লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি
সংশ্লিষ্ট বই
যুগে যুগে ঈমানের পরীক্ষা যালিমের পরিনতি ও আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের করনীয়
লেখকঃ আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুস
প্রকাশনীঃ কামিয়াব প্রকাশন
জান্নাত লাভের আশায় ইসলামী আন্দোলনের সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা দুনিয়াতে অনেক দুঃখ-কষ্ট, বাধা বিপত্তি, যুলুম-নির্যাতন হাসি মুখে বরণ করে নেয়। কারণ দুনিয়ার সুখ দুঃখ সাময়িক; কি আখিরাতের সুখ-দুঃখ চিরস্থায়ী। তাই স্থায়ী সুখের আবাস জান্নাত প্রাপ্তির আশায় সাময়িক দুঃখ বরণ করতে আল্লাহপ্রেমিক মুমিন বান্দাহরা কোন দ্বিধা করে না। কিন্তু দুনিয়াতে যেমনিভাবে পরীক্ষা ছাড়া এক ক্লাশ থেকে আরেক ক্লাসে যাওয়া যায়
। অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় মুমিন বান্দাদের নানাভাবে পরীক্ষা করে উত্তীর্ণদেরকেই জান্নাতে উত্তম পুরস্কার দেবেন। আর এ পরীক্ষা নানাভাবে করেন। যেমন আইয়ুব (আ)-কে শারীরিক অসুস্থতা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আর ইবরাহীম (আ)-কে নমরুদের আগুনে ফেলে পরীক্ষা করেই পরীক্ষা শেষ করা হয়নি; এক পর্যায়ে তার প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ)-কে কুরবানীর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর প্রতি ভালবাসার পরীক্ষা করা হয়। উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই তিনি খলীলুল্লাহ তথা আল্লাহর বন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। অতীতে বিন্নি নবী-রাসূলকে বিষ্মিভাবে পরীক্ষা হয়েছে। জাকারিয়া (আ)-কে কত দ্বারা মাথা দ্বিখন্ডিত করে হত্যা করা হয়। ইয়াহইয়ার (আ) শিরচ্ছেদ করে ইহুদি শাসক হিরােডিয়াস তার প্রেমিকাকে উপহার দিয়েছিল। ইলিয়াস (আ)-কে হত্যার চেষ্টা না হলে তিনি সিনাই দ্বীপে আশ্রয় নেন। ইয়ারমিয়াহকে ক্ষুধা ও পিপাসায় মেরে ফেলার জন্য রশি দিয়ে বেঁধে কুয়ার মাঝে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবে ঈসা (আ)-কে শূলে চড়ানাের চেষ্টা করা হয় এবং মূসা (আ)-কে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ অসংখ্য নবী-রাসূলকে হত্যা-নির্যাতন করা হয়। আল্লাহর রাসূল, তাঁর আসহাবকে সেসব নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “তােমাদের আগে অতীতকালে এমন লােকও ছিল লােহার চিরুনি দিয়ে যাদের গােশত চেঁছে ফেলা হয়েছিল। হাড়ি ছাড়া তাদের শরীরে আর কিছুই ছিল না। এ কঠোর অবস্থায়ও তারা নিজের দীনের উপর থেকে আস্থা হারাননি। তাঁদের মাথার উপর করাত চালানাে হয়েছে, করাত দিয়ে চিরে তাদেরকে দুভাগ করা হয়েছে। এ সত্ত্বেও তারা দীন ত্যাগ করেননি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাহাবাদেরকে সেসব ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে উগ্র করে তােলেননি বরং আরও ধৈর্যশীল বানানাের চেষ্টা করেছেন। মন্দের জবাব উত্তম পন্থায়। দেওয়ার নির্দেশ দান করেছেন। আল্লাহর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (স) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা নানাধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বেলাল (রা)-এর উপর কী অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রচণ্ড গরম বালুর উপর শুইয়ে দিয়ে বুকে পাথর চাপা দেয়া হয়েছিল। তবুও তিনি আহাদ আহাদ বলা বন্ধ করেননি। হযরত আবু যরকে ঈমান আনার কারণেই রক্তাক্ত হতে হয়েছে। সুদর্শন যুবক মাসয়াব বিন উমাইরকে দীনের দাওয়াত কবুল করার পর ত্যাগ করতে হয়েছে সকল সহায় সম্পদ। বিলাসবহুল জীবনযাপনের পরিবর্তে কষ্টকর জীবনযাপন করতে হয়েছে। আমের বিন ফাহিরার শরীর কাঁটা দিয়ে বিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের নির্যাতনে তাঁর দৃষ্টিশক্তি লােপ পায়। অবশ্য আল্লাহর কুদরাতে পরে আবার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। খাববাৰ (রা)-কে জ্বলন্ত অঙ্গারে শুইয়ে রাখা হতাে তার চর্বিতে আগুন নিভে যেত। আমেরকে পানিতে ডুবিয়ে নির্যাতন করা হয়। তার মা সুমাইয়া (রা)-এর লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে শহীদ করে দেয়া হয়। তার পিতা ইয়াসীর ও ভাই আব্দুল্লাহ নির্যাতনের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। যায়েদ বিন দাসানাকে বলা হয় তােমার পরিবর্তে মুহাম্মদকে শূলে চড়ালে তুমি কি সহ্য করবে'? তিনি জবাব দেন তাকে শূলে চড়ানােতাে দূরের কথা তার পায়ে কাটার ফোটাও সহ্য করবনা। এ কথা শােনার পর তার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানাে হয় ফলে তিনি শহীদ হয়ে যান। হামজা (রা)-এর কলিজা চিবিয়ে খাওয়া হয়েছে। এভাবে অসংখ্য সাহাবীকে অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে দীনের পথে চলতে হয়েছে। যুগে যুগে মুজাদ্দিদ, মুজতাহিদ, ইমাম ও ইসলামপ্রিয় মানুষের উপর অনেক নির্যাতন করা হয়। ইমাম আবু হানিফা, মালেক, আহমদ ইবন হাম্বল ও ইবুন তাইমিয়া (র), মুজাদ্দিদে আলফে সানী, জামাল উদ্দিন আফগানী, সাইয়েদ আহমদ বেরলভী, হাজী শরীয়তুল্লাহ, নিসার আলী তিতুমীরসহ আরও অনেকেই নানা ধরনের যুলুম-নির্যাতন ভােগ করেছেন। আজকের যুগেও যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলছেন তারা যালিমদের যুলুমের শিকার হচ্ছে। মিসরে শহীদ হাসানুল বান্না ও সাইয়েদ কুতুব শহীদ শাহাদাত লাভ করেন। উস্তাদ ওমর তিলমিশানী, আব্দুল কাদের আওদাহ ও যায়নাব আল গাজালীসহ ইসলামপন্থী অসংখ্য মানুষ চরম নির্যাতনের শিকার হন। তুরস্কে বদিউজ্জমান নুরসীসহ অনেকই যুলুমনির্যাতনের শিকার হন; ইস্তাম্বুলের প্রতিটি লাইটপােস্টের সাথে ইসলাম প্রিয় মানুষদের লাশ ঝুলে ছিল অনেক দিন। ফিলিস্তিনে শাইখ ইয়াসীন ফজর নামায শেষে হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় শহীদ হন। আলজেরিয়াতে আব্বাস মাদানী দীর্ঘকাল কারাবরণ করেন। শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী অনেক বার কারাবরণ করেন এবং ফাঁসির আদেশ হয়। অবশ্য পরে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ফলে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করতে পারেনি তালীন পাকিস্তান সরকার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানেরা এ ধরনের যুলুমের শিকার নামধারী অমুসলিমদের দ্বারাই হচ্ছে না; বরং পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশে কিছু মুসলিম নামধারী শাসকের হাতেও চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেক সত্যপছি মানুষ। ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ইরাক, বসনিয়াসহ পৃথিবীর নানাদেশে যখন অমুসলিমরা সরাসরি আক্রমণ করে তখন আমরা তা সহজেই দেখি এবং প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠি। কিন্তু মিসর, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে মুসলিম শাসকদের হাতে যখন মুসলমানেরা নির্যাতিত হয় তখন সে খবর খুব কম লােকই রাখে। পৃথিবীর মানুষগুলাে জানলেও আল্লাহ তাআলা জানেন, কারা কিভাবে কাদের উপর নির্যাতন করছে। আল্লাহ তাআলা অবশ্যই যালিমদের যুলুমের বিচার করবেন। অতীতে অনেক যালিমকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেও কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যে, তিনি যুলুমের শাস্তি শুধু আখিরাতের জন্য রেখে দেন না মাঝেমধ্যে দুনিয়াতেও কিছু শাস্তি প্রদান করেন। ফেরাউন, নমরুদ, ‘আদি, ছামূদজাতিসহ অতীতে শাস্তিপ্রাপ্ত মানুষ ও জনপদের ইতিহাস তারই সাক্ষী। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বালিমের বিচার করবেন- এটা সত্য; তাই বলে মাযলুমের পাশে যদি আমরা না দাঁড়াই তাহলে আমরাও হয়তবা বিচারের সম্মুখীন হব। কেননা আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে শিখিয়েছেন, যালিম ও মাযলুম উভয়কে সাহায্য করতে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যালিমকে আমরা কিভাবে সাহায্য করব? তার জবাবও আল্লাহর রাসূল (স) দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে, যালিমকে যুলুম করা থেকে বিরত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা অতীতে ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁর প্রিয় বান্দাহদের সাহায্য করেছেন। বর্তমানেও ফেরেশতা পাঠিয়ে তিনি সাহায্য করতে পারেন। অতীতে আবাবিল পাখি দ্বারা অনেক যালিমকে ধ্বংস করেছেন। আজকের যুগেও অনেক ছােট ছােট পাখি আকাশে উড়ে। আল্লাহর নির্দেশ পেলে আজও ছােট ছােট পাখি মুখে পাথর নিয়ে যেকোন শক্তিধর যালিমকে ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে কোন কিছু করেন না। তাই আমাদেরকে স্বাভাবিক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই যুলুম-শােষণের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি এ বইতে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। তা হচ্ছে; ঈমানের পরীক্ষা বলতে কী বুঝায়, ঈমানদারদের পরীক্ষার কারণ ও ধরন, অতীতে নবী-রাসূল ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষার কতিপয় উদাহরণ, আসহাবে রাসূলদের উপর নির্যাতনের কতিপয় ঘটনা, অতীতে ইসলামী চিন্তাবিদদের উপর কী ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে তার কিছু চিত্র। সর্বশেষ যুগে যুগে বালিমের পরিণতি ও আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের করণীয় সম্পর্কেও আলােচনা করতে চাই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ বইয়ে আলােচিত ভাল দিকগুলাে থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন এবং সর্বাবস্থায় হেদায়াতের উপর অটল ও অবিচল রাখুন। বইয়ে কোন ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা জানালে ৰাধিত হব। কামিয়াম প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী বন্ধুবর হেলাল উদ্দিন বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নেয়ায় তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বইটি লেখার ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গিনী রােজী সাজেদা ও স্নেহ প্রতীম ইবরাহীম, আহমদ, মূসা, ইয়াহইয়া ও হান্না'র প্রাপ্য সময় থেকে কিছু সময় লেখার ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয়েছে, আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাদের এ ত্যাগকে কবুল করুন। বইটির প্রুফ দেখার ক্ষেত্রে স্নেহাস্পদ ইসমাঈল, সা'দ ইমানি ও আবু ইউসুফ যে পরিশ্রম করেছে আল্লাহ তাআলা তাদেরকেসহ বইটির লেখক, পাঠক ও প্রকাশক সকলকে আখিরাতে উত্তম পুরস্কার দান করুন।
আমীন।
আব্দুদ্দাইয়ান মুহাম্মদ ইউনুছ
২২ জানুয়ারি, ২০১১
- প্রিয়তে যোগ করতে লগিন করুন
- লাইব্রারীতে যোগ করতে লগিন করুন
পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।
দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি