ইসলামী সংগঠনে কর্মীর মানোন্নয়ন
ইসলামী সংগঠনের কর্মতৎপরতা অংশগ্রহণ করে কর্মীগণ অব্যাহতভাবে জ্ঞাঙ্গত ও সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ লাভ করে থাকে। স্বাভাবিক প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাহিরেও কর্মীদের মানোন্নয়ের জন্য বিশেষ বিশেষ কার্যক্রমের অবলম্বন করা প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিম্নে অত্যন্ত ফলপ্রসূ কয়েকটি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করছি।
(১) সাপ্তাহিক সভা
কর্মীর মানোন্নয়ের জন্য নিয়মিত সাপ্তাহিক সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাপ্তাহিক সভায় নিয়মিত যোগদানের মাধ্যমে কর্মীদের মাঝে সময়ানুবর্তিতা এবং সাংগঠনিক আনুগত্যের অভ্যাস গড়ে ওঠে। তদুপরি সাপ্তাহিক সভার আলোচনা কর্মীদের জ্ঞান বৃদ্ধির সহায়ক। সাপ্তাহিক সভার কার্যক্রম সাধারণত নিম্নরূপ হতে পারেঃ
(ক) পরিচালক কর্তৃক সভার উদ্ধোধন
(খ) দারসে কুরাআন বা দারসে হাদীস
(গ) কর্মীদের কাজের রিপোর্ট গ্রহণ
(ঘ) অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ
(ঙ) পরবর্তী সভার কার্যসূচি প্রণয়ন
(চ) পরিচালকের বক্তব্য ও সভার সমাপ্তি ঘোষণা

(২) সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শিবির
জ্ঞানের ব্যাপকতা বৃদ্ধির জন্য বেশী সংখ্যক কর্মীকে নিয়ে বেশী সংখ্যক সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শিবির অত্যন্ত জরুরী। সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শিবিরের কার্যক্রম নিম্নরূপ হতে পারেঃ
(ক) উদ্বোধন
(খ) দারসে কুরাআন
(গ) এক বা একাধিক প্রধান বক্তৃতা
(ঘ) বক্তৃতা ভিত্তিক আলোচনা
(ঙ) পরিচালকের বক্তব্য ও সমাপ্তি ঘোষণা

(৩) পাঠ চক্র
আদর্শিক জ্ঞান বৃদ্ধি, আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে ধারণা দান, সাংগঠনিক পারদর্শিতা সৃষ্টি, সমাজ-সচেতনতা সৃষ্টি এবং ইসলামী আন্দোলনের করম-কৌশল সম্পর্কে ধারণা দানের জন্য পাঠচক্র অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সমমানের অনুর্ধ দশজন কর্মীকে নিয়ে পাঠচক্র গঠিত হয়। শুরুতেই পাঠচক্রের জন্য পূর্ণাঙ্গ কোর্স তৈরি করে নিতে হয়। পাঠচক্রের কমপক্ষে দশটি সেসন বা অধিবেশন হওয়া দরকার। দু’অধিবেশনের মাঝে এক মাসের বেশি ব্যবধান হওয়া উচিত নয়। পাঠ চক্রের অধিবেশনের কার্যক্রম নিম্নরূপ হতে পারেঃ
(ক) পরিচালক কর্তৃক অধিবেশনের উদ্বোধন
(খ) পাঠ চক্রের প্রত্যেক সদস্যের আলোচনা পেশ
(গ) প্রশ্নোত্তর
(ঘ) পরিচালক কর্তৃক সকলের আলোচনা পর্যালোচনা
(ঙ) আলোচ্য বিষয়ের উপর পরিচালকের সমাপনী বক্তব্য

(৪) দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শিবির
ইসলামী জীবনাদর্শ, ইসলাম বিরোধী মতবাদ, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী সংগঠন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মকৌশল, কর্মীদের আকাংখিত মান ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান ও স্পষ্টতর ধারণা দানের উদ্দেশ্যে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়ে তিন, পাঁচ বা সাতদিনের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠান খুবই প্রয়োজনীয়। এই ধরনের শিবিরের কর্মসূচি নিম্নরূপ হতে পারে।
(ক) উদ্বোধন (প্রথম দিন)
(খ) দারসে কুরাআন
(গ) দারসে হাদীস
(ঘ) দুই বা ততোধিক প্রধান বক্তৃতা
(ঙ) বক্তৃতা ভিত্তিক আলোচনা
(চ) শিক্ষার্থীদের বক্তৃতা
(ছ) সাধারণ প্রশ্নোত্তর
(জ) হাতে কলমে শিক্ষা (সহীহ করে আল কুরাআন পঠন, হিসাব রক্ষণ, নথি-পত্র সংরক্ষণ ইত্যাদি)
(ঝ) সমাপ্তি ভাষণ (শেষ দিন)

(৫) বক্তৃতা অনুশীলন চক্র
বক্তৃতা ভাষণের মাধ্যমেই অগণিত মানব গোষ্ঠীকে ইসলামী আদর্শ, আন্দোলন ও সংগঠন বুঝাতে হবে। সংগঠন যেই হারে সুবক্তা তৈরি করে কাজের ময়দানে পেশ করতে পারবে কাজের ব্যাপ্তি সেই হারেই বাড়বে।
কর্মীদের বক্তা বানানোর জন্য বক্তৃতা অনুশীলন চক্র একটি ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া। কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে গঠিত হবে একটি বক্তৃতা অনুশীলন চক্র। এর পরিচালনায় থাকবেন একজন দক্ষ পরিচালক। চক্রের জন্য তিনি সময়সূচী নির্ধারণ করবেন। বক্তৃতা অনুশীলন কার্যক্রম নিম্নরূপ হতে পারেঃ
(ক) পরিচালক কর্তৃক উদ্বোধন
(খ) চক্রের অন্তর্ভুক্ত কর্মীদের বক্তৃতা
(গ) পরিচালক কর্তৃক বক্তার সম্বোধন পদ্ধতি, বক্তব্য বিষয়ে জ্ঞানের বোধগম্যভাবে বক্তব্য উপস্থাপনে ব্যর্থতা-সাফলতা, বক্তব্য উত্থাপনে ধীরতা-দ্রুততা, অঙ্গভঙ্গি এবং বক্তৃতার আঙ্গিক (প্রারম্ভ, মধ্যভাগ ও সমাপ্তি) ভালভাবে পর্যবেক্ষণ ও নোট করণ
(ঘ) পর্যবেক্ষণ ও নোটের ভিত্তিতে পরিচালক কর্তৃক বক্তৃতা পর্যালোচনা।
(ঙ) সমাপ্তি ঘোষণা

(৬) ব্যক্তিগত আলাপ, জিজ্ঞাসা এবং পরামর্শ দান
একজন কর্মীর মান মূল্যায়নের জন্য তার সাথে আলাপ খুবই জরুরী। আলাপকালে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধমে তার জ্ঞান, অনুশীলন এবং সাংগঠনিক মান সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দরকার। নিসন্দেহে ব্যক্তি গঠনে এটি একটি উত্তম প্রক্রিয়া।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি