মুক্তির পয়গাম
কি সুন্দর এই পৃথিবী! চোখ জুড়ানো বিস্তীর্ণ শ্যামল শস্য ক্ষেত।

গাছের ডালে ডালে রঙ-বেরঙের ফল ফুল, তারই মাঝে রঙ-বেরঙের পাখ-পাখালি প্রজাপতির মনভোলানো খেলা।

মন জুড়িয়ে যায় বিরাট আকাশটার দিকে তাকিয়ে থেকে।

মেঘের কোলে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বাধীন ডানা মেলা পাখিরা, রোদ হাসছে ঝিকমিক।

কি সুন্দর! কি সুন্দর এই সৃষ্টি! কি বিরাট বিষ্ময়কর এই সৃষ্টি!

সৃষ্টির এই সৌন্দর্য উপভোগ করে শেষ করা যায় না। এর সীমা-সংখ্যা গুণে শেষ করা যায় না।

বিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণু মেনে চলছে আল্লাহর আইন। এই শৃংখলার কোন ব্যতিক্রম নেই।

আর এ জন্যই এই বিশ্বজগত এতো সুন্দর। বিরাট ও বিশ্বজগতে বিরাজ করছে অনাবিল শান্তি, ঐক্য আর শৃংখলা।

মানুষ এই দুনিয়ার অন্যতম সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয় তাকে। অন্যান্য সৃষ্টি থেকে আলাদা তার মর্যদা। বিশেষ তার স্থান। মানুষ এই দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন জ্ঞান-বিবেক, দিয়েছেন ভাল-মন্দ বুঝবার ক্ষমতা। সে যেমন এই জ্ঞানের আলোকে ভাল কাজ করতে পারে তেমনি খারাপ কাজ করার রয়েছে তার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা। কিন্তু কেন আল্লাহ মানুষকে এই বিশেষ মর্যাদা দিলেন? কেন দিলেন এমন স্বাধীনতা? এর পিছনে রয়েছে আল্লাহর এক মহান উদ্দেশ্য। তা হলো, বিশ্বে প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি যেমন আল্লাহর নিয়ম মেনে তৈরি করছে অনাবিল শান্তির জগত তেমনি মানুষ তার স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও যেনো আল্লাহর পথকে বেছে নিতে পারে। খারাপ কাজ করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও যাতে নিজের ইচ্ছায় আল্লাহর আইনের গোলামীকে বরণ করে নিতে পারে। আর ততই ফলে তাদের জীবনে নেমে আসবে শান্তি। পৃথিবীতে গড়ে উঠবে এক সুন্দর শান্তিপূর্ণ সমাজ।

অশান্তির কারণ
কিন্তু এই দুনিয়ার দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই মানুষে মানুষে আজ সৃষ্টি হয়েছে, ভেদাভেদ, হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ। অমানুষের সমাজে সে ঐক্য কোথায়? কোথায় শান্তি? কারণ কি? আগেই বলা হয়েছে, ভাল ও মন্দ কাজ করার ইচ্ছাটা পুরোপুরি মানুষের। আল্লাহর মানুষের উপর জোর করে তার বিধান চাপিয়ে দিতে চান না। বরং আল্লাহ দেখতে চান মানুষ তার নিজের তাঁর বিধান বা এই শান্তির পথকে বেছে নেয় কিনা। যখন মানুষ এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে আল্লাহর পথ থেকে সরে গেছে, তখনই নেমে এসেছে মানুষের জীবনে বিপর্যয় ও শান্তি।

 

মুক্তির পথ
তাহলে কি মানুষকে এই অশান্তি সৃষ্টির জন্য আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন? বিভেদ ও বিশৃংখলার জন্য সৃষ্টি করেছেন? কঠিন ও জটিল এই পৃথিবীতে মানুষকে পথের সন্ধান না দিয়েই ছেড়ে দিয়েছেন? না, কখনই তা হতে পারে না। আল্লাহ তো দয়াময় ও মেহেরবান। যে -সিরাতুল মুস্তাকিম। কোন পথে চললে মানুষ পাবে শান্তি জন্যে, যে আল্লাহ সব মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন সরল, শান্তির পথ কোন পথে আস, আল্লাহ বিশাল এই পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন আমাদের সুখ-স্বাচ্ছান্দের বে মানুষের মর্যাদা, কোন পথে চললে মানুষ পাবে শান্তি, কোন পথে আসবে মানুষের মর্যাদা, কোন পথে চললে মানুষ তার দায়িত্ব পাবে তা তিনি সৃষ্টির সাথে সাথেই জানিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। শিখিয়ে দিয়েছেন প্রথম মানুষ হযরত আদম (স) কে।

তাঁর পুত্র পরিজনকেও সেইভাবে পরিচালনা করেছেন। তার পর দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। ছড়িয়ে পড়লো মানুষ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আস্তে আস্তে আল্লাহর পথও ভুলে গেল তারা। রাহমানুর রাহীম আল্লাহ আবার মানুষকে মুক্তির পথ বাতলিয়ে দিতে চাইলেন। তিনি মানুষের মধ্যে থেকে বিশেষ কিছু মানুষকে মনোনিত করলেন। এই মনোনীত বান্দারা হলেন নবী ও মানুষ। এবং সেই বাতলিয়ে দেয়া পথের নাম-ইসলাম। আল্লাহর এই মনোনীত বান্দারা তাঁর হুকুম নিজেরা মেনে চলেছেন আর তাদের যুগের সাধারণ মানুষদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন-দেখো, এইভাবে চলো, এইভাবে নিজেদের জীবনকে গড়ে তোল, সমাজকে গড়ে তোল। শুধু মুখে মুখে নয়, কাজের মাধ্যমে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর পথ কোনটি। তাই ইসলাম শুধু মাত্র একটি ধর্মের নাম নয়। ইসলাম আল্লাহর মনোনীত শান্তির পথ। এই দুনিয়ায় মানুষের জীবন-যাপনের পথ নির্দেশ।

সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স)। তিনি সকল নবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ নবী। আল্লাহ তাঁর কাচে যে বাণী পাঠিয়েছেন তা হলো-আল-কুরআন। কুরআন আজও হুবহু আমাদের মাঝে আছে অথচ অন্যান্য নবীদের শিক্ষা আজ আর অক্ষত অবস্থায় নেই। তাই আল্লাহর দেখানো পথ আমরা এখন একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (স) এর কাছ থেকে পেতে পারি। ইসলাম বলতে আমরা এখন যা বুঝি তা হলো-হযরত মুহাম্মদ (স) এর কাছ থেকে দেয়া শিক্ষা-দীক্ষা।

মানুষের গড়া মতবাদ
আল্লাহর দেখানো এই মুক্তির পথকে বাদ দিয়ে মানুষ নিজে তার চলার পথ রচনার চেষ্টা করেছে বহুবার। কেউ বলেছে, এ পৃথিবীর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। এ দুনিয়াটাই সব-দুনিয়ার সুখ শান্তিই সব। অতএব খাও দাও ফুর্তি কর। আর এ জন্যে অন্যকে ঠকিয়ে বড়লোক হওয়া অন্যায় নয়। শ্রমিককে খাটিয়ে তোমার টাকাকে আরো বাড়াও। কিন্তু তাদেরকে ঠাকানো কোন ক্ষতি নেই। কে তোমাকে আটকাবে? পরকাল? তা তো নেই। এই ধরণের চিন্তা বা মতাবাদের নাম হলো পুঁজিবাদ সমাজে এক দলের ঘাম আর রক্তের বদলে বড়লোক হলো অন্য একদল। বড়লোকেরা আরও বড়লোক হলো গরীবরা হলো আরও গরীব। সমাজের সমস্ত কর্তৃত্ব চলে গেল এই সব লোকের হাতে। পুঁজিবাদ তাই কোন শান্তির দিশা দেখাতে পারলো না মানুষকে।

এই অন্যায় ও বেইনসাফীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ক্ষেপে উঠলো। ক্ষেপে উঠলো শ্রমিকরা, ক্ষেপলো সাধারণ কৃষকরা। ধীরে ধীরে গড়ে উঠলো আরও একটা মতবাদ। তার নাম কম্যুনিজম। এই মতবাদের হোতারা বললো-দেখো, মানুষ ধনের জন্য অন্যর উপর জুলুম করে। অতএব সকলের নিজস্ব সব সম্পদ কেড়ে নাও। সকলের সম্পদ কেড়ে নিয়ে গড়ে তোলে গরীবদের সমাজ। সব সম্পদের মালিক হবে রাষ্ট্র। সকলেই খাটবে। সকলে সমাজ মজুরী পাবে। সকলেই হবে সমান। কথাগুলো সত্যি খুব সুন্দর। গরীবরা যারা এতোদিন ছিল নির্যাচিত তারা আশার আলো দেখলো তাতে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ঘটলো অন্য রকম। গরীবরা শাসক হবে কিভাবে? সব গরীবতো একসাথে দেশ শাসন করতে পারে না। তাই স্বাভাবিকই গুটিকতক লোকের হাতে চলে গেল দেশ শাসনের সর্বময় ক্ষমতা। আর সেই সাথে তারা হলো সারাদেশের সম্পদের হর্তাকর্তা।

পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে সম্পদের মালিক ছিল গুটিকতক লোক। তাদের হাতে তেমন ক্ষমতা ছিল না। এখন এই নতুন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নতুন পথের সন্ধান করলো। তারা বুঝলো দেশ এখন সবার। সরকার সকলের। অতএব বিরোধিতা করা যাবে না। সামলোচনা করা যাবে না। যারা বিরোধিতা করবে, সমালোচনা করবে তারা সরকারের শত্রু অতএব জনগণের শত্রু। আর তাই লাগাম আঁটা হলো সকলের মুখে। একমুঠো খাবারের জন্যে হারাতে হলো সবকিছু। এই নতুন মতবাদও মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে পারলো না। সময়ের ব্যবধানে এই মতবাদেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো।

মুক্তির পথ ইসলাম
এইভাবে দুনিয়ার সব দেশের সব মানুষ চেষ্টা করেছে তাদের নিজেদের বৃদ্ধি ও ক্ষমতা খাটিয়ে চলার পথ রচনা করতে। কিন্তু বার বার ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রকৃত কারণ কি? এর একটি মাত্র কারণ মানুষ এই মহাসত্যকে বুঝতে পারেনি, যে মানুষের পক্ষে মানুষের জন্যে জীবন পথ রচনা করা সম্ভব নয়। মানুষের সীমিত জ্ঞান, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দ্বারা এমন কোন পথ রচনা করা সম্ভব নয় যা সব যুগের, সব দেশের, সকল মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের পথ দেখাতে পারে। কারণ তার আগের লোকদের সে দেখেনি, পরের লোকদের দেখবে না। দুনিয়ার সবগুলো দেশ আর সমাজ সম্পর্কে তার পুরাপুরি ধারণা থাকা সম্ভব নয়, তাহলে তার পক্ষে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ রচনা করা কি করে সম্ভব হতে পারে? মানুষের কল্যাণের পথতো একমাত্র আল্লাহই দিতে পারেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে তার রহমত দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যার কাছে মানুষের স্বাভাবিক দুর্বলতা, ভুল-ত্রুটি সবকিছু পরিষ্কার এবং যিনি দুনিয়ার সব সমাজের সকল মানুষকে সম্পূর্ণরূপে জানেন।

পৃথিবীর মানুষ মানুষের গড়া সব মতবাদকে পরীক্ষা করে দেখেছে। সাম্যের নামে মানুষ খেয়েছে ধোঁকা। যারা বিশ্ব মানবতার বুলি আওড়াতো তাদের কাছে আজ শুধু নিজের জাতির উপকার করাই আদর্শে পরিণত হয়েছে। তথাকথিত গণতন্ত্র এনেছে নৈতিক-উচ্ছৃংখলা, সৃষ্টি করেছে পুঁজিবাদী সমাজ, আধুনিক সভ্যতার চরম শিখরে ওঠে মানুষ ভুলতে পারেনি সাদাকালোর ভেদাভেদ। ইহুদীবাদ আজ চরমভাবে হুমকি দিচ্ছে মানবতাকে। নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার মোহে গড়ে তোলা হয়েছে মরণাস্ত্রের পাহাড়। বৃহৎ শক্তিগুলোর হুমকির দাপটে-যুদ্ধের ভয়ে মানবতা আজ সদা কম্পমান। একদিকে উটচে পড়েছে ভোগের পেয়ালা, অন্যদিকে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে গুণছে মৃত্যুর প্রহর।

সারা বিশ্বের অগণিত মানুষের আজ একটি মাত্র জিজ্ঞাসা। এই নিরাশা, এই হিংসা-বিদ্বেস এই লাঞ্চনার কি শেষ নেই? মুক্তির আশায়, শান্তির আশায় মানুষ এক পথ ছেড়ে চলতে চেয়েছে অন্যপথে। কিন্তু বার বার হয়েছে ব্যর্থ। পুরাতন শিকলের বদলে নতুন আর এক শিকল মানুষের গলায় জড়িয় পড়েছে। তাই মানুষের সামনে আজ একটি মাত্র পথ। তার স্রষ্টার দেয়া সহজ সরল পথ ইসলাম।

আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে মুক্তির পথ হলো হযরত মুহাম্মদ (স) এর প্রদর্শিত পথ ইসলাম একথা শুধু মুসলমানরা নয়, অমুসলিম গবেষকরাও স্বীকার করেছেন যে, হযরত মুহাম্মদ (স) মানুষের জন্যে যে শিক্ষা রেখে গেছেন তা আজও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। তাঁর ওফাতের চৌদ্দশত বছর পরও তাঁর শিক্ষা অটুট রয়েছে কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে। আজকাল তো মানুষের উন্নতি ও হয়েছে অনেক। পৃথিবী এখন মানুষের কাছে ছোট। খুব সহজেই রাসূলের (স) এই শিক্ষাকে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব। তাই একথা খুব স্বাভাবিকভাবে দাবী করা যায় যে মানুষের জন্যে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ মুক্তি পেতে পারে একমাত্র ইসলামের পথেই।

আল্লাহ পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে মুক্তির পথ হলো হযরত মুহাম্মদ (স) এর প্রদর্শিত পথ ইসলাম। একথা শুধু মুসলমানরা নয়, অমুসলিম গবেষকরাও স্বীকার করেছেন যে, হযরত মুহাম্মদ (স) মানুষের জন্যে যে শিক্ষা রেখে গেছেন তা আজও অবিকৃত অব্স্থায় রয়েছে। তাঁর ওফাতের চৌদ্দশত বছর পরও তাঁর শিক্ষা অটুট রয়েছে কুরআন এবং হাদীসের মধ্যে। আজকাল তো মানুষের উন্নতিও হয়েছে অনেক। পৃথিবী এখন মানুষের কাছে ছোট। খুব সহজেই রাসূলের (স) এই শিক্ষাকে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব। তাই একথা খুব স্বাভাবিকভাবে দাবী করা যায় যে মানুষের জন্যে সর্বশেষ এবং একমাত্র মুক্তির পথ এখন ইসলাম। একবিংশ শতাব্দীর নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষ মুক্তি পেতে পারে একমাত্র ইসলামের পথেই।

ইসলাম সাধারণ অর্থে একটি ধর্মের নাম নয়। ইসলামের প্রকৃত অর্থ তাই আমাদেরকে ভালভাবে বুঝতে হবে। আমদেরকে বুঝতে হবে, আমরা যারা মুখে মুখে ইসলাম মেনে নিয়েছি কিংবা মুসলমান বলে নিজেদেরকে পরিচয় দেই-তাদের প্রকৃত দায়িত্ব কি?


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি