মানব সমাজে যখন ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠিত থাকে না, তখন প্রতিষ্ঠিত থাকে ইবলীসী বিধান। সেই অবস্থায় অধিকতর শক্তিশালী কোন মানূষ অথবা মানবগোষ্ঠী সাধারণভাবে সজকল মানুষের প্রভূ সেজে বসে। এসব শক্তিধর ব্যক্তি নিজেদের ইচ্ছা বাসনা বা খেয়াল খুশি মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়। অচিরেই সমাজ যুলম নির্যাতনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হতে শুরু করে। এসব মানুষের পক্ষে যেহেতু সত্য ও ন্যায়ের সঠক মানদণ্ড নির্ণহ্য করা সম্ভব হয় না, সেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই অসত্য সত্যে বরং অন্যায় ন্যায়ে পরিণত হয়ে যায়; পাপ পুণ্যের তারতম্য মনের গভীরে অবস্থান করলেও বাস্তব জীবনে তা আর বড্ড একটা দেখা যায় না। ফলে যিনা, নারী ধর্ষণ, মদপান, নরহত্যা ও সম্পদ হরণের মতো বড় পাপ কাজগুলোকে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়।
সমাজে বেহায়াপনা ও উলঙ্গপনা বেড়ে যায়। সংস্কৃতির নামে নাচ ও অশ্লীল গান প্রচলিত হয়। সমাজের শিল্প সাহিত্য ও গণ মাধ্যমগুলো যৌন সুড়সুড়ি দেয়ার হাতিয়ারে পরিণত হয়। দেশের শিক্ষা হয়ে পড়ে উদ্দেশ্যহীন। মানুষেরা পেয়ে হয়ে ওঠে চরমভাবে আত্মপূজারী। শোষণের আকাঙ্খা মানুষকে পেয়ে বসে। এমতাবস্থায় অপরাপর জন্তু-জানোয়ার আর মানুষের মধ্যে পার্থক্য বড্ড একটা থাকেনা। মানব সমাজে যখনই আইয়ামে জাহিলিয়াত জেঁকে বলসেছে তখনই আল্লাহ্‌ নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।
ইসায়ী ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পঞ্জীভূত জাহিলিয়াত দূর করার জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন ৭ম শতাব্দীর শুরুতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে নবুওয়াত দেন। সুদীর্ঘ ২৩ বছর সংগ্রাম করে তিনি গোটা আরবের বুক থেকে জাহিলিয়াত অপসারিত করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্য ও সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটান। মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রের সুন্দরতম পরিবেশ দুনিয়ার সুবিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের মানবিক চেতন নূতনভাবে জাগিয়ে তোলে। অল্প সময়ের তিনটি মহাদেশের বিশাল এলাকার অধিবাসীগণ ইসলামী জীবন বিধান গ্রহণ করে।
এই অবস্থা দেখে সেদিন ইবলীসের চেহারা নিশ্চয়ই কালো হয়ে গিয়েছিলো। ইবলীস তাঁর চক্রান্ত চালাতে থাকে। মানুষের মনে মনে নানাবিধ সন্দেহ সংশয়, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এবং খটকা সৃষ্টি করে সে ধীরে ধীরে মানুষকে ইসলাম থেকে অনেক দূরে সরিয় নেয়। মানুষের মনে সে এমন সব ধ্যান ধারনা সৃষ্টি করে যার ফলে মানুষ নাস্তিকতাবাদ, সংশয়বাদ, সর্বেশ্বরবাদ, বহু ইশ্বরবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ, সমাজবাদ প্রভৃতির গোলক ধাঁধায় পড়ে যায়। আলাহ প্রদত্ত জীবন বিধানের প্রতি কেউ কেউ দেখায় উদাসীনতা, কেউবা ঘোষণা করে বিদ্রোহ।
সমাজ জীবন থেকে ইসলাম দূরে সরে গেলো। এরি ফলশ্রুতিতে সমাফ আজকের চেহারা লাভ করেছে।
সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর সর্বোত্র আজ মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব চলছে। বিভিন্ন ইজমের ষ্টীম রোলার মানুষকে নিষ্পেষিত করেছে। শান্তি ও স্বস্তির আজ দারুণ অভাব। মানুষের কোন মূল্য নেই। খুন খারাবী চলছে ব্যাপকভাবে। মদের ব্যবসা জম-জমাট। মাতালের অভাব নেই। অবৈধ যৌনাচার সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাজজ সন্তানের ভারে পৃথিবীর অংগন কেঁপে উঠছে। যৌনতাই আজকের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রধান বিষয়। শিক্ষা অঙ্গনে চলছে নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষার দৌরাত্ম। আজকের চিন্তাবিদদের অনেকেই মানুষকে বাঁদরের সন্তান প্রমাণ করতেই ব্যস্ত। ‘জোর যার মুল্লুক তাঁর’ নীতি চলছে সবখানে। আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে মিনিটের মিধ্যে কয়েক লক্ষ লোক ধ্বংস করার জন্য এটম বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা সাজিয়ে রাখা হয়েছে সারি সারি। নিউট্রন বোমা তৈরির কাজ চলছে। চারদিকে আজ অশান্তি, অস্বস্তি, অসাম্য, অনিয়ম, অনৈতিকতা, ভাংগন আর ধ্বংসযজ্ঞ। পৃথিবীতে আবার নেমে এসেছে ঘোর জাহিলিয়াত।


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি