তাবি'ঈদের জীবনকথা (৩য় খণ্ড)
লেখকঃ ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ
প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ
ঈমানী শক্তি, দীনী আবেগ, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ এবং জ্ঞান ও কর্মগত সেবার দিক দয়ে ইসলামের রয়েছে তিনটি ধারাবাহিক 'খাইরুল কুরূন' তথা সর্বোত্তম যুগ। আর তা হলাে সাহাবা, তাবিঈন ও তাবি'-তাবিঈনের যুগ। এ তিনটি যুগ বা সময়কালে মুসলিম জাতি দীন চর্চা, আধ্যাত্মিক উৎকর্য, পার্থিব সৌভাগ্য ও সফলতার চূড়ায় পৌছে যায়। এর পরে যে উন্নতি ও উৎকর্ষ মুসলমানরা অর্জন করে তা ছিল কেবল সভ্যতারূপী প্রাসাদের বাহ্যিক শােভা ও অলঙ্কার। এই তিনটি যুগ তথা পর্যায়ের দ্বিতীয়টি হলাে তাবিঈন-এর যুগ। তাবিঈন" আরবী শব্দ। এটি বহুবচন, একবচনে তাবিঈ'। মূল ধাতু - - ৩, অর্থ : অনুসরণ করা, পরে আসা ইত্যাদি। আর 'তাবিদ' শব্দটি কর্তৃবাচক বিশেষ্য, যার অর্থ অনুসরণকারী, পরে বা পিছনে আগমনকারী। যেসব মানুষ রাসূলে কারীমের (সা) জীবনকালে বিদ্যমান ছিলেন, কিন্তু কোন কারণে ঈমান সহকারে তার সাক্ষাৎ ও সাহচর্য লাভের সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত থেকে যান। তবে তার কোন সাহাবীকে দেখার সুযােগ লাভে ধন্য হন। তেমনিভাবে যারা রাসূলুল্লাহর (সা) ইন্তিকালের পর জন্মগ্রহণ করেন, ঈমানদার মুসলমান হিসেবে বড় হন এবং কমপক্ষে রাসূলুল্লাহর (সা) একজন সাহাবীর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হন- তারা সবাই হলেন তাবিজ। এক কথায়, যেসব মুসলমান রাসূলুল্লাহকে (সা) দেখার সৌভাগ্য লাভ করেননি, তবে তার কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ ও সাহচর্য লাভ করেছেন, তাদেরকে বলা হয় তাবিঈন। আর যারা কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেননি, তবে কোন তাবিঈর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়েছেন, তারা হলেন তাবি'-তাবিঈন। রাসূলে কারীমের (সা) উপর হিরা গুহায় প্রথম ওহী নাযিলের দিন থেকে তার ওফাতের দিন পর্যন্ত সময়কালকে বলা হয় নুবুওয়াত ও রিসালাত'-এর যুগ। এর পরের ধারাবাহিক তিনটি যুগ হলাে : সাহাবী, তাবিঈন ও তাবি-তাৰিঈন। হযরত রাসূলে কারীমের (সা) একটি হাদীছের প্রেক্ষিতে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয় যে, সাহাবীদের যুগ শেষ হয়েছে হিজরী ১১০ সনে। হিজরী ১১০ সনের পরে কোন সাহাবী বেঁচে ছিলেন বলে ধরা হয় না। তাবিঈদের যুগ হিজরী কত সাল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়েছে, তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও হিজরী তৃতীয় শতকের কিছু সময় পর্যন্ত এ যুগ দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে হিজরী দ্বিতীয় শতকের গােটাটাই তাবিঈদের পদভারে পৃথিবী মুখর ছিল।