মুখ্য বিষয়সমূহ
লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
সংশ্লিষ্ট বই
শিয়া-সুন্নী সম্প্রীতি
লেখকঃ মাওলানা মোহাম্মদ ছামির উদ্দিন গাজীপুরী
প্রকাশনীঃ দ্বীনে হক প্রকাশনী
ইরানের ইসলামী বিপ্লব সাধিত হওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদীরা বিচলিত, সমাজতন্ত্রীগণ বিব্রত। মুসলমান রাজা-বাদশাহ ও আমীরা সংকটে পতিত। কারণ এ বিপ্লব সবার জন্য বিপদ রূপে দেখা দিয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম দেশগুলােকে আর দাবিয়ে রাখতে পারছেনা। নির্বিঘ্নে মুসলমানদের সম্পদ লুণ্ঠন করতে পারছেনা। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের হাতে এ বৃহৎ শক্তিটি শুধু পর্যদস্তই হয়নি রীতিমত বেইজ্জত হয়েছে। হারিয়েছে নিজেদের কায়েমী স্বার্থের অবাধ সুযোেগ সুবিধা। এ বিপ্লবের দরুন লেবাননে তাদের টিকে থাকা দায় হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঘাঁটি ইস্রাইলের অস্তিত্বের জন্যে হুমকির সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম দেশসমূহে তাদের তল্লীবাহকদের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। কাজেই মূল দুষ্ট গ্রহ আমেরিকা এর উপগ্রহ বৃটেন, ফ্রান্স, ইসরাইল ইত্যাদি সহ সংগত কারনেই বিচলিত। এ বিপ্লবের দরুণ মুসলমানদের মধ্যে জাতিগত ঐক্য চেতনা ও প্রতিরোধ স্পৃহা জেগে উঠেছে। ইসলাম একটি জীবন্ত আদর্শ রূপে প্রতিভাত হয়েছে। পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রবাদের বিকল্প রূপে একটি পূর্ণাংগ জীবন বিধান হিসাবে ইসলাম নিজেকে পেশ করতে সক্ষম হয়েছে। আর এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে সমাজের মজলুম শ্রেণীর কাছে আশীর্বাদ রূপে। মুসতাদঅফীন তথা গরীব ও নিঃস্বদেরকে ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় রেখে জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা পুরণের পথ দেখিয়েছে। গােটা মানব জাতিকে আত্মিক মর্যাদার উচিসনে বসিয়েছে ।বিশেষতঃ মুসলিম জাতিকে দিয়েছে ঐক্য ওস্বাধীনতার প্রেরণা। তাই সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে এক অপূর্ব আয়িক চেতনার জোয়ার জেগেছে। তারা আজ কুরআন সুন্নাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে আর ইসলামী হুকমত কায়েমের জোর আন্দোলনে অগ্রসর হচ্ছে। এতে বিশ্বের নানা স্থানে নির্যাতিত মুসলমানদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের চেতনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষতঃ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পরাধীন মুসলিম এলাকাসমূহে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে থাকা সমাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন আজ বিব্রত বােধ করছে।
অনুরূপ মুসলিম দেশগুলাের অনৈসলামিক শাসন পদ্ধতির জন্যেও এ বিপ্লব সংকট সৃষ্টি করেছে। মুসলিম রাজা বাদশাহগণ এতে সংকিত, সামরিক স্বৈরচারী একনায়কগণ আতংকিত, কারন এর কোনটাই ইসলাম সম্মত নয়। তাই বিশ্ব ব্যাপী ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে জোরে সােরে অপপ্রচার চালানাে হচ্ছে। বিশেষত: এ বিপ্লবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্যে ধর্মীয় মহলকে প্ররােচিত করা হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদ এখানে যবনিকার অন্তরাল থেকে যড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোতে তাদের চরদের মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়। করা হচ্ছে। ইরানের বিপ্লব সাধিত হওয়ার পর দান খয়রাতের বস্তা ভরা টাকা নিয়ে তাদের প্রতিনিধিগণ মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষভাবে বাংলাদেশ ও পাক ভারত তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। নিজেরা ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে সক্ষম না হলেও ইরানের ইসলামী হুকুমতের বিরুদ্ধে কুৎসা বটনায় তারা ভীষণ তৎপর। এ মহলটি শিয়া-সুন্নী মতভেদকে চাঙা করে তােলার জন্যে ফতওয়াবাজী, চটি বই প্রকাশ ও দালাল পাঠিয়ে আলেম সমাজ ও মুসলিম জনতার মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতে এরা শিয়া-সুন্নী দাংগা বাঁধিয়ে অশান্তির কারণ হয়েছে। ইসলামী ফিকাহগুলাের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি করা বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুসলিমজাতির জন্যে খুব জরুরী। কিন্তু এরা এর তােয়াক্কা না করে বিভেদ সৃষ্টি করে চলছে। | বাংলাদেশে কোনদিন শিয়া-সুন্নী প্রশ্নে তিক্ততার সৃষ্টি হয়নি। এখানে এ দু'টি সমপ্রদায়ের মধ্যে বেশ সপ্রীতি রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে অযথা ওসওয়াসা দিয়ে শান্ত পরিবেশকে বিনষ্ট করা উচিত নয়। আমরা প্ররােচনাদানকারীর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইছি।
সমাজ সেবা, ইমাম আলিম মুদাররিস ও মাদ্রাসাসমূহের কল্যাণ সাধন মহৎ কাজ। এ মহৎ কাজ সম্পাদনের জন্যে সংশ্লিষ্ট মহলকে ধন্যবাদ দিতে পারি। তবে এসব যেন বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লবের পথে প্রতিকূল পরিবেশ তৈরী করতে না পারে। সেদিকে নযর রাখার জন্যে অনুদান গ্রহণকারীদের প্রতি অনুরােধ রইল। “আয় তায়েরে লাহুতি ; উস রিজিক সে মউত হয় আচ্ছি জিস রিজিকসে আতিই পরওয়াজ মে কোহী।” | “যে খাবার গ্রহণ করলে উড়তে গেলে দুর্বলতা দেখা দেবে হে লাহুত জগতের পাখি এ খাবারের চেয়ে মৃত্যুই ভাল" (ইকবাল) | একটি উল্লেখযােগ্য মাদ্রাসা হচ্ছে জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ৩১২ দণি যাত্রাবাড়ী ঢাকা---৪ বাংলাদেশ। এ মহতী প্রতিষ্ঠানের “মজলিশে
ইলমী' এর তরফ থেকে ইদানিং একটি চটি বই বের করা হয়েছে ইসলামের কোন অপরিহার্য বিষয় বইটির কলেবরে স্থান লাভ করতে পারে নি।
ইসলামে বাদশাহাত তথা রাজতন্ত্রের ঠাঁই নেই। ইসরাইলের জন্মদাতা ও রক্ষক আমেরিকা মুসলমানদের প্রথম কাতারের শত্রু, মক্কা মদীনাসহ সমগ্র মুসলিমদেশে ইসলামী খিলাফত কায়েন করতে হবে। এ মর্মে কোন বিষয় নিয়ে বই ছাপলে অনুদানতো দূরের কথা, তাড়া খেয়ে আসতে হবে। তাই হয়ত সচেতন মজলিশে ইলমী পরিচালকগণ এ রূপ বােকামী করতে যাননি। তাঁরা বই বের করেছেন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে। প্রয়াস পেয়েছেন শিয়া-সুন্নী মতবিরােধকে চাঙা করে তুলতে। এমন কি শিয়াগণের ধর্মচ্যুতি (ইবতেদাদ) ঘটেছে বলেও তারা বইটিতে উল্লেখ করেছেন। এবিষয়ে আমরা পরে আলােচনায় প্রবৃত্ত হব। বইটিতে শিয়াদের প্রতি ভিত্তিহীন মতবাদের দোষারােপ করা হয়েছে। যে কোন ফিকাহ বা ধর্মের উপর দোষারােপ করতে হলে তাদের প্রামাণ্য গ্রন্থাদি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বরাত সহ কথা বলাই বাঞ্চনীয়। কিন্তু দুটি স্থান বাদে কোথাও শিয়াগনের কিতাবের উল্লেখ নেই। শিয়াগণ যে সব কথার বার বারই অস্বীকৃতি জানিয়ে থাকেন তাই জোরপূর্বক তাদের প্রতি আরােপ করা হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে শিয়া বিরােধী লেখকদের গ্রন্থাদির বরাত টেনে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। কিন্তু শিয়াদের মুতাবার কিতাবাদির হাওয়ালা দিয়ে তাদের মতবাদ পেশ করে তা খণ্ডন করা হয়নি। এটি বিতর্ক নীতির পরিপন্থী অন্যায়াচরণ ।
তাঁদের প্রকাশিত বইটির নাম, “ইতিহাসের আলােকে শিয়া সুন্নী বিতােৰ।” বস্তুত বিরোধ শুধু শিয়াদের সাথে য়। আহলে সুন্নাত তথা সুন্নীদের মধ্যেও মতবিরােধ রয়েছে। হালাল হারাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলেতো বিরোধ আছেই। সুনীদের আকিদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও মতান্তর রয়েছে। মাতুরিদিয়া ও আশিয়েরাগণের আকীদার তফাতের কথা আকায়েদের কিতাবদিতে আলােচনা করা হয়েছে। মজলিশে ইলমীর পরিচালকগণ এসব নিয়ে মাথা ঘামানাের প্রয়ােজন অনুভব করেননি। এ ছাড়া নাজদী আকীদার সাথে হানাফী ও অন্যান্য আহলে সুন্নাতভুক্ত মাযহাবের লােকদের বহুবিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তাকলীদ করাকে তারা শিরক কির রিসালত' বলে জ্ঞান করে। তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারতের নিতে মদীনায় যাওয়াকে অবৈধ বলে প্রচার করেন। বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানকে তারা ‘হালজামানার মুশরিক বলে বিশ্বাস রাখেন। এ সব ব্যাপার নিয়ে মজলিসে ইলমী বই প্রকাশ করতে
যান নি, শুধু শিয়াদের মুণ্ডপাত করাকেই তারা শ্রেয় মনে করেছেন। আমরা তাদের প্রকাশিত বইটির পর্যালােচনা করে দেখব এর বক্তব্য যুক্তির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। হয় কিনা। আমি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদায় বিশ্বাসী। শিয়াদের মতবাদ গ্রহণের প্রয়োজন মনে করি না। তাই বলে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার পরিচালনা করে এ নব চেতনাকে আঁতুড় ঘরে বধ করবে এটাও মেনে নিতে পারি না। একজন সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে একটি ইসলামী ফিকাহর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপ-প্রচারেও সায় দিতে পারি না। এ ধরণের অপপ্রচার যে কোন ফিকাহর বিরুদ্ধে করাই হউক, নেহায়েত অন্যায় কাজ। আর অন্যায়কে প্রশ্রয়দান করাও অন্যায়।
ভেবে দেখা উচিত যে ইরানের এ বিপুব খোদা না করুনা নস্যাৎ হয়ে গেলে এর স্থলে আসবে সমাজতন্ত্রবাদ। কারণ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ইরানের সকল শ্রেনীর মানুষই সােচ্চার। আর রাজতন্ত্রও ইসলামী তরীকার রাষ্ট্র ব্যবস্থা নয়। যদি রাজতন্ত্র ফিরে আসে তবু তা শিয়াদের রাজতন্ত্রই হবে। কাজেই কোন মতেই বর্তমান অবস্থায় এর উত্তম বিকল্প দেখা যায় না। তাই ইরানের বর্তমান ইসলামী বিপ্লবকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করাই মুসলিম উম্মার জন্যে কল্যাণমুখী পদক্ষেপ। “আহওয়ানুল বালিয়াতীইনের দৃষ্টিকোণেও কি 'মজলিশে ইলমী' ওয়ালারা বিচার করতে পারলেন না।
বস্তুতঃ তাদের বইয়ের শিরোনামে উল্লিখিত ‘বিরোধ ও আমাদের আদৌ কাম্য হতে পারে না বলেই আমার পুস্তক শিয়া-সুন্নী সঃপ্রীতি’---এ মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য ও সম্প্রীতির উপর জোর দেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস কুরআনসুন্নাহর দৃষ্টিকোনে আমার এ আলােচনা চিন্তাশীল সুধী মানসে আবেদন রাখতে পারবে। পরিশেষে আল্লাহর কাছে মুনাজাত, তিনি যেন উন্নাহর মধ্যে সমঝােতা ভ্রাতৃত্ব ও একাত্মতা সৃষ্টি করে দেন।
আমরা যেন সর্বদা পাক কালামের এ বানী স্মরণ রাখি,“ওয়া তাসিম, বিহাবলিল্লাহি জামিউ ওয়ালা তাফাররা।”
মোহাম্মদ ছমির উদ্দীন
০৫/১০/১৯৮৪ ইং
- প্রিয়তে যোগ করতে লগিন করুন
- লাইব্রারীতে যোগ করতে লগিন করুন
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি