بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين والعاقبة للمتقين ولاعدوان إلا على الظالمين كالمشركين والملحدين والصلاة والسلام على أشرف المرسلين إمام الموحدين وعلى آله الطيبين وأصحابه المهتدين وعلى من سلك سبيلهم إلى يوم الدين – اما بعد
ভূমিকা
আল্লাহ্ মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন খিলাফাত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়ে। তাই তো তিনি প্রতিটি মানুষকে তাওহীদের বিশ্বাস নিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকেন। তাওহীদই হল খিলাফাত প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি। আর এ খিলাফাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিশ্চিত হতে পারে দুনিয়ায় সুখ ও শান্তি এবং পরকালে জান্নাতের অনাবিল শান্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি। কিন্তু বনী আদমের চিরশত্রু শয়তান তো সহজে ছেড়ে দেবে না। তাই তো তার ঘোষনাঃ
فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ - ثُمَّ لآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ وَلاَ تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ
‘‘আপনি যেহেতু আমাকে সঠিক পথ হতে বিচ্যুত করেছেন সেহেতু আমিও (তাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য) আপনার সরল পথে অবশ্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকব। অতঃপর তাদের কাছে আসব তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’’
শয়তান তার কুট কৌশলকে বাস্তবায়নের জন্য বেছে নিল গোমরাহীর অন্যতম পথ শিরক। কারণ শিরকই চুরমার করে দিতে পারে বনী আদমের স্বপ্নসাধকে। খান খান করে দিতে পারে গগনচুম্বী আমলের প্রাসাদকে। ভেজাল করে দিতে পারে তার ঈমানকে। তাই তো কখনও নেকলোকদের মৃত্যুর পর তাদের মূর্তি বানিয়ে তা দিয়ে সহজ সরল মানুষকে শিরকে জড়িয়ে দিচ্ছে, কখনও তাদের আশা পূরণ করতে পারে, এই প্রলোভন দিয়ে বনী আদমকে শিরকে জড়িয়ে ফেলছে। আবার কখনও মাযারের নামে ধোঁকা দিচ্ছে। কখনও মৃত ব্যক্তিকে অতিশয় ক্ষমতার মালিক সাজিয়ে আদম সন্তানকে শিরকে লিপ্ত করছে। কখনও বরকতের নামে, কখনও ওলীদের প্রশংসার অতিরঞ্জনের মাধ্যমে শিরক করাচ্ছে। শয়তান প্রতারকের মত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন কায়দায় বনী আদমের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ঈমানকে শিরকের আবর্জনায় কলুষিত করে দিচ্ছে। ধ্বংস করে দিচ্ছে তার দুনিয়ার কল্যাণ ও আখেরাতের অফুরন্ত শান্তির সাধ। অথচ সে জানে না যে, এর মাধ্যমে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তার মহামূল্যবান ‘আমল। বিলীন হয়ে যাচ্ছে তার সর্বশ্রেষ্ঠ নি’য়ামাত ঈমান। আল্লাহ্ বলেনঃ
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا-الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
‘‘বল, আমি কি তোমাদেরকে সে-সব লোকদের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক থেকে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত? তারা সে সব লোক, যাদের পার্থিব জীবনের প্রচেষ্টা পন্ড হয়ে যায়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।’’
শয়তান তাদের শিরকী আমলকে খুব সাজিয়ে গুজিয়ে তাদের সামনে পেশ করছে, আর তারা দেখছে আকাশ কুসুম স্বপ্ন। আল্লাহ বলেনঃ
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ
’’আর শয়তান তাদের ‘আমলকে সুশোভিত করে পেশ করেছে’’
মানবজাতিকে চিরশত্রু শয়তানের ধোঁকাবাজি থেকে সতর্ক করে শিরকমুক্ত আমলের মাধ্যমে তাওহীদের ভিতকে মজবুত করে খিলাফাতী দায়িত্ব পালনের আহবান জানাতে পাঠিয়েছেন আল্লাহ তা‘য়ালা যুগে যুগে নবী রাসূলগণকে। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষে এসেছেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তাঁর মৃত্যুর পর দায়িত্ব এসেছে নবীর ওয়ারিশ ‘আলিমগণের উপর। যুগে যুগে ‘আলিমগণ দক্ষতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তারই অংশ হিসেবে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। আমার এ লেখায় শিরকের পরিচয়, সূচনা, প্রকার আলোচনা করেছি। আরো আলোচনা করেছি শিরক করার কারণ, শিরকের পরিণতি, বাংলাদেশে প্রচলিত শিরক। সবশেষে রয়েছে একটি পরিশিষ্ট ও তথ্যপঞ্জী।
ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চাচ্ছি দয়াময় আল্লাহর দরবারে। বাকীটুকুর জন্য উত্তম বিনিময় কামনা করছি মেহেরবান রবের কাছে।

إنه جواد كريم غفور شكور
وصلى الله تعالى على نبينا محمد وآله وصحبه أجمعين

শিরকের অর্থঃ
শিরক শব্দের আভিধানিক অর্থ: অংশীদার করা।
ইবন মানযুর বলেছেন: ‘আশ-শির্কাতু’ ও ‘আশ-শারকাতু’ (الشركة والشركة) সমার্থবোধক দু’টি শব্দ। যার অর্থ: দু’শরীকের সংমিশ্রণ। শির্কু (الشرك) শরীক করা, শরীক হওয়া। এর বহুবচন হলোঃ ‘আশরাক’ ও ‘শুরাকাউ’ ( أشراك وشركاء) অর্থাৎ: অংশীদারগণ। বলা হয়ে থাকে ‘‘طريق مشترك ’’ অর্থাৎ সম্মিলিত রাস্তা, যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। ‘আশরাকা বিল্লাহি’ ( أشرك بالله) সে আল্লাহর সাথে শরীক করলো, অর্থাৎ আল্লাহর রাজত্ব ও মালিকানায় কাউকে তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করলো। (নাউযু বিল্লাহি)
‘আশ-শিরকু’ (الشرك) শব্দটি ‘আল-হিস্সাতু’ (الحصة): (অংশ) অর্থেও ব্যবহৃত হয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : [من أعتق شركاله في عبد ... ]-‘‘যে তার কোন ক্রীতদাসের অংশকে মুক্ত করে দিল. . . . .’’
আল-মুনজিদ নামক অভিধানে বলা হয়েছে: ( أشرك في أمره) অর্থাৎ- তার কাজে সে (অপর কাউকে) শরীক করে নিয়েছে। ( أشرك بالله) অর্থাৎ সে আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। আর যে তা করলো সে মুশরিক হয়ে গেল।
প্রখ্যাত মিশরীয় ‘আলিম শেখ যাকারিয়্যা আলী ইউসুফ বলেনঃ ‘‘কোন ক্ষেত্রে ‘শারাকতুহু’ ও ‘আশ-রাকতুহু’ (شركته وأشركته) তখনই বলা হয় যখন আমি কারো ‘শরীক’ (شريك) অংশীদার হয়ে গেলাম, ‘শা-রাকতুহু’ (شاركته) শব্দটিও শরীক এর অর্থ প্রকাশ করে। ‘আশরাকতুহু’ ( أشركته) শব্দের অর্থ: আমি তাকে শরীক করে নিলাম। মূসা আলাইহিস সালাম বলেন: (وأشركه في أمري) (হে আল্লাহ্) ‘‘তুমি হারুনকে আমার নবুওতের অংশীদার করে দাও।’’
‘শিরক’ শব্দমূলটি সংমিশ্রণ ও একত্রিকরণের অর্থ প্রকাশ করে। কোন বস্ত্তর অংশ বিশেষ যখন একজনের হবে, তখন এর অবশিষ্ট অংশ হবে অপর এক বা একাধিকজনের। আল্লাহর বাণী: (أم لهم شرك في السموات) ‘‘তবে কি আকাশমন্ডলীতে তাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে’’ এ-আয়াতে বর্ণিত ‘শিরকুন’ শব্দের দ্বারা এ অংশীদারিত্বের অর্থই প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, একজন অংশীদার তার অপর অংশীদারের সাথে মিলিত।
তিনি আরো বলেন: কোন বস্ত্ততে একাধিক শরীক হলে সে বস্ত্ততে তাদের প্রত্যেকের অংশ সমান হওয়াটি অত্যাবশ্যক নয়, তাদের একের অংশ অপরের অংশের চেয়ে অধিক হওয়ার পথেও তা কোন অন্তরায় সৃষ্টি করে না, যেমন মূসা (আ.) তাঁর রিসালতের ক্ষেত্রে স্বীয় ভাই হারূন (আ.) কে তাঁর সাথে শরীক করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট আবেদন করলে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন: (قد أوتيت سؤلك يا موسى) ‘‘হে মূসা ! তোমার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হলো।’’
এ কথা বলে আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা (আ.) এর কামনা পূর্ণ করলেও রিসালতের ক্ষেত্রে হারুন (আ.) মূসা (আ.) এর সমান অংশীদার ছিলেন না।
উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদের নিকট এ-কথা প্রমাণিত হচ্ছে যে, ‘শিরক’ শব্দমূলটি মূলগতভাবেই মিশ্রণ ও মিলনের অর্থ প্রকাশ করে থাকে এবং এ মৌলিক অর্থটি এর সকল রূপান্তরিত শব্দের মধ্যে নিহিত থাকে। আর দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যকার অংশীদারিত্ব যেমন ইন্দ্রিয় অনুভূত বস্ত্তসমূহের মধ্যে হতে পারে, (যেমন দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কোন বাড়ি, জমি বা গাড়িতে সম অংশে বা কম-বেশি অংশীদার হওয়া) তেমনি তা কোন অর্থগত বা গুণগত বস্ত্ততেও হতে পারে। (যেমন: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দু’দলের সমানভাবে অংশীদার হওয়া, মানুষ এবং ঘোড়া প্রাণী হওয়ার ক্ষেত্রে সমান অংশীদার এবং দুটি ঘোড়া বাদামী বা লাল বর্ণের হওয়ার ক্ষেত্রে সমানভাবে শরীক হতে পারে।)
শিরক শব্দের পারিভাষিক অর্থ:
ড. ইব্রাহীম বরীকান শিরক-এর পারিভাষিক অর্থ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন:
‘শিরক’-এর দু’টি অর্থ রয়েছে:
এক. সাধারণ অর্থ, আর তা হচ্ছে- গায়রুল্লাহকে আল্লাহর বৈশিষ্ট্যের সমকক্ষ করা। সমকক্ষ বলতে এখানে মুক্ত শরীকানা বুঝানো হয়ে থাকে, শরীকানায় আল্লাহর অংশ গায়রুল্লাহের অংশের সমান হতে পারে অথবা আল্লাহর অংশ গায়রুল্লাহের অংশের চেয়ে অধিকও হতে পারে।
দুই. আল্লাহর পাশাপাশি গায়রুল্লাহকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা। কুরআন, সুন্নাহ ও অতীত মনীষীগণের কথায় শির্ক শব্দটি যখন সাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়, তখন এর দ্বারা শিরকের দ্বিতীয় অর্থই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।’’ অতএব ‘আকীদার পরিভাষায় শিরক হচ্ছে, আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট ও সীমাবদ্ধ কোন বিষয় আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রয়োগ করা, অর্থাৎ আল্লাহ্ তায়া’লা যে সমস্ত কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, ‘ইবাদাত, আনুগত্য এবং নাম ও গুণাবলীর মধ্য থেকে যা নিজের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন, তাতে অন্য কাউকে অংশীদার করাই হচ্ছে শিরক। আল্লাহ্র নিরঙ্কুশ প্রভুত্বে কারো অংশীদারিত্বের ‘আকীদা পোষণ করা। শিরক হচ্ছে তাওহীদের সম্পূর্ণ বিপরীত। তাওহীদ হচ্ছে Monotheism আর শিরক হচ্ছে Polytheism ।
মানবজাতির স্বভাবজাত ধর্মঃ
শিরক না করাই মানুষের স্বভাবজাত ধর্মঃ
আল্লাহ্র নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ বলেনঃ
’’ إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ‘‘
‘আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম’
’’ وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ‘‘
‘যদি কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন অনুসন্ধান করে, তবে তার কাছ থেকে তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে পরকালে চরম ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
এ ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ। মানুষকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্যই যুগে যুগে আল্লাহ নবী রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন, এরই ধারাবাহিকতায় এসেছেন সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ্ বলেনঃ
’’ وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ‘‘
‘আমি সকল জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এ আহবান জানানোর জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগুত অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদাত করা হয়, তাকে বর্জন কর।’
সকল নবীই তাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
মানুষের সৃষ্টি তাওহীদের উপর। আল্লাহ্ ‘আলমে আরওয়াহে (আতমার জগতে) সকলের কাছ থেকে তাঁর রূববিয়তের স্বীকৃতি নিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
’’ وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُواْ بَلَى شَهِدْنَا أَن تَقُولُواْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ ‘‘
‘স্বরণ কর যখন তোমার রব বনী আদমের পৃষ্ঠ থেকে তাদের সন্তানদের বের করলেন এবং তাদের নিজেদেরকে সাক্ষী করালেন, আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বল্ল, হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিলাম। (এর উদ্দেশ্য ছিল এই যে) তোমরা যেন কিয়ামাতের দিন এ কথা বলতে না পারো যে, আমরা তো এ বিষয়ে অনবহিত ছিলাম।’
আল্লাহ মানুষের নিকট থেকে যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, তা ছিল তওহীদের প্রতিশ্রুতি। একক আল্লাহর রূববিয়াত তথা তাঁর একক প্রভুত্বের স্বীকৃতি মানবজাতির সহজাত প্রকৃতি। একত্ববাদের স্বীকৃতি মানুষের স্বভাবজাত, এর উপরই আল্লাহ্ মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে থাকেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ‘‘
‘আল্লাহর ফিতরাত (প্রকৃতি) এর অনুসরণ কর, যার উপর আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করো না। এটিই সুদৃঢ় ও সঠিক দীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ এ আয়াতে বুঝা যাচ্ছে, সমগ্র মানব জাতিকে এ প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা, রব, মাবুদ ও আনুগত্যগ্রহণকারী নেই।
আল্লামা আশ শাওকানী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেনঃ
" الفطرة في الأصل الخلقة والمراد بهاهنا الملة وهي الاسلام والتوحيد "
‘ফিতরাতের মূল অর্থ সৃষ্টি। এখানে ফিতরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল মিল্লাত। আর তা হচ্ছে ইসলাম ও তাওহীদ।’
আল্লামা ইবনু কাছীর উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ
" لازم فطرتك السليمت التي فطر الله الخلق عليها فإنه تعالى فطر خلقه على معرفته وتوحيده وأنه لاإله غيره "
‘তুমি তোমার সঠিক প্রকৃতি ও স্বভাবকে আঁকড়ে ধর, যে প্রকৃতি ও স্বভাবের উপর আল্লাহ্ সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ্ তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর মা‘রেফাত অর্থাৎ তাঁর পরিচয়, তাওহীদ এবং তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই- এ বিশ্বাসের উপর সৃষ্টি করেছেন।’
অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থেও ফিতরাত বলতে তাওহীদকেই বুঝানো হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে তাওহীদের বিশ্বাস নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতায় তাওহীদের বিশ্বাস থেকে কারো বিচ্যুতি ঘটে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
" كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصرانه أويمجسانه " وفي رواية " مامن مولود يولد إلا على الفطرة "
‘প্রতিটি সন্তানই তার সহজাত প্রকৃতি তথা তাওহীদের উপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী অথবা খৃস্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়। অর্থাৎ পিতামাতা যে ধর্মের অনুসারী সন্তানকে সে ধর্মের অনুসারী বানায়।’
তিনি আরো ইরশাদ করেনঃ
يقول الله تعالى " إنى خلقت عبادي حنفاء فجاءتهم الشياطين فاجتالتهم عن دينهم وحرمت عليهم ما أحللت لهم وأمرتهم أن يشتركوابي ما لم أنزل به سلطانا "
আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দাহদেরকে আমি খাঁটি (তাওহিদবাদী) করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তানেরা তাদেরকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে, আমি তাদের জন্য যা হালাল করেছি তা হারাম করে দিয়েছে, আমি যে শিরক করার ব্যাপাওে কোন দলীল অবতীর্ণ করিনি, আমার সাথে সে শিরক করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ করেছে।’
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীছ থেকে একথাই প্রমাণিত হলো যে, মানুষের জন্ম হয় তাওহীদের উপর। ফলে তাওহীদি চেতনা তার স্বভাবের মধ্যে মিশে আছে। তাই দেখা যায় একজন মুশরিক, একজন নাস্তিকও বিপদমূহুর্তে, সংকটকালে একমাত্র শক্তিধর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, কায়মনোবাক্যে তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে।
আল্লাহ্ বলেনঃ
"وَإِذَا مَسَّ النَّاسَ ضُرٌّ دَعَوْا رَبَّهُم مُّنِيبِينَ إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا أَذَاقَهُم مِّنْهُ رَحْمَةً إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ"
‘মানুষদেরকে যখন কোন দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করে, তখন তারা তাদের রবের দিকে ফিরে এসে শুধু তাঁকেই ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে তাঁর করুণা আস্বাদন করান, তখন তাদের একটি দল তাদের রবের সাথে শিরক করে।’
"وَإِذَا مَسَّكُمُ الْضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلاَّ إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ وَكَانَ الإِنْسَانُ كَفُورًا"
‘সমুদ্রে যখন তোমাদের উপর কোন বিপদ আপদ আপতিত হয়, তখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে ইতোপূর্বে তোমরা যাদের ডাকতে তারা সবাই (মন থেকে) হারিয়ে যায়, (এক আল্লাহই বাকী থেকে যান) অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে নিয়ে আসেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ হচ্ছে অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’
"وَإِذَا مَسَّ الإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ"
‘মানুষকে যখন কোন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে বসে, শুয়ে, দাঁড়িয়ে সর্বাবস্থায় আমাকেই ডাকে, অতএব আমি যখন তার দুঃখ-কষ্ট তার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাই, তখন সে এমনভাবে চলতে শুরু করে, তাকে যে এক সময় দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করেছিল, মনে হয় তা দূর করার জন্য সে আমাকে কখনও ডাকেই নি।’
’’وَإِذَا غَشِيَهُم مَّوْجٌ كَالظُّلَلِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّين‘‘َ
‘যখন তরঙ্গ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার ন্যায়, তখন তারা আল্লাহ্কে ডাকে একনিষ্ঠ ভাবে।’
কুরআন মাজীদে এমন ধরনের আরো অনেক আয়াত রয়েছে যার দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, মানুষের স্বভাবজাত বিশ্বাস তাওহীদ, শিরক নয়। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মানুষ তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। হযরত ইকরামা বলেন, হযরত আদম ও নূহ ‘আলাইহিস্ সালামের মাঝে দশ শতাব্দীকাল ধরে মানুষ ইসলাম তথা তাওহীদের উপর অবিচল ছিল। আল্লাহ্ বলেনঃ
"كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ ”
‘মানুষেরা প্রথমে একই জাতিভুক্ত ছিল। (পরে ‘আকীদাগত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে) আল্লাহ্ নবীদেরকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শণকারী রূপে প্রেরণ করেন।’’
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবন আববাস (রা.) বলেনঃ
"كان من نوح وآدم عشرة قرون كلهم على شريعة الحق فاختلفوا فبعث الله النبيين مبشرين ومنذرين"
‘আদম ও নূহ ‘আলাইহিমাস্ সালাম এর মধ্যকার দশ যুগ বা প্রজন্ম সকলেই সত্য দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল, অতঃপর তারা মতবিরোধে লিপ্ত হল, ফলে আল্লাহ্ নবীগণকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শণকারী রূপে প্রেরণ করেন।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"كان بين آدم ونوح عشرة قرون كلهم على الإسلام"

‘আদম ও নূহ ‘আলাইহিমাস্ সালাম এর মধ্যবর্তী দশযুগ পর্যন্ত সবাই ইস্লামের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিল।’
শিরকের সূচনাঃ দুনিয়ায় প্রথম শিরক শুরু হয় হযরত নূহের কাওমে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযুর্গ লোকদের প্রতি তাদের অতিরিক্ত ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শণের মধ্য দিয়ে। প্রকৃত পক্ষে অতিরিক্ত কোনটাই ভাল নয়। যেমন সৃষ্টির প্রথম মানুষ আদম ও হাওয়াকে ইবলিস ধোকা দিয়েছিল অতিরিক্ত হিতাকাংখী হয়ে মিথ্যা কথা বানিয়ে অতিরিক্ত কথা শুনিয়ে।
’’ فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَى‘‘
‘অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, সে বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রাণ বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা।’
’’ فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَاتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـذِهِ الشَّجَرَةِ إِلاَّ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ - وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ‘‘
‘অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান, যা গোপন রাখা হয়েছিল, তা তাদের কাছে প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রনা দিল এবং বলল : পাছে তোমরা উভয়ে ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা তোমরা জান্নাতে চিরস্থায়ী হয়ে যাও, এজন্যই তোমাদের প্রতিপালক এ বৃক্ষটির কাছে যেতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছেন। সে তাদেরকে শপথ করে বলল- আমি তোমাদের হিতাকাংখীদের একজন।’
হযরত নূহ ‘আলাইহিস্ সালামের কাওমকে নেককার লোকদের অতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শনের নছীহত করে শয়তান তাদেরকে শিরকে লিপ্ত করেছিল। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ
’’ وَقَالُوا لَا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلَا تَذَرُنَّ وَدًّا وَلَا سُوَاعًا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْرًا‘‘
‘তারা বলল- তোমরা তোমাদের ইলাহদের কোন অবস্থায়ই বর্জন করো না, তোমরা ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক এবং নাসরকে ত্যাগ করো না।’
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ‘আবদুল্লাহ্ ইবন ‘আববাস (রা) বলেন-
" هذه اسماء رجال صالحين من قوم نوح فلما هلكوا أوحى الشيطان إلى قومهم أن انصبوا إلى مجالسهم التي كانوا يجلسون فيها أنصابا وسموها بأسمائهم ففعلوا ولم تعبد حتى اذا هلك اولئك ونسى العلم عبدت "
এ আয়াতে যে ক’টি নাম বলা হয়েছে, এরা সবাই ছিল নূহ ‘আলাইহিস্ সালামের কাওমের নেককার লোক। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান ঐ কাওমের লোকদের প্ররোচিত করল এ কথা বলে যে, ঐ সমস্ত নেককার লোকরা যেখানে বসতেন, সেখানে তাদের আকৃতিতে মূর্তি বানিয়ে সেগুলোকে তাদের নামে নামকরণ করো, তারা তাই করলো, কিন্তু সে গুলোর অর্চনা বা উপাসনা করত না। এ প্রজন্মের মৃত্যু হয়ে গেলে পরবর্তী প্রজন্মে তাওহীদের জ্ঞান বিস্মিত হয়ে গেল এবং ঐ মূর্তিগুলোর উপাসনা হতে লাগল।’
قال ابن جريرحدثنا ابن حميد حدثنا مهران عن سفيان عن موسى عن محمد بن قيس قال: كانوا قوما صالحين بين آدم ونوح وكان لهم أتباع يقتدون بهم فلما ماتوا قال أصحابهم الذين كانوا يقتدون بهم ু لوصورناهم كان أشوق لنا إلى العبادة إذا ذكرناهم فصوروهم ু فلما ماتوا وجاء أخرون دب إليهم إبليس فقال : إنما كانوا يعبدونهم وبهم يسقون المطر فعبدوهم
এ আয়াতের তাফসীরে ইসমাঈল ইবন কাসীর খ্যাতনামা মুফাসসির ইবন জারীরের সূত্রে আরেকটি রিওয়ায়াত উল্লেখ করেছেন। তা হলো মুহাম্মাদ বিন কায়স বলেন, আয়াতে উল্লিখিত ব্যক্তিগণ আদম (আ.) ও নূহের (আ.) মাঝামাঝি সময়ের বুযুর্গ ও নেকবান্দাহ্ ছিলেন। তাঁদের ছিল অনেক অনুসারী। তাঁরা যখন মৃত্যুবরণ করলেন, তখন তাঁদের সাথীগণ যারা তাদের অনুসরণ করত নিজেরা বলাবলি করল, আমরা যদি এসব বুযুর্গের ছবি বানিয়ে নিই, তা হলে তাঁদের কথা স্বরণ করে আমরা ইবাদাতে বেশি আগ্রহান্বিত হব। তাই তারা ঐ সমস্ত নেক লোকের ছবি তৈরী করল। এরা মারা যাওয়ার পর যখন পরবর্তী প্রজন্ম আসল, ইবলীস তাদেরকে এ বলে প্ররোচনা দিল যে, তোমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের ইবাদাত করত। তাদের মাধ্যমে বৃষ্টির জন্য ফরিয়াদ করত। এ কথায় প্ররোচিত হয়ে তারাও ঐ সমস্ত বুযুর্গের ইবাদাত শুরু করে দিল।
" قال ابن ابي حاتم : حدثنا أحمد بن منصور حدثنا الحسن بن موسى حدثنا يعقوب عن ابي المطهر قال : ذكروا عند ابي جعفروهوقائم يصلى يزيد بن المهلب قال: فلما انفتل من صلاته قال: ذكرتم يزيد بن مهلب ু اما إنه قتل في أول أرض عبد فيها غيرالله قال: ثم ذكروا ودّا قال: وكان ود رجلا مسلما وكان محببا في قومهও فلما مات عسكروا حول قبره في أرض بابل وجزعوا عليه فلما رأى إبليس جزعهم عليه تشبه في صورة إنسان ও ثم قال : إني أرى جزعكم على هذا الرجل ু فهل لكم أن اصورلكم مثله ও فيكون في ناديكم فتذكرونه ؟ قالو- نعم ও فصور لهم مثله قال : ووضعوه في ناديهم وجعلوا يذكرونه ু فلما رأى ما بهم من ذكره قال: هل لكم أن أجعل في منزل كل واحدٍ منكم تمثالا مثله ও فيكون له في بيته فتذكرونه ؟ قالوا : نعم ও قال فمثل لكل أهل بيت تمثالا مثله ও فأقبلوا فجعلوا يذكرونه به ও قال: وأدرك أبناؤهم فجعلوا يرون ما يصنعونه به وتناسلوا ودرس أمر ذكرهم إياه ু حتى اتخذه إلها يعبدونه من دون الله أولاد أولادهم فكان أول ما عبد غيرالله الصنم الذى سموه ودا "
‘ইবনু আবী হাতেম বলেনঃ...................... আবুল মুতাহ্হির হতে বর্ণিত! তিনি বলেন: আবু জা’ফর নামাযে রত ছিলেন, সে সময় লোকেরা ইয়াযীদ বিন মুহাল্লাবের কথা তার নিকট আলোচনা করল, নামায শেষে তিনি বললেন, তোমরা ইয়াযিদ বিন মুহাল্লাবের কথা আলোচনা করেছ। জেন রাখ তিনি নিহত হয়েছেন এমন দেশে, যেখানে সর্বপ্রথম গায়রুল্লাহর উপাসনা শুরু হয়েছে। তারপর তিনি ওয়াদদের কথা উল্লেখ করে বললেন, তিনি একজন মুসলিম ছিলেন এবং তার কাওমে তিনি খুবই প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যখন তিনি মারা গেলেন, বাবিল (ব্যাবিলন) শহরে তার কবরের চতুর্পার্শ্বে লোকেরা সমবেত হয়ে দুঃখ বেদনা প্রকাশ করল। ইবলিস যখন দেখল যে, লোকেরা তার কবরের চতুর্পার্শ্বে একত্র হয়ে, দুঃখ বেদনা প্রকাশ করছে, তখন ইবলিস মানুষের আকৃতি ধারণ করে বল্ল, আমি তোমাদেরকে এ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে দুঃখ বেদনা প্রকাশ করতে দেখছি। আমি কি তোমাদের জন্য তার একটি প্রতিমূর্তি বানিয়ে দেব, যা তোমাদের ক্লাবে থাকবে, আর তোমরা তাকে স্মরণ করবে? তারা বলল- হ্যাঁ হতে পারে। তখন শয়তান তার একটি প্রতিমূর্তি তাদের জন্য তৈরী করে দিল এবং তাদের ক্লাবে রাখল। তারা মূর্তি দেখে তাকে স্মরণ করত। ইবলিস এ অবস্থা দেখে তাদেরকে বলল- আমি কি তোমাদের প্রত্যেকের ঘরে অনুরূপ প্রতিমূর্তি বানিয়ে দেব, যাকে দেখে তোমরা তাকে স্মরণ করতে পারবে? তারা সম্মতিসূচক উত্তর দিল। অতঃপর ইবলিস প্রত্যেকের বাড়ির জন্য আলাদা আলাদা মূর্তি বানিয়ে দিলে তারা তা দেখে দেখে তাকে স্মরণ করত। তাদের সন্তানেরা তাদের এ কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করত। আস্তে আস্তে তাদের বংশ বিস্তার হতে লাগল এবং তাকে স্মরণ করার মূল বিষয়টি এ প্রজন্মের নিকট বিস্মৃত হয়ে গেল। এক কালে এসে তাদের সন্তানের সন্তানেরা একে ইলাহ বানিয়ে তার উপাসনা শুরু করে দিল। এটাই প্রথম মূর্তি, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার উপাসনা শুরু হল, তারা এর নাম রাখল ওয়াদ্দ (ودّ ) ।’
বনী ইসরাঈলে শিরকের সূচনাঃ
বনী ইসরাঈলে প্রথম গো বৎস পূজার প্রচলন করে সামেরী। এই ঘটনাটি আল্লাহ্ তায়ালা কুরআন করীমের সুরা ত্বাহা এর ৮৫-৮৯ আয়াতে উল্লেখ করেছেন-
" قَالَ فَإِنَّا قَدْ فَتَنَّا قَوْمَكَ مِن بَعْدِكَ وَأَضَلَّهُمُ السَّامِرِيُّ - فَرَجَعَ مُوسَى إِلَى قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ يَا قَوْمِ أَلَمْ يَعِدْكُمْ رَبُّكُمْ وَعْدًا حَسَنًا أَفَطَالَ عَلَيْكُمُ الْعَهْدُ أَمْ أَرَدتُّمْ أَن يَحِلَّ عَلَيْكُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَخْلَفْتُم مَّوْعِدِي - قَالُوا مَا أَخْلَفْنَا مَوْعِدَكَ بِمَلْكِنَا وَلَكِنَّا حُمِّلْنَا أَوْزَارًا مِّن زِينَةِ الْقَوْمِ فَقَذَفْنَاهَا فَكَذَلِكَ أَلْقَى السَّامِرِيُّ- فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَذَا إِلَهُكُمْ وَإِلَهُ مُوسَى فَنَسِيَ - أَفَلَا يَرَوْنَ أَلَّا يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلًا وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا "
‘তিনি (আল্লাহ্) বললেন, আমি তোমার (মূসা) সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। অতঃপর মূসা ক্রদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট ফিরে গেলেন। তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের রব কি তোমাদের নিকট এক উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে কি প্রতিশ্রুতকাল তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ হয়েছে, না তোমরা চেয়েছ তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ হতে গযব নিপতিত হোক? আর সে জন্যই কি তোমরা আমার নিকট প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করেছ? তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আপনার প্রতি প্রদত্ত ওয়াদা ভংগ করি নি। তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল কাওমের অলংকারের বোঝা। আমরা সেগুলো আগুনে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে। অতঃপর সে (সামেরী) তাদের জন্য একটি গো-বৎসের অবয়ব তৈরী করল, যা হাম্বা রব করত। তারা বলল, এটি তোমাদের ইলাহ্ এবং মূসারও ইলাহ্। তারা কি ভেবে দেখলনা, গো-বৎস মূর্তিটি তাদের কথার উত্তরে একটি কথাও উচ্চারণ করতে পারে না। অধিকন্তু তাদের ক্ষতি বা উপকার করার কোন ক্ষমতা নেই।’
উল্লেখ্য যে, সামেরী ছিল সামিরা নামে এক ইয়াহুদী গোত্রের লোক। বাইবেলের বর্ণনা মতে ইসরাঈল রাজ্যের শাসক ‘উমরী ‘‘সামার’’ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি পাহাড় কিনেছিলেন, যার উপর তিনি নিজের রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। যেহেতু পাহাড়ের সাবেক মালিকের নাম সামার ছিল, তাই এ শহরের নাম রাখা হয় সামেরিয়া। আর সামেরী ছিল উক্ত শহরের বাসিন্দা।
ইবন আববাস বলেনঃ সে গো বৎস পূজারী সম্প্রদায়ের লোক ছিল। কোনরূপে মিশরে পৌঁছে সে বনী ইসরাঈলীদের ধর্মে দীক্ষা লাভ করে। কিন্তু তার অন্তরে ছিল কপটতা। এ ব্যাপারে আরো ভিন্ন মতও রয়েছে।
বনী ইসরাঈল মিশর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় কিবতীদের নিকট থেকে অলংকার ঋণ নিয়েছিল। ঋনফেরত না দেয়ার কারণে হারুন ‘আলাইহিস সালাম এটাকে অবৈধ মনে করে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সবগুলো একটি গর্তে ফেলা হল, সামেরী হাতের মুঠি বন্ধ করে সেখানে পৌঁছল এবং হারুন (আ.) কে জিজ্ঞাসা করল- আমিও নিক্ষেপ করব? হারুন (আ.) মনে করলেন, তার হাতেও কোন অলংকার আছে। তাই তিনি নিক্ষেপ করার আদেশ দিলেন। তখন সামেরী হারুন (আ.) কে বলল: আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হোক আপনি আমার জন্য এ মর্মে দু‘আ করলেই নিক্ষেপ করব নতুবা নয়। তার কপটতা ও কুফর হারুন (আ.) এর জানা ছিল না। তিনি দোয়া করলেন। তখন সে হাত থেকে যা নিক্ষেপ করল তা অলংকারের পরিবর্তে মাটি ছিল। সে এই মাটি জিবরীল (আ.) এর ঘোড়ার পায়ের নিচ থেকে সংগ্রহ করেছিল। কারণ, সে একদা এই বিস্ময়কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিল যে, যে মাটিকে জিবরীলের ঘোড়ার পা স্পর্শ করে, সেখানেই সজীবতা ও জীবনের স্পন্দন সৃষ্টি হয়ে যায়। এতে সে বুঝে নিয়েছিল যে, এ মাটিতে জীবনের স্পন্দন নিহিত আছে। তাই অলংকারাদির গলিত স্ত্তপ দ্বারা গো বৎসের অবয়ব সৃষ্টি করে ঐ মাটি মিশ্রিত করার সাথে সাথে হাম্বা হাম্বা রব শুরু করেদিল। বনী ইসরাঈল এ গো বৎসের পূজা শুরু করল।
আরব ভূখন্ডে মূর্তিপূজার উদ্ভবঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে খুয‘আহ গোত্র প্রধান ‘আমর ইবন লুহাই এর মাধ্যমে আরব ভূখন্ডে মূর্তি পূজা শুরু হয়।
ইবন হিশাম আহ্লে ইলমের বরাত দিয়ে বলেন- আমর ইবন লুহাই (عمروبن لحى ) স্বীয় কোন কাজে মক্কা থেকে সিরিয়ায় গেল। যখন সে বালকা (بلقاء ) অঞ্চলের মায়াব ( ماب) নামক স্থানে আগমন করল, তথায় তখন আমালিকা গোত্রের লোকেরা বসবাস করত। আমালিক ছিল লাউস বিন সাম বিন নূহ (আ.) এর পুত্র। আমর ইবন লুহাই দেখতে পেল, তারা মূর্তিপূজা করছে। সে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, আমি দেখছি, তোমরা এই মূর্তিগুলোর উপাসনা করছ, কারণ কী? তারা বলল- এই মূর্তিগুলোর আমরা অর্চনা করি, এ গুলোর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করলে বৃষ্টি দেয়, সাহায্য চাইলে সাহায্য দেয়। আমর বিন লুহাই তাদেরকে বললঃ তোমরা কি আমাকে একটি মূর্তি দেবে, যা আমি আরব দেশে নিয়ে যাব, আর তারা তার উপাসনা করবে? তারা তাকে একটি মূর্তি দিল যার নাম ছিল হুবল। সে এটি মক্কায় এনে এক জায়গায় স্থাপন করল আর লোকদেরকে তার উপাসনা ও সম্মান করার জন্য নির্দেশ দিল।
‘আমর বিন লুহাই ছিল জিন-সাধক। সে তার অনুগত জিন এর পরামর্শ অনুযায়ী নূহ আলাইহিস্ সালাম এর জাতির উপাস্য মূর্তিগুলো জিদ্দা এলাকা থেকে মাটি খনন করে বের করে নিয়ে আসে। সেগুলোকে নূহ আলাইহিস্ সালামের সময়কার প্রলয়ঙ্করী বন্যা ও তুফান এতদ্ অঞ্চলে বহন করে নিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে বন্যার পানি নেমে যাবার সময় এগুলো জিদ্দা এলাকার চরাঞ্চলে আটকা পড়েছিল এবং পরবর্তীতে তা বালুর নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। ‘আমর ইবন লুহাই তার অনুগত জিনের পরামর্শে এ গুলোকে বের করে নিয়ে এসে হজ্জের মৌসুমে ‘আরব জনগণকে এগুলোর উপাসনা করার প্রতি আহবান জানায়। লোকেরা এতে তার আনুগত্য করলে সে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে তা বন্টন করে দেয়।
সে অনুযায়ী ‘ওয়াদ’ (ود) নামের মূর্তিটি ছিল দাওমাতুল জানদাল এলাকার ‘কালব’ গোত্রের নিকট, সূয়া’ (سواع) নামের মূর্তিটি ছিল ‘হুযাইল’ গোত্রের নিকট, ‘য়াগুছ’ (يغوث) নামের মূর্তিটি ছিল ‘মুরাদ’ গ্রোত্রের নিকট, ‘ইয়াউক’ (يعوق) নামের মূর্তিটি ছিল হামাদান গোত্রের নিকট। আর ‘নাছর’ (نسر) নামের মূর্তিটি ছিল ‘হিময়ার’ গোত্রের নিকট। এছাড়াও লাত, উয্যা ও মানাত নামে তাদের আরো মূর্তি ছিল, যেগুলোকে ইলাহ্ ভেবে তারা পূজা করত।
বনূ ইসমাঈলে পাথর পূজার সূচনাঃ
ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম মক্কায় লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাওহীদের দাওয়াত দেন। দাওয়াত মেনে নিয়ে বনু ইসমাইল তাওহীদি বিশ্বাসের উপর জীবন যাপন করে। কিন্তু কালের আবর্তনে যখন তাদের মধ্যে কয়েক প্রজন্ম অতিক্রান্ত হয়ে যায়। তখন ধীরে ধীরে তাওহীদের পথ থেকে সরে পড়তে থাকে। এক সময় যখন তাদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল, বসবাসের জন্য মক্কা সংকীর্ণ হয়ে পড়ল তখন প্রশস্ত পরিসরে জীবন যাপনের জন্য তারা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। যখনই তারা কোথাও যেত হারামের সম্মানে হারামের একটি পাথর সাথে নিয়ে যেত। যেখানে তারা অবস্থান করত, সেখানে ঐ পাথর রাখত, কাবার মত এটির তাওয়াফ করত। তাদের পছন্দনীয় পাথরের তারা উপাসনা করত। পরবর্তী প্রজন্ম এসে দীনে ইবরাহীম এবং ইসমাঈলকে পরিবর্তন করে মূর্তিপূজা শুরু করে দিল।
শিরকের কারণঃ
শিরক করার অনেক কারণ রয়েছে, উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল-
১। আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব ঃ
আল্লাহ্ যে কত বড়, কত মহান, কত ক্ষমতাবান, তাঁর কর্তৃত্ব যে কত ব্যাপক, এ ধারনা অনেকেরই নেই। আল্লাহ্ যে কত মহাপরাক্রমশালী, এ মূল্যায়ন অনেকেই করতে পারে না। তাই তারা শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়। আল্লাহ্ কুরআন মাজীদে তিন জায়গায় বলেছেন (وماقدروا الله حق قدره ) অর্থাৎ তারা আল্লাহকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারেনি। আল্লাহ তা‘য়ালা বলেনঃ
" يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذوهُ مِنْهُ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ - مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ"
‘হে লোক সকল! একটি উপমা দেয়া হল। তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ কর। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাকে ডাক তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হলেও কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না। আর যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার নিকট থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। যে চায় এবং যার নিকট চাওয়া হয়, উভয়ই দুর্বল। তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা নিরূপন করতে পারেনি। নিশ্চয় আল্লাহ্ অবশ্যই শক্তিধর, পরাক্রমশালী।’
" وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ - بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنْ الشَّاكِرِينَ - وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ "
‘তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীগণের প্রতি ওয়াহ্ই প্রেরণ করা হয়েছে এ কথা বলে যে, যদি তুমি শিরক কর, তবে তোমার আমল অবশ্যই নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই চরম ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। বরং আল্লাহরই ইবাদাত কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। তারা আল্লাহর যথাযথ মর্যাদা নিরূপণ করতে পারেনি। কিয়ামাতের দিন গোটা পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পূত পবিত্র। এরা যাকে তার সাথে শরীক করে, তা থেকে তিনি উর্দ্ধে।’
" عن ابن مسعود (رض) قال : جاء حبر من الأحبار إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال " يا محمد انا نجد ان الله يجعل السموات على إصبع والأرضين على إصبع والشجر على إصبع والماء على إصبع الثرى على إصبع وسائر الخلق على إصبع فيقول انا الملك فضحك النبى صلى الله عليه وسلم حتى بدت نواجذه تصديقا لقول الحبر ثم قرأ ( وماقدروا الله حق قدره والارض جميعا قبضته يوم القيامة )"
ইয়াহুদী এক পন্ডিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল; হে মুহাম্মদ, আমি (তাওরাতে) পাই আল্লাহ্ (কিয়ামাতের দিন) আকাশগুলোকে একটি অংগুলি, যমিনগুলোকে একটি অঙ্গুলি, গাছগুলোকে একটি অঙ্গুলি, পানিগুলো একটি অঙ্গুলি, মাটিগুলো একটি অঙ্গুলি এবং বাকী সমস্ত সৃষ্টি একটি অঙ্গুলির উপর রাখবেন, অত:পর বলবেন, আমি বাদশাহ (ঐ ব্যক্তির এ কথা শুনে) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দিলেন ঐ পন্ডিতের কথার সমর্থনে, এমনকি তাঁর মাড়ির দাঁতসমূহ দৃষ্টিগোচর হয়। অত:পর তিনি পড়লেন-
" وماقدروا الله حق قدره والارض جميعا قبضته يوم القيامة "
‘‘তারা আল্লাহর যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারে নি। কিয়ামাতের দিন পুরো যমীন আল্লাহর মুঠিতে থাকবে।’’
আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার হতে বর্ণিত; আল্লাহ কিয়ামাতের দিন আকাশগুলোকে uঁপচিয়ে ডান হাতে নিয়ে বলবেন: আমি বাদশাহ। স্বেচছাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়? অত:পর সাতটি যমিন uঁপচিয়ে বাম হাতে নিয়ে বলবেন: আমি বাদশাহ। স্বেচ্ছাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়?’’
আব্দুল্লাহ্ ইবন আববাস হতে বর্ণিত, ‘সপ্ত আকাশ, সপ্ত যমিন রাহমানের হাতের তালুতে তোমাদের কারো হাতে রক্ষিত সরষে দানার মত।’
অন্য রিওয়ায়াতে আছে ‘কুরসীতে সপ্ত আকাশের অবস্থান হলো, ঢালে রাখা সাতটি দিরহামের মত।’’
আবু যার (রা.) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: কুরসীর অবস্থান হলো আরশে যেমন লোহার রিং বা আংটি যা পৃথিবীর কোন একটি মরুভূমিতে ফেলে রাখা হয়েছে।
এবার ভেবে দেখা উচিত আল্লাহ কত বড়, কত মহান, কত তার শক্তি, ক্ষমতা, কিন্তু যারা এ কথাটি উপলব্ধি করতে পারে না, তারাই আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করে থাকে।
২. কারও ব্যাপারে অতিরঞ্জন করাঃ
আরবীতে এটিকে বলা হয় غلو অর্থাৎ কারও মান, মর্যাদা ভক্তি শ্রদ্ধা ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা, বাড়াবাড়ি করা। আল্লাহ غلو তথা অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন।
" يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ وَلاَ تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ فَآمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ وَلاَ تَقُولُواْ ثَلاَثَةٌ انتَهُواْ خَيْرًا لَّكُمْ إِنَّمَا اللّهُ إِلَـهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَات وَمَا فِي الأَرْضِ وَكَفي بِاللّهِ وَكِيلاً "
‘হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর ব্যাপারে সঙ্গত বিষয় ছাড়া কথা বলো না। ঈসা ইবন মারইয়াম নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর কালিমা যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে আগত রূহ। অতএব তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর এ কথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক। এ কথা পরিহার কর, তোমাদের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক ইলাহ। সন্তান হওয়া থেকে তিনি পূত পবিত্র। আকাশ যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর মালিক তিনি। কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’
উক্ত আয়াতে দীনের ব্যাপারে সীমালংঘন করতে নিষেধ করা হয়েছে। তারপর ঈসা ইবন মারইয়ামকে আল্লাহর রাসূল বলা হয়েছে, আল্লাহকে তিনের এক বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা বলতঃ ইলাহ তিনজন, আল্লাহ, মসীহ, মারয়াম। আল্লাহ্ এ কথা পরিহার করতে বলেছেন। কেননা তিনি শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ঈসা ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে সীমালংঘনই হল শিরকের অন্যতম কারণ।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-
" قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلاَ تَتَّبِعُواْ أَهْوَاء قَوْمٍ قَدْ ضَلُّواْ مِن قَبْلُ وَأَضَلُّواْ كَثِيرًا وَضَلُّواْ عَن سَوَاء السَّبِيلِ "
‘বল হে আহলে কিতাবগণ, তোমরা অন্যায়ভাবে তোমাদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না যারা ইতোপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। আর তারা সৎপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।’
এ আয়াতে দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ বাড়াবাড়ি করেই একদল লোক পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করেছে। অতএব বাড়াবাড়িই গোমরাহীর অন্যতম কারণ। ভক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মান মর্যাদায় অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি মানুষকে শিরকে নিয়ে পৌঁছে দেয়। যে সমস্ত গুন আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট দুর্বল মানুষকে সে গুণে গুণান্বিত করা সুষ্পষ্ট শিরক। আল্লাহ এ উম্মাতকে বানিয়েছেন মধ্যমপন্থী উম্মাত। যারা বাড়তি কমতি কোন ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জন করবে না। বরং যেখানে যাকে যে পরিমাণ মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন, সেখানে তাকে সে পরিমান মর্যাদাই দিয়ে থাকে। আর এটাই ইনসাফ। কারো ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন যেহেতু মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষকে শিরকে নিয়ে পৌঁছে দেয়, ধ্বংস করে দেয়। তাই আল্লাহর রাসূল উম্মাতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেনঃ
" إياكم والغلو فانما أهلك من كان قبلكم الغلو"
তোমরা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। কেননা এ বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
এ ভক্তি শ্রদ্ধার সীমালংঘনই খৃস্টানদের ভ্রান্তি ও পথ ভ্রষ্টতায় নিক্ষেপ করেছিল। ফলে তারা আল্লাহর বান্দা ও নবী ঈসা (আ.) কে মানুষ ও নবীর সীমানা থেকে বের করে নিয়ে ইলাহ তথা প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহর মত তাঁরও উপাসনা করেছে।
এ অতিরঞ্জনের কারণেই আহলে কিতাবগণ তাদের আহবার (ইয়াহুদী ’আলিম) ও রুহবান (খৃস্টান ধর্ম যাজক) কে রব বানিয়েছিল আল্লাহকে বাদ দিয়ে।
আল্লাহ্ বলেনঃ
" اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابامن دون الله والمسيح ابن مريم "
আদী ইবনে হাতেম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তো তাদের ইবাদাত করতাম না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা কি তা হারাম করে নি, আর তোমরা কি তা হারাম বলে বিশ্বাস করো নি আর আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন এমন কিছু কি তারা হালাল করেনি যা তোমরা মেনে নিয়েছ? আমি বললাম হ্যাঁ, তিনি বললেন, এটাই হল তাদের ‘ইবাদাত’।
এ অতিশয় ভক্তিশ্রদ্ধার কারণেই কথিত মৃত বুজুর্গ ও ওলীদেরকে ভাল মন্দ করার মালিক, রোগ ব্যাধি নিরাময়কারী, বিপদ আপদ থেকে মুক্তি দানকারী, মান্নতপূর্ণকারী, চাকরী বাকরীতে, ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতিদানকারী এবং মনোবাঞ্ছা পূরণকারী বলে বিশ্বাস করে। তাই দেখা যায় লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ তাদের মনো বাঞ্ছা পূরণের জন্য এ সমস্ত লোকদের কবরে গরু ছাগল ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়, প্রচুর টাকা পয়সা দেয়। ঐ সমস্ত লোকদের কবরকে এত পূত পবিত্র ও বরকতময় বলে বিশ্বাস করে যে, সেখানে জুতা পায়ে দিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা অনেক দূর থেকে জুতা খুলে রেখে আসতে হয়, কবরের পাশে জুতা হাতে করে নিয়ে যাওয়ারও অনুমতি নেই। অথচ জুতা পাক পবিত্র থাকলে সে জুতা পরে ছালাত আদায়েরও অনুমতি রয়েছে। যেমন আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাহাবীগণ কোন কোন সময় জুতা পায়ে দিয়েই ছালাত আদায় করেছেন। তারা বরকতের জন্য সে সমস্ত কবরের দেয়াল, দরওয়াজা ইত্যাদিতে চুমু দেয়, এতে নারী পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। এমনকি সদ্য প্রসূত সন্তানকেও সেখানে নিয়ে কবরের ধূলাবালি মাখিয়ে বরকত হাসিলের অপপ্রয়াস চালায়, অথচ এ সন্তানটিকে আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তাওহীদের বিশ্বাসের উপর। যেমন আল্লাহর রাসূল বলেছেন-
" كل مولود يولد على الفطرة فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجسانه"
‘প্রতিটি সন্তানের জন্ম হয় ফিতরাত তথা তাওহীদের উপর, তারপর পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায় অথবা খৃস্টান বানায় অথবা অগ্নি পূজক বানায়।’
আল্লাহ্ বলেন
"فظرة الله التى فطر الناس عليها "
‘আল্লাহর ফিতরাত তথা তাওহীদের অনুসরণ কর, যার উপর আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।’
শুধু তাই নয় সে সমস্ত কবরের পার্শ্বের গজার মাছ, কাছিম, কুমিরগুলো পর্যন্ত বরকতময় হয়ে যায়, তাইতো তাদের গায়ের শেওলা নিজেদের এবং বাচ্চাদের গায়ে মেখে নিজেদেরকে ধন্য করে থাকে। এ সবকিছুই করার একমাত্র কারণ হল, সে সমস্ত কবরবাসীদের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা। এ অতিরঞ্জন করতে গিয়ে কাউকে বলে গাউছুল আযম অর্থাৎ বড় ত্রাণকর্তা, কারো সম্পর্কে বলে, তার দরবার থেকে কেউ খালি হাতে ফিরেনা, এ ধরনের আরো অনেক কথাবার্তা, যা সম্পূর্ণ শিরক। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম মানব, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা সকলের কর্তব্য। তাঁকে সবচেয়ে বেশী শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। কিন্তু বেশি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে অতিরঞ্জন করে ফেলে কিনা, তাই তো আল্লাহর রাসূল বলেছেন ঃ
"انا محمد بن عبد الله ورسوله والله ما احب ان ترفعونى فوق منزلتى التى أنزلني الله عزوجل"
‘আমি আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহর কসম, মহান আল্লাহ আমাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন তোমরা আমাকে তার উপরে উঠাও, তা আমি পছন্দ করি না।’ অন্য হাদীছে রয়েছে, ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
"لا تطرونى كما أطرت النصارى ابن مريم إنما أنا عبد الله فقولوا عبد الله ورسوله "
‘তোমরা আমার ব্যাপারে অতিরঞ্জন করো না, যেমন অতিরঞ্জন করেছে ঈসা ইবন মারইয়ামের ব্যাপারে নাছারা। আমি তো শুধু আল্লাহর একজন বান্দা। তোমরা আমার ব্যাপারে এটুকুই বল, ‘আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’ অনেকে বাড়াবাড়ি করে রাসূল এমনকি ওলীদের ব্যাপারে বলে থাকে, তাঁরা গায়েব জানেন, অথচ এ বিষয়টি একমাত্র আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। আল্লাহ্ বলেনঃ
" قُل لاَّ أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَآئِنُ اللّهِ وَلا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوحَى إِلَيَّ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَفَلاَ تَتَفَكَّرُونَ "
‘বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট রয়েছে আল্লাহর ভান্ডার সমূহ, আমি গায়ব জানি না, আমি একথাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা, আমি তো শুধুমাত্র আমার নিকট প্রেরিত ওয়াহ্ইর অনুসরণ করি। তুমি বল অন্ধ এবং চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কি বরাবর হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা করো না?’
" قُل لاَّ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلاَ ضَرًّا إِلاَّ مَا شَاء اللّهُ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَاْ إِلاَّ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ "
‘বল, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধন ও অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, তবে আল্লাহ্ যা চান। আর আমি যদি গায়ব জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, আমাকে কোন অমঙ্গল স্পর্শ করতে পারতো না। আমি তো শুধুমাত্র ঈমানদার গোষ্ঠীর জন্য একজন ভীতিপ্রদর্শন কারী ও সুসংবাদদাতা।’
উল্লেখ্য যে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (সিনিয়র ও জুনিয়র) ইরাক আক্রমণ করে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে ইতিহাসের জঘন্যতম অন্যায় করেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আর একটি বিষয় লক্ষনীয় যে, যারা বিশ্বাস করত, আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর ক্ষমতা অনেক, মৃত্যুর পরেও তাঁর ক্ষমতা বহাল রয়েছে, তাঁর দেশে বোমা মারলেও ফুটবেনা। কারও রূহ কবজ করতে হলে মালাকুল মউতকে তাঁর অনুমতি নিতে হয়, বুশের বোমায় দেশটি তছনছ হয়ে যাওয়া এবং নির্বিচারে মানুষ নিহত হওয়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, তাদের ‘আকীদা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
তারা ওলীদের ব্যাপারে একটি জাল হাদীস বানিয়ে নিয়েছে-
" ألا إن اولياء الله لايموتون "
‘জেনে রাখ নিশ্চয় আল্লাহ্র ওলীগণ মরে না।’ তাই তারা বিশ্বাস করে যে ওলীগণ মরেনি, তারা শুধু স্থান পরিবর্তন করেছেন, তারা পূর্বের মতই সবকিছু দেখেন, সব কিছু করার ক্ষমতা রাখেন, তাই তারা ওলীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে না বরং বলে থাকে ইনতিকাল করেছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন বলাটা বেয়াদবি মনে করে। অথচ কুরআন সুন্নায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোথাও ইনতিকাল শব্দ ব্যবহার করা হয়নি বরং ওফাত বা মৃত্যু শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ বলেছেন :
" إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ "
‘নিশ্চয় তুমি মৃত্যুবরণকারী এবং তারাও মৃত্যুবরণকারী’
" أَفَإِن مَّاتَ .........."
‘যদি সে (মুহাম্মাদ) মারা যায়.....’
"عن ابن عباس رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مات ودرعه رهن عند يهودي . . . . "
‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যু বরণ করেছেন এ অবস্থায় যে, তাঁর লৌহ বর্মটি এক ইয়াহুদির নিকট বন্ধক ছিল।
"مات رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو ابن ثلاث وستين
রাসূলুল্লুাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বৎসর।’
"عن أبي هريرة رض قال: لما توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم"
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত হল।’
রাসূলুল্লুাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর আবু বাকর (রা.) বলেছিলেনঃ
"من كان يعبد محمدا فإن محمدا قد مات ومن كان يعبد الله عزوجل فإن الله حي لايموت"
‘যে মুহাম্মাদ এর উপাসনা করে সে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ মৃত্যু বরণ করেছেন। আর যে আল্লাহ্র উপাসনা করে সে জেনে রাখুক যে, আল্লাহ্ নিশ্চিত জীবিত, তিনি মরেন না।’
এমনিভাবে ওলীদের কবরকে কবর বলা তারা বেয়াদবি মনে করে মাযার বলে থাকে। অথচ কুরআন সুন্নাহ্ কোথাও কবরকে মাযার বলা হয়নি, এমনকি আল্লাহ্র সবচেয়ে বেশি প্রিয় ব্যক্তিত্ব সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরকে মাযার না বলে বলা হয়েছে "قبر النبى" সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যেমন ইমাম বুখারী (র.) তাঁর সহীহ বোখারীতে একটি অধ্যায় এনেছেন এভাবেঃ
"باب ما جاء في قبر النبي صلى الله عليه عليه وسلم وأبي بكر وعمر رضي الله عنهما" ‘
‘‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবুবাকর (রা.) এবং উমার (রা.) এর কবরের অধ্যায়’’
আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর সম্পর্কে বর্ণিত আছে-
كان يقف على قبر النبي صلى الله عليه وسلم فيصلي على النبي صلى الله عليه وسلم
তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর উপর দুরূদ পড়তেন।
৩. শিরকের আর একটি বড় কারণ হচ্ছে ওয়াসীলার ভুল ব্যাখ্যাঃ
অর্থাৎ এ ধারণা পোষণ করা যে, আমরা সরাসরি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হব না, অথবা আমাদের আমল সরাসরি আল্লাহর নিকট পেŠঁছবে না, এর জন্য প্রয়োজন কোন মাধ্যম বা ওয়াসীলা অবলম্বন করা। এই ধারণা নিয়ে লোকেরা বিভিন্ন বুযর্গ ব্যক্তির নিকট ধরনা দেয় এবং বিশ্বাস করে যে, এদের মাধ্যমেই আমাদের ’আমলকে আল্লাহর নিকট পৌঁছাতে হবে। শুধু জীবিত নয় মৃত ব্যক্তিকেও ওয়াসীলা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। অনেক সময় আরো অগ্রসর হয়ে মৃত ওলী ব্যক্তিকেই জীবিত ভেবে তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে। তারা মনে করে এরা তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করে দিতে সক্ষম হবে। এ সমস্ত লোক কিন্তু আল্লাহকে অস্বীকার করে না বরং এদের বিশ্বাস ঐ সব ব্যক্তিদের ওয়াসীলায়ই এরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হবে এবং পরকালেও এরা তাদেরকে পার করিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আরবের মুশরিকরা তাদের মূর্তি ও দেবদেবীর ব্যাপারে এ বিশ্বাসই পোষণ করত। আল্লাহ্ বলেন-
" وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفي "
‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, (তারা বলে) আমরা তো তাদের উপাসনা এ জন্যই করি যে তারা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছিয়ে দেবে’
‘যখন মুশরিকদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় কে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন? কে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন? কে তোমাদের এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের রব? তারা উত্তরে বলেঃ আল্লাহ্। যখন তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তোমাদের মূর্তি পূজার উদ্দেশ্য কি? তারা বলে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছিয়ে দেবে এবং তার নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করবে।’
" وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَضُرُّهُمْ وَلاَ يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ "
‘ওরা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর উপাসনা করে যা তাদের কোন উপকার এবং অপকার করার ক্ষমতা রাখেনা, তারা বলে, এরা আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সুপারিশকারী।’
বস্ত্তত: আল্লাহর নিকট আমল পৌঁছাতে হলে অন্যের মাধ্যম প্রয়োজন বা দু‘আ করতে হলে অন্য কোন ব্যক্তিকে মাধ্যম অবলম্বন করে আল্লাহর নিকট দু‘আ পৌঁছাতে হবে এ ধরণের ‘আকীদা পোষণ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ‘আমল সরাসরি আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়, কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না। এমনিভাবে দু‘আও।
আল্লাহ ‘আমলের ব্যাপারে বলেছেন:
" إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ "
‘তাঁরই (আল্লাহ্) দিকে পবিত্র বাণীসমূহ আরোহণ করে এবং সৎকর্ম একে উন্নীত করে।’
আল্লাহ্ এখানে ‘আমলকে আল্লাহর নিকট পৌঁছাবার জন্য কোন মাধ্যমের কথা বলেন নি।
দু‘আ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন-
" وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ "
‘তোমাদের রব বললেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’
" وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ "
‘এবং যখন তোমাকে আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে (বল) আমি তো নিকটেই। আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি আহবানে সাড়া দেই’
এখানে কোন মাধ্যম বা ওয়াসীলার কথা বলা হয় নি। এমনিভাবে আল্লাহ্ স্বয়ং যত দু‘আ আমাদেরকে শিখিয়েছেন কোন মাধ্যমের কথা বলেন নি। বরং সরাসরি বলতে শিখিয়েছেন। যেমন-
" ربنا لاتزغ قلوبنا.......... ربنا هب لنا....... ربنا لاتوأخذنا............ ربنا أتنا في الدنيا .......... رب اشرح لى ......... رب اغفرلى............" ইত্যাদি
‘হে আমাদের রব!...................’ ইত্যাদি।
সকল মানুষের এবং সকল বিষয়ের শিক্ষক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাললাম যে দু‘আগুলো আমাদেরকে শিখিয়েছেন তাতেও কোন ওয়াসীলার কথা নেই। সেখানেও সরাসরি দু‘আ করতে শিখিয়েছেন। যেমন-
" اللهم أت نفسى تقواها............. اللهم أعنى على ذكرك............. اللهم انى أسئلك الهدى........... اللهم أحسن عاقبتنا....... اللهم أجرنى من النار." ইত্যাদি
‘হে আল্লাহ্!..............ইত্যাদি’।
হ্যাঁ দু‘আ করার ক্ষেত্রেও কুরআন সুন্নাহ সমর্থিত কিছু ওয়াসীলাহ্ রয়েছে, সে ওয়াসীলা অবলম্বন করা কোন দোষণীয় নয়।
ওয়াসীলার প্রকারঃ
ওয়াসীলা মোট পাঁচ প্রকার।
তম্মধ্যে চার প্রকার বৈধ একটি অবৈধঃ
বৈধ ওয়াসীলাঃ
(১) ঈমানের ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করা।
এটা হলো সবচেয়ে বড় ওয়াসীলা। লোকেরা আল্লাহর উপর ঈমান এনে তার ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছেন। আল্লাহ্ কুরআন করীমে তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-
رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلإِيمَانِ أَنْ آمِنُواْ بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأبْرَارِ
‘‘হে আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই আমরা এক আহবানকারীকে ঈমানের দিকে আহবান করতে শুনেছি যে, তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন, তাতে আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের রব, অতএব আমাদের অপরাধ সমূহ ক্ষমা করুন। আমাদের ত্রুটি বিচ্যুতি গুলো মিটিয়ে দিন এবং পুণ্যবানদের সাথে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। আল্লাহ্ মুত্তাকীদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন:
الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘‘যারা বলে: হে আমাদের রব, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে দিন।’’
(২) আল্লাহ্ তা‘য়ালার নাম ও গুণাবলীর ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করা। আল্লাহ্ বলেন-
" ولله الأسماء الحسنى فادعوه بها "
‘আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, সে নামের মাধ্যমে তোমরা তাকে ডাক’। যেমন বলল, হে আল্লাহ্, তোমার غفور নামের ওয়াসীলায় তুমি আমাকে মাফ কর। হে আল্লাহ্ তোমার رحمن নামের ওয়াসীলায় আমাকে দয়া কর, ইত্যাদি।
(৩) নিজের কোন নেক ‘আমলের ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করা।
যেমন এভাবে বলবে, আল্লাহ্ আমি যে ছালাত আদায় করেছি এর ওয়াসীলায় আমাকে ক্ষমা করে দাও। সহীহ্ আল বুখারীতে আছে, বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি গুহায় আটক হয়ে যাওয়ার পর প্রত্যেকেই নিজ নিজ উত্তম ‘আমলের ওয়াসীলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দু‘আ করেছেন আল্লাহ্ তাদের দু‘আ কবুল করে তাদেরকে গুহা থেকে মুক্ত করেছেন।
عن عبد الله عمر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول انطلق ثلاثة رهط ممن كان قبلكم حتى أوواالمبيت إلى غار فدخلوه فانحدرت صخرة من الجبل فسدت عليهم الغار فقالوا إنه لا ينجيكم من هذه الصخرة إلا أن تدعوا الله بصالح أعمالكم فقال رجل منهم : أللهم كان لي أبوان شيخان كبيران وكنت لا أغبق قبلهما أهلا ولا مالا فناى بي في طلب شىء يوما فلم أرح عليهما حتى ناما فحلبت لهما غبوقهما فوجدتهما نائمين وكرهت أن أغبق قبلهم أهلا أو مالا فلبثت والقدح على يدي أنتظر استيقاظهما حتى برق الفجر فاستيقظا فشربا غبوقهما اللهم إن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك ففرج عنا ما نحن فيه من هذه الصخرة فانفرجت شيئا لايستطيعون الخروج قال النبي صلى الله عليه وسلم وقال الآخر اللهم كانت لي بنت عم كانت أحب الناس إلي فاردتها عن نفسها فامتنعت مني حتى ألمت بها سنت من السنين فجاء تني فأعطيتها عشرين ومائت دينار على أن تخلي بيني وبين نفسها ففعلت حتى إذا قدرت عليها قالت لا أحل لك أن تفض الخاتم إلا بحقه فتحرجت من الوقوع عليها فانصرفت عنها وهي أحب الناس إلي وتركت الذهب الذي أعطيتها اللهم إن كنت فعلت ابتغاء وجهك فافرج عنا مانحن فيه فانفرجت الصخرة غير أنهم لايستطيعون الخروج منها قال النبي صلى الله عليه وسلم وقال الثالث: اللهم إني استاجرت أجراء فاعطيتهم أجرهم غير رجل واحد ترك الذي له وذهب فثمرت أجره حتى كثرت منه الاموال فجاءني بعد حين فقال ياعبد الله أدي إلي أجري فقلت له كل ماترى من أجرك من الإبل والبقر والغنم والرقيق فقال يا عبد الله لاتستهزئ بي فقلت إني لاأستهزئ بك فأخذه كله فاستاقه فلم يترك منه شيئا أللهم فإن كنت فعلت ذلك ابتغاء وجهك فافرج عنا مانحن فيه فانفرجت الصخرة فخرجوا يمشون
‘‘আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘উমার (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে তিন ব্যক্তি (পথ) চলতে চলতে রাত কাটাবার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে এক খন্ড পাথর পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা পরস্পর বলল, তোমাদের সৎ কার্যাবলীর দোহাই দিয়ে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোন কিছুই এ পাথর থেকে তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারবে না। তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ্, আমার বাবা-মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনো তাদের আগে আমার পরিবার-পরিজনকে কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করাতাম না। একদিন কোন একটি জিনিসের খোঁজে আমাকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়। কাজেই তাদের ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বে আমি (পশুপাল নিয়ে) ফিরতে পারলাম না। আমি (তাড়াতাড়ি) তাদের জন্য দুধ দোহন করে নিয়ে আসলাম। কিন্তু তাদেরকে নিদ্রিত পেলাম। আর তাদের আগে আমার পরিবার-পরিজনকে কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করতে দেয়াটাও আমি পসন্দ করি নি। তাই আমি তাদের জেগে ওঠার অপেক্ষায় পেয়ালাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এভাবে ভোর হল। তখন তারা জাগলেন এবং দুধ পান করলেন। ‘হে আল্লাহ্, যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকি, তবে এ পাথরের কারণে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা আমাদের থেকে দূর কর। তখন পাথরটি সামান্য সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে পারল না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্! আমার এক চাচাত বোন ছিল। সে আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি তাকে সম্ভোগ করতে চাইলাম। কিন্তু সে আমাকে প্রত্যাখ্যান করল। অবশেষে এক বছর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সে (খাদ্যাভাবে সাহায্যের জন্য) আমার নিকট এল। আমি তাকে একশ বিশ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) এ শর্তে দিলাম যে, সে আমার সাথে নির্জনবাস করবে। সে তা মনজুর করল। আমি যখন সম্পূর্ণ সুযোগ লাভ করলাম তখন সে বলল, আমি তোমাকে অবৈধভাবে মোহর ভাঙ্গার অনুমতি দিতে পারি না (অর্থাৎ অন্যায়ভাবে তুমি আমার সতীত্ব হরণ করতে পার না)। ফলে সে আমার সর্বাধিক প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও আমি তার সাথে সহবাস করা পাপ মনে করে তার কাছ থেকে সরে পড়লাম এবং আমি তাকে যে স্বর্ণমুদ্রা দিয়েছিলাম তা ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ্, আমি যদি এটা তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি তবে আমরা যে বিপদে পড়েছি তা দূর কর। তখন ঐ পাথরটি (আরো একটু) সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে পারছিল না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্! আমি কয়েকজন মজুর নিযুক্ত করেছিলাম এবং আমি তাদেরকে তাদের মজুরীও দিয়েছিলাম। কিন্তু একজন লোক তার প্রাপ্য না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা কাজে খাটালাম, তাতে প্রচুর ধন-সম্পদ অর্জিত হল। কিছুকাল পর সে আমার নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র বান্দাহ্, আমাকে আমার মজুরী দিয়ে দাও। আমি তাকে বললাম, এসব উট, গরু, ছাগল ও গোলাম যা তুমি দেখতে পাচ্ছ তা সবই তোমার। এ কথা শুনে সে বলল, হে আল্লাহর বান্দাহ্, তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করো না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে মোটেই ঠাট্টা করছি না। তখন সে সবই গ্রহণ করল এবং হাঁকিয়ে নিয়ে গেল, তার থেকে একটাও ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ্, আমি যদি তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এটা করে থাকি, তবে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা দূর কর। তখন ঐ পাথরটি (সম্পূর্ণ) সরে গেল এবং তারা বেরিয়ে এসে পথ চলতে লাগল।’’
(৪) কোন নেক ব্যক্তির নিকট দু‘আ চাওয়া
অর্থাৎ এ দু‘আকে মাগফিরাত, রহমত ইত্যাদি লাভের ওয়াসীলা বানানো। যেমন, সাহাবা (রা.) অনেকেই বিভিন্ন সময়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দু‘আ চেয়েছেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে উমার ফারুক (রা.) এর নিকট দু‘আ চেয়েছেন, যখন তিনি উমরায় যাচ্ছিলেন।
قال النبى صلى الله عليه وسلم لعمر لما أراد أن يعتمر من المدينة "لا تنسنا يا أخيَ من دعائك"
‘‘হে আমার প্রিয় ভাই, তুমি দু‘আয় আমাদেরকে ভুলে যেয়ো না।’’
অবৈধ ওয়াসীলাঃ
(৫) কোন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ওয়াসীলা দেয়া।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তির নিকট না গিয়ে তার নিকট দোয়া না চেয়ে তার ওয়াসীলা দিয়ে বা তার কসম দিয়ে দোয়া করা। এ ওয়াসীলাটি শারীআত সম্মত নয়। যেমন: হে আল্লাহ্, তুমি উমুক ব্যক্তির ওয়াসীলায় আমাকে ক্ষমা কর।
কোন মৃতব্যক্তির ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করা বৈধ নয় । এমনকি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করা বৈধ হবে না। যেমন সাহাবা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর কখনো কোন সাহাবী তাঁর ওয়াসীলা দিয়ে দোয়া করেছেন, তার কোন প্রমাণ নেই। এমনকি যখন তাঁরা দুর্ভিক্ষে পড়েছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াসীলা দিয়ে কেউ দু‘আ করেন নি, অথচ তাঁর কবর তাদের নিকটেই ছিল। বরং তাঁর চাচা ‘আববাস (রা.) এর দু‘আর ওয়াসীলা করেছিলেন অর্থাৎ তাঁর নিকট তাঁরা দু‘আ চেয়েছিলেন, যেন অভাব দূর হয়ে যায়।
"اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا صلى الله عليه وسلم فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فأسقنا"
‘‘হে আল্লাহ্, আমরা আমাদের নবীর ওয়াসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাইতাম, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিয়ে সিক্ত করতে, এখন আমাদের নবীর চাচার ওয়াসীলা দিয়ে বৃষ্টি চাচ্ছি। তুমি আমাদের বৃষ্টি দাও।’’ উক্ত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় কোন মৃত ব্যক্তির ওয়াসীলা দিয়ে দু‘আ করা যাবে না।
ওয়াসীলা শব্দটির ব্যবহারঃ
ওয়াসিলা শব্দটির ব্যবহার কুরআন মাজীদের দু’জায়গায় এসেছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَابْتَغُواْ إِلَيهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُواْ فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর, তাঁকে পাওয়ার ওয়াসীলা অন্বেষণ কর। তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’
أُولَـئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا
‘যাদেরকে (আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য) তারা (ভ্রান্তবাদীরা) ডাকছে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের জন্য ওয়াসীলা তালাশ করছে যে, তারা কে কতবেশি নিকটতর হতে পারে। তারা তাঁর রহমত কামনা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।
উপরিউক্ত আয়াতদ্বয়ে ওয়াসীলা বলতে আল্লাহর আনুগত্য এবং আল্লাহর পছন্দনীয় ‘আমলকে বুঝানো হয়েছে।
মুফাস্সিরগণের রায় মতে আল্লাহকে পাওয়ার এবং তাঁর নৈকট্য লাভ করার মাধ্যম হলো আল্লাহর আনুগত্য করা এবং তাঁর পছন্দ মোতাবেক কাজ করা।
ওয়াসীলার আর একটি ব্যবহার পাওয়া যায় হাদীসের গ্রন্থে
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رض أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول "إذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول ثم صلوا علي فإنه من صلى علي صلاة صلى الله عليه بها عشرا ثم سلوا الله لي الوسيلة فإنها منزلة في الجنة لاينبغي إلالعبد من عباد الله وأرجو أن أكون أناهو فمن سأل لي الوسيلة حلت له الشفاعة
‘আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘আমর ইবন ‘আছ হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন তোমরা মুয়ায্যিনকে বলতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তার অনুরূপ বলো। অত:পর আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ সে কারণে তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহ্র নিকট ওয়াসীলা চাও। কেননা এটি জান্নাতের একটি উচ্চ পজিশন বা মর্যাদা। এ মর্যাদাটি আল্লাহ্র বান্দাদের থেকে কোন এক বান্দাই লাভ করবেন। আমি আশা করি, সে বান্দাটি আমিই হব। যে আমার জন্য ওয়াসীলা চাবে (আল্লাহ্র নিকট) তার জন্য আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হবে।’
উক্ত হাদীস ওয়াসীলা বলতে জান্নাতের একটি উচ্চ পজিশনকে বুঝানো হয়েছে। এ হাদীসটি সুনান আত তিরমিযীর মানাকিবের ১ম অধ্যায়, সুনান আবু দাউদের সালাতের ৩৬তম অধ্যায় এবং সুনান নাসায়ীর আযানের ৩৭তম অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। কুরআন সুন্নাহর কোথাও ওয়াসীলা বলতে পীরের নিকট যাওয়া, পীরের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়া বুঝানো হয় নি।
এখানে একটি বিষয় আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি, তা হলো উক্ত হাদীসে দুরূদ আযানের পর পড়ার কথা বলা হয়েছে। আযানের পূর্বে দুরূদ পড়ার কথা কোন হাদীসে নেই, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের কোন মুয়ায্যিন বা পরবর্তী সালেহীনের যুগের কোন মুয়ায্যিন আযানের পূর্বে দুরূদ পড়েছেন, তার কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু অধুনা কোন কোন মসজিদে আযানের পূর্বে দুরূদ ছালাত, সালাম পড়া হয়, যা সম্পূর্ণ বিদ‘আত, কুরআন সুন্নাহ্ বিরোধী কাজ। জেনে রাখা দরকার, ‘ইবাদাত আবেগের বশবর্তী হয়ে করা যায় না, তার জন্য সহীহ্ দলীলের প্রয়োজন। পক্ষান্তরে বৈষয়িক বিষয়াদি সব বৈধ যতক্ষণ না তা অবৈধ হওয়ার দলীল পাওয়া যায়।
মূলত: আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার জন্য চারটি বিষয়ের প্রয়োজন-
১। বিশুদ্ধ ঈমান, ঈমানের মৌলিক যে ছয়টি বিষয় রয়েছে প্রতিটির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস থাকা। ছয়টি বিষয় হলো (ক) আল্লাহর প্রতি ঈমান, (খ) ফেরেশতাগণের প্রতি ঈমান, (গ) আসমানী কিতাব সমূহের উপর ঈমান, (ঘ) রাসূলগণের উপর ঈমান, (ঙ) পরকালে ঈমান, (চ) তাকদীরে ঈমান।
একবার জিব্রাঈল (আ.) মানুষের আকৃতি ধারণ করে রাসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন, তম্মধ্যে প্রথম প্রশ্নটি ছিল ঈমান সম্পর্কে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উত্তরে বললেন:
الإيمان أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره وشره
‘ঈমান হচ্ছে তুমি আল্লাহ্, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালের উপর ঈমান আনবে, আর ঈমান আনবে তাকদীরের ভাল মন্দের উপর।’
২। ঈমানের দাবী অনুযায়ী কাজ করা, যাকে শরীয়তের ভাষায় ‘আমলে সালেহ বলা হয়। কুরআন মাজীদে অধিকাংশ জায়গায়ই ঈমানের পরে ‘আমলে সালেহ এর কথা বলা হয়েছে। যেমন-
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا
‘অবশ্য যারা ঈমান এনেছে এবং ‘আমলে সালেহ বা নেক ‘আমল করেছে, তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস।’
৩। ঈমান বিনষ্টকারী, কাজ থেকে দূরে থাকাঃ
যে সমস্ত কাজ ঈমানকে নষ্ট করে দেয় যেমন: কুফর, শিরক, নাস্তিক্যবাদ, বিশ্বাসগত নিফাক ইত্যাদি কার্যাবলী বর্জন করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُواْ كُفْرًا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُوْلَـئِكَ هُمُ الضَّآلُّونَ
‘নিশ্চয় যারা ঈমান আনার পর কুফরী করেছে, অত:পর তারা কুফরকে আরো বৃদ্ধি করেছে, তাদের তাওবা কখনও কবুল করা হবে না। আর এরাই হল পথভ্রষ্ট।’
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكْفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُواْ الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ
‘সেদিন (হাশরের ময়দানের দিন) কতক চেহারা উজ্জ্বল হবে আর কতক চেহারা মলিন হবে। যাদের চেহারা মলিন হবে, (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি কুফরী করেছিলে ঈমান আনয়নের পর? সুতরাং তোমরা শাস্তিভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরী করতে।’
৪। ‘আমলে সালেহকে নষ্টকারী কাজ থেকে দূরে থাকাঃ
যে সমস্ত কাজ ‘আমলে সালেহকে নষ্ট করে দেয়, তম্মধ্যে রয়েছে শিরক করা, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অপছন্দ করা, কুফরী করা, ইসলামের পথে বাধা সৃষ্টি করা, আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করা ইত্যাদি।
আল্লাহ্ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের কর্মসমূহ বিনষ্ট করোনা।’
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘আর অবশ্যই ওয়াহ্য়ি প্রেরণ করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং তোমার পূববর্তীগণের (নবীগণ প্রতি, একথা বলে যে,) যদি তুমি শিরকে লিপ্ত হও, তাহলে তোমার কর্ম নিশ্চিত নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই চরম ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الهُدَى لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ
‘নিশ্চয় যারা কুফরী করে, আল্লাহর পথ হতে (মানুষকে) বাধা দেয় এবং রসূলের বিরোধিতা করে স্পষ্ট হওয়ার পর তার সামনে হিদায়াত, তারা আল্লাহর কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তিনি (আল্লাহ্) তাদের কর্মসমূহ ব্যর্থ করে দেবেন।’
আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের জন্য এ চারটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। নতুবা কোন মাধ্যমেই আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব নয়।
(৪) শিরকের আর একটি কারণ হল পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণঃ যখনই নবীরাসূলগণ বা তাঁদের ওয়ারিশ ‘আলিমগণ হিদায়াতের পথে আহবান জানায়, তখনই মুশরিকরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদা, চৌদ্দপুরুষের পথ ছাড়তে রাজী নই, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে যে পথে চলতে দেখেছি, আমরা সে পথেই চলব। যেমনঃ ইব্রাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর জাতির কথা আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ্ বলেনঃ
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا تَعْبُدُونَ- قَالُوا نَعْبُدُ أَصْنَامًا فَنَظَلُّ لَهَا عَاكِفِينَ - قَالَ هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ - أَوْ يَنفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ- قَالُوا بَلْ وَجَدْنَا آبَاءنَا كَذَلِكَ يَفْعَلُونَ
‘যখন তিনি (ইব্রাহীম) তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বল্লেন, তোমরা কিসের ‘ইবাদাত কর? তারা বল্ল- মূর্তির পূজা করি, আমরা সব সময় তাদের পূজায় রত থাকি। তিনি বললেন, তোমরা যখন ডাক, তারা কি তোমাদের ডাক শুনে অথবা তারা কি তোমাদের উপকার বা অপকার করতে পারে? তারা বলল, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এমনটি করতে পেয়েছি।’
অনুরূপভাবে মুসা আলাইহিস্ সালামের জাতির দিকে তাকালেও একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। তিনি তাঁর জাতির লোকদের যখন তাদের দেবতাদের পূজা করা ছেড়ে দিতে বললেন, তখন তারা বললঃ
أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا
‘তুমি কি আমাদেরকে বিমুখ করার জন্য এসেছ সে পথ থেকে, যে পথের উপর পেয়েছি আমরা আমাদের পিতৃপুরুষকে।’
একইভাবে আমরা দেখতে পেয়েছি ‘আরবের মুশরিকদেরকে। যখন আল্লাহর রাসূল তাদেরকে মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহ্র ‘ইবাদাত করার জন্য আহবান জানালেন। তখন তারা উত্তরে যা বলল, আল্লাহ্ তা আলোচনা করে বলেনঃ
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْاْ إِلَى مَا أَنزَلَ اللّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ قَالُواْ حَسْبُنَا مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا
‘যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে দিকে ও রাসূলের দিকে তোমরা এসো, তখন তারা বলে, আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে আমরা যা করতে পেয়েছি, তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا
‘যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন, তা অনুসরণ কর। তারা বলল, আমরা অনুসরণ করবো যার উপর আমরা আমাদের পিতৃপুরুষকে পেয়েছি।’
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللّهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءنَا .......
‘যখন তাদেরকে বলা হয়, অনুসরণ কর যা আল্লাহ্ নাযিল করেছেন তারা উত্তরে বলল: বরং আমরা অনুসরণ করব সে পথ, যে পথের উপর পেয়েছি আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে।’
(৫) শিরকের আর একটি কারণ হলো শাফা‘আতের ভুল ব্যাখ্যাঃ
মুশরিকদের বিশ্বাস, তারা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করছে, তারা তাদেরকে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করে পার করে দেবে। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
ويعبدون من دون الله ما لا يضرهم ولاينفعهم
‘আর তারা (মুশরিকরা) আল্লাহ্ ছাড়া এমন বস্ত্তসমূহের ‘ইবাদ্ত করে, যারা তাদের না কোন অপকার করতে পারে না কোন উপকার করতে পারে।’
وَيَقُولُونَ هَـؤُلاء شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللّهِ
‘আর তারা (মুশরিকরা) বলে, তারা (যাদেরকে শরীক করছে) আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’
অথচ শাফা‘আতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্। তিনি যাকে যার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, একমাত্র তিনিই এবং একমাত্র তার জন্যই সুপারিশ করতে পারবে।
শাফা‘আতের এমন বিশ্বাস মুস্লিম সমাজেও প্রচলিত রয়েছে। নিজেদের ঈমান আমল ঠিক না হলেও উমুক বুযুর্গ সুপারিশ করে পার করে দেবে বলে তাদের বিশ্বাস। তবে শাফা‘আত সত্য। হাশরের ময়দানে আল্লাহ্ তা‘য়ালা নবী, রাসূল, ‘আলিম, শহীদ, হাফিয, এমন অনেককে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন। তবে সবাই সকলের জন্য সুপারিশ করতে পারবেনা। এর জন্য তিনটি মূলনীতি রয়েছে।
(ক) শাফা‘আতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ তা‘য়ালা।
আল্লাহ্ বলেন:
أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ شُفَعَاء قُلْ أَوَلَوْ كَانُوا لَا يَمْلِكُونَ شَيْئًا وَلَا يَعْقِلُونَ- قُل لِّلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا لَّهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘তারা কি আল্লাহ্ ছাড়া অপরকে শাফা‘আতকারী গ্রহণ করেছে? বল: যদিও তারা কোন ক্ষমতা রাখে না এবং তারা বুঝে না? বল: যাবতীয় শাফা‘আত আল্লাহরই ইখতিয়ারে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, অতএব তারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’
وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ
‘আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, সুপারিশ করার ক্ষমতা তাদের নেই।’
(খ) আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দেবেন একমাত্র তিনিই সুপারিশ করতে পারবেন, তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। যেমন, কিয়ামাতের ময়দানের কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে হাশরবাসীরা আদম, নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস্ সালাম এর নিকট আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার জন্য যাবে, সকলেই অক্ষমতা প্রকাশ করবেন। সর্বশেষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামই একমাত্র সুপারিশ করার অধিকার পাবেন।
অতএব সুপারিশ করার অধিকার একমাত্র আল্লাহর পক্ষ হতে পেতে হবে। আল্লাহ্ বলেন:
وَلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِندَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘যাকে অনুমতি দেয়া হবে, সে ব্যতীত তাঁর (আল্লাহর) নিকট কারও সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না।’
আল্লাহ্ বলেনঃ
مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ
‘কে আছে যে সুপারিশ করবে তাঁর (আল্লাহ্র) নিকট তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে।’
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ
‘সেদিন (হাশরের দিন) কোন সুপারিশ উপকারে আসবে না, কিন্তু দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দেবেন (তার সুপারিশ উপকারে আসবে)।’
(গ) আল্লাহ্ যার জন্য যাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, তিনি একমাত্র তার জন্যই সুপারিশ করতে পারবেন। আল্লাহ্ বলেন:
وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَن يَشَاء وَيَرضي
‘আকাশমন্ডলীতে কত ফেরেশতা রয়েছে, তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না যতক্ষণ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন।’
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى
‘তারা সুপারিশ করবে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি (আল্লাহ্) সন্তুষ্ট।’
মুশরিকদের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন:
فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
‘সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের (মুশরিকদের) কোন উপকারে আসবে না।’
রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুপারিশ করার জন্য কিয়ামাতের দিন সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হবে, তিনি তাদের জন্য সুপারিশ করে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। একমাত্র একজন মুশরিকের জন্য আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন। তবে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না। সুপারিশের কারণে জাহান্নামের লঘু শাস্তি তাকে দেয়া হবে। অন্য কোন মুশরিকের জন্য আর কেউই সুপারিশ করতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর চাচা আবুতালিবের জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে।
আববাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি আপনার চাচার কী উপকার করেছেন? তিনি আপনাকে সাহায্য সহযোগিতা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতেন এবং আপনার জন্য লড়াই করতেন। তিনি উত্তর দিলেন, তিনি বর্তমানে শুধু পায়ের গিঁট পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছেন। যদি আমি না হতাম তবে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট তাঁর চাচা (আবু তালিব) সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, আশা করা যায়, কিয়ামাতের দিন আমার সুপারিশ তার কিছু উপকারে আসবে। ফলত: (জাহান্নামের) আগুন শুধু তার (পায়ের) গিরাদ্বয় পর্যন্ত স্পর্শ করবে। এর ফলেই তার মস্তিষ্ক টগবগ করে ফুটতে থাকবে।
উপরিউক্ত তিনটি মূলনীতি বিশ্বাসের ভিত্তিতে শাফা‘আত বৈধ। এছাড়া বাকী সব শাফা‘আত বা সুপারিশই বাতিল অবৈধ। এ সমস্ত শাফা‘আতের আকীদা পোষণ করা শিরক, যেমন জাহেলী যুগের লোকদের আকীদা ছিল।
(৬) শিরকের আরেকটি কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা, মূর্খতাঃ
যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার একটা বড় কারণ হল, শিরক-ঈমানের পার্থক্য করতে না পারা, তারা বুঝতে পারেনা যে এ সমস্ত কাজের দ্বারা একজন মুমিন মুশরিক হয়ে যায়। যেমনঃ যারা মাযারে টাকা পয়সা দেয়, গরু-ছাগল দেয়, তারা কোন দিন ভাবে না যে, তারা ঈমান থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ্ বলেনঃ
قُلْ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَأْمُرُونِّي أَعْبُدُ أَيُّهَا الْجَاهِلُونَ
‘বল, হে অজ্ঞ ব্যক্তিরা, তোমরা কি আমাকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের ‘ইবাদাত করতে বলছো?’
وَأُبَلِّغُكُم مَّا أُرْسِلْتُ بِهِ وَلَكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ
‘আর আমি তোমাদের নিকট পৌঁছাচ্ছি, যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেখছি মূর্খ সম্প্রদায়।’
بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ
‘‘বরং তোমরা হলে মূর্খ জাতি’’
(৭) শিরকের আর একটি কারণ অতিরিক্ত ভক্তি ও আবেগঃ
কারও প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি ও আবেগের বশবর্তী হয়ে মাথা নুইয়ে ফেলে, কবরের দেয়ালে চুমু খায়, ধূলা শরীরে মাখে, সাহায্য পর্যন্ত প্রার্থনা করে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর যিয়ারত করতে গিয়ে অনেককে বলতে শুনা যায়, হে পেয়ারে হাবীব, অনেক দূর থেকে এসেছি, তুমি আমার প্রয়োজন পূরণ কর ইত্যাদি। এ রকম আবেগেই বুছায়রী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ
يا أكرم الخلق مالى من ألوذبه : سواك عند حلول الحادث العمم،
‘হে সৃষ্টির সবচেয়ে সম্মানী ব্যক্তি, সর্বগ্রাসী বিপদ যখন অবতীর্ণ হয়, তখন আপনি ব্যতীত আমার আশ্রয় নেয়ার আর কেউ নেই।’
শিরকের প্রকারভেদঃ
শিরক মূলত: চার প্রকার
১। আশ্শির্কু ফিয্যাত (الشرك في الذات)ঃ
আল্লাহর সত্তার ক্ষেত্রে শিরক: আল্লাহ্ এক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁর কোন সন্তান নেই। আল্লাহ্ ব্যতীত আরো ইলাহ্, রব আছে বলে বিশ্বাস করা, আল্লাহর সন্তান, বিবি আছে বলে ‘আকীদা পোষণ করা, আল্লাহ্র সত্তার ক্ষেত্রে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ বলেন:
لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ
‘যদি আল্লাহ্ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত আকাশন্ডলী ও পৃথিবীতে, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব, তারা যা বলে, তা হতে ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ্ পবিত্র, মহান।
أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
‘ভিন্ন ভিন্ন বহু রব শ্রেষ্ঠ না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ্।’
কাউকে আল্লাহর সন্তান বলে বিশ্বাস করা সত্তাগত শিরকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন ইয়াহুদীরা ‘উযায়রকে আল্লাহর ছেলে, খৃস্টানরা ঈসাকে (আ) আল্লাহর ছেলে বলে বিশ্বাস করে থাকে। আল্লাহ বলেনঃ
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللّهِ وَقَالَتْ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللّهِ
‘ইয়াহুদীরা বলে উযায়র আল্লাহর ছেলে আর খৃস্টানরা বলে মসীহ (ঈসা (আ.)) আল্লাহর ছেলে।’
অথচ আল্লাহ্র নেই কোন সন্তান, না তিনি কারো সন্তান। আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ-اللَّهُ الصَّمَدُ-لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ-وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
‘বল, তিনি আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী । তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাঁকে জন্ম দেয়া হয় নি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।’
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا- لَقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا- تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا- أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا- وَمَا يَنبَغِي لِلرَّحْمَنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا
‘তারা বলে, রহমান (আল্লাহ্) সন্তান গ্রহণ করেছেন, তোমরা তো এক বীভৎস কথার অবতারণা করছ, এতে যেন আকাশ মন্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হবে ও পর্বতমন্ডলী চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে। যেহেতু তারা রহমানের প্রতি সন্তান আরোপ করে । অথচ সন্তান গ্রহণ করা রহমানের জন্য শোভন নহে।’
قَالُواْ اتَّخَذَ اللّهُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ هُوَ الْغَنِيُّ..........
‘তারা বলে আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন, তিনি মহান, পবিত্র তিনি অভাবমুক্ত.............’
হাদীসে আছেঃ
"عن أبى هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى " كذبني ابن أدم ولم يكن له ذلك وشتمني ولم يكن له ذلك فأما تكذيبه إياى فقوله لن يعيدني كما بدأني وليس أول الخلق بأهون على من إعادته وأما شتمه إياى فقوله اتخد الله ولدا وأنا الأحد الصمد الذي لم ألد ولم أولد ولم يكن لي كفوا أحد وفي رواية ابن عباس واما شتمه إياى فقوله لي ولد وسبحاني أن أتخذ صاحبة أوولدا"
‘‘আবু হুরাইরা (রা ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আললাহ তায়ালা বলেনঃ ‘‘ইবনু আদম আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে্। এটা করা তার জন্য সমীচীন নয়। আমাকে গালি দিয়েছে, এটা করা তার উচিত নয়। আমাকে মিথ্যা অভিহিত করা হল, একথা বলে যে, আল্লাহ আমাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন না যেমন প্রথমে সৃষ্টি করেছেন। অথচ পুনর্বার সৃষ্টি করার চেয়ে প্রথমবার সৃষ্টি করা অধিক সহজ নয়, আর আমাকে তার গালি দেয়া হল, তার একথা বলা যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম গ্রহন করেছেন অথচ আমি একক সত্তা, অমুখাপেক্ষী, আমি সন্তান জন্ম দেই নি এবং আমাকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর আমার সমকক্ষ কেউ নেই । ইবন আববাসের বর্ণনায় রয়েছে, আর আমাকে তার গালি দেয়া হলো, তার একথা বলা যে, আমার সন্তান রয়েছে, অথচ আমি স্ত্রী গ্রহণ করা অথবা সন্তান গ্রহণ করা থেকে পূত পবিত্র।
আরবের মুশরিকরা বলত ‘ফিরিশতাগণ আল্লাহর মেয়ে।’ আল্লাহ্ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন-
أَفَأَصْفَاكُمْ رَبُّكُم بِالْبَنِينَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلآئِكَةِ إِنَاثًا إِنَّكُمْ لَتَقُولُونَ قَوْلاً عَظِيمًا
‘তোমাদের রব কি তোমাদেরকে পুত্র সন্তানের জন্য নির্বাচিত করেছেন আর তিনি নিজে ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? তোমরা তো নিশ্চয় মারাত্মক কথা বলছ’
أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَى- تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَى
‘তবে কি পুত্রসন্তান তোমাদের জন্য এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যই, এ প্রকার বন্টন তো অসংগত।’
নাসারাদের একটি গ্রুপ তিন ইলাহ্-এ বিশ্বাসী। আল্লাহ, ঈসা, মারইয়াম। আল্লাহ্ তা প্রত্যাখান করে বলেছেন-
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ ثَالِثُ ثَلاَثَةٍ وَمَا مِنْ إِلَـهٍ إِلاَّ إِلَـهٌ وَاحِدٌ
‘তারা অবশ্যই কুফরী করেছে, যারা বলে, আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন, অথচ এক ইলাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ই নেই।’
وَجَعَلُواْ لِلّهِ شُرَكَاء الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ وَخَرَقُواْ لَهُ بَنِينَ وَبَنَاتٍ بِغَيْرِ عِلْمٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يَصِفُونَ-بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ أَنَّى يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُن لَّهُ صَاحِبَةٌ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ وهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘তারা জিনকে আল্লাহর শরীক করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারা অজ্ঞতাবশত: আল্লাহর প্রতি পুত্রসন্তান আরোপ করে, তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যা বলে তিনি তার উর্দ্ধে, তিনি আসমান যমীনের স্রষ্টা, তাঁর সন্তান হবে কিভাবে তাঁর তো কোন স্ত্রী নেই, তিনিই তো সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সকল বস্ত্ত সম্পর্কে তিনি সবিশেষ অবহিত।’
تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا-الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا
‘কত মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফোরকান নাযিল করেছেন, যাতে সে বিশ্বাসীর জন্য সতর্ককারী হতে পারে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী, তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি, সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।’
قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ
‘বল, দয়াময় আল্লাহর কোন সন্তান থাকলে আমি হতাম সে সন্তানের প্রথম ‘ইবাদাতকারী।’ এ আয়াত দ্বারা আল্লাহর সন্তান হওয়াকে জোরালোভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
مَا اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَهٍ إِذًا لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ
‘আল্লাহ্ কোন সন্তান গ্রহণ করেন নি এবং তার সাথে অপর কেউ ইলাহ্ নেই, যদি থাকত প্রত্যেক ইলাহ্ স্বীয় সৃষ্টি নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ্ কত পবিত্র।’
২। আশ্ শিরকু ফিররুবুবিয়্যাহ (الشرك في الربوبية) ঃ
আল্লাহর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কাউকে অংশীদার বলে বিশ্বাস করা। আল্লাহর কাজে অন্যকে শরীক করা। যেমন সৃষ্টি করা, রিযক দেয়া, জীবন মৃত্যু দেয়া, রোগমুক্ত করা, বিপদ থেকে উদ্ধার করা, মান সম্মান দেয়া, আইন দেয়া, আসমান যমীন পরিচালনা করা ইত্যাদি কার্যকলাপ একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ সমস্ত বিষয়ে অন্য কাউকে আল্লাহর সাথে শরীক করা হলো আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক। যদি কেউ এমন বিশ্বাস পোষণ করে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ বাঁচাতে পারে, রোগ মুক্ত করতে পারে, বিপদ আপদ দূর করতে পারে, রিযক দিতে পারে, নিঃসন্তানকে সন্তান দিতে পারে, মনের কামনা বাসনা পূরণ করতে পারে, তা হলে সে আল্লাহর সাথে রুবুবিয়্যতের ক্ষেত্রে শরীক করল। এমনিভাবে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আইন দাতা, বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা। প্রত্যেক শহর চালানোর জন্য একজন শহর কুতুব আছেন, যিনি শহর পরিচালনা করেন, এ কথা বিশ্বাস করা। এ সমস্ত বিশ্বাসই আল্লাহর রুবুবীয়্যতের ক্ষেত্রে শরীক করার অন্তর্ভুক্ত। কারণ এগুলো আল্লাহর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ বলেন:
أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ
‘জেনে রাখ, সৃষ্টি ও হুকুম একমাত্র তাঁরই।’
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘হে মানব মন্ডলী, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ
‘বল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করেছে অথবা আসমান সমূহে তাদের কোন অংশীদায়িত্ব আছে কি?’
أَفَرَأَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ- أَأَنتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ
‘তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি উহাকে অংকুরিত কর না আমি অংকুরিত করি?’
أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاء الَّذِي تَشْرَبُونَ-أَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنزِلُونَ
‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা ভেবে দেখেছ কি? তা মেঘ হতে তোমরা নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি।’
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِضِيَاء أَفَلَا تَسْمَعُونَ-قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
‘বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ্ যদি রাত্রিকে কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না? বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ্ যদি দিনকে কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ্ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না।’
هَذَا خَلْقُ اللَّهِ فَأَرُونِي مَاذَا خَلَقَ الَّذِينَ مِن دُونِهِ بَلِ الظَّالِمُونَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
‘এটা আল্লাহ্র সৃষ্টি, অত:পর তিনি ব্যতীত অন্যরা যা সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে দেখাও। বরং যালিমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে।’
وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ - وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ -وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ
‘তিনিই আমাকে দান করেন আহার্য ও পানীয়, যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। তিনিই আমাকে মৃত্যু দেবেন, তিনিই আমাকে পুনরায় জীবিত করবেন।’
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاء وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاء وَتُعِزُّ مَن تَشَاء وَتُذِلُّ مَن تَشَاء
‘বল, হে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্, তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর, আর যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে লও, যাকে ইচ্ছা তুমি ইযযাত দাও, যাকে ইচ্ছা তুমি অপমানিত কর।’
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَخْلُقُ مَا يَشَاء يَهَبُ لِمَنْ يَشَاء إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاء الذُّكُورَ -أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا وَيَجْعَلُ مَن يَشَاء عَقِيمًا إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
‘আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, তিনি যা ইচ্ছা করেন তা-ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন, অথবা দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা, করেন বন্ধ্যা, নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্ব শক্তিমান।’
وَرَبُّكَ يَخْلُقُ مَا يَشَاء وَيَخْتَارُ مَا كَانَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ
‘তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, এতে তাদের কোন হাত নেই।’
মোট কথা আল্লাহর কাজ, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতায় অন্য কোন মাখলুককে অংশী সাব্যস্ত করাই হচ্ছে রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে শিরক। আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের বিশ্বাস জাহেলী যুগের লোকদের ছিল। কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াত তার সুস্পষ্ট দলীল। আল্লাহ্ বলেনঃ
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ
‘তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর আকাশ সমূহ ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ্)।’
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অত:পর তা দ্বারা মাটিকে এর মৃত হওয়ার পর জীবিত করেন। তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্ ! বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝে না।’
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ والأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللّهُ فَقُلْ أَفَلاَ تَتَّقُونَ
‘তুমি বল, কে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে জীবিকা প্রদান করেন? কে তোমাদের কান ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের ভিতর থেকে এবং মৃতকে জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রন করেন? তখন তারা বলবে, আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা ভয় করছো না?’
قُل لِّمَنِ الْأَرْضُ وَمَن فِيهَا إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ - سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ - قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ - سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ - قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ - سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ
‘তুমি বল, পৃথিবী এবং এতে যারা আছে, তারা কার যদি তোমরা জান? তারা বলবে, আল্লাহর। বল, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না? জিজ্ঞাসা কর, সাত আসমানের রব কে? মহান আরশের রব কে? তারা বলবে, আল্লাহ্। তবুও কি তোমরা ভয় কর না? বল, কার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব। যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবজা থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না, যদি তোমরা জান? তারা বলবে, আল্লাহর। বল, তা হলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে?’
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ
‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে আসমান সমূহ এবং যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ্! তা হলে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?’
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, আসমানসমূহ এবং যমীন কে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ্! বল, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বরং অধিকাংশ লোক জানে না।’
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ
‘আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর আসমানসমূহ এবং যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তারা নিশ্চিত করেই বলবে, আল্লাহ্।’
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে একথাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আরবের মুশরিকরা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযকদাতা, জীবন-মৃত্যুর মালিক, বৃষ্টিদানকারী, সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক ইত্যাদি মানা সত্ত্বেও উবুদিয়্যাতের ক্ষেত্রে তারা শিরক করতো।
দাহরিয়া, প্রকৃতির পূজারী, সমাজতন্ত্রী, বস্ত্তবাদীগোষ্ঠী আল্লাহর রুবুবিয়্যাতকেও অস্বীকার করে থাকে। দাহরিয়া ‘আরবী শব্দ দাহর থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো কাল। তাদের বিশ্বাস কালের আবর্তন বিবর্তনই জন্মমৃত্যু সব কিছু হচ্ছে। তারা আল্লাহকে, পরকালকে অস্বীকার করে। এমনিভাবে প্রকৃতির পূজারীদের বিশ্বাস, যা কিছু পৃথিবীতে ঘটছে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ীই ঘটছে, জন্ম-মৃত্যু, শীত-গ্রীষ্ম সবটা প্রাকৃতিক নিয়মেই হচ্ছে। তারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, পরকালকে অবিশ্বাস করে। আল্লাহ্ বলেনঃ
وَقَالُوا مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَا إِلَّا الدَّهْرُ وَمَا لَهُم بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ
‘তারা বলে, একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মৃত্যু বরণ করি, জীবিত থাকি, আর কালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। বস্ত্তত এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা তো শুধু মনগড়া কথা বলে।’
আল্লাহ্ তাদের উত্তরে বলেনঃ
قُلِ اللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيبَ فِيهِ وَلَكِنَّ أَكَثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
‘বল, আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেন, অতঃপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান। তারপর, তিনি তোমাদেরকে একত্রিত করবেন কিয়ামাত দিবসে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
তারা কালকে গালি দেয়, তাদের বিশ্বাস কালই তাদের মুসীবত এনেছে। হাদীসে কুদসীতে কাল বা যুগকে গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
عن أبي هريرة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الله عزوجل يؤذيني إبن آدم يسب الدهر وأنا الدهر بيدي الأمر أقلب الليل والنهار.
‘আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন, বনী আদম আমাকে কষ্ট দেয়, যুগকে গালি দেয়, আমিই যুগ পরিবর্তনকারী। সকল বিষয় তো আমারই হাতে। দিবারাত্রি আমিই পরিবর্তন করি। (অতএব যুগকে গালি দেয়া, আমাকেই গালি দেয়া)।’
সমাজতন্ত্রী, বস্ত্তবাদী তারাও আল্লাহকে, পরকালকে অস্বীকার করে। এ গোষ্ঠীগুলো মুশরিকদের চেয়েও নিকৃষ্ট, কারণ মুশরিকরা আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের অনেক কিছুই স্বীকার করে। কিন্তু এরা তাও স্বীকার করেনা।
৩। আশ্ শিরক ফিলউলুহিয়্যাহ (الشرك في الألوهية)ঃ
‘ইবাদাতে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করার নাম হচ্ছে আশ্ শিরক ফিলউলুহিয়্যাহ। এটাকে শিরক ফিল উবূদিয়্যাহ বা শিরক ফিল‘ইবাদাহ্ও বলা হয়। এটাই হল মূল শিরক। জাহেলী যুগে এ শিরকই প্রচলিত ছিল। আল্লাহ্ নবী রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন মূলত: তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ্ এর প্রতি দাওয়াত দেয়া এবং শিরক ফিল উলুহিয়্যাহকে নিষেধ করার জন্য। আল্লাহ্ বলেন-
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
‘আল্লাহর ‘ইবাদাত করা ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি।’
আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারই ‘ইবাদাত করা হয় অথবা ‘ইবাদাতে আললাহ্র সাথে যাকেই শরীক করা হয়, সে-ই হচ্ছে তাগূত।
তাওহীদের কালেমা ‘لا إله إلا الله’ গায়রুল্লাহ্র ‘ইবাদাতকে বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহর ‘ইবাদতকেই প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। তাই তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরব মুশরিকদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এ কালেমার প্রতি আহবান জানালে তারা তা মেনে নিতে, বিশ্বাস করতে রাজী হয় নি। অথচ তারা আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, রিযকদাতা, জীবন-মৃত্যু দাতা বলে বিশ্বাস করতো। তাদের মূল শিরক ছিল ‘উবুদিয়্যাতের ক্ষেত্রে রুবুবিয়্যাতের ক্ষেত্রে নয়। আল্লাহ্ তায়া’লা তাদের ঈমান সম্পর্কে বলেনঃ
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ
‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু তারা মুশরিক।’
এ ধরণের ঈমান যথেষ্ট নয় বলেই আল্লাহ্ বলেন:
الَّذِينَ آمَنُواْ وَلَمْ يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُوْلَـئِكَ لَهُمُ الأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলমের সাথে মিশ্রিত করে নি, তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা, তারাই সৎপথ প্রাপ্ত।’
এখানে যুলম বলতে শিরক বুঝানো হয়েছে। যেমন: সূরা লোকমানে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন:
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
‘স্বরণ কর, যখন লোকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার ছেলেকে বলল, হে প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শরীক করোনা। নিশ্চয় শিরক হচ্ছে বড় যুলম।’
আশ্ শিরক ফিলউলুহিয়্যাহ বা আশ্ শিরক ফিল ‘উবুদিয়্যাহ দুই প্রকার-
ক) আশশিরকুল আকবার বা বড় শিরক
খ) আশ্শিরকুল আসগার বা ছোট শিরক
আশ্ শিরকুল আকবার বা বড় শিরক বলতে বুঝায়, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার বানানো, কাউকে তাঁর সমকক্ষ মনে করা। এর মাধ্যমে মুমিন ঈমান থেকে বের হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যায়। তাওবা ব্যাতিত তার মুক্তির আশা নেই। নিম্ন লিখিত কাজগুলো বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত-
(১) কবরকে মসজিদ অর্থাৎ সিজদার জায়গা বানানো ঃ
কোন নবী বা নেক লোকের সম্মানে তাদের কবরে সিজদা করা অথবা তাদের ছবি বা মূর্তি বানিয়ে তাকে সিজদা করা।
" عن عائشة : أن أم سلمة ذكرت لرسول الله صلى الله عليه وسلم كنيسة رأتها بأرض الحبشة وما فيها من الصور فقال " أؤلئك إذا مات منهم الرجل الصالح أو العبد الصالح بنوا على قبره مسجدا و صوروا فيه تلك الصور أولئك شرار الخلق عند الله"
‘আয়িশা (রা:) হতে বর্ণিত, উম্মু সালমা (রা:) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হাবশার ভূখন্ডে তার দেখা একটি গির্জা এবং তাতে রক্ষিত মূর্তি সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের মাঝে যখন কোন ভাল লোক মারা যেত, তার কবরের উপর তারা মস্জিদ বানিয়ে তথায় তাদের মূর্তি বানিয়ে রাখতো। তারা আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
" اشتد غضب الله على قوم اتخذوا قبورأ نبيائهم مساجد"
‘আল্লাহর প্রচন্ড গযব পড়ুক ঐ সম্প্রদায়ের উপর, যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ (সিজদার জায়গা) বানিয়েছে।’
"لعن الله قوما اتخذوا قبورا نبيائهم مساجد"
‘আল্লাহর লা‘নত ঐ জাতির উপর, যারা তাদের নবীগণের কবরগুলোকে মস্জিদ অর্থাৎ সিজদা করার স্থান বানিয়েছে।’
عن عائشة (رض): لما نزل برسول الله صلى الله عليه وسلم طفق يطرح خميصة له على وجهه، فاذا اغتم بها كشفها، فقال- وهو كذلك- "لعن الله اليهود والنصارى اتخدوا قبور أنبيائهم مساجد" يحذر ما صنعوا، ولولا ذلك أبرز قبره، غيرأنه خشى أن يتخذ مسجدا
‘আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু ঘনিয়ে আসল, যে চাদরটি তাঁর চেহারার উপর ছিল, ফেলে দিতে লাগলেন, কিছুক্ষণ ঢেকে রাখার পর আবার খুলতেন। এ অবস্থায় তিনি বললেন, আল্লাহ লা’নত করুন ইয়াহুদী, নাসারার উপর, যারা তাদের নবীগণের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে। আয়িশা (রা.) বলেন: তারা যা করেছে তা থেকে সতর্ক করে দেয়ার জন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলেছেন। যদি তা না হত তাঁর কবরকে প্রকাশ্যেই রাখা হত। তবে তিনি আশংকা করেছেন যে, তাঁর কবরকে মসজিদ বানানো হবে ( তাই তো প্রকাশ্যে না রেখে চার দেয়ালের মাঝে রাখা হয়েছে)।
২। কবরকে সামনে রেখে ইবাদাত করাঃ
অর্থাৎ কবরকে সামনে রেখে কবরের উদ্দেশ্যে ইবাদাত করা। আর কবরের উদ্দেশ্যে ‘ইবাদাত করা মূর্তিপূজারই নামান্তর, তাই তো আল্লাহ্র রাসূল আল্লাহর নিকট দু’আ করেছেনঃ
"اللهم لا تجعل قبرى وثنا يعبد"
‘হে আল্লাহ্, আমার কবরকে মূর্তি বানাবেন্ না, যার ‘ইবাদাত করা হবে’’।
আল্লাহ্ তাঁর দু’আ কবুল করেছেন, যেমন ইবনুল কাইয়্যেম (র.) বলেনঃ
فأجاب رب العالمين دعاءه  وأحاطه بثلاثة الجدران
অতঃপর রাববুল ‘আলামীন তাঁর দু‘আ কবুল করলেন এবং তাঁর কবরকে তিনটি প্রাচীর দিয়ে বেষ্টন করে দিলেন।
عن أبى مرثد عن النبى صلى الله عليه وسلم " لاتصلوا إلى القبور"
আবু মারছাদ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, ‘‘তোমরা কবরের দিকে ফিরে বা কবরকে সামনে রেখে নামায পড়ো না।’’ মূলত: মূর্তিপূজা শুরু হয়েছে মৃতদেরকে সম্মান করা, তাদের ছবি বানানো, তা স্পর্শ করা, তাদেরকে সামনে রেখে নামায পড়ার মাধ্যমেই।
৩। কবরে বাতি জ্বালানোঃ
কবরে বাতি জালানো গুনাহর কাজ। তবে এ কাজ অতিরঞ্জনের কারণে শিরক পর্যন্ত গড়াতে পারে। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন। হ্যাঁ যদি প্রয়োজন দেখা দেয় কবরস্থানে বাতি জ্বালাবার, তা হলে কোন আপত্তি নেই।
عن ابن عباس رضي الله عنه قال: "لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج"
ইবন ‘আববাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন কবর যিয়ারত কারিনী মহিলাদের উপর এবং ঐ সমস্ত লোকদের উপর যারা কবরের উপর মসজিদ বানায় এবং বাতি লটকায়।
৪। কবরকে উঁচু করা, কবরের উপর গম্বুজ বানানো, কবরের উপর চাদর জড়ানো, কবরকে কেন্দ্র করে লোক জমানো কবীরা গুনাহ্।
এ কাজগুলো শিরক না হলেও অনেক সময় এ কাজগুলো শিরক পর্যন্ত পেŠঁছিয়ে দেয়। এজন্যই আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সমস্ত কার্যকলাপ করতে নিষেধ করেছেন। আলী (রা.) কে পাঠানোর কালে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
"ألا تدع صورة إلاطمستها ولاقبرا مشرفا إلاسويته"
‘কোন প্রতিকৃতিকে নিশ্চিহ্ণ না করে এবং উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না।’
عن جابر رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم " نهى عن تجصيص القبور وأن يقعد عليها وأن يكتب عليها"
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং তার উপর কিছু লিখতে নিষেধ করেছেন।’’
عن جابر رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم " نهى عن تجصيص القبر وأن يكتب عليها"
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর পাকা করতে এবং তার উপর লিখতে নিষেধ করেছেন।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"لا تتخذوا قبرى عيدا "
‘তোমরা আমার কবরে এসে জমায়েত হয়ো না, মেলার স্থানে পরিণত করো না।’
৫। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে যে কোন জন্তু যবেহ করাঃ
যে কোন হালাল জন্তু আল্লাহর নামে যবেহ করতে হয়; তা হলেই তা খাওয়া হালাল হয়। আল্লাহ্ বলেন:
وَلاَ تَأْكُلُواْ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ
‘যে জন্তু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম নেয়া হয় নি, তা তোমরা খাবে না।’
فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ بِآيَاتِهِ مُؤْمِنِينَ
‘অতএব তোমরা খাও ঐসমস্ত জন্তুর গোশত, যাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে যদি তোমরা আল্লাহর বিধানে বিশ্বাসী হয়ে থাক।’
হালাল জন্তু যবেহ করার সময় যদি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন নামে যেমন কোন দেবতার নামে, কোন বুযর্গের নামে যবেহ করা হয়, তা হবে শিরক। কেননা যবেহ করা একটি ‘ইবাদাত, গায়রুল্লাহর নামে করা হলে তা হবে শিরক।
আল্লাহ্ বলেন:
(قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ)
‘‘বল, নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার কোরবানী, আমার হজ্জ আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি সমস্ত আলমের রব, তাঁর কোন শরীক নেই, এ ব্যাপারে আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের একজন।
)فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ(
‘‘তোমার রবের জন্য ছালাত আদায় কর এবং কোরবানী কর’’
عن على رضي الله تعالى عنه قال: حدثنى رسول الله صلى الله عليه وسلم بأربع كلمات: " لعن الله من ذبح لغير الله، لعن الله من لعن والديه لعن الله من اوى محدثا لعن الله من غير منار الارض"
‘আলী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নিকট চারটি কথা বর্ণনা করেনঃ আল্লাহ্ লা’নত করুন, যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ্র উদ্দেশ্যে যবেহ করে, আল্লাহ্ লা’নত করুন, যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে লা’নত করে, আল্লাহ্ লা’নত করুন, যে ব্যক্তি কোন (ইসলামের মাঝে) নতুন সৃষ্টিকারীকে (বিদ‘আতি) আশ্রয় দেয়, আল্লাহ্ লা’নত করুন, যে ব্যক্তি যমীনের সীমানা পরিবর্তন করে।’
৬। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন দেবতা, মূর্তি, মাজার ইত্যাদির উদ্দেশ্যে কিছু পেশ করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত
যেমন মূর্তি, দেবতা, মাযারের উদ্দেশ্যে গরু, শিরনী ইত্যাদি পেশ করা।
عن طارق بن شهاب : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال "دخل الجنة رجل في ذباب ودخل النار رجل في ذباب قالوا وكيف ذلك يا رسول الله؟ قال مر رجلان على قوم لهم صنم لايجاوزه أحد حتى يقرب له شئيا. قالوا لاحدهما: قرب، قال: ليس عندي شيء أقرب. قالوا له: قرب ولوذبابا، فقرب ذبابا، فخلوا سبيله، فدخل النار وقالوا للاخر قرب، قال: ماكنت لأقرب لأحد شئيا دون الله عزوجل، فضربوا عنقه فدخل الجنة"
তারিক ইবন শিহাব হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একটি মাছির কারণে এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করেছে আর এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বললেন: দু’জন ব্যক্তি একটি সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, যাদের একটি মূর্তি ছিল। সে মূর্তির উদ্দেশ্যে কিছু পেশ না করা ব্যতীত কেউ তা অতিক্রম করতে পারত না। তারা দু’জনের একজনকে বলল। কিছু পেশ কর। সে বলল: আমার নিকট পেশ করার মত কোন কিছু নেই। তারা বলল, একটি মাছি হলেও পেশ কর। সে মূর্তির উদ্দেশ্যে একটি মাছি পেশ করল। তারা তার রাস্তা ছেড়ে দিল। সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করল। তারা অপরজনকে বলল, মূর্তির উদ্দেশ্যে কিছু পেশ কর। সে বলল: আমি আল্লাহ ছাড়া কারো উদ্দেশ্যে কিছু পেশ করব না। তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। আর এ লোকটি জান্নাতে প্রবেশ করল।
৭। যে স্থানে গায়রুল্লাহ্র উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়, যা স্পষ্টত: শিরক, সেখানে আল্লাহর নামে যবেহ করা হলেও তা হবে শিরক। যেমন- কুবার মসজিদে দেরার (مسجد ضرار) অসৎ উদ্দেশ্য থাকার কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে মসজিদে ছালাত আদায় করা তো দূরের কথা, বরং মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিলেন। মসজিদে দেরার (مسجد ضرار) সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়া’লা বলেন:
(وَالَّذِينَ اتَّخَذُواْ مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللّهَ وَرَسُولَهُ مِن قَبْلُ وَلَيَحْلِفَنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلاَّ الْحُسْنَى وَاللّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ-لاَ تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ )
‘আর যারা মসজিদ নির্মান করেছে ক্ষতিসাধন, কুফরী ও মুমিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ইতোপূর্বে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি সংগ্রাম করেছে (তার গোপন ঘাঁটি স্বরূপ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে), তারা অবশ্যই শপথ করে বলবে, আমরা নেক উদ্দেশ্যেই এটি করেছি, আল্লাহ্ সাক্ষী, তারা মিথ্যাবাদী। তুমি (সালাতের উদ্দেশ্যে) কখনও এতে দাঁড়াবে না, যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন হতেই স্থাপিত হয়েছে তাকওয়ার উপর, সেটাই তোমার সালাতের অধিক যোগ্য..........)
উল্লিখিত মসজিদটি তৈরী করেছিল মুনাফিকরা কুবার মসজিদকে ক্ষতি করার জন্য যার ভিত্তি ছিল তাকওয়ার উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি্ওয়া সাল্লাম তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার প্রাক্কালে মুনাফিকরা তাদের নির্মিত মসজিদে তাঁকে ছালাত আদায়ের জন্য বলল এবং তাঁকে জানাল যে, তারা এ মসজিদটি তৈরী করেছে শীতের রাত্রিতে দুর্বল ও অসুস্থ লোকদের জন্য, যাদের পক্ষে কোবা মসজিদে দূরের কারণে যাওয়াটা কষ্টকর হয়। । রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি্ওয়া সাল্লাম বললেন, আমিতো এখন সফরে আছি, যখন আমি সফর হতে ফিরে আসি, তখন আল্লাহ্ চাহেতো (সে মসজিদে ছালাত আদায় করব)। কিন্তু একদিন অথবা তার চেয়ে কম সময়ের পথ থাকতেই সে মসজিদ নির্মানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওহীর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি্ওয়া সাল্লামকে জানিয়ে দেয়া হল। তিনি মদীনা আগমনের পূর্বেই লোক পাঠিয়ে তা ধ্বংস করে দিলেন। উল্লিখিত মসজিদটি যেহেতু অসৎ উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছিল, গুনাহর কাজ করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তাই সে মসজিদে নামাজ পড়া নাজায়েয, এমনিভাবে যে স্থানে গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়,যা সম্পূর্ণই শিরক, সে স্থানে আল্লাহর নামে যবেহ করা হলেও তা খাওয়া জায়েয হবে না।
عن ثابت بن الضحاك رضي الله عنه قال: نذر رجل ان ينحرإبلاببوانة، فسأل النبى صلى الله عليه وسلم فقال: "هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد؟ قالوا لا. فقال: "هل كان فيها عيد من أعيادهم؟ قالوا لا. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "أوف بنذرك، فانه لا وفاء لنذر في معصية الله ولا فيها لايملك ابن ادم".
সাবিত বিন দাহহাক হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: কোন এক ব্যক্তি মান্নত করল যে, সে বোয়ানা নামক স্থানে (ইয়ামানের ইয়ালামলাম পাহাড়ের নিকটে অবস্থিত স্থান) একটি উট নহর করবে (নহর বলা হয় উটকে দাঁড় করিয়ে গলায় রগে ছুরি মেরে রক্ত বের করা । এতে উটটি মাটিতে পড়ে মারা যায়। উট কুরবানী বা যবেহ করার এটিই শারীয়া’ সম্মত পদ্ধতি) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি্ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, সে স্থানে জাহেলী যুগে কোন মূর্তি বা প্রতিমা ছিল কিনা, যার অর্চনা করা হত? তারা বললঃ না , তিনি বললেনঃ সেখানে জাহেলী যুগের কোন মেলা বসত কিনা? তারা বললঃ না, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি্ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমার মান্নত পূরা কর। আল্লাহর নাফরমানীর কোন কাজে মান্নত পূরা করা যাবে না, ইবনু আদম যার মালিক নয়, সে কাজেও মান্নত পূরা করা যাবে না।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হল যে, যে স্থানে শিরকী বা কুফরী কোন কাজ করা হয়, সেখানে কোন ভাল কাজ করাও বৈধ হবে না। যেমন, হিন্দুরা যেখানে পূজা করে সেখানে বসে কুরআন তিলাওয়াত করা, ছালাত আদায় করা বৈধ হবে না, যদিও তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয়।
যে সব জীবজন্তু আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ অথবা উৎসর্গ করা হয়, তার পদ্ধতি তিনটি:
প্রথমত: আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে যবেহ অথবা উৎসর্গ করা হয়, যবেহ করার সময় সে নাম নিয়েই যবেহ করা হয়; যে নামে তা উৎসর্গিত।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কিছুর সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যা যবেহ করা হয়, তবে যবেহ করার সময় তা আল্লাহর নাম নিয়েই যবেহ করা হয়। যেমন, অনেক অজ্ঞ মুসলিম বুযর্গদের সন্তুষ্টি অর্জনের মানসে গরু, ছাগল, মুরগী ইত্যাদি মান্নত করে তা যবেহ করে থাকে।
তৃতীয়ত: জাহেলী যুগের আরবরা কাবা ঘরের চতুর্পার্শ্বে কিছু পাথর স্থাপন করেছিল, যেগুলোর তারা উপাসনা করত। তাদের সম্মানে সেখানে তারা জন্তু যবেহ করত, বিভিন্ন কিছু মান্নত করে তথায় বন্টন করত। যেমন আজকাল বিভিন্ন মাযার, দরগাহ্, কবরস্থানে মৃত ব্যক্তিদের সম্মানে যবেহ করে বন্টন করা হয়, এসব প্রকারের যবেহই শিরকের পর্যায়ভুক্ত। উপরিউক্ত সব যবেহই আল্লাহর নিষিদ্ধ যবেহ এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ বলেন:
(......وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللّهِ.......)
‘যে জন্তু যবেহ করার সময় গায়রুল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, অথবা গায়রুল্লাহ্র নামে যা উৎসর্গ করা হয়। (তা হারাম)
(......وَمَا ذبِحَ عَلَى النُّصُبِ.....)
‘পাথরের সম্মানে বা পাথর রক্ষিত স্থানে যা যবেহ করা হয়’ (তা হারাম)

৮। কোন গাছ, পাথর, স্থান, কবর ইত্যাদি ধরনের কোন কিছুর দ্বারা বরকত নেয়াঃ
এতে যদি এ বিশ্বাস পোষণ করা হয় যে, এর দ্বারা তার কল্যাণ আসবে, অকল্যাণ থেকে বাঁচতে পারবে, বিপদ আপদ দূর হবে, জীবনে সমৃদ্ধি আসবে তা হলে তা হবে শিরক।
আল্লাহ বলেনঃ
) أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّى- وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَى- أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنثَى- تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيزَى)
‘‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত, উয্যা এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্বন্ধে? তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্য আর কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্য? এ প্রকার বন্টন তো অসংগত।’’
লাতঃ লাত দেবতাটি ছিল সাকীফ গোত্রের, উয্যা ছিল কুরইশ এবং বনু কানানার, মানাত ছিল বনু হিলাল গোত্রের। ইবন হিশাম বলেনঃ মানাত দেবতাটি ছিল হুযাইল এবং খুযা’আহ গোত্রের।
লাতের নামকরণ করা হয়েছে আল্-ইলাহ থেকে আর উয্যা আল্লাহর গুণবাচক নাম আল্ ‘আযীয থেকে।
ইবনু কাছীর বলেন, লাত ছিল তায়েফে অবস্থিত একটি শুভ্র নকশা করা পাথর, তার উপর ছিল একটি ঘরের চিত্র অংকিত, তাতে ছিল পর্দা এবং সে ঘরের ছিল অনেক খাদেম। তার ছিল বড় আঙ্গিনা, তায়েফবাসী সাকীফ গোত্র এবং তাদের অনুসারীরা কোরায়শ ব্যতীত অন্যদের উপর এ দেবতা নিয়ে গর্ব করত। ইবন ‘আববাস থেকে বর্ণিত যে, সেখানে সুদূর অতীতে একটি চারকোণা বিশিষ্ট পাথরে বসে একজন ইয়াহুদী ব্যক্তি হাজীদের জন্য ‘সাতু’ তৈরী করে খেতে দিত। লোকটি সেখানে মৃত্যু বরণ করলে তার সততা ও ভালকর্মের জন্য লোকেরা এ পাথরকে সম্মান করে এর পার্শ্বে অবস্থান গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। কুরাইশ এবং সমগ্র আরব গোত্রের লোকেরাও একে পূজা ও সম্মান করত। ইবনে হিশাম বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুগীরা বিন শু‘বাকে প্রেরণ করলেন। তিনি গিয়ে তা ভেঙ্গে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন।
উয্যাঃ মক্কা ও তায়েফের মাঝে নাখলা নামক স্থানে তিনটি বাবলা গাছের সমষ্টি একটি বৃক্ষ ছিল। তার উপর ছিল ঘর এবং খেজুর পাতার পর্দা। তাতে ছিল উয্যা মূর্তি। কুরইশরা এটাকে সম্মান করত, বরকত মনে করত। এটাকে নিয়ে গর্ববোধ করত। উহুদ যুদ্ধের দিন আবুসুফিয়ান বলে ছিল ‘‘ لنا العزى ولاعزى لكم’’ আমাদের উয্যা দেবতা আছে। তোমাদের উযযা দেবতা নেই। তখন আল্লাহর রাসূল মুসলিমদেরকে বলেছিলেন, তোমরা বলঃ ‘‘ الله مولانا ولامولى لكم’’ আল্লাহ আমাদের মনিব তোমাদের কোন মনিব নেই।
মক্কা বিজয়ের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালিদ ইবন ওয়ালিদ কে পাঠালেন সে গাছটি কেটে ফেলার জন্য এবং ঘরটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য। খালিদ (রা.) গাছগুলো কেটে ফেললেন আর ঘরটি ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ দিলে তিনি বললেন, ফিরে যাও, কেননা তুমি কিছুই করো নি। খালিদ ফিরে গেলেন। যখন খাদেমরা তাঁকে দেখল, তখন তারা পাহাড়ের দিকে দৌড়ে গেল এবং বলতে লাগল, হে ঊয্যা, হে ঊয্যা! খালিদ তার নিকট আসলেন, দেখলেন, একটি উলঙ্গ মহিলা, চুলগুলো এলোমেলো, মুষ্টি ভরে মাটি স্বীয় মাথায় মারছে। খালেদ (রা.) তরবারীর আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অত:পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সংবাদ দিলে তিনি বললেন, এটাই হল উয্যা।
মানাতঃ মূলতঃ আল্লাহর গুনবাচক নাম মান্নান থেকে এসেছে। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা মদীনার মাঝে কুদাইদ নামক স্থানে। খুযা‘আ, আউস এবং খায্রাজ এটিকে খুব সম্মান করত এবং এখান থেকে হজ্জের ইহরাম বাঁধত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা বিজয়ের বছর আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে পাঠালেন এটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য। তিনি গিয়ে মূর্তিটি ধ্বংস করে দিলেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, এতে একটি মহিলা জিন থাকতো এবং এ জিনই এর পূজারীদেরকে নানা রকম অলৌকিক কর্মকান্ড করে দেখাতো। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশে সায়ীদ ইবন যাইদ আল্-আশহালী (রা.) এ মূর্তিটি ধ্বংস করতে যান। এ সময় সে জিনটি কালো বর্ণের একটি মহিলার আকৃতিতে উলঙ্গ অবস্থায় এলোমেলো কেশে আত্মপ্রকাশ করে নিজের জন্য ধ্বংস আহবান করে বুক চাপড়াতে ছিল। সায়ীদ (রা.) তাকে এ অবস্থায়ই হত্যা করেন।
উল্লিখিত মূর্তিগুলোকে আরবের লোকেরা সম্মান করত। তা থেকে বরকত নিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
বাই‘আতে রিদওয়ান ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ বাই‘আতটি হয়েছিল একটি গাছের নিচে। এ বাই‘আতের কারণে আল্লাহ্ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ.......
‘মুমিনরা যখন বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাই’আত গ্রহণ করল, তখন আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন।’
এ বাই‘আতটিই ছিল মূলত: হুদাইবিয়া সন্ধির কারণ। যে সন্ধিটিকে আল্লাহ্ স্পষ্ট বিজয় (مبين فتح) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُّبِينًا
‘নিশ্চয় আমি তোমাকে স্পষ্ট বিজয় দিয়েছি।’
এ গাছটিকে বরকতময় মনে করে এগাছটিকে কেন্দ্র করে শিরক চালু হয়ে যেতে পারে বিধায় এ গাছটিকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। সাহাবা (রা.) পরে এ গাছটিকে চিহ্ণিত করতে পারে নি।
" فلما خرجنا من العام المقبل نسيناها فلم نقدر عليها"
মুসায়্যাব (রা.) যিনি বাই‘আতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি বলেন: ‘পরবর্তী বছর আমরা যখন বের হলাম, গাছটি আমরা ভুলে গেলাম। গাছটি চিনতে আমরা সক্ষম হলাম না।’
وعن ابى واقد الليثى قال: خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم إلى حنين ونحن حدثاء عهد بكفر وللمشركين سدرة يعكفون عندها وينوطون بها أسلحتهم يقال لها ذات أنواط- فمررنا بسدرة- فقلنا يا رسول الله اجعل لنا ذات أنواط كمالهم ذات أنواط فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ألله أكبر- إنها السنن، قلتم والذى نفسى بيده كما قالت بنو إسرائيل لموسى (اجعل لنا إلها كما لهم ألهة، قال إنكم قوم تجهلون ) لتركبن سنن من قبلكم চ
আবু ওয়াকিদ লায়সী (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুনাইনের যুদ্ধে বের হলাম। তখন আমরা ছিলাম কুফর যুগের নিকটবর্তী নতুন মুসলিম। তৎকালে তথায় ছিল মুশরিকদের একটি কূলবৃক্ষ, তার পার্শ্বে তারা উপবেশন করত এবং তার সাথে তাদের অস্ত্রগুলো ঝুলিয়ে রাখত বরকতের জন্য, তাকে বলা হত ‘যাতু আনওয়াত’। আমরা একটি কূলবৃক্ষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, আমরা বল্লাম- হে আল্লাহর রাসূল তাদের যেমন ‘যাতু আন্ওয়াত’ রয়েছে, আমাদের জন্য একটি ‘যাতু আন্ওয়াত’ এর ব্যবস্থা করে দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ আকবর’ এটাতো পূর্ববর্তীদের প্রথার কথা তোমরা বললে, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম খেয়ে আমি বলছি, তোমরা তো ঐ কথাই বললে, যা বলেছিল বনু ইসরাঈল মূসা (আ.) কে ‘‘আমাদের জন্য ইলাহ ঠিক করে দিন, যেমন রয়েছে তাদের জন্য অনেক ইলাহ। তিনি (মুসা) বললেন, তোমরা হলে মূর্খ জাতি।’’ তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতি-নীতি অনুসরণ করে চলতে অভ্যস্থ। ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন। যেমন কোন বুযুর্গ কোন স্থানে বসেছিলেন বা কোন পাথরে বসে বিশ্রাম করেছিলেন, সে স্থানকে বা পাথরকে বরকতময় মনে করে তা থেকে ধূলা নিয়ে শরীরে মাখা, পাথরকে চুম্বন করা, বুযুর্গের কবরের পার্শ্বের পুকুরের কাছিমের গা থেকে শেওলা নিয়ে শরীরে মাখা, গজার মাছকে, কুমীরকে খাবার দিলে মকসুদ পূরা হবে বলে বিশ্বাস করা, কবরের দেয়ালে চুম্বন করা, মসেহ করা, কবরের পার্শ্বের গাছে মান্নত করে সুতা বাঁধা, মাযারের কাছ থেকে নেয়া লাল, হলুদ মালা হাতে, গলায় বাঁধা, আর এর মাধ্যমে বিপদ আপদ থেকে বাঁচতে পারবে বলে বিশ্বাস করা ইত্যাদি।
৯. গায়রুল্লাহর নামে মান্নত করাঃ
মান্নত করা একটি ‘ইবাদাত। যখন মান্নত করবে তা পূরণ করতে হবে। কিন্তু মান্নত গায়রুল্লাহর নামে করা শিরক। যেমন কোন ওলীর মাযারে এভাবে মান্নত করা যে অমুক কার্যটি হাসিল হলে বা রোগমুক্ত হলে মাযারে একটি গরু দেব। এগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মুমিনরা আল্লাহর জন্য মান্নত করে এবং তা পূরা করে।
আল্লাহ বলেনঃ
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ
‘‘তারা মান্নত পূরা করে’’
عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : "من نذر أن يطيع الله فليطعه ومن نذر ان يعصي الله فلا يعصه"
‘‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মান্নত করবে, সে তা পূরা করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতামূলক কাজের মান্নত করে, সে তা পূরণ করবে না।’’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
لاوفاء لنذر في معصية الله
‘‘আল্লাহর অবাধ্যতায় মান্নত পূর্ণ করতে নেই।’’
মূলত: শারীয়াত মান্নত না করার জন্যই উদ্বুদ্ধ করেছে।
عن إبن عمر رض قال نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن النذر قال إنه لا يرد شيئا إنما يستخرج به من البخيل
‘আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মান্নত করতে নিষেধ করেছেন, তিনি বলেছেন: মান্নত কিছুই ফিরাতে পারে না, বরং মান্নত দ্বারা কৃপন থেকে কিছু বের করা হয়।’
১০. অদৃশ্য বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য গায়রুল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করাঃ
অদৃশ্য বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের আশ্রয় প্রার্থনা করা শিরক। কিন্তু বাহ্যিক প্রয়োজনে অন্য কারো নিকট আশ্রয় চাওয়া দোষণীয় নয়। যেমন রোদ থেকে বাঁচার জন্য গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়া দোষণীয় নয়। এমনি ভাবে বিপদে পড়ে কারো আশ্রয় চাওয়া অন্যায় নয়। তবে প্রকৃত আশ্রয়দাতা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা, একথার বিশ্বাস অবশ্যই থাকতে হবে।
আরব দেশে প্রচলন ছিল, কোন উপত্যকায় অবতরণ করলে অথবা কোন ময়দান অতিক্রম কালে সে উপত্যকায় বা ময়দানের জিন সরদারের নিকট তারা আশ্রয় প্রার্থনা করে বলতোঃ
"أعوذ بسيد هذا الوادي من شرسفهاء قومه"
‘এ উপত্যকার সরদারের নিকট তার জাতির দুষ্টদের অনিষ্ট হতে বাঁচার জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ পবিত্র কোরআনে তাদের এ জাতীয় প্রার্থনা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
‘মানুষের মধ্যে কিছু লোক কতিপয় জিনের নিকট আশ্রয় চায়। এতে তারা তাদের ভয় আরো বাড়িয়ে দেয়।’ যেমন আমাদের দেশেও দেখা যায়, নদীতে নৌকা লঞ্চ চালনার সময় খোয়াজ খিজিরের নাম নিয়ে বলে, হে খোয়াজ খিজির নিরাপদে তীরে নিয়ে পৌঁছিয়ে দিও। সকাল বেলায় বাস চালনার সময় রাস্তার পাশে মাযারে দু-চারটি টাকা দিয়ে ঐ মৃত ব্যক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করে। এতে তারা মনে করে আজকের দিনে তারা লঞ্চ বা বাস দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে। একজন মুমিন প্রকৃত আশ্রয়দাতা আল্লাহ্ তা‘য়ালার নিকটই সমূহ বিপদের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করবে। অন্য কারো নিকট নয়।
আল্লাহর রাসূল আমাদেরকে ঘুমাবার দু‘আ শিখিয়েছেন ৃৃ
ৃ لاملجأ ولا منجى منك إلا إليكৃৃৃ
‘.......... তুমি (আল্লাহ্) ব্যতীত না কোন আশ্রয়স্থল রয়েছে না কোন মুক্তির স্থান..............’
আল্লাহ আমাদেরকে শিখিয়েছেন, তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে এভাবে
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
‘বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রভাতের পালনকর্তার’
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
‘বল, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের।’
হাদীসে আছে-
عن خولة بنت حكيم قالت: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: " من نزل منزلا فقال: أعوذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق، لم يضره شئى حتى يرحل من منزله ذلك"
‘খাওলা বনতে হাকীম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোন স্থানে অবতরণ করে বলে, আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাক্যগুলো দ্বারা তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট হতে আশ্রয় চাচ্ছি। তাহলে সে স্থান্ ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।
১১. অদৃশ্য বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য গায়রুল্লাহর সাহায্য চাওয়া অথবা গায়রুল্লাহকে ডাকাঃ
বাহ্যিক কোন বিপদ আপদে, প্রয়োজনে কারো সাহায্য চাওয়া দোষণীয় নয়। যেমন- খাবারের প্রয়োজনে খাবার চাওয়া, টাকার প্রয়োজনে টাকা চাওয়া অন্যায় নয়। এটা সচরাচর সকল সমাজেই প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কোন বিপদ আপদ থেকে বাঁচার জন্য যা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ দূর করতে পারে না গায়রুল্লাহকে ডাকা যাবে না, তার নিকট সাহায্য চাওয়া যাবে না। যদি এমনটি করা হয়, তাহলে তা হবে শিরক্।
আল্লাহ বলেন:
وَلاَ تَدْعُ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَنفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
‘‘আর ডাকবে না আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে যে না তোমার কোন উপকার করতে পারে না তোমার কোন ক্ষতি করতে পারে। যদি তুমি এমন কাজ কর, তা হলে তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’’
আল্লাহ্ বলেনঃ
....وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ- إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ......
‘.................তাঁকে (আল্লাহ্) বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা খেজুরের বিচির উপরের পাতলা অংশটুকুরও মালিক নয়। তোমরা তাদেরকে আহবান করলে তারা তোমাদের আহবান শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না............’।
সূরা আল ফাতিহায় আল্লাহ্ আমাদেরকে বলতে শিখিয়েছেন
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
অর্থাৎ ‘আমরা একমাত্র আপনারই ‘ইবাদাত করি এবং একমাত্র আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি।’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
واذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله
‘যখন কিছু চাও আল্লাহ্র নিকট চাও আর যখন সাহায্য চাও আল্লাহ্র নিকট সাহায্য চাও।’
১২. বালা মুসীবত হতে নিষ্কৃতি লাভের উদ্দেশ্যে বালা, তাগা, সুতা, তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করাঃ
এগুলোকে যদি প্রকৃত পক্ষেই বালামুসীবত বা রোগব্যাধি দূরীকরণের কারণ মনে করে, তাহলে তা হবে শিরক। আর যদি এগুলোকে প্রকৃত কারণ মনে না করে। তা হলে এগুলোর ব্যবহার শিরক না হলেও শিরক পর্যন্ত পৌছে দেয়ার আশংকা থাকে।
عن عمران بن حصين رضي الله عنه " ان النبى صلى الله عليه وسلم رأى رجلا في يده حلقه من صفر فقال : ما هذا؟ قال من الواهنة: فقال انزعها فإنها لاتزيدك إلا وهنا، فإنك لومت وهى عليك ما أفلحت أبدا"
‘‘ইমরান বিন হুছাইন রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে একটি পিতলের বালা দেখতে পেলেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? সে বলল, এটা রোগের প্রতিরোধের জন্য। তখন তিনি বললেন, এটা খুলে ফেল, এটা কেবল তোমার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করবে। কেননা এটা তোমার সংগে থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তুমি কখনও সফলকাম হতে পারবে না।
عن عقبة بن عامر مرفوعا " من تعلق تميمة فلا أتم الله له من تعلق ودعة فلا ودع الله له وفي رواية من تعلق تميمة فقد أشرك"
‘উকবা ইবন ‘আমের হতে মরফূ’ সূত্রে বর্ণিতঃ ‘যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলায় আল্লাহ যেন তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ না করেন। আর যে ব্যক্তি ঝিনুক জাতীয় ঘুঙ্গুর ঝুলায়, আললাহ যেন তাকে রক্ষা না করেন অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি তাবিয ঝুলায়, সে শিরক করল।
ولابن ابى حاتم عن حذيفة أنه رأى رجلا في يده خيط من الحمى فقطعه وتلا وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ
‘‘ইবনু আবি হাতিমে হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি এক ব্যক্তিকে তার হাতে জ্বর নিবারণের তাগা, সুতা পরিহিত দেখতে পেলেন, তখন তিনি তা ছিঁড়ে ফেললেন। এবং তিলাওয়াত করলেন وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ|
عن أبى بشير الأنصارى رضي الله عنه أنه كان مع رسول الله صلى الله عليه وسلم في بعض أسفاره فأرسل رسولا أن لايبقين في رقبت بعير قلادت من وتر أو قلادت إلا قطعت ু
আবু বশীর আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি একজন দূত প্রেরণ করলেন এ কথা বলে যে, কোন উটের গলায় যেন কোন সুতার হার বা অন্য কোন কিছু না থাকে, থাকলে তা ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
عن ابن مسعود رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : "إن الرقى والتمائم والتولة شرك"
আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ঝাড়-ফুঁক, তাবীয, যাদু শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
عن عبد الله بن حكيم مرفوعا من تعلق شيئا وكل إليه
আব্দুল্লাহ ইবন হাকীম হতে মারফু’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি কোন কিছু (হাতে বা গলায়) ঝুলায়, তাকে উক্ত বস্ত্তর ওপর সোপর্দ করা হবে। অর্থাৎ আল্লাহর জিম্মা হতে বের হয়ে যাবে।
تمائم শব্দটি ةميمة এর বহুবচন। ঐ সকল হাড়, ঘুংগুরকে বুঝায়, যা শিশুদের গলায় ঝুলানো হয় বদ নযর হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এটা বৈধ নয়, কেননা এর কোন ক্ষমতা নেই অনিষ্ট হতে রক্ষা করার। ةميمة বলতে তাবীয কবযকেও বুঝায় যা গলায় ঝুলানো হয় বা হাতে বাঁধা হয়। তাবীয লাগানো তখনই শিরক হবে, যখন এটাকেই প্রকৃত কল্যাণকর বা অকল্যাণকর বলে বিশ্বাস করা হয়।
তাবীয কবয যদি কুরআন বা আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা হয়, তা হলে তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয। আর যদি কুরআন দ্বারা হয়, তা হলে জায়েয হবে কিনা, এ নিয়ে সাহাবা ও পরবর্তী আলিমগণের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ী এটাকে নাজায়েয বলেছেন। যেমন ‘আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ, ‘আবদুল্লাহ ইবন আববাস, হুযাইফা প্রমুখ। কতিপয় সাহাবী ও তাবেয়ী এটাকে জায়েয বলেছেন। যেমনঃ আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন আস, আরো কেউ কেউ। তবে তিনটি কারণেএটি নাজায়েয হওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। (১) নাজায়েয হওয়ার দলীলগুলো সব তাবীযকেই অন্তর্ভুক্ত করে, কুরআন দ্বারা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে কোন হাদীসে কোন প্রকারের ইংগিত দেয়া হয়নি। (২) এটাকে বৈধ বলা হলে অবৈধ পন্থায়, তাবিয লেখার রাস্তা খুলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে (আর হারামের রাস্তা খুলে দেয়া হারাম)। (৩) তাবীয গলায় ঝুলিয়ে বা হাতে কোমরে লাগিয়ে টয়লেট, নাপাক জায়গায় যাওয়ার কারণে কুরআনের অবমাননা হবে। সর্বোপরি কুরআন তাবিযের জন্য নাযিল করা হয় নি। কুরআন নাযিল হয়েছে হিদায়াতের জন্য যদি। তাবিযের জন্যই নাযিল হতো, তা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই তাবিয দিতেন। কিন্তু তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমনকি কোন সাহাবী তাবীয দিয়েছেন, তারও কোন প্রমাণ নেই।
الرقى বলতে ঝাড় ফুঁককে বুঝায়। ঝাড় ফুঁক যদি শিরক মুক্ত, কুরআন সুন্নাহ্ দ্বারা হয় তা হলে জায়েয। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদ নযর, সাপ বিচ্ছু প্রভৃতি বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে এর অনুমতি দিয়েছেন।
عن عوف بن مالك ........ لابأس بالرقى ما لم تكن شركا
‘আউফ ইবন মালিক হতে বর্ণিত, ..... ঝাড় ফুঁকে কোন অসুবিধা নেই, যদি তাতে শিরক না থাকে।’’
সহীহুল বুখারীর একটি দীর্ঘ হাদীসে সূরা আল ফাতিহা দিয়ে ঝাড় ফুঁক করে বিচ্ছুর বিষ নামানোর কথা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বৈধতা দিয়েছেন এবং বিনিময় নেয়ারও অনুমতি দিয়েছেন।
عن أبي سعيد قال إنطلق نفر من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم في سفرة سافروها حتى نزلوا على حي من أحياء العرب فاستضافوهم فأبوا أن يضيفوهم فلدغ سيد ذلك الحي فسعواله بكل شيء لاينفعه شىء فقال بعضهم لو أتيتم هؤلاء الرهط الذين نزلوا لعله أن يكون عند بعضهم شىء فأتوهم فقالوا يا أيها الرهط إن سيدنا لدغ وسعينا له لكل شيء لا ينفعه فهل عند أحد منكم من شيء فقال بعضهم نعم والله إني لارقي ولكن والله لقد استضفناكم فلم تضيفونا فما أنا براق لكم حتى تجعلوالنا جعلا فصالحوهم على قطيع من الغنم فانطلق يتقل عليه ويقرأ: الحمد لله رب العالمين فكأنما نشط من عقال فانطلق يمشي ومابه قلبة قال فاوفوهم جعلهم الذي صالحوهم عليه فقال بعضهم اقسموا فقال الذي رقى لاتفعلوا حتى نأتي النبي صلى الله عليه وسلم فنذكرله الذي كان فننظر ما يأمرنا فقدموا على رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكروا له فقال وما يدريك أنها رقية ثم قال قد أصبتم اقسموا واضربوالي معكم سهما فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم.
‘‘আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কয়েকজন সাহাবী কোন এক সফরে বের হন। তাঁরা আরবদের কোন এক গোত্রে পৌঁছে তাদের আতিথ্য কামনা করলেন। কিন্তু তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। (ঘটনাক্রমে) ঐ গোত্রের সরদার বিচ্ছু দ্বারা দংশিত হল। লোকেরা তার (আরোগ্যের) জন্য সর্বপ্রকার তদবীর করল, কিন্তু ফল হল না। তাদের কেউ বলল, ঐ যে লোকগুলো এখানে এসেছে তাদের কাছে যদি তোমরা যেতে। হয়ত তাদের কারো কিছু (ব্যবস্থা) থাকতে পারে। তখন তারা তাদের নিকট গেল এবং বলল, হে যাত্রীদল, আমাদের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সব রকমের তদবীর করেছি কিন্তু কিছুতেই উপকার হচ্ছে না। তোমাদের কারও নিকট কিছু ব্যবস্থা আছে কি? তাঁদের (সাহাবীদের) একজন বললেন, হাঁ, আল্লাহর কসম! আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে দেখ, আমরা তোমাদের আতিথ্য কামনা করেছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী কর নি। কাজেই আমি তোমাদের ঝাড় ফুঁক করব না, যে পর্যন্ত না তোমরা আমাদের জন্য পারিতোষিক নির্ধারণ কর। তখন তারা এক পাল বকরীর শর্তে তাদে সাথে আপোষরফা করল। এরপর তিনি (ঝাড়ফুঁককারী) গিয়ে তার (দংশিত স্থানের) ওপর থু থু দিতে দিতে সূরা আল ফাতিহা পড়তে লাগলেন। ফলে সে (এমনভাবে নিরাময় হল) যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হল। সে এমনভাবে চলতে ফিরতে লাগল যেন তার কোন অসুস্থতাই নেই। রাবী বলেন, এরপর তারা তাদের স্বীকৃত পারিতোষিক পুরোপুরি দিয়ে দিল। সাহাবীদের কেউ কেউ বললেন, এটা বন্টন কর। কিন্তু ঝাড়ফুঁককারী বললেন, এটা কর না। আগে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাঁকে এ ঘটনা জানাই এবং দেখি তিনি আমাদের কি নির্দেশ দেন। তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ঘটনাটা বিবৃত করলেন। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কিভাবে জানলে যে, ওটা (সূরা আল ফাতিহা) একটা মন্ত্র? তারপর বললেন, তোমরা ঠিকই করেছ। (এবার) বন্টন কর এবং তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটা ভাগ লাগাও। এই বলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন।
আল্লামা সুয়ূতী বলেছেন, তিনটি শর্ত পাওয়া যাওয়ার শর্তে ঝাড়-ফুঁক সমস্ত আলিমের জন্য জায়েয। (১) আল্লাহর কালাম অথবা তাঁর নাম বা গুণাবলী দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা, (২) আরবী ভাষায় হওয়া এবং তার অর্থ বুঝা, (৩) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, ঝাড়-ফুঁকের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই, যা হবে আল্লাহর ক্ষমতায়ই হবে।
ةولة ঐ তদবীরকে বলা হয় যা দ্বারা স্বামীর প্রতি স্ত্রীর এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেম আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়। এটি এক প্রকার যাদু। এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি হাতে বা গলায় সূতা, তাগা লাগায় আর অন্য কেউ তা ছিড়ে ফেলে, তা হলে সে ছাওয়াব পাবে।
عن سعيد بن جبير قال "من قطع تميمة من إنسان كان كعدل رقبة"
সাঈদ ইবন যুবায়র বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাগা কেটে দেয়, সে যেন একটি দাস মুক্ত করল। ওয়াকী’ হাদীছটি মরফু’ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
১৩. ভয়ের ক্ষেত্রে শিরকঃ
ভয় তিন প্রকারঃ
(1) আল্লাহ্ ছাড়া জিন, ভূত, দেবতা, মৃত, তাগুত ইত্যাদিকে ভয় করা যে এরা তার ক্ষতিসাধন করবে।
(2) এটাকে বলা হয় গোপন ভয় বা অদৃশ্য ভয়। যেমন হুদ আলাইহিস্ সালামের কওম তাঁকে বলল
إِن نَّقُولُ إِلاَّ اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوَءٍ
‘বরং আমরা তো বলি যে, আমাদের কোন দেবতা তোমার উপরে শোচনীয় ভূত চাপিয়ে দিয়েছে।’
আরবের মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের মূর্তির ভয় দেখিয়েছে। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ
‘তারা আপনাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্য উপাস্যের ভয় দেখায়।
মূলতঃ ভালমন্দ করার ক্ষমতা কারোই নেই। সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই। আল্লাহ বলেনঃ
قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ
‘বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি। যদি আল্লাহ্ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করেন তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে?’ অতএব ভয় একমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে, অন্য কাউকে নয়।
আল্লাহ্ বলেনঃ
فَلاَ تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
‘অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করোনা, আমাকে ভয় কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।’
فَلاَ تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي
‘অতএব তোমরা তাদেরকে ভয় করোনা, আমাকে ভয় কর।’
فَاللّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤُمِنِينَ
‘‘আল্লাহ অধিক উপযুক্ত যে তোমরা তাকে ভয় করবে, যদি তোমরা মুমিন হও।’’
এগুলো শিরকে আকবার।
(3) মানুষের ভয়ে বা ফিতনার ভয়ে শরীয়তের হুকুম পালন থেকে বিরত থাকা। তদ্রুপ সৎকর্মের আদেশ এবং অসৎকর্মের নিষেধ হতে বিরত থাকা। যেমন ছালাত আদায় করলে শাস্তি দেবে এ ভয়ে ছালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকা। এলাকায় শিরক বা বিদ‘আতের কাজ চলছে, ফিতনার আশংকায় তা থেকে বাধা না দেয়া। বা বাধা দিলে শাস্তি দেবে, এ ভয়ে বাধা না দেয়া।
আল্লাহ্ বলেনঃ
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّواْ أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً
‘তুমি কি সে সব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, ছালাত কায়েম রাখ, যাকাত আদায় কর, অতঃপর যখন তাদের উপর জিহাদ ফরয করা হল, তখন তাদের মধ্য হতে একদল মানুষকে ভয় করতে লাগল আল্লাহকে ভয় করার মত, এমনকি তার চেয়েও অধিক ভয়।’
আল্লাহ্ কিয়ামাতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞাসা করবেনঃ
وما منعك إذا رأيت المنكر أن لاتغير فيقول يارب خشيت الناس، فيقول الله عزوجل: فإياى كذت أحق أن تخشى
অন্যায় কর্ম দেখার পর তা পরিবর্তন করতে তোমাকে কে বাধা দিয়েছে? বান্দা বলবে, হে প্রভু! আমি লোকদেরকে ভয় করেছি, তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি ভয় করবে, এর যোগ্য আমিই বেশি ছিলাম। অতএব মানুষের ভয়ে সত্য কথা বলা থেকে বিরত থাকা নিতান্তই অন্যায়, হারাম এবং শিরকে আকবারের দিকে ধাবিত করে। আল্লাহ্ বলেনঃ
فَلاَ تَخْشَوُاْ النَّاسَ وَاخْشَوْنِ
সুতরাং তোমরা মানুষের কোন অনিষ্টের ভয় করো না, ভয় কেবল আমাকেই কর।
মুমিনদের পরিচয় দান প্রসঙ্গে আললাহ্ বলেন:
يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ يَخَافُونَ لَوْمَةَ لآئِمٍ
‘তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করে এবং আল্লাহর পথে কথা বলতে কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না’ এটাকে আল্লাহর রাসূল উত্তম জিহাদ বলেছেনঃ
" عن أبى سعيد الخدرى رض عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: أفضل الجهاد كلمة عدل عند سلطان جائر"
‘‘সবচেয়ে উত্তম জিহাদ হল, অত্যাচারী শাসকের নিকট সঠিক কথা বলা।’’
তবে সৎকর্মের আদেশ ও অসৎ কর্মের নিষেধ করার ক্ষেত্রে হিকমত বা কৌশল অবশ্যই অবলম্বন করতে হবে। এটা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ্ বলেন ঃ
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ........
‘তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা.........’
(4) তৃতীয় প্রকার ভয় হচ্ছে, প্রকৃতিগত ভয়ঃ
যেমন, হিংস্র জন্তুর ভয়, দুশমনের ভয় ইত্যাদি। এটা দোষনীয় নয়। যেমন আল্লাহ্ মূসা আলাইহিস্ সালামের ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন
فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ
‘অতঃপর তিনি (মূসা) শত্রু আগমনের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়েন।’’
ইয়াকুব আলাইহিস সালাম তাঁর সন্তান ইউছুফ আলাইহিসসালাম-এর ব্যাপারে বললেনঃ
قَالَ إِنِّي لَيَحْزُنُنِي أَن تَذْهَبُواْ بِهِ وَأَخَافُ أَن يَأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَأَنتُمْ عَنْهُ غَافِلُونَ
তিনি (ইয়াকুব) বললেনঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে, তোমরা তাকে (ইউসুফ) নিয়ে যাবে এবং আমি ভয় করি যে, বাঘ তাকে খেয়ে ফেলবে আর তোমরা তার ব্যাপারে গাফেল থাকবে। এ ধরণের ভয় শিরকভুক্ত নয়, কেননা তাতে সম্মান, ইবাদাত কোনটাই মিশ্রিত নয়।
আর এক প্রকারের ভয় রয়েছে, যা প্রশংসনীয়, তা হলো আল্লাহর ভয়
যারা আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
ذلك لمن خاف مقامى وخاف وعيد
‘এ (পুরস্কার) তাদের জন্যই, যারা হিসাবের জন্য আমার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে’
وَلِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ جَنَّتَانِ
‘‘আর যে ব্যক্তি তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি জান্নাত।’’
১৪. মহববতের ক্ষেত্রে শিরকঃ
মহববত প্রথমত: দুই প্রকার
(ক) বিশেষ ধরনের ভালবাসা
এ জাতীয় ভালবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ ধরণের ভালবাসা ‘ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এতে থাকবে পূর্ণ বিনয়, পরিপূর্ণ আনুগত্য ও পরিপূর্ণ সম্মান মর্যাদা। এ ধরণের ভালবাসা যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য হয় তা হলে তা হবে শিরক। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ
‘লোকদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুকে তাঁর সমকক্ষ মনে করে, তারা তাদেরকে ভালবাসে যেমন আল্লাহকে ভালবাসে। বস্ত্ততঃ যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহকেই সবচেয়ে অধিক ভালবাসে।
আরবের মুশরিকরা তাদের দেবতাদের এ ধরনের ভালবাসতো বিধায় আল্লাহ্ তাদের সমালোচনা করেছেন। এ ধরনের ভালবাসা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এ রকম যদি অন্য কাউকে ভালবাসা হয়, সেটা হবে ভালবাসার ক্ষেত্রে শিরক্। আল্লাহকে সব কিছুর চেয়ে অধিক ভালবাসার দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করার মাধ্যমে। আল্লাহ্ বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي .....
‘বল! তোমরা যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তা হলে তোমরা আমার অনুসরণ কর’
(খ) সাধারণ ভালবাসা।
এটা আবার তিন প্রকারঃ
(১) প্রকৃতিগত ( طبعى) ভালবাসাঃ
যেমন ক্ষুধার্ত ব্যক্তির খাদ্য এবং তৃষ্ণার্ত ব্যাক্তির পানির ভালবাসা (আকর্ষণ)। মিষ্টি ভালবাসা, এ জাতীয় ভালবাসায় যেহেতু সম্মান মিশ্রিত নেই, তাই এ ধরণের ভালবাসা শিরকভুক্ত নয়।
(২) একত্রে বসবাস ও সহাবস্থানগত ভালবাসাঃ
যেমন সহপাঠিদের পারস্পরিক ভালবাসা, ব্যবসা সাথীদের, একই অফিসে চাকুরীরত কর্মকর্তাদের পারস্পরিক ভালবাসা, এ জাতীয় ভালবাসাও শিরক নয়, যেহেতু এতে আনুগত্য ও সম্মান নেই।
(৩) মায়া মমতা ও দয়া অনুগ্রহপ্রসূত ভালবাসাঃ
যেমন স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক ভালবাসা, সন্তানদের প্রতি পিতার ভালবাসা। এ জাতীয় ভালবাসাও শিরক নয়। কারণ এতে পূর্ণ বিনয়, সম্মান ও আনুগত্য নেই।

১৫. ভরসার (توكل) ক্ষেত্রে শিরকঃ
মুমিনের বৈশিষ্ট হল সকল ব্যাপারে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। আল্লাহ্ বলেনঃ
وَعَلَى اللّهِ فَتَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
‘তোমরা যদি সত্যিকার অর্থে মুমিন হয়ে থাক, তা হলে একমাত্র আল্লাহর উপরই ভরসা কর।’
فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُواْ إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
‘তাঁর (আল্লাহর) উপর তাওয়াক্কুল কর যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক।’
তাওয়াক্কুল বা ভরসা তিন প্রকারঃ
1. যে সমস্ত বিষয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সামর্থের মধ্যে নেই, যেমনঃ সন্তান দান, ব্যবসায় উন্নতি, রোগ-ব্যাধি নিরাময় করা, বিপদ আপদ থেকে বাঁচানো ইত্যাদি, এ সমস্ত ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা না করে কোন ব্যক্তি জীবিত বা মৃত অথবা অন্য কিছুর উপর ভরসা করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
2. বাহ্যিক আসবাবের উপর ভরসা করাঃ যেমন বাদশাহ্, আমীর যাকে আল্লাহ্ কোন কিছু করার বা প্রতিহত করার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে তার উপর ভরসা করা। এটা শিরকে আসগার এর অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রেও প্রকৃত ভরসা আল্লাহর উপরই করতে হবে।
3. উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসবাব গ্রহণ করাঃ যেমন রিযকের জন্য ব্যবসা বানিজ্য করা, চিকিৎসার জন্য ঔষধ সেবন করা ইত্যাদি শিরকের অন্তর্ভুক্ত নয়। কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাহ্যিক আসবাবকে গ্রহণ না করে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করা প্রকৃত তাওয়াক্কুল নয়, প্রকৃত তাওয়াক্কুল হল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে মাধ্যম প্রয়োজন, সে মাধ্যম গ্রহণ করেই তা হাসিলের চেষ্টা করা। এটাই আল্লাহর বিধান। এটাই আল্লাহর রীতি।
আল্লাহ বলেনঃ
وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
‘আর তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।’
وَلاَ تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلاً
‘তুমি আমার নিয়মের কোন ব্যতিক্রম পাবে না।’
عن أنس رضي الله عنه قال: قال رجل : يارسول الله أعقلها وأتوكل أوأطلقها وأتوكل؟ قال: إعقلها وتوكل.
আনাস রাদিয়াল্লাহু বলেন, জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কি তা (উট) বেঁধে তাওয়াককুল করব নাকি ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ উট বেঁধে তাওয়াক্কুল কর।
উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু একদল ইয়ামান বাসীর সাক্ষাত পেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারী। তিনি বললেন, বরং তোমরা তাওয়াক্কুলের বাহানা করছ। প্রকৃত তাওয়াক্কুলকারী তো সে ব্যক্তিই যে যমীনে বীজ বপন করেছে তারপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেছে।
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিতঃ ইয়ামানবাসীরা হজ্জে যেত, কিন্তু কোন পাথেয় নিত না, তারা বলত, আমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারী। তারা মক্কায় গিয়ে ভিক্ষা করত। আল্লাহ আয়াত নাযিল করলেনঃ
وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى
‘তোমরা পাথেয় সাথে নিয়ে যাও। নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া’।
আহমাদ ইবন হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করা হল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে বসে থাকে, কোন উপার্জন করে না এবং বলেঃ আমি আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করেছি। তিনি উত্তরে বললেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তিরই আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা কর্তব্য, তবে নিজে উপার্জনের অভ্যাস সৃষ্টি করতে হবে। সমস্ত নবী নিজেরা উপার্জনের জন্য খেটেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কাজ করেছেন। আবু বকর, উমার করেছেন। কেউই বলেননি, আমরা বসে থাকি, আল্লাহ্ আমাদের রিয্ক দেবেন। আল্লাহ্ বলেনঃ
فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ
‘তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিযক) তালাশ কর।’
একদিন উমার ফারুক (রা.) জুম’আর নামাজের পর একদল লোককে দেখলেন মসজিদের পিলারের পার্শ্বে নিভৃতে বসে আছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কারা? তারা বল্ল,আমরা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলকারী। উমার (রা.) বর্ম দিয়ে তাদেরকে আঘাত করলেন এবং ধমকালেন, তারপর বললেন, তোমাদের কেউ একথা বলে রিয্ক অন্বেষণ করা থেকে বসে থাকতে পারবেনা যে, আল্লাহ্ আমাকে রিযক দেবেন, অথচ সে জানে যে, আকাশ স্বর্ণ বা রৌপ্য কোন কিছুই বর্ষণ করেনা, আর আল্লাহ্ বলেছেন-
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ
‘যখন নামায শেষ হয়ে যায়, তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিয্ক) তালাশ কর।’’
সুফইয়ান ছাওরী (র.) মস্জিদে হারামে উপবিষ্ট একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, কে তোমাদেরকে বসিয়ে রাখল? তারা বল্ল, তা হলে আমরা কী করব? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ (রিয্ক) তালাশ কর। মুসলিমদের উপর বোঝা হয়ো না।’
আল্লাহ্ রোগ সৃষ্টি করে তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
ما أنزل الله داء إلا أنزل له شفاء
‘আল্লাহ্ রোগ নাযিল করে, তার জন্য শিফাও নাযিল করেছেন।’
অন্য রিওয়াআতে রয়েছে, আল্লাহ্ প্রত্যেক রোগের ঔষধ সৃষ্টি করেছেন। অতএব তোমরা চিকিৎসা কর।
১৬. আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরকঃ
আল্লাহ হালাল করেছেন এমন বিষয়কে হারাম করা, আল্লাহ হারাম করেছেন এমন বিষয়কে হালাল করার ব্যাপারে কোন আলিম, পীর, নেতা বা দলের আনুগত্য করা। যেমনঃ সুদকে বৈধ করা, মীরাসের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান বন্টন করা, একাধিক বিবাহ নিষিদ্ধ করা, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা চালু করা ইত্যাদি। আল্লাহ্ বলেনঃ
اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ
‘তারা (ইয়াহুদ ও খৃস্টান সম্প্রদায়) আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিত পূরোহিতদেরকে এবং ঈসা ইবন মারইয়ামকে রব বানিয়ে নিয়েছে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন। আদি বিন হাতিম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো তাদের ‘ইবাদাত করিনা। তিনি বললেন, আচ্ছা তোমরা কি এরূপ করনা যে, আল্লাহর হালাল ঘোষিত বস্ত্তগুলিকে তারা যদি হারাম বলে দেয়, তোমরা কি তা হারাম বলে মেনে নেও, পক্ষান্তরে আল্লাহর হারাম ঘোষিত বস্ত্তগুলোকে তারা যদি হালাল বলে দেয়, তোমরা তা হালাল বলে মেনে নাও? আদী বললেন, হ্যাঁ ! তিনি বললেন, এটাইতো তাদের ’ইবাদাত।

আল্লাহ বলেনঃ
وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
‘যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর তবে তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে।’
প্রতিটি মু’মিনের কর্তব্য যাবতীয় ক্ষেত্রে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। রাজনৈতিক বা ধর্মীয় নেতাদের যে আদেশ পালনের মাধ্যমে আল্লাহ্ বা তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা হবে, সেক্ষেত্রে তাদের আদেশ নিষেধ মানা নিষিদ্ধ, শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ্ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
‘হে মুমিনগণ ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের নেতাদের। যদি তোমরা মতবিরোধ কর কোন বিষয়ে তাহলে মিমাংসার জন্য ফিরিয়ে নাও সে বিষয়টিকে আল্লাহ্ ও রাসূলের দিকে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক আল্লাহ্ ও পরকালে। এটা হলো সর্বোত্তম পন্থা এবং পরিণতির দিক থেকে খুবই সুন্দর।’
উক্ত আয়াতে লক্ষ্যনীয় যে, আল্লাহ্ أطيعوا অর্থাৎ আনুগত্য কর শব্দটি أولى الأمر এর পূর্বে উল্লেখ করেন নি। অথচ আল্লাহ্ এবং রাসূল শব্দদ্বয়ের পূর্বে أطيعوا শব্দটি উল্লেখ করেছেন। এতে একথাই সুস্পষ্ট হলো যে, আল্লাহর কথা বিনা বাক্যব্যয়ে, বিনা যুক্তি তর্কে মেনে নিতে হবে, আর রাসূলের কথা যদি সহীহ্ সূত্রে প্রমাণিত হয় বিনা বাক্যে, বিনা যুক্তিতর্কে মেনে নিতে হবে। কিন্তুأولى الأمر অর্থাৎ অন্য নেতাদের কথা ততক্ষণ মানা যাবে যতক্ষণ তা কুরআন সুন্নাহ্ পরিপন্থী নয়।
এ আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, কোন বিষয়ে মতবিরোধ হলে বিনা দলীলে কেউ কারো কোন কথা মানতে পারবে না, বরং সে ক্ষেত্রে সাধারণ ও নেতা নির্বিশেষে সকলকেই আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সহীহ্ সুন্নাহর দিকে ফিরে যেতে হবে।
قال ابن عباس : يوشك أن تنزل عليكم حجارة من السماء اقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وتقولون: قال ابوبكر وعمر.
কোন একটি মাসয়ালার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘আমি আশংকা করছি যে, তোমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ হবে। যেহেতু আমি বলি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আর তোমরা তার মুকাবিলায় বলঃ আবু বাকর, উমার বলেছেন।’’
আল্লাহ্ বলেনঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার পর কোন মুমিন পুরুষ এবং কোন মুমিন মহিলার সে ব্যাপারে কথা বলার কোন অধিকার নেই, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।’
আল্লাহ্ বলেনঃ
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا
‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়ে শিরক করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না, তবে দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহ অবস্থান করবে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
لاطاعة لمخلوق في معصية الخالق
‘স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করে সৃষ্টির আনুগত্য চলবে না’
عليكم بالسمع والطاعة وإن كان عبدا حبشيا وإذا أمرة معصية فلا سمع ولاطاعة
‘তোমাদের কর্তব্য (নেতার কথা) শুনা এবং মানা, যদিও নেতা হাবশী গোলাম হয়, আর যখন তোমাকে আদেশ করা হয় কোন গুনাহর কাজের, তখন শুনবেও না মানবেও না।’
অতএব সকল ক্ষেত্রেই আনুগত্য হবে একমাত্র আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের। এ ব্যাপারে সকল ইমাম ও মুজতাহিদ সুষ্পষ্ট ভাষায় তাঁদের মতামত প্রদানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে সঠিক গাইডলাইন দিয়েছেন। যেমনঃ
ইমাম আবু হানীফা (র.) বলেছেন, ‘‘কুরআন-সুন্নাহর দলীল না জেনে শুধু আমার কথা দিয়ে কেউ ফতোয়া দিলে তা হারাম হবে।’’
তিনি আরো বলেনঃ ‘‘হাদীস যদি সহীহ্ হয়, সেটাই আমার মাযহাব’’।
ইমাম শাফেয়ী (র.) বলেনঃ ‘‘কোন্ আকাশ আমাকে ছায়া দেবে, আর কোন্ যমীন আমাকে আশ্রয় দেবে, যদি আমার নিকট রাসূলের কোন বর্ণনা আসে, আর আমি এর বিপরীত কথা বলি’’।
এছাড়া তিনি আরো বলেনঃ
إذا صح الحديث بما يخالف قولى فاضربوا بقولى الحائط
‘যদি আমার কথার বিপরীত কোন সহীহ্ হাদীস হয়, তাহলে আমার কথাকে দেয়ালে ছুঁড়ে মারবে।’
ইমাম মালিক (র.) বলেনঃ
ما منا إلا راد ومردود عليه إلا صاحب هذا القبر صلى الله عليه وسلم
‘আমাদের প্রত্যেকেরই কোন কথা গ্রহণযোগ্য, আবার কোন কথা অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু এ কবরে যিনি শায়িত আছেন, তিনি ছাড়া’’। অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল কথাই গ্রহণযোগ্য।’
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (রা) বলেনঃ
عجبت لقوم عرفوا الإسناد وصحته يذهبون الى رأى سفيان والله تعالى يقول (فليحذر الذين يخالفون عن أمره أن تصيبهم فتنه أويصيبهم عذاب أليم )
‘আমি আশ্চর্য হই ঐ সম্প্রদায়ের জন্য যারা সনদ এবং তার বিশুদ্ধতা জানা সত্ত্বেও তা ছেড়ে দিয়ে সুফিয়ান ছাওরীর মতকে গ্রহণ করে অথচ আল্লাহ্ বলেন যারা তাঁর (রাসূলের) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, ফিতনা তাদেরকে পাবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’ ইমাম আহমাদ বলেনঃ তুমি কি জান, ফিতনা বলতে এখানে কী বুঝানো হয়েছে? ফিতনা বলতে এখানে শিরকে বুঝানো হয়েছে।’’
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া (র.) বলেন : ‘আমি তো একজন মানুষ মাত্র, আমি সঠিকও করতে পারি আবার ভুলও করতে পারি। অতএব আমার কথাকে কুরআন-সুন্নাহর মাপকাঠিতে যাচাই করে দেখবে’’।
হিদায়া গ্রন্থ প্রণেতা কামালুদ্দীন ইবন হুমাম (র.) বলেছেন ‘‘সঠিক মত হল যে, নির্দিষ্ট কোন মাযহাবের অনুসরণ আবশ্যকীয় নয়। কেননা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা ওয়াজিব করেছেন, একমাত্র তা-ই ওয়াজিব। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোন মানুষের উপর এটি ওয়াজিব করেন নি যে, সে উম্মাতের কোন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মাযহাব গ্রহণ করবে ও দীনের ব্যাপারে এ ব্যক্তিটি যা গ্রহণ বা বর্জন করবে, প্রতিটি বিষয়ে অন্ধের মত সে একমাত্র তা-ই অনুসরণ করে চলবে।’’
শায়খ ‘আব্দুল হক দেহলবী (র.) বলেনঃ
‘প্রকৃত অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ইমাম হচ্ছেন একমাত্র নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতএব তাঁকে ছাড়া অন্যের অনুসরণ যুক্তিযুক্ত নয়।’’
উপরিউক্ত আলোচনায় এ কথাই স্পষ্ট যে, কুরআন-সুন্নাহর বাইরে কারো অনুসরণ, আনুগত্য বৈধ নয়। যদি করা হয়, তা হলে তা হবে আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক।
১৭. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিরকঃ
আকাশ যমীন সহ সমস্ত মাখলুক আল্লাহর সৃষ্টি। অতএব এখানে আইন চলবে একমাত্র আল্লাহর এবং সমস্ত মাখলুক তাঁর আইন মেনে চলবে। কিন্তু আল্লাহর আইনের সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন যদি কেউ তৈরি করে তা হলো তা হবে আইন প্রণয়নে শিরক। আর যদি সে আইন মান্য করা হয়, তা হলে হবে আইন মানার ক্ষেত্রে শিরক।
আল্লাহ্ বলেনঃ
إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
‘হুকুম হবে একমাত্র আল্লাহরই। তিনি আদেশ করেছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করবে। এটাই হচ্ছে সুদৃঢ় দীন। কিন্তু বেশীর ভাগ লোকেরাই এটা জানে না।
أَلاَ لَهُ الْحُكْمُ
‘জেনে রাখ, তাঁরই জন্য একান্তভাবে সংরক্ষিত রয়েছে হুকুম দেয়ার অধিকার।’
এ অধিকার আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো আছে বলে বিশ্বাস করা বা মেনে নেয়াই হচ্ছে আইনের ক্ষেত্রে শিরক।
فاحكم بينهم بما أنزل الله
অতএব আইন কার্যকর কর তাদের (লোকদের) মাঝে আল্লাহর নাযিল করা বিধান অনুযায়ী।’
إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللّهُ
‘নিঃসন্দেহে আমি তোমার নিকট কিতাব নাযিল করেছি পরম সত্যতা সহকারে, যেন তুমি আল্লাহর দেখিয়ে দেয়া পদ্ধতিতে লোকদের উপর হুকুম চালনা করতে পার।’
অতএব আইনদাতা হলেন একমাত্র আল্লাহ্, আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে যদি আইনদাতা বলে বিশ্বাস করা হয় অথবা আল্লাহর আইনকে কোন কোন ক্ষেত্রে অকার্যকর বা অকল্যাণকর মনে করে মানুষের রচিত আইনকে কল্যাণকর বলে বিশ্বাস করা হয়, তা হলে এটা হবে শিরক। আর যদি মনে করা হয় যে, এ যামানায় ইসলামী আইন চলতে পারে না তবে তা হবে কুফুরী।
আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ
‘আর যারা আল্লাহ্ তা’য়ালা কর্তৃক নাযিলকৃত বিধান দ্বারা বিচার করেনা, তারাই হচ্ছে কাফির।’
অতএব সকল ব্যাপারেই হুকুমদাতা হলেন একমাত্র আল্লাহ্
أَلاَ لَهُ الْخَلْقُ وَالأَمْرُ
‘জেনে রাখ, সৃষ্টি এবং নির্দেশ তাঁরই।’
১৮. যাদুঃ (السحر)
যাদু দুটি কারণে শিরকের অন্তর্ভুক্তঃ
1. যাদু বিদ্যায় শয়তানকে ব্যবহার করা হয়। কোন কোন সময় শয়তান যে সব কাজ পছন্দ করে, সে সব কাজ সম্পাদন করে তার নৈকট্য লাভ করতে হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে শয়তান যেন যাদুকরের কাজ করে দেয় এবং তার উদ্দেশ্য হাসিলে সচেষ্ট হয়।
2. যাদু বিদ্যায় ইলমে গায়বের দাবী করা হয়, যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কেননা গায়ব একমাত্র আল্লাহই জানেন। যাদু করা শয়তানী কাজ। আল্লাহ্ বলেনঃ
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَـكِنَّ الشَّيْاطِينَ كَفَرُواْ يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ
‘সুলাইমান কুফরী করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা লোকদেরকে যাদুবিদ্যা শিখাতো’
عن أبى هريرة رضي الله عنه " من عقد عقدة ثم نفث فيها فقد سحر، ومن سحر فقد أشرك،
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত ‘যে ব্যক্তি গিরা লাগিয়ে এতে ফুঁ দিল, সে যাদু করল, আর যে যাদু করল সে শিরক করল’। যাদুকরকে হত্যা করার নির্দেশ রয়েছে।
عن بجالة بن عبيدة قال: كتب عمر بن الخطاب: "أن اقتلوا كل ساحروساحرة" قال: فقتلنا ثلات سواحر.
বাজালা ইবন ‘উবায়দা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু লিখিত ফরমান জারী করলেন যে, তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ ও নারীকে হত্যা কর। তিনি বলেন, অতপর আমরা তিনজন যাদুকর হত্যা করেছি।
১৯. গণকঃ
যদি কেউ যে কোন পন্থায় গায়ব জানার দাবী করে, আর মানুষকে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলে দেয়, তা হলে এটা হবে শিরক। কেননা গায়ব জানার একচ্ছত্র অধিপতি হলেন একমাত্র আল্লাহ্। তিনি বলেনঃ
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ
‘বল! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা রয়েছে, আল্লাহ্ ব্যতীত তাদের কেউ গায়ব সম্পর্কে জানে না।’
عن أبى هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال " من أتى كاهنا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم"
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট যায় আর সে যা বলে তা সত্য বলে বিশ্বাস করে, তা হলে সে কুফরী করল সে বিষয়গুলোর সাথে যা নাযিল করা হয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর।’’ গণক এর সংবাদকে সঠিক মেনে নেয়া, তার গায়ব জানাকে স্বীকার করা। এটাই হচ্ছে শিরক্।
২০. আররাফ : عراف ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যে দাবী করে যে, বিশেষ নিয়ম পদ্ধতির মাধ্যমে সে চোরাইমালের এবং হারানো মাল কোথায় আছে বলে দিতে পারে। অথবা গায়বের খবর জানে বলে দাবী করে। এটাও শিরকের অনুর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"من اتى عرافا فسأله عن شئي فصدقه لم تقبل له صلاة أربعين يوما"
‘যে ব্যক্তি কোন ‘আররাফের নিকট আসবে এবং তাকে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে আর তাকে সত্যবলে বিশ্বাস করবে, তাহলে চল্লিশদিন তার ছালাত কবুল হবে না’। عراف এর সংবাদকে সত্য বলে বিশ্বাস করা মানেই হলো, সে গায়ব জানে বলে মেনে নেয়া, আর এটাই শিরক।
২১. জ্যোতি:শাস্ত্র ঃ
যে জ্যোতির্বিদ্যা দ্বারা শুধুমাত্র চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রের সাহায্যে সময় ও দিক নির্ণয় করা হয়, তা দোষনীয় নয়। ঠিক এমনিভাবে যে জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোকে মাহাকাশের বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বের সন্ধান লাভ করা হয়, তা দোষণীয় নয়। কিন্তু যে জ্যোতির্বিদ্যা দ্বারা আকাশের বিভিন্ন অবস্থা থেকে জাগতিক ঘটনাবলীর প্রমাণ দেয়া হয় বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তা হবে শিরক, কেননা এতে ‘ইলমে গায়বের দাবী করা হয়, যা আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। যেমনঃ জ্যোতিষরা বলেছিল ২০০৫ সনের ১লা মার্চ দুপুর দু’টার সময়ে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। অনেকেই তা বিশ্বাস করে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করছিল। অথচ কুরআন সুন্নাহ্ বলে কিয়ামাতের ইলম একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। কেউই এটা জানার দাবী করা শিরক।
আল্লাহ বলেনঃ
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي
‘তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করবে কিয়ামাত সম্পর্কে, কিয়ামাত কবে হবে? বল! এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের নিকটই রয়েছে।’ কখনও দেখা যায়, মানুষের হাত দেখে তার ভবিষ্যৎ ভালমন্দ বলে দেয়। টিয়া পাখি দিয়ে ইনভেলাপ তোলে, তাতে রক্ষিত কাগজের লেখা দ্বারা ভবিষ্যতের ভালমন্দের সংবাদ দিয়ে দেয়। এটা সম্পূর্ণ শিরক।
২২. দুনিয়া পরিচালনা করার ক্ষেত্রে শিরকঃ
এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, বিভিন্ন অঞ্চল, শহর পরিচালনার জন্য দায়িত্বশীল ওলী রয়েছেন তাদেরকে বলা হয় কুত্ব (قطب)। এ অঞ্চল ও শহরের ভালমন্দ তাঁরা দেখে থাকেন। অতএব এ অঞ্চল বা শহরে ভালভাবে বাস করতে হলে বা এ এলাকা নিরাপদে পার হতে হলে ঐ কুতবের নিকট সাহায্য চাইতে হবে। এ ধরণের আকীদা পোষণ করা শিরক।
আল্লাহ্ বলেনঃ
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
‘আরও এই যে অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় প্রার্থনা করত। ফলে তারা জিনদের অহংকার আরো বাড়িয়ে দিত।
কোন কোন মুফাসসিরرهقا অর্থ বলেছেন ভয়, গুনাহ্। তখন অর্থ হবে জিনেরা তাদের ভয় বা গুনাহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। জাহেলী যুগের লোকদের এ ধরণের আকীদা ছিল, তাই তারা কোন স্থান বা ময়দান অতিক্রম করার সময় তাদের আকীদা অনুযায়ী সে স্থান বা ময়দানের কুতবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করত।
কোন কোন লেখক লিখেছেন, মানব জগতে বার প্রকার ওলী-আওলিয়া রয়েছে। তারা হল-
1. কুতুবঃ তাকে কুতুবুল আলম, কুতুবুল আকবার, কুতুবুল ইরশাদ ও কুতুবুল আকতাবও বলা হয়। আলমে গায়েবের মধ্যে এ কুতুবকে আবদুল্লাহ্ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তার দুজন উযীর থাকেন। যাদেরকে ইমামাইন বলা হয়। ডানের উযীরের নাম আবদুল মালিক। বামের উযীরের নাম আবদুর রব। এছাড়া আরো বার জন কুতুব থাকেন, সাত জন সাত একলীমে থাকেন, তাদেরকে কুতুবে একলীম বলা হয়। আর পাঁচ জন ইয়ামানে থাকেন, তাদেরকে কুতুবে বেলায়েত বলা হয়। এই নির্দিষ্ট কুতুবগণ ব্যতীত অনির্দিষ্টভাবে প্রত্যেক শহরে এবং প্রত্যেক গ্রামে থাকেন এক একজন করে।
2. ইমামাইন ঃ ব্যাখ্যা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
3. গাওসঃ গাওস মাত্র একজন থাকেন। কেউ কেউ বলেছেন, কুতুবকেই গাওস বলা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, কুতুব আর গাওস এক নয়। গাওস ভিন্ন। তিনি মক্কা শরীফে থাকেন।
4. আওতাদঃ আওতাদ চারজন। পৃথিবীর চার কোণে চার জন থাকেন।
5. আবদালঃ আবদাল থাকেন চল্লিশ জন।
6. আখয়ারঃ তারা থাকেন পাঁচশ জন কিংবা সাতশ জন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা ভ্রমণ করতে থাকেন।
7. আবরারঃ অধিকাংশ বুযুর্গানে দীন আবদালগণকেই আবরার বলেছেন।
8. নুকাবাঃ নুকাবা আলী নামে ৩০০ জন পশ্চিম দেশে থাকেন।
9. নুজাবাঃ নুজাবা হাসান নামে ৭০ জন মিসরে থাকেন।
10. আমূদঃ আমূদ মুহাম্মাদ নামে চারজন পৃথিবীর চার কোণে থাকেন।
11. মুফাররিদঃ গাওসই উন্নতি করে ফারদ বা মুফাররিদ হয়ে যান। আর ফারদ উন্নতি করে কুতুবুল অহদাত হয়ে যান।
12. মাকতুমঃ মাকতুম শব্দের অর্থ লুকায়িত। অর্থ যেমন তারাও তেমনি লুকায়িত থাকেন।
এ ধরণের আকীদা পোষণ করা রুবুবীয়তের ক্ষেত্রে শিরক।
২৩. হুলুলের (حلول) এর ক্ষেত্রে শিরক্ঃ
এ ধারণা পোষণ করা যে, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে অবস্থান করছেন। ‘আল্লাহর সাথে মানবাত্মার মিলন’। সাধারণত বাতিল সূফীরা এ ধারণা পোষণ করে থাকে। তাদের মধ্যে মহীউদ্দীন ইবনু আরাবী (৫৬০-৬৩৮ হি. দামেশ্ক) বলেছেঃ রবই আবদ, আবদই রব। তাইতো আল হুসাইন বিন মনসূর হাল্লাজ বলেছেঃ আনাল হক, আনাল হক। এ কথা বলার জন্য ৩০৯ হিজরী ৬ই জিলকা’দা মঙ্গলবার তাকে হত্যা করা হয়।
আল হুসাইন বিন মনসূর পারস্যের বায়দা শহরের অধিবাসী। লালিত পালিত হয়েছে ওয়াছিত এবং ইরাকে। কেউ কেউ তাকে অতিরিক্ত সম্মান দেখায় (যেমন সূফী জামা‘আত) আবার কেউ কেউ তাকে কাফির বলে আখ্যায়িত করে (যেমন তাওহীদ পন্থী দল)। তার দাবী ছিল আল্লাহ্ এমনভাবে তার সাথে মিশে গেছে যে, তাকে দেখলে আল্লাহকে দেখা যায়। আবার আল্লাহকে দেখলে তাকে দেখা যায়। সে বলতো-
فإذا أبصرتنى أبصرته ، وإذا أبصرته أبصرتني.
যখন তুমি আমাকে দেখবে, তাকে (আল্লাহকে) দেখতে পাবে, আর যখন তুমি তাকে (আল্লাহকে) দেখবে আমাকে দেখতে পাবে।
২৪. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসা ল্লামের সৃষ্টির আকিদায় শিরক্ঃ
একদল লোক এ আকীদা পোষণ করে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ নূর দিয়ে তৈরী করেছেন, অন্যান্য মানুষের মত মাটি দিয়ে তৈরি করেননি। তাই তারা বলে থাকে মুহাম্মাদ খোদাভী নেহী, খোদা ছে জুদা ভী নেহী। অর্থাৎ মুহাম্মাদ খোদা নন তবে খোদা থেকে পৃথকও নন। অথচ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেনঃ
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ
‘বল! আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ আমার প্রতি ‘ওহী পাঠানো হয় একথা বলে যে, তোমাদের ইলাহ্ একজনই।
مَا هَذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا تَشْرَبُونَ- وَلَئِنْ أَطَعْتُم بَشَرًا مِثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ
‘(কাফিররা বলল) এতো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। তোমরা যা খাও, সেতো তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিতান্তই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এছাড়াও সূরা আশ্ শুয়া’রা ১৫৪, সূরা হামীম সাজদা এর ৬ নং আয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি একজন মানুষই। অন্যান্য মানুষের সৃষ্টি যে উপাদান দিয়ে। তাঁরও সৃষ্টি সে উপাদান দিয়েই। তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তিনি আল্লাহর ওহী প্রাপ্ত ‘রাসূল’।
আল্লাহ্ মানব জাতির মাঝে রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য হতেই। আল্লাহ্ বলেন:
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ ...........
‘তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন ...............’
মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীম খালীলুল্লাহ্ (আ.) ও তাঁর সুযোগ্য ছেলে ইসমাঈল (আ.) সহ বাইতুল্লাহ তৈরী করার পর আল্লাহর নিকট যে দু‘আগুলো করেছিলেন, তম্মধ্যে একটি দু‘আ হল-
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ .............
‘হে আমার রব! তাদের মাঝে তাদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করবেন .................।’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
والناس بنو أدم وخلق الله آدم من تراب.
‘সকল মানুষ আদম সন্তান, আর আল্লাহ্ আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
যারা বলে আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর নূর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তারা দলীল হিসেবে পেশ করে নিম্নোক্ত আয়াত ও হাদীছ।
........ قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ- يَهْدِي بِهِ اللّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلاَمِ .........
‘....... আল্লাহর নিকট হতে নূর এবং স্পষ্ট কিতাব তোমাদের নিকট এসেছে। এর দ্বারা আল্লাহ্ শান্তির পথে পরিচালিত করেন তাদেরকে যারা তার সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে............।’
তাদের মতে এখানে নূর বলতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং তিনি নূরের তৈরী। তিনি হলেন نور مجسم অর্থাৎ গোটী শরীরটাই তাঁর নূর। আবার তারা নিজেরাই মতবিরোধ করে কেউ বলে, তিনি হলেন আল্লাহর যাতী নূরের তৈরী, কেউ বলে সিফাতী নূরের তৈরী। তবে সঠিক এবং নির্ভুল কথা হলো তিনি হলেন আদমসন্তান। অন্যান্য আদম সন্তানের সৃষ্টি যে প্রক্রিয়ায় তাঁর সৃষ্টিও সে প্রক্রিয়ায়। অন্যান্য মানুষের যেমন দুঃখ বেদনা, হাসিকান্না রয়েছে, তাঁরও তেমনি রযেছে। অন্য মানুষের যেমন মানবিক চাহিদা থাকে, তেমনি তাঁরও রয়েছে। তবে অন্যান্য মানুষের ন্যায় সাধারণ মানুষ নন তিনি। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রাসূল, সমস্ত নবী রাসূলের লীডার, সর্বশেষ রাসূল। তাঁর সাথে কারো তুলনা করা যায়না।
উক্ত আয়াতের জবাবে বলা যায় এখানে নূর বলতে কুরআনকেই বুঝানো হয়েছে। নূরের পরে ওয়াও আতফ তাফসীরী, অর্থাৎ ওয়াওটি এসে কিতাবুম মুবীন দ্বারা নূর এর ব্যাখ্যা করেছে। কিতাবুম মুবীন এবং নূর একই বস্ত্ত। এর একটি বড় প্রমাণ হলো, পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ বলেছেন يهدي به الله অর্থাৎ এর দ্বারা আল্লাহ্ পথ দেখান। এখানে ‘’ সর্বনামটি একবচন ব্যবহার করেছেন। যদি নূর এবং কিতাবুম মুবীন আলাদা দু’টি বস্ত্ত হতো, তা হলে দ্বিবচন সর্বনাম ব্যবহার করে বলতেন يهدي بهما الله ।
যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া হয় যে, এখানে নূর বলতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বুঝানো হয়েছে, তা হলেও এটা প্রমাণ করেনা যে, তিনি নূরের তৈরী। বরং আরবের অন্ধকারকে দূরীভূত করার জন্য তিনি নূর বা আলো হিসেবে এসেছিলেন। তিনি ঈমানের আলো জ্বালিয়ে জাহেলিয়াতের অন্ধকারকে দূর করেছিলেন। তাই তাঁকে নূর বলা হয়েছে।
২৫. গাইরুল্লাহ্র নামে শপথ করাঃ
কারো নামে শপথ করার দু’টি উদ্দেশ্য থাকে। (ক) যার নামে শপথ করা হচ্ছে, তার অধিক গুরুত্ব বুঝানো। (খ) বিষয়টিকে শক্তিশালী করা।
আল্লাহ্ হলেন সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে ক্ষমতাবান। অতএব শপথ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর নামে। এতে বিষয়টিও সবচেয়ে শক্তিশালী হবে। অন্য কারো নামে শপথ করা হবে শিরক। তবে আল্লাহর জন্য যে কোন মাখলুকের নামে শপথ করা বৈধ। যেমন আল্লাহ্ তীন, যায়তুন, সূর্য ইত্যাদির নামে কসম খেয়েছেন।
عن عمربن الخطاب رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "من حلف بغير الله فقد كفر أو أشرك"
‘উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে শপথ করল সে কুফর বা শিরকের কাজ করল।
২৬. طيرة কুলক্ষণে বিশ্বাস করাঃ অর্থাৎ কোন কাজ করতে গিয়ে অথবা কোথাও রওয়ানা হতে গিয়ে কোন কিছু দেখে বা কোন কথা শুনে অলক্ষী বা কুলক্ষণ বা অশুভ মনে করে সে কাজ না করা বা সফরে না গিয়ে ফিরে আসা। যেমন বাড়ি থেকে বের হয়ে খালি কলসি, ভাঙ্গা কলসি দেখল, বামদিকে পাখি উড়ে যেতে দেখল, মারামারি করতে দেখল, অশোভনীয় কিছু দেখল বা মনে আঘাত লাগার মত কোন কথা শুনল। আর এগুলোকে অশুভ বা কুলক্ষণ মনে করা, সফরে গেলে ক্ষতি হবে বলে বিশ্বাস করা, এ সবটাই শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আরব দেশে নিয়ম ছিল, কোথাও তারা রওয়ানা হলে পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করত। পাখি ডান দিক উড়ে গেলে এটাকে শুভ লক্ষণ এবং বাম দিক উড়ে গেলে এটাকে অশুভ লক্ষণ মনে করত। এগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه مرفوعا " الطيرة شرك الطيرة شرك"
‘আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত ‘কুলক্ষণ মনে করা শিরক, কুলক্ষণ মনে করা শিরক’।
عن عبد الله بن عمرو "من ردته الطيرة عن حاجته فقد أشرك قالوا: فما كفارة ذلك ؟ قال: أن تقول: أللهم لاخير إلا خيرك ولاطير إلا طيرك ولا إله غيرك"
‘আব্দুল্লাহ্ বিন ‘আমর রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু হতে বর্ণিতঃ কুলক্ষণ যাকে স্বীয় প্রয়োজন হতে ফিরিয়ে দেয়, সে অবশ্যই শিরক করল। তারা (সাহাবা) জিজ্ঞাসা করল, এর কাফ্ফারা কী হবে? তিনি বললেন, তুমি বলবেঃ হে আল্লাহ্ ! তোমার কল্যাণ ব্যতীত আর কোন কল্যাণ নেই, তোমার পক্ষ হতে অকল্যাণ ব্যতীত আর কোন অকল্যাণ নেই এবং তুমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই।
عن أبى هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "لاعدوى ولاطيرة ولاهامة لاصفر"
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহ ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, বাড়িতে পেঁচা আসাকে অশুভ লক্ষণ মনে করা এবং সফর মাসকে অশুভ মনে করা ইসলামে নেই।’’
জাহেলী যুগের লোকদের বিশ্বাস ছিল, সফর মাস অধিক রোগ শোক এবং ফিতনা ফাসাদের মাস। ইসলাম এ বিশ্বাসকে বাতিল করে দিয়েছে। অথবা সফর বলতে বুঝানো হয়েছে পেটে এক প্রকার কীট সাপের মত, যাকে আমরা লম্বা কৃমিও বলতে পারি। তৎকালীন আরববাসীদের বিশ্বাস ছিল, মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে তখন এ কীটটি তার পেটে জন্ম হয় এবং তাকে কষ্ট দেয়। এ কীটটি আবার সংক্রামিত হয়। ইসলাম এ ধারনাকে অসার করে দিয়েছে।
এগুলো জাহেলী যুগের ‘আকীদা ছিল, ইসলাম এ ‘আকীদাকে বাতিল বলে আখ্যায়িত করেছে। এগুলো যদি অকল্যাণের বাস্তব কারণ মনে করে, তা হবে শিরক। আর যদি অকল্যাণের বাস্তব কারণ মনে না করে, শুধু অকল্যানের আলামত মনে করে, তা হলে শিরকে পৌঁছে দেয়ার কারণ হবে।
২৭. রোগ নিজে নিজে সংক্রমিত হয় বলে বিশ্বাস করাঃ রোগ নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারেনা। বরং রোগের জীবানু মশা, মাছি, তেলাপোকা, বাতাস, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর এতে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। রোগ নিজে নিজে সংক্রমিত হয়, এটা ছিল জাহেলী মুশরিকদের ‘আকীদা। বিভিন্ন মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার বিশ্বাস শিরক নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
أذا سمعتم الطاعون بأرض فلا تدخلوها وإذا وقع بأرض وأنتم فيها فلا تخرجوا منها.
‘যখন তোমরা কোন এলাকায় মহামারির কথা শুনতে পাও। তাহলে সে এলাকায় প্রবেশ করবে না। আর যদি এমনকোন এলাকায় মহামারি দেখা দেয় যেখানে তোমরা অবস্থান করছ, তা হলে সে এলাকা থেকে বের হবে না।’ মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে, এমন এলাকায় প্রবেশ করলে যদি কোন কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে, তাহলে মনে করবে এ এলাকায় প্রবেশ করার কারণেই রোগাক্রান্ত হয়েছে। আবার মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, এমন এলাকা থেকে বের হওয়ার পর যদি রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে যায় তাহলে মনে করবে এ এলাকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণেই বেঁচে গেছে। এ ধরণের খারাপ ‘আকীদা থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত হাদীসের আদেশটি প্রদান করেছেন। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فر من المجذوم كما تفر فرارك من الأسد.
‘কুষ্ঠ রোগ থেকে এমন পলায়ন কর যেমন সিংহ হতে পলায়ন কর।’
জাহেলী যুগের লোকেরা কোন উট খুজলী রোগে আক্রান্ত হলে সেটিকে অন্যান্য উট থেকে আলাদা করে রাখত এ ভয়ে যে এর কারণে অন্যান্য উটগুলোও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে। ইসলাম এ ধারণাকে বাতিল হরে দিয়েছে।
عن ابي هريرة رض قال إن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا عدوى فقام أعرابي فقال ارايت الابل تكون في الرمال أمثال الظباء فياتيها البعير الأجرب فتجرب قال النبي صلى الله عليه وسلم فمن أعدى الأول.
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোগ সংক্রমণ নেই। এক বেদুঈন উঠে দাঁড়িয়ে বললো, তাহলে এ ব্যাপারে আপনার কি রায় যে, উট চারণ ভূমিতে হরিণের মতো (সুস্থ ও সুন্দর) থাকে। এসব উটের মাঝে একটি চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে মিশে এবং সবগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দেয়? নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, প্রথম উটটির চর্মরোগ আসলো কোথা থেকে?
عن أبي هريرة رض : أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال "لا عدوى"
আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোগ নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না।
২৮. নিম্ন জগতের উপর উর্ধ্ব জগতের গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাসী হওয়া ঃ জাহেলী যুগের লোকদের বিশ্বাস ছিল আকাশে অমুক তারকা উদিত হলে তার প্রভাবে যমীনে বৃষ্টি হয়, অমুক তারকা উদিত হলে খেজুর পাকা শুরু হয় ইত্যাদি।
عن زيد بن خالد رضي الله عنه قال خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الحديبية فأصابنا مطر ذات ليلة فصلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الصبح ثم أقبل علينا بوجهه فقال أتدرون ماذا قال ربكم قلنا الله ورسوله أعلم فقال قال الله أصبح عبادى مؤمن بى وكافر بى فأما من قال مطرنا برحمة الله وبرزق الله وبفضل الله فهو مؤمن بى وكافر بالكوكب وأمامن قال مطرنا بنجم كذا فهو مؤمن بالكوكب كافربى-
‘যায়েদ ইবন খালিদ (রা.) বলেন, আমরা হুদাইবিয়ার বৎসর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হলাম, এক রাত্রিতে বৃষ্টি আমাদেরকে পেল, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সকালের ছালাত আদায় করলেন তারপর আমাদের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব কী বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ বলেছেন, আমার বান্দারা প্রাতকাল করেছে, কেউ আমার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে আবার কেউ আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে। যে বলেছে আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর রিয্ক দ্বারা এবং আল্লাহর অনুগ্রহে সে আমার প্রতি বিশ্বাসী, তারকার উপর অবিশ্বাসী। আর যে বলেছে, আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে অমুক তারকার কারণে সে তারকায় বিশ্বাসী হয়েছে, আমার প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছে। অপর বর্ণনায় রয়েছে ’’مطرنا بنؤكذا’’ অমুক তারকা উদিত হওয়ার কারণে আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।
মূলত: বৃষ্টি হওয়া না হওয়া সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়ে থাকে। আসমান যমীনে যা-ই ঘটে, সবটা আল্লাহর ইচ্ছায়ই ঘটে, অন্য কারো হাত আছে বলে বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ বলেন:
أَأَنتُمْ أَنزَلْتُمُوهُ مِنَ الْمُزْنِ أَمْ نَحْنُ الْمُنزِلُونَ-أَفَرَأَيْتُمُ الْمَاء الَّذِي تَشْرَبُونَ
‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছ? তোমরা কি মেঘমালা হতে তা অবতীর্ণ কর না আমি অবতীর্ণ করি।’ যদি কেউ প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বাস করে যে, অমুক তারকাই বৃষ্টিদাতা তা হলে শিরক হবে। আর যদি বিশ্বাস করে অমুক তারকা উদিত হওয়া বৃষ্টি হওয়ার আলামত তা হলে শিরক হবে না। তবে শিরকে নিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
(২৯) বিপদে আপদে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সন্বোধন করা বা ডাকা যে বিপদ আপদ দূর করার ক্ষমতা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ রাখে না ঃ মুমিন বিপদে আপদে মুসীবতে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকে। তারা বিশ্বাস করে, বিপদ আপদ দূর করার ক্ষমতা আল্লাহ্ ছাড়া কেউ রাখেনা। আল্লাহ্ বলেনঃ
وَإِن يَمْسَسْكَ اللّهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ
‘আল্লাহ্ তোমাকে দুঃখ, দুর্দশা দিলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই।’
হ্যাঁ বাহ্যিক ভাবে বিপদে পড়ে কাউকে ডাকা দোষণীয় নয়। তবে বিপদে পড়ে ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া খাজাবাবা ইত্যাদি বলে সম্বোধন করে ডাকা শিরক। আবার কেহ আল্লাহর সাথে রাসূলকে মিলিয়ে বলে। ইয়া আল্লাহ্ ইয়া রাসূলাল্লাহ। এ ধরণের বলা পরিপূর্ণ শিরক।
(৩০) নবী, রাসূল, ওলী সর্বত্র হাজির হতে পারেন বলে বিশ্বাস করা ঃ যেমন মীলাদ মাহফিলে রাসূল হাজির হন, বিপদে পড়লে ওলীরা এসে সাহায্য করেন। এ ধরণের বিশ্বাস শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ যে ক্ষমতা তাঁর নেই সে ক্ষমতা তাঁর জন্য সাব্যস্ত করা হচ্ছে। কেউ মৃত্যু বরণ করার পর হাজির হওয়া, সাহায্য করা, ডাকে সাড়া দেয়া ইত্যাদি কোন ক্ষমতাই রাখেন না। আল্লাহ্ বলেন-
إِن تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ
‘তোমরা তাদেরকে (মৃতদেরকে) আহবান করলে তারা তোমাদের আহবান শুনবে না। আর শুনলেও তোমাদের আহবানে সাড়া দিবে না।’
إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَاء وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ
‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান, যারা কবরে রয়েছে, তুমি তাদেরকে শুনাতে পারবে না।’
(২) আশ্শিরকুল আসগার বা ছোট শিরকঃ
এটিকে আশশিরকুল খফী বা গোপন শিরকও বলা হয়। এ ধরনের শিরকের দ্বারা তাওহীদে ত্রুটি সৃষ্টি হয় এবং কখনও কখনও বড় শিরক পর্যন্ত পৌছে দেয়। এ ধরনের শিরক থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন:
فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করবে না।’
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন উক্ত আয়াত বড় ছোট দু’ধরনের শিরককেই অন্তর্ভুক্ত করেছে।
عن أبي بكر رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال " الشرك أخفي من دبيب النمل"
আবু বাকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: শিরক হলো পিপিলিকার ধীরগতির চলার চেয়েও আরো গোপন।
قال ابن عباس رضي الله عنهما " الشرك أخفي من دبيب النمل على صفاة سوداء في ظلمة الليل"
আব্দুল্লাহ ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: শিরক হল রাতের আঁধারে কালো মসৃন পাথরের উপর পিপিলিকার মন্থর গতির চেয়ে আরো সূক্ষ।
নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলো ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্তঃ
১.রিয়া (الرياء) : অর্থাৎ লোক দেখানো কোন কাজ করা। আল্লাহ বলেনঃ
فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا
‘অতএব, যে ব্যক্তি তার রবের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার রবের ‘ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘الرياء شرك’’ ‘রিয়া হল শিরক’
عن أبي هريرة مرفوعا " قال الله تعالى : " أنا أغنى الشركاء عن الشرك ، من عمل عملا أشرك معي فيه غيري تركته وشركه"
আবু হুরাইরা (রা) হতে মরফু সূত্রে বর্নিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেন, শিরকের ব্যাপারে আমি শরীকদের অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি তার ‘আমলে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আমি তাকে এবং তার শরীককে বর্জন করে থাকি।’
عن أبي سعيد مرفوعا " ألا أخبركم بما هو أخوف عليكم من المسيح الدجال؟ قالوا: بلى يا رسول الله : قال الشرك الخفي : يقوم الرجل فيصلي فيزين صلاته لما يرى من نظر رجل"
আবু সাঈদ (রা) হতে মরফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আমি [রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কি তোমাদেরকে সংবাদ দেবনা এমন বিষয় সম্পর্কে, যা তোমাদের উপর মসীহ দাজ্জাল অপেক্ষা অধিক ভীতিপ্রদ। তারা (সাহাবা রাঃ ) বললেন, হাঁ তিনি বললেনঃ তা শিরকে খফী। এক ব্যক্তি এ জন্যই তার ছালাতকে সুন্দর করে আদায় করে যে, তা অপর কোন ব্যক্তি দেখছে।
عن محمود بن لبيب أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال " إن أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر " قالوا : وما الشرك الأصغر يارسول الله؟ قال: "الرياء يقول الله تعالى يوم القيامة إذا جازى الناس بأعمالهم إذهبوا إلى الذين كنتم تراؤون في الدنيا فانظروا هل تجدون عندهم جزاء؟"
মাহমুদ বিন লাবীদ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদের উপর যে বিষয়ের সবচেয়ে বেশি ভয় করছি তা হল, ছোট শিরক। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, ছোট শিরক কোনটি? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, রিয়া। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামাতের দিন যখন লোকদেরকে তাদের কাজের বিনিময় দেবেন, তখন তাদের বলবেন, দুনিয়ায় যাদেরকে দেখাবার জন্য কাজ করেছ, দেখ তাদের নিকট কোন বিনিময় পাও কিনা?
عن محمود بن لبيب قال : خرج النبى صلى الله عليه وسلم فقال : يا أيها الناس إياكم وشرك السرائر، قالوا يارسول الله وما شرك السرائر؟ قال " يقوم الرجل فيصلي فيزين صلاته جاهدا لما يرى من نظر الرجل إليه فذلك شرك السرائر"
মাহমুদ বিন লাবীদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে বললেনঃ হে লোকেরা, তোমরা গোপন শিরক থেকে বেঁচে থাক, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, গোপন শিরক কোনটি? তিনি বললেন, একজন লোক ছালাত আদায় করে খুব সুন্দর করে এ কারণে যে, অপর কোন ব্যক্তি তার দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই হল গোপন শিরক।
عن شداد بن أوس مرفوعا " من صلى يرائي فقد أشرك ومن صام يرائي فقد أشرك ومن تصدق يرائي فقد أشرك"
শাদ্দাদ বিন আউস হতে মরফূ সূত্রে বর্ণিতঃ যে ব্যক্তি দেখাবার জন্য ছালাত আদায় করল, সে শিরক করল, যে ব্যক্তি দেখাবার জন্য রোযা রাখল, সে শিরক করল, যে ব্যক্তি দেখাবার জন্য দান করল, সে শিরক করল।
عن شداد بن أوس قال : كفا نعد الرياء على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم الشرك الأصغر"
‘শাদ্দাদ বিন আউস বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা রিয়াকে ছোট শিরকের হিসেবে গণনা করতাম।’
রিয়া মূলতঃ মুনাফিকের বৈশিষ্ট। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلا
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, আর তিনি তাদেরকে তাদের প্রতারণার শাস্তি দেবেন, যখন তারা ছালাত আদায়ে দাঁড়ায় আলস্যভরে দাঁড়ায়, লোকদেরকে দেখায়, মুলতঃ তারা আল্লাহকে খুবই কম স্বরণ করে।’
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ-الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ-الَّذِينَ هُمْ يُرَاؤُونَ-وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে গাফেল, যারা লোকদেরকে দেখায় এবং নিত্য ব্যবহার্য বস্ত্ত অন্যদেরকে দেয় না।’ হাদীছে আছে-
أن يسير الرياء شرك
‘‘নিশ্চয় সামান্য রিয়াও শিরক’’
২.السمعة সুখ্যাতি , সুনাম ঃ
অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ নসীহত ইত্যাদি শুনিয়ে উদ্দেশ্য সুনাম অর্জন। লোকেরা তা শুনে তার ভূয়সী প্রশংসা করবে। হাঁ যদি এ ধরণের গুণাবলী বললে মনে আনন্দ না জাগে, এমনটি কামনা তার না থাকে বা এধরনের কথায় সে উৎফুল্ল বোধ না করে , তাহলে এতে তার কোন পাপ হবে না। যেমন হাদীসে আছেঃ
عن أبي ذر رضي الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم " أنه سئل عن الرجل يعمل العمل من الخير يحمده الناس عليه فقال : تلك عاجل بشرى المؤمن"
‘আবুযার (রা) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে কোন ভালকাজ করে আর লোকেরা তার একাজের প্রশংসা করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , এটা মুমিনের আগাম সুসংবাদ।’
رياء ও سمعة এর কারণে আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণ যোগ্য হবে না , তা যতবড় আমলই হউকনা কেন, বরং ঐ সমস্ত আমল তার জন্য কঠিন শাস্তির কারণ হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
" إن أول الناس يقضى يوم القيامت عليه رجل أستشهد فأتي به فعرفه نعمه فعرفها قال : فما عملت فيها قال : قاتلت فيك حتى استشهدت قال: كذبت ولكنك قاتلت لأن يقال جرئ فقد قيل ثم أمربه فسحب على وجهه حتى ألقي في النارورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القرآن فأتي به، فعرفه نعمه فعرفها قال: فما عملت فيها؟ قال تعلمت العلم وعلمته وقرآت فيك القرآن قال: كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال عالم . وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل، ثم أمربه فسحب على وجهه حتى ألقي في النار. ورجل وسع الله عليه وأعطاه من أصناف المال كله فأتي به فعرفه نعمه فعرفها قال: فما عملت فيها قال: ما تركت من سبيل تحب أن ينفق فيها إلا أنفقت فيها لك، قال: كذبت. ولكنك فعلت ليقال هو جواد فقد قيل. ثم أمربه فسحب على وجهه ثم ألقي في النار."
‘‘নিশ্চয় কিয়ামাতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার হবে, সে হল ঐ ব্যক্তি যে শাহাদাত বরণ করেছে। তাকে আনা হবে, তাকে তার (আল্লার দেয়া) নেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করবেন, সে তা অবহিত হবে। তিনি (আল্লাহ ) জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি এতে কী করেছ? সে বলবেঃতোমার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছি। আললাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো এজন্য যুদ্ধ করেছ যে, তোমাকে বীর বলা হবে, আর তা তো বলা হয়েছে, তার পর তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে টেনে হেঁচড়ে আনার নির্দেশ দেয়া হবে। তার পর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার পর আনা হবে ঐ ব্যক্তিকে যে ইলম শিখেছে এবং শিখিয়েছে, কুরআন পড়েছে, তাকে তাঁর দেয়া নেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করবেন, সে অবহিত হবে। তিনি জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এতে কী করেছ? সে বলবে, ‘ইলম অর্জন করেছি, তা শিখিয়েছি এবং তোমার পথে কুরআন পড়েছি, আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ , বরং তুমি ‘ইলম শিখেছ, যেন তোমাকে ‘আলিম বলা হয়। আর কুরআন পড়েছ যেন বলা হয় যে, সে একজন ক্বারী আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে ফেলার নির্দেশ দেয়া হবে এবং জাহান্নামে ফেলা হবে। তারপর আনা হবে ঐ ব্যক্তিকে যাকে আল্লাহ সম্পদের প্রাচুর্য দিয়েছেন এবং সকল প্রকারের সম্পদ দান করেছেন। আল্লাহ তাকে অবহিত করবেন তাঁর দেয়া সকল নেয়ামত সম্পর্কে, সে অবহিত হবে। আল্লাহ বলবেন, এ ক্ষেত্রে তুমি কী আমল করেছ? সে বলবে, আপনি যে পথে খরচ করাটা পছন্দ করেন , এমন সকল পথেই আপনার সন্তুষ্টির জন্য খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি তো এজন্যই খরচ করেছ যে, যেন বলা হয়, সে একজন দানশীল ব্যক্তি। আর তা তো বলা হয়েছে। তারপর তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم من الرجل يقاتل شجاعة ويقاتل حمية ويقاتل رياء أي ذلك في سبيل الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله
‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল এক ব্যক্তি বীরত্বের জন্য লড়াই করে। আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে অহমিকার জন্য, আরেকজন যুদ্ধ করে দেখাবার জন্য কোনটা আল্লাহর পথে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহর কালেমাকে উঁচু রাখার জন্য যে যুদ্ধ করে সেটাই হবে আল্লাহর পথে’
অতএব প্রত্যেকটি আমলই হতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। লোক দেখানো বা সুখ্যাতির মনোভাব রাখার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء
‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে।’
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ-لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘বল, নিশ্চয় আমার ছালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মৃত্যু একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি রাববুল আলামীন , যার কোন শরীক নেই , এ ঘোষণা দেয়ার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলিমদের প্রথম মুসলিম।’
3. ‘আমলের দ্বারা দুনিয়া লাভ করা উদ্দেশ্য হওয়াঃ
যে আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া উচিত, সে আমলের দ্বারা শুধু দুনিয়ার কল্যাণ চাওয়া। আল্লাহ বলেনঃ
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لاَ يُبْخَسُونَ-أُوْلَـئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
‘যারা দুনিয়ার জীবন এবং এর চাকচিক্য কামনা করে, আমি তাদেরকে দুনিয়ায় তাদের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেব, এবং এতে তাদের কোন কমতি করা হবেনা । এরাই হল সেসব লোক যাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই, তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই ধ্বংস হয়ে গেছে, আর যা তারা করত সবই বাতিল।’
যারা শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য আমল করে , আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার উন্নতি , সন্তান সন্তুতি ইত্যাদি দান বরবেন , আখিরাতে তারা কিছূই পাবে না ।
مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاء لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلاهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا
‘যে ব্যক্তি (শুধুমাত্র) দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করে, আমি যাকে চাই, যে পরিমাণ চাই সত্তর এ দুনিয়ায় তাকে তা দান করি। অতঃপর তার জন্য আমি জাহান্নাম নির্ধারণ করি। সে তাতে নিন্দিত ও বিতাড়িত হয়ে প্রবেশ করবে।’
..فَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ خَلاَقٍ-وِمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-أُولَـئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّمَّا كَسَبُواْ وَاللّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ
‘ৃ..লোকদের মাঝে যারা বলে হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দাও। বস্ত্তত তাদের জন্য পরকালে কোন কল্যাণ নেই। আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে ইহকালেও কল্যাণ দাও, পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর, তারা যা অর্জন করেছে, তাদের প্রাপ্য অংশ তাদেরই। আর আল্লাহ্ দ্রুত হিসাবকারী।’
"عن أبي هريرة رض قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "من تعلم علما مما يبتغي به وجه الله لا يتعلمه إلا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة يعني ريحها"
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হওয়া উচিত, কিন্তু অর্জন করে দুনিয়ার সামগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে, কিয়ামাতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’
৪. কোন কথায় আল্লাহর ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছাকে শরীক করা ঃ
যেমন বলল, আল্লাহর ইচ্ছায় এবং তোমার ইচ্ছায়।
عن ابن عباس رضي الله عنهما " أن رجلا قال للنبى صلى الله عليه وسلم وماشاء الله وشئت، فقال : أجعلتني لله ندا بل ما شاء الله وحده"
‘আব্দুল্লাহ ইবন আববাস হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলল, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন এবং আপনি যা ইচ্ছা করেন । তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে আল্লাহর জন্য শরীক করছ? বরং (বল) যা এক আল্লাহ চান।’
عن قتيلة: " أن يهوديا أتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال: إنكم تشركون تقولون : ما شاء الله وشئت وتقولون: والكعبة. فأمرهم النبى صلى الله عليه وسلم : إذا أرادوا أن يحلفوا أن يقولوا : ورب الكعبة وأن يقولوا : ماشاء الله ثم شئت"
‘কুতাইলা হতে বর্ণিত, জনৈক ইয়াহুদী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, তোমরা শিরক করছ, তোমরা বলছঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন এবং তুমি যা ইচ্ছা কর, আর তোমরা বল, কাবার কসম, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে আদেশ করলেন, যখন তারা কসম করতে চায় , তখন বলবে , কাবার রবের কসম, আর বলবেঃ যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন অতঃপর আপনি ইচ্ছা করেন।’
আল্লাহ্ বলেন:
وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ
‘তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন।’ অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত শুধু তোমার ইচ্ছা কোন কাজে আসবে না।
4. ‘لو’ অর্থাৎ ‘যদি’ শব্দ ব্যবহার করে কথা বলা ঃ
কোন বাহ্যিক বিপদ আপদে বা অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘ لو’ শব্দ প্রয়োগ করে এভাবে বলা, যেমন কেউ বললঃ
"لولا فلان قتلنى فلان "
‘যদি অমুক না থাকত অমুক আমাকে মেরে ফেলত।’
"لولا البط في الدار لأتانا الصوص"
‘যদি ঘরে হাস না থাকত, তা হলে আমাদের ঘরে চোর আসত।’
যেমন লোকেরা বলে থাকেঃ ‘চেয়ারম্যান সাহের, আপনি না থাকলে এবার অভাবে বাঁচতাম না’ ইত্যাদি কথা।
বাঁচাবার, বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। সে ক্ষেত্রে ‘لو’ (যদি) শব্দ যোগ করে অন্যকে শরীক করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
وإن أصابك شىء فلا تقل: لو أني فعلت كان كذا وكذا ولكن قل: قدر الله وماشاء الله فعل فان لو تفتح عمل الشيطان.
‘যদি তোমাকে কিছু (বিপদ আপদ) পেয়ে বসে, তখন বলবে না, যদি আমি (এটা) করতাম তা হলে এমন এমন হতো। বরং তুমি বলবে, যা হয়েছে আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ী হয়েছে। তিনি যা চেয়েছেন করেছেন। কেননা, ‘لو’ (যদি) শয়তানের কাজকে উম্মুক্ত করে দেয়।
৩য় প্রকার শিরক হচ্ছে আশশিরক ফিল আসমা ওয়াসসিফাত (الشرك في الأسماء والصفات)ঃ
আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে শিরক। আল্লাহর নাম দু’প্রকার। সত্তাগত নাম ও গুণবাচক নাম। সত্তাগত নাম হল আল্লাহ। কোন মাখলুকের নাম আল্লাহ রাখা হলে তা হবে সত্তাগত নামে শিরক। এমনিভাবে আল্লাহর নামে মূর্তির নাম রাখা, যেমন: ইলাহ্ থেকে লাত, আযীয থেকে ‘উয্যা, মান্নান থেকে মানাত ইত্যাদি নামকরণ করা আল্লাহর সত্তাগত নামের সাথে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর কতগুলো গুণবাচক নাম রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى
‘‘আল্লাহর ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ।’’
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
‘‘ আল্লাহর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ, সুতরাং তাঁকে ঐ সবনামে ডাক।’’
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
‘‘আল্লাহ তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব সব কিছুর ধারক।’’
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ- هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ-هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহর কতগুলো গুণবাচক নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনঃ রহমান, রহীম , কুদ্দুস , মুহায়মিন ইত্যাদি। হাদিসে আছেঃ
عن أبى هريرة رضي الله عنه أن رسول الله قال " إن لله تسعة وتسعين إسما مائة إلا واحدا من أحصاها دخل الجنة"
‘‘আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘আল্লাহর নিরানববইটি অর্থাৎ একটি কম একশটি নাম আছে। যে এ নামগুলো মুখস্থ করবে , সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।’’
আল্লাহর নামগুলো তিনভাগে বিভক্ত
(ক) আল্লাহ্ নিজে নিজের নাম রেখেছেন। তিনি যার নিকট ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যেমন কোন কোন ফেরেশতার নিকট প্রকাশ করেছেন।
(খ) তাঁর কিতাবে নাযিল করেছেন এবং বান্দাদেরকে জানিয়েছেন।
(গ) আর এক প্রকার নাম রয়েছে, যা একমাত্র তিনিই জানেন, আর কাউকে জানানো হয়নি। যেমন হাদীসে আছে:
اللهم إني أسألك بكل اسم هو لك سميت به نفسك أو أنزلته في كتابك أو علمته أحدا من خلقك أو أستأثرت به في علم الغيب عندك أن تجعل القرآن ربيع قلبي ونور صدري وجلاء حزني وذهاب همي.
‘হে আল্লাহ্, আমি আপনার নিকট চাচ্ছি আপনার প্রত্যেক নামের ওয়াসীলায় যে নামে আপনি আপনার নাম রেখেছেন অথবা আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টির কাউকে শিখিয়েছেন অথবা আপনার নিকট ইনমুল গায়বে আপনার ইখতিয়ারে রেখেছেন, আপনি করুন কুরআনকে আমার অন্তরের বসন্ত কাল, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার ব্যথা বেদনা দূরীকরণ এবং আমার উদ্বেগ উৎকন্ঠা সমাপ্তির কারণ।’
আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো থেকে কোন একটি নামে কোন মাখলুকের নামকরন করা হচ্ছে আল্লাহর গুণবাচক নামের ক্ষেত্রে শিরক। যেমন কারো নাম রহমান, কুদ্দুস, মুহায়মিন ইত্যাদি রাখা। এক লোকের কুনিয়াত বা উপনাম ছিল আবুল হাকাম । আল্লাহর রাসূল বললেনঃ আল্লাহ হলেন হাকাম। তিনি তার নাম পরিবর্তন করে তার বড় ছেলের নামে রাখলেন আবু শুরাইহ। হ্যাঁ, কুরআন সুন্নায় যদি কারো নাম আল্লাহর ছিফাতী নামে পাওয়া যায়, তা হবে বৈধ। যেমনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কুরআনে রাউফ, রাহীম বলা হয়েছে, যা আল্লাহর সিফাতী নাম। আল্লাহ্ বলেনঃ
لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
‘তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট রাসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে, তা তার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’


আল্লাহর গুণাবলীতে শিরক হলো দু’প্রকার ঃ
প্রথম প্রকার হলোঃ এমন সমস্ত গুণ যা আল্লাহর মাঝেও রয়েছে। মাখলুকের মাঝেও রয়েছে। যেমন মানুষ দেখে, শুনে , অন্যান্য প্রাণী দেখে, শুনে, আল্লাহও দেখেন, শুনেন। যদি কেউ একথা বিশ্বাস করে যে , মানুষ তেমনি দেখেন যেমন আল্লাহ দেখেন , হাতির তেমনি শক্তি আছে যেমন আল্লাহর শক্তি আছে। উমুক বুযর্গ এমনি ক্ষমতা রাখে, যেমন আল্লাহ ক্ষমতা রাখেন। এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করা আল্লাহর গুণাবলীতে শিরক করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লা্হ বলেনঃ
ليس كمثله شئ وهو السميع البصير
‘তাঁর অনুরূপ কেউ নেই। তিনি শুনেন দেখেন ।’
আল্লাহর গুণাবলীতে দ্বিতীয় প্রকার শিরক হলো ঃ
যে সমস্ত গুণ আল্লাহর জন্য নির্ধারিত , সে সমস্ত গুণে অন্য কাউকে গুণান্বিত করা । যেমনঃ গায়ব জানা একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট। অন্য কাউকে গায়ব জানে বলে বিশ্বাস করা আল্লাহর গুনাবলীতে শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে, এখানে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করছি।
গায়ব এর ইলম একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। নবী রাসূল ওলী কেউই এ সম্পর্কে অবগত নন। আল্লাহ্ বলেন-
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا- إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِن رَّسُولٍ .....
‘তিনি (আল্লাহ্) গায়বের জ্ঞানী, তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত অপর কারো নিকট তাঁর গায়ব প্রকাশ করেন না।’’
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ
‘গায়বের চাবিসমূহ তাঁরই (আল্লাহ্) নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না’
وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ
‘আমি যদি গায়বের খবর জান্তাম, তবে তো আমি প্রভূত কল্যাণই লাভ করতাম, কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতো না।’
وَلِلّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ
‘আকাশমন্ডলী এবং পৃথিবীর গায়ব এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে।’
এছাড়া আরো আয়াত রয়েছে, যা প্রমাণ করে ইলমুল গায়ব একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
হাদীসের বিভিন্ন ঘটনাবলী দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, রাসূল গায়ব জানেন্ না। যেমন- তৃতীয় হিজরীতে ‘আদল (عضل) ও কারা (قارة) গোত্রদ্বয়ের একটি দল রাসূলুল্লাহ্ & সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বল্ল, আমাদের সাথে আপনার কতিপয় সাহাবী প্রেরণ করুন, যারা আমাদেরকে কুরআন পড়াবেন, দীন শেখাবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কথা বিশ্বাস করে মুরসিদ বিন আবু মুরসিদ আল্গানবীর নেতৃত্বে ছয়জন সাহাবীকে প্রেরণ করলেন। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতকতা করে তারা ছয়জন সাহাবীকেই হত্যা করল। যদি আল্লাহর রাসূল গায়ব জানতেন, তাহলে তাঁর ছয়জন সাহাবীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেন্ না।
বিরে মাউনার (بئر معونة) ঘটনাঃ
উহুদ যুদ্ধের চারমাস পর চতুর্থ হিজরী সফর মাসে আবু বারা আমের বিন মালিকের আবেদনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্তরজন সাহাবী প্রেরণ করলেন। বিরে মাউনা নামক স্থানে পৌঁছলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে সত্তরজন সাহাবীকে শহীদ করে দেয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি গায়ব জানতেন, তা হলে তাঁদেরকে এভাবে পাঠাতেন্ না।
বনুনযীরের (بنوا النضير) ঘটনা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম চতুর্থ হিজরীতে বনু নযীরে এক হত্যার সালিশী করতে গিয়েছিলেন। তিনি তাদের এক বাড়ির দেয়ালের পাশে উপবিষ্ট ছিলেন। সুযোগ বুঝে তাদের একজন বাড়ির ছাদে উঠে পাথর ফেলে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করল। জিব্রাঈল (আ.) রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানিয়ে দিলে তিনি সেখানে থেকে উঠে মদীনা চলে আসলেন। যদি তিনি গায়ব জানতেন, তাহলে তিনি সেখানে যেতেন্ না এবং বসতেন্ না।
ইফকের ঘটনাঃ
৬ষ্ঠ হিজরী শা‘বান মাসে সংঘঠিত হয়েছে বনুল মুস্তালিক যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শেষে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে নিয়ে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী আয়িশা (রা.) গলার হার হারিয়ে যাওয়ার কারণে তা তালাশ করতে গিয়ে পেছনে একা রয়ে গেলেন। সাফওয়ান বিন মু’আত্তাল (রা.) নিয়ম মুতাবিক পেছনে পড়া বস্ত্ত সামগ্রী তালাশ করতে গিয়ে আয়িশা (রা.) কে দেখতে পেলেন। এদিকে মুনাফিকরা আয়িশা (রা.) এর বিরুদ্ধে যিনার মিথ্যা অপবাদ রটনা শুরু করে দিল। এমনকি এ নিয়ে কতিপয় সাহাবীও কানাঘুষা করতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ একমাস ঘটনার সত্যমিথ্যা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। একমাস পর আল্লাহ্ তা‘য়ালা আয়িশা (রা.) এর পবিত্রতার ঘোষণা দিয়ে সূরা আন্ নূরের দশটি আয়াত (১১-২০) নাযিল করলেন।
যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়ব জানতেন, তা হলে মুনাফিকরা এ অপবাদের সুযোগ পেত না।
উক্ত ঘটনাবলী ছাড়াও আরো অনেক ঘটনা রয়েছে, যা প্রমাণ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়ব জানতেন না। যেমন উহুদে আহত হওয়ার ঘটনা, মধু হারাম করার ঘটনা ইত্যাদি। রাসূলই যদি গায়ব না জানেন, তা হলে অন্যান্য ওলী দরবেশদের তো গায়ব জানার প্রশ্নই আসে না।
এ প্রসঙ্গে আরো বলা সঙ্গত যে, কুরআন সুন্নায় আল্লাহর হাত পা ইত্যাদি যে সব ছিফাতের কথা বলা হয়েছে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আকীদা হলো সে সব ছিফাতের স্বীকৃৃতি দেয়া। সে সকল ছিফাত এর বর্ণনা কুরআন সুন্নাহ্ নেই, তার আলোচনা থেকে বিরত থাকা। হাত, পা, চেহারা ইত্যাদি যে সব ছিফাতের কথা বলা হয়েছে, তা নেই এ কথা বলা যাবে না, কোন ব্যাখ্যা করা যাবে না, কোন সাদৃশ্য আছে বলা যাবে না, বরং তাঁর শান অনুযায়ী যেমন থাকা দরকার, তেমনি আছে বলা বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহর হাত অমুকের হাতের মত, আল্লাহর পা অমুকের পায়ের মত বলা হবে শিরক। আল্লাহ তাঁর হাত সম্পর্কে বলেনঃ
بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاء
‘বরং তাঁর (আল্লাহর) দু’হাত প্রশস্ত, তিনি যেমন ইচ্ছা ব্যয় করেন’
وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالسَّماوَاتُ مَطْوِيَّاتٌ بِيَمِينِهِ
‘কিয়ামাতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আকাশ সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হতে’
قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
‘বল! নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে চান, তাকে তা দেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ’
مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ
‘তোমাকে কিসে বাধা দিল তাকে সিজদা করতে, যাকে আমি আমার দু’হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছি।’
এভাবে কুরআন মাজীদে দশবারের অধিক আল্লাহ তায়া’লা নিজের হাতের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীসেও আল্লাহর হাতের কথার উল্লেখ রয়েছে। যেমনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " يد الله ملأى لاتغيضها نفقة سحاء الليل والنهار أرأيتم ما أنفق مذ خلق السماء والأرض فإنه لم يغض ما في يده وكان عرشه على الماء وبيده الميزان يخفض ويرفع"
‘‘আবু হুরাইরা (রা.) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আল্লাহর হাত (সম্পদে) পরিপূর্ণ , দিবা রাত্রির অবিরাম খরচ তা থেকে কমায়নি। তোমরা কি দেখনি যে, আসমান যমীন সৃষ্টি থেকে যা তিনি খরচ করেছেন , তাঁর হাতে যা রয়েছে , তা থেকে একটুকুও কমেনি। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর । তাঁর হাতে রয়েছে মীযান , তিনি নিচু করেন, উঁচু করেন।’’
وفي رواية لمسلم " يمين الله ملأى"
মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে ‘আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ’।
عن أبي هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: يقبض الله الأرض يوم القيامة ويطوى السماء يمينه ثم يقول أنا الملك أين ملوك الأرض؟"
‘‘আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহ কিয়ামাতের দিন পৃথিবীকে মুষ্টিবদ্ধ করবেন আর তাঁর ডান হাত দিয়ে আকাশকে পেঁচিয়ে ধরবেন । অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ, পৃথিবীর রাজা বাদশাহরা কোথায়?’’
عن عبد الله أن يهوديا جاء إلى النبى صلى الله عليه وسلم فقال يامحمد إن الله يمسك السموات السبع على إصبع والأرضين على إصبع والجبال على إصبع والشجر على إصبع والخلائق على إصبع ثم يقول أنا الملك فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم حتى بدت نواجذه ثم قرأ " وما قدروا الله حق قدره" وقال عبد الله : فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم تعجبا وتصديقاله"
‘আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত যে, একজন ইয়াহুদী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! নিশ্চয়ই আল্লাহ সাত আকাশ এক আঙ্গুলে, পাহাড় গুলো এক আঙ্গুলে, যমীন গুলো এক আঙ্গুলে, বৃক্ষরাজি এক আঙ্গুলে এবং সকল সৃষ্টি এক আঙ্গুলে ধারণ করবেন, অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন এমনকি তার মাড়ির দাঁতসমূহ দৃষ্টি গোচর হল। অতঃপর তিনি পড়লেনঃ তারা আল্লাহর মর্যাদা যথাযথ নিরূপণ করতে পারেনি। হাদীস বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবাক হয়ে এবং তার কথার সত্যতা স্বীকার করে হেসেছিলেন।’
روي عن ابن عباس قال " ما السموات السبع والأرضون السبع في كف الرحمن الا كخردلة في يد أحكم"
‘ইবন আববাস (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘সপ্ত আকাশ এবং সপ্ত যমীন রহমানের হাতের তালুতে এমনি ক্ষুদ্র যেমন তোমাদের কারও হাতে একটি শস্য দানা’
আরো বিভিন্ন হদীসে আল্লাহর হাতের কথার উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহর মুখমন্ডল বা চেহারার ব্যাপারে কুরআন- সুন্নাহয় যা রয়েছেঃ
আল্লাহ বলেনঃ
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ-وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
‘পৃথিবীর সবকিছুই ধ্বংসশীল, টিকে থাকবে শুধু মাত্র তোমার মহিমান্বিত ও মহানুভব রবের মুখমন্ডল।’
كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ
‘তাঁর (আল্লাহর) মুখমন্ডল ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল।’
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَّاضِرَةٌ-إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
‘সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জল হবে, তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’
আল্লাহর মুখমন্ডলই যদি না থাকে, তাহলে দেখবেটা কী?
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
" إنكم سترون ربكم عيانا"
‘তোমরা অবশ্যই তোমাদের রবকে প্রকাশ্যভাবে ‘দেখতে পাবে’
عن جرير بن عبد الله قال خرج علينا رسول الله صلى عليه وسلم ليلة البدر فقال " إنكم سترون ربكم يوم القيامة كما ترون هنا لاتضامون في رويته"

‘জারীর ইবন আব্দূল্লাহ (রা). বলেন, পূর্ণিমার রাতের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বেরিয়ে এসে বললেনঃ নিশ্চয় তোমরা তোমাদের রবকে কিয়ামাতের দিন দেখতে পাবে। যেমন এটাকে (পূর্ণিমার চাঁদ) তোমরা দেখতে পাচ্ছ, তাঁকে দেখতে তোমাদের কোন কষ্ট হবে না , বরং প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থান থেকে স্পষ্ট দেখতে পাবে।’
এ ছাড়া আরো হাদীস রয়েছে, যা আল্লাহর চেহারা আছে বলে প্রমাণ করে।
আল্লাহ তাঁর চোখ সম্পর্কে বলেছেনঃ
فَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ أَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا
‘অতঃপর আমি তাঁর (নূহের) নিকট ওহী প্রেরণ করলাম যে, তুমি আমার চোখের সামনে এবং আমার নির্দেশে নৌকা তৈরি কর’
وَأَلْقَيْتُ عَلَيْكَ مَحَبَّةً مِّنِّي وَلِتُصْنَعَ عَلَى عَيْنِي
‘আমি (আল্লাহ) তোমার (মূসা) উপর মহববত সঞ্চারিত করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ হতে , যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’
تَجْرِي بِأَعْيُنِنَا جَزَاء لِّمَن كَانَ كُفِرَ
‘যা চলে আমার চোখের সামনে, এটা হল বদলা ঐ ব্যক্তির জন্য যে অস্বীকার করেছিল ’
হাদীসে আছেঃ
عن أنس رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ما بعث الله من نبي إلا أندز قومه الأعور الكذاب إنه أعورو إن ربكم ليس بأعور مكتوب بين عينيه كافر"
‘আনাস (রা) নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ আল্লাহ যত নবী পাঠিয়েছেন , প্রত্যেকেই তার জাতিকে প্রতারক মিথ্যাবাদী কানা (দাজ্জাল) সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। নিশ্চয় সে (দাজ্জাল) কানা (এক চোখ বিশিষ্ট) আর তোমাদের রব অবশ্যই কানা নন। তার (দাজ্জাল) দু চোখের মাঝে লেখা থাকবে ‘কাফের’।
এ হাদীস দ্বারা বুঝা গেল আল্লাহ দু চোখ বিশিষ্ট।
আল্লাহর পা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমানঃ
عن أنس رضي الله عنه وسلم قال: "لايزال يلقى فيها وتقول هل من مزيد حتى يضع فيها رب العالمين قدمه فينزوي بعضها إلى بعض ثم تقول قد بعزتك وكرمك"
আনাস (রা) হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জাহান্নামে (জাহান্নামীদেরকে) নিক্ষেপ করা হতে থাকবে, তারপরও সে (জাহান্নাম) বলবে, আরো আছে কি? শেষ পর্যন্ত বিশ্বজাহানের রব তাতে তাঁর পা রাখবেন, এতে জাহান্নাম একাংশের সাথে আরেকাংশ মিশে যাবে। অতঃপর বলবে, তোমার প্রতিপত্তি ও মর্যাদার শপথ যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথাই স্পষ্ট হলো যে , আল্লাহর হাত পা ইত্যাদি যে সমস্ত ছিফাত বা গুণ কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত , তা যেভাবে আছে সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে, অস্বীকার করা যাবেনা , কোন ব্যাখ্যা করা যাবে না , সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা যাবে না । সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা হবে শিরক , ব্যাখ্যা করা হল ভ্রষ্টতা । অস্বীকার করা কুফরী। অতএব আল্লাহ নিরাকার নন, এটাই বিশুদ্ধ আকীদা।
قال ابو حنيفة رح " له يد ووجه ونفس كما ذكر تعالى في القرآن من ذكر اليد والوجه والنفس فهوله صفة بلا كيف ولا يقال : إن يده قدرته ونعمته لأن فيه إبطال الصفة" ( الفقه الأكبر .ص ৩৬-৩৭)
‘আবু হানীফা (রা.) বলেনঃ তাঁর (আল্লাহর) রয়েছে হাত, চেহারা ও আত্মা, যেমন আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআন করীমে তাঁর হাত, চেহারা ও আত্মার কথা বলেছেন। এটা তাঁর গুণ, কেমন, তা বলা যাবে না, এ কথাও বলা যাবে না যে, তাঁর হাত বলতে তাঁর কুদরত, তাঁর নেয়ামত বুঝানো হয়েছে। কেননা এতে তাঁর সিফাত বা গুণকে বাতিল করা হয়।’
এমনিভাবে علوّঅর্থাৎ উপরে বা উঁচুতে আল্লাহর অবস্থান । এটি আল্লাহর একটি ছিফাত বা গুণ। এ বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ । এ দ্বারা আল্লাহ কোথায়? এ বিষয়টির সুস্পষ্ট সমাধান দিয়েছে কুরআন সুন্নাহ । কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা নিজ অবস্থান সম্পর্কে সাতবার বলেছেন যে তিনি আরশের উপরে অধিষ্ঠিত। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন’
ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হলেন’
এমনিভাবে সূরা ইউনুসের ৩নং আয়াত , সূরা আর্ রা’দ-এর ২নং আয়াত , সূরা আল ফুরকানের ৫৯নং আয়াত সূরা আস্ সিজদার ৪নং ও সূরা আল হাদীদ- ৪ আয়াত প্রমাণ করে যে আল্লাহ আরশের উপর অধিষ্ঠিত আছেন। আরশের অবস্থান হলো আসমানের উপর।
عن العباس بن عبد المطلب رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " هل تدرون كم بين السماء والأرض؟ قال: قلنا الله ورسوله أعلم قال: بينهما مسيرة خمس مئة سنة، ومن كل سماء إلى سماء مسيرة خمس مئة سنة، وكثف كل سماء مسيرة خمس مئة سنة، وفوق السماء السابعة بحر بين أسفله وأعلاه كما بين السماء والأرض، ثم فوق ذلك العرش بين أسفله وأعلاه كما بين السماء والأرض، والله فوق ذلك، ليس يخفي عليه من أعمال بني أدم شئي"
‘আববাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি জান আসমান ও জমীনের মাঝে দূরত্ব কতটুকু? তিনি বলেন, আমরা বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ পাঁচশত বৎসরের ভ্রমণ পথ। প্রত্যেক আকাশের পুরু হল পাঁচশ বছরের ভ্রমণ পথ, সাত আসমানের উপর রয়েছে সমুদ্র , যার উপর এবং নিচের ব্যবধান হল যেমন আসমান যমীনের ব্যবধান। তার উপর রয়েছে ‘আরশ, যার উপর এবং নিচের ব্যবধান যেমন আসমান যমীনের ব্যবধান। আল্লাহ রয়েছেন এর উপর। বনী আদমের কোন আমল তাঁর নিকট গোপন নয়।
কুরআন করীমের আরো অনেক আয়াত প্রমাণ করে যে আল্লাহর অবস্থান উপরে। যেমনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ
‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাঁর (আল্লাহর) দিকে উর্ধগামী হয়।’
إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ وَالْعَمَلُ الصَّالِحُ يَرْفَعُهُ
‘তাঁরই (আল্লাহর) দিকে আরোহণ করে উত্তম বাক্য আর সৎকর্ম তাকে তুলে নেয়।’
بَل رَّفَعَهُ اللّهُ إِلَيْهِ
‘বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিজের দিকে তুলে নিয়েছেন।’
আল্লাহ কুরআন করীমের অনেক স্থানেই কুরআন নাযিলের কথা বলেছেন, যা হল তার কালাম। আর নাযিল অর্থাৎ অবতরণ হয়ে থাকে উপর থেকে নিচে। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
‘নিশ্চয় আমিএটি নাযিল করেছি(কুরআন মজীদ) কদরের রাতে’
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
‘এটি একটি কিতাব যা আমি নাযিল করেছি তোমার প্রতি যাতে তুমি বের করতে পার মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে’
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
‘নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি (কুরআন করীম) বরকতময় রাতে।’
কিতাব নাযিল করার ব্যাপারে এরকম ত্রিশটিরও অধিক আয়াত রয়েছে।
হিজরাতের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৬/১৭ মাস বাইতুল্লাহর পরিবর্তে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। কিন্তু তাঁর মনের বাসনা ছিল যেন বাইতুল্লাহ কিবলা হয়ে যায়, তাই তিনি বারবার আকাশের দিকে তাঁর চেহারা ফিরাতে থাকেন। আল্লাহ বলেনঃ
قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاء
‘আমি অবশ্যই তোমার চেহারাকে বারবার আকাশের দিকে ফেরাতে দেখেছি’। আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে ভাল জানেন। তাই তিনি আল্লাহর নির্দেশের আশায় বারবারই আকাশের দিকে তাকান।
কুরআনের আরো বিভিন্ন আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহর অবস্থান উপরে । এমনি ভাবে হাদীস দ্বারাও তা প্রমাণিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী যয়নব (রা) তাঁর অন্যান্য স্ত্রীগনের উপর গর্ব করে বলতেনঃ
" زوجكن أهاليكن وزوجني الله من فوق سبع سموت"
‘তোমাদেরকে বিয়ে দিয়েছেন তোমাদের পরিবারের লোকেরা, আর আমাকে বিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ সাত আসমানের উপর থেকে ’
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال " يتعاقبون فيكم ملائكة بالليل وملائكة بالنهارويجتمعون في صلاة العصروصلاة الفجر ثم يعرج الذين بانوا فيكم فيسألهم و هو اعلم بهم كيف تركتم عبادي فيقولون تركناهم وهم يصلون وأتيناهم وهم يصلون"

‘আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে রাতে ও দিনে পালাক্রমে ফেরেশতাগণ আসেন। তারা আসর ও ফজর নামাজের সময় একত্রিত হন। অতঃপর যারা তোমাদের মাঝে রাত্রি কাটান তারা উপরে উঠে যান। তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন অথচ তিনি তাদের ব্যাপারে ভাল করেই জানেন - আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে আসলে? তারা বলেন, আমরা তাদেরকে ছালাত আদায় অবস্থায় ছেড়ে এসেছি, আর যখন তাদের কাছে এসেছিলাম তখনো তারা ছালাত আদায় করছিল’
এ হাদীসে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে- ফেরেশতারা উপরে উঠে যান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজ কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত । রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এক এক করে সপ্ত আকাশের উপর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন আকাশে বিভিন্ন নবীর সাথে সাক্ষাত হয়েছে। জিব্রাঈল (আ) কে তাঁর আসল রূপে সিদরাতুল মুনতাহার নিকট দেখেছেন। আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى-عِندَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى-عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى
‘নিশ্চয় তিনি তাকে (জিবরাঈল) আর একবার দেখেছেন সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার কাছে অবস্থিত জান্নাতুল মাওয়া।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
"ثم رفعت لي سدرة المنتهى فاذا نبقها مثل قلال هجر واذا ورقها مثل اذان الفيلة قال هذه سدرة المنتهى"
‘অতঃপর তুলে ধরা হল আমার সামনে সিদরাতুল মুনতাহা, তার কুলগুলোর আকার হল হাজার নামক স্থানের মটকার মত, পাতাগুলো হল হাতীর কানের মত, তিনি (জিবরাঈল) বললেন, এটা হল সিদরাতুল মুনতাহা।’ ‘হাজার’ বাহরাইনের একটি এলাকার নাম, যেখানে মটকা বেশি তৈরি হয়। এখানকার মটকা প্রসিদ্ধ।
‘সিদরাতুল মুনতাহা’ হল সপ্ত আকাশ পেরিয়ে।
বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমবেত সাহাবাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ
"انتم مسؤولون عني فما انتم قائلون ؟ "قالوا : " نشهد أنك قد بلغت وأديت ونصحت "
‘তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তোমরা কী বলবে? তারা বললঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আপনি পৌছিয়েছেন, আদায় করেছেন এবং নছীহত করেছেন’ । তখন আল্লাহর রাসূল আকাশের দিকে অংগুলি উত্তোলন করে বললেনঃ
اللهم اشهد"
‘হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকেন।’
আল্লাহ উপরে বলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অংগুলি আকাশের দিকে উত্তোলন করে আল্লাহকে সাক্ষী রেখেছেন ।
এক দাসীকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ " "اين الله ؟ ‘আল্লাহ কোথায়?’ দাসী উত্তর দিল " في السماء " আকাশে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ "من أنا؟" আমি কে?
দাসী বললঃ " أنت رسول الله "আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ أعتقها فإنها مؤمنة" তাকে মুক্ত করে দাও, কেননা সে মুমিন’।
আল্লাহ শেষ রাত্রিতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন। আর অবতরণ উপর থেকে নিচের দিকেই হয়ে থাকে।
عن ابي هريرة رض قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة إلى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الاخر يقول من يدعوني فاستجيب له من يسأني فأعطيه من يستغفرني فأغفرله"
‘আবু হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ঃ আমাদের রব তাবারাকা ওয়া তায়ালা প্রতিরাত্রিতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন, যখন রাত্রির শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। তিনি বলেন, কে আমাকে ডাকবে আমি যার ডাকে সাড়া দেব, কে আমার নিকট চাইবে , যাকে আমি দেব , কে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যাকে আমি ক্ষমা করব’।
মানুষ যখন আল্লাহর নিকট কিছু চায় , তখন সে উপরের দিকে হাত উত্তোলন করেই চায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
"إن الله يستحي من عبده إذا رفع إليه يديه أن يردهما صفرا"
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন খালি ফিরিয়ে দিতে যখন বান্দা তার দিকে দু’হাত উত্তোলন করে’।
এমনকি কোন হিন্দুকেও বলতে শুনি , যখন কেউ তার অধিকার হরণ করে কোন অবস্থাতেই অধিকার আদায় করতে পারছেনা , তখন বলে , উপরওয়ালা দেখতেছেন, তিনি তোর বিচার করবেন। এ উপরওয়ালা বলতে সে আল্লাহকেই বুঝায়।
এ আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট যে, আল্লাহ উপরে আছেন, আরশের উপরে। অতএব এ বিশ্বাস পোষণ করা যে , আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান , একটি ভ্রান্ত বিশ্বাস , কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আকীদা, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আতের বিরোধী আকীদা। হাঁ এটা ঠিক যে , তার ক্ষমতা সর্ব বিস্তৃত, সব কিছুই তার জ্ঞানের পরিসীমায় রয়েছে, সব কিছুর তিনি খবর রাখেন। যেমন আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
‘নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন’।
إِنَّ اللَّه عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘নিশ্চয় আল্লাহ্ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান’।
এ অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান। যেমন, সূর্য আছে আকাশে। কিন্তু তার আলো সর্বত্র বিস্তৃত। কিন্তু কেউই বলেনা , সূর্য সর্বত্র বিরাজমান । বরং সূর্য কোথায় জিজ্ঞাসা করলে সকলেই বলবে আকাশে । অতএব বিশুদ্ধ ‘আকীদা হল, আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন আছেন। কিন্তু কিভাবে আসীন আছেন , তা জানা নেই। যেমন ইমাম মালিক (র) কে জিজ্ঞাসা করা হল كيف الإستواءঅর্থাৎ কিভাবে তিনি আসীন আছেন। তিনি উত্তরে বললেন
" الإستواء معلوم والكيف مجهول والإيمان به واجب والسؤال عنه بدعة"
ইসতিওয়া শব্দটি জানা, কিন্তু কিভাবে তা অজানা। এ ব্যাপারে ঈমান আনা ওয়াজিব, এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা বিদ‘আত।’
আবু মুতী’ আলবালাখী আবূহানীফা (র) কে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, যে বলে - আমি জানি না আমার রব আকাশে আছেন না যমিনে আছেন , তিনি বললেন - সে কাফির , কেননা আল্লাহ বলেন,
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى
‘দয়াময় আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন’ আর তাঁর আরশ সাত আকাশের উপর। আমি বললাম , যদি সে বলে, আল্লাহ আরশের উপর আছেন - মেনে নিলাম। কিন্তু আরশ আসমানে না যমীনে তা জানিনা। তিনি বললেন , তা হলেও সে কাফির। কেননা আরশ যে আসমানে তা সে অস্বীকার করল। আর আরশ যে আসমানে তা যে অস্বীকার করবে, সে কাফির।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল (র) বলেনঃ আল্লাহর গুণাবলী সমূহের প্রতি আমি ঈমান আনয়ন করি, এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করি। তবে এগুলোর আকৃতি - প্রকৃতি জানিনা, এর কোন কিছুকে আমি প্রত্যাখ্যানও করিনা’।
ইমাম শাফিঈ (র) কে আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- ‘আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি, আল্লাহর পক্ষ হতে যে উদ্দেশ্যে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করি, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ঈমান এনেছি এবং তার পক্ষ থেকে যে উদ্দেশ্যে আল্লাহর যে সব গুনাবলীর বর্ণনা এসেছে, আমি সেগুলোর উপরও ঈমান রাখি।’’
ইমাম আবু হানীফা (র) আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে বলেনঃ
"وله يدووجه ونفس ..... فهوله صفات بلاكيف .... وغضبه ورضاه صفتان من صفاته بلاكيف"
‘আল্লাহ তায়ালা হাত, মুখ, আত্মা রয়েছে, এটা তার সিফাত, যার কোন আকার প্রকৃতি নেই। তার রয়েছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি, তার গুণাবলীর আকার প্রকৃতি বিহীন দু’টি গুণ।
আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী সম্পর্কে তিনি আরো বলেনঃ ‘‘ আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে কারো কোন কথা বলা ঠিক নয়। তবে আল্লাহ নিজেকে যে গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাকে সে গুণে গুনান্বিত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে নিজের চিন্তা প্রসূত কোন কথা বলা ঠিক নয়।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি মুসলিম শিশুই শৈশবকালে ঈমানের একটি সংক্ষিপ্ত কালেমা পড়ে থাকে , তা হলঃ
"أمنت بالله كما هو بأسماءه وصفاته وقبلت جميع أحكامه وأركانه"
‘আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর প্রতি যেমন তিনি আছেন , তাঁর নামাবলি এবং গুণাবলী সহকারে, এবং মেনে নিলাম তাঁর সমস্ত বিধান এবং রুকন।
আল্লাহর নাম এবং সিফাতের ব্যাপারে আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আকীদাঃ
আল্লাহ্ তাঁর কিতাবে এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সুন্নাহয় আল্লাহর যে সমস্ত নাম এবং সিফাতের বর্ণনা দিয়েছেন, তা মেনে নেয়া। নিজস্ব ‘আকল ও বুদ্ধি দিয়ে না কোন নাম ও সিফাত সাব্যস্ত করা, না কোন নাম ও সিফাত অস্বীকার করা। নাম ও সিফাত যে ভাবে এসেছে ঠিক সেভাবেই মেনে নেয়া, কোন ব্যাখ্যা করা যাবেনা, কেমন তা প্রশ্ন করা যাবে না, কোন সাদৃশ সাব্যস্ত করা যাবে না। নেই বলা যাবে না। যেমন: আল্লাহর হাত কুরআন, সুন্নাহ্ দ্বারা স্বীকৃত। অতএব হাত আছে মানতে হবে, হাত বলতে কুদরত, ক্ষমতা ইত্যাদি ব্যাখ্যা করা যাবে না, আল্লাহর হাত কেমন, তা প্রশ্ন করা যাবে না। আল্লাহর হাত অমুকের হাতের মত, তা বলা যাবে না, আবার আল্লাহর হাত নেই, তাও বলা যাবে না। বরং আল্লাহর হাত তাঁর শান ও মর্যাদা অনুযায়ী যেমন থাকার, তেমনি আছে, তা মেনে নিতে হবে।
সর্বপ্রথম আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করে জাহমিয়া গ্রুপ। জাহম বিন ছাফওয়ান এর দিকে সম্মন্ধ করে এ গ্রুপের নামকরণ করা হয়েছে জাহমিয়া গ্রুপ। জাহম বিন ছাফওয়ানকে হত্যা করেছে খোরাসানের আমীর সাল্ম বিন আহওয়ায ১২৮ হিজরীতে। জাহম বিন ছাফওয়ান এ মতটি এনেছে জা‘দ বিন দিরহাম থেকে। জা’দ বিন দিরহামকে হত্যা করেছে ইরাকের আমীর খালেদ বিন আব্দুল্লাহ্ আলকাসরী (মৃত্যু ১২৬হি.)। ওয়াছেত (ইরাকের একটি শহর) নামক শহরে তিনি ঈদুল ‘আদহার দিবসে জনগণের মাঝে এ বলে খুতবা দিলেন যে, হে লোকেরা! আপনারা কোরবানী করুন। আল্লাহ্ আপনাদের কোরবানী কবুল করুন। আমি জা‘দ বিন দিরহামকে কোরবানী করব। কেননা সে দাবী করছে যে, আল্লাহ্ ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামকে খালীল বানানটি এবং মূসা আলাইস্ সালামের সাথে কথা বলেন নি। অতঃপর তিনি মিম্বর থেকে নেমে তাকে যবেহ করলেন। আর একাজটি তিনি সেকালের মুফতীগণের ফাতওয়া নিয়েই করেছেন।
যা‘দ বিন দিরহাম এ নিকৃষ্ট মতটি গ্রহণ করেছে আবান বিন সাম‘আন থেকে, আর আবান বিন সাম‘আন মতটি এনেছে লবীদ বিন আ’ছামের বোনের ছেলে তালুত থেকে, আর তালুত তার মামা লবীদ বিন আ‘ছাম থেকে এ খবীছ মতটি গ্রহণ করেছে। এ লবীদ আ‘ছেম হলো এক ইয়াহুদী, যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের চিরুনী, চুল নিয়ে যাদু করেছিল। আল্লাহ্ সূরা আল ফালাক, সূরা আন্ নাস নাযিল করে এক একটি আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়ার মাধ্যমে যাদু নষ্ট করে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন।
জাহম বিন ছাফওয়ান থেকে এ মতটি জগগণের মাঝে প্রচার করেছে মু‘তাযিলা গ্রুপ। এরা হলো আবু হুযাইফা ওয়াছিল বিন ‘আতা আল্ মাখযুমীর অনুসারী। (বসরাবাসী, মৃত্যু ৩৩১হি.) সে হাসান বসরীর দরসে বসত। যখন গুনাহ্ কবীরা কারী নিয়ে মতবিরোধ হল, খাওয়ারেজ বলল, সে কাফির, অন্যদল বলল, মুমিন তবে কবিরা গুনাহ্ করার কারণে সে ফাসিক, কাফির নয়। ওয়াছিল বিন আতা দু‘দল থেকেই বেরিয়ে গেল এবং বল্ল, সে মুমিনও নয় কাফিরও নয় বরং দু‘দলের মাঝামাঝি তার অবস্থান। তখন হাসান বসরী তাকে তাঁর মজলিস থেকে বের করে দিলেন। এতে সে আলাদা গিয়ে বসল, তার সাথে গিয়ে বসল আমর বিন ‘উবায়দ। এরপর হতেই তাদের দুজন এবং তাদের অনুসারীদেরকে মু‘তাযিলা বলা হয়।

আল্লাহর নাম ও সিফাতের ব্যাপারে বিভিন্ন দলের সংক্ষিপ্ত মতামতঃ
জাহমিয়া আল্লাহর নাম এবং গুণাবলীকে অস্বীকার করে, মু‘তাযিলা আল্লাহর নামগুলো মেনে নেয়, সিফাতগুলো অস্বীকার করে।
আশ‘আরিয়া গ্রুপ আল্লাহর নামগুলো এবং সাতটি সিফাত স্বীকার করে। বাকী সিফাতগুলো অস্বীকার করে। যে সাতটি সিফাত স্বীকার করে তা হলো- ইলম (জ্ঞান), হায়াত (জীবন), কুদরত (ক্ষমতা), ইরাদা (ইচ্ছা), সম‘উ (শুনা), বাছার (দেখা) ও কালাম (কথা)।
আল্লাহর নামের সম্মান করা আমাদের কর্তব্য, অসম্মানজনক কোন কাজ করা যাবে না। আল্লাহর নাম বিকৃত করা যাবে না। আল্লাহ্ বলেন-
وَلِلّهِ الأَسْمَاء الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُواْ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَآئِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
‘আল্লাহর রয়েছে উত্তম নামসমূহ, তাঁকে সে নামেই ডাকবে, যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করবে। তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দেয়া হবে।’
যে সমস্ত রূপে আল্লাহর নামকে অসম্মান করা হয়, বিকৃত করা হয়, তা নিম্নরূপ-
(ক) আল্লাহর নামে মূর্তির নাম রাখা।
(খ) এমন নামকরণ করা যা আল্লাহর মর্যাদার পরিপন্থী, যেমন নাসারা জাতি আল্লাহর নাম রেখেছে أب অর্থাৎ পিতা।
(গ) আল্লাহ্র এমন وصف বা বৈশিষ্ট বর্ণনা করা, যা তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। যেমনঃ ইহুদীরা বলে আল্লাহ্ ফকীর। আল্লাহ্ বলেন-
لَّقَدْ سَمِعَ اللّهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءৃৃ..
‘যারা বলে আল্লাহ্ ফকীর আমরা ধনী, আল্লাহ্ তাদের কথা শুনেছেন......।’
আল্লাহ্ তার উত্তরে বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاء إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
‘হে মানবজাতি! তোমরা তো আল্লাহর মুখাপেক্ষী, কিন্তু আল্লাহ্ তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।’ ৃৃ
.. وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاء ৃৃ.
‘........আল্লাহ্ অভাবমুক্ত আর তোমরা ফকীর, অভাবগ্রস্ত......।’
আল্লাহর নিদ্রাতন্দ্রা কোনটারই প্রয়োজন নেই। আল্লাহ ক্লান্ত হননা। ইয়াহুদীরা বলে, আল্লাহ্ ছয়দিনে আসমান যমীন তৈরি করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাই তিনি সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। আল্লাহ্ তার জবাবে বলেন-
وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍ
‘আমি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের অন্তবর্তী সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছি ছয়দিনে, আমাকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।’
আল্লাহর হাত সম্পদে সম্পূর্ণ, সৃষ্টির শুরু থেকে অবিরামভাবে মাখলুককে দিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাঁর ধনভান্ডার থেকে সামান্যতমও কমেনি।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
يد الله ملأى لاتغيضحا نفقه سحاء الليل والنهار أرأيتم ما أنفق مذ خلق السماء والأرض فإنه لم يغض مافي يده.
‘আল্লাহর হাত (সম্পদে) পরিপূর্ণ, দিবারাত্রির অবিরাম খরচ তা থেকে কমায়নি। তোমরা কি দেখনি যে, আসমান যমীন সৃষ্টি থেকে যা তিনি খরচ করেছেন, তাঁর হাতে যা রয়েছে, তা থেকে এতটুকুও কমেনি।’
কিন্তু ইয়াহুদীরা বলে আল্লাহ্ কৃপন, হাত রুদ্ধ। এ কথা বলে তারা আল্লাহর মর্যাদা হানিকর কথা বলেছে।
وَقَالَتِ الْيَهُودُ يَدُ اللّهِ مَغْلُولَةٌ
‘ইয়াহুদীরা বলে, আল্লাহর হাতরুদ্ধ অর্থাৎ আল্লাহ্ কৃপণ।’
আল্লাহ্ তার উত্তরে বলেন
غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُواْ بِمَا قَالُواْ بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاء
‘তাদের হস্তকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, তারা যা বলেছে এতে তারা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহর উভয় হস্ত প্রসারিত। যেভাবে তিনি চান খরচ করেন।’
(ঘ) আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকার করা যেমন জাহমিয়া, মু’তাযিলা তারা আল্লাহর দেখা, শুনা ইত্যাদি সিফাতকে অস্বীকার করে। আল্লাহর সিফাতের বিকৃত ব্যাখ্যা করা যেমন আশা‘ইরাহ, তারা আল্লাহর হাতের ব্যাখ্যা করে কুদরত, রহমত ইত্যাদি দ্বারা। আল্লাহর সিফাতের সাদৃশ্য সাব্যস্ত করা। যেমন মুশাব্বিহাহ্ ফিরকা।
(ঙ) কোন মানুষ তার কৃতদাসকে বলবেনা عبدي, أمتي, আমার দাস, আমার দাসী। এতে আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের সাথে শরীক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لايقل أحدكم: أطعم ربك وضئ ربك، وليقل: سيدي ومولاي ولايقل أحدكم: عبدي وأمتي وليقل فتاى وفتاتي وغلامي
‘তোমাদের কেউ যেন না বলে, তোমার রবকে খাওয়াও, তোমার রবকে অযু করাও। বরং বলবে আমার সাইয়্যেদ, আমার মাওলা, তোমাদের কেউ নিজের দাস-দাসীকে عبد,أمة না বলে বরং বলবে فتى,فةاة , غلام।
সহীহ বুখারীতেও এমনটি রিওয়ায়াত রয়েছে।


শিরকের পরিণতি ও পরিণামঃ
শিরকের পরিণতি ও পরিণাম অতীব ভয়াবহ। শিরক এমন জঘণ্য অপরাধ যা পরম দয়াময় আল্লাহকে রাগান্বিত করে। এটি এমন এক অপরাধ যাতে আল্লাহ সরচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট হন। শিরক জাহান্নামকে অবধারিত করে দেয়। বঞ্চিত করে দেয় জান্নাতের সুখ থেকে।
কুরআন-সুন্নাহয় আলোচিত শিরকের কিছু পরিণতি নিম্নে আলোচনা করা হল।
১। সবচেয়ে বড় যুল্ম।
যুল্ম হলো ইন্সাফ বা আদল এর বিপরীত। আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এ সৃষ্টিতে তাঁর কেউ শরীক নেই। অতএব ইন্সাফ হলো এককভাবে তাঁরই ‘ইবাদাত করা। তাঁর সাথে শরীক করা হবে সবচেয়ে বড় যুলম। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বললেনঃ
يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
‘হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক করোনা। কেননা শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুল্ম’।
২। শিরকের গুনাহ ক্ষমার অযোগ্যঃ
আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্য অপরাধ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।
তবে কেউ যদি খাঁটি তাওবা করে শিরকি ‘আকীদা বিশ্বাস, কর্মকান্ড পরিহার করে খাঁটি ঈমানের দিকে ফিরে আসে, তা হলে আশা করা যায় যে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ্ বলেন:
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ- وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
‘বল, (আমার বান্দাদেরকে হে মুহাম্মাদ) ওহে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ (শিরক, কুফরী করে), আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়োনা, আল্লাহ্ সমূদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন (তাওবা, ইস্তিগ্ফারের মাধ্যমে)। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতিদয়ালু। তোমরা ফিরে আস তোমাদের রবের দিকে এবং তাঁর প্রতি আত্মসম্পূর্ণ কর তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে। (যখন শাস্তি এসে যাবে) তখন তোমাদেরকে সাহায্য করা হবে না।’
সাহাবা (রা.) অনেকেই ঈমান আনয়নের পূর্বে শিরকে, কুফরীতে লিপ্ত ছিলেন। এমনকি অনেকে ইস্লামের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁরা শিরক, কুফরকে ছেড়ে দিয়ে খাঁটিভাবে ঈমানে প্রবেশ করেছেন। ইস্লামের পক্ষে লড়াই করেছেন। আল্লাহ্ তাঁদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের মাঝে শামিল করে নিয়েছেন। তাঁরা ঈমানের দিকে এত উন্নত মানে পৌঁছেছেন যে, আল্লাহ্ তাঁদের ঈমানকে হিদায়াতের মাপকাঠি হিসেবে উল্লেখ করে বললেন।
فَإِنْ آمَنُواْ بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَواْ ....
‘তোমরা যাতে ঈমান এনেছো, তারা যদি তাতে তদ্রুপ ঈমান আনে তবে তারা নিশ্চয় হিদায়াত পাবে...।’
তাওবার এসুযোগ থাকবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া এবং মৃত্যুর গরগরা অর্থাৎ প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়া পর্যন্ত।
এরপরে আর ঈমান, তাওবা কোনটাই গ্রহণযোগ্য হবেনা। আল্লাহ্ বলেনঃ
.......... يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لاَ يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا......
‘.... যেদিন তোমার রবের কোন নিদর্শন এসে পড়বে, সেদিন তার ঈমান কোন উপকারে আসবেনা, যে ব্যক্তি পূর্বে ঈমান আনেনি কিংবা যে ব্যক্তি ঈমানের মাধ্যমে কল্যাণ অর্জন করেনি.....।’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামাতের পূর্ব অবস্থা বলতে গিয়ে বলেছেন-
لاتقوم الساعةৃৃ وحتى تطلع الشمس من مغربها فإذا طلعت ورآها الناس آمنوا أجمعون فذلك حين لاينفع نفسا إيمانها لم تكن أمنت من قبل أوكسبت في إيمانها خيرا
‘কিয়ামাত হবেনা..... এবং যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। যখন সূর্য উদিত হবে এবং লোকেরা তা দেখবে সকলেই ঈমান আনবে কিন্তু তখনকার ঈমান কোন লোকেরই উপকারে আসবে না যদিনা ইতোপূর্বে ঈমান এনে থাকে, ঈমান লওয়ার পর কোন ভাল কাজ করে থাকে।’
عن أبي هريرة رض قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم "من تاب قبل أن تطلع الشمس من مغربها، تاب الله عليه."
‘আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হওয়ার পূর্বে যে তাওবা করবে, আল্লাহ্ তার তাওবা কবুল করবেন।’
عن عبد الله بن عمر رض الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : إن الله عزوجل يقبل توبة العبد مالم يغرغر.
‘আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দার তাওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাণ ওষ্ঠাগত না হয়।’

মৃত্যুর পূর্ণ আলামত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ্ বলেন:
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الآنَ وَلاَ الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ أُوْلَـئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
‘তাওবা তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দকার্য করে, আর মৃত্যু তাদের কারো নিকট উপস্থিত হলে বলে, আমি এখন তাওবা করছি এবং তাদের জন্যও নয় যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরা তারাই যাদের জন্য আমি প্রস্ত্তত করে রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।’
৩। শিরক যাবতীয় নেক আমলকে নষ্ট করে দেয়ঃ
শিরক এত বিষাক্ত যে, একটি মানুষের জীবনের কষ্টার্জিত নেক ‘আমলগুলোকে মুহূর্তের মাঝে বিলীন করে দেয়ার জন্য একটি শিরকই যথেষ্ট। যেমন এক বালতি ফ্রেস দুধকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য এক ফোঁটা প্রস্রাবই যথেষ্ট।
আল্লাহ বলেনঃ
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
‘তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে এ বিষয়ে আমি ওহী পাঠিয়েছি যে, যদি তুমি শিরক কর, তাহলে তোমার যাবতীয় আমল অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে, আর তুমি হবে তখন নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের একজন’।
যেমন কেউ যদি দশহাজার টাকা দিয়ে একটি মাল ক্রয় করে আট হাজার টাকা বিক্রি করে, তা হলে তার দু’হাজার টাকা ক্ষতি হলো। এটাকে বলা হয় نقصان । কিন্তু দশহাজার টাকার মাল পুরোটাই যদি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তখন বলা হবে পুঁজি পুরোটাই নি:শেষ হয়ে গিয়েছে। এটা হলো خسران। এমনি ভাবে শিরকের মাধ্যমে পূর্বকৃত সমস্ত ‘আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
৪। শিরক জান্নাত থেকে বঞ্চিত করেঃ
জান্নাত তৈরি করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। আল্লাহ্ জান্নাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন-
..... أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘.......তৈরি করা হয়েছে (জান্নাত) মুত্তাকীদের জন্য।’
মুশরিক আল্লাহর দুশমন। আল্লাহ্ যে জান্নাত তাঁর বন্ধুদের জন্য তৈরি করেছেন, তাঁর দুশমনদেরকে কখনও সে জান্নাতে স্থান দেবেন না। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
‘যে আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেবেন। আর তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যালিমদের কোন সাহায্য কারী নেই’।
৫। শিরক জঘণ্যতম পাপঃ
আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا
‘যে আল্লাহর সাথে শিরক করল, সে জঘন্য পাপ করল’।
عن ابن مسعود قال: قلت يا رسول الله أى الذنب أعظم عند الله قال: أن تجعل لله ندا وهو خلقك"
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূলঃ আল্লাহর নিকট জঘন্যতম পাপ কোনটি? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ বানানো অর্থাৎ তার সাথে কাউকে শরীক করা্ অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ
"ألا أنبئكم بأكبر الكبائر؟ قلنا بلى يارسول الله قال: الإشراك بالله وعقوق الوالدين"
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহটি সম্পর্কে জানাবনা? (তারা বলেন) আমরা বল্লাম, হাঁ হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া’।
৬। শিরক হল চরম পথভ্রষ্টতা ঃ
আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
‘যে আল্লাহর সাথে শিরক করল, সে পথভ্রষ্টতায় অনেক দূর গড়িয়ে গেল’।
৭। শিরক অপবিত্রতাঃ
শিরক মানুষকে অপবিত্র করে দেয়। আল্লাহ বলেনঃ
إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلاَ يَقْرَبُواْ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَـذَا
‘নিশ্চয় মুশরিকরা অপবিত্র, অতএব এ বৎসর পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকটে না আসে’। এখানে ‘আকীদাগত নাপাকী বুঝানো হয়েছে।
৮। শিরক ধ্বংশ ও বিপর্যয়ের কারণ ঃ
আল্লাহ বলেনঃ
وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاء فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ
‘যে আল্লহর সাথে শিরক করে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে, আর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোন স্থানে নিক্ষেপ করে।’
৯। শিরক এক চরম ব্যর্থতাঃ
মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে , তারা এ আশায়ই করে থাকে যে, পরকালের কঠিন দিনে তারা তাদের কল্যাণে আসবে, তাদের জন্য সুপারিশ করবে। কিন্তু পরকালে তারা পুরোপুরিই ব্যর্থ হবে। তারা তাদের কোন কল্যাণেই আসবেনা।
আল্লাহ বলেনঃ
وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُم مَّوْبِقًا
‘স্বরণ কর সেদিনের কথা যেদিন তিনি (আল্লাহ) বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক। তখন তারা তাদেরকে ডাকবে। কিন্তু তারা এ ডাকে সাড়া দেবেনা। আমি তাদের জন্য ধ্বংসের গহবর বানিয়ে রেখেছি।’
"وإذا رأى الذين أشركوا شركاءهم قالوا ربنا هؤلاء شركاؤنا الذين كنا ندعو من دونك فأتوا إليهم القول إنكم لكاذبون"
‘মুশরিকরা যখন তাদেরকে দেখবে, যাদেরকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক করেছিল, তখন বলবে, হে আমাদের রব এরাই তো আমাদের শরীক, তোমাকে ছাড়া আমরা যাদেরকে ডাকতাম, তখন ওরা তাদেরকে বলবে, তোমরাই মিথ্যাবাদী।
আল্লাহ্ বলেনঃ
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُواْ أَيْنَ شُرَكَآؤُكُمُ الَّذِينَ كُنتُمْ تَزْعُمُونَ
‘আমি যেদিন তাদেরকে হিসাবের জন্য একত্রিত করব অতঃপর তিরস্কার করে মুশরিকদেরকে বলব তোমাদের শরীকগণ কোথায়, যাদের ব্যাপারে তোমরা দাবী করতে যে তারা আল্লাহর শরীক।’
১০। মুশরিকের জন্য ক্ষমা চাওয়া যাবে নাঃ
যেহেতু শিরক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ তাই মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষেধ। আল্লাহ বলেনঃ
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُواْ أُوْلِي قُرْبَى مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
‘নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য মাগফিরাত কামনা করবে, যদিও তারা তাদের নিকট আত্মীয় হোক, এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা জাহান্নামী’।
"عن أبي هريرة رضي قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم " أستأذنت ربي أن أستغفر لأمى فلم يأذن لي واستأذنته أن أزور قبرها فأذن لي"
‘আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমানঃ আমি আমার মাতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে আমার রবের নিকট অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দেন্নি, তার কবর যিয়ারতের অনুমতি চাইলাম, তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর মাতার জন্য ক্ষমা চাইতে নিষেধ করার কারণ হলো তিনি কাফির ছিলেন, মুশরিক ছিলেন। কাফির, মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বৈধ নয়।
"عن أنس رض، أن رجلا قال يا رسول الله أين أبي قال في النار فلما قفي دعاه فقال: إن أبي وأباك في النار"

‘আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, কোন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা কোথায়? তিনি বললেন, জাহান্নামে, যখন সে ফিরে যেতে লাগল, তিনি তাকে ডেকে বললেন, নিশ্চয় আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে।’
১১। শিরক করা মানে আল্লাহর হক নষ্ট করা ঃ
আল্লাহর অধিকার বান্দার উপর যে সে ‘ইবাদাত করবে আল্লাহর, কিন্তু শরীক করবে না। তাই শিরক না করা বান্দার উপর আল্লাহর হক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুয়ায (রা.) কে বললেনঃ
"يا معاذ أتدري ما حق الله على العباد قال: ألله ورسوله أعلم قال: "أن يعبدوه ولايشركوا به شيئا"
‘হে মুয়ায! তুমি কি জান, বান্দাদের উপর আল্লাহর কী হক রয়েছে? মু‘য়ায বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তারা তাঁর ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না।’
১২। মুশরিকের তাওবা খুবই কম নসীব হয় ঃ
মুশরিক তার শিরকী কর্মকান্ডগুলোকে নেকের কাজ মনে করেই তো করে। তাওবা তো সে ব্যক্তিই করবে, যে বুঝতে পারে যে, সে অন্যায় করছে। যেমন যে চুরি করে সে নিজেও বুঝে যে, সে অন্যায় করছে। তাই কোন না কোন সময় তার তাওবার চিন্তা আসতে পারে। কিন্তু যে শিরক করছে সে তো ভাবছে না যে সে শিরকের মতো জঘণ্য কাজ করছে। তাই তার তাওবার চিন্তা আসার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। যেমন: কেউ মাযারের উদ্দেশ্যে গরু-ছাগল দিয়ে কখনও ভাবতে পারেনা যে, সে অন্যায় কাজ করছে, কাজেই তাওবার প্রয়োজন কেন? আল্লাহ্ বলেন
قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا-الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
‘‘বলুন! আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা দুনিয়ার জীবনে বিভ্রান্ত হয়; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।’’

বাংলাদেশে প্রচলিত শিরকসমূহঃ
শিরক একটি জঘণ্য অপরাধ। বিশ্বের প্রায় সবদেশেই কমবেশি শিরক প্রচলিত রয়েছে। পাক ভারত উপমহাদেশে বিশেষ করে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশেও শিরকের প্রচলন রয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই অবলীলাক্রমেই শিরকে লিপ্ত হয়ে তার অনন্তকালের সুখ শান্তিময় জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামের চির শাস্তির উপযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে মুসলিমদের মাঝে বেশির ভাগ শিরকই প্রচলিত হয়েছে ভন্ড পীর ও মাযারকে কেন্দ্র করে। অনেক মুরীদই পীরের দরবার গিয়ে পীরকে ছেজদা করে। কপাল ঠেকিয়ে পদচুম্বন করে। পীর মারা গেলে অনেক ক্ষেত্রেই সেখানে মাযার মাযার হয়। বিশাল আকারের গম্বুজ তৈরী করে খুব দামী চাদর দিয়ে কবরটি ঢেকে রাখে। এই কবর (মাযার) কেন্দ্রিক চলে শিরকী কার্যক্রম। কোন কোন ক্ষেত্রে কবরস্থ ব্যক্তি ভাল মানুষ ছিলেন বলে জানা যায়। যেমনঃ শাহজালাল (রঃ), শাহপরাণ (রঃ) এছাড়া আরো অনেক। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ তাদের কবরগুলি কেন্দ্র করে অনেক শিরকী কার্যক্রম চলছে। সিলেট শাহজালাল (রঃ) এর কবরের পাশে গজারমাছ, চট্রগ্রামে বায়জীদ বোস্তামীর কবরের পাশে বড় বড় কাছিম, খুলনায় খানজাহান আলীর কবরের পাশে কুমীরকে কেন্দ্র করে চলছে অনেক শিরকী কার্যক্রম। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মাযার মাযার হয়েছে এ অজুহাত দিয়ে যে, সেখানে অমুক বুযুর্গ চলার পথে বিশ্রাম করেছিলেন। এমনকি কোন কোন স্থানে মাযার মাযার হয়েছে, অথচ সেখানে কোন মানুষকে দাফন করা হয়েছে, তার ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। মাযারগুলিতে খেদমতের নামে থাকে অনেক জটওয়ালা, চুলওয়ালা, যারা গাজা, আফিম খায়, সরল মানুষের টাকা পয়সা লুটে নেয়।
নিম্নে বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু শিরকের আলোচনা করা হলোঃ
1. ওলীদের কবরের উপর অথবা পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছের শিকড়, বাকল ব্যাবহারে বিবিধ কল্যাণ লাভ হবে বলে বিশ্বাস কর।
2. ওলী, পীর বুজুর্গদের কবরের পার্শ্ববর্তী স্থানের গাছে মান্নত করে সুতা, তাগা ইত্যাদি বাঁধলে মান্নত পূরা হবে বলে বিশ্বাস করা।
3. বিভিন্ন মাযার থেকে আনীত সুতা, তাগা হাতে বাঁধলে বা গলায় ঝুলালে বিপদ আপদ দূর হবে, রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করা।
4. কবরে সিজদা করা।
5. মাযারের পুকুরের পানি পান করলে, পুকুরের কুমীর, কাসিম, গজার মাছকে খাবার দিলে রোগ থেকে মুক্তি লাভ করবে, বিপদ আপদ দূর হবে বলে বিশ্বাস করা।
6. ছোট ছেলে মেয়েদেরকে বিপদ আপদ, জিনভূত, রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য তাদের গায়ে কাসিমের, গজার মাছ ইত্যাদির শেওলা মাখা, মাযারের ধূলা বালি মাখা।
7. মৃত ওলীগণ সাহায্য করতে পারেন, এ বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া।
8. বাস, গাড়ি চালনার সময় বিপদ আপদ দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে মাযারে টাকা পয়সা দেয়া।
9. নবী রাসূলগণ, ওলীগণ গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা।
10. জীবনকে সুখের করার জন্য ওলীদের কবর, কবরের দেয়াল, গিলাফ ইত্যাদি স্পর্শ করে, চুমু খেয়ে বরকত নেয়া।
11. ওলীগণ সর্বত্র হাজির হতে পারেন, বিশ্বাস করা।
12. ওলীদের কবর, পীরের সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকা।
13. দু‘আ গৃহীত হওয়ার জন্য পীর, ওলীদের মাযারের দিকে মুখ করে দু‘আ করা।
14. ক্ষমতার দিক থেকে মাযারস্থিত ব্যক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা।
15. ওলীদের মাযারে অবস্থান গ্রহণ করে তাদের বাতেনী ফায়েয লাভ করা।
16. ওলীগণ বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা।
17. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা।
18. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মীলাদ মাহফিলে হাজির হন, এ ধারণা পোষণ করা।
19. দূর থেকে ইয়া খাজাবাবা ফরিদপুরী, ইয়া শাহজালাল বাবা ইত্যাদি বলে ডাকা।
20. পাক পান্জাতনের যিক্র করা। (পাক পানজাতন বলতে বুঝায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আলী (রা.), ফাতিমা (রা.), হাসান-হুসাইন (রা.)।
21. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথিত কদম মুবারকের ছাপ বিশিষ্ট পাথর দ্বারা রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা।
22. আবু জাহলের হাতের পাথর দিয়ে রোগমুক্তি ও কল্যাণ কামনা করা।
23. টিয়া পাখি, বানরের মাধ্যমে ভাগ্য জানার চেষ্টা করা।
24. ভাগ্য সম্পর্কীয় ব্যাপারে গণক এবং জ্যোতিষদের কথায় বিশ্বাস করা।
25. গাওছ,কুতুব, আবদাল দুনিয়া পরিচালনা করেন, মানুষের ভালমন্দ করেন বলে বিশ্বাস করা।
26. ‘আহমাদ’ আর ‘আহাদ’ এর মধ্যে কেবল ‘মীম’ অক্ষরের পার্থক্য বলে বিশ্বাস করা।
27. আরশে যিনি আল্লাহ্ ছিলেন, মদীনায় তিনিই রাসূল হয়ে আগমন করেছেন বলে বিশ্বাস করা।
28. আল্লাহ্র ধন খাজাকে দিয়ে আল্লাহ্ হলেন শূণ্য হাত। এখন যা কিছু প্রয়োজন খাজার নিকট চাইতে হবে, এ বিশ্বাস পোষণ করা।
29. কোন মানুষকে গাউছুল আজম বলে বিশ্বাস করা।
30. কোন ছবি বা মূর্তিকে সামনে রেখে মাথা নত করা, কুর্ণিশ করা।
31. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আইনদাতা, বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা।
32. কোন ব্যক্তিকে দোজাহানের কিবলা বলে বিশ্বাস করা।
33. কোন বুযর্গ ব্যক্তি একই সময় একাধিক জায়গায় অবস্থান করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা।
34. দুরূদে নারিয়া পড়া।
35. কবর যিয়ারতের পর কবরের সম্মানে পিছপা হয়ে আসা।
36. আকীক, পান্না প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, এরূপ আকীদা, বিশ্বাস পোষণ করা।
37. শিখা অনির্বাণ, শিখা চিরন্তনকে শক্তির উৎস মনে করা, স্যালুট দেয়া, মাথানত করা।
38. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূরের সৃষ্টি, তাই তিনি আল্লাহর মূল সত্তার একটি অংশ বলে বিশ্বাস করা।
পরিশিষ্ট
আল্লাহ্ পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে। সে মেয়াদ কার কতটুকু জানা নেই, আর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও কারো পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। আবার এটাও নিশ্চিত যে, মেয়াদ যখন ফুরিয়ে যাবে, তখন একটি মুহূর্তের জন্যও আর তাকে ধরে রাখা সম্ভব নয়, অনন্তকালের জন্য সে হারিয়ে যাবে। কেউ তার সন্ধান দিতে সক্ষম হবে না। আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে হ্যালো বললেই সারা দুনিয়ার খবর নেয়া সম্ভব, কিন্তু বাড়ির পাশেই একেবারেই কাছে মাত্র সাড়ে তিনহাত মাটির নীচে প্রিয়জনদেরকে রেখে আসা হল, কিন্তু কি অবস্থায় আছে, কেমন আছে, কোন দিন জানা সম্ভব হলো না। সে অনাদি ও অনন্তকালে নি:সঙ্গ জীবনে কল্যাণ ও শান্তি নিশ্চিত হতে পারে, একমাত্র স্বচ্ছ ও নির্মল ঈমানের মাধ্যমে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনেও শান্তির ফল্গুধারা বয়ে দিতে পারে খাঁটি ঈমান। যে ঈমানে থাকবে না শিরকের কোন ছোঁয়াচ, দূষিত হবে না শিরকের দুর্গন্ধ বাতাসে। যে ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন আম্বিয়া আলাইহিমুছ্ছালাম।

শিরক মিশ্রিত ঈমান ধ্বংস করে দেয় মানুষের স্বপ্ন সাধ, ধূলায় মিশিয়ে দেয় কষ্টের আমলগুলো। আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় রাসূলকে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি তুমি শিরক কর, পাহাড়সম তোমার আমলগুলো মিটে যাবে মুহূর্তের মধ্যে। পড়ে যাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ততায়। তাই সকল নবী রাসূলের দাওয়াতের মূল কথা ছিল একটাই। আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাতির উদ্দেশ্যে প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা ছিল ‘তোমরা বল! আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তা হলে তোমরা সফলকাম হবে।’ কৃষক যেমন কাঙ্খিত মানের ফলন পাওয়ার আশায় বীজ বপন করার পূর্বে যমীনকে ভাল করে কর্ষণ করে যমীন থেকে আগাছা পরগাছা দূরীভূত করে তারপর বীজ বপন করে, তেমনিভাবে ঈমানের কাঙ্খিত মানের ফল পাওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রথমে অন্তর থেকে শিরকী কুফরী চিন্তা চেতনাকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে অন্তরকে ঈমানের উপযোগী করা। আল্লাহ্ বলেছেন, ‘যে তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ণ করল সে এমন মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনও ছিঁড়বার নয়।’ কৃষক অসতর্ক থাকলে পোকা মাকড় তার ফসলকে নষ্ট করে দেয়, ঠিক তেমনিভাবে একজন মুমিন তার ঈমানের ব্যাপারে অসতর্ক থাকলে ঈমানের চির দুশমন শিরক খুব সূক্ষভাবে কুড়ে কুড়ে ঈমানকে খেয়ে ভষ্ম করে দেয়। তাই একজন মুমিনের সতর্কতার জন্য জানা প্রয়োজন কিভাবে মানব সমাজে শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে। কী কী কারণে মানুষ শিরক করতে পারে, শিরকের প্রকারগুলো কী কী, শিরকের পরিণতি কী।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সাচ্ছা ঈমান লাভ করার তৌফীক দিন।
----------------

গ্রন্থপঞ্জী
০১। আল্ কুরআনুল করীম

তাফসীরগ্রন্থ সমূহ
০২। ইবনু কাছীর, ইসমাঈল, আবুল ফেদা, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, ২য় সংস্করণ, ১৯৯৭ খৃ. / ১৪১৮ হি.
০৩। মুহাম্মদ ‘আলী সাবুনী, ছাফওয়াতুত্তাফাসীর, লেবানন, বৈরুত, দারুল কলম, ৫ম সংস্করণ, ১৯৮৬ খৃ. / ১৪০৬ হি.
০৪। মুহাম্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ আশ্শওকানী, ফাতহুল কাদীর, ২য় সংস্করণ, ১৯৬৪ খৃ. / ১৩৮৩ হি.
০৫। তাফসীরুল উশরুল আখীর মিনাল কোরআনিল কারীম, সৌদি আরব, প্রকাশকাল ২০০৭ খৃ. ১৪২৮ হি. সংস্করণ বিহীন।

হাদীসের গ্রন্থসমূহ
০৬। আবু ‘আব্দিল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন ইমাঈল আল বোখারী, সহীহুল বোখারী, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৬ খৃ. / ১৪১৭ হি.
০৭। ইমাম আবুল হোসাইন মুস্লিম বিন আল্হাজ্জাজ আল কোশায়রী আন্নিসাবুরী, সহীহ মুসলিম, রিয়াদ, দারু ‘আলামিল কুতুব, ১৯৯৬ খৃ. / ১৪১৭ হি.
০৮। আবু ঈসা মুহাম্মদ বিন ঈসা আত্তিরমিযী, জামেউত তিরমিযী, ঢাকা, চকবাজার, হামীদিয়া লাইব্রেরী।
০৯। আবু আবদুর রহমান আহমাদ ইবনে শুয়াইব আল-খুরাসানী আন-নাসাঈ, সুনানুন্ নাসায়ী, ভারত, দেওবন্দ, মাকতাবাতু থানবী।
১০। সুলায়মান ইবনুল আশয়াছ আবু দাউদ আসসিজিস্তানী, ভারত, দিল্লী, আলমাকতাবাতুর রশীদিয়া।
১১। ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল, মুস্নাদে ‘আহমদ।

হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ
১২। আল্লামা আবুততায়্যিব মুহাম্মদ শামসুল হক, মা‘আ শরহিল হাফেজ শামসুদ্দীন ইবন কায়্যেম আল জাওযিয়্যাহ্ ‘আওনুল মা‘বুদ শরহে সুনানি আবী দাউ, বৈরুত, লেবানন, দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ্, ১ম সংস্করণ, ১৯৯০ খৃ. / ১৪১০ হি.
১৩। আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল আল বোখারী; আল্ আদাবুল মোফরাদ, বৈরুত, লেবানন, মোয়াস্সাসাতুর রায়্যান, সংস্করণ ৪র্থ, ২০০৮ খৃ./ ১৪২৯ হি.


আকীদার গ্রন্থ
১৪। কাজী ‘আলী ইবন ‘আলী ইবন মুহাম্মদ আবিল ইযয্, শরহুল ‘আকীদাতিত তাহাবিয়্যাহ্, বৈরুত, লেবানন, মুয়াস্সাসাতুর রিসালাহ্, ১৯৯৭ খৃ. / ১৪১৭ হি.
১৫। আব্দুর রহমান বিন হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহ্হাব, ফাতহুল মাজীদ লি শরহি কিতাবিত তাওহীদ, রিয়াদ, দারু ‘আলামিল কুতুব, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৭খৃ. / ১৪১৭ হি.
১৬। মোল্লা ‘আলী কারী, শরহু কিতাবিল ফিকহিল আকবর, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ্, সংস্করণ বিহীন, তারিখ বিহীন।
১৭। আশশায়খ সুলায়মান বিন আব্দিল্লাহ্, তাইসীরুল ‘আযীমিল হামীদ ফী শরহে কিতাবিত তওহীদ, বৈরুত, আল মাকতাবুল ইস্লামী, ১ম সংস্করণ, ১৪০২ হি.
১৮। ধর্ম নিরপেক্ষ ও পক্ষ - কে কোথায়? সংকলনে: অন্বেষক, স. তা. বিহীন।
১৯। হাফেজ মুহাম্মদ আইয়ূব তাওহীদ ও শির্ক সুন্নাত ও বিদ্‘আত: ঢাকা, আল ইসলাহ্ প্রকাশনী, ২য় সংস্করণ, ২০০২ খৃ.
২০। ড. সালেহ বিন ফাওযান বিন ‘আব্দুল্লাহ্, আল্ ইরশাদ ইলাহীহিল ই‘তিকাদ ওয়ারাদ্দু ‘আলা আহ্লিশ শিরকি ওয়াল ইলহাদ, রিয়াদ, সৌদী আরব, আররিয়াসাতুল ‘আম্মাহ লিইদারাতিল বুহুছিল ‘ইলমিয়্যাহ্ ওয়াল ইফতা ওয়াদ্ দাওয়া ওয়াল ইরশাদ, সংস্করণ বিহীন, ১৪১০ হি.

সীরাত গ্রন্থ
২১। আবু মুহাম্মাদ ‘আব্দুল মালিক বিন হিশাম, আস্সীরাতুন্ নববিয়্যাহ্, মিশর, সংস্করণ বিহীন, তারিখ বিহীন।
২২। আবুল ফেদা হাফেজ ইবন কাছীর, বৈরুত, মাকতাবাতুল ম‘য়ারিফ, প্রথম সংস্করণ ১৯৬৬ খৃ.
২৩। সফিয়্যুর রহমান আল্ মোবারকপূরী, আর-রাহীকুল মাখতুম, রিয়াদ, দারুস্সালাম, স. বিহীন, ১৯৯৪ খৃ.

অভিধান
২৪। ইবন মানসুর, লেছানুল ‘আরব, বৈরুত, দারু সাদির সংস্করণ ও তারিখ বিহীন।
২৫। অধ্যাপক আনতুয়ান নামাহ্, আল্-মুনজিদ, বৈরুত, দারুল মাশারিক, ২১ সংস্করণ, ১৯৭২ খৃ.।
২৬। সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল, ১৯৮২ খৃ. ১৪০২ হি.

-------------

 

 

ফুটনোটঃ 

 

সুরা: আল আ‘রাফ ৭ ঃ ১৬-১৭
সূরা: আল কাহফ ১৮ঃ ১০৩-১০৪
সূরা: আন নামল ২৭ঃ ২৪
ইবন মানযুর, লেসানুল ‘আরব শব্দমূল الشرك, দার সাদির, বৈরুত
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল, সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ‘ইতক, বাব নং ৪, হাদীস নং ২৩৮৬
অধ্যাপক আন্তুয়ান, আল্ মুনজিদ, বৈরুত দারুল মাশরিক, সংস্করণ ২১, ১৯৭২খৃ., পৃ. ৩৮৪
সূরা: ত্বাহা ২০ ঃ ৩২
সূরা: আল্ আহকাফ ৪৬ ঃ ৪
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ৩৬
যাকারিয়্যা ‘আলী ইউসুফ আল-ঈমান ওয়া আ-ছারুহু ওয়াশ্শিরকু ওয়ামাযাহিরুহু, কায়রো, মাকতাবাতুস্ সালাম আল-আলামিয়্যাহ্, ২য় সংস্করণ, তাবি, পৃ. ৭৮
ড. ইব্রাহীম বরীকান, আল-মাদখালু লিদিরাসাতিল ‘আকীদাতিল ইসলামিয়্যাহ্, ‘আলামায্হাবি আহলিস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা’আহ্, আল-খুবার: দারুস সুন্নাহ্, সংস্করণ বিহীন ১৯৯২ খৃ., পৃ. ১২৫-১২৬
সূরা: আলে ইমরান ৩ঃ ১৯
সূরা: আলে ইমরান ৩ঃ ৮৫
সূরা: আন্-নাহল ১৬ঃ ৩৬
সূরা: আল আ’রাফ ৭ঃ ১৭২
সূরা: আর রূম ৩০ঃ ৩০
মুহাম্মাদ বিন ‘আলী আশ্ শওকানী, ফাতহুল কাদীর, মিশর, শারিকা মাকতাবা ওয়া মাতবা’আ আলবানী ‘আল্ হালাবী সংস্করণ ২, সন ১৩৮৬হি. খ. ৪ পৃ. ২২৪।
হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর; তাফসীরুল কোরআনিল আযীম, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, সংস্করণ, ২য়, সন ১৪১৭হি., খ. ৩ পৃ. ৫৩৩
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী, সহীহুল বুখারী, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, সংস্করণ ১ম, সন ১৪১৭ হি:, খ. ২য়, পৃ. ২০। আবুল হুসাইন মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশায়রী, সহীহ মুসলিম, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, সংস্করণ ১ম, সন ১৪১৭ হি:, কিতাব- আল কাদার, খ. ৪, পৃ. ২০৪৭, স. ২৬৫৮।
মুস্লিম বিন হাজ্জাজ আলকুশায়রী, সহীহ্ মুসলিম কিতাবুল্ জান্নাতি, বাব নং ১৬, হাদীস নং ২৮৬৫
সূরা: রোম ৩০ঃ ৩৩
সূরা: বনী ইসরাঈল ১৭ঃ ৬৭
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ১২
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ৩২
সূরা: আল্-বাক্বারা ২ঃ ২১৩
আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবন জারীর আত-তাবারী, জামিউল বয়ান ফী তাফসীরিল কুরআন, বৈরুত, দারুল ফিকর, সংস্করণ বিহীন, ১৪০৫ হিজরী, ২/৩৩৪
আত্-তাবারী, প্রাগুক্ত ২/৩৩৪, আল-হাকিম ২/৫৯৬, ইমাম হাকিম বলেনঃ ইমাম বুখারীর শর্তানুযায়ী হাদীসটি সহীহ
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ১২০
সূরা: আল আরাফ ৭ঃ ২০,২১
সূরা: নূহ ৭১ঃ ২৩
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল্ বুখারী, সহীহুল বুখারী, রিয়াদ, দারু আলামিল কুতুব, সং ৪৯২০
ইবনে কাছীর, খ. ৪ পৃ. ৫০৩
তাফসীরে ইবনে কাসীর, খ. ৪, পৃ. ৫০৩, ৫০৪
সূরা: ত্বাহা ২০ ঃ ৮৫-৮৯
সংক্ষিপ্ত ই.বি.কোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশকাল-মে ১৯৮২, খ. ২, পৃ. ৪৮৪
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (র:); অনুবাদ: মাওলানা আব্দুল মান্নান তালিব, তাফহীমুল কুরআন, আধুনিক প্রকাশনী, ৯ম প্রকাশ, এপ্রিল ২০০৬, ঢাকা, খ.৮ম, পৃ.৭০।
তাফসীর ইবনে কাসীর, খ.৩, পৃ.২০৪-২০৫
শাহ ওয়ালী উল্লাহ্, আল-ফাওযুল কাবীর, পৃ. ৫
আবু মোহাম্মদ আব্দুল মালিক বিন হিশাম, আসসীরাতুন নববিয়্যাহ, মিশর, মাকতাবাতুল কুল্লিয়াতিল আযহারিয়্যাহ, তাবি, খ. ১ পৃ. ৭২
ইবনুল কায়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ্, এগাছাতুল লাহফান, ২/১৬৩-১৬৪
ইবন হিশাম, ১/৮৭, ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীমঃ ৪/৪৫৪-৪৫৫ ও সহীহুল বুখারী, ৬/৭৩
ইবন কাছির, আল বেদায়াতু ওয়ান নেহায়াহ্, ১/৮৮
আসসীরাতুন নববিয়্যাহ খ. ১ পৃ. ৭২
সূরা: আল হজ্জ ২২ঃ ৭৩,৭৪
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৬৫-৬৭
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব ১৯, খ. ৮, পৃ. ১৭৪।
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ ওয়াল জান্নাতি ওয়াল বাব, খ. ৮, সং ২৭৮৮।
ইবন জারীর আত তাবারী এর রেফারেন্সে উল্লেখ করেছেন আবদুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মাদ বিন ‘আবদুল ওয়াহ্হাব (১১৯৩-১২৮৫ হি.), ফাতহুল মাজীদ লি শরহি কিতাবিত তাওহীদ, রিয়াদ, দারু ‘আলামিল কুতুব, সংস্করণ ১, ১৪১৭হি., পৃ. ৬১৬।
প্রাগুক্ত
প্রাগুক্ত
সূরা: আন্-নিসা ৪ঃ ১৭১
সূরা: আল্ মায়েদা ৫ঃ ৭৭
সুনানুন্ নাসায়ী, মানাসিক ২১৭, সুনানু ইবনে মাজা মানাসিক, ৬৩।
সূরা: আত্ তওবা ৯ঃ ৩১
জামে’ আত্তিরমিযী, সং ৩০৯৪, মুসনাদে আহমদ, ৪/৩৭৮।
সহীহুল বুখারী, খ.২, পৃ. ২০। সহীহ মুসলিম খ. ৪, পৃ. ২০৪৭, সং ২৬৫৮।
সূরা: রোম ৩০ঃ ৩০
মুসনাদে আহমদ
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, সং ৪৮
সূরা: আল আন‘আম ৬ঃ ৫০
সূরা: আল আ’রাফ ৭ঃ ১৮৮
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৩০
সূরা: আলে ইমরান ৩ঃ ১৪৪
সুনান ইবন মাজা, অধ্যায় আররুহুন, নং ১, হা.সং- ৪
সুনানুত তিরিমিযী, মানাক্বিব অধ্যায়, হাদীছ সং. ১৩
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং ২৯, ৬/৫০
সহীহুল বুখারী, কিতাবু ফাযাইলিস সাহাবা, বাব নং ৫, হাদীস নং ৩৪৬৭
সহীহুল বুখারী, খ. ২, অধ্যায় নং ৯৬ পৃ. ১০৬
ইমাম মালিক ঃ মুয়াত্তা, সফর অধ্যায়, হাদীছ নং ৬৮
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৩
মুহাম্মদ ‘আলী সাবুনী, ছফওয়াতুত তাফাসীর, বৈরুত, দারুল কলম, সংস্করণ ৬, সন ১৪০৬হি., খ.৩ পৃ. ৬৯, ৭০।
সূরা ইউনুস ১০ঃ ১৮
সূরা: ফাতির ৩৫ঃ ১০
সূরা: গাফের (আল্ মু’মিন) ৪০ঃ ৬০
সূরা: আল বাক্বারা ২ঃ ১৮৬
সূরা: আলে ইমরান ৩ঃ ১৯৩
সূরা: আলে ইমরান ৩ঃ ১৬
সূরা: আল আ‘রাফ ৭ঃ ১৮০
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ইজারাহ্, বাব নং ১২, খ. ৩, পৃ. ৫১, ৫২।
আবু দাউদ: সুনান আবুদাউদ, সং ১৪৯৮; তিরমিযী: সুনানুত তিরমিযী, সং ৩৫৫৭।
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ইসতিসকা, অধ্যায়-৩, ২/১৬।
সূরা: আল্ মায়িদা ৫ঃ ৩৫
সূরা: বনী ইসরাঈল ১৭ঃ ৫৭
মুহাম্মাদ ‘আলী সাবূনী, সাফওয়াতুত্ তাফাসীর, (দারুল কলম, বৈরুত, ১৪০৬ হি. ১৯৮৬ খৃ.) খ.১ পৃ.৩৪০, খ.২, পৃ. ১৬৫
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুস সালাত, অধ্যায় ৭, হাদীস স. ৩৮৪, খ.১ম পৃ. ২৮৮-২৮৯
সহীহ্ মুস্লিম, খ.১, পৃ.৩৭, কিতাবুল ঈমান।
সূরা: আল কাহফ্ ১৮ঃ ১০৭
সূরা: আলে ‘ইমরান ৩ঃ ৯০
সূরা: আলে ইমরার ৩ঃ ১০৬
সূরা: মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩৩
সূরা: আয যুমার ৩৯ঃ ৬৫
সূরা: মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩২
সূরা: আশ্ শু‘আরা ২৬ঃ ৭০-৭৪
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ৭৮
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ১০৪
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ২১
সূরা: আল্ বাক্বারা ২ঃ ১৭০
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ১৮
সূরা: আয্যুমার ৩৯ঃ ৪৩, ৪৪
সূরা: যুখরুফ ৪৩ঃ ৮৬
বিস্তারিতের জন্য দেখুন, সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব নং ৩৬, খ. ৮, পৃ. ২০০০-২০০১
সূরা: সাবা ৩৪ঃ ২৩
সূরা: আল্ বাক্বারা ২ঃ ২৫৫
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ১০৯
সূরা: আন্ নাজম ৫৩ঃ ২৬
সূরা: আল আমবিয়া ২১ঃ ২৮
সূরা: আল মুদ্দাস্সির ৭৪ঃ ৪৮
বিস্তারিতের জন্য দেখুন, সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব ২৪, খ. ৮, পৃ. ১৮৩, ১৮৪
সহীহুল বুখারী, প্রাগুক্ত
সহীহুল বুখারী, বাবু কিচ্ছাতু আবী তালেব, বাব নং ৪০, খ.৪, পৃ.২৪৭
সূরা: আয্-যুমার ৩৯ঃ ৬৪
সূরা: আল্ আহক্বাফ ৪৬ঃ ২৩
সূরা: আল্ নামল ২৭ঃ ২৩
(মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম, মক্কা মদীনার ইস্লাম চাই, (শাইনটেক একাডেমী, নরসিংদী ২০০৫ খৃ.) পৃ. ৭৬) শায়খ শরফুদ্দীন আবু ‘আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মদ বিন সাঈদ আলবুছায়রী। কাছীদাতু বুরদা, তাজ কোম্পানী লি: লাহোর, তারিখ ও সাল বিহীন, পৃ. ৩৪।
সূরা: আল্ আমবিয়া ২১ঃ ২২
সূরা: ইউসুফ ১২ঃ ৩৯
সূরা: আত্ তওবা ৯ঃ ৬০
সূরা: আল ইখলাছ ১১২ঃ ১-৪
সূরা: মারইয়াম ১৯ঃ ৮৮-৯২
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ৬৮
সহীহুল বুখারী, তাফসীরু সূরাতিল বাকারা, বাব নং ৮, খ.৫, পৃ. ১৪৯।
সূরা: বনী ইসরাঈল ১৭ঃ ৪০
সূরা: আন্ নাজম ৫৩ঃ ২১,২২
মুহাম্মাদ ‘আলী ছাবূনী, ছাফওয়াতুত্ তাফাসীর (দারুল কলম, বৈরুত, লেবানন, স. ৫, সন ১৪০৬, হি. ১৯৮৬ খৃ.) খ.১, পৃ. ৩৫৭
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ৭৩
সূরা: আল আন‘আম ৬ঃ ১০০-১০১
সূরা: ফুরকান ২৫ঃ ১,২
সূরা: আয্যুখরুফ ৮১
সূরা: আল্ মুমিনুন ৯১
সূরা: আল্ আ’রাফ ৭ ঃ ৫৪
সূরা: আল্ বাক্বারাহ্ ২ঃ ২১
সূরা: আল্ আহক্বাফ ৪৬ঃ ৪
সূরা: আল্ ওয়াক্বি’আহ ৫৬ ঃ ৬৩, ৬৪
সূরা: আল্ ওয়াক্বিয়াহ্ ৫৬ঃ ৬৮,৬৯
সূরা: আল্ কাসাস ২৮ঃ ৭১-৭২
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ১১
সূরা: আশ্ শু’আরা ২৬ ঃ ৭৯-৮১
সূরা: আলে ইমরান ৩ ঃ ২৬
সূরা: আশ্ শূরা ৪২ঃ ৪৯-৫০
সূরা: আল্ কাসাস ২৮ ঃ ৬৮
সূরা: আয্ যুখরুফ ৪৩ঃ ৯
সূরা: আল্ আনকাবুত ২৯ঃ ৬৩
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ৩১
সূরা: আল্ মুমিনুন ২৩ঃ ৮৪-৮৯
সূরা: আল্ আনকাবুত ২৯ঃ ৬১
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ২৫
সূরা: আয্-যুমার ৩৯ঃ ৩৮
সূরা: আল্ জাছিয়াহ্ ৪৫ঃ ২৪
সূরা: আল্ জাছিয়াহ্ ৪৫ঃ ২৬
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তাফসীর, সূরাতুল জাছিয়াহ্, বাব নং.১, খ.৬, পৃ. ৪১
সূরা: আন্ নাহল ১৬ঃ ৩৬
সূরা: ইউসুফ ১২ঃ ১০৬
সূরা: আল-আন‘আম ৬ ঃ ৮২
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ১৩
সহীহুল বুখারী: স. ৪২৭,৪৩৪,১৩৪১,৩৮৭৮. সহীহ্ মুসলিম: স. ৫২৮
ইমাম মালিক: আল মুয়াত্তা, সালাত অধ্যায়, স. ২৬১। ইবনু আবী শায়বা: মুসান্নিফ, ৩/৩৪৫
ইমাম আহমাদ, মুসনাদ; ২/২৪৬
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আলবুখারীঃ সহীহুল বুখারী, স. ৪৩৫, ১৩৩০, ১৩৯০, ৩৪৫৩, ৪৪৪১, ৬৮১৫, মুসলিম বিন হাজ্জাজ: সহীহ্ মুসলিম, স. ৫৩১
ইমাম মালিক বিন আনাসঃ মোয়াত্তা সালাত অধ্যায়, স. ২৬১। ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল; মুসনাত ২/২৪৬
ইব্নুল কাইয়্যেমঃ আলকাফিয়াতুশ শাফিয়াহ্, পৃ. ১৮০
সহীহ্ মুস্লিম, সং ৯৭২
ইবন কুদামা: আল মুগনী, শরহুল খারকী, ২/৫০৮
আবু দাউদঃ সুনানু আবী দাউদ, স. ৩২৩৬. তিরমিযী, জামে’, স. ৩২০
সহীহ্ মুসলিম কিতাবুল জানায়েয, বাবুল আমরি বিতাসবিয়াতুল কবরি, স. ৯৬৯, ২/৬৬৬
সহীহ্ মুসলিম, কিতাবুল জানায়েয বাব নং ৩২, সং. ৯৭০, ২/২৬৭
সুনান্ আবু দাউদ, সং. ৩২২৬ ও সুনানুত তিরমিযী, সং. ১০৫২, হাসান সহীহ্
আবু ইয়া’লাঃ মুসনাদ, সং. ৪৬৯
সূরা: আল্ আন‘আম ৬ ঃ ১২১
সূরা: আল্ আনআম ৬ ঃ ১১৮
সূরা: আল্ আনআম ৬ ঃ ১৬২-১৬৩
সূরা: আল কাওছার ১০৮ ঃ ২
মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ্ মুসলিম, বাবু তাহরীমিয যবহে লিগায়রিল্লাহ্, খ.৩, পৃ. ১৫৬৭
আহমাদ: মুসনাদ, কিতাবুয যুহদ
সূরা: আত্ তাওবা ৯ ঃ ১০৭-১০৮
দেখুন আল বাইহাকীঃ আদদালাইল ৫/২৫৯, ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, তাফসীরুল সূরাতিত তওবা, আয়াত ১০৭-১০৮, খ.২, পৃ.৪৭৯, ইবনু মারদাবিয়্যাহ; আদ্ দুররু, ৩/২৭৬
সুলায়মান ইবনা আশ’আছ আস্সিজিসতানী: সুনানু আবী দাউদ, কিতাবুল আইমান ওয়ান নুযুর, সং. ৩৩১৩
সূরা: আল্ বাকারাহ ২ ঃ ১৭৩
সূরা: আল্ মায়িদা ৫ ঃ ৩
সূরা: আন্ নাজম ৫৩ ঃ ১৯-২২
আব্দুর রহমান বিন হাসানঃ ফাতহুল মাজীদ লি শরহে কিতাবিত তাওহীদ, পৃ. ১৫৫
ইবন কাছির, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, ৪/২৫
ইবনে কাইয়্যিম, আল-জাওযিয়্যাহ, এগাছাতুল লাহফান ২/১৬৮, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীমঃ ইবনে কাছীর ৪/২৯৯
ইবনে হিশাম: আস্ সীরাতুন্নববিয়্যাহ্, ৪/১৩৮
ফাতহুল মাজীদ, পৃ. ১৫৬
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলঃ সহীহুল বুখারী, বাবুল মাগাযী, খ.৫, পৃ. ৩০
ফাতহুল মাজীদ, পৃ. ১৫৬
আব্দুল রহমান ইবন হাসানঃ ফাতহুল মাজীদ। মাক্তাবাতু দারিস্ সালাম, পৃ. ১১৫,১১৬
সফিয়্যুর রহমান মুবারকপুরী, আর রাহীকুল মাখতুম, পৃ. ৪১০, আত-ত্বাবারী, আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর, জামিউল বয়ান ফী তাফছীরিল কুরআন, বৈরুত: দারুল ফিকর, সংস্করণ বিহীন, ১৪০৫হি. ২৭/৫৯
সূরা: আল্-ফাতহ্ ৪৮ ঃ ১৮
সূরা: আল-ফাতহ্ ৪৮ ঃ ১
সহীহুল বুখারী: কিতাবুল মাগাযী, খ.৫, পৃ. ৬৫
সূরা: আল আ’রাফ ৭ ঃ ৩৮
আত তিরমিযী: সুনানুত তিরমিযী
সূরা: আদ্-দাহর ৭৬ ঃ ৭
সহীহুল বোখারী, স. ৬৬৯৬, ৬৭০০।
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুন নযর, বাব লাওফায়া লিনমবিন ফী মা’ছিয়াতিল্লাহ্, খ.৩ পৃ. ১২৬৩, সং.১৬৪১
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল কদর, বাব নং ৬, খ.৭ পৃ.২১৩
ইবন কাছির, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম: ২/১২৮ ও ৪/৪৬৭
সূরা: আল্ জিন ৭২ঃ ৬
সহীহুল বুখারী কিতাবুল দাও‘য়াত, বাব ৬, খ.৭ পৃ. ১৪৭
সুরা: আল ফালাক ১১৩ঃ ১
সূরা:আন নাস ১১৪ঃ ১
মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ মুসলিম, সং ২৭০৮
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ১০৬
সূরা: ফাতের ৩৫ঃ ১৩,১৪
সূরা: ফাতিহা ১ঃ ৪
আবু ঈসা মুহাম্মদ বিন ঈসা, জামেউত্ তিরমিযী
আহমাদঃ মুসনাদে আহমাদ, ৪/৪৪৫
আহ্মাদঃ মুসনাদে আহ্মাদ, ৪/১৫৬
ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, ৪/৩৪২।
মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈলঃ সহীহুল বুখারী, সং. ৩০০৫, মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ মুসলিম, সং ২১১৫
আবু দাউদঃ সুনান আবু দাউদ, ৩/৫২; আহমদঃ মুসনাদে আহমদ
আহমাদঃ মুসনাদে আহমাদ, ৪/১১০,১১১, তিরমিযীঃ সুনানুত তিরমিযী, কিতাব নং-২৯, বাব নং ২৪, সং. ২০৭২
ফাতহুল মাজীদ, পৃ. ১৪৯
মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ মুসলিম, সং ২২০০
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ইজারা, বাব নং ১৬, খ.৩, পৃ. ৫৩
ফাতহুল মাজিদ পৃ. ১০৮
ইবন হিববান; সহীহ্ ইবনে হিববান, ৭/৬৩০, হাকিম; আল্ মুসতাদরাক, ১/৪১৮
ইবনু আবী শায়বা, মুসান্নিফ, সং ৩৫২৪
সূরা: হুদ ১১ঃ ৫৪
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৩৬
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৩৮
সূরা: আলে্ ইমরান ৩ঃ ১৭৫
সূরা: আল্ বাকারা ২ঃ ১৫০
সুরা: আত্ তাওবা ৯ঃ ১৩
সূরা: আন্ নিসা ৪ঃ ৭৭
ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতনা বাব নং ২০, ২/১৩২৮
সুরা: আল্ মাযিদাহ ৫ঃ ৪৪
সূরা: আল্ মাইদাহ ৫ঃ ৫৪
সুনানুত তিরমিযি, সং ২১৭৫, সুনানু আবী দাউদ, সং ৪৩৪৪
সূরা: আন্ নাহল ১৬ঃ ১২৫
সূরা: আল কাছাছ ২৮ঃ ২১
সূরা: ইউসুফ ১২ঃ ১৩
সূরা: ইবরাহীম ১৪ঃ ১৪
সূরা: আর্ রাহমান ৫৫ঃ ৪৬
সূরা: বাকারাহ্ ২ঃ ১৬৫
সূরা: আলে ইমরান ৩ ঃ ৩১
সূরা: আল্ মায়িদাহ ৫ঃ ২৩
সূরা: ইউনুস ১০ঃ ৮৪
সূরা: আল্ ফাতহ্ ৪৮ঃ ২৩
সূরা: বনী ইসরাঈল ১৭ঃ ৭৭
আত তিরমিযীঃ সুনানুত তিরমিযী, সং ২৫১৭
ইবনু আবিদ্ দুমমা, আত্তাওয়াক্কুল, সং ১০, সংকলন. জামে উল উলুম ওয়ালি হিকাম, খ. ২, পৃ. ৫০৭।
সুরা: আল্ বাকারা ২ঃ ১৯৭, ইবনু কাছীর: তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, খ. ১, পৃ. ২৯৮।
সূরা: আল্ জুমু’য়া ৬২ঃ ১০
সূরা: আল্-জুমু‘আ ৬২ঃ ১০
এ আলোচনাটি ২৩/৩/১৪৩০ হি. মস্জিদে হারামে প্রদত্ত জুম‘আর খোতবার একটি অংশ। খতীব, ফজীলাতুশ শায়খ সউদ আশ্শুরায়ম, বিষয়: আর রিয্ক আস্বাবুহু ওয়া ওসাইলুহুল মাশরু‘আহ
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তিব, বাব. ১, খ. ৭, পৃ. ১২
সূরা: আত্ তাওবা ৯ঃ ৩১
আত তিরমিযীঃ সুনান তিরমিযী, কিতাবুত্ তাফসীর বাব নং ৯; আহমদঃ মুসনাদে আহমদ
সুরা: আল্ আনআম ৬ঃ ১২১
সূরা: আন্ নিসা ৪ঃ ৫৯
আহ্মদ, মুসনাদে আহমাদ, সং ৩১২১
সূরা: আল আহযাব ৩৩ঃ ৩৬
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ১৫
আহমাদঃ মুসনাদে আহমাদ, সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারা, নং ১৮৪
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল জিহাদ, বাব নং ১০৮ হাদীস নং ১৮৪০
শা’বানীঃ কিতাবুল মীযান, খ.১, পৃ. ৬২
ইবনু ‘আবেদীনের, আল হাশিয়া গ্রন্থ, খন্ড.১, পৃ.৬৩
আল্ কাওলুল মুফীদ
আল হাকিম, আল বাইহাকী, আল্ মানাকিব, ১/৪৭১
শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসানঃ ফাতহুল মাজীদ পৃ. ৩৩৮, মাকতাবু দারিসসালাম, দেখুন ইবন ‘আবদুলবার, আল জামে, ২/৩২
সূরা: আন নূর ২৪ঃ ৬৩
শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসানঃ ফাতহুল মাজীদ পৃ. ৩৩৯, মাকাতুবাতু দারিস সালাম, রিয়াদ
ফাতাওয়া ইবন তাইমিয়া
তাহবীর ও তাকরীর
শারহুস সিরাতুল মুস্তাকীম
সূরা: ইউসূফ ১২ঃ ৪০
সূরা: আল আন’আম ৬ঃ ৬২
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ৪৭
সূরা: আন নিসা ৪ঃ ১০৫
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ৪৪
সূরা: আল-আ’রাফ ৭ঃ ৫৪
সূরা: আল বাকারা ২ঃ ১০২
নাসায়ী কিতাব আত্ তাহরীম সং ১৯
মুস্নাদে আহমদ, ১/১৯০, ১৯১
সূরা: আন্ নামল ২৭ঃ ৬৫
আবু দাউদ, সং. ৩৯০৪
মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ্ মুসলিম, সং ২২৩০
সূরা: আল্ আ’রাফ ৭ঃ ১৮৭
সুরা: আল্ জিন ৭২ঃ ৬
ইবন কাছীর, তাফসীরুল কোরআনিল ‘আযীম, রিয়াদ দারু আলামিল কুতুব, ৪/৫০৬
মুফতী মাওলানা মনসূরুল হকঃ কিতাবুল ঈমান, রাহমানিয়া পাবলিকেশন্স, মুহাম্মদপুর, ঢাকা, সং ৩য়, ২০০৪ইং পৃ. ৩৭-৩৮
ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ইসলামী বিশ্বকোষ (সংক্ষিপ্ত) খ. ২, পৃ. ৫৬৪
বিস্তারিত দেখুন: হাফেজ ইবন কাছীর, আল হেদায়া ওয়ান নেহায়া, খ.১১, পৃ. ১৩২
আবুল ‘আববাস শামসুদ্দীণ আহমদ বিন মুহাম্মদ, ওয়াফইয়াতুল আ‘ইয়ান ওয়া আবনাউ আবনাইজ্জামান, (আমীরকুম, সং ২য় ১৩৪৪হি.) খ.২, পৃ. ১৪০-১৪১
সূরা: আল কাহফ ১৮ঃ ১১০
সূরা: আল্ মুমিনূন ২৩ঃ ৩৩,৩৪
সূরা: আত্ তাওবা ৯ঃ ১২৮
সূরা: আল্ বাক্বারা ২ঃ ১২৯
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ১৫,১৬
আত্ তিরমিযীঃ সুনানুত তিরমিযী, সং ১৫৫৩, আল হাকিম, মুসতাদরাক, ১/১৮
আবু দাউদঃ সুনান আবু দাউদ, সং ৩৯১০, তিরমিযীঃ সুনান তিরমিযী, সং ১৬১৪।
আহমাদঃ মুসনাদে আহমদ, ২/২২০
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলঃ সহীহুল বুখারী, কিতাব: আত্তিন, বাব সং ৪৫, লা হামনাতা খ. ৭ পৃ. ২৭, মুসলিম বিন হাজ্জাজঃ সহীহ মুসলিম, কিতাবুস্ সালাম, বাব নং ৩৩ খ. ৪, পৃ. ১৭৪৩, সং ২২২০
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তিব, বাব নং ৩০, খ.৭ পৃ. ২১; সহীহ্ মুসলিম। বাব নং ৩২ হাদীছ নং ২২১৮ খ. ৪ পৃ. ১৭৩৭
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল মারদা, খ.৭
সহীহুল বুখারী, বাব নং ৫৪ খ. ৭ সং ৩১
সহীহ মুস্লিম, কিতাব নং ৩৯ বাব নং ৩৩ সং ২২২১, পৃ. ১৭৪৪
সহহুিল বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাব নং ৩৫, খ. ৫, পৃ. ৬২
সুনানুত তিরমিযী, সূরা আল্ ওয়াকেয়াহ্, হাদীছ নং ৩
সূরা: আল ওয়াকেয়া- ৬৮,৬৯
সূরা: আল্ আন‘আম ৬ঃ ১৭, সূরা: ইউনুস ১০ঃ ১০৭
সূরা: ফাতির ৩৫ঃ ১৪
সূরা: ফাতির ৩৫ঃ ২২
সূরা: আল বাকারাহ ২ঃ ২২
আহমাদ ইবন হাম্বাল, মুসনাদে আহমাদ, ৪/৪০৩, আব্দুর রহমান বিন হাসান : ফাতহুল মাজীদ, রিয়াদ পৃ: ১০৩, দারুআলামিল কুতুব।
মুসনাদে আহমাদ, ৪/৪০৩
সুরা: আল্ কাহফ ১৮ঃ ১১০
সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুন নুযুর, সং. ৯
মুসলিম বিন হাজ্জাজ, সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যুহদ, স. ৪৬
আহমাদঃ মুসনাদে আহমদ ৩/২, ইবনে মাজাহ কিতাবুয যুহদ, স.২১
আত্ তাবরানী সনদ উত্তম
ইবন খুযাইমাঃ সহীহ ইবনে খুযামা, সং ৯৩৭, সনদ হাসান।
ইমাম আহমাদঃ মুসনাদে আহমদ, ৪/১২৫।
ইবন আবিদদুনয়াঃ কিতাবুল ইখলাছ, ইবন জারীরঃ আততাহযীব, আল কাবীর, সং ৭১৬০, হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৪/৩২৯। তিনি এ হাদীসটিকে সহীহ্ বলেছেন।
সূরা: আন্ নিসা ৪ঃ ১৪২।
সূরা: আল্ মাউন ১০৭ঃ ৪-৭।
সুনানু ইবন মাজা, সং ৩৯৮৯; তাবারানী, আছ ছগীর, ২/৪৫; হাকেম, মুসতাদরাবা, ১/৪, ৪/৩২৮
মুসলিম বিন হাজ্জাজ আলকুশায়রীঃ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিরর, স. ১৬৬, সুনানু ইবনে মাজা, কিতাবুয যুহদ সং ২৫।
মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশায়রীঃ সহীহ মুসলিম , কিতাবুল ইমারাহ, খ.৩, স. ১৫২, সুনানুন নাসায়ী , কিতাবুল জেহাদ স. ২২
সহীহুল বুখারী, ১/১৯৭, ৬/২১,২২; মুসলিম সং ১৫০, ১৯০৪।
সুরা: আল্ বায়্যিনাহ ৯৮ঃ ৫
সুরা: আল্ আনআম ৬ঃ ১৬২,১৬৩
সূরা: হুদ ১১ঃ ১৫,১৬
সূরা: বনী ইসরাঈল ১৭ঃ ১৮ৃ
সূরা: আল্ বাকারা ২ঃ ২০০-২০৩
সুনানু আবী দাউদ, ২/৫১৫
সুনানুন্ নাসায়ী, সং ৯৮৮; বুখারী, আল আদাবুল মোযারাদ, সং ৭৮৩।
সুনানুন্ নাসায়ী,৭/৬; ইবনে হাজার, আল ইসাবা, ৪/৩৮৯, হাদীসটি সহীহ ।
সূরা: আল্ ইনসান (আদ্ দাহর) ৭৬ঃ ৩০
আলইরশাদ ইলা সহীহিল ই’তিকাদঃ ডঃ সালেহ বিন ফাওযান, রিয়াদ ১৪১০হিঃ পৃ. ৯৮, আররিয়াসাতুল আমমা লিইদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাদ।
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুল কদর, অধ্যায় ৮, খ. ৪, পৃ. ২০৫২, স. ২৬৬৪
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ৮
সূরা: আল্ আ’রাফ ৭ঃ ১৮০
সূরা: আল্ বাক্বারা ২ঃ ২৫৪
সূরা হাশর ৫৯ ঃ ২২-২৪
মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈলঃ সহীহ বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ১২, খ. ৮, পৃ.১৬৯।
মুসনাদে আহমাদ, খ১, পৃ. ২৯১
আবু দাউদঃ সুনান আবু দাউদ
সূরা: আত্ তাওবা ৯ঃ ১২৮
সূরা: আশ্ শুরা ৪২ঃ ১১
সূরা: আল-জিন ৭২ঃ ২৬,২৭
সূরা: আল্-আন‘আম ৬ঃ ৫৯
সূরা: আল-আ’রাফ ৭ঃ ১৮৮
সূরা: আন্-নমল ২৭ঃ ৭৭
দেখুন আস্সীরাতুল নববিয়্যাহ লিইবনে হিশাম, খ. ৩য়, পৃ. ৯৩-১০২
বিস্তারিত দেখুন, ইবনে হিশাম, আস্সীরাতুল নাববিয়্যাহ, খ.৩, পৃ. ১০৩-১০৫
বিস্তারিত দেখুন প্রাগুক্ত, পৃ. ১০৮
বিস্তারিত দেখুন, সহীহুল বুখারী, কিতাবুল মাগাযী, বাব নং ৩৪, হাদীছুল ইফক্, খ.৫, পৃ.৫৫
সুরা: আল মায়িদা ৫ঃ ৬৪
সূরা: আয্ যুমার ৩৯ঃ ৬৭
সুরা: আলে ইমরান ৩ঃ ৭৩
সূরা: ছোয়াদ ৩৮ঃ ৭৫
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল তওহীদ, বাব নং ১৯, খ.৮, পৃ. ১৭৩
সং ৯৯৩
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ৬, খ. ৮, পৃ. ১৬৬
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ১৯, খ. ৮, পৃ. ১৭৪
ইবনু জারীর আত্ তাবারী, জামেউল বয়ান ফী তফসীরিল কুরআন, পৃ. ২৪,২৫
সুরা: আর রহমান ৫৫ঃ ২৬,২৭
সূরা: আল কাসাস ২৮ঃ ৮৮
সূরা: আল কিয়ামাহ ৭৫ঃ ২২,২৩
সহীহুল বুখারী, রিয়াদ, দারু‘আলামিল কুতুব, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৭ হি:, খ.৮ পৃ. ১৭৯
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ২৪, খ. ৮, পৃ. ১৭৯
সূরা: আল মুমিনুন ২৩ঃ ২৭
সূরা: ত্বা-হা ২০ঃ ৩৯
সূরা: আলকামার ৫৪ঃ ১৪
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ১৭, খ.৮, পৃ. ১৭২
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব ৭, খ.৮, পৃ. ১৬৭
ইমাম আবু হানীফা (র.) কর্তৃক রচিত ‘আল ফিকহুল আকবর’ কিতাবের ব্যাখ্যা হিসেবে লিখিত ‘শরহু কিতাব আল্-ফিকহুল আকবর’, মোল্লা ‘আলী কারী লিখিত, বৈরুত, দারুল কুতুবুল ইলমিয়্যা, সং. বিহীন, তাবি, পৃ. ৫৮-৫৯
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ৫
সূরা: আল আরাফ ৭ঃ ৫৪
সুনান আবু দাউদ , সং ৪৭২৩, অধ্যায়ঃ সুন্নাহ, অনুচ্ছেদ , জাহমিয়াহ। সুনানুত তিরমিযী , সং ৩৩১৭, অধ্যায়ঃ তাফসীর , অনুচ্ছেদঃ সুরা: আল- হাক্কাহ
সূরা: আল মাআরিজ ৭০ঃ ৪
সূরা: ফাতির ৩৫ঃ ১০
সূরা: আন নিসা ৪ঃ ১৫৮
সূরা: আলকদর ৯৭ঃ ১
সূরা: ইবরাহীম ১৪ঃ ১
সূরা: আদদুখান ৪৪ঃ ৩
সূরা: আলবাক্বারা ২ঃ ১৪৪
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ২২, খ. ৮, পৃ. ১৭৬
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তওহীদ, বাব নং ৩৩, খ. ৮, পৃ. ১৯৫
সূরা: আননাজম ৫৩ঃ ১৩-১৫
সহীহুল বুখারী, বাব মে‘রাজ, নং ৪২, খ. ৪, পৃ. ২৪৯
সহীহ মুসলিম, স. ১২১৮, সুনানু আবী দাউদ, পৃ. ১৯০৫, সুনানু ইবনে মাজা, পৃ. ৩০৭৪
সহীহ মুসলিম খ. ১ স. ৫৩৭. কিতাবুল মাসজিদ ওয়া মাওয়াদিউস সালাত অধ্যায় পৃ. ৩৮২
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত্ তাহাজ্জুদ, বাব নং ১৪, খ. ২, পৃ. ৪৭, সহীহ মুসলিম, খ. ২, পৃ. ৫২১, হাদীস নং ৭৫৮, কিতাবু সালাতিল মুসাফিরীন, বাব নং ২৪
সুনানুত তিরমিযি- স.৩৫৫১, সুনানু আবী দাউদঃ সং. ১৪৮৮, সুনানু ইবনে মাজাঃ সং. ৩৮৬৫
সূরা: আনকাবুত ২৯ঃ ৬২
সূরা: আল বাকারা ২ঃ ২০
ইমাম কাযী আলী বিন আলী বিন আবিল ইয আদদিমাশকীঃ শরহুল আকীদুত তাহাবিয়্যাহ, খ. ২য়, পৃ. ৩৭৩, বৈরুত, লেবানন, আররিসালা পাবলিশিং হাউজ।
সূরা: ত্বাহা ২০ঃ ৫
ইমাম কাযী আলী বিন আলী বিন আবিল ইয আদদিমাশকীঃ শরহুল আকীদুত তাহাবিয়্যাহ, খ. ২য়, পৃ. ৩৮৭, বৈরুত, লেবানন, আররিসালা পাবলিশিং হাউজ।
আব্দুল আযীয আল - মুহাম্মাদ আল সালমান, আল আসইলাতু ওয়াল আজইবাতিল উসূলিয়্যাতি আলাল আকীদাতিল ওয়াসিতিয়্যাতি লি ইবনে তায়মিয়্যাহ , ২১ম সংস্করণঃ ১৯৮৩খৃ. পৃ. ২৪
প্রাগুক্ত পৃ. ২৪
দেখুন ইমাম আবু হানীফা (র) কর্তৃক রচিত ‘আল-ফিকহুল আকবার’ কিতাবের ব্যাখ্যা হিসেবে লিখিত মোল্লা আলী ক্বারী এর ‘শরহু কিতাব আল-ফিকহুল আকবার’, বৈরুত, দারুল কুতুবুল ইলমিয়্যাহ, সংস্করণ ও তারিখ বিহীন পৃ. ৫৮,৫৯
আল-আলূছী, মাহমূদ, রূহুল মা’আনীঃ বৈরুত, দারু এহইয়াইত তুরাছিল আরাবী , ৪র্থ সংস্করণ, ১৯৫৮ খৃ. ১৫/১৫৬
আহলুস্সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আ বলতে ঐ দলকে বুঝানো হয়, যারা কুরআন সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে রাখে, যারা রাসূলুল্লাহ্ ও সাহাবীদের পথে অধিষ্ঠিত। যারা সলফে সালেহীনের পথের অনুসারী।
হাফেজ ইসমাঈল ইবন কাছীর, আল বিদায়াহ্ ওয়ান নিহায়াহ্, (মাকতাবুল আ‘আরিফ, বৈরুত, স.৩, ১৯৭৮খৃ.) খ.১০, পৃ. ১৯
আবুল ‘আববাস শামসুদ্দীন, ওফ্ইয়াতুল মা‘য়ান ওয়া আমাবাউ আবনাইজ্জমান, (প্রকাশন- মানশূরাতিদরিদা-কুম, স.২) খ.৬, পৃ. ৮
আশ‘আরিয়া গ্রুপটি আবুল হাসান ‘আলী বিন ইসমাঈল আল্ আশয়ারীর দিকে সম্বন্ধ করে আশয়ারী বলা হয়। তার জন্ম বসরায় ২৬০/৭০ খৃ., মৃত্যু ৩৩০/৩২৪। তিনি প্রথমে মু’তাযিলী ছিলেন পরে তাওবা করে আহলুস্ সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আতের মতে ফিরে আসেন।
ড. সালেহ বিন ফাওযান আল ইরশাদ ইলা সহীহিল আররিয়াসাতুল ‘আম্মাহ্ লিইদারাতিল বুহুসিল ‘ইলমিয়্যাহ্, রিয়াদ, সৌদি আরব, ১৪১০ হি. পৃ. ১২৫
সূরা: আল আ‘রাফ ৭ঃ ১৮০
সূরা: আলে ‘ইমরান ৩ঃ ১৮১
সূরা: ফাতির ৩৫ঃ ১৫
সূরা: মুহাম্মাদ ৪৭ঃ ৩৮
সূরা: ক্বাফ ৫০ঃ ৩৮
সহীহুল বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব নং ১৯, খ.৮, পৃ.১৭৩
সূরা: আল্ মায়িদা ৫ঃ ৬৪
সূরা: আল্ মায়িদা ৫ঃ ৬৪
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুল আলফায, বাব নং ৩, পৃ. ১৭৬৫, খ. ৪।
সূরা: লোকমান ৩১ঃ ১৩
সূরা: আন নিসা ৪ঃ ৪৮, ১১৬
সূরা: আয্যুমার ৩৯ঃ ৫৩,৫৪
সূরা: আলবাকারা ২ঃ ১৩৭
সূরা: আল্ আন‘আম ৬ঃ ১৫৮
সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ফিতান, বাব নং ২৫, খ.৮, পৃ. ১০১
সহীহ্ মুস্লিম, কিতাবুয্ যিকর, বাব নং ১২, খ.৪, পৃ. ২০৭৬
সুনানুত্ তিরমিযী, সং ৩৫৩১
সূরা: আন্নিসা ৪ঃ ১৮
সূরা: আয্যুমার ৩৯ঃ ৬৫
সূরা: আলে ‘ইমরান ৩ঃ ১৩৩
সূরা: আল মায়িদা ৫ঃ ৭২
সূরা: আননিসা ৪ঃ ৪৮
সহীহুল বুখারী, খ. ৮ পৃ. ২০৭, বাব নং ৩৯
সহীহুল বুখারী, বাব ১, খ. ৮, পৃ. ৪৮
সূরা: আননিসা ৪ঃ ১১৬
সূরা: আততাওবা ৯ঃ ২৮
সূরা: আলহজ্জ ২২ঃ ৩১
সূরা:আল কাহফ ১৮ঃ ৫২
সূরা: আন-নাহল ১৬ঃ ৮৬
সূরা: আল্আন‘আম ৬ঃ ২২
সূরা: আততাওবা ৯ঃ ১১৩
মুসলিম বিন হাজ্জাজ আল কুশায়রী, সহীহ মুস্লিম, রিয়াদ দারু আলামিল কুতুব, সংস্করণ, ১ম, ১৪১৭ হিঃ কিতাবুল জানাইয, বাব নং ৩৬, সং ৯৭৬, খ. ২, পৃ. ৬৭১, আব্দুর রহমান আহমদ ইবন শুয়াইব আন্ নাসায়ী, সুনানুন্ নাসায়ী অধ্যায়, জানাইয, সং. ১০১। সুলাইমান ইবনুল আশ্য়া’স আস্সিজিস্তানী, সুনানু আবী দাউদ, জানাইয, ৭৭
ইবনুল কাইয়্যিম আল্ জাওযিয়্যাহ্; ‘আওনুল মা‘বুদ শরহ আবু দাউদ, বৈরুত, দারুলকুতুব আলইলমিয়্যাহ্, ১ম সংস্করণ, ১৪১০ হি., ভ. ৫, খ. ৯, পৃ. ৪১ সং ৩২৩২
সহীহ্ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাব ৮৮, হাদীস সং. ৩৪৭, খ.১, পৃ. ১৯১
সহীহুল বুখারী , কিতাবুত তওহীদ,দারু আলামিল কুতুর, রিয়াদ, খ. ৮, পৃ. ১৬৪
সূরা: আল কাহফ ১৮ঃ ১০৩,১০৪
. সূরা: আল-বাক্বারা ২ঃ ২৫৬