট থেকে ইসলামী জ্ঞান আহরণ করেছেন এবং সাহাবীদের অনুকরণ করেছেন তাদেরকে ‘তাবেয়ী’ বলে। কোন কোন মুহাদ্দিসের মতে সাহাবী থেকে অন্তত একটি হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন।

তাবে তাবেয়ীঃ একই নিয়ম অনুযায়ী যিনি বা যারা তাবেয়ীদের সাহচর্য লাভ করেছেন বা একটু সময়ের জন্যেও দেখেছেন,তাদের অনুকরণ অনুসরণ করেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন তারাই ‘তাবে তাবেয়ী’।

রেওয়ায়েতঃ হাদীস বা আছার বর্ণনা করাকে ‘রেওয়ায়েত’ বলে।

রাবীঃ হাদীস বা আছার বর্ণনাকারীকে ‘রাবী’ বলে।

রেওয়ায়েত বিল মা’নাঃ অর্থের গুরুত্ব সহকারে হাদীস বর্ণনা করাকে ‘রেওয়ায়েত বিল মা’না’ বলে।

রেওয়ায়েত বিল লবজিহিঃ হুবহু অর্থাৎ নবী করীম(সাঃ)-এর সাহাবী,তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীনদের মুখনিঃসৃত শব্দ গুলিসহ হাদীস বর্ণনা করাকে ‘রেওয়ায়েত বিল লবজিহি’ বলে। এ ধরনের হাদীসের গুরুত্ব সব চাইতে বেশী।

মুনকার ও রেওয়ায়েতঃ যে দুর্বল বর্ণনাকারী রেওয়ায়েত বা হাদীস তদপেক্ষা সর্ব বর্ণনাকারীর রেওয়াতের পরিপন্থী হয় তাকে ‘মুনকার রেওয়ায়েত’ বলে।

দেরায়াতঃ হাদীসের মতন বা মূল বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তির কষ্টিপাথরে যে সমালোচনা করা হয় হাদীস বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকে দেরায়াত বলে।

“এটাকে হাদীস সমালোচনা যুক্তি-ভিত্তিক প্রক্রিয়ায়ো বলা যেতে পারে।এই প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক রয়েছে।তবে এর সারকথা এই যে।এতে হাদীসের মর্মকথা টুকুতে কোন ভুল,অসত্য,অবাস্তবতা এবং কোরআন ও সহীহ হাদীসের পরিপন্থী কিছু থাকলে এই পন্থার যাচাই-পরীক্ষায় তা ধরা পড়তে পারে না।অতএব কেবল মাত্র এই পদ্ধতিতে যাচাই করে কোন হাদীস উত্তীর্ণ পেলেই তা গ্রহণ করা যেতে পারে না।এই কারণে মূল হাদীস(মতন)-হাদীসের মর্মবাণীটুকু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বিবেচনার মানদন্ডে যাচাই করার উদ্দেশ্যে এই ‘দেরায়াত’ প্রক্রিয়ার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। হাদীস যাচাই পরীক্ষার ব্যাপারে ‘দেরায়াত’ নীতির প্রয়োগ ‘রেওয়ায়েত’ নীতির মতই কোরআন ও হাদীস সম্মত। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই কেবলমাত্র ‘রেওয়ায়েতের ঊপর নির্ভরশীল কোণ কথা গ্রহণ বা বর্জনের সিদ্ধান্ত করিতে নিষেধ করেছেন।তিনি বরং দেরায়াত নীতির প্রয়োগ করতে কোরআনের বিভিন্ন স্থানে উৎসাহিত করেছেন।“ [হাদীস সংকলনের ইতিহাস-৬৫০ পৃ.]

যেমন- মদিনার মুনাফিকগণ হযরত আয়েশা(রাঃ)-এর নামে কুৎসা রটাচ্ছিল তখন কিছু সংখ্যক মুসলমানও কোন রকম বিচার বিবেচনা বাদেই তা বিশ্বাস করেন। এদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহপাক কোরআনের এই আয়াত নাযিল করেন “তোমরা যখন সে কথা শুনতে পেয়েছিলে তখন তোমরা (শুনে) কেন বললে না যে, এ ধরনের কথা বলা আমাদের কিছুতেই উচিত নয়। তখন বলা উচিত ছিল যে,খোদা পবিত্র মহান,এ এক সুস্পষ্ট মিথ্যা কথা ও বিরাট দোষারোপ ছাড়া আর কিছুই নয়,এ কথা সত্য হয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।’’ [সূরা নূর-৮১ আয়াত]

এখানে বলা হচ্ছে –যখন এ ধরনের অবিশ্বাস্য সংবাদ পৌছেছিল তখনই তা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়া উচিৎ ছিল এবং এর প্রচার-প্রসার বন্ধ করাও জরুরী ছিল।তাৎক্ষনিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জ্ঞানই দেরায়াত নীতির প্রয়োগ।

দেরায়াত প্রক্রিয়ার মূল নীতিগুলো হল-

১/হাদীস-কোরআনের সুস্পষ্ট দলীলের বিপরীত হবে না।

২/হাদীস-মুতাওয়াতের সূত্রে প্রমাণীত সুন্নাহের বিপরীত হবে না।

৩/হাদীস-সাহাব্যে কিরামের সুস্পষ্ট ও অকাট্য ইজমার বিপরীত হবে না।

৪/হাদীস-সুস্পষ্ট বিবেক বুদ্ধির বিপরীত হবে না।

৫/হাদীস-শরীয়তের চির সমর্থিত ও সর্বসম্মত নীতির বিপরীত হবে না।

৬/কোন হাদীস বিশুদ্ধ ও নির্ভুল গৃহীত হাদীসের বিপরীত হবে না।

৭/হাদীসের ভাষা আরবী ভাষার রীতি নীতির বিপরীত হবে না।কেননা নবী করীম(সাঃ) কোন কথাই আরবী নীতির বিপরীত ভাষায় বলেন নি।

৮/হাদীস-এমন কোন অর্থ প্রকাশ করবে না,যা অত্যন্ত হাস্যকর,নবীর মর্যাদা বিনষ্টকারী।

মরবি আনহুঃ যার নিকট থেকে হাদীস বা আছার বর্ণনা করা হয় তাকে ‘মরবি আনহু/ বলে।

সনদঃ হাদীসের মূল কথাটুকু যে সূত্রে ও যে বর্ণনা পরম্পরা ধারায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌছেছে তাকে ইলমে হাদীসের পরিভাষায় সনদ বলে।

ইসনাদঃ মুখে মুখে হাদীসের সনদ আবৃতি করাকে ‘ইসনাদ’ বলে।

মতনঃ সনদ বাদে মূল কথা ও তার শব্দসমূহ হচ্ছে ‘মতন’।

রেজালঃ হাদীসের রাবী সমষ্টিকে ‘রেজাল’ বলে।

আসমাউর রেজালঃ যে শাস্ত্রে রাবীদের জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে তাকে ‘আসমাউর রেজাল’ বলে।

আসমাউর রেজাল সম্পর্কে ডঃ স্প্রেনগার তার “লাইফ অব মুহাম্মদ।“ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন—–

দুনিয়ায় এমন কোন জাতি দেখা যায়নি এবং আজও নেই যারা মুসলমানদের ন্যায় ‘আসমাউর রেজালের’ বিরাট তত্ত্ব ভান্ডার আবিষ্কার করেছে। আর এর বদৌলতে আজ পাঁচ লাখ লোকের বিবরণ জানা যেতে পারে।

 

আদালতঃ মানুষের ভিতরের যে আদিম শক্তি তাকে ‘তাকওয়া’ ও ‘মরুওত’ অবলম্বন করতে (এবং মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত রাখতে) উদ্বুদ্ধ করে তাকে ‘আদালত’ বলে। ‘তাকওয়া’অর্থে এখানে শিরক,বেদাআত ফিছক ও প্রকৃতি কবীরা এবং বারবার করা সগীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকাকে বুঝায়,’মরুওত’ সর্বপ্রকার বদ রসম রেওয়াজ থেকে দূরে থাকাকে বুঝায়’ যদিও তা মুবাহ হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়-হাটে বাজারে প্রকাশ্যে পানাহার করা বা রাস্তাঘাটে প্রস্রাব করা ইত্যাদি।

আ’দেলঃ যে যে ব্যক্তি ‘তাকওয়া’ ও ‘মরুওত’ অর্জন করতে সক্ষ্ম হয়েছেন তাকে আ’দেল বলে অর্থাৎ যিনি

১/ হাদীস সম্পর্কে মিথ্যাবাদী বলে প্রতিপন্ন হননি,

২/সাধারণ কাজ কারবার মিথ্যাব্দী বলে কখনো সাব্যস্ত হননি,

৩/অজ্ঞাতনামা অপরিচিত অর্থাৎ দোষ গুণ বিচারের জন্য যার জীবনী জানা যায় নি এরূপ লোকও নন,

৪/বে-আমল ফাছেকও নন,অথবা

৫/বদ-এতেকাদ বেদাআতীয়ও নন তাকে আ’দেল বলে।

মুহাদ্দিসগণের মতে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবীগণ কোন প্রকার মিথ্যার আশ্রয় নেননি।তাই তাদের সর্ব স্বীকৃত মত হচ্ছে –‘সকল সাহাবীই আ’দেল অর্থাৎ সত্যবাদী।

জবতঃ জবত হলো সেই শক্তি যা মানুষের শ্রুত ও লিখিত জিনিসের বিন্যাস থেকে রক্ষা করে অর্থাৎ স্মৃতিপটে জাগরিত করে হুবহু যখন তখন অপরের নিকট পৌছাতে পারে।

জাবেতঃ যে ব্যক্তি জবত গুণসম্পন্ন তাকে ‘জাবেত’ বলে।

ছেকাহঃ যে ব্যক্তির মধ্যে আ’দল গুণ পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যাবে তাকে ‘ছেকাহ’ বলে।

আসহাবে সুফফাঃ যে সমস্ত সাহাবী সব সময় রাসূল(সাঃ)-এর সাহচর্যে থাকতেন অর্থাৎ রাসূলের(সাঃ)-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ছিলেন এবং তার আদেশ নিষেধ শুনতেন ও কন্ঠস্থ করতেন এই নির্দিষ্ট সংখ্যক সাহাবীকে ‘আসহাবে সুফফা’ বলে।

মুহাদ্দিসঃ যিনি হাদীস শাস্ত্রে পন্ডিত অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ বা বিশারদ। যিনি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাকেই মুহাদ্দিস বলে। মুহাদ্দিসগণ হাদীস শাস্ত্রের ওপর গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন।

শায়খঃ যিনি হাদীস শিক্ষা দেন সেই রাবীকে তার শাগরিদের তুলনায় ‘শায়খ’ বলে।

হাফেজঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত সমস্ত বৃত্তান্ত সহ একলক্ষ হাদীস আয়ত্ত বা মুখস্ত করেছেন তাকে ‘হাফেজ’ বা ‘হাফেজে হাদীস’ বলে।

হুজ্জাতঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত বৃতান্ত সহ তিন লক্ষ হাদীস মুখস্ত করেছেন বা আয়ত্ত করেছেন তাকে ‘হুজ্জাত’ বা ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ বলে।

হাকেমঃ যিনি সনদ ও মতনের সমস্ত বৃত্তান্তসহ সমস্ত হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাকে ‘হাকেম’ বলে।

ফকীহঃ যারা হাদীসের আইনগত দিক পর্যালোচনা করেছেন তাদেরকে ‘ফকীহ’ বলে।

মোতাকাল্লেমীনঃ যে সমস্ত ব্যক্তিগণ হাদীস সম্পর্কিত দার্শনিক তথ্য পেশ করেছেন তাদেরকে ‘মোতাকাল্লেমীন’ বলে।

শায়খাইনঃ ইমাম বোখারী ও মুসলিমকে একত্রে ‘শায়খাইন’ বলে।(এখানে একটি কথা জেনে রাখা ভাল যে,খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে শায়খাইন বলতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রাঃ) ও হযরত ওমর(রাঃ)কেই বুঝায়।এভাবে হানাফী ফেকায় শায়খাইন বলতে ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফকেই বুঝায়)।

সেয়াহ সেত্তাঃ যে ছয়খানা হাদীস গ্রন্থ ইসলামের ইতিহাসে অধিকতর বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয়েছে তাকে “সেয়াহ সেত্তাহ” বলে।এগুলি হচ্ছে—

১. বোখারী শরীফ ২. মুসলিম শরীফ ৩. আবু দাউদ ৪. তিরমিজী শরিফ ৫. নাসায়ী শরীফ ৬. ইবনে মাজাহ শরীফ।কিন্তু মুসলিম বিশ্ব ষষ্ঠ নম্বরের হাদীস গ্রন্থ কোন খানা হবে এ নিয়ে বেশ মতভেদ আছে। বিশিষ্ট আলেমগণের অনেকেই ইবনে মাজাহর স্থলে ‘মোআত্তা ইমাম মালেক’ কে আবার কেউ কেউ ‘সুনানে দারেমীকে’ ই সেয়াহ সেত্তার শামীল করেন।

সহীহাইনঃ হাদীস শাস্ত্রে বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের স্থান সর্ব উচ্চে। তাই বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফকে একত্রে ‘সহীহাইন’ বলে।

সুনানে আরবাঃ সেয়াহ সেত্তার অন্তর্গত অপর চারখানি হাদীস গ্রন্থ (আবু দাউদ,তিরমিজী,নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)কে এক সঙ্গে ‘সুনানে আরবা’ বলে।

মোত্তাফাকুন আলাইহিঃ যদি কোন হাদীস একই সাহাবীর নিকট হত ইমাম বোখারী ও মুসলিম উভয় গ্রহণ করে থাকেন তবে সেই হাদীসকে ‘মোত্তাফাকুন আলাইহি’ বলে।

হাদীসের কিতাবের বিভাগ
জামেঃ হাদীসকে বিষয় বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে এবং সমস্ত প্রধান প্রধানগুলো সন্নিবেশিত যে হাদীস গ্রন্থ তাকে ‘জামে’ বলে।যেমন-‘জামে’ সহীহ বোখারী।

সুনানঃ যে হাদীস গ্রন্থে হাদীসকে বিষয়বস্তু অনুসারে সাজানো হয়েছে সেখানে কেবলমাত্র তাহারাত,নামায,রোযা,প্রভৃতি আহকামের হাদীসসমূহ সংগ্রহের দিকেই বেশী নজর দেয়া হয়েছে তাকে ‘সুনান’ বলে।যেমন-সুনানে আবু দাউদ।

মুসনাদঃ হাদীসসমূহকে সাহাবীদের নামানুসারে সাজানো হয়েছে এবং এক একজন সাহাবী বর্ণিত হাদীসসমূহকে একটি মাত্র হাদীস গ্রন্থে স্থান দেয়া হয়েছে-এমন হাদীসগ্রন্থকে ‘মুসনাদ’ বলে। যেমন-মুসনাদ ইবনে আহম্মদ।

মোয়াজামঃ মোয়াজাম বলে সেই হাদীস গ্রন্থকেই যাতে হাদীসসমূহ শায়খ ও উস্তাদদের নামানুসারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যেমন-মোয়াজাম ইবনে কানেয়।

রেসালাহঃ মাত্র একটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই যে হাদীসগ্রন্থ রচিত হয়েছে তাকে ‘রেসালাহ বলে’। যেমন-ইবনে খোজাইমা।এ হাদীস গ্রন্থে আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কিত হাদীস একত্রিত করা হয়েছে।

হাদীসের কিতাবের স্তর
হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটি পাচভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা’ তে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী(রঃ) হাদীসের কিতাবসমূহকে পাঁচভাগে ভাগ করেছেন।

দ্বিতীয় স্তরঃ ‘নাসায়ী শরীফ’,’আবু দাউদ শরীফ’,’তিরমিজী শরীফ’এ স্তরের কিতাব। অবশ্য ‘মুসনাদে ইমাম আহমদ’ কে এ স্তরে শামিল করার পক্ষে মত দিয়েছেন- সুনানে দারেমী,সুনানে ইবনে মাজাহ এবং শাহ ওলীউল্লাহ দেহলবী(রঃ)। এ কিতাবগুলি প্রথম স্তরের কাছাকাছি। এতে সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। জয়ীফ হাদীসের পরিমাণ খুবই নগণ্য। মূলত সকল মাজহাবের ফকীহগণ এ দুস্তরের হাদীসের ওপরই নির্ভরশীল।

তৃতীয় স্তরঃ মুসনাদে আবু ইয়ালা,মোসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, মোসান্নাফে আবু বকর ইবনে আবু শাইবাহ,মুসনাদে আবদ ইবনে হোমাইদ,মুসনাদে তায়ালাছী এবং বায়হাকী,তাহাবী ও তাবরানীর কিতাবসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভূক্ত।

এ স্তরের কিতাবসমূহে সহীহ,হাসান,জয়ীফ,শাজ্জ,মোনকার ইত্যাদি সকল প্রকার হাদীস রয়েছে। এ জন্য পন্ডিতদের বাছাই ব্যতীত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহণ করা যাবে না।

চতুর্থ স্তরঃ ইবনে হিব্বানের ‘কিতাবুল জুয়াফা”, ইবনে আসীরের কামেল, এবং আবু নোয়াইম,ইবনে আসাকির,জাওজাকানী,খাতাবী বাগদাদী, ইবনে নাজ্জার ও ফেরদৌস দায়লামীর কিতাবসমূহ এ স্তরের কিতাব। মুসনাদে খাওয়ারেজমীও এ স্তরের যোগ্য। এ স্তরের কিতাবস্মূহে সাধারণত জয়ীফ ও গ্রহণে অযোগ্য হাদীসই রয়েছে।

পঞ্চম স্তরঃ উপরিউক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্থান হয়নি সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।

খবরঃ হাদীসকে আরবী ভাষায় খবরও বলা হয়। কিন্তু পার্থক্য এই যে খবর শব্দটি হাদীস অপেক্ষা ব্যাপক অর্থবোধক। যুগপৎভাবে হাদিস ও ইতিহাস উভয়কেই বুঝায়।

সুন্নাতঃ সফীউদ্দিন আল হাম্বলি লিখেছেন-সুন্নাত বলতে বুঝায় কোরআন ছাড়া রাসূলের সব কথা,কাজ ও সমর্থন।

তবুও আমরা হাদীস ও সুন্নাতের মধ্যে কিছু পার্থক্য দেখতে পাই- সূন্নাত শব্দটি সম্পূর্ণরুপে ও সর্বতোভাবে হাদীস শব্দের সমান নয়। কেননা ‘সূন্নাত’ হলো রাসূলের (সাঃ) বাস্তব কর্মনীতি, আর ‘হাদীস’ বলতে রাসূলের কাজ ছাড়াও কথা ও সমর্থন বুঝায়।

হাদীসের শ্রেণী বিভাগ
হাদীস শাস্ত্রের পন্ডিতগণ হাদীসকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন- ১। কাওলী ২। ফে’লী ৩। তাকরীরি।

কাওলীঃ আদেশ,নিষেধ অথবা অন্যান্য যত প্রকার মৌখিক বর্ণনা আছে তাকে ‘হাদীসে কাওলী’ বলে।

উদাহরণঃ হযরত আনাস(রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেছেন হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন-ফাসেক ব্যাক্তির প্রশংসা ও স্তুতি করা হলে আল্লাহর আরশ কেপে ওঠে।(বায়হাকী)

এই হাদীসটি রাসূল (সাঃ)-র একটি বিশেষ কথার উল্লেখ থাকার কারণে এটা কাওলী হাদীস।

ফে’লীঃ কাজ-কর্ম,আচার-ব্যবহার,উঠা-বসা,লেন-দেন সম্পর্কীয় কথাগুলোকে ‘হাদীসে ফে’লী’ বলে।

উদাহরণঃ হযরত আবু মুসা(রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেছেন আমি রাসূলে করীম(সাঃ) কে মোরগের গোশর খেতে দেখেছি।(বোখারী ও মূসলিম)

এই হাদীসটিতে রাসূলের(সাঃ) র একটি কাজের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এই জন্য এটি ‘হাদীসে ফে’লী’।

তাকরীরিঃ অনুমোদন বাঃ সমর্থন জ্ঞাপন সূচক হাদীস।দেখা গেছে অনেক সময় সাহাবীগণ অনেক কাজ করেছেন,যে কাজের ব্যাপারে রাসূল(সাঃ) সমর্থন দিয়েছেন অথবা মৌনতার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছেন,এই ধরনের হাদীসকে ‘তাকরীরী হাদীস’ বলে।

হাদীসের দ্বিতীয় প্রকার শ্রেণী বিভাগ
বর্ণনাকারীদের (রাবী) সিলসিলা অনুযায়ী হাদীসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়ঃ

ক। মারফু খ। মওকুফ গ। মাকতু

মারফুঃ যে হাদীসের সনদ বাঃ সূত্র নবী করীম(সাঃ) পর্যন্ত পৌছেছে তাকে ‘মারফু হাদীস’ বলে। অর্থাৎ যে সূত্রের মাধ্যমে স্বয়ং রাসূলের কোন কথা,কোন কাজ করার বিবরণ কিংবা কোন বিষয়ের অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে,যে সনদের ধারাবাহিকতা রাসূল করীম(সাঃ) থেকে হাদীস গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত সুরক্ষিত হয়েছে এবং মাঝখান থেকে একজন বর্ণনাকারীও বাদ পড়েনি তা ‘হাদীসে মারফু’ নামে পরিচিত।

মওকুফঃ যদি কোন সাহাবীর সনদ রাসূল(সাঃ) পর্যন্ত না পৌছে,সাহাবী পর্যন্ত গিয়েই স্থগিত হয়-অর্থাৎ যা স্বয়ং সাহাবীর হাদীস বলে সাব্যস্ত হয় তাকে ‘হাদীসে মওকুফ’ বলে।

ইমাম নববী এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন

‘যাতে কোন সাহাবীর কথা কাজ কিংবা অনুরূপ কিছু বর্ণিত হয়-তা পর পর মিলিত বর্ণনাকারীদের দ্বারা বর্ণিত হোক কিংবা মাঝখান কোন বর্ণনা কারীর অনুপস্থিতি ঘটুক তা ‘মওকুফ হাদীস’।

মাকতুঃ যে হাদীসে রাবীদের ধারাবাহিকতা কোন তাবেয়ী পর্যন্ত পৌছেছে অর্থাৎ তাবেয়ীর হাদীস বলেই প্রমাণিত হয়েছে তাকে ‘হাদীসে মাকতু’ বলে।

হাদীসের তৃতীয় প্রকার শ্রেণিবিভাগ
রাবীদের বাদ পড়ার দিক থেকে হাদীস দু’প্রকার যথাঃ ১.মোত্তাছিল ২. গায়রে মোত্তাছিল।

মোত্তাসিলঃ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত হয়েছে,কোন রাবী বাদ বাঃ উহ্য থাকেনি তাকে মোত্তাসিল বলে।

গায়রে মোত্তাসিলঃ সূত্র অসংলগ্ন অর্থাৎ যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি,কোন না কোন স্থানের রাবী বাদ পড়েছে বাঃ উহ্য রয়েছে এ ধরনের হাদীসকে ‘গায়রে মোত্তাসিল’ বলে।

হাদীসে গায়রে মোত্তাসিল আবার কয়েক প্রকারঃ

ক। মু’আল্লাক

খ। মুরসাল

গ। মুনতাকা

ঘ। মুদাল্লাস

ঙ। মো’দাল

মু’আল্লাকঃ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে যদি প্রথম অংশেই রাবী বাদ পড়ে যায় তবে তাকে ‘মু’আল্লাক হাদীস’ বলে।

মুরসালঃ হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে যদি সনদের শেষাংসের রাবীর নাম বাদ পড়ে তবে তাকে ‘মুরসাল’ বলে।

মুনতাকাঃ অসংলগ্ন সূত্রের অর্থাৎ বর্ণনার সময় রাবী বাদ পড়েছে এমন যে কোন হাদীসকে ‘মুনতাকা’ বলা যায়। ইনতাকা শব্দের আভিধানিক অর্থ ছিন্ন হয়া। অতএব প্রত্যেক ছিন্ন সূত্রের হাদীসকে ‘মুনতাকা’ বলা যেতে পারে।

মো’দালঃ হাদীস বর্ণনার সময় যদি সনদ থেকে দুই বাঃ ততোধিক রাবী বাদ পড়ে যায় তবে তাকে মো’দাল বলে।

মুদাল্লাসঃ যে হাদীসের রাবী নিজের প্রকৃত শায়খের নাম না করে তার ওপরস্থ শায়খের নামে এরূপভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে মনে হয় তিনি নিজেই তা উপরিউক্ত শায়খের নিকট থেকে শুনেছেন অথচ তিনি নিজে তা তার নিকট থেকে শুনেননি (বরং তা তার প্রকৃত উস্তাদের নিকট শুনেছেন) সে হাদীসকে মুদাল্লাসা বলে এবং এইরূপ করাকে ‘তাদলীস’ বলে। আর যিনি এইরূপ করেছেন তাকে ‘মুদাল্লেস’ বলে। মুদাল্লেসের হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়- যে পর্যন্ত না তিনি একমাত্র ছেকাহ রাবী হতে তাদলীছ করেন বলে সাব্যস্ত হন অথবা তিনি তা আপন শায়খের নিকট শুনেছেন বলে পরিষ্কারভাবে বলে দেন।

 

বর্ণনার দুর্বলতার জন্য হাদীসের প্রকারভেদ
এ ধরনের হাদীস আবার কয়েক প্রকার-

১. মুজতারাব ২. মুদরাজ ৩. মাকলুব ৪. শাহ’জ ৫. মুনকার ৬. মুআল্লাল।

মুজতারাবঃ যদি কোন রাবী হাদীস বর্ণনার সময় সনদ ওলট পালট করে ফেলেন—– যেমন আবু হুরায়রার স্থানে আবু যুবাইর বললেন বাঃ এক স্থানের শব্দ অন্য স্থানে লাগালেন অথবা একজনের নিকট একটি হাদীস একরকম বর্ণনা করে অন্য লোকের নিকট ঐ হাদীসই আবার আরেক রকম বর্ণনা করলেন এই ধরনের হাদীসকে ‘মুজতারাব’ বলে। এটা গ্রহণযোগ্য হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না এর সঠিকতা প্রমাণিত হয়।

মুদরাজঃ যদি কোন রাবী হাদীস বর্ণনা করার সময় নিজের কথা অথবা অন্য কারো কথা শামিল করে দেয় তার সেই হাদীসকে ‘মুদরাজ’ বলে।আর এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বা শামিল করা বলে। যদি ঐ কথা হাদীসের কোন শব্দকে বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয় তা’হলে তা জায়েজ,নতুবা হারাম।

মাকলুবঃ যদি কোন রাবী হাদীস বর্ণনার সময় এক মতনের সনদকে অন্য মতনে জুড়ে বর্ণনা করেন তবে তাকে ‘মাকলুব” বলে।এরূপ কোন ঘটনা ঘটলে ঐ রাবীর স্মরণ শক্তির দুর্বলতা প্রকাশ পায়।এ প্রকার রাবীর বর্ণনাকৃত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। তবে যাচাই বাছাই করার পর গ্রহণ করা যেতে পারে।

মাহফুজ ও শা’জঃ কোন সেকাহ রাবীর হাদিস অপর কোন সেকাহ-রাবী বা রাবী গণের হাদীসের বিরোধী হলে,যে হাদীসের রাবীর ‘জবত’ গুণ অধিক বা অপর কোন সুত্র দ্বারা যার হাদীসের সমর্থন পাওয়া যায় অথবা যার হাদীসের শ্রেষ্ঠত্ব অপর কোন কারণে প্রতিপাদিত হয় তার হাদীসটিকে হাদীসে মাহফুজ এবং অপর রাবীর হাদীসটিকে হাদীসে শা’জ বলে এবং এরূপ হওয়াকে ‘শুজুজ’ বলে। ‘শুজুজ’ হাদীসের পক্ষে একটি মারাত্মক দোষ। শা’জ হাদীস সহীহ রূপে গণ্য নহে।

মুনকারঃ জবত গুণ সম্পন্ন নয় এরূপ কোন ব্যক্তি এমন কোন হাদীস বর্ণনা করলো যা অন্য কারো নিকট থেকে শোনা যায়নি এরূপ হাদীসকে ‘মুনকার’ হাদীস বলে।যে ব্যক্তি মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হয়েছে অথবা কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত রয়েছে এরূপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীসকে ‘মাতরুক’ বা পরিত্যক্ত হাদীস বলে।

মু-আল্লালঃ যে হাদীসের ভেত্র অত্যন্ত সূক্ষ্ম ত্রুটি থাকে যা হাদীসের সাধারণ পন্ডিতগণ ধরতে পারেনা,একমাত্র সুনিপুন শাস্ত্র বিশারদ ব্যতিরেকে। এই প্রকার হাদীসকে ‘মু-আল্লাল’ বলে। এ এরূপ ত্রুটিকে ‘ইল্লত’ বলে। ‘ইল্লত’ হাদীসের পক্ষে মারাত্মক দোষ, এমনকি ‘ইল্লত’ যুক্ত হাদীস সহী হতে পারে না।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি