কুরআন মাজীদের সাথে মুমিনের সম্পর্ক
আরবী****

৬। হযরত আবু মুসা আশয়ারী ( রঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে মুমিন কুরআন পাঠ করে সে কমলা লেবুর সাথে তুলনীয়। এর ঘ্রাণও উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন পাঠ করে না সে খেজুরের সাথে তুলনীয়। এর কোন ঘ্রান নেই কিন্তু তা সুমিষ্ট। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে না সে মাকাল ফল তুল্য। এর কোন ঘ্রাণও নেই এবং স্বাদও অত্যন্ত তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করে সে রাইহান ফলের সাথে তুলনীয়। এর ঘ্রান অত্যন্ত সুমিষ্ট কিন্তু স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত। ———–( বুখারী ও মুসলিম )

অপর বর্ণনায় আছে, “যে মুমিন বাক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদানুযায়ী কাজ করে সে কমলা লেবু সদৃশ। আর যে মুমিন ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে না কিন্তু তদানুযায়ী কাজ করে সে খেজুর তুল্য।”

কুরআন মাজীদের মর্যাদা ও মহানত্ত হৃদয়ঙ্গম করানোর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। অর্থাৎ কুরআন মাজীদ স্বয়ং একটি সুগন্ধী। মুমিন ব্যক্তি এর তেলাওয়াত করলেও সুগন্ধি ছড়াবে আর মুনাফিক ব্যক্তি পাঠ করলেও ছড়াবে।

অবশ্যই মুমিন এবং মুনাফিকের ব্যক্তিত্বের মধ্যে যে পার্থক্য তা ঈমান ও নিফাকের কারনেই হয়ে থাকে। মুমিন বাক্তি যদি কুরআন পাঠ না করে তাহলে তাঁর সুগন্ধি ছড়ায় না, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্ব মিষ্টি ফলের মতই সুস্বাদু। কিন্তু যে মুনাফিক কুরআন পাঠ করেনা তাঁর সুগন্ধিও ছড়ায় না ও তাঁর ব্যক্তিত্ব তিক্ত এবং খারাপ স্বাদযুক্ত ফলের মতো।

অপর এক বর্ণনায় আছে- যে মুমিন ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এবং তদানুযায়ী আমল করে সে কমলা লেবু ফল- সদৃশ। আর যে মুমিন কোরআন পড়ে না কিন্তু তদানুযায়ী আমল করে সে খেজুরের সদৃশ। উল্লেখিত দুটি বর্ণনার মধ্যে পার্থক্য কেবলমাত্র এতোটুকু যে, এক বর্ণনায় কুরআন তেলাওয়াত এবং এর উপর ঈমান রাখার পরিনাম বর্ণনা করা হয়েছে এবং অপর বর্ণনায় কুরআন তেলাওয়াত এবং তদানুযায়ী কাজ করার পরিনাম বর্ণনা করা হয়েছে। মৌলিক দিক থেকে উভয়ের প্রানসত্ত্বা একই।

কুরআন হচ্ছে দুনিয়া ও আখিরাতের উন্নতি লাভের মাধ্যম
আরবী****

৭। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব ( রঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা এই কিতাবের ( কুরআন ) মাধ্যমে একদল লোককে উন্নত করবেন এবং অপর দলকে পতন ঘটাবেন। —– ( সহীহ মুসলিম )

এ হাদীসের তাৎপর্য হচ্ছে- যেসব লোক এই কিতাব নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁদের উন্নতি বিধান করবেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁদের মস্তক সমুন্নত রাখবেন। কিন্তু যেসব লোক এই কিতাব নিয়ে অলস হয়ে বসে থাকবে এবং তদানুযায়ী কাজ করবেন। অথবা যেসব লোক এই কিতাবকে প্রত্যাখ্যান করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁদেরকে নিম্নস্তরে নামিয়ে দেবেন। দুনিয়ায়ও তাঁদের জন্য কোন উন্নতি নেই এবং আখেরাতেও কোন সুযোগ- সুবিধা নেই।

কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ শুনে ফেরেশতারা সমবেত হয়
আরবী****

৮। হযরত আবু সাঈদ খুদরী ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। উসাইদ ইবনে হুদাইর ( রাঃ ) বলেন যে, তিনি একরাতে নিজের ঘরে বসে নামাজের মধ্যে সূরা বাকারা পড়ছিলেন। তাঁর ঘোড়াটি নিকটেই বাধা ছিল। হঠাৎ ঘোড়াটি লম্ফ- ঝম্ফ শুরু করে দিলো। তিনি তখন তেলাওয়াত বন্ধ করলেন ঘোড়াটি শান্ত হয়ে গেলো। তিনি যখন পুনরায় তেলাওয়াত শুরু করলেন ঘোড়াটি আবার লাফ-ঝাপ শুরু করে দিলো। অতঃপর তিনি পাঠ বন্ধ করলেন। ঘোড়াটিও শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। তিনি আবার কুরআন পড়া শুরু করলে ঘোড়াটিও দৌড়ঝাঁপ করতে লাগলো। তিনি সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে নিলেন। কারন তাঁর ছেলে ইয়াহিয়া ঘোড়ার নিকটেই ছিল। তাঁর ভয় হল ঘোড়া হয়তো লাফালাফি করে ছেলেকে আহত করতে পারে। তিনি ছেলেকে এর কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে আসমানের দিকে মাথা তুললেন। তিনি ছাতার মত একটি জিনিস দেখতে পেলেন এবং তাঁর মধ্যে আলোকবর্তিকার মতো একটি জিনিস দেখলেন। সকালবেলা তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন- হে ইবনে হুদাইর, তুমি পড়তে থাকলে না কেন? হে ইবনে হুদাইর, তুমি পড়তে থাকলে না কেন? রাবী বলেন- আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার ভয় হল ঘোড়াটি না আবার আমার ছেলে ইয়াহিয়াকে পদদলিত করে। কেননা সে এর কাছেই ছিল। আমি নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে ছেলেটির কাছে গেলাম। আমি আসমানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হঠাৎ দেখতে পেলাম- যেন একটি ছাতা এবং তাঁর মধ্যে একটি আলোকবর্তিকা জ্বলজ্বল করছে।

আমি ( ভয় পেয়ে ) সেখান থেকে চলে আসলাম ( অর্থাৎ খোলা আকাশের নীচ থেকে ) যেন আমার দৃষ্টি পুনরায় সেদিকে না যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- তুমি কি জান এগুলো কি? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) বললেন- এরা ছিল ফেরেশতা। তোমার কুরআন পড়ার আওয়াজ শুনে তারা কাছে এসে গিয়েছিলো। তুমি যদি তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে তাহলে তারা ভর পর্যন্ত অপেক্ষা করতো এবং লোকেরা তাঁদের দেখে নিতো কিন্তু তারা লোক চক্ষুর অন্তরাল হতো না। —– ( বুখারী ও মুসলিম )

এটা কোন জরুরী কথা নয় যে, যখনই কোন ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে এবং সেও অনুরূপ ঘটনার সম্মুখীন হবে। স্বয়ং হযরত উসাইদ ইবনে হুদাইরের সামনে প্রত্যহ এরূপ ঘটনা ঘটতো না। তিনি তো সবসময়ই কুরআন পাঠ করতেন। কিন্তু এই দিন তাঁর সামনে এই বিশেষ ঘটনাটি ঘটে- যে সম্পর্কে আমরা জানি না যে, তা কেন ঘটলো। ইহা তাহার একটি বিশেষ ‘কারামাত’ যাহা সব সময় প্রকাশ পায় না। এই জন্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বলেননি যে, তোমার সামনে হামেশাই এরূপ ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ প্রতিদিন রাতে তুমি যদি এভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকো তাহলে ভোরবেলা এরূপ ঘটনা ঘটবে যে, ফেরেশতারা দাঁড়িয়ে থাকবে আর লোকেরা তাদের দেখে নেবে। এর পরিবর্তে তিনি বলেছেন- পুনরায় যদি কখনো এরূপ ঘটে তাহলে তুমি নিশ্চিন্তে কুরআন তেলাওয়াত করতে থাকবে। এর মধ্যে কোন শংকার কারন নেই।

কিন্তু আজকাল আমরা এরূপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি না কেন? আসল কথা হচ্ছে আল্লাহ প্রত্যেকের সাথে এরূপ ঘটনা ঘটান না। তিনি তাঁর প্রতিটি মাখলুক এমনকি প্রতিটি ব্যক্তির সাথে ভিন্ন ভিন্ন আচরন করে থাকেন। তিনি প্রতিটি ব্যক্তিকেই সব কিছু দেননি। আর এমন কেউ নেই যাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে দিয়ে থাকেন।

কুরআন পাঠকারীদের উপর প্রশান্তি নাযিল হয়
আরবী****

৯। হযরত বারআ ইবনে আযেব ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সূরা কাহফ পড়ছিল এবং তাঁর নিকটেই একটি ঘোড়া দুইটি দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। এ সময় একটি মেঘখণ্ড তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করলো এবং ধীরে ধীরে নীচে নেমে আসতে লাগলো। তা যতো নীচে আসতে থাকলো তাঁর ঘোড়া ততই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিলো। যখন ভোর হল তখন সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লামের কাছে এসে তাঁকে এ সম্পর্কে অবহিত করলো। তিনি বললেন- এটা হলো প্রশান্তি যা কুরআনের সাথে নাযিল হচ্ছিলো। —( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )

পূর্ববর্তী হাদীসে উল্লেখিত ফেরেশতাদের পরিবর্তে এখানে প্রশান্তি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রশান্তির পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা করা বড়ই কঠিন। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন জায়গায় ‘সাকীনাহ’ ( প্রশান্তি ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার সেই রহমত বা অনুগ্রহ যা মানুষের মনে প্রশান্তি, নিশ্চিন্ততা ও শীতলতা সৃষ্টি করে এবং মানুষকে আত্মিক দিক থেকে অনাবিল শান্তি অনুভব করে তাঁর জন্যে ‘সাকীনাহ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি বিশেষ সাহায্য আসতে থাকে তবে তা বুঝানোর জন্যেও এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অতএব, এটা মুশকিল যে, এখানে কি এ শব্দটি ‘ফেরেশতা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে অথবা আল্লাহর এমন কোন করুনার কথা বুঝানো হয়েছে যা সেই ব্যক্তির নিকটতর হচ্ছিলো।

এরূপ ঘটনাও সবার ক্ষেত্রে সংঘটিত হয় না এবং স্বয়ং ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সব সময় ঘটেনি। এটা এমন একটি বিশেষ অবস্থা ছিল যা ঐ ব্যক্তির সামনে প্রতিভাত হয়েছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এর অর্থ তাৎপর্য বলে দেয়ার জন্যে বর্তমান না থাকতেন তাহলে ঐ ব্যক্তি সব সময় অস্থিরতার মধ্যে কালাতিপাত করতো যে, তাঁর সামনে এটা কি ঘটে গেলো।

উল্লেখিত দুইটি হাদীসেই এই বিশেষ অবস্থায় ঘোড়ার দৌড় এবং লম্ফ-ঝম্ফের কথা বলা হয়েছে। আসল কথা হচ্ছে, কোন কোন সময় পশু-পাখি এমন সব জিনিস দেখতে পায় যা মানুষের চর্মচক্ষুতে দেখা যায় না। আপনারা হয়তো একথা পড়ে থাকবেন যে, ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পূর্বেই পাখিরা লুকিয়ে যায়। চতুষ্পদ জন্তুগুলো পূর্বক্ষণেই জানতে পারে যে, কি ঘটতে যাচ্ছে। মহামারীর প্রাদুর্ভাব হওয়ার পূর্বেই কুকুর এবং অন্যান্য প্রানী চিৎকার শুরু করে দেয়। এর মূল কারন হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা এগুলোকে এমন কিছু ইন্দ্রীয় শক্তি দান করেছেন যা মানব জাতিকে দেওয়া হয় নি। এর ভিত্তিতে বাকশক্তিহীন প্রাণীগুলো এমন কতগুলি বিষয়ের জ্ঞান অথবা অনুভূতি লাভ করতে পারে যা মানুষের জ্ঞান অনুভুতির সীমা বহির্ভূত।

সূরা ফাতিহার ফযিলত
আরবী*****

১০। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “যে ব্যক্তি এমন নামাজ পড়লো, যার মধ্যে উম্মুল কুরআন ( সূরা ফাতিহা ) পাঠ করে নি- তাঁর নামাজ অর্থ ও মূল্যহীন থাকে যাবে। (রাবী বলে ) একথাটি তিনি তিনবার উল্লেখ করলেন। “তাঁর নামাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে”। আবু হুরাইরাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা যখন ইমামের পিছনে নামাজ পড়বো, তখন কি করবো? তিনি জবাবে বললেন- তখন মনে মনে পাঠ করো। কেননা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- “মহান আল্লাহ বলেন, আমি নামাজকে আমার এবং বান্দার মাঝে দুই সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছি। বান্দাহ যা চাইবে আমি তাকে তা দান করবো। বান্দাহ যখন বলে, “আল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ( যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক ), তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন- বান্দাহ আমার প্রশংসা করেছে। যখন সে বলে, আর-রাহমানির রাহীম ( তিনি দয়াময়, তিনি অনুগ্রহকারী ), তখন মহামহিম আল্লাহ বলেন, বান্দাহ আমার মর্যাদা স্বীকার করেছে এবং আমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বান্দাহ যখন বলে, ইয়াকা না’বুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তায়িন ( আমরা কেবল তোমারই ইবাদাত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি ), তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার এবং বান্দার মাঝে ( অর্থাৎ বান্দাহ আমার ইবাদাত করবে, আর আমি তাঁর সাহায্য করবো ), আমার বান্দাহ যা চায়, আমি তা দেবো। যখন বান্দাহ বলে, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম, সিরাতাল্লাজিনা আন আমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম অলাদ্দ দোয়াল্লিন ( আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করুন, সেই সব বান্দাহদের পথে যাদের আপনি নিয়ামত দান করেছেন, যারা অভিশপ্তও নয় এবং পথ ভ্রষ্টও নয় ), তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার বান্দার জন্যে এবং আমার বান্দা যার প্রার্থনা করেছে তা সে পাবে।”—– ( মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ )

ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ
জামায়াতে নামাজ পরাকালীন সময়ে মুক্তাদিগনকে সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে কি-না এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আবু হুরাইয়ারহ বলেছেন, মুক্তাদিগন চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নিবে। ইমাম শাফেয়ীর মতে মুক্তাদিগনকে সর্বাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। ইমাম আবু হানিফার মতে, কোন অবস্থায়ই মুক্তাদিগন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না। ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদের মতে, ইমাম ফাতিহা পাঠের শব্দ যদি মুক্তাদিগনের কানে আসে তাহলে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না, বরং ইমামের পাঠ মনোযোগ সহকারে শুনবে। কিন্তু ইমামের ফাতিহা পাঠের শব্দ মুক্তাদিগনের কানে না আসলে তারা ফাতিহা পাঠ করবে।

ইমাম আবু হানীফা প্রথম দিকে অনুচ্চ শব্দে কিরাত পাঠ করা নামাজে মুক্তাদিগনের সূরা ফাতিহা পাঠ করার পক্ষপাতি ছিলেন। বিশিষ্ট হানাফী আলেম আল্লামা মোল্লা আলী কারী, আবু হাসান সিন্ধী, আব্দুল হাই, রশীদ আহমাদ নিঃশব্দে কিরাত পাঠ করা নামাজে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন ( হক্কানী তাফসির- মাওলানা সামছুল হক ফরিদপুরী।

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী বলেন, ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে আমি যতটুকু অনুসন্ধান করেছি তাঁর আলোকে অধিকতর সঠিক পন্থা হচ্ছে এই যে, ইমাম যখন উচ্চস্বরে ফাতিহা পাঠ করবে, মুক্তাদিগন তখন চুপ থাকবে। আর ইমাম যখন নিঃশব্দে ফাতিহা পাঠ করবে, তখন মুক্তাদীরাও চুপে চুপে ফাতিহা পাঠ করবে। এই পন্থায় কুরআন ও হাদীসের কোন নির্দেশের বিরোধিতা করার কন সন্দেহ থাকে না। ফাতিহা পাঠ সংক্রান্ত যাবতীয় দলিল সামনে রেখে এরূপ একটি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে।

কিন্তু যে ব্যক্তি কোন অবস্থাতেই ইমামের পেছনে ফাতিহা পাঠ করে না, অথবা সর্বাবস্থায় ফাতিহা পাঠ করে আমরা এটা বলতে পারিনা যে, তাঁর নামাজ হয় না। কেননা উভয় মতের স্বপক্ষে দলীল আছে এবং এই ব্যক্তি জেনে বুঝে উদ্দেশ্যমুলকভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশের বিরোধিতা করছে না। বরং তাঁর কাছে দলীলের ভিত্তিতে যে মতটি প্রমানিত, সে সেই মতের উপর আমল করছে। ( রাসায়েল-মাসায়েল, ১ম খণ্ড, পাতা-১৭৯, ১৮০ )

কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা ফাতিহা
আরবী*****

১১। হযরত আবু সাঈদ ইবনে মুয়াল্লাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম আমাকে স্বশব্দে ডাকলেন। আমি ( তখন নামাজরত থাকার কারনে ) তাঁর ডাকে সাড়া দিতে পারলাম না। অতপর আমি তাঁর কাছে এসে বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, আমি নামাজে রত ছিলাম। তিনি বললেন- মহান আল্লাহ কি বলেননি, “আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল যখন তোমাদেরকে ডাকেন তখন তাঁদের ডাকে সাড়া দাও।” ( সূরা আনফাল, আয়াত ২৪ ) অতপর তিনি বললেন, তোমার মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবার পূর্বে আমি কি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে মহান এবং সবচেয়ে বড় সূরাটি শিখিয়ে দেবো না? একথা বলে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর আমরা যখন মসজিদ থেকে বের হতে উদ্যত হলাম, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, আপনি বলেছেন- “আমি তোমাকে কুরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি অবশ্যই শিখিয়ে দেবো।” তিনি বললেন- তা আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন ( সূরা ফাতিহা )। এটাই সাবউল মাসানী ( পুনরাবৃত সাত আয়াত ) এবং তাঁর সাথে রয়েছে মহান আল কুরআন, যা আমাকে দান করা হয়েছে। —-( সহীহ বুখারী )

হযরত আবু সাঈদের ( রাঃ ) নামাজরত অবস্থায় তাঁকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডাকার দ্বারা একথা পরিস্কার হয়ে যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁকে ডাকছিলেন, তখন তিনি নফল নামাজ পড়ছিলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহবান শুনার পর তাঁর কর্তব্য ছিল নামাজ ছেড়ে দিয়ে তাঁর কাছে হাজির হওয়া। কেননা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দেয়া ফরয। আর তিনি তো তখন নফল নামায পড়ছিলেন। মানুষ যে কাজেই রত থাকুক- যখন তাঁকে আল্লাহর রাসুলের পক্ষ থেকে ডাকা হবে তখন এই ডাকে সাড়া দেয়া তাঁর উপরে ফরয।

‘সাবউল মাসানী’ – বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে – সেই সাতটি আয়াত যা নামাজে পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয়, অর্থাৎ সূরা ফাতিহা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- এই সাতটি আয়াত সম্বলিত সূরাটি কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা এবং এর সাথে রয়েছে কুরআন মাজীদ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- এই আয়াত কয়টি পৃথক যা বার বার পাঠ করা হয় এবং তাঁর সাথে কুরআন মাজীদের অবস্থান। একথার তাৎপর্য হচ্ছে- একদিকে পুরা কুরআন শরীফ এবং অন্য দিকে সূরা ফাতিহা। এখান থেকেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই মত পোষণ করেছেন যে, এটা কুরআন মাজীদের সবচেয়ে বড় সূরা। কেননা সমগ্র কুরআনের মুকাবেলায় এই সুরাকে রাখা হয়েছে। এখানে চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে এই যে, ফাতিহাকে সবচেয়ে বড় সূরা বলার অর্থ এই নয় যে, তা শব্দ সংখ্যা বা আয়াত সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বড় সূরা। বরং এর অর্থ হচ্ছে- বিষয়বস্তুর বিচারে সূরা ফাতিহা সবচেয়ে বড় সূরা। কেননা কুরআন মাজীদের পুরা শিক্ষার সংক্ষিপ্তসার এই সুরার মধ্যে নিহিত রয়েছে।

কুরআনের সাহায্যে বাড়ি ঘর সজীব রাখো
আরবী******

১২। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তোমরা নিজেদের ঘরকে কবরে পরিনত করো না। যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় তা থেকে শয়তান পলায়ন করে। —- ( সহীহ মুসলিম )

এ হাদীসে দুটি বিষয়ের অবতারনা করা হয়েছে। এক, নিজেদের ঘরকে কবরস্থানে পরিনত করো না। এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে- তোমাদের ঘরের অবস্থা যদি এই হয় যে, তাতে নামায পড়ার মতো কোন লোক নেই এবং কুরআন পড়ার মতো কোন লোকও নেই। আর কোনরূপেই এটা প্রকাশ পায় না যে, তাতে কোন ঈমানদার লোক বা কুরআন পাঠকারী বসবাস করে- তাহলে এরূপ ঘর যেন একটি কবরস্থান। এটা মৃত জনপদ। এটা জীবন্তদের জনপদ নয়।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- যেহেতু সমস্ত পুরুষ লোক মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করে থাকে – এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম বলেছেন, নিজেদের ঘরকে তোমরা কবরস্থান বানিও না। অর্থাৎ পুরা নামায মসজিদেই পড়ো না, বরং এর কিছু অংশ ঘরে আদায় করো। যদি ঘরে নামায না পড়ো তাহলে এর অর্থ হচ্ছে- আপনারা মসজিদকে ঠিকই জীবন্ত রেখেছেন, কিন্তু ঘর কবরস্থানের মতো হয়ে গেছে। এজন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যাতে মসজিদও প্রাণচঞ্চল থাকবে এবং ঘরও জীবন্ত থাকবে। এজন্য ফরয নামায সমূহ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করা এবং সুন্নাত, নফল ও অন্যান্য নামায ঘরে আদায় করা পছন্দনীয় বলা হয়েছে। এতে উভয় ঘরেই প্রান চাঞ্চল্য বিরাজ করবে।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, যে ঘরে সূরা বাকারা তেলাওয়াত করা হয় সেখান থেকে শয়তান পলায়ন করে। একদিকে রয়েছে সমস্ত কুরআন মাজীদের মর্যাদা, অপরদিকে রয়েছে প্রতিটি সুরার রয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য। এখানে সূরা বাকারার মর্যাদা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- যে ঘরে এই সূরা পাঠ করা হয় সেখান থেকে শয়তান ভেগে যায়। এটা কেন হয়? এর কারন হচ্ছে- সূরা বাকারার মধ্যে পারিবারিক জীবন এবং দাম্পত্য বিষয় সংক্রান্ত আইন- কানুন বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। বিবাহ ও তালাকের সাথে সম্পর্কিত আইনও এ সূরায় পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণিত হয়েছে। সমাজকে সুন্দর ও সুস্থ রাখার যাবতীয় মূলনীতি এবং আইন- কানুন এ সুরার আলোচনার আওতায় এসে গেছে। এ জন্য যেসব ঘরে বুঝে শুনে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় এবং তদানুযায়ী কাজ করা হয় সেসব ঘরে শয়তান প্রবেশ করে কখনো ঝগড়া- বিবাদ বাঁধাতে সফলকাম হতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মানব জীবনের সংশোধনের জন্যে যে পথ নির্দেশ দিয়েছেন – তা যাদের জানা নেই অথবা জানা আছে কিন্তু তাঁর বিরোধিতা করা হচ্ছে- শয়তান কেবল সেখানেই ফিতনা- ফাসাদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। কিন্তু যে পরিবারের লোকেরা আল্লাহর হুকুম পালন সম্পর্কে অবগত এবং তদানুযায়ী জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত- শয়তান সেখানে কোন পাত্তাই পায় না এবং কোন বিপর্যয় সৃষ্টি করতেও সক্ষম হয় না।

কুরআন মাজীদ কিয়ামতের দিন শাফায়াৎকারী হবে
আরবী*****

১৩। হযরত আবু উমামা ( রা ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ তোমরা কুরআন পড়ো। কেননা কুরআন তাঁর পাঠকদের জন্য কিয়ামতের দিন শাফায়াতকারী হয়ে আসবে। দুটি চাকচিক্যময় ও আলকিত সূরা- বাকারা ও আলে ইমরান পাঠ করো। কেননা এই সূরা দুটি কিয়ামতের দিন এমনভাবে আসবে যেন- দুটি ছাতা অথবা ছায়া দানকারী দুই খণ্ড মেঘ অথবা অথবা পাখির পালকযুক্ত দুটি প্রসারমান ডানা। তা নিজের পাঠকদের পক্ষ অবলম্বন করে যুক্তি প্রমান পেশ করতে থাকবে। তোমরা সূরা বাকারা পাঠ করো। কেননা তা গ্রহন করলে বরকত ও প্রাচুর্যের কারন হবে। এবং তা পরিত্যাগ করলে আফসোস, হতাশা ও দুঃখের কারন হবে। বিপথগামীরা এই সুরার বরকত লাভ করতে পারে না। – –( সহীহ মুসলিম )

এ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম প্রথমে যে কথা বলেছেন তা হল “তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ করো”। কেননা তা কিয়ামতের দিন তাঁর পাঠকদের জন্যে শাফায়াতকারী হবে। একথার অর্থ এই নয় যে, তা মানুষের যাবতীয় বিপথ দূর করার জন্য অনমনীয় সুপারিশকারী হয়ে দাঁড়াবে বরং এর অর্থ হচ্ছে- যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে কুরআন পড়েছে এবং তদানুযায়ী নিজের জীবন সংশোধন করেছে- এই কুরআন কিয়ামতের দিন তাঁর শাফায়াতের কারন হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার আদালতে এ কথা উত্থাপিত হবে যে, এই বান্দাহ তাঁর কিতাব পাঠ করেছে, তাঁর অন্তরে ঈমান বর্তমান ছিল, সে যখনই এই কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তা পাঠ করতে নিজের সময় ব্যয় করেছে। এ জন্যই তা কিয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে পাঠকের জন্য শাফায়াতকারী হবে।

দ্বিতীয় যে কথাটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তা হল- কুরআন মাজীদের দুটি অতি উজ্জ্বল সূরা অর্থাৎ সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান পাঠ করো। এ সূরা দুটিকে যার ভিত্তিতে আলোকময় সূরা বলা হয়েছে তা হচ্ছে- এই দুটি সুরার মধ্যে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদী-খ্রিস্তানদের সামনে পূর্ণাংগভাবে যুক্তি প্রমান তুলে ধরা হয়েছে এবং মুশ্রিকদের সামনেও। অনুরূপভাবে মুসল্মান্দেরকেও এই সূরাদ্বয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত দান করা হয়েছে। মোট কথা এই দুটি সূরায় কুরআন মাজীদের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যাপকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই জন্য বলা হয়েছে এই সূরা দুইটি পাঠ করো। কিয়ামতের দিন এই সূরা দুইটি এমনভাবে উপস্থিত হবে যেমন কোন ছাতা অথবা মেঘ খণ্ড অথবা পালক বিছানো পাখির পাখা। এই সূরাদ্বয় তাঁর পাঠকারীর স্বপক্ষে দলীল- প্রমান পেশ করবে, তাঁদের সাহায্য করবে। কিয়ামতের দিন যখন কারো জন্য ছায়া বাকী থকবে না তখন এই কঠিন মুহূর্তে কুরআন তাঁর পাঠকারীদের জন্য ছায়া হয়ে উপস্থিত হবে। অনুরূপভাবে এই সূরাদ্বয় কিয়ামতের দিন তাঁর পাঠককে বিপদ-মুসিবত থেকে উদ্ধারকারী এবং আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাহায্যকারী হবে।

পুনরায় সূরা বাকারা সম্পর্কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে – যে ব্যক্তি তা পাঠ করে তা তাঁর জন্য বরকত ও প্রাচুর্যের কারন হবে। আর যে ব্যক্তি তা পাঠ করে না তাঁর জন্য এটা আফসোসের কারন হবে। সে কিয়ামতের দিন আফসোস করে বলবে- দুনিয়াতে সূরা বাকারার মতো এতো বড় নিয়ামত তাঁর সামনে এসেছে কিন্তু সে তা থেকে কোন কল্যাণ লাভ করেনি। অতঃপর তিনি বলেছেন, বাতিলপন্থী লোকেরা এই সুরাকে সহ্য করতে পারে না। অর্থাৎ যে ব্যক্তির মধ্যে সামান্যতম অন্যায় ও অসত্যের পূজা মওজুদ রয়েছে সে এই সুরাকে বরদাশত করতে পারে না। কেননা এই সূরাদ্বয়ের মধ্যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বাতিলের মূলোৎপাটনকারী বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে। যা কোন বাতিল পন্থী লোক বরদাশত করতে পারেনা।

সূরা বাকারা ও আলে ইমরান
ঈমানদার সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবে

আরবী*****

১৪। হযরত নাওয়াশ ইবনে সাময়া’ন ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন কুরআন মাজীদ এবং তদানুযায়ী আমলকারী লোকদের উপস্থিত করা হবে। তাঁদের অগ্রভাগে সূরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরান থাকবে। এ দুইটি যেন মেঘমালা অথবা মেঘের ছায়া- যার মধ্যে থাকবে বিদ্যুতের মতো আলোক অথবা সেগুলো পালোকে বিছানো পাখির পাখার ন্যায় হবে। এই দুইটি সূরা তাঁদের পাঠকারীদের স্বপক্ষে যুক্তি প্রমান পেশ করতে থাকবে। –( সহীহ মুসলিম )

পূর্ব হাদীসেও কিছুটা শাব্দিক পার্থক্য সহকারে একই বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে। এটাও হতে পারে যে, উভয় সাহাবীই একই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ হাদীস শুনে থাকবেন। এবং উভয়ে নিজ নিজ ভাষায় ভাষায় বর্ণনা করেছেন। আর এটাও হতে পারে যে, বিভিন্ন স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই একই হাদীস বর্ণনা করে থাকবেন এবং দুই সাহাবীর বর্ণনা দুই ভিন্ন স্থানের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকবে। যাই হোক একথা সুস্পষ্ট যে, হাদীস দুইটির বিষয়বস্তু প্রায়ই এক।

পূর্ববর্তী বর্ণনায় শুধু কুরআন মাজীদ পাঠকারীদের উল্লেখ ছিল, কিন্তু এ হাদীসে তদানুযায়ী আমল করার কথাও বলা হয়েছে। পরিস্কার কথা হচ্ছে এই যে, কুরআন মাজীদ যদি সুপারিশকারী হয় তাহলে তা এমন লোকদের জন্যই হবে যারা কুরআন পাঠ করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তদানুযায়ী কাজও করেছে। যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন ব্যক্তি কুরআন মাজীদ তো ঠিকই পড়ে কিন্তু তদানুযায়ী কাজ করে না তাহলে কুরআন তাঁর পক্ষে দলীল হতে পারে না। এ হাদীসে পরিস্কার বলা হয়েছে- কুরআনের যেসব পাঠক তদানুযায়ী কাজ করে- কুরআন তাঁদের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে দাঁড়াবে এবং তাঁদের সাহায্য ও সুপারিশ করবে। কিয়ামতের দিন যখন ঈমানদার লোকেরা আল্লাহর দরবারে হাজির হবে তখন তাঁদেরকে কুরআনই সেখানে নিয়ে যাবে। যখন তাঁদেরকে আল্লাহর সমীপে পেশ করা হবে তখন কুরআনই যেন তাঁদের পক্ষে মুক্তির সনদ হবে। আমরা যেন দুনিয়াতে এই কুরআন অনুযায়ী জীবিন যাপন করে এসেছি – এই অর্থেই নবী ( সাঃ ) এর এই হিদায়াতনামা। অন্য কথায় তাঁদের মুক্তির জন্য স্বয়ং এই কুরআনের সুপারিশই যথেষ্ট হবে। কেবল ঈমানদার সম্প্রদায়ের সাথেই এরূপ আচরন করা হবে। এই দিন কাফের এবং মুনাফিকদের সাথে কুরআনের কোন সম্পর্ক থাকবেনা। আর যেসব লোকেরা কুরআনের নির্দেশাবলী জানা সত্ত্বেও তাঁর বিরোধিতা করেছে কুরআন তাদেরও সহযোগী হবেনা।

তিনি আরো বলেছেন, সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান ঈমানদার সম্প্রদায়ের আগে আগে থাকবে। এর কারন হচ্ছে- এই দুইটি আইন-কানুন সংক্রান্ত সূরা। সূরা বাকারায় ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক জীবনের জন্য আইনগত হিদায়াত দান করা হয়েছে। আর সূরা আলে ইমরানে মুনাফিক ও কাফের সম্প্রদায় এবং আহলে কিতাব সবার সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ সূরায় উহুদ যুদ্ধের উপরও আলোকপাত করা হয়েছে। এ ভাবে এই সূরা দুইটি মুমিন জীবনের জন্য হিদায়াতের বাহন। কোন ব্যক্তি যদি এই সূরাদ্বয়ের শিক্ষা অনুযায়ী নিজের পারিবারিক জীবনকে সংশোধন করে নিজের অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে তদানুযায়ী ঢেলে সাজায় এবং দুনিয়ায় ইসলামের সাথে যেসব ব্যাপারের সম্মুখীন হবে তাতেও যদি তারা এর হেদায়েত মোতাবেক ঠিক ঠিক কাজ করে তাহলে এরপর তাঁর ক্ষমা ও পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে কোনরূপ ত্রুটি থাকতে পারেনা। অতএব, এ সূরা দুইটি হাশরের ময়দানে ঈমানদার সম্প্রদায়ের হেফাজত করবে। হাশরের ময়দানে যে বিভিষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করবে এই সূরাদ্বয় তা থেকে তাঁদেরকে রক্ষা করবে এবং আল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে তাঁদের স্বপক্ষে সাক্ষ্য প্রমান পেশ করবে।

কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াত আয়াতুল কুরসী
আরবী****

১৫। হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- হে আবুল মুনযির, আল্লাহ তায়ালার কিতাবে তোমার জানা কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? আমি বললাম- আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন। তিনি পুনরায় বললেন- হে আবুল মুনযির, আল্লাহ তায়ালার কিতাবে তোমার জানা কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? আমি বললাম- “আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম” আয়াত। রাবী বলেন- তিনি আমার বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন – এই জ্ঞান তোমার জন্য মোবারক হোক এবং প্রাচুর্যময় হোক। ——–( সহীহ মুসলিম )

হযরত উবাই ইবনে কা’ব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই সব সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞান লাভের অধিকারী ছিলেন, কুরআন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে কুরআন সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

এ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশিক্ষন পদ্ধতির একটি দিক। সাহাবায়ে কেরাম দীনের কতটা জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং কুরআনকে কতটা বুঝছেন তা জানার জন্য তিনি মাঝে মাঝে তাঁদেরকে বিশেষ বিশেষ প্রশ্ন করতেন। সাহাবাদের নীতি ছিল, তারা রাসুলুল্লাহর প্রশ্নের জবাব নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী দেয়ার পরিবর্তে আরো অধিক জানার লোভে আরজ করতেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই অধিক ভালো জানেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, তিনি নিজে তা বলে দিবেন এবং এতে তাঁদের জ্ঞানের পরিধি আরো বেড়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য যদি সাহাবাদের আরো অধিক শেখানো হতো তাহলে সাহাবাদের বক্তব্য “আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলই ভালো জানেন” – প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দিয়ে দিতেন। আর যদি তাঁর উদ্দেশ্য হতো সাহাবাগন আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে কি পরিমান জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন তা জানা- তাহলে তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং তাঁর পুনরাবৃত্তি করতেন এবং তাঁদের কাছ থেকে উত্তর আশা করতেন। এখানে এই দ্বিতীয়টি উদ্দেশ্য ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) কে প্রথম দফা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বললেন- আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল অধিক ভালো জানেন। যেহেতু রাসুলুল্লাহর লক্ষ্য ছিল উবাই ইবনে কা’বের জানামতে কুরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্বাধিক ভারী- তা অবগত হওয়া, তাই তিনি পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। এর উত্তরে তিনি বললেন- আয়াতুল কুরসী হচ্ছে সবচেয়ে বড় আয়াত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জবাবের সমর্থন করলেন।

আয়াতুল কুরসীর এই মহত্ত্ব এবং গুরুত্ব এই জন্য যে, কুরআন মাজীদের যে কয়টি আয়াতে একত্ববাদের পূর্ণাংগ বর্ণনা দেয়া হয়েছে- আয়াতুল কুরসী তাঁর অন্যতম। আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা এবং গুনাবলীর সর্বাঙ্গীণ বর্ণনা এক তো সূরা হাশরের শেষ আয়াতে রয়েছে, দ্বিতীয়ত সূরা ফুরকানের প্রাথমিক আয়াত এবং তৃতীয়ত সূরা ইখলাছ ও আয়াতুল কুরসীতে রয়েছে। হযরত উবাই ইবনে কা’ব ( রাঃ ) যখন এই জবাব দিলেন তখন রাসুলুল্লাহ ( সাঃ ) তাঁর বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন- এই জ্ঞান তোমার জন্য কল্যাণকর হোক। বাস্তবই তুমি সথিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছ যে, এই আয়াতই কুরআন মাজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ আয়াত। আল্লাহ তায়ালার সম্পর্কে সঠিক ধারনা দেয়ার জন্যই কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে। মানুষ যদি আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করতে না পারে তাহলে তাঁর বাকী সমস্ত শিক্ষাই সম্পূর্ণ বেকার এবং অর্থহীন হয়ে যায়। মানুষের মাঝে তৌহিদের বুঝ এসে গেলে দীনের ভিত্তি কায়েম হয়ে গেলো। এই পরিপ্রেক্ষিতে যে আয়াতের মধ্যে তৌহিদের বিষয়বস্তুকে সর্বোত্তম পন্থায় বর্ণনা করা হয়েছে তাই কুরআন মাজীদের সর্ববৃহৎ আয়াত।

আয়াতুল কুরসীর ফযিলত সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর ঘটনা
আরবী*****

১৬। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে রমযানের ফিতরার সম্পদ সংরক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। একরাতে এক আগন্তুক আমার কাছে আসলো এবং ( স্তূপীকৃত ) শস্য ইত্যাদি হাতের আজল ভরে উঠাতে লাগলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট পেশ করবো। সে বলতে লাগলো, আমি খুবই অভাবগ্রস্থ মানুষ, আমার অনেক সন্তান রয়েছে এবং আমার নিদারুন অভাব রয়েছে। আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) বলেন- আমি ( দয়া পরবশ হয়ে ) তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। যখন সকাল হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু হুরাইরাহ, তুমি গত রাতে যাকে গ্রেফতার করেছিলে তাঁর খবর কি? আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল, সে নিজের নিদারুন অভাবের কথা বর্ণনা করলো এবং বলল, তাঁর অনেক সন্তান – সন্তুতি রয়েছে। এ জন্য আমি দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে। আমি নিশ্চিত হলাম যে, সে পুনরায় আসবে। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, সে পুনরায় আসবে। অতএব তাঁর আসার প্রতীক্ষায় আমি ওঁত পেতে থাকলাম। পরবর্তী রাতে সে ফিরে এসে খাদ্য শস্য চুরি করতে লাগলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির করবো। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন। কেননা আমি গরীব মানুষ এবং আমার বালবাচ্চা রয়েছে। আমি আর কখনো আসবো না। আমি পুনরায় দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয় দিন ভোরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরাইরাহ তোমার খবর কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে তাঁর কঠিন অভাবের কথা বর্ণনা করলো এবং বলল, তাঁর অনেক বাল-বাচ্চা রয়েছে। আমি দয়া পরবশ হয়ে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- সে তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছে এবং সে পুনরায় আসবে। আমি তাঁর আসার অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকলাম। অতএব সে পুনরায় এসে খাদ্য শস্য চুরি করলো। আমি তাঁকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, আমি অবশ্যই তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পেশ করবো। এটা তিনবারের শেষ বার এবং প্রতিবারই তুমি বলেছ, আমি আর আসবো না অথচ তুমি আসছ। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিখিয়ে দেব যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অশেষ কল্যাণ দান করবেন। রাতের বেলা আপনি যখন নিজের বিছানায় ঘুমাতে যাবেন তখন এই আয়াতুল কুরসী –“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম” শেষ পর্যন্ত পাঠ করবেন। আপনি যদি এরূপ করেন তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা আপনার জন্য একজন হিফাজতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর হওয়া পর্যন্ত কোন শয়তান আপনার কাছে ভিড়তে পারবেনা। ( রাবী বলেন ) সে যখন আমাকে এটা শিখালো আমি তখন তাঁকে ছেড়ে দিলাম। ভোরবেলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন- তোমার বন্দীকে কি করলে? আমি বললাম, সে আমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিয়েছে। তাঁর দাবী হচ্ছে, এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা আমাকে উপকৃত করবেন। নবী ( সাঃ ) বললেন- “সে তোমাকে সত্য কথাই বলেছে, কিন্তু সে নিজে হচ্ছে ডাহা মিথ্যুক। তুমি কি জানো তুমি তিন রাত যাবত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, না, আমি জানি না। তিনি বললেন- সে ছিল একটা শয়তান।” ( সহীহ বুখারী )

এখানে রমযানের যাকাত বলতে ফিতরার মাল বুঝানো হয়েছে। দিনের বেলা তা থেকে বিতরন করার পর যা অবশিষ্ট থাকতো রাতের বেলা তাঁর হেফাজতের প্রয়োজন দেখা দিত। একবার হযরত আবু হুরাইরাহ যখন এই মালের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন তখন এই ঘটনা ঘটেছিল যার উল্লেখ এখানে করা হয়েছে।

এটা এমন সব ঘটনার অন্তর্ভুক্ত যে সম্পর্কে মানুষ কোন ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম নয় যে, এটা কিভাবে ঘটলো। যাই হোক এধরনের ঘটনা একাধিকবার মানুষের সামনে ঘটেছে।

কুরআন মাজীদের ফযিলত সম্পর্কিত অধ্যায়ে এ হাদীস সন্নিবেশ করার কারন এই যে, শয়তান নিজেও একথা স্বীকার করে যে, যে ব্যক্তি রাতের বেলা আয়াতুল কুরসী পাঠ করে শয়ন করে তাঁর উপর শয়তানের কোন আধিপত্য চলে না।

এ কথা পূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে যে, কুরআন মাজীদের এমন কয়েকটি স্থান রয়েছে যেখানে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদকে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তৌহিদের পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তির মন মগজে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের চিত্র অংকিত হয়ে গেছে তাঁর উপর শয়তানের আধিপত্য কি করে চলতে পারে? এই শয়তান তো তাঁর ধারে কাছে আসতে পারেনা।

এই আয়াতুল কুরসী যদি কোন ব্যক্তি বুঝে পড়ে এবং এর অর্থ যদি সে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তাহলে শয়তান তাঁর ধারে কাছে আসারও দুঃসাহস করে না। আয়াতুল কুরসী স্বয়ং বরকত ও কল্যাণে পরিপূর্ণ। শুধু এর তেলাওয়াতও বরকত ও কল্যাণের কারন হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু পাঠক যদি তাঁর অর্থ বুঝে পড়ে তাহলে তাঁর উপর শয়তানের কোন প্রভাবই খাটে না।

দুটি নূর
যা কেবল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দান করা হয়েছে

আরবী*****

১৭। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা জীব্রীল ( আঃ ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসা ছিলেন। এসময় তিনি আকাশের দিক থেকে দরজা খোলার শব্দের অনুরূপ শব্দ শুনতে পেলেন। হযরত জিব্রাঈল ( আঃ ) নিজের মাথা উপরের দিকে উত্তোলন করে দেখলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বললেন, এটা আসমানের একটি দরজা যা আজই প্রথম খোলা হয়েছে। এ দরজা ইতিপূর্বে আর কখনো খোলা হয় নি। ইত্যবসরে এই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নাযিল হয়। জিব্রাঈল ( আঃ ) বললেন, এ হচ্ছে এক ফেরেশতা- আসমান থেকে পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে, ইতিপূর্বে এই ফেরেশতা আর কখনো পৃথিবীতে নাযিল হয়নি। এই ফেরেশতা এসে তাঁকে সালাম করে বলল, দুটি নূরের সংবাদ গ্রহন করুন, যা কেবল আপনাকে দেয়া হয়েছে এবং অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। এ দুটির একটি শব্দ পাঠ করলেও আপনাকে সেই নূর দান করা হবে। ——-( সহীহ মুসলিম )

এ হাদীস পড়তে গিয়ে মানুষের মনে প্রথম যে প্রশ্নের উদয় হয় তা হচ্ছে- আসমানের দরজা খুলে যাওয়া এবং তা থেক দরজা খোলার শব্দ আসার তাৎপর্য কি? এ প্রসঙ্গে সর্বপ্রথম একথা বুঝে নিতে হবে যে, আসমানের কোন দরজা খোলার শব্দ জিব্রাঈল ( আঃ ) অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনেছিলেন, আমি বা আপনি নেই। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে- আসমানি জগতের ঘটনাগুলো এমন পর্যায়ের যে, তা যথাযথভাবে তুলে ধরার মতো শব্দ মানবীয় ভাষায় নেই বা হতেও পারেনা। এজন্য এসব ব্যাপার বুঝানোর জন্যে বা মানুষের বোধ গম্যের কাছাকাছি আনার জন্য রূপক ভাষা বা উপমা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দুনিয়াতে যেভাবে দরজা খোলা হয় এবং এর যা অবস্থা হয় অনুরূপভাবে ঊর্ধ্ব জগতেরও অসংখ্য দরজা রয়েছে এবং সেগুলো যখন খোলা হয় তখন তাঁর মধ্য দিয়ে কোন কিছু যাতায়াত করে থাকে। এমন নয় যে, দরজা সব সময় খোলা থাকে এবং যখন তখন যে কেউ আসা যাওয়া করতে পারে। এ থেকে জানা গেলো যে, আসমানের কোন দরজা খোলা এবং তাঁর মধ্য দিয়ে উপর থেকে কোন ফেরেশতার নীচে আসার ঘটনা ঘটেছিলো, যাতে দরজা খোলার শব্দের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে। এই অবস্থাটা অবশ্যই অনুভূত হয়- কিন্তু তা কেবল আল্লাহর ফেরেশতা অথবা তাঁর রাসুলই অনুধাবন করতে পারেন। আমরা তা অনুভব করতে পারিনা। কেননা এগুলো মানুষের অনুভূতিতে ধরা পড়ার মতো কোন জিনিস নয়।

এ হাদীসে দ্বিতীয় যে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে- রাসুলুল্লাহকে যে ফেরেশতা সুসংবাদ দেয়ার জন্যে এসেছিলেন তিনি ইতিপূর্বে আর কখনো পৃথিবীতে আসেন নি। এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে এই বিশেষ পয়গাম পাঠানোর জন্যেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। অন্যথায় তিনি পৃথিবীতে যাতায়াতকারী ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে সুসংবাদ দিয়েছিলেন তা ছিল এই যে, আপনার কল্যাণ হোক। আপনাকে এমন দুইটি তুলনাহীন জিনিস দেয়া হয়েছে যা পূর্বে কোন নবীকেই দেয়া হয়নি। তাঁর একটি হচ্ছে সূরা ফাতিহা এবং অপরটি হচ্ছে সূরা বাকারার শেষাংশ।

ঘটনা হচ্ছে এই যে, সূরা ফাতিহার সামান্য কয়টি আয়াতের মধ্যে এতো বিরাট বিষয়বস্তুর বর্ণনা করা হয়েছে যে, পুরা কুরআন শরীফের সংক্ষিপ্ত সার এতে এসে গেছে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য হচ্ছে- আমাকে বাক্য ও কথা দান করে হয়েছে যার মাধ্যমে বিরাট বিরাট বিষয়বস্তু কয়েকটি ছত্রেই আদায় হয়ে গেছে। বাইবেলের সাথে কুরআনের তুলনা করে দেখলে জানা যায় যে, কখনো কখন যে কথা বর্ণনা করতে বাইবেলের কয়েকটি পৃষ্ঠা খরচ করা হয়েছে তা কুরআনের একটি মাত্র ছত্রেই বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সূরা ফাতিহা এই সংক্ষিপ্ততা এবং পূর্ণাংগতার দিক থেকে অগ্রগণ্য। তথাপি সূরা ফাতিহার এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অর্থ এই নয় যে, এই সুরার মধ্যে যে বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে তা ইতিপূর্বে কোন নবীর কাছে আসেনি। কথা এটা নয়, কারন সব নবীই সেই শিক্ষা নিয়ে আগমন করেছেন যা এই সূরায় বর্ণনা করা হয়েছে, পার্থক্য কেবল এই যে, এই সুরার মাত্র কয়েকটি আয়াতের মাধ্যমে ব্যাপক অর্থবোধক একটি সমুদ্রের সংকুলান করা হয়েছে এবং দীনের সার্বিক শিক্ষার সার সংক্ষেপ এতে এসে গেছে। এরূপ বিশেষ বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত কোন জিনিস পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।

দ্বিতীয় নূর যার সুসংবাদ এই ফেরেশতা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শুনিয়েছেন তা হচ্ছে সূরা বাকারার শেষ অংশ। এই আয়াতগুলিতে তৌহিদের পুরা বর্ণনা এবং নবী আলাইহিমুস সালামের যাবতীয় সংক্ষিপ্তসার বর্ণনা করা হয়েছে। এতে ইসলামী আকীদাহ পূর্ণরূপে বর্ণনা করা হয়েছে এবং ঈমানদার সম্প্রদায়কে বলে দেয়া হয়েছে হক ও বাতিলের সংঘর্ষে যদি সমগ্র কুফরী শক্তিও তাঁদের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তাহলে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করেই তাঁদের মোকাবেলা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য এবং বিজয়ের জন্যে দোয়া করতে হবে। এই শেষ অংশে উল্লেখিত অসাধারন বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে তাঁকে এমন নূর বলা হয়েছে যা পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি।

সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফযিলত
আরবী*****

১৮। হযরত আবু মাসউদ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে তা তাঁর জন্য যথেষ্ট হবে। ———( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )

অর্থাৎ এই দুইটি আয়াত মানুষকে যে কোন ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। কোন ব্যক্তি যদি এই আয়াতগুলি ভালমতো হৃদয়ঙ্গম করে পড়ে তাহলে সে এর গুরুত্ব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে।

সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াতের ফযিলত
আরবী****

১৯। হযরত আবু দারদা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ( বিপর্যয় ) থেকে নিরাপদ থাকবে। —-( সহীহ মুসলিম )

সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াতে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, যে সময় তৎকালীন রোম সাম্রাজ্যের অধীন খ্রিষ্টানদের উপর কঠোর নির্যাতন চালানো হচ্ছিলো এবং তাঁদেরকে একথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হচ্ছিলো যে, তারা এক আল্লাহকে পরিত্যাগ করে রোমীয়দের মা’বুদ এবং দেবতাদের প্রভু হিসাবে মেনে নিবে এবং এদের সামনে মাথা নত করবে। এই কঠিন সময়ে কয়েকজন নওজোয়ান হযরত ঈসা ( আঃ ) এর উপর ঈমান আনে এবং তারা এই অমানুষিক অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি সব কিছু ফেলে রেখে পালিয়ে আসে। তারা এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, আমরা কোন অবস্থাতেই আমাদের মহান প্রতিপালককে পরিত্যাগ করবো না এবং শিরকের পথও ও অবলম্বন করবোনা- এতে যাই হোক না কেন। সুতরাং তারা কারো আশ্রয় না চেয়ে কেবল আল্লাহর উপরে ভরসা করে পাহাড়ে গিয়ে এক গুহায় বসে যায়।

বলা হয়েছে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের এই প্রাথমিক আয়াতগুলো মুখস্থ করে নিবে এবং তা নিজের মন- মগজে বসিয়ে নেবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। প্রকাশ থাকে যে, দাজ্জালের ফিতনাও এই ধরনেরই হবে- যেমন ঐ সময়ে এই যুবকগন যার সম্মুখীন হয়েছিলো। এজন্য যে ব্যক্তির সামনে আসহাবে কাহাফের দৃষ্টান্ত মওজুদ থাকবে সে দাজ্জালের সামনে মাথা নত করবে না। অবশ্য যে ব্যক্তি এই দৃষ্টান্ত ভুলে গেছে সে দাজ্জালের ফিতনার স্বীকার হয়ে পড়তে পারে। এরই ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি এই আয়াতগুলো নিজের স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করবে সে দাজ্জালের বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবে।

সূরা মুমিনুনের ফযিলত
আরবী****

২০। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যখন অহী নাযিল হতো তখন তাঁর মুখের কাছ থেকে মৌমাছির গুনগুন শব্দের মতো আওয়াজ শুনা যেত। আমি কিছুক্ষন বসে থাকলাম তিনি কিবলার দিকে ফিরলেন এবং দুই হাত তুলে বললেন- “হে আল্লাহ, আমাদের আরো দাও এবং কমিয়ে দিওনা, আমাদের মনে- সম্মান দান করো এবং অপদস্থ করোনা, আমাদের ( তোমার নিয়ামত ) দান করো এবং বঞ্চিত করোনা, আমাদের অন্যদের অগ্রবর্তী করো, অন্যদেরকে আমাদের অগ্রবর্তী করোনা, আমাদের উপর তুমি রাজী হয়ে যাও এবং আমাদের সন্তুষ্ট করো।” অতঃপর তিনি বললেন- “এই মাত্র আমার উপর এমন দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে যার মানদণ্ডে কেউ উত্তীর্ণ হলে সে নিঃসন্দেহে জান্নাতে যাবে।” অতপর তিনি পাঠ করলেন- “নিশ্চিতই ঈমানদার লোকেরা কল্যাণ লাভ করেছে। –অতঃপর তিনি দশটি আয়াত পাঠ সম্পন্ন করলেন।”—( তিরমিযি, নাসাঈ, আহমাদ, হাকেম )

আরবী****

২১। হযরত ইয়াজীদ ইবনে বাবনুস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ( রাঃ ) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, কুরআনই হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের চরিত্র। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- “নিশ্চিতই ঈমানদার লোকেরা কল্যাণ লাভ করেছে——- তিনি “এবং যারা নিজেদের নামায সমূহের পূর্ণ হেফাজত করে,” পর্যন্ত পাঠ করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, “এরূপই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র।”———–( নাসাঈ )

আরবি*****

২২। হযরত আনাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে ‘আদন’ নামক জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। এর একটি থাম সাদা মুক্তা পাথরের, একটি থাম লাল চুনি পাথরের এবং একটি থাম সবুজ পুষ্পরাগ মনির তৈরি। এর মেঝে কস্তুরির, এর নুড়ি পাথরগুলো মোতির তৈরি এবং লতাকুঞ্জ কুমকুমের তৈরি। অতঃপর তিনি তাঁকে বললেন, কথা বল। সে বলল, নিশ্চিতই ঈমানদার লোকেরা কল্যাণ লাভ করেছে। তখন আল্লাহ বললেন, আমার ইজ্জত, শানশওকত ও মহত্ত্বের শপথ, কোন কৃপণ তোমার মধ্যে প্রবেশ করার জন্যে আমার কাছে প্রার্থনা করতে পারবেনা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করলেন, “বস্তুত যেসব লোককে তাঁদের দীলের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করা হয়েছে তারাই কল্যাণ লাভ করবে।”

হাদীসের যে দশটি আয়াতের কথা বলা হয়েছে তা নিম্নরুপঃ

আরবি*****

“মুমিন লোকেরা নিশ্চয়ই কল্যাণ লাভ করেছে, যারা নিজেদের নামাযে ভীতি ও বিনয় অবলম্বন করে। যারা অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকে। যারা যাকাতের পন্থায় কর্মতৎপর হয়। যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। নিজেদের স্ত্রীদের ছাড়া এবং সেই মেয়েদের ছাড়া- যারা তাঁদের দক্ষিন হস্তে মালিকাধিন হবে। এই ক্ষেত্রে ( হেফাজত না করা হলে ) তারা তিরস্কারযোগ্য নয়। অবশ্য যে ব্যক্তি এদের ছাড়া অন্য কিছু চাইবে তারা সীমা লংঘনকারী হবে। যারা নিজেদের আমানত এবং নিজেদের ওয়াদা-চুক্তি রক্ষনাবেক্ষন করে। যারা নিজেদের নামাযের হেফাজত করে। এরাই হচ্ছে উত্তরাধিকারী। তারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।”

এখানে মুমিন বলতে সেই সব লোকদের বুঝানো হয়েছে, যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত কবুল করে নিয়েছে, তাঁকে নিজেদের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহন করেছে এবং তাঁর উপস্থাপিত জীবন-বিধানকে অনুসরন করে চলতে প্রস্তুত হয়েছে।

এই সুরার প্রথম ৯ টি আয়াতে ঈমানদার লোকদের সাতটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- কোন মুমিন ব্যক্তি এই সাতটি গুন অর্জন করতে পারলে সে নিশ্চিতই বেহেস্তে যাবে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দশম ও একাদশ আয়াতে এদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ বেহেশত জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছেন। অতএব আয়াতে উল্লেখিত গুন বৈশিষ্ট্য গুলো অর্জন করার একান্ত চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য।

প্রথম গুন হচ্ছে- বিনয় ও নম্রতা সহকারে নামায আদায় করা। ‘খুশু’ শব্দের অর্থ কারো সামনে বিনীতভাবে অবনত হওয়া, বিনীত হওয়া, নিজের কাতরতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করা, স্থির রাখা। অন্তরের ‘খুশু’ হচ্ছে এই যে, ব্যক্তি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের কথা চিন্তা করে সন্ত্রস্থ হয়ে পড়বে। আর দেহের ‘খুশু’ হচ্ছে এই যে, ব্যক্তি যখন নামাযে দাঁড়াবে তখন মাথা নত করবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পড়বে, দৃষ্টি অবনমিত হবে, কণ্ঠস্বর নরম ও বিনয়পূর্ণ হবে। এই খুশুই হচ্ছে নামাযের আসল প্রানশক্তি ও ভাবধারা। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, এক ব্যক্তি নামায পড়ছে আর মুখের দাড়ি নিয়ে খেলা করছে। তখন তিনি বললেন-

আরবী****

“এই ব্যক্তির অন্তরে যদি ‘খুশু’ থাকতো তাহলে তাঁর অংঙ্গ- প্রতংঙ্গের উপর ‘খুশু’ পরিলক্ষিত হতো।’’ ( তাফসীরে মাযহারী, তাফহীমুল কুরআন )

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা। মূল শব্দ হচ্ছে ‘লাগবুন’-। এমন প্রতিটি কথা ও কাজকে ‘লাগবুন’ বলা হয় যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন এবং নিষ্ফল। যেসব কথা ও কাজের কোনই ফল নাই, উপকার নাই, যা থেকে কোন কল্যাণকর ফলও লাভ করা যায় না, যার প্রকৃতই কোন প্রয়োজন নেই এবং যা থেকে কোন ভালো উদ্দেশ্য লাভ করা যায়না- এ সবই অর্থহীন, বেহুদা ও বাজে জিনিস এবং ‘লাগবুন’ বলতে এসবই বুঝায়। ঈমানদার লোকদেরকে এসব জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে-

আরবী****

“মুমিন লোকেরা যদি এমন কোন জায়গায় গিয়ে পড়ে যেখানে অর্থহীন ও বাজে কাজ বা কথা হচ্ছে – তাহলে সেখান থেকে আত্মমর্যাদা সহকারে কেটে পড়ে।” (সূরা ফুরকান, আয়াত-৭২)

মুমিন ব্যক্তি সুস্থ স্বভাবের অধিকারী হয়ে থাকে। সে পবিত্র চরিত্র ও উন্নত রুচির ধারক। সে অর্থপূর্ণ কথা বার্তাই বলবে, কিন্তু অর্থহীন গল্প-গুজব করে সময় নষ্ট করতে পারেনা। সে হাস্যরস ও রসিকতা করতে পারে, কিন্তু তাৎপর্যহীন হাসিঠাট্টা নয়। সে অশ্লীল গালিগালাজ, লজ্জাহীন কথাবার্তা বলতেও পারেনা, সহ্যও করতে পারেনা। আল্লাহ তায়ালা বেহেশতের একটি বৈশিষ্ট এই উল্লেখ করেছেন যে,

আরবী****

“সেখানে তারা কোন অর্থহীন ও বেহুদা কথাবার্তা শুনবেনা।” ( সূরা গাশিয়া, আয়াত- ১১ )

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

আরবী****

“মানুষ যখন অর্থহীন বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তাঁর ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে পারে।”

—( তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তাই ইমাম মালেক, মুসনাদে আহমাদ )

তৃতীয় বৈশিষ্ট হচ্ছে- যাকাত দেয়া এবং যাকাতের পন্থায় কর্মতৎপর হওয়া। যাকাত অর্থ একদিকে যেমন আত্মার পবিত্রতা অর্জন, অন্যদিকে এর অর্থ ধন সম্পদের পবিত্রতা বিধান।

চতুর্থ বৈশিষ্ট হচ্ছে- লজ্জাস্থানের হেফাজত করা। এর দুটি অর্থ রয়েছে। এক, নিজের দেহের লজ্জাস্থান সমূহকে ঢেকে রাখা, নগ্নতাকে প্রশ্রয় না দেয়া এবং অপর লোকদের সামনে নিজের লজ্জাস্থানকে প্রকাশ না করা।

দুই, তারা নিজেদের পবিত্রতা এবং সতীত্বকে রক্ষা করে। অর্থাৎ অবাধ যৌনাচার করে বেড়ায়না। পাশবিক প্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করার ক্ষেত্রে সীমা লংঘন করেনা।

পঞ্চম বৈশিষ্ট হচ্ছে- আমানতের রক্ষনাবেক্ষন ও তা প্রত্যর্পণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

আরবী*****

“যার আমানাতদারীর গুন নাই তাঁর ঈমান নাই।” ( বায়হাকীর শুয়াবুল ঈমান )

ষষ্ঠ বৈশিষ্ট হচ্ছে- ওয়াদা- চুক্তির রক্ষনাবেক্ষন করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

আরবী****

“ যে ওয়াদা – চুক্তি রক্ষা করেনা তাঁর কোন ধর্ম নাই। ” ( বায়হাকীর শুয়াবুল ঈমান )

বস্তুত আমানতের খেয়ানত এবং ওয়াদা- চুক্তিকে ভঙ্গ করাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মোনাফিকের চারটি লক্ষনের অন্যতম দুইটি বলে উল্লেখ করেছেন।

“সে যখন ওয়াদা করে ভংগ করে এবং তাঁর কাছে যদি আমানত রাখা হয় তাঁর খেয়ানত করে।”——–( সহীহ বুখারী ও মুসলিম )

সপ্তম বৈশিষ্ট হচ্ছে—নামাযের হেফাজত করা। নামাযের হেফাজতের অর্থ হচ্ছে নামাযের নির্দিষ্ট সময় সমূহ, এর নিয়ম- কানুন, শর্ত ও রোকন সমূহ, নামাযের বিভিন্ন অংশ- এক কথায় নামাযের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহের পূর্ণ সংরক্ষণ করা।

যে ব্যক্তি এসব গুন বৈশিষ্টের অধিকারী হয়ে যায় এবং এর উপর স্থির থাকে, সে পূর্ণাঙ্গ মুমিন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্যের অধিকারী।

সূরা ইয়াসিনের ফযিলত
আরবী****

২৩। হযরত আনাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- প্রতিটি জিনিসেরই একটি হৃদয় আছে এবং কুরআনের হৃদয় হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসিন পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তা পাঠের বিনিময়ে তাঁকে দশবার পূর্ণ কুরআন পাঠ করার সওয়াব দান করবেন।—— ( ইমাম তিরমিযি এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একে গরীব হাদীস বলেছেন )

আরবী*****

২৪। হযরত আবু হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা ইয়াসীন পাঠ করে- সে ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠে। আর যে ব্যক্তি সূরা হা-মীম পাঠ করে। যার মধ্যে ধোঁয়ার কনা উল্লেখ আছে ( অর্থাৎ সূরা দোখান ) – সে ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠে। —– ( হাফেজ তাঁর গ্রন্থে এ হাদীস উল্লেখ করেছেন )

আরবী****

২৫। হযরত জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য রাতের বেলা সূরা ইয়াসীন পাঠ করে- তাঁর গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।

আরবী***

২৬। হযরত মা’কিল ইবনে ইয়াসার ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “এটা তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদের নিকট পাঠ করো।” অর্থাৎ সূরা ইয়াসীন। -( আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ )

আরবী****

২৭। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- আমি আশা করি আমার উম্মতের প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ে এই সূরাটি ( সুয়ার ইয়াসীন ) গাঁথা থাক। ———– ( সহীহ বুখারী )

হাফেজ ইমামুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে কাসীর দামেশকী ( মৃত ৭৭৪ হিঃ ) বলেন, এসব হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞ আলেমগন বলেছেন, কোন কঠিন বিপদ বা শক্ত কাজ সামনে উপস্থিত হলে – তখন এই সূরা পাঠ করার বরকতে আল্লাহ তায়ালা সেই বিপদ বা কাজকে সহজ করে দেন। মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট এই সূরা পাঠ করতে বলার অর্থ হচ্ছে এই যে, এসময় আল্লাহ তায়ালা রহমত ও বরকত নাযিল করেন এবং সহজভাবে রূহ বের করে নেয়া হয়। আসল ব্যাপার আল্লাহই ভালো জানেন। ইমাম আহমাদ ( রঃ ) বলেছেন- আমাদের প্রবীণরা বলতেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হলে আল্লাহ তাঁর কষ্ট লাঘব করে দেন। ( তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৫৪ )

আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী বলেন- ইবনে আব্বাস, ইকরামা, দাহহাক, হাসান বসরী ও সুফিয়ান ইবনে উআইনা বলেন- ‘ইয়াসীন’ অর্থ ‘হে মানুষ’ বা ‘হে ব্যক্তি’। কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন, ইয়া সাইয়েদ ( হে নেতা ) কথাটির শব্দ সংক্ষেপ হচ্ছে ‘ইয়াসীন’। এই সব কটি অর্থের দিক দিয়ে বলা যায়, এখানে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়আ সাল্লামকেই সম্বোধন করা হয়েছে।

‘সূরা ইয়াসীন কুরআনের হৃদয়’ – এই উপমাটি ঠিক তেমনি যেমন বলা হয়েছে ‘সূরা ফাতিহা কুরআনের মা’। সূরা ফাতিহাকে কুরআনের মা বলার অর্থ হচ্ছে এই যে, এর মধ্যে কুরআন মাজীদের সমস্ত শিক্ষার সারকথা বিবৃত হয়েছে। অনুরূপভাবে সূরা ইয়াসীন কুরআনের জীবন্ত ও প্রানবন্ত দীল এই হিসাবে যে, এই সূরা কুরআনের দাওয়াতকে অতীব জোরালোভাবে পেশ করে। এর প্রচণ্ডতায় স্থবিরতা চূর্ণ হয় এবং প্রানে অগ্নিশীলতা সৃষ্টি হয়।

মুমূর্ষু ব্যক্তির সামনে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, এর ফলে মুসলমানের মনে মৃত্যুকালে সমস্ত ইসলামী আকীদাহ তাজা ও নতুন হয়ে যায় এবং তাঁর সামনে আখেরাতের পুরা নক্সা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর তাঁকে পরবর্তী কোন সব মঞ্জিলের সম্মুখীন হতে হবে- তা সে স্পষ্ট জানতে পারে। এই কল্যাণ দৃষ্টির পূর্ণতা বিধানের জন্যে- আরবী বোঝেনা এমন সব লোকের সামনে এই সূরা পাঠ করার সাথে সাথে তাঁর অর্থও পড়ে শুনানো আবশ্যক। এর সাহায্যেই নসিহত স্মরণ করিয়ে দেয়ার কাজটিও পূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন হতে পারে। -( সূরা ইয়াসীনের ভূমিকা, তাফহীমুল কুরআন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২৪৪ )

সূরা মুলকের ফযিলত
আরবী****

২৮। হযরত ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন এক সাহাবী কবরের উপর তাবু টানান। তিনি অনুমান করতে পারেননি যে, এটা একটা কবর। এটা ছিল একটি লোকের কবর। ( সাহাবী শুনতে পেলেন ) সে সূরা মুলক পাঠ করছেন। তা শেষ পর্যন্ত পাঠ করলো। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি একটি কবরের উপর আমার তাবু টানাই। আমি জানতাম না যে, তা একটি কবর। তাঁর মধ্যে একটি লোক সূরা মুলক পাঠ করছে ( শুনলাম )। সে তাঁর শেষ পর্যন্ত পাঠ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা কবরের আযাব প্রতিরোধকারী, এটা তাঁর পাঠকারীকে কবরের আযাব থেকে বাচায়। -( তিরমিযি )

আরবী****

২৯। হযরত আউ হুরাইরাহ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- কুরআন মাজীদে ত্রিশটি আয়াত সম্বলিত একটি সূরা আছে। তা কোন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলে তাঁকে মাফ করে দেয়া হয়। সূরাটি হচ্ছে- “তাবারা কাল্লাজি বিয়াদিহুল মুলক—–” ( তিরমিযি )

৩০। হযরত যাবের ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা “আলিফ-লাম-মীম তানযীল ( সাজদাহ ) এবং ‘তাবারা কাল্লাজি বিয়াদিহুল মুলক’ না পড়া পর্যন্ত ঘুম যেতেন না। ———–( তিরমিযি )


পিডিএফ লোড হতে একটু সময় লাগতে পারে। নতুন উইন্ডোতে খুলতে এখানে ক্লিক করুন।




দুঃখিত, এই বইটির কোন অডিও যুক্ত করা হয়নি